ঔপনিবেশিক আধুনিকতা : বাংলায় ধাত্রীবৃত্তি (১৮৬০-১৯৪৭) ।। কিস্তি : ৬

অম্বলিকা গুহ — ভারতের কলকাতাভিত্তিক একজন স্বাধীন গবেষক। ২০১৮ সালে প্রকাশিত অম্বলিকা গুহের Colonial Modernities: Midwifery in Bengal, C.1860–1947 বইটি মূলত দেখাতে চেয়েছে, বাংলায় ১৮৬০ সাল থেলে ১৯৪৭ সালের ভেতর ধাত্রীবৃত্তি কীভাবে প্রচলিত দাইদের থেকে সরে গিয়ে পেশাদার ধাত্রী ও চিকিৎসকদের আধিপত্যপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছিল। একই সাথে মানবশিশু জন্মদানের মতো একটি প্রাকৃতিক বিষয়কে কিভাবে ঔপনিবেশিক শাসন একটি চিকিৎসার বিষয়ে পরিণত করেছিল, আর এই পরিণত করার পেছনে সেই সময়ের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকদের তৎপরতা, যার অন্যতম ছিল সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে লেখালেখি, তারই সামাজিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছে এই বই। অম্বলিকার বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক শিবলী নোমান

অধ্যায় দুই

ধাত্রীবৃত্তির শৈল্পিকতা বিজ্ঞান: ধাত্রীবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ একটি চিকিৎসা ডিসকোর্সের গঠন, ১৮৬০ এর দশক থেকে ১৯৩০ এর দশক

১৮৭৮ সালে কুইন’স কলেজ, গালওয়ের (আয়ারল্যান্ডের কুইন’স বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ধাত্রীবিদ্যার উপর এক প্রারম্ভিক বক্তৃতায় ডক্টর আর. জে. কিংকেড ধাত্রীবৃত্তি ও নারীদের রোগসমূহকে ‘ধাত্রীবিদ্যা’ ও ‘গাইনোকলজি’ বলে উল্লেখ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ধাত্রীবিদ্যার গুরুত্ব উল্লেখ করে কিংকেড বলেন :

এই সত্য আরো বেশি বেশি করে উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে ধাত্রীবিদ্যা ও গাইনোকলজি হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা থাকতে হয়, যা ধারণ করে সমাধান করা সবচেয়ে জটিল এমন সমস্যাসমূহ, যেখানে অপারেশনগুলো সবচেয়ে সফল অস্ত্রোপচারের কৌশলকে আহ্বান করে, এবং সাধারণ রোগসমূহ স¤পর্কে অধ্যয়নের একটি পথ খুলে দেয় যা অন্য কোন শাখায় সম্ভব নয়…ধাত্রীবিদ্যা ও নারীদের রোগসমূহের সাথে সম্পর্কিত শাখা ছাড়া আপনাদের পেশার অন্য কোন শাখাকে বিস্তারিতভাবে জানা আপনাদের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কিংকেডের এই কথাগুলো উনিশ শতকের শেষ দিকে ধাত্রীবৃত্তি প্রসঙ্গে ব্রিটিশ চিকিৎসা পেশার এক ধরনের প্রত্যক্ষ পরিবর্তনেই ইঙ্গিত করে। এই সময়ে একটি ‘মার্জিত রুচি’ কিংবা একটি ‘শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক’ সত্তা দ্বারা পঠিত হওয়ার পক্ষে অনুপযুক্ত একটি বিষয় হিসেবে একে বিবেচনা করার প্রবণতাটি চিকিৎসা পেশা দ্বারা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়েছিল। কলেজ অব ফিজিশিয়ানস-এর ফেলোশিপ থেকে ধাত্রীবৃত্তির চর্চাকারীদের বাদ দেয়ার এবং ১৮২৮ সালের আগে তাদেরকে কলেজ অন সার্জনস-এর কাউন্সিলে আসন গ্রহণ করতে বাধা দেয়ার পূর্ববর্তী প্রবণতাগুলোও বন্ধ হয়েছিল। ১৮৮৬ সালের মেডিকেল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ঘোষণার ফলে সকল পর্যায়ের চর্চাকারীদের নিবন্ধনের জন্য ঔষধবিদ্যা বা মেডিসিন ও অস্ত্রোপচার বা সার্জারির সাথে সাথে ধাত্রীবৃত্তি বিষয়ক পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ব্রিটেনে ধাত্রীবৃত্তিকে চিকিৎসা অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তৈরি করতে এই আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্মাণ করে। কিংকেড যেমন বলেছেন সেভাবে ধাত্রীবিদ্যা ও গাইনোকলজি সংক্রান্ত চিকিৎসা অধ্যয়নের উন্নয়নের জন্য উপনিবেশিত বাংলায় পশ্চিমা চিকিৎসা শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রসারে কতটা মনোযোগ প্রদান ও সমন্বয় করা হয়েছিল?

