বীজ উপন্যাসে প্রকাশিত হয়েছে এক তরুণীর তীব্র সংবেদনা; পর্যবেক্ষণশীল চোখ দিয়ে সে দেখেছে নিজের ভেতর ও বাহির। মনিরুল ইসলামের লেখা এই উপন্যাস আপনাকে নিয়ে যাবে সমকালীন জীবনের অন্দরমহলে।
২৬
আক্ষরিক অর্থে সারাদিনে আমার কাজ এখন একটাই। বিশ্রাম নেওয়া। শুয়ে থাকা, শুয়ে থাকা আর শুয়ে থাকা। কখনো একটু টিভি দেখি। টিভি দেখতে ভালো লাগে না। কারো সঙ্গে কথা বলতেও ভালো লাগে না। চিন্তা করি। সারাদিন চিন্তা করি। চিন্তা করাও একটা কাজ। চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা আর চিন্তা করার মধ্যে এক-ধরনের আনন্দ আছে। গভীর আনন্দ। কলকল করে হৃদয় থেকে ভাবনা ওঠে আসে। স্বচ্ছ-সাদা-শীতল সব ভাবনা। ভাবনা যেন মাটির গভীর থেকে উঠে আসা ডিপকলের পানি। প্রাণসঞ্চারক। হৃদয়কে দান করে নিবিড় শীতলতা। সমগ্র সত্তাকে প্লাবিত করে তোলে মুহূর্তেই। জীবন জীবনের চেয়ে বড় হয়ে ধরা দেয়। জীবনের এ-ও যেন আরেকটা মাত্রা।
আমার জন্ম শীতকালে। সকাল দশটা কি সাড়ে দশটার দিকে। সেদিন ছিল সোমবার। আগের দিন রাতে কী নাকি এক স্বপ্ন দেখে মা’র ঘুম ভাঙে। দেখে, তরমুজ বিক্রি করছে এক লোক। বড় বড় সাদা সাদা তরমুজ। হাত দিয়ে মা দেখায় কত বড়! আগে নাকি তরমুজ সাদা হত। একদম সাদা না। হালকা সবুজের মধ্যে সাদা। সাদাই বেশি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো মা। মা’র দিকে তাকিয়ে লোকটা নাকি হাসছিলো। মাকেই উল্টা জিজ্ঞাসা করে, ‘তরমুজ বেচপাইন?’ লোকটার মুখে এই কথা শুনে মা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে সারা শরীর। ঘুম ভাঙলে শোনে আজান দেয়। শুরু হয় মা’র কান্নাকাটি।
এতো কুয়াশা পড়েছিল, এক হাত দূরের জিনিসও ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছিল না। সারারাত টিনের চালে টুনটুন করে ঝরেছে শিশিরের জল। এমন ঠাণ্ডা হয়ে থাকত লেপ, মনে হত ভেজা। চৌকির নিচে দাদি মাটির খাদা রেখে দিত। খাদায় থাকত গনগনে আগুনের আঙরা। নামাজ পড়তে উঠে দাদি টিউবওয়েল খুঁজে পায় না। দেখে পেয়ারা গাছটার পাশের খুঁটিতে বাল্বটা জ্বলছে অসহায়ের মত। বাড়ির ভেতরেই একটা টিনের ছাপড়ায় বাবা ছাত্র পড়াতো। ভোর হতে না-হতেই শুরু হয়ে যেতো সাইকেলের টুংটাং। আস্তে আস্তে ঠাহর হতে থাকে সবকিছু। কী একটা পাখি ডাকতেছিলো। কুটুমপাখি। বাড়িতে কুটুম আসবে। নামাজ পরে দাদি দোয়া করে, ‘আয় আল্লা, আমার পুলা-পুরিরে তুমি বালো রাহো। তাদের রুজি-রুজগারে তুমি বরকত দেও। সবসময় হালাল পথে থাহার তৌফিক দেও। তুমার যা বালা মুনে অয় তুমি তাই করো খুদা।’ পরে দশটা কি সাড়ে দশটা নাগাদ আমি জন্মাই। মা ভেবেছিলো, তার ছেলে সন্তান হবে। মেয়ে হলে দুঃখিত হবে, তা নয়। মেয়েরা হলো ঘরের লক্ষ্মী। খোদার যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছে। মেয়ে হয়েছি।
