গীতা দাস একজন সাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকায় তার কলাম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। সহজিয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য প্রসঙ্গে। আজ প্রকাশিত হলো কিস্তি ১৩।
তঞ্চঙ্গ্যা কথাসাহিত্য
ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও ম্রো নৃগোষ্ঠী রচিত বাংলাভাষায় কথাসাহিত্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিসু,বিজু, বৈসাবি,২১ ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংকলন পাওয়া যায়। এসব সংকলনে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর রূপকথা, লোকগাঁথা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও কবিতা ছাপা হয়। এ অনুসন্ধানে কথাসাহিত্য নিয়ে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রকাশিত বই না পেলেও ঐসব সংকলনগুলো পর্যালোচনা করা হয় এবং ইদানিংকালের ঐসব সংকলনে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর রচনা প্রায় অনুপস্থিত। উপেক্ষিতও বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ, জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক) ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সালে প্রকাশিত সংকলন পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি মাইল ফলক। কিন্তু এ সংকলনে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর কোন লেখা স্থান পায়নি; যদিও এ সংকলনে ‘সংক্ষিপ্ত জাক পরিক্রমা: ২০৮১ থেকে ২০২১’ নামক লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে যে “জাক প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্যই ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের অবহেলিত ভাষা, সাহিত্যকে চর্চা, লালন, সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধতর করা।”[i] অন্যদিকে উৎসর্গপত্রে তেরজন ও হারিয়ে যাওয়া যাঁরা ছিলেন বলে উৎসর্গ করেছেন এবং তেরজনের একজন লগ্ন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। অথচ লেখা মনোনয়নে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর কোন রচনা এ সংকলনে সংযুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি।
তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন গুণীজনের সঙ্গে আলোচনা, তাঁদের লেখালেখি পঠনপাঠন, চাকমা নৃগোষ্ঠীর ও মারমা নৃগোষ্ঠীর নিরপেক্ষ বোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনায় এমন একটি উপসংহারে উপনীত হওয়া স্বাভাবিক যে,পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য নৃগোষ্ঠী, বিশেষ করে চাকমা নৃগোষ্ঠী তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীকে চাকমাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার নেতিবাচক চেষ্টা করে থাকেন; যদিও তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, পোশাক ও পসন বা পৌরাণিক গল্পের সমাহার রয়েছে। তাদের লোকসংস্কৃতিও সমৃদ্ধ। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মালিকানা নিয়ে চাকমাদের সঙ্গে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর সংঘাতের একটি ইতিহাস আছে। যেমন, রাধামন ধনপতিকে নিয়ে রচিত গ্রন্থ ও কবি শিব চরণের সৃষ্টি কোন নৃগোষ্ঠীর সম্পদ? এ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের জের ধরে ও অন্যান্য জাতির প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত চাকমারা তঞ্চঙ্গ্যাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না, এমনকি তাদের ভাষার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতেও দ্বিধা করে না। নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমারা সংখ্যায় বেশি, শিক্ষায় এগিয়ে আছে এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষার সঙ্গে চাকমা ভাষার নৈকট্য রয়েছে। ফলে তঞ্চঙ্গ্যাদের স্বতন্ত্র ভাষার অস্তিত্ব চাকমা ভাষার অন্তরালে ম্লান হয়ে যায়। একারণেও তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হয়। সর্বোপরি,পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তো অমূলক নয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