 

ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের শক্তিশালী অংশ হিসেবে বাংলায় পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে সাথে সর্বাপেক্ষা ব্যপৃত ও ভালোভাবে প্রোথিত চিকিৎসা স্থাপনা বিদ্যমান ছিল। ১৮৩৫ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার পর ১৮৪১ সালে ধাত্রীবৃত্তিকে কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অধ্যায়ের মূল প্রয়াস হলো চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা ও ধাত্রীবৃত্তি চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা। এর একটি প্রধান দিক ছিল দাইদের প্রশিক্ষণ কিংবা পশ্চিমা চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের দ্বারা দাইদের প্রতিস্থাপন। এই অধ্যায়ের মনোযোগে থাকা আরেকটি মূল দিক হলো, ধাত্রীবৃত্তির চিকিৎসাশাস্ত্রীয় চর্চাকারী নারী ও পুরুষের ভেতর পেশাদার স¤পর্কের পুনর্গঠন, যেখানে নারীরা মূলত ব্যবহারিক চর্চার জগতের সাথে কর্তৃত্বপূর্ণভাবে জড়িত ছিলেন (যেমন, শিশুজন্মদানের সময় মায়ের সাথে থাকা) এবং পুরুষরা ধাত্রীবৃত্তি শিক্ষার তাত্ত্বিক এলাকা ও ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণায় অবদান রাখতেন। পশ্চিমে ও ভারতে শিশুজন্মের ইতিহাস-রচনাসংক্রান্ত দুইটি কর্তৃত্বশীল চিন্তাধারার তদন্তের মাধ্যমে এই অধ্যায়ের বিশ্লেষণাত্মক কাঠামোটি গঠিত। পশ্চিমে ধাত্রীবৃত্তির এলাকায় অস্ত্রোপচার/প্রযুক্তির আক্রমণকে দ্ব্যর্থহীনভাবে এই পেশায় পুরুষদের কর্তৃত্বের তর্কাতীত চিহ্ন হিসেবে মেনে নেয়া হয়। ধাত্রীবৃত্তির চিকিৎসায়ন ও প্রাযুক্তিক বিস্তৃতির চালিকাশক্তি হিসেবে এই ধারার ব্যাখ্যায় পুরুষ চিকিৎসক দ্বারা জন্মদানকালে সহায়তাকারী নারীদের উচ্ছেদের কথা বলা হয়। পশ্চিমা ইতিহাস-রচনার বিপরীতে, ভারতের পণ্ডিতগণ ভারতীয় সম্মানিত নারীদের পর্দায় থাকার চর্চাকে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন যার কারণে ধাত্রীবৃত্তিতে পেশাদার পুরুষদের উপস্থিতি দমিত হয়েছিল এবং এটিই ভারতে শিশুজন্মকে চিকিৎসায়িত করার ক্ষেত্রে নারী চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয়তার জন্য দায়ী ছিল।

 

