অচিরেই মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রকার কামার আহমাদ সাইমনের নতুন ছবি নীল মুকুট। কিন্তু কেমন ছিল তার প্রথম ছবিশুনতে কি পাও? সে বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলাপে নেমেছেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোহাম্মদ আজম।
১
নির্মাতা হিসাবে কামার আহমাদ সাইমনের নাম-ডাক যতটা হয়েছে, সিনেমা আমরা ঠিক তত দেখি নাই। বহুজন দেখেছে বোধ হয় শুনতে কি পাও, আর দুই-চারজন নীল মুকুট। দ্বিতীয়টি দেখার দলে আমিও আছি। কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পায় নাই বলে ওই ছবি নিয়ে কথা বলার উপায় নাই। কাজেই শুনতে কি পাও সিনেমার ভিত্তিতেই সাধারণভাবে সিনেমার ভাষার কিছু দিক নিয়ে, আর বিশেষভাবে কামার আহমাদ সাইমনের দৃশ্যভাষা নিয়ে আমাদের এ আলাপ।
শুরুতে পরিচালক এক টুকরা গদ্যে আসন্ন চিত্রমালার রূপরেখা দর্শকদের জানিয়ে দিয়েছেন। বহু চরিত্র আর ঘটনার মধ্যে ঠিক কোন কোন মুখের দিকে আমাদের বেশি নজর রাখতে হবে তা বলা আছে; আবার এ মানুষগুলোর এখনকার পরিস্থিতি আইলায় বিপর্যস্ত আগের কোন পরিস্থিতির সাপেক্ষে পড়তে হবে, সে কথাও পরিচালক জানিয়েছেন। এভাবে বলে-দেয়ার ব্যাপারটায় আমার অস্বস্তি আছে। একেবারেই ব্যক্তিগত অস্বস্তি। কম বয়সে সাহিত্য, বিশেষত উপন্যাস, পড়ে আর্ট সম্পর্কে ধারণা হয়েছে বলেই বোধ হয়, বিবৃতির বদলে ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বলার কথাটা পেশ করাকে আমি বেশি গুরুত্ব দিতে শিখেছি। অর্থাৎ বলে বোঝানোর চাইতে দেখানোর মধ্য দিয়ে বুঝতে প্ররোচিত করা, আমার সংস্কারে, অনেক বেশি শিল্পসম্মত। আমার এ ধারণা এতটাই বদ্ধমূল ছিল যে, বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাসের মধ্যে আঁতকা পাঠিকাকে সম্বোধন করে যেসব বয়ান দিয়েছেন, কিংবা বিষবৃক্ষ উপন্যাসের শেষে যখন এ উপন্যাস পড়ার ফজিলত বর্ণনা করেছেন, তখন আমার ভালো লাগে নাই। এমনকি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পুতুলনাচের ইতিকথার যে জায়গাটাতে এসে কুমুদ-মতি উপাখ্যান ঘোষণা দিয়ে শেষ করলেন, সেখানটায় আমার মনে হয়েছিল, শিল্প মাইর না-খাক, নিদেনপক্ষে চোট পেয়েছে। এগুলো অবশ্য কম বয়সের সংস্কার। এখন আর এসব নাই। তবে স্মৃতিটা বোধ হয় রয়ে গেছে। ওই সংস্কার থেকেই শুনতে কি পাও কাহিনিচিত্রের শুরুর গদ্য-বয়ান আমার ভালো লাগে নাই।
আমার জন্য সুখের বিষয়, শুনতে কি পাও-এর বয়ান ওই টুকরা-গদ্যের নির্দেশনার উপর ভর করে নাই। শুরুতেই দেখছি, রাখী মশারির ভিতর তার চার-পাঁচ বছরের পুত্র রাহুলের সাথে আলাপ করছে। বাঁধ হলে তারা বাড়ি ফিরে যাবে। গাছগাছালি করবে আবার। ছেলে আধো-আধো বোলে নতুন পর্বে বাড়িতে কী কী গাছ লাগাবে, তার ফিরিস্তি দিচ্ছে। আসলে ছেলের মুখ দিয়ে মা-ই এঁকেছে ভবিষ্যতের চিত্র, যে চিত্র বস্তুত পুরানা জীবনের এক প্রকার রোমন্থন মাত্র। একটা দৃশ্যে দেখছি, পুরানা এলবাম দেখতে দেখতে মহিলারা গল্প করছে। ওখানেই শুনতে পাচ্ছি, রাখী ছবি দেখিয়ে গুছানো সংসার আর পেছনের গাছগাছালির বিবরণ দিচ্ছে; আফসোস করছে, এরকম বাড়ি-ঘরে আর কি ফিরে যেতে পারবে কোনোদিন? আইলার আগের অবস্থা বর্ণনার জন্য কৌশলটি ভারি সুন্দর আর কাজের হয়েছে। ফটোগ্রাফ দেখিয়ে আইলা-পূর্ব মধ্যবিত্ত পরিবারের অবয়ব, আর তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গেরস্থালির উল্লেখ। তিনজন বেড় দেয়া যায় না এমন বিরাট গাছ। আম-কাঁঠাল-নারিকেল-সুপারির বাগান। দৃশ্যটি একদিকে আইলার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে ধারণা দেয়, অন্যদিকে ওই সচ্ছল পরিবারটির বর্তমান দুর্দশাকেও সামনে নিয়ে আসে। শুধু বর্তমানের চিত্রায়ণে বর্তমানকে অতটা মর্মান্তিকভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত না।
এ সিনেমায় চায়ের দোকান হাজির হয়েছে খাঁটি জন-পরিসর হিসাবে। সেখানে মেম্বার, চায়ের দোকানি আর উপস্থিত লোকজনের কথাবার্তায় আইলার আগের অবস্থা আর এখনকার অবস্থার একটা ছবি খুব পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। আগের সচ্ছল আর গরিব পরিবারগুলোকে আইলা-যে বসিয়ে দিয়েছে একাসনে, সে কথাও বলা হল। এভাবে পুরানা বসতি ও জনজীবনের বিপরীতে আইলার ধ্বংসযজ্ঞে বদলে-যাওয়া দুরবস্থা, এবং সে সাথে ভবিষ্যত সম্ভাবনার রেখাচিত্রকে নিরিখ করেই পুরা সিনেমার চিত্রমালা ও কথামালা সাজানো হয়েছে। তার মানেই হল, শুনতে কি পাও-এর বয়ান শুরুর গদ্যভাষ্যের উপর মোটেই নির্ভরশীল নয়। তবু গদ্য-বিবরণীটি পরিচালক যোগ করার দরকার মনে করেছেন সম্ভবত তাদের জন্য, যারা ওই জনজীবনের সাথে কোনো প্রকার পরিচয় ছাড়াই সিনেমাটি দেখবে। সিনেমার বাস্তববাদী চোখ দিয়ে জনজীবনের অনুপুঙ্খ পরিচিতি তৈরির পাশাপাশি আইলার মতো বিশেষ বাস্তবতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাও নির্মাতার বুনিয়াদি লক্ষ্যের তালিকায় ছিল — এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত হয়ত আমরা এখান থেকে নিতে পারি।
এবং পরিচালক জানাচ্ছেন, বছর তিনেক তাঁর সাথে ছেলের দেখা-সাক্ষাৎ হয় নাই বললেই চলে। চিত্রধারণের পাশাপাশি ছেলের সাথে দেখা-সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করা যেত কি না, সে আলাপ চলতে পারে। টেক্সটের রচয়িতা ও ভোক্তার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একালে যেসব কথাবার্তা চাউর হয়েছে, সেগুলোকে আমলে এনে বলতে পারি, পরিচালকের দাবিকে বেশি পাত্তা না দিলেও চলে। কিন্তু তথ্যটি অন্য ধরনের জরুরি নির্দেশনা হিসাবে পাঠযোগ্য। এ সিনেমার বিশিষ্ট ভাষাভঙ্গির জন্য সময়ের ব্যাপ্তি এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ক্যামেরার চোখ সম্ভাব্য দ্রষ্টব্যে বিরামহীন স্থির-নির্দিষ্ট রাখা, ওই ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখতে দেখতেই সম্ভাব্য গল্পটি ফলিয়ে তোলা, পাত্র-পাত্রীদের জীবনাচার ও স্বভাবের গভীর অধ্যয়ন থেকে জরুরি অংশ আর বাদ-দেয়ার মতো অংশগুলো শনাক্ত করার অব্যাহত কোশেশ, আর তার মধ্য দিয়েই নির্বাচন ও কাট-ছাঁটের ফল হিসাবে চূড়ান্ত বয়ানটির রূপ-লাভ — এ ধরনের একটা কর্ম-প্রক্রিয়া আমরা সাব্যস্ত করে নিতে পারি ওই তথ্য থেকে। এভাবে দেখতে পারলেই হয়ত, সিনেমাটির নির্মাণপ্রক্রিয়ার একটা আন্দাজ করে ওঠা সম্ভব। উপস্থাপিত বয়ানের আড়ালে কী কী ঘটেছিল, তা হয়ত জানা সম্ভব নয়। তার দরকারও নাই। কিন্তু উপস্থাপিত বয়ানের ভাষা বোঝার জন্য এ ধরনের আন্দাজ আমাদের বেশ অনেকদূর সহায়তা করতে পারে। এ সিনেমার বিশেষ ভাষা অধ্যয়নের জন্য তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
২
প্রকৃতি কি এই চিত্রকাহিনির প্রধান চরিত্র? হয়ত বলা যাবে। আইলা নামের যে-বিপর্যয়ের কারণে আদৌ এ জীবননাট্য সংঘটিত হতে পারল, তা তো প্রকৃতিরই অংশ। সেদিক থেকে প্রকৃতিকে শুনতে কি পাও চলচ্চিত্রের প্রধান কুশীলব বলাই যায়। তবে কথাটা বাস্তবের সত্য হলেও হতে পারে, এ সিনেমার আর্টের সত্য হিসাবে বড্ড খেলো হবে। একদিক থেকে বরং সিনেমাটা প্রকৃতির খেয়াল-খুশির বিপরীতে মানুষের চিরায়ত জীবন-সংস্কৃতি বা জীবন-সংগ্রামের আলেখ্য। জীবন চলমান; সে অতীতের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো বিচড়ে দ্যাখে; নিজের ভালো-মন্দ বিষয়ে বিরামহীন হিসাব-নিকাশ চালাতে থাকে — কিন্তু এর কোনোটাই তার বর্তমানকে থমকে রাখে না। রান্না-বাড়া চলে, হয়ত চলে প্রেম-কাম-মৈথুনও। তারচেয়ে বড় কথা, বয়স বেড়ে চলে। জোয়ানরা হয়ত তত টের পায় না; কিন্তু বুড়োরা টের পায় হাড়ে হাড়ে; আর শিশুরা দিনকে দিন বড় হয়ে অন্যদের সামনে জারি রাখে সময়ের চলমানতার বোধ। বিপর্যস্ত সময়েও চলমানতার ছবি অটুট রাখতে পারা শুনতে কি পাও ছবির এক অনন্য মাত্রা। যদি ওই বিপর্যয়টাই পরিচালকের একমাত্র লক্ষ্য হত, তাহলে হয়ত একথা বলা যেত না। কিন্তু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, চরিত্রগুলোর পাশাপাশি ক্যামেরার এক চোখও ভবিষ্যতের দিকে তাক করা। কাজেই আইলা-পরবর্তী বর্তমানের জঠরে জীবনের চলমানতা ফুটিয়ে তোলার জন্য বিশেষ কৃতিত্ব ধার্য করতেই হয়। শুধু এ কথা মনে রাখাই যথেষ্ট হবে যে, শুনতে কি পাও ছায়াচিত্রে সার্বিক তাৎপর্য কখনোই বিশেষকে ছাড়িয়ে যায় নাই। অর্থাৎ, বিশেষ জীবনচিত্র শুধু সার্বিক কোনো তাৎপর্যের রূপক হিসাবে দায়িত্ব শেষ করে নাই। তার নিজস্ব গুরুত্বের বিশিষ্টতা শেষ পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল।
বিপর্যয়ে থমকে-যাওয়া জীবনের সাথে নিয়ত সচল জীবনের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক-যে এ সিনেমার অন্যতম প্রধান দাবি, তার পরিচয় পাচ্ছি কতগুলো গতি-দৃশ্যের পুনরাবৃত্ত আয়োজনে। একটা মোটিফ মোটর-সাইকেল। বেশ কবার দ্রুত ধাবমান মোটর বেড়িবাঁধের ইট-বাঁধানো রাস্তায় অনেক দূর থেকে দেখা দিয়ে মিলিয়ে গেছে বিপরীত দিকে। মোটরের যাত্রীরা কেউ চরিত্র হয়ে ওঠে নাই; এমনকি তাদের মুখও দ্রষ্টব্যের তালিকায় আসে নাই। পুরা বয়ানের অন্য কোথাও এমন কোনো ইশারা নাই, যার দৌলতে যাত্রীদের কেউ বিশেষভাবে মনোযোগ কাড়বে। তার মানেই হল, আরোহী নয়, মুখ্যত খোদ মোটর-সাইকেলের গতিই অংশ নিয়েছে অর্থ-উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। কখনো গেছে দর্শকের চোখের সামনে দিয়ে, কখনো চেনা চরিত্রগুলোর পাশ ঘেঁষে; আবার অনেক সময় স্রেফ মোটর সাইকেলের আওয়াজই হয়ে উঠেছে গতির নিশানা। আরেকটি মোটিফেও আছে চাকা। বাচ্চাদের খেলনা-চাকা। লাঠির মাথায় লাগানো চাকা ঘুরিয়ে বাচ্চারা রাস্তায় দৌড়াচ্ছে, আর ক্যামেরা হয় স্থির থেকে অনুসরণ করছে, না-হয় পড়ি-মরি করে ছুটছে ওই এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় — এ দৃশ্যে জীবনের গতি আর গতিশীল বর্তমান না-পড়বার কোনো কারণ দেখি না।
তার মানেই হল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জীবন-যে থেমে যায় না, বা যায় নাই, তা দেখানোর একটা সর্বাত্মক আয়োজন এ বয়ানে হাজির। তাতে করে অবশ্য ‘প্রকৃতির বিপরীতে সংস্কৃতি’ ধরনের কোনো ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় না। ওই জনজীবনে সেরকম ধারণার কোনো সুযোগও নাই। নাগরিক জীবনে প্রকৃতি যেমন একটা আলগা উপাদান, যার কাছে ছুটির বিকালে ঘুরতে যেতে হয়, বা বারান্দার ঘেরাটোপে টবে লাগানো প্রকৃতির প্রতি প্রেম দেখিয়ে সংস্কৃতিবান মনের পরিচয় দেয়া যায়, ওই সুতারখালিতে সে ধরনের প্রকৃতি আসলে সম্ভবই না। প্রকৃতি ওই জীবনের স্থিতি ও গতির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে থাকে যে, বেশিরভাগ সময় আলাদা করে তার দিকে নজরই পড়ে না। ঠিক এ জায়গাটির সাথেই পুরা সিনেমায় সক্রিয় ক্যামেরার চোখের অনেকগুলো দিক যুক্ত। ক্যামেরা দেখেছে — কিন্তু কার পক্ষ থেকে, কার জন্য, আর তার লক্ষ্যই বা কী? এখানে আমাদের একটা অন্য আলাপ সেরে নিতে হবে। নৃবিজ্ঞানশাস্ত্রের মাঠ-গবেষণায় কতগুলো প্রশ্ন গত কয়েক দশকে খুব জোরালোভাবে সামনে এসেছে। যে জনগোষ্ঠী নিরীক্ষার বিষয়, যিনি দেখছেন, আর প্রস্তুত বয়ান যাদের সামনে হাজির হচ্ছে — কমপক্ষে এ তিনটি পক্ষের পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতা বিষয়ে নৃবিজ্ঞানীরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সজাগ। লক্ষণ দেখে মনে হয়, শুনতে কি পাও-এর কামার আহমাদ সাইমন এসব প্রশ্নে নিগূঢ়ভাবে সতর্ক ছিলেন।
তিনি বেছে নিয়েছেন একটা ছোট্ট জনগোষ্ঠী। আইলায় নিজেদের বসতি ও চাষবাস হারিয়ে এরা আশ্রয় নিয়েছে উঁচু রাস্তার অস্থায়ী ডেরায়। তারা তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপন করে। সে জীবনের কথকতায় তাদের পূর্বতন জীবনের উপস্থিতি খুবই সজীব, আর সংকট কেটে যাওয়ার পরে আগের জীবনে ফিরে যাওয়ার বাসনাও তাদের প্রতি মুহূর্তের যাপনে সদা সক্রিয়। ক্যামেরা বস্তