বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য। কিস্তি : ১২

গীতা দাস একজন সাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকায় তার কলাম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। সহজিয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য প্রসঙ্গে। আজ প্রকাশিত হলো কিস্তি ১২

ম্রো নৃগোষ্ঠীর কথাসাহিত্য : ইয়াংঙান ম্রো এর অনুদঘাটিত বিষয়

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুসন্ধান চলাকালীন ইয়াঙান ম্রো জানিয়েছেন তাঁর বাংলায় লেখা কথাসাহিত্যের আরও কিছু পান্ডুলিপি প্রস্তুত রয়েছে। যেমন, উপন্যাসসমূহ হলো : শ্মশান লোকের কান্না, রক্ত পিপাসা, অভিমানী, অমাবস্যা রাতের গর্জন, আদরের সন্তান, পবিত্র শ্মশান ভূমি, মায়াবি পাহাড় এবং ছোটগল্পের পান্ডুলিপি নীড়হারা পাখি  বইটি ছাপানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০২১ সালের জুন মাসে ইয়াঙান ম্রোর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় যে, ইতোমধ্যে নীড়হারা পাখি  পান্ডুলিপিটির চরিত্র পরিবর্তন করা হয়ে গেছে। তাঁর ব্যক্তিগত সৃজনশীল রচনা ১৮টি ছোটগল্পের সঙ্গে ১২টি ম্রো লোককথা মিলিয়ে ম্রো লোককথা নামে বইটি আপন আলো প্রকাশন, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বইটি প্রকাশে সহযোগিতা করছেন শামসুদ্দীন শিশির নামে একজন শিক্ষক। ম্রো লোককথা বইটি চট্টগ্রাম বাতিঘর থেকে জুলাই মাসে সংগ্রহ করা হয়।

 

বইয়ের সূচিপত্রে, এমনকি বইয়ের ভেতরে প্রতিটি গল্পের বিপরীতে, কোথাও লেখকের নাম উল্লেখ নেই। অর্থাৎ এটি বোঝার কোনো উপায় নেই যে কোনটি ম্রো লোকগল্প এবং কোনটি ইয়াংঙান ম্রোর নিজস্ব গল্প। গবেষণাকালে, ইয়াংঙান ম্রো নিজেই কোনটি তাঁর রচিত এবং কোনটি ম্রো লোকগল্প তা ইমেইল করে জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী তালিকা নিম্নে দেয়া হলো:

ইয়াংঙান ম্রো রচিত ছোটগল্প : পবিত্র জুম পাহাড়ের জীবন, জাদুর কাঠি, শ্মশান ঘাটের মাটি, মায়াবী পাহাড়, রক্ত পিপাসু, হরিণরূপী রাক্ষস, মাছ খেকো, নষ্ট ছেলে, সামসিন, অমানু্ষ,‌ গুপ্তধন, চিরবন্ধন, মাংকম ও শিকারী কুকুর, সৎ মা, অভিমানী, নীড় হারা পাখি, লোভী চেরপাও, আদরের সন্তান।

ম্রো লোকগল্পের তালিকা : সুন্দরী ক্লোবং, সুন্দরী বেগুন কন্যা, সুন্দরী দেংবং যুবতী, সুন্দরী তারা কন্যা, সাত শিকারী, মানুষরূপী হরিণ, দম্পতি আর রাক্ষস, আনাংরুয়িয়া, রাক্ষস আর শিকারী দল, আরোন আলং আর আদোং আদাং, লোভের পরিণাম, ভালবাসার পরিণাম।

 

তবে বইটির ভূমিকায় লেখক কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি  লিখেছেন, “নিজেদের রুপকথার গল্প বাদ দিয়ে ছোট ছেলেমেয়েরা আজ ইংরেজি ভূত-প্রেতের ছবি দেখে। এতে করে আমাদের নিজেদের রুপকথার গল্প হারিয়ে যেতে থাকে। সংস্কৃতি একবার হারিয়ে গেলে আর কোনদিনও পাওয়া যাবে না, তাই আমি ম্রোদের উপকথা, রুপকথা গল্পগুলো সংগ্রহ করে ‘ম্রো লোকগল্প’ নামক গল্প গ্রন্থ লিখতে থাকি। একসময় আমাদের পূর্বপুরুষরা গভীর পাহাড়ে বাঘ-ভাল্লুকের সাথে লড়াই করে জীবনযাপন করতেন। আমি জানি শব্দ চয়ন, বাক্য গঠনে অনেক ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। এ গ্রন্থে মোট ত্রিশটি ছোট ছোট গল্প রয়েছে। আমাদের পবিত্র জুম পাহাড়ের মানুষদের সুখ-দুঃখ আর হাসি-কান্নার কাহিনী তুলে ধরাই ছিল ছোট গল্পের “ম্রো লোকগল্প” গ্রন্থের মূল লক্ষ্য।”