এই অধ্যায় বলে যে, বাংলায় দাইদের প্রান্তিকিকৃত/উচ্ছেদ করে শিশুজন্মে চিকিৎসাজনিত অনুপ্রবেশে চিকিৎসা পেশাজীবী পুরুষদের স্পষ্ট কর্তৃত্ব প্রতিফলিত হয় না, যা পশ্চিমে হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। একইভাবে, ভারতীয় ইতিহাস-রচনাবিদ্যার চলমান প্রবণতা হিসেবে শিশুজন্মকে চিকিৎসায়িত করার ক্ষেত্রে চিকিৎসা পেশাজীবী নারীদের কর্তৃত্বেই সম্পূর্ণ আলোকপাতও ঐতিহাসিক বিভ্রমের একটি ধ্রুপদী উদাহরণ। এই ফাঁক পূরণের জন্য এই অধ্যায় নারী ও পুরুষ উভয় চর্চাকারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে যেখানে ধাত্রীবৃত্তির এলাকায় তাদের কর্তৃত্বের অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করা যায়। এটি পুরুষ চিকিৎসকদের অবদানকে তীক্ষ্ণ ঐতিহাসিক আলোয় পরীক্ষা করে যেখানে তারা বলেন সরাসরি অনুপ্রবেশমূলক না হয়ে তাদের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি আদর্শিক ও শিক্ষাসম্পর্কিত। পেশাদারিত্বের সংকুচিত প্রিজম দ্বারা বুঝতে না চেয়ে, জাতীয়তাবাদের বিস্তৃত ও ব্যাপ্তিশীল কাঠামোতে একে বুঝতে চাওয়া উচিত। এই অধ্যায় বলতে চায় যে, ধাত্রীবৃত্তির চিকিৎসা ডিসকোর্সের গঠনের ফলেই শিশুজন্মের চিকিৎসায়ন হয়েছিল যেখানে একে ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত বিজ্ঞান হিসেবে পুনর্সংজ্ঞায়িত করা হয়; উনিশ শতকের মধ্যভাগে কলকাতা মেডিকেল কলেজের স্থানীয় ও ব্রিটিশ পুরুষ চিকিৎসা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ধাত্রীবৃত্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি সক্রিয় হয়। তথাপি উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের শুরুতে স্থানীয় ধাত্রীদের বিপরীতে চিকিৎসা পেশাজীবী নারীদের হস্তক্ষেপের ফলেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষায়িত শাখা হিসেবে ধাত্রীবৃত্তির চর্চা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিল।

 

ধাত্রীবৃত্তির শিল্প

আধুনিক চিকিৎসা পেশার কর্তৃত্বের আগে, বিশ্বজনীনভাবেই ধাত্রীবৃত্তি ছিল একটি নারীনিয়ন্ত্রিত সাংস্কৃতিক এলাকা যা গঠিত ছিল পার্থক্যপূর্ণ ও অঞ্চলভিত্তিক প্রথাসমূহ দ্বারা। একটি বৈজ্ঞানিক-চিকিৎসা এলাকা হিসেবে ধাত্রীবৃত্তির পুনর্ধারণায়নকে প্রভাবিত করা এবং উপনিবেশিত বাংলায় ধাত্রীবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে দারুণভাবে প্রভাবিত করা এসব সামাজিক-সাংস্কৃতিক ছাঁচিকরণগুলোকে চিহ্নিত করাও এই অধ্যায়ের লক্ষ্য।

 

“আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অনেক আবরিত ত্রুটি ও অভাবসহ এখনো অবস্থান করা” হিন্দু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে একদম প্রথমদিকের ও প্রকাশিত ‘সাধারণ কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা’ এসেছে শিব চন্দর বসুর কলম থেকে। একজন ‘আলোকিত’ ব্রাহ্ম ও “পশ্চিমা সংস্কৃতি ও চিন্তার উদীয়মান স্পন্দন গ্রহণ” করা বসু উনিশ শতকের শেষ দিকে হিন্দু সমাজের অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তির ক্রিটিক্যাল বিবরণ তৈরির দাবি করেন, এর লক্ষ্য ছিল মূলত ‘ইংরেজ পাঠকগণ’ ও ‘ভারতে ধর্মীয় পুনরুজ্জীবন ও সামাজিক সংস্কার’ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিগণ।৭ বাংলায় একটি সাধারণ হিন্দু ঘরে শিশুজন্মের প্রক্রিয়ার যে জটিল বর্ণনা বসু দেন, তা উনিশ শতকের শেষ দিকে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির আত্মসমালোচনামূলক ও গভীরভাবে অন্তর্মুখী প্রবণতা উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বসু বলেন,

যখন প্রসবের সময় আসে, এবং তার (গর্ভবতী) কাছে এটি এমন এক ভয়াবহ সময় যার বর্ণনা দেয়ার চেয়ে একে ভোগ করা সহজতর, তখন নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতর বালিকাকে সূতিকাঘর বা আঁতুরঘর নামক একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে পরিবারের কোন পুরুষ সদস্যের প্রবেশাধিকার নেই। তাকে একটি লাল রঙের প্রান্তওয়ালা ঢিলা পোষাক পরতে দেয়া হয় এবং পূজা করার জন্য কক্ষের প্রবেশস্থলে গরুর গোবর দিয়ে তৈরি দেবী ষষ্ঠীর দুইটি প্রতিমা স্থাপন করা হয়…এক মাসের জন্য — যা তার বন্দী থাকার সময়কাল। যদি সে অল্পবয়স্ক হয় তাহলে প্রসব বেদনা হতে পারে দীর্ঘ, যেখানে একজন দক্ষ অস্ত্রোপচারকারী বা একজন যথাযথ ধাত্রীর চাহিদার কারণে তাকে প্রায়ই খুব ভুগতে হয়। মহতী প্রতিষ্ঠান কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে যথাযথ ধাত্রী পাওয়া যেত না, কারণ তাদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ছিল না; প্রধানত ডোম ও বাগদী জাতের ভেতরই এই পেশা সীমাবদ্ধ ছিল।

বসুর বিবরণ থেকে দেখা যায় যে, উপনিবেশিত বাংলার প্রথম দিকে শিশুজন্মের সাথে সম্পর্কিত সকল চর্চাই বহু বছরের পুরনো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চা দ্বারা নির্ধারিত ছিল। এমনকি বাড়ির সবচেয়ে ছোট ও বায়ু চলাচলের জন্য সবচেয়ে খারাপ ঘরটিকে সূতিকাঘর হিসেবে পছন্দ করার পেছনে কাজ করতো ‘শয়তান’ ও ‘ক্ষতিকর আত্মা’ থেকে দূরে থাকার প্রয়োজনীয়তা, আরও ভালোভাবে বলতে হয় বাড়ির মূল অঙ্গনকে জন্মদানের মতো ‘দূষিত’ কাজ থেকে রক্ষা করা। হিন্দু প্রথা ও চর্চায় জন্মদানের প্রক্রিয়ার দূষিত প্রকৃতি সম্পর্কিত ধারণা থেকেই দাইয়ের কাজগুলো ডোম ও বাগদীর মতো নিচু, ‘অস্পৃশ্য’ জাতের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল।

 

জন্মদান পরবর্তী সময়েও জনপ্রিয় পূজা-অর্চনার সাথে যুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি জারি থাকতো। বসু বর্ণনা করেছেন, এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতো জন্মের ষষ্ট দিনে ‘শিশুর রক্ষাকারী’ হিসেবে দেবী ষষ্ঠীর আবাহন ও পূজার সুস্থাপিত ও সর্বব্যাপী প্রথা এবং অষ্টম দিনে আট কড়ি শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন। তবে এমন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা চর্চাগুলো ছাড়াও আরো বেশি যৌক্তিক ও কম কঠোর বিকল্পও মাঝে মাঝে গ্রহণ করা হতো। এরকমই একটি বিকল্প ছিল হরিলুট ব্যবস্থা যেখানে গর্ভবতী নারীকে পুরনো ব্যবস্থায় অনুসরণ করা কিছু কঠোর রীতি থেকে অব্যাহতি দেয়া হতো, যেমন প্রসবের পর ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার ও পান, ঝাল এবং তাপ থেকে দূরে থাকা। পরিবর্তিত হরিলুট ব্যবস্থায় প্রসবের পর মূল বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সময়সীমা এক মাস থেকে কমিয়ে এক সপ্তাহে নিয়ে আসা হয়েছিল, এক্ষেত্রে প্রসবের ঠিক পরপর মাকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো হতো এবং তাকে ডাল-ভাত, তরকারি, মাছ ও তেতুলের মতো সাধারণ খাবার খাওয়ানো হতো।১০