ঐতিহাসিক সত্য এই যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের কথাসাহিত্যের ইতিহাসে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার নাম অপরিহার্য এবং এ সমন্ধে নন্দলাল শর্মা জানিয়েছেন, ‘‘বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা সামাজিক সমস্যা নিয়ে গল্প লিখতে ভালবাসেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণের জীবন ধারার চিত্র তাঁর গল্পেই প্রথম ফুটে উঠেছে।’’[ii] ছোটগল্প তথা কথাসাহিত্যে জনগণের জীবন ধারার চিত্র প্রথম তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর লেখায় রূপায়িত হলেও এ পর্যন্ত তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী রচিত কথাসাহিত্যের কোন বই বাংলা বা তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় পাওয়া যায়নি।
তঞ্চঙ্গ্যা কথাসাহিত্য নিয়ে অনুসন্ধানে কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যা ও চন্দ্রভান তঞ্চঙ্গ্যার সহযোগিতায় ২০০২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ২৭টি বাংলা ছোটগল্প পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২৩টি ছোটগল্পই প্রকাশিত হয়েছে তঞ্চঙ্গ্যা সম্পাদকদের সম্পাদিত পত্র-পত্রিকা বা সংকলনে। মাত্র ২টি গল্প সুশান্ত চাকমা সম্পাদিত কুরুম নামক পত্রিকার প্রথম সংখ্যা, একটি গল্প শরৎ জ্যোতি চাকমা সম্পাদিত রঁদেভূ নামক আদিবাসী দিবস সংকলনে এবং আরেকটি গল্প জাতীয় পত্রিকা ইত্তেফাক এর সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়েছে।
এ পরিসংখ্যান থেকে এই সারমর্মে আসা যায় যে,একবিংশ শতাব্দীতে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী নিজেদের সাহিত্যচর্চায় নিজেরাই এককভাবে নিজেদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের পহর জাঙাল ও চালৈন নামক পত্রিকার প্রকাশ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। পহর জাঙাল পত্রিকাটি ২০০৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কর্তৃক প্রকাশিত হয়ে আসছে। এ পদক্ষেপ তাদের সাহিত্যানুরাগের একটি বলিষ্ঠ উদাহরণ।
উপর্যুক্ত তালিকার কয়েকটি গল্পে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানের চিত্র বলিষ্ঠভাবে চিত্রায়নের প্রচেষ্টা রয়েছে। তাপস তনচংগ্যার ‘মেঘাচ্ছন্ন জীবন’ গল্পে কর্ণফুলি নদীর উপর বাঁধ দিয়ে জল বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্রাম জলে তলিয়ে যাওয়া এবং পরে পাহাড়ে বাঙালিদের আগ্রাসনে সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ, পুনঃপুনঃ উদ্বাস্তু হবার হতাশা ও হাহাকার ফুটে উঠেছে। কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট জন দুর্ভোগের কথা নিয়ে রাইচরণের ‘দাদুর গল্প’ লেখা। তিনি এক দাদুর জবানিতে লিখেছেন, “এখন যে অনাবিল সৌন্দর্য কাপ্তাই লেক দেখছো সেখানে ছিল এক জীবন্ত সভ্যতা, যা পানিতে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে। … কাপ্তাই লেক থেকে প্রতিটি ইলেক্ট্রন প্রবাহে কত মানুষের দুঃখ-কষ্ট বয়ে চলেছে তার হিসেব কে রাখছে?’’ এ যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী নির্বিশেষে ঐ অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের মনের গহীনে বয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রন প্রবাহ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সংখ্যালঘু সৃষ্ট কথাসাহিত্য অনুসন্ধানে ঐ এলাকার বিভিন্ন সংকলন নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বই নিয়ে নিবিড়ভাবে পঠন পাঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সাহিত্যানুরাগীদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষা ও সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়টি ছিল অবহেলিত।
রূপম তনচংগ্যার ‘জাগানিয়া’ গল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পার্বত্যাঞ্চল, সংখ্যালঘুদের অবস্থান, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি নিয়ে চেতনা জাগানোর উদ্যোগ। বন্ধুদের কথোপকথন, যেমন, “এই তোরা জানিস পার্বত্যাঞ্চলে আদিবাসীদের উপর কেমন নির্মম অত্যাচার চলে? সরকার তাদের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করার নামে জাতিসংঘ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছে।
সৌস্মিতা বলে শুধু আদিবাসী জনগোষ্ঠী কেন? দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলি কতদিন টিকে থাকে সেটা ভেবে দেখেছো?’’
পলাশ তনচংগ্যা ‘ছেষট্টির পরেও সেই স্বপ্ন’ গল্পে পাকিস্তান আমল থেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে দেশ স্বাধীন করার প্রসঙ্গ টেনে সংবিধানের উল্লেখ করেছেন। যে সংবিধানে –“ কিন্তু স্বাধীন দেশের যখন সংবিধান তৈরী হলো মহনদের মতো ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমতল ও পাহাড়ী ৪৫টি আদিবাসীসহ দেশে সংখ্যালঘু জনগণের কথা সেখানে স্থান পেল না তেমন।…পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা তখন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে আরো বেশী খারাপ।’’ এরপর পলাশ তনচংগ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের উপর সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ ও নৃশংস অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন। এ বর্ণনায় সাহিত্য সৃষ্টির উপাদানে ঐতিহাসিক তথ্যের সমন্বয় করেছেন।
ঈশ্বরচন্দ্র তনচংগ্যা ‘পাষাণ পাহাড়’ গল্পে ভালুকের আক্রমণে একজনের মৃত্যুর কাহিনির মাধ্যমে জনজীবনে পাহাড়ি পরিবেশের নিষ্ঠুর আচরণের কথা বলেছেন। এখানে পাহাড়ি লোকালয়ের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছেন। জুমচাষীরা সাধারণত সকালে জুমে যাওয়ার সময় কলাপাতায় মুড়ে দুপুরের খাবার নিয়ে যায়। লেখক লিখেছেন, “ভোররাতে বানানো কলাপাতায় মোড়ানো ভাত তরকারিগুলো আস্তে আস্তে খুলে ফেলে। ভাত তরকারিগুলো হতে সিদ্ধ কলাপাতার এক ধরনের সুগন্ধ ছড়ায়। এগন্ধে ক্ষিদের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।’’ কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যা ‘পু-কাললাঙ’ গল্পে তঞ্চঙ্গ্যা উবাগীত, (গেঙুলী গান) ধাঁ ধাঁ, পশন (রূপকথার গল্প) ইত্যাদির উল্লেখ করে যেন তঞ্চঙ্গ্যা সংস্কৃতির বয়ান শুনিয়েছেন। এ যেন ছোট গল্প লেখার কৌশলে নিজের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের প্রয়াস।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সাহিত্য সংকলনে নারী সম্পাদক হিসেবে প্রথম এবং একমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী থেকেই পাওয়া যায়।
তবে অনেক গল্পেই জাতিগত বা গোষ্ঠীগত কোন প্রসঙ্গ উচ্চারিত হয়নি। নির্ঝঞ্ঝাট প্রেমের বা পারিবারিক অতি আবেগীয় ঘটনায় দুয়েক স্থানে জুম চাষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। চন্দ্রসেন তঞ্চঙ্গ্যার ‘কে তুমি’ মৌলিক গল্পটি লোকগল্পের ঢঙ্গে ও কৌশলে এক নারীর তথা নারী জীবনের কথা বিধৃত হয়েছে। তালিকায় অন্তভুক্ত গল্পগুলোর মধ্যে মাত্র দুয়েকটি গল্পে ছোটগল্পের স্বাদ পাওয়া যায়। তবে কোন গল্পেই ফিরে দাঁড়ানোর ও প্রতিবাদের তেমন কোন ইঙ্গিত নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সাহিত্য সংকলনে নারী সম্পাদক হিসেবে প্রথম এবং একমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী থেকেই পাওয়া যায়। পহর জাঙাল পত্রিকার ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে রিনি তঞ্চঙ্গ্যা ২০১৯ সালে চতুর্দশ ও কাকলী তঞ্চঙ্গ্যা ২০২১ সালে পঞ্চদশ সংখ্যা সম্পাদনা করেন। পহর জাঙাল এর নারী সম্পাদক হিসেবে রিনি তঞ্চঙ্গ্যা ও কাকলি তঞ্চঙ্গ্যা শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা জাতির জন্য নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের জন্য এক বিশাল অর্জন। আক্ষরিক অর্থে এবং ঐতিহাসিকভাবে শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর মধ্যে নয়, নারী হয়ে নিয়মিত প্রকাশিত একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে তা একটি মাইল ফলক। চাকমা রাণী (পরে রাজমাতা) বিনীতা রায়ের সাথে রিনি তঞ্চঙ্গ্যা ও কাকলি তঞ্চঙ্গ্যার নাম উল্লেখ অপরিহার্য। উপরন্তু, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে নারীর ভূমিকা ও অবদান নিয়ে রিনি তঞ্চঙ্গ্যা ও কাকলি তঞ্চঙ্গ্যার নাম বিনীতা রায়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে বিনীতা রায় জন্মস্থান সূত্রে পার্বত্য এলাকার নন এবং নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে বাঙালি নৃগোষ্ঠীতে জন্ম; একটি রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে অগ্রসরমান জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সংখ্যালঘু সৃষ্ট কথাসাহিত্য অনুসন্ধানে ঐ এলাকার বিভিন্ন সংকলন নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বই নিয়ে নিবিড়ভাবে পঠন পাঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সাহিত্যানুরাগীদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষা ও সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়টি ছিল অবহেলিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে তথা বাংলাদেশে তাদের সাহিত্যচর্চায় নানা প্রকার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তঞ্চঙ্গ্যাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার প্রকাশনা আন্তঃদেশীয় ক্ষেত্রে বিস্তৃত। উদাহরণস্বরূপ – খুঙ নামে তঞ্চঙ্গ্যা সাহিত্যের একটি অনলাইন আন্তর্জাতিক ফ্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং মায়ানমার তঞ্চঙ্গ্যাদের যৌথ অংশগ্রহণে পরিচালিত। ইতোমধ্যে দুটো সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথমটি কবিতা সংকলন। তঞ্চঙ্গ্যা ও বাংলা উভয় ভাষার কবিতা এই সংকলনে স্থান পেয়েছে। ৯ই আগস্ট ২০২১ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সংখ্যা হিসেবে খুঙ এর দ্বিতীয় সংখ্যাটি পসন বা পৌরাণিক গল্প সংকলন। তঞ্চঙ্গ্যারা পৌরাণিক গল্পকে সাধারণত পসন নামে অভিহিত করে। ঘোষণা করা হয়েছে খুঙ এর পরবর্তী তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশ করা হবে ২০২২ সনে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” সংখ্যা হিসেবে এবং বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে “প্রবন্ধ”। পরবর্তী সময়ে ঘোষাণা করা হয়েছে যে, আসছে বিষু পেয়্য (উৎসব) ২০২২ উপলক্ষে “Tanchangya Language and Literature Study Centre” এর অনলাইন সংস্করণ প্রকাশনা খুঙ (প্রবন্ধ সংখ্যা) প্রকাশের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে পর্যালোচনায় সহজেই অনুমেয় যে এখানেও কথাসাহিত্য সংখ্যা অগ্রাধিকার পায়নি।
বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার রুনুখার উপখ্যান নামে একটি উপন্যাসের শুধুমাত্র ‘মন্দাকিনীর অতুলনীয় ভালবাসা’ নামে পঞ্চম পরিচ্ছেদ ২০০৮ সালে প্রকাশিত রেগা নামক আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সংখ্যায় পাওয়া গেছে। ঐ সংখ্যার সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদারের কাছে এর অন্যান্য অংশ নিয়ে কোন তথ্য নেই। তবে তিনি এ অংশটি বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার মেয়ে কবি পারমিতা তঞ্চঙ্গ্যার কাছ থেকে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর মেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছেও উপন্যাসের আর কোন অংশের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহে নেই। এটি নাটকের গদ্যরূপ কিনা তা এ অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে তথ্য বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকে (যেমন- চন্দ্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা ও মিলিন্দ তঞ্চঙ্গ্যা) রুনুখার উপখ্যান কে নাটক বলে তালিকাভুক্ত করেছেন। কিন্তু বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা নিজেও জীবদ্দশায়রুনুখার উপখ্যান কে উপন্যাস বলেছেন বলে কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যার দাবি। এর কোন নাট্যরূপ দেয়া হয়েছিল কি না তা জানা যায়নি। এ বিভ্রান্তি দূরীকরণে ও তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী নিজেদের সাহিত্যের ইতিহাসের যথাযথ সংরক্ষণের স্বার্থে রুনুখার উপখ্যান সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা প্রয়োজন যদি তিনি লিখে থাকেন। তাছাড়া, বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার সাহিত্য সৃষ্টি সংরক্ষণে শুধু তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর নয়, তাঁর লেখা কয়েকটি ছোটগল্পসহ রচনাবলী প্রকাশ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
ভোলানাথ তঞ্চঙ্গ্যা সংক্ষিপ্ত বি. এন. তঞ্চঙ্গ্যা নামে লেখালেখি করেন। তিনি আদামর-ফুল নামে তের পর্বের একটি উপন্যাস লিখেছেন। উপন্যাসটি বাংলা ভাষা ও বর্ণমালায় লিখিত হলেও সংলাপ তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায়। সংলাপের ভাষা তঞ্চঙ্গ্যা হওয়ার কারণ সম্পর্কে ভোলানাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তঞ্চঙ্গ্যা বর্ণমালায় শিক্ষিতের সংখ্যা সীমিত এবং অনেকেই বাংলা ভাষা ও বর্ণমালায় হলে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন বলে উপন্যাসটি বাংলা ভাষা ও বর্ণমালায় লিখিত। তবে সংলাপ তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় লেখার কারণ হিসেবে জানালেন যে, প্রথমত, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষাটা মৌখিক ভাষা হিসেবে চর্চায় থাকা উচিত। দ্বিতীয়ত, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা প্রচার করার জন্য। তৃতীয়ত, সংলাপ তঞ্চঙ্গ্যা সংস্কৃতির এমন অনেক শব্দ আছে যা বাংলাভাষায় প্রকাশ বা অনুবাদ সম্ভব নয়। যেমন: কুটতারি, কটতাল,অলি অলি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, আদামর-ফুল উপন্যাসটি ২০০৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রহর জাঙাল পত্রিকায় নয়টি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। এখনও অবশিষ্ট চারটি পর্ব প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তঞ্চঙ্গ্যা সাহিত্যচর্চা প্রকাশের ক্ষেত্র সীমিত বলেই একটি উপন্যাস প্রকাশে এতো দীর্ঘ সময় লাগছে বলে প্রতীয়মান হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই লেখক ও পাঠক উভয়পক্ষেরই স্বতঃস্ফুর্ততা বজায় থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে পার্বত্য জেলাসমূহে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এটি বই আকারে প্রকাশে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারে। এখানে গুণগত বিষয় বিচার্যের চেয়ে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত।
বাংলাদেশে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা, বিশেষ করে কথাসাহিত্য চর্চার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে সুদীর্ঘ আলোচনা ও কথোপকথন হয়েছে। তন্মধ্যে কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যা ও মিলিন্দ তঞ্চঙ্গ্যা উল্লেখযোগ্য। কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যা এ নৃগোষ্ঠীর সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, বিকাশ এবং স্বজাতির অস্তিত্ব নিয়ে ভাবেন, এর উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ এবং তঞ্চঙ্গ্যা সাহিত্যের প্রথম লিটলম্যাগ পহর জাঙাল এর জন্ম তার উদ্যোগে। মিলিন্দ তঞ্চঙ্গ্যা তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে খুঙ নামে অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক, Tanchangya Language and Literature Study Centre এর মূল উদ্যোক্তা এবং চালৈন নামক পত্রিকার এক সময়ের সম্পাদক।
তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী সম্পাদিত পত্র-পত্রিকার বাইরে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা ও সংকলনে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর লেখা অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা দিয়ে বিষয়টি শুরু করি। বিগত বছর ৩/৪ বা আরো আগে হবে বিষয়টি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি থেকে ছাপানোর জন্য আমার একটা লেখা চেয়েছে এবং আমি দিয়েছি। তার জন্য আমাকে সন্মানীও দেয়া হয়। কিন্তু আমার ঐ লেখা আদৌ ছাপানো হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। কারণ ছাপানো হলে অবশ্যই আমি একটা লেখক কপি পেতাম। তারপর থেকে কেউ লেখা চাইলেও আমি আগ্রহ দেখাই না। আমি আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, লগ্ন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা এবং তারও আগে যদি বলি তবে কার্তিক চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক উঁচু মানের লেখক ছিলেন। তাদের উল্লেখ্যযোগ্য কোন প্রকাশনা এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু এর বিপরীতে খ্যাত/অখ্যাত অনেক লেখক এই সুযোগটুকু পেয়েছে। তাই আমি মনে করি এই সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট তার সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং এজন্য বর্তমান প্রজন্মের লেখকগণ আস্থাগত কারণে এ সকল প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন বা সংস্থায় লেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’’
এ প্রসঙ্গে মিলিন্দ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা বিভিন্ন পত্রিকা বা কাগজ সম্পাদনা করেন তারা সুনির্দিষ্ট দুই- তিনটি জনগোষ্ঠীর গুটিকয়েক লেখকদের ছাড়া অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী লেখকদের সাথে খুব একটা যোগাযোগ রাখার এবং তাদের মধ্য থেকে সম্ভাবনাময় লেখকের লেখা তুলে আনার প্রয়োজনবোধ করেন না কিংবা গুরুত্ব দেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকেও তিন জেলায় সীমিত জনগোষ্ঠীর লেখকদের সাথে কাজ করতে দেখা যায় এবং ওই জনগোষ্ঠীসমূহের লেখকদের লেখাই ঘুরে ফিরে প্রকাশ করে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের নেতৃত্ব দেন মূলত চাকমা জনগোষ্ঠীর পরিচিত কিছু ব্যক্তি এবং কেউই স্বীকার করুক বা না করুক চাকমা জনগোষ্ঠীর সাথে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর জাতিগতভাবে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তঞ্চঙ্গ্যাদের সাহিত্যচর্চা নিয়ে তারা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে না বলেই ঐসব পত্র-পত্রিকা ও সংকলনে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর লেখা প্রকাশ করা হয় না।’’
তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা অনেক আগেই বাংলা ভাষায় কথাসাহিত্য চর্চার সূত্রপাত করেছিলেন। কিন্তু কথাসাহিত্য নিয়ে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর কোন বই নেই। এমনকি কোন লেখকের নাম বলা যাচ্ছে না যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছোটগল্প রয়েছে। এর কারণ সম্পর্কে কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যার ব্যাখ্যা হলো, “স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠী কথাসাহিত্য চর্চা করলেও পরবর্তী বাংলাদেশের জন্ম, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে আদিবাসীদের সাথে সরকারের টানাপোড়ন; সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা সমস্যার কারণে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার উপরও নেতিবাচক একটা প্রভাব পড়ে। যার কারণে অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি তঞ্চঙ্গ্যারাও সেভাবে তাদের সাহিত্য চর্চাকে এগিয়ে নিতে পারিনি। তখন যা হয়েছে তা কিছুটা ধর্ম বিষয়বস্তু নির্ভর সাহিত্য চর্চা। তাছাড়া সে সময় আজকের মতো পর্যাপ্ত সাহিত্য সংকলন না থাকা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, নিজেদের আর্থিক অসামর্থ্য, অসচেতনতা, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর প্রতি অবজ্ঞা ও মূল্যায়ন না করার প্রবণতাও অনেকাংশে দায়ী।’’
এ প্রসঙ্গে মিলিন্দ তঞ্চঙ্গ্যা মনে করেন, “যারা তঞ্চঙ্গ্যা সাহিত্যচর্চা করে গেছেন তারা ছোট গল্পের লেখার আগ্রহ না দেখিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে রূপকথার গল্প, ধর্মীয় সাহিত্য বা নাটক নিয়ে লিখতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন সেজন্যই তঞ্চঙ্গ্যা সাহিত্যে ছোট গল্পের উল্লেখযোগ্য লেখক অনুপস্থিত। তাছাড়া লেখালেখি করার মতো সুযোগ ও সাধ্যও নেই। জীবিকার জন্য লড়তে গিয়ে সাহিত্যচর্চা করার মতো সৌখিনতা করা সম্ভব হয়নি।’’
তঞ্চঙ্গ্যার নৃগোষ্ঠীর সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা, এর সীমাবদ্ধতা, নিজেরদের জাতিগত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে কথাসাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য তঞ্চঙ্গ্যার নৃগোষ্ঠীর নিজেদের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব রয়েছে। এ অনুসন্ধানের বিভিন্ন পর্যায়ে তঞ্চঙ্গ্যার নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনার ফলে এই উপলদ্ধি হয়েছে যে, তারা সাহিত্যচর্চা প্রসঙ্গে সরব নিজেদের মধ্যে, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিকূল সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নিজেদের সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছে; যারা সাহিত্যচর্চায় আগ্রহবোধ করছে তারা নিজের শক্ত অবস্থান গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে। সুতরাং প্রবন্ধটির শেষে এ কথাই জোর দিয়ে বলতে হয় যে, সাহিত্যচর্চায় সংযোগের বহুমাত্রিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরি না করলে কথাসাহিত্য তো বটেই তঞ্চঙ্গ্যাদের অন্যান্য সৃষ্টিশীল সাহিত্যও বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
(আগামী সংখ্যায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য: প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম, শেষ কিস্তি)
তথ্যসূত্র
[i] জাক ৪০ বর্ষপূর্তি সংকলন-২০২১, জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক), ১৭ ডিসেম্বর,২০২১
[ii] নন্দলাল শর্মা, আকাশে হেলান দিয়ে ,“ছোটগল্পে উপজাতোয় জীবচিত্র”, (রাঙামাটি: রাঙামাটি প্রকাশনী, ২০০৩)।
পড়ুন ।। কিস্তি ১২
দুই একটা জায়গায় টাইপিং ভুল হয়েছে। যেমন: ‘সংক্ষিপ্ত জাক পরিক্রমা: ১৯৮১ থেকে ২০২১’ । লেখা রয়েছে ২০৮১ থেকে।
চন্দ্রসেন তঞ্চঙ্গ্যার স্থলে চন্দ্রাভান তঞ্চঙ্গ্যা হয়েছে, পহর জাঙাল এর স্থলে প্রহর জাঙাল লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দু:খিত।