 

অন্যদিকে, ইয়াংঙান ম্রোর নিজের লেখা উল্লিখিত গল্পগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংকলনেও প্রকাশিত হয়েছিল বলে জানা যায়। যেমন, মুকুল কান্তি ত্রিপুরা সম্পাদিত গিরিপ্রভা সাহিত্য পরিষদ, বনরূপা, রাঙামাটি কর্তৃক ২০১৭ সালে প্রকাশিত গিরিপ্রভা (সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিষয়ক সাময়িকী) সংকলনে (পৃষ্ঠা ১১৫) ‘আদরের সন্তান’ গল্পটি ছাপা হয়েছিল।

 

ম্রো লোকগল্প বইটির ফ্ল্যাপে শামসুদ্দীন শিশির, শিক্ষক প্রশিক্ষক ও শিক্ষা চিন্তক যা লিখেছেন এর সারমর্ম বোধগম্য নয়। তিনি লিখেছেন :

‘রিইয়ুং’ বই ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০ পৃষ্ঠা এই রিইয়ুং খতি ম্রো কিংবদন্তি মেনলে লেখা সংকলন গ্রন্থ ছিল। নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া মেনলে লেখাগুলোকে এক জায়গা রিইয়ুং খতি বইতে সংকলন করা হয়। ভবিষ্যতেও ইয়াংঞান ম্রো, ম্রোদের জীবন-জীবিকা নিয়ে লিখতে আগ্রহী। তাঁর প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে – প্রবন্ধ ও ছোট গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- আদরের সন্তান, মা-বাবার স্বপ্ন, গুপ্তধন, ডিম পাহাড়ের আর্তনাদ, বোবা কান্না, জুম পাহাড়ের জীবন, কুইমিয়া পাহাড়, উড়ন্ত পাথর, জুমের রাক্ষস, নিজভূমে পরবাসী, মনের মানুষ, জুমের ভালোবাসা, আংকো চ্যংলং, চিম্বুক পাহাড়ের কান্না, পবিত্র শ্মশান মটি, মুখ ফেরানো, জুম পাহাড়ের গল্প, নির্মল আকাশের হঠাৎ কালো মেঘের ছায়া, ছুটির ঘন্টাসহ আরো অনেক।” ( ম্রো, ম্রো লোকগল্প, ২০২১, ফ্ল্যাপ)

এখানে ‘ভবিষ্যতেও’ শব্দ দিয়ে শুরু বাক্যে মেনলের সাথে ইয়াংঙান ম্রোর সম্পর্ক অস্পষ্ট এবং “তাঁর প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্রবন্ধ ও ছোট গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে…’’ বলাতে কোনগুলো ছোটগল্প আর কোনগুলো প্রবন্ধ তা বিভাজন সম্ভব নয় । অন্যদিকে এ গ্রন্থেই ইয়াঙান ম্রোর আদরের সন্তান, গুপ্তধন, জুম পাহাড়ের জীবন (পবিত্র জুম পাহাড়ের জীবন নামে), জুমের রাক্ষস (রাক্ষস নিয়ে দুটি গল্প এবং প্রায় প্রতিটি গল্পেই রাক্ষসের অস্তিত্ব বিরাজমান), পবিত্র শ্মশান মাটি (শ্মশান ঘাটের মাটি নামে), জুম পাহাড়ের গল্প (আর সবইতো জুম পাহাড়ের গল্প)।

 

বইয়ের শেষ পাতার ফ্ল্যাপে লেখা শামসুদ্দীন শিশিরের বক্তব্যে এটি মোটেও স্পষ্ট নয় যে, আসলে এগুলো কী ধরনের রচনা। অর্থাৎ বইয়ের ভেতরের লেখাগুলোর মধ্যে কোনটি ব্যক্তির সৃষ্টিশীল রচনা বা কোনটি লোকরচনা তা বোঝা যায় না। তিনি কৌশলী বক্তব্য প্রদান করেছেন। ফলে, ইয়াংঙান ম্রো তাঁর ব্যক্তিগত রচনা ও লোকগল্প একসঙ্গে প্রকাশ করছেন — এরকম একটি ভূমিকা শামসুদ্দীন শিশির দিতে চেয়েছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে একজন লেখকের সৃজনশীল লেখা এবং একটা নৃগোষ্ঠীর লোকসম্পদ গল্পগাঁথা এক মলাটে কেন স্থান দেয়া হয়েছে তা অনুধাবনের জন্য ইয়াংঙান ম্রোর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান যে, তা হলে বইটি বাজারজাতকরণে সহায়ক হবে। কোন ব্যক্তি যদি কোনো বইয়ের ফ্ল্যাপে কোনো বাণী দিতে চান তবে ঐ ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পঠন-পাঠনের পরই তা করা উচিত।

ম্রো কথাসাহিত্যকে এগিয়ে নিতে ইয়াংঙান ম্রোর এককভাবে এগিয়ে আসা মানসিকভাবে সাহসী পদক্ষেপ, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কঠোর ধৈর্যের পরিচায়ক। তাঁর সৃজনশীল প্রতিভা রয়েছে বলে নিশ্চয়ই তিনি আত্মবিশ্বাসী।

ইয়াংঙান ম্রোর দ্বিতীয় ভাষা বাংলা বলে বাক্য গঠন, শব্দ প্রয়োগ ও বানানসহ কিছু সমস্যা জুম পাহাড়ের মানুষ ও ম্রো লোকগল্প বইয়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিপত্নীককে বিধবা বলেছেন। জুম পাহাড়ের মানুষ বইটি উপন্যাসের আঙ্গিক রক্ষা করতে না পারলেও তা নিয়ে সাহিত্য সমালোচক হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষণ করা হয়নি। ম্রো নৃগোষ্ঠীর একজন লেখক বাংলায় কথাসাহিত্য চর্চার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জুম পাহাড়ের মানুষ পর্যালোচনায় কোন রকম নিবিড় আঙ্গিকগত বিশ্লেষণের প্রয়াস গ্রহণ করা হয়নি।

 

অন্যদিকে, ম্রো লোকগল্প  গ্রন্থে ইয়াংঙান ম্রোর ১৮টি গল্পের একটিতেও ছোটগল্পের কোনো বৈশিষ্ট্য রক্ষিত হয়নি। এ ধরনের সমস্যাকে অনুসন্ধানে বিবেচনায় আনা হয়নি। কিন্তু অনুসন্ধানে দুঃখের সাথে উন্মোচন করা হচ্ছে যে, ২০২০ সালে প্রকাশিত জুম পাহাড়ের মানুষ বইটি থেকে হুবহু পাতার পর পাতা কপি করে ২০২১ সালে ছোটগল্প হিসেবে ম্রো লোকগল্প  গ্রন্থে সংযোজন করা হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় যে, কিছু ছোটগল্প উপন্যাস নামক জুম পাহাড়ের মানুষ বইটিতে সংযোজন করে দিয়েছেন।

 

ইয়াঙান ম্রোর ছোটগল্প নিয়ে আলোচনার পূর্বেই বলা হয়েছিল যে ইয়াঙান ম্রোর জুম পাহাড়ের মানুষ উপন্যাসটিতে কাহিনির ধারাবাহিক কোন পরম্পরা নেই। এর কারণ অনুধাবন করতে গেলে তাঁর ছোট গল্পগুলোর পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। উপন্যাস পাঠ-পরবর্তী সময়ে গল্পগ্রন্থ পাঠপুর্বক কয়েকটি গল্পের সাথে তুলনা করে এই সিদ্ধান্তে আসা অসমীচীন নয় যে, যদি গল্পগুলো উপন্যাসের পুর্বে রচিত হয়ে থাকে, তবে উপন্যাসের নামে ইয়াঙান ম্রো কিছু ছোটগল্পকে সংযোজন করে উপন্যাস সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন। এক বছরের মধ্যে দুটো বই প্রকাশে এমন কাজকে বিস্মরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ:

  • জুম পাহাড়ের মানুষ: প্রথম পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা ১০ এর সাথে ম্রো লোকগল্প: ‘মায়াবী পাহাড়’ নামক গল্পের পৃষ্ঠা ২৭
  • জুম পাহাড়ের মানুষ: ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা ২৩, ২৭ এর সাথে ম্রো লোকগল্প: ‘পবিত্র জুম পাহাড়ের জীবন’ নামক গল্পের পৃষ্ঠা ৭, ৮ ও ১১। এমন কি পিতা ক্রীমতুই, পুত্র তনসিং ও বৈদ্য চ্যংরেং চরিত্রের নাম পর্যন্ত এক।
  • জুম পাহাড়ের মানুষ:  অষ্টম পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা ৩১ ও ৩২ পৃষ্ঠা, ৩৩ পৃষ্ঠার অর্ধেক, ৩৪ এবং ৩৫ পৃষ্ঠার অর্ধেকের বেশি এর সাথে ম্রো লোকগল্প: ‘আদরের সন্তান’ গল্পটির প্রথম দেড় পৃষ্ঠা ছাড়া পুরো গল্পটিই উপন্যাসে সংযোজন করা হয়েছে। চরিত্রের নাম মাংসা, দনরই, তুমলেং পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়নি। উল্লিখিত হয়েছে যে ‘আদরের সন্তান’ ছোটগল্প হিসেবেও ছাপা হয়েছিল।     
  • জুম পাহাড়ের মানুষ:  একাদশ পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮ এর সাথে ম্রো লোকগল্প: ‘মাংকম’ আর ‘শিকারী কুকুর’ নামক গল্পের পৃষ্ঠা ৮৯, ৯০,৯১, ৯২, ৯৩।
  • জুম পাহাড়ের মানুষ: ষোড়শ পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা ৬২, ৬৩, ৬৪ এর সাথে ম্রো লোকগল্প: ‘হরিণরূপী রাক্ষস’ পৃষ্ঠা ৪২, ৪৩ ও ৪৪।

জুম পাহাড়ের মানুষ বই থেকে ম্রো লোকগল্প বইয়ে পুনরাবৃত্তি ও উপন্যাসের নামে বিভিন্ন ছোটগল্প জোড়া লাগানো নিজের সঙ্গে ও নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতারণা এবং সাহিত্যচর্চার নামে বই ছাপানোর প্রবৃত্তি কাজ করেছে। উল্লিখিত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, ম্রো লোকগল্প বইটি মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে গুরুত্ব হারিয়েছে, জুম পাহাড়ের মানুষ বইটি উপন্যাসের নামে গোঁজামিল অর্থাৎ এটি আসলে অসংলগ্ন কিছু ঘটনার একত্রীকরণের চেষ্টা মাত্র। এতে ইয়াঙান ম্রো বিশ্বস্ততা হারিয়েছেন লেখক হিসেবে নিজের কাছে, ম্রো নৃগোষ্ঠীর কাছে এবং অবশ্যই  পাঠকের কাছে।

 

ম্রো কথাসাহিত্যকে এগিয়ে নিতে ইয়াংঙান ম্রোর এককভাবে এগিয়ে আসা মানসিকভাবে সাহসী পদক্ষেপ, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কঠোর ধৈর্যের পরিচায়ক। তাঁর সৃজনশীল প্রতিভা রয়েছে বলে নিশ্চয়ই তিনি আত্মবিশ্বাসী। তা না হলে তিনি প্রথমেই উপন্যাস নামে একটি বই ছাপিয়ে কথাসাহিত্য শাখায় তাঁর পদচারণা জানান দিতেন না। কথাসাহিত্য রচনায় দক্ষ হতে হলে গদ্য সৃষ্টিতে দখল থাকা প্রয়োজন। এজন্য সাধনা করতে হয়। উপন্যাস রচনায় এ সাধনা দরকার বহুগুণ বেশি। তাঁর প্রতিভা, সাহস, পরিশ্রম এবং ধৈর্যকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য অধিক পঠন-পাঠন ও সাহিত্য বলয়ের সাহচর্য প্রয়োজন এবং নিজের প্রচারের আকুতি পরিহার করতে হবে ও বাংলার শিয়াল ও কুমিরের লোকগল্পের মতো একটা কুমিরের বাচ্চা গর্ত থেকে বের করে কুমিরকে দেখানোর মতো ফাঁকি বর্জন করতে হবে। সম্প্রতি এধরনের কারচুপির সংখ্যা সর্বত্র এতো বেশি হচ্ছে যে আমাদের এখনই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি, ইয়াংঙান ম্রো নামে একজনের একক প্রচেষ্টা ম্রো নৃগোষ্ঠীর কথাসাহিত্যকে পাঠক সমাজের কাছে উপস্থাপন করলেও, নিবিড় পঠনপাঠনের পর তাকে অপচেষ্টা বলার মতো তথ্য পাওয়া দুঃখজনক হলেও পাঠান্তে এটাই অনুসন্ধানে প্রাপ্ত উপসংহার।

(চলবে। পরবর্তী কিস্তি, তঞ্চঙ্গ্যা কথাসাহিত্য)

পড়ুন ।। কিস্তি ১১

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য ।। কিস্তি : ১১

আগের লেখামানব শিশুর জন্মরহস্য : ‘‘এলেম আমি কোথা থেকে?’’
পরের লেখাআহমদ ছফার কবিতা
গীতা দাস
গীতা দাসের জন্ম নরসিংদী জেলার সদর উপজেলায়। তিনি একজন সাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই লেখালেখি করছেন। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকায় তার কলাম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়াও অনলাইনে পরিচালিত বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সাহিত্য বিষয়ক অনুসন্ধান ও সাহিত্য সমালোচনা তার নিয়মিত আগ্রহের বিষয়।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here