ব্রিটিশ চিকিৎসা পেশাজীবী ও মিশনারিদের ধারণানুযায়ী, চিকিৎসা যন্ত্র ও অস্ত্রোপচারের প্রতি ভারতীয় নারীদের ঘৃণাপূর্ণ অনীহার চিত্রই ছিল পশ্চিমা চিকিৎসা চর্চার প্রতি অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের পার্থক্য নির্ধারক।

এভাবে উনিশ শতকের অধিকাংশ সময়ে শিশুজন্মের প্রক্রিয়াটি দাই ও ঘরের নারী সদস্যদের দ্বারা পালিত জটিল সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত চর্চা দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। গ্রামীণ বাংলার বর্ণনা দিতে গিয়ে পূজনীয় লাল বিহারী দে বলেছেন, জন্মদানের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি মূখ্য চরিত্র হিসেবে দাই/ধাত্রীকে সাধারণত এমন অন্তরঙ্গ, মায়ের মতো চরিত্র মনে করা হতো যার সাথে বিধাতার গোপন সংযোগ রয়েছে, যে বিধাতা জন্মের ষষ্ঠ রাতে শিশুর নিয়তি নিশ্চিত করেন।১১ তার (দাই/ধাত্রীর) সম্মানী পরিবারের অর্থনৈতিক সঙ্গতি ও শিশুর লিঙ্গানুযায়ী পরিবর্তিত হতো। একটি ছেলে শিশুর প্রসবের ফলে বেশি পরিমাণ টাকা ও উপহার নিশ্চিত হতো। তাছাড়া তার (দাই/ধাত্রীর) ভূমিকা চিকিৎসাক্ষেত্রের চেয়ে সামাজিক ক্ষেত্রেই বেশি ধারণা করা হতো। একে প্রায়ই মা ও তার নবজাতক শিশুর দেখাশোনা ও বাড়িঘরের প্রাত্যহিক কিছু কাজ করার সাথে যুক্ত করা হতো; এরূপ চর্চা বিশ্বের অন্যান্য অংশেও দেখা যেত।

 

ব্রিটিশ চিকিৎসা পেশাজীবী ও মিশনারিদের ধারণানুযায়ী, চিকিৎসা যন্ত্র ও অস্ত্রোপচারের প্রতি ভারতীয় নারীদের ঘৃণাপূর্ণ অনীহার চিত্রই ছিল পশ্চিমা চিকিৎসা চর্চার প্রতি অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের পার্থক্য নির্ধারক। এ ধরনের অনুমানগুলো ডাফরিন ফান্ডের বাংলা শাখার প্রথমদিকের বার্ষিক প্রতিবেদনগুলোসহ দাপ্তরিক পত্রগুলোতে ছড়িয়ে ছিল।১২ কোন কোন ক্ষেত্রে, যন্ত্রাদির প্রতি নারীদের ভয়কে ‘সাদাসিধে ও ভীতু’ ভারতীয়দের শক্তিশালী বিতৃষ্ণার লক্ষণ হিসেবে দেখানো হতো, আর একে যুক্ত করা হতো অস্ত্রোপচারের সাথেও।১৩ ১৯১৫ সালে ভারতের প্রত্যন্ত জেলায় কাজ করা নিউজিল্যান্ডের একজন নার্স প্রসব বেদনারত এক নারীর দুই নারী আত্মীয়ের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার বর্ণনা করেছেন, যখন তারা চিকিৎসকদের যন্ত্র-সরঞ্জাম বের করতে দেখেছিল; তিনি বর্ণনায় বলেন :

