আমি যখন ক্লাশ এইটের স্টুডেন্ট তখন শরৎচন্দ্রের ‘নারীর মূল্য’ পইড়া টগবগাইয়া উঠলাম। আমিও প্রবন্ধ লেখার খায়েশে পত্রপত্রিকা ঘাটাঘাটি শুরু করছি। তখনকার দিনে দৈনিক ইত্তেফাকের চল বেশি, ওইটার লগে সাপ্তাহিক রোববার পড়বার লাইগা মুখায়া থাকতাম। সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিতে এক বিকাল না গেলে, নিজেরে কেমন পাগলা পাগলা মনে হইত। তো রমণীদের নিয়া নানান দেশের নানান ধর্মে মাইয়াদের কীএক্টা অবস্থা এইগুলান নিয়া আলাপ লেইখা রওশন ভাইদের সাহিত্যের কাগজে ছাপায়া দিলে বিএল স্কুলের স্যারদের মধ্যে থাইকা দুইতিনজন এইসব আবালমার্কা আলাপ পইড়া আমারে ইচরে পাকনা বইলা থাপড়াইতে চাইছিলেন।
সেই থাপ্পড় খাওয়া সময়ের উপ্রে খাড়ায়া আছি, তখনো এরশাদ সাহেবের সময় আসে নাই; মেজর জিয়া দেশের নায়ক। স্কুলের পোলাপাইনগুলারে ট্রাকে উঠায়া ভুরাঘাটে নিয়া জিয়া সাবের খাল-খনন কর্মসূচিতে ঠেইলা দিলে আমরা টিফিন হিসাবে ইউনেস্কোর বিস্কুট পাইলাম। কোদাল মাটি আর কাদার ভিত্রে নিজেদের খানিকটা স্বাধীন স্বাধীন মনে হইল। এই রকম ঘটনার বহুত আগে তখন আমরা আলমডাঙায় থাকতাম। আলমডাঙা একটা থানা। তখন উপজেলা বইলা কিছু আছিল না। আছিল থানা, মহুকুমা, জিলা, বিভাগ।
সেই তখন, আলমডাঙার বটতলার মোড় পার হয়া আমাদের আলমডাঙ্গা সরকারি প্রাইমারি স্কুল। টিনের চালার নিচায় দাঁড়ায়া থাকা সেই স্কুলটার মাঠ ছিল বিশাল। স্কুলের একটা টানা পুরানা দালান ঘরও আছিল। সেই স্কুলে, তখন টিফিনে বিলেতি দুধ বিলি হইতেছে। এক দিন আমি কাগজের ঠোঙায়, যে ঠোঙা অংক খাতার পাতা ফাইড়া তৈয়ার করা হইছিল; সেই ঠোঙায় বিলেতি দুধ নিয়া বাসায় ফিরতেছি। আমরা তখন আলমডাঙা থানা কাউন্সিলের দোতালা সরকারি বাসায় থাকতাম। তো আমি দোস্তদের লগে হাতের ঠোঙায় বিলেতি দুধ নিয়া বাসার দিকে ফিরতেছি। আয়হায় ওইদিন বাসায় না গিয়া কেমনে কেমনে মিইশা গেলাম পাখি শিকারিদের লগে। ওরা আছিল আদিবাসী। ওদেরকে বলা হইত কলু। আসলে শব্দটি ছিল কোল; যে যার মতো কইরা বলতো কলু, কুলু, কোল। মুণ্ডাদের থাইকা আলাদা কিসিমের ছিল ওদের চলনবলন। হাতে থাকত লম্বা লম্বা চিকন বাঁশ। সেই বাঁশগুলা লম্বায় পাঁচ ছয় হাত। একটার মাথা আরেকটার ভিতর ঢুকায়া তিন চারটা বাঁশ জোড়া দিয়া তারপর সব্বার উঁচায় যেইটা থাকতো ওইটার মাথায় লাগানো থাকতো আঠা। কীসের আঠা, ওই আঠা লাগানোর কায়দা কৌশল তখন বুঝতাম না। এহনতক বুঝি না ওই পাখিশিকারীদের থাইক্কা আমাদের লাহান এক্কেরে আলাদা কিছিমের ভদ্দরলোকগুলা হরহামেশা কেমনে কেমনে একজন আরেকজনের পাছায় আঠা লাগায়া ফায়দা লুঠবার উত্তেজনায় মশগুল হয়া আছে।
তো, খুব হুশ কইরা, খুব সাবধানে জোড়া দেয়া বাঁশ ঝাঁকড়া কোন বট, পাকুড় অথবা দেবদারু, গাব অথবা পুরোন কোন ছফেদা গাছ, আর আমি তখন সেই পুরোন গন্ধে কাঁপতে থাকা সব রকম গাছগাছালির নামও যে ঠিকঠাক জানতাম তেমন নয়; যাই হোক আকাশের দিকে চোখমুখ চেগাইয়া জাইগা থাকা সেই গাছগুলানের ডালে ডালে গান গাইতে থাকা, লুকায়া থাকা, নিরাপদে থাকা, বিশ্রামে থাকা, আনন্দে থাকা পাখির ঝাঁকের দিকে খুব হুশ কইরা ওরা ঠেইলা দিত সেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর বাঁশ, জাদুর লাঠি। বাঁশের মাথায় আঠার লগে লেপটাইয়া যাইত সবুজ পাখি, কালা পাখি, লাল পাখি, ধূসর পাখি, মেহগনি রঙ্গের পাখি। আমি অবাক উত্তেজনায় কাঁইপা উঠতাম, তাকায়া থাকতাম সেই আঠার ভিত্রে আটকায়া যাওয়া পাখির দিকে; ভয়ানক জান্তব জীবন; টগবগাইন্যা, পাখা ঝাপটায়া উড়বার চাইতেছে উঁচায়। শূন্যে। পারতেছে না।
.তারপর সেই কাঞ্চাসোনা পাখিগুলান কাঞ্চাসবুজ বাঁশের খাঁচায় বন্দী হইলে আমার উত্তেজনা, আমার আনন্দ বন্দী হয়া যাইত সেই খাঁচাবন্দী পাখির লগে। এই রকম কইরা আমি আটকায়া যাইতে লাগলাম রহস্যের খাঁচায়, রসের খাঁচায়, জাদুর খাঁচায়, দুনিয়ার খাঁচায়। আমি ওদের লগে, সেই যারা বাঁশ ছিইলা বাঁশ চিইরা হরেক রকমের গৃহস্থালি তৈজস ধামা, কুলা, মাছ ধরার সরঞ্জাম বানাইতে বানাইতে লাল কাঁচা রঙে ওইগুলাকে রাঙায়া দিয়া ওদের ভাষায় গান আউড়াইতে আউড়াইতে বিড়িতে আগুন ধরাইত। আমি সেই আগুনলাল গানগুলার দিকে তাকায়া তাকায়া আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগুন দুপুরগুলাকে ছড়ায়া ছিটায়া ফালাইতাম।
রাষ্ট্র আমারে সুনাগরিক বানাইতে চায়, সার্ভেন্ট বাইতে চায়। আমরা যখন শুনি সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা আর রাজনীতির মালিকরা হইল গিয়া জনগণের সেবক, জনগণের সার্ভেন্ট তখন আমরা আনন্দে গদগদ হইবার লাগি। সহি কথা হইতেছে, আমার ভিত্রের দাস্য ভাবটা অন্যের ভিত্রে দেইখা তখন মজা পাইতে থাকি; আহা কী মজা উনারা হইতেছেন জনগণের চাকর, উনাদের ভিত্রেও দাস্য ভাব আছে এইরকমটা ভাইবা নিজেরা বুঝদার হইবার খায়েশ বাতলাই।
ওদেরকে কখনো হুক্কা খাইতে দেখি নাই। ওরা থাকতো খালের ধারে। কখনো বা আমাদের স্কুলের পাশের খোলা জায়গায়, ওদের আমি দেখতাম রাস্তার ধারে খালের পাশে উদলা রোদের নিচায় গতর ছাইড়া পইড়া রইছে মহানির্বিকার। একদিন হাঁটের ভিতর সঙ্গন কাকাকে দেইখা ভেবাচেকা খাইলে সঙ্গন কাকা আমারে বাতাসা কিইনা খাওয়াইছিল। সঙ্গন কাকার পোলার নাম আছিল পেঙ্গা। পেঙ্গার লগে আমার রস জইমা গেছিল পাখিধরা আঠার মতো। তখনো আমি বুঝতাম না এই আঠাআঠা রসের লাইগাই আমারে কানতে হইবো, আমারে হইতে হইবো উদাস; আমারে হইতে হইবো বাইচ্চা থাকনের দাস।
ডানা মেইলা দেওয়া রোদের ভিত্রে, হাজার রঙ্গের রাস্তার ভিড়ে আমরা দুই বন্ধু কাগজের ঠোঙ্গার ভিত্রে আমাদের নিরিবিলি স্পর্শকাতর আঙুলগুলা ঢুকায়া বিলাতি দুধগুলা উঠায়া নিতাম; ঢুকায়া দিতাম মুখের মইদ্যে। আমাদের কথা কইতে থাকা জিব্বা, আমাদের কথা কইতে থাকা ঠোঁটগুলা বিলাতি দুধের মিহি পাউডারে সাদা হয়া যাইত। দাঁতের লগে দুধের মিহিগুড়াগুলা আঠা আঠা লাইগা থাকতো, সাদা পিছলা পিছলা মিষ্টি অনুভব, ওই মিষ্টিমিষ্টি অনুভবগুলা লালা হয়া গলার ভিত্রে টগবগাইয়া উঠলে পেঙ্গা হাইসা উঠতো। ওর হাসির লগে বটতলার বিল্লু পাগলার মিল খুঁইজা পাইতাম। পেঙ্গাও বিলু পাগলার মতো নেংটা থাকতো। নুনুর লগে বান্ধা থাকতো ঝুনঝুনি। সেই শব্দকাতর ঝুনঝুনিগুলা আছিল ওর লজ্জাছোঁয়া পোশাক। স্পর্শকাতর ঝুনঝুনি বাইজা উঠত কালা চামড়ার ঘঁষায়। সেই বাইজ্জা উঠা শব্দের লগে, সুরের লগে কাঁইপা কাঁইপা উঠত ওর কালা চামড়া, কালা নুনু। আমার বন্ধুর নির্বোধ চকচকা কালা মাজার লগে লেপটায়া থাকতো মোটা কালা সুতা। সেই অলৌকিক সুতার লগে বান্ধা আছিল তিনটা মাদুলি; একটা রূপোরঙা আয়তাকার চ্যাপ্টা; দ্বিতীয়টা কালচে, লোহার পাত কাইটা তৈয়ার করা গোলাকার মার্বেলের মতো; আর আরেকটা আছিল বন্দুকের গুলির মতো সিসারঙ লম্বাটে গোল। গলায় প্যাঁচানো আছিল কাপড়ের পাড় দিয়া হাতে কাটা ফিতা। ফিতায় বান্ধা জোড়বান্ধা জাদুর দোলক; একটা পিতলরঙ আরেকটা রূপার পানি দিয়া ধুইয়া নেওয়া রূপারঙ জাদুর তাবিজ।
এমন একটা সময়ের ভিতর দিয়া যাইতে থাকলে কখন কীভাবে বাইচ্চা থাকা জীবনের হাত ধইরা কেমনে কেমনে মনে হইতেছে আমাদের ভিত্রে ভদ্রলোক বইলা দাবিদার অনেকেই, বিলাতি ধারায় সভ্য হয়া উঠতে পারি নাই এমন সাধারণ মানুষকে নিচা জাইতকার মানুষ বইলা খারিজ কইরা দিতেছি। অথচ পাঠক, আমি আপনাদের বিশ্বাস করাইতে চাইতেছি পেঙ্গাকে আমি ভালোবাসি। এইগুলা হইল আবাল ভালোমানুশি, হাছা কথা হইল কলোনিয়াল মানুশগুলার পক্ষে অনেস্ট হওয়া জায়েজ না। লেখক বইলা দাবিদার মানুশগুলা যখন নিজে যা বিশ্বাস করি না অথচ আপনাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করায়ে তা বিশ্বাস করানোর কায়দা খুঁজি, লেখকগুলা তখন কেমন মানু? এইসব ভাবসাব এইসব ভণ্ডামি আর অভিনয় টভিনয় দিয়া মোড়ানো থাকে মাইনশের জীবন, লেখক মাইনশের জীবনো এই রকম ভাবসাবে টইটম্বুর। আসলে যিনারা লিখতেছেন, একটু আধটু বুঝবান হইবার চাইতেছেন, পইড়া লেইখা আমজনতাকে আবাল বানায়া রাখতেছেন, নিজেরে কেমনে কেমনে আলাদা কইরা ফালাইতে চায়তেছেন, এইগুলা মানুশ মনে করবার লাগছে চলনবলনে তারা লাইফটারে আউগায়া রাখতেছে, লাইফরে লিড করতেছে। আরেক দল আছেন, যারা এইগুলারে পাশ কাটায়া ভালা ভালা কথা দিয়া জাতে উঠবার চায়তেছেন, মাওলানা মুরুব্বি ব্রাহ্মণ হইবার তামাশায় একরোখা হয়া তালবেতাল হারাইবার লাগছেন, রাজনীতি মারাইবার লাগছেন, জাতি গঠনে দৌড়ঝাঁপ করতেছেন, উপদেশ খয়রাত কইরা বাল ছিঁড়বার লাগছেন, আমজনতা ফায়দা কামাইবার খায়েশে মনে করবার লাগছে ইনারা হইতেছেন পারফেক্ট মানু। মনে লয় এই পারফেকশনের লাইগ্যাই এই রকম মানুশগুলার তাবেদারি করতে করতে কেমনে কেমনে আমরা দাস্য রসের ভিত্রে হান্দায় গেছি।
রাষ্ট্র আমারে সুনাগরিক বানাইতে চায়, সার্ভেন্ট বাইতে চায়। আমরা যখন শুনি সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা আর রাজনীতির মালিকরা হইল গিয়া জনগণের সেবক, জনগণের সার্ভেন্ট তখন আমরা আনন্দে গদগদ হইবার লাগি। সহি কথা হইতেছে, আমার ভিত্রের দাস্য ভাবটা অন্যের ভিত্রে দেইখা তখন মজা পাইতে থাকি; আহা কী মজা উনারা হইতেছেন জনগণের চাকর, উনাদের ভিত্রেও দাস্য ভাব আছে এইরকমটা ভাইবা নিজেরা বুঝদার হইবার খায়েশ বাতলাই। মোদ্দা কথা কেমনে কেমনে আমরা দাস্য ভাবরে ভালোবাইসা ফালাইছি। এইগুলাতে, এই স্বভাবে ফায়দা অধিক। আহারে হাবলাচোদা মানু সেবা, সম্মান আর আনুগত্য এক কথা না। স্যার কথাডা বলনের মধ্যে দাস্য ভাব জারি থাকে, এইগুলা শাসন করনের ভাষা। মানুষরে মর্যাদা দিতে গিয়া আমরা কেমনে কেমনে নিজেরে কমান্ডের ভিত্রে হারায়া ফেলি, আনুগত্যের ভিত্রে পাকড়াও হয়া আপ্লুত হই। তার মানে আমাগোর ভিত্রে দাস্যভাব ঘাপটি মাইরা আছে, আমি সুযোগ কইরা দিতেছি আমারে শাসনের ভিত্রে, চোদনের মইধ্যে হান্দায়া দেওনের। তুই, আপনে, এই জাইতকার বলনগুলারে নাজায়েজ বানায়া ফালাও। শুধু তুমিরে টিকায়া রাখো, শুধু ভালোবাসারে জাগায়া রাখো। সম্মানের ভিত্রে ভালোবাসা থাকে না, সম্মানের ভিত্রে থাকে আনুগত্য। সম্মান থাইকা সাবধান। বরং দরকারি অবস্থাটা হইল মর্যাদা। বাট মর্যাদার ভিত্রে যাতে আনুগত্য ছদ্মবেশে লুকায়া না থাকে, তাই জন্য মর্যাদার চোখগুলারে টাটায়া রাখন জরুরি।
