ছেলেরা বড় হচ্ছে। বড়টা কথা বলা শেখার পর থেকে সবকিছুতে প্রশ্নবোধক ‘কেন’ জানতে চায়। ভাবছিলাম কি জবাব দিব যদি একদিন জিজ্ঞেস করে বসে, ‘আমি কোত্থেকে এলাম?’ বা, ‘আমাকে কোথায় পেয়েছ?’ ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে কী উত্তর দিব। সেই ভাবনার জবাব পেয়ে গেছি পিটার মাইল রচিত এলেম আমি কোথা থেকে? পড়ে। বইটি অনুবাদ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও খ্যাতিমান অনুবাদক জিএইচ হাবীব।
আমাদের দেশে বাবা মা’রা বেশকিছু বিষয়ে অর্বাচীনের মতো আচরণ করেন। সন্তানের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বদলে তারা তাকে থামিয়ে দেন, অথবা নানা রকম মিথ বানিয়ে বা বকাঝকা করেন। এমন অনেক নজির আছে বাবা মায়ের বিয়ের ভিডিও বা ছবি দেখে সন্তান বায়না ধরেছে কেন তাকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে না। কান্নাকাটিও জুড়ে দেয় অনেকে। এসব জটিলতা এড়াতে, সন্তানের মানসপট গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এলেম আমি কোথা থেকে?
এলেম আমি কোথা থেকে ? প্রথমবার পড়েছিলাম বারো বছর আগে। চট্টগ্রামের এক বই বিপণিতে। পরে জানতে পেরেছিলাম অনুবাদক আমার বিভাগের শিক্ষক। সেই কপি অবশ্যই বেহাত হয়েছিল ঢের আগে। দ্বিতীয়বার পাঠের সুযোগ হলে ইলিয়াস কমলের সহযোগিতায়৷ ঢাকা প্রকাশের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। মজার ব্যাপার হলো এলেম আমি কোথা থেকে? দ্বিতীয় বারের মতো প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
এলেম আমি কোথা থেকে? অনুবাদ গ্রন্থটির সবচেয়ে নজর কাড়া দিক হলো বাংলায় যথাযথ শব্দচয়ন ও সহজবোধ্যতা। যৌন মিলন ও যৌনানুভূতির মতো আপাতদৃষ্টিতে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো জিএইচ হাবীব রুচিসম্মতভাবে উপস্থাপন করেছেন।
স্বাভাবিকভাবে ছোটরা বেশ কৌতূহলী হয়। জীবজগতের নানা বিষয়ে তাদের কৌতূহল মেটাতে অভিভাবকদের হিমশিম খেতে হয়। বাচ্চারা একটু বড় হতেই তাদের জন্মরহস্য জানতে চায়। পিটার মাইল এই বইয়ে সাধ্যমতো সেই রহস্যের দ্বার উন্মোচন করেছেন স্বাস্থ্যকর ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে। ছোটদের তৈরির পেছনে বড়দের ভূমিকা কী, ছেলে ও মেয়ের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য কী কী, মানবদেহের বিশেষ অঙ্গ পরিচয়, যৌন মিলন, শিশুর শুরু, শুক্রাণু পরিচয়, মায়ের পেটে সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্যায় কী কী, প্রসববেদনা কী, কীভাবে সন্তানের জন্ম দেন মা এসব বিষয় বা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন লেখক। মানবজন্ম নিয়ে লেখকের মন্তব্য পাঠককে নাড়া দেয় :
এই পৃথিবীতে আসাটা সত্যিই
একটা ধাক্কা খাওয়ার মতো ব্যাপার!
এলেম আমি কোথা থেকে? অনুবাদ গ্রন্থটির সবচেয়ে নজর কাড়া দিক হলো বাংলায় যথাযথ শব্দচয়ন ও সহজবোধ্যতা। যৌন মিলন ও যৌনানুভূতির মতো আপাতদৃষ্টিতে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো জিএইচ হাবীব রুচিসম্মতভাবে উপস্থাপন করেছেন। এখানে শিল্পী রাজীব দত্ত বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন কথার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সব ছবি আঁকার জন্য। অভিভাবকদের জন্য এই দিকে একটা লাভ হলো। নিঃসংকোচে তাঁরা সন্তানের হাতে তুলে দিতে পারবেন এই বই। ছোটদের কৌতূহল মেটাতে এই বই দারুণ কাজ দেবে। আমার শিক্ষক জিএইচ হাবীবকে ধন্যবাদ এই মহৎ কাজের জন্য। পাঠকের সাড়াই হতে পারে অনুবাদক ও প্রকাশকের জন্য প্রণোদনা।