যখন তাদের একজন সরঞ্জাম বের করতে দেখে, সে চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ও বাইরে বসা সবাইকে কিছু ভয়াবহ গালগল্প বলে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল সেখানে একটি দাঙ্গা হতে যাচ্ছে: কিন্তু আমরা ঘর্মাক্ত অবস্থায় কাজ চালিয়ে গিয়েছি।১৪

তবে, পর্দাপ্রথার ফাঁদে আটকে থাকা ভারতীয় নারীদের সর্বত্র বিরাজমান চিত্রের সাথে তুলনায় চিকিৎসা যন্ত্রাদির প্রতি ভারতীয় নারীদের অনীহা ঔপনিবেশিক কল্পনায় প্রান্তিক গুরুত্ব পেতো মাত্র। ধারণা করা হতো যে পর্দার কারণেই নারীদের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং এর ফলেই তারা ঘরের দমনমূলক সীমানা পার হয়ে পেশাদার চিকিৎসা সহায়তার খোঁজ করতে পারে না। জেনানায় অপ্রবেশগম্যতা সমসাময়িক চিকিৎসা চর্চাকারীদের লেখায় এক গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতা হিসেবে উঠে আসে যাকে দীর্ঘদিন ধরে ধাত্রীবৃত্তির চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পথে গুরুতর অন্তরায় মনে করা হতো। এসব লেখা অনুযায়ী, শালীনতা ও লজ্জার যে গভীরে প্রোথিত ধারা পর্দানশীন নারীদের সাংস্কৃতিক চালচলন নিয়ন্ত্রণ করতো, সেটিই তাদেরকে একজন পুরুষ চিকিৎসকের থেকে চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতো। বিশ শতকের শুরুর দিকে ভারতে নারী চর্চাকারীদের অন্যতম প্রধান ডক্টর মার্গারেট বালফোর বলেছেন, “পর্দা প্রথার চরম ভয়াবহতা শিশুজন্মের সময়ই দেখা যেত, যেখানে একজন পুরুষের কাছে নিজেকে প্রদর্শিত করার আগে প্রসব না করেই নারীর মৃত্যুকে মেনে নেয়া হতো”।১৫ ১৮৪১ সালের আগে পর্যন্ত মেডিকেল কলেজের পাঠ্যক্রমে ধাত্রীবৃত্তিকে রাখতে না পারার পেছনে পর্দা প্রথাকে দায়ী করা হয়; এক্ষেত্রে এর ভিত্তি হিসেবে বলা হতো যে, “এই দেশের আজব প্রথা ও সংস্কারের কারণে স্থানীয় চর্চাকারীদের জন্য ধাত্রীবৃত্তি এক অপ্রয়োজনীয় সাধনা”।১৬ মনীষা লাল যথাযথভাবেই বলেছেন যে, নারীদের জন্য চিকিৎসা সহায়তার প্রবক্তারা পর্দার উপর অতিমনোযোগ দিয়েছেন যেখানে তারা স্বাস্থ্য সেবায় নারীদের অভিগমনকে সীমিত করার জন্যে দায়ী অন্যান্য বিষয় যেমন, দরিদ্রতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পুষ্টিকে নজরে আনেন নি।১৭

 

এটি চিত্তাকর্ষক যে এহেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাধাসমূহের মাঝেও ১৮৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে ধাত্রীবৃত্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও এর ফলে বাঙালি দাইদের চর্চায় জন্মের অর্থ সাথে সাথে বদলে যায় নি; চিকিৎসা শিক্ষার অংশ হিসেবে ধাত্রীবৃত্তির অন্তর্ভুক্তি এর জ্ঞানতাত্ত্বিক মাত্রার বিস্তৃতি ও পরবর্তীতে একে একটি বৈজ্ঞানিক প্যারাডাইম হিসেবে পুনর্গঠনের পথ করে দেয়। একই সাথে এটি বাংলার চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষকদের, যাদের অধিকাংশই ছিল ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস (আইএমএস) কর্মকর্তা, তাদের পেশাদার ও জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞতার অধীনে পুনর্গঠনের দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ার সূচনা করে।

 

তথ্যসূত্র ও টীকা

1 R.J. Kinkead, ‘Obstetrics as a Branch of Education: Being an Address Introductory to the Course of Lectures in Obstetric Medicine in the Queen’s College, Galway, for the Session 1878–79’, The British Medical Journal, Vol.2, No.937, 1878, 870–871.

2 উনিশ শতকের ব্রিটেনে আয়ারল্যান্ড ধাত্রীবৃত্তি শিক্ষার সর্বোচ্চ মানের প্রতিনিধিত্ব করতো না। মূলত এটি ছিল এডিনবার্গ ও গ্লাসগোর চিকিৎসা ডক্টরেটগণ এবং তাদের কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-এর লাইসেন্সসমূহ যা চিকিৎসা শিক্ষার সর্বোচ্চ মানের প্রতিনিধিত্ব করতো। লন্ডনও এডিনবার্গের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। তারপরও আয়ারল্যান্ডের কুইন’স ইউনিভার্সিটিতে কিংকেডের এই বক্তব্য ধাত্রীবৃত্তির প্রতি সমগ্র ব্রিটিশ চিকিৎসা পেশার পরিবর্তনশীল ধারণাকেই প্রতিফলিত করে। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে ধাত্রীবৃত্তি শিক্ষার মান ও বৈশিষ্ট্য যেখানে পার্থক্যপূর্ণ ছিল, সেখানে উনিশ শতকের মধ্যভাগে ধাত্রীবৃত্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মর্যাদা অর্জন করেছিল, এটি এমন এক সত্য যা সমগ্র ব্রিটেন ও অন্যত্র স্বীকৃত হয়েছিল।

3 Kinkead, ‘Obstetrics as a Branch of Education’, 871.

4 Irvine Loudon, Death in Childbirth: An International Study of Maternal Care and Maternal Mortality, 1800–1950, Oxford: Clarendon Press, 1992, see Chapter 12.

5 উদাহরণ হিসেবে দেখুন, Jean Donnison, Midwives and Medical Men: A History of the Struggle for the Control of Childbirth, London: Historical Publications Ltd, 1993; Jane B. Donegan, Women and Men Midwives: Medicine, Morality and Misogyny in Early America, New York: Greenwood, 1978; Charlotte G. Borst, Catching Babies: The Professionalisation of Childbirth, 1870–1920, Cambridge, MA: Harvard University Press, 1996; Lianne McTavish, Childbirth and the Display of Authority in Early Modernc France, Aldershot: Ashgate, 2005.

6 Supriya Guha, ‘A History of the Medicalisation of Childbirth in Bengal in the Late Nineteenth and Early Twentieth Centuries’, Unpublished PhD dissertation, University of Calcutta, 1996; Dagmar Engels, ‘The Politics of Childbirth: British and Bengali Women in Contest, 1890–1930’, in Beyond Purdah? Women in Bengal, 1890–1930, New Delhi: Oxford University Press, 1996; Cecilia Van Hollen, Birth on the Threshold: Childbirth and Modernity in South India, New Delhi, Zubaan, 2003.

7 Shib Chunder Bose, The Hindoos as They Are: A Description of the Manners, Customs and Inner Life of Hindoo Society in Bengal, Second Edition, Calcutta: Thacker, Spink & Co., 1883, Prefaratory note.

8 বসুর অবস্থানকে সাবধানতার সাথে গ্রহণ করা উচিত। উদার সংস্কারবাদী স্বভাবের একজন ব্রাহ্ম হওয়ায়, হিন্দু সমাজ ও এর সাংস্কৃতিক চর্চা বিষয়ে বাস্তবে যেটুকু অস্তিত্ব আছে, বসু তার চেয়ে বেশি সমালোচনামূলক অবস্থান গ্রহণ করে থাকতে পারেন। উনিশ শতকে পশ্চিমা সভ্যতার সং¯পর্শে আসার ফল হিসেবে বাঙালি বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তায় কর্তৃত্ব করা বিষয়, যা ছিল একজনের নিজের সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে সংশয়বাদীতা, তা বুঝতে তাঁর বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ।

9 Bose, The Hindoos as They Are, 22–25.

10 প্রাগুক্ত

11 Lal Behary Dey, Bengal Peasant Life, London: Palgrave Macmillan, 1878, 38. শিব চন্দর বসুর মতো লাল বিহারীও ছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের একজন ছাত্র, যিনি পরে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণে, দের বক্তব্যও কিছুটা সাবধানতার সাথে গ্রহণ করা উচিত, কেননা এটি লিখিত হয়েছিল মূলত একটি সংস্কারবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে।

12 উদাহরণ হিসেবে, একজন ব্রিটিশ চিকিৎসা পেশাজীবী অস্ত্রোপচারের প্রতি বাঙালি নারীদের ভয়ের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন: “শারীরিক ব্যথা ভোগ ও সবচেয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অস্ত্রোপচারের অধীনে নিজেদের সমর্পণ করার ক্ষেত্রে তাদের অত্যন্ত ভীরুতা ও ঔদাসীন্য ছিল চোখে পড়ার মতো”, Report of the Bengal Branch of the Countess of Dufferin Fund for the Year Ending, 30 November 1895, 6 as quoted in Chandrika Paul, ‘The Uneasy Alliance: The Work of British and Bengali Medical Professionals in Bengal, 1870–1935’, Unpublished PhD dissertation, University of Cincinnati, 1997, 297.

13 একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের উত্তরাঞ্চলের একটি করদ রাজ্যের চিফ মেডিকেল অফিসার ডক্টর রুফাস সি. থমাস ১৯৩৪ সালে সিজারিয়ান সেকশন করা এক নারীর স্বামীর সাড়াপ্রদানের স্মৃতিচারণ করে বলেন: “আমি সিজারিয়ান সেকশন করার জন্য স্বামীটির অনুমতি লাভ করেছিলাম, শিশুটিকে বের করেও এনেছিলাম, আর জরায়ু সেলাই করতে যাচ্ছিলাম; এমন সময় স্বামীটি দ্রুতগতিতে থিয়েটারে প্রবেশ করে ও সেই মুহূর্তেই তার স্ত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার দাবি করে। যখন তাকে বুঝানো হয়েছিল যে অস্ত্রোপচার প্রায় শেষের দিকে, তখন সে বাইরে অপেক্ষা করে আর যখন আমি বের হই তখন অবিলম্বে তার স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করে। এ ধরনের কাজের বিপদগুলো তাকে ভাবিয়েছে বলে মনে হয় নি, যদিও আমার হাউজ সার্জন তাকে পুরো বিষয়টি তার ভাষাতেই ব্যাখ্যা করেছিল। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর, সে শেষ পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য তার স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে যেতে রাজি হয়। সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে তার স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে বেশ কয়েকবার নৈশকালীন প্রচেষ্টা চালায়, আর শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে তার স্ত্রীকে যেতে দিতে হয়েছিল”। Rufus C. Thomas, ‘Some Surgical Difficulties in India’, The British Medical Journal, Vol.1, No.3826, May 1934, 807.

14  ‘Midwifery in India’, Kai Tiaki, October 1915, 192.

15 Margaret Balfour and Ruth Young, The Work of Medical Women in India, Oxford: Oxford university Press, 1929, 3.

16 Christian Hochmuth, ‘Patterns of Medical Culture in Colonial Bengal, 1835–1880’, Bulletin of the History of Medicine, Vol.80, No.1, 2006, 51.

17 Maneesha Lal, ‘The Politics of Gender and Medicine in Colonial India: The Countess of Dufferin Fund, 1885–1888,’ Bulletin of the History of Medicine, Vol.68, No.1, Spring 1994, 29–66.

 

পড়ুন ।। কিস্তি ৫

ঔপনিবেশিক আধুনিকতা : বাংলায় ধাত্রীবৃত্তি (১৮৬০-১৯৪৭) ।। কিস্তি : ৫

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here