একটা খাতায় বাবা নাকি আমাদের জন্ম-তারিখ সব লিখে রেখেছে। খাতাটা এখন পর্যন্ত আমি দেখিনি। আদৌ লিখে রেখেছে কিনা, তা-ও জানি না। বাবাকে কোনোদিন জিজ্ঞাসা করিনি। ছোটোবেলায় নাকি খুব বাঁদর ছিলাম। ছ্যাঙ্গা দিয়েছিলাম মুখে। ঠোঁট ফুলে ঢোল। মুরগি ঠুকড়িয়ে নাকি ঘা বানিয়ে ফেলেছিল। একবার জেদ করলাম, বিয়ারিংয়ের গাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। বাবা বানিয়ে দিল। সেটা ঠেলতে গিয়ে পিচের রাস্তায় পড়ে হাঁটুতে ঘা হয়ে গেল। দাগটা এখনো আছে। ইন্টারমিডিয়েটে থাকতেও কালো হয়ে ছিলো দাগটা। এখন আশেপাশের ত্বকের চেয়ে একটু ডিসকালার হয়ে আছে। বটি দিয়ে কদমের ডাল কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেললাম একবার। কেঁদে কেঁদে গিয়ে মা’কে বললাম। মা দিল ঠাস ঠাস করে দুই গালে চড়। তখন এতো ছোটো না। বড়ই হয়ে গেছি। বেশ মনে আছে। পায়খানার দরজা খোলা রেখে পায়খানা করতাম। প্যান্ট খুলে মাথার মধ্যে পরে থাকতাম টুপির মত। এগুলো কি আসলেই ঘটেছে! নাকি মা-দাদির কাছ থেকে শুনে শুনে তৈরি হওয়া আমারই কল্পনা! জানি না। ঠিক কখন থেকে যে বুঝতে শুরু করলাম, এ-ও এক ধাঁধাঁ। আমি যে একজন আলাদা মানুষ। আমার বাবা আছে, মা আছে। তাদের থেকে আমি আলাদা। কবে থেকে এমন মনে হওয়া শুরু হলো? মনে করতে পারি না। পেটে কৃমি হলো একবার। কৃমি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম আমি। শুরু করলাম চিৎকার-কান্নাকাটি।
আমাদের ক্লাসে একটা ছেলে ছিল। নাম আরিফ। প্রতিদিন একটা প্যান্টই পরে আসতো। তাকে আমার ভালো লাগতো। ভালো ছাত্র ছিলো সে। একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি প্রতিদিন এই প্যান্টটাই পরে আসো কেন? এটা কি তোমার পছন্দের প্যান্ট?’ তখন সম্ভবত থ্রিতে পড়ি। ছেলেটা কী জবাব দিয়েছিল মনে নেই। জবাব দিয়েছিলই কিনা! একটা মেয়ে একদিন ক্লাসেই পায়খানা করে দিলো। কী দুর্গন্ধ! কোনোভাবেই সে স্বীকার করছিলো না যে, পায়খানা সে-ই করেছে।
ছোটোবেলাটা কেমন রঙিন। সবই সুন্দর। প্রতিটি ঘটনাই কত নির্মল। কত আনন্দময়। আসলে অতীত মাত্রই আনন্দময়। অতীতকে বর্তমানে টেনে আনতে পারলেই নাকি সাধনা কমপ্লিট হয়। সাধুরা বর্তমানকে উপভোগ করে। বর্তমানই তাদের কাছে সব। তাদের কাছে অতীত বা ভবিষ্যতের এক-পয়সা দাম নেই। জীবন সবসময়ই বর্তমানের বিষয়। অতীত বা ভবিষ্যতে কোন জীবন নেই। আছে কল্পনা। জীবনের কল্পনা।