আগে তাকানোটা শিইখা নেও। চোখগুলারে শিখাও কেমনে তাকাইতে হইবো। এইরকম তাকানোগুলা স্কুল কলেজ শিক্ষিতজন রাষ্ট্র তোমারে শিখাইবো না। তেনারা তোমার আনুগত্য চায়, তোমারে আনুগত্য শিখায়া তোমারে শাসনে শৃঙ্খলায় দাসত্বে পাকড়াও করবার চায়, কাজে কাজেই এইগুলা রাষ্ট্র তোমারে শিখাইব না।
দুনিয়ায় কেউ কারো গুরু শিক্ষক হইতে পারে না। ইনফ্যাক্ট সবাই সবাইকে শিখাইতে পারে। অলমোস্ট সবার কাছ থাইকাই অবস্থা বুইঝা শিখনের আছে। এইখানে বয়স কোনো ফ্যাক্ট না। বয়সে বেশি বইলাই তিনার প্রাপ্যতা বারতি, এইটা ঠিক না। বয়সে কম হইলেও বিচক্ষণ হওয়া দোষের না। বিচক্ষণতাকে মর্যাদা দিতে পারাটা জায়েজ। মাগার শুধু বয়সকেই মর্যাদা দিতে হইব, এইটা হইল সমাজধর্মের ট্যাবু। বহুত পুরানা বয়ানগুলার মধ্যে একখান নাখাস্তা বয়ান হইল, অতিরিক্ত ভদ্রতা দাসত্বের লক্ষ্মণ। নিজেরে দাস বানায়া সুখি হওনের মইধ্যে আশেক-মাশুকের সম্পর্ক পয়দা হয় বটে, বাট মাইনশের লগে মাইনশের এই সম্পর্ক জায়েজ করনের মধ্যে দুনিয়াবি কোনো মর্যাদা আছে বইলা মাইনা নিতে আপত্তি। এইগুলা হইতেছে শাসনের কায়দাকৌশল। সমাজের ছোটবড়ো ভাব, সম্মান-অসম্মান ভাব, নীতিগত সিদ্ধান্ত মারাইয়া ফায়দা উঠানো, সবকিছুর ভিত্রেই ঘাপটি মাইরা আছে ট্যাবু। এইটা করন যাইবো না, ওইটা ভালা না। এইরকম না-গুলারে, এইরকম ভয়গুলারে, এইরকম ভদ্রতাগুলারে অভ্যাসগতভাবে অনুসরণ না কইরা নিজের অবস্থানরে জাগায়া রাখন জরুরি। দাস হয়া শান্তি পাইতে চাইলে অদেখা শূন্য খোদার, নাইখোদার কাছে দাস হয়া যাও, বাট মানুষের কাছে না। যোগ্যতা বেশি তো কি হইছে, তুমি সেই যোগ্যতার দাসত্ব কেন করবা? তাইলে কেমনে নিজেরে জাগায়া রাখবা, কেমনে নিজেরে আগায়া নিবা, কেমনে আরেকজন তোমারে মর্যাদার চোখ দিয়া মানায় নিতে আউগায়া আসবো? কেউ কারোরে জায়গা ছাইড়া দেয় না, দাস স্বভাবরে গলা চিইপা ধইরা নিজের স্পেস নিজেরেই বানায়া নিতে হয়।
সমানে সমান হওনের প্রাকটিস জারি রাখো, ভালোবাইসা দাস না হয়া সমান হয়া যাও, ভালোবাসারে টিকায়া রাখো, দাস্য ভাবরে কবর দিয়া দাও, আর হাইসা হাইসা হাঁইটা যাও। পয়সা নাই তো পয়সা বানাও। তয় নিজেরে দাস বানায়া পয়সা বানানো নাজায়েজ। নিজেরে মর্যাদা দিয়া পয়সার কলার চিইপা ধর। তোমার পয়সা তোমারেই বানাইতে হইবো, কেউ বানায়া দিব না, তোমার মর্যাদা তোমারেই জারি রাখতে হইবো। ফকিন্নি লুইচ্চা চোর বাটপার হইয়া এই মর্যাদাগুলা জারি রাখন সম্ভব না। অন্যরে প্রভু বানায়া দেওনের সুযোগ কইরা দিয়া এই মর্যাদাগুলারে জারি রাখন সম্ভব না। লিডার চোদাইও না, কাউরে লিডার হওনের সুযোগ কইরা দিও না, নিজের পথ নিজে তৈয়ার কর, নিজের হাঁটাটা নিজে হাঁটো। আর না পারলে ভালোবাইসা আরো মানুশরে লগে লও, দেখবা হাঁটনের রাস্তাগুলান কেমনে কেমনে সহজ হয়া যাইতেছে।
তাইলে সেই কথাই রইলো, স্যার আপনে বাদ দেই, প্রভু গুরু বাদ দেই, ছোটো বড়ো খারিজ কইরা মানুশরে মানুশ বইলা মাইনা নেই। পারবা? তাইলে আইসো হাত ধরো। বাইচ্চা থাকাটা জরুরি, তার চাইতেও জরুরি মানুশ হয়া টিইকা থাকা। বড়ো মাইনশের ট্যাবুগুলারে, ‘লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চরে সে’, এই কিসিমের ট্যাবুগুলারে ফিক্কা ফালায়া নিজেরে কেমনে কেমনে স্বাধীন বানানোর প্র্যাকটিসটা আগায়া নাও। নিজের দিকে তাকাও, তারপর তোমার চোক্ষের সামনে যেই মানুটারেই পাইবা তার দিকে তাকাও। মাগার এহনতক তাকাইতে পারতেছ না, তাকাইতেছ বসের দিকে, স্যারের দিকে, জি হুজুরের দিকে, প্রভুর দিকে। তাকাইতেছ ছোটোলোকের দিকে, আনুগত্যের দিকে, কুত্তা বিলাইয়ের দিকে।
আগে তাকানোটা শিইখা নেও। চোখগুলারে শিখাও কেমনে তাকাইতে হইবো। এইরকম তাকানোগুলা স্কুল কলেজ শিক্ষিতজন রাষ্ট্র তোমারে শিখাইবো না। তেনারা তোমার আনুগত্য চায়, তোমারে আনুগত্য শিখায়া তোমারে শাসনে শৃঙ্খলায় দাসত্বে পাকড়াও করবার চায়, কাজে কাজেই এইগুলা রাষ্ট্র তোমারে শিখাইব না। এইগুলা শিখার লাইগা যেই চোখগুলা জরুরি সেইগুলা রাস্তাঘাট থাইকা আমজনতার কাছ থাইকা শিইখা নেওন জায়েজ। শুধু স্কুল কলেজের দিকে না গিয়া মানুষের দিকে যাও, তাকাইতে শিখবা। আর তাকাইতে না শিখলে কেমনে কেমনে স্কুলকলেজের শিক্ষায় যেমনযেমন বারোচোদা আছো তেমন তেমন চোখগুলারেই আরো শানাইতে থাকবা, আর ঠাপাঠাপি চালায়া যাবা। ওইগুলা শিক্ষা দিয়া ভদ্দরলোক হইতে থাকবা বাট চোখ পাইবা না। শেষ কালে তোমার পোলাগুলান, তোমার মাইয়াগুলান, তোমার ভবিষ্যতগুলান মিইলামিইশা তোমাগোর তেইশ মারতে শুরু করবো। তোমরা সোনার মানু, তোমরা দাস্য মানু, মারা খাইতে খাইতে কব্বরে হান্দায়া যাইবা, মাগার আপসোস করনের মতো মন পাইবা না। ও মন না কান্দিও আর। আন্ধাইর দুনিয়ায় যেইদিকে হাল সেইদিকে পাল, শিখায়েছে গুরুজন, ওআল্লা না পাইতেছি কুল। কেমনে কী, এইগুলান কীসের আলামত?
মনে লয় যাহাদের ঈশ্বরভক্তি রহিয়াছে তাহাদের ক্ষেত্রে খোদার লগে প্রেম করতে গিয়া দাস্য রস জুতসই। মাগার মানুষের লগে সম্পর্ক তৈয়ারের জায়গায় দাস্য রস ধান্ধাপ্রবণ। নিকৃষ্ট।