জীবনে প্রথম কবে অপরাধবোধ তৈরি হয়? জানি না। আমার বয়স তখন কত হবে, কে জানে! কিন্তু মনে আছে স্পষ্ট।
কোন ঘটনাগুলো যে আগের, আর কোনটা পরের — ঠিক করে মনে করা কঠিন। বিভিন্ন সময় মা-দাদি আমাকে নিয়ে গল্প করে। মনে হয় গল্পগুলো আমার না। আরেকজনের। ছেটোবেলায় আমার একবার পা মচকে যায়। ঘটনা মনে নেই। কিন্তু মাথার মধ্যে তার একটা ইমেজ আমার আছে। মা বলে, তখন আমি কেবল হাঁটি। আমার মনে হয়, বৃষ্টির উঠান পানিতে সয়লাব। হাঁটতে গিয়ে আমি পিছলে পড়ে গেলাম। আমার পা মচকে গেলো। আমি বিভ্রান্ত হই। আসলেই কি ওটা আমার স্মৃতি? ক্লাস টু-তে পড়ার সময়কার দুয়েকটা ঘটনা আমার মনে আছে। টকটকা লাল রঙের একটা ফ্রক ছিলো আমার। ওটা পরে আমি স্কুলে যেতাম। মাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, কীসের লাল জামা? ছোটোবেলা আমার নাকি কোনো লাল জামাই ছিলো না। বাবা নাকি লাল রং পছন্দ করে না।
জীবনে প্রথম কবে অপরাধবোধ তৈরি হয়? জানি না। আমার বয়স তখন কত হবে, কে জানে! কিন্তু মনে আছে স্পষ্ট। নানি-বাড়ির ঘটনা। বেড়াতে গিয়েছি আমরা। সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম এখানে-ওখানে। মারামারি-কান্নাকাটি করতাম। মনে আছে, চোখ-পলান্তি খেলছিলাম আমরা। পালানোর আমার একটা প্রিয় জায়গা ছিলো। নানার চৌকির নিচে। আমার পিছে পিছে একবার আরেকটা ছেলেও এসে চৌকির নিচে পালায়। চুপ করে আমরা অপেক্ষা করছিলাম। দেখি খুজেঁ পায় কিনা! যাকে সবার আগে খুঁজে পাবে, সে-ই হবে চোর, পরের বার সে-ই খুঁজে বের করবে অন্যদের। অন্ধকার চৌকির নিচে ছেলেটা আমার যৌনাঙ্গে হাত দেয়। কী বুঝে, তার হাতটা সরিয়ে দিয়েছিলাম আমি। বেরিয়ে এসেছিলাম চৌকির নিচ থেকে। যদিও তখন এতোকিছু বুঝতাম না। কিন্তু এটুকু বুঝতাম, এটা খারাপ কাজ। কাউকেই বলিনি এ-কথা। ভয়ে নিজেই কেঁদে ফেললাম। মনে হয়েছিলো, মস্ত একটা খারাপ কাজ করে ফেলেছি আমি। মা আমাকে ধরে মারবে।
প্রথম আমি কোনো পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখি ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। সেভেন অথবা এইট। প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছি এমন সময় এক ভাঙ্গাড়িঅলা রাস্তার ধারে প্রশ্রাব করছিল। বলতে গেলে প্রকাশ্যেই। একদম মানুষের সামনে। তখন আমি বেশ বুঝি। অনেক কিছু সম্পর্কেই মোটামুটি ধারণা হয়েছে। কীভাবে যে হয়েছে তা এখন স্মরণ হয় না। ঘটনা ধরে মনে করতে পারি না। সত্যিই নিজের ভেতরে তল পাওয়া কঠিন। ভাঁজের পর ভাঁজ এখানে। ধাঁধাঁর পর ধাঁধাঁ। সত্য এবং মিথ্যার ত্রিবেণীসঙ্গম। তখন আমার চোখ যায়। চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু সেই দৃশ্য আমাকে ছাড়লো না। একদম গেঁথে গেলো আমার মনের মধ্যে। কেমন বিশ্রী একটা অঙ্গ। লোকটার পরনের লুঙ্গিটা ছিলো কেমন নোংরা। এরপর পর্নোগ্রাফিতে অনেক প্রকার পেনিস আমি দেখেছি। কিন্তু কোনো কিছু দিয়েই সেই ইমেজ আমি বদলাতে পারিনি।
একটা সময় মনে হতো, জীবনের সকল পাপের কেন্দ্র হলো যৌনতা। ছোটোবেলা থেকেই যৌনতাকে আমরা ভয় পেতে শিখি। ঘৃণা করতে শিখি। অবজ্ঞা আর অস্বীকার করতে শিখি। একটা সময় বলছি কেন, এই কিছুদিন আগেও তো তা-ই মনে হতো। এখন হাসি পায়। এতো জীবনেরই অংশ। জীবনেরই প্রকাশ। যৌনতাকে আমার মনে হয় সুস্থ জীবনের প্রকাশ। যে সুস্থ ও পরিপূর্ণ সে-ই তো কেবল জন্ম দিতে সক্ষম। একে কেন্দ্র করে কোনো অপরাধ থাকতে পারে না। হয়তো এইসব কারণেই নানা বাড়ি যেতে ইচ্ছা করতো না আমার। পরে সেই ছেলেটাকে আর কোনোদিন দেখিনি। হয়তো দেখেছি, দেখে চিনতে পারিনি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার জন্য আমি ঘৃণা সঞ্চয় করে রেখেছিলাম। এই ঘৃণা আসলে সেই ছেলেটার প্রতি হওয়া উচিত নয়। এই ঘৃণা আমার প্রতিও নয়। এই ঘৃণার ভাগীদার হল সেই মানস। যৌনতাকে যে বিশেষভাবে নির্মাণ করে। যৌনতাকে ঘৃণা করা মূলত নিজেকেই ঘৃণা করা। এই কথাগুলোই ইমরান আরও সুন্দর করে বলতে পারে।
একটা সময় ছিলো, সারাদিন শুধু খেলতাম। কত কী যে খেলতাম! সবকিছুই তখন ছিল খেলা। ঘুম আর খাওয়া বাদে যা করতাম তা-ই খেলা। কয়েকজন মিলে অযথা রোদে রোদে ঘুরে বেড়ানো একটা খেলা। বাড়ির দহলে ঘুগরা পোকার গর্তে পানি ঢেলে পোকা বের করাটা একটা খেলা। কাঁঠালের আঠা একটা শলার মধ্যে পেঁচিয়ে সঙ্গে একটা ঘুগরা বেঁধে দিতাম। উদ্দেশ্য দোয়েল পাখি শিকার করা। এটাও একটা খেলা। হাতে একটা লাঠি নিয়ে চোখে নারকেল পাতার চশমা দিয়ে মাস্টার সাজতাম। নারকেল আর সুপারি গাছগুলোকে পড়া ধরতাম। এবিসিডি, অআ, ছড়া, আলহামদু সুরা পুরাটা জিজ্ঞাসা করতাম। না-পারলেই মার। মেরে মেরে লাঠি ভেঙে ফেলতাম।
মা’র একবার কী একটা অসুখ হয়। মাস খানেক পড়ে ছিল বিছানায়। সবাই ভেবেছিল মা হয়তো বাঁচবে না। আমার কেন জানি মনে হত মা কখনো মরতে পারে না। অন্যদের কথা শুনে আমার রাগ লাগতো। রাগে গা জ¦লতো আমার। মা কেন অসুস্থ হলো। মনে হতো সব দোষ মা’র। ভেতরে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস পেতাম। মা মরতে পারে না। মরতে দিব না। পেশি শক্ত হয়ে আসতো আমার। মা বলে, ছোটোবেলা থেকেই আমার খুব জেদ। সবাই বলতো, মেয়েদের এত জেদ থাকতে নেই। কেন জানি আমার মনে হতো, মা আমার জেদকে মনে মনে সমর্থন করে। মা খুব নরম স্বভাবের। কাউকে কোনোদিন কড়া কথা বলতে পারে না। কোনোদিন কাউকে আক্রমণ করে কিছু বলতে শুনিনি। আসলে সে বলতে জানেই না। আমাদের খালারা আবার কথা বলায় ওস্তাদ। জমিজমা ভাগাভাগির সময় মাকে ঠকিয়েছে। দিয়েছে সবচেয়ে বাজে জমিটা। আজ পর্যন্তও এ-নিয়ে মা কিছু বলতে পারেনি। তারপরও মা’রই দোষ। আমরা তাদের চেয়ে ভালো আছি কেন, এটাই মা’র দোষ। সুযোগ পেলেই খোটা দিয়ে কথা বলে। মা শুনে কাঁদে। আমার গা জ্বলে। কাঁদতেই যদি পারো, তাহলে উচিত কথা বলতে পারো না কেন? মা’র কোনো স্বভাবই আমরা পাইনি। মা একটু ভীতু টাইপেরও। সবখানেই তার একটা না একটা পিছুটান থাকবেই। না-থাকলে বানাবে। এজন্যই আমি হয়তো ড্যাম কেয়ার। কাউরে পুছি না টাইপ।
আমার জীবনে শোভন নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সে-ই একমাত্র কেউ, যাকে আমি আশ্রয় করতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম জীবনের অবলম্বন হিসেবে। নিজেকে সমর্পণ করেছিলাম। সে দাঁড়িয়েছিল আমার পিছুটান হয়ে। আমার মনে সে সৃষ্টি করেছিলো হারানোর ভয়। তাই সে পেরেছিলো আমার পরিবার-পরিজন, আমার ভাবনা-চিন্তা, আমার সমস্তকিছুকে এমন এলোমেলো করে দিতে। তার মধ্যে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমি ছিলাম না কোথাও। আস্তে আস্তে আমার সকল কিছুকে গ্রাস করেছিলো সে। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ। আমাকে সে দিয়েছিল হারানোর বেদনা। জীবনের সবচেয়ে দামি জিনিস। ধীরে ধীরে আমি তাকে চিনলাম। আমি বেদনাকে চিনলাম। সে আমার তৈরি করে দিলো পথ। পথের সম্বল। একবার নয়, বারবার হারাতে হয় নিজেকে। জীবন আমাকে তাই শেখালো। হাসি হাসি মুখ করে সে সোজা তাকালো আমার দিকে। চোখের গভীর ভেতরের দিকে। আমার জন্য সে প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্ত অপেক্ষায় থাকে। না। এখানে দেরি বলে কিছু নেই। এখানে শুরু বলে কিছু নেই। এখানে নেই কোলাহল বা নির্জনতা। প্রবাহের কোনো আদি আর অন্ত থাকে না। থাকে না কোনো স্বরভঙ্গিমা। নিজেকে কেবল যোগ্য করে তুলতে হয়। তৈরি হতে হয় জীবনের জন্যে। যে যোগ্য যে প্রস্তুত, সে একা নয়। তার কখনো সঙ্গীর অভাব হয় না। জীবন সকলের জন্যেই অপেক্ষায় থাকে। প্রতিটি মুহূর্ত। প্রতিটি দিন।
পড়ুন ।। কিস্তি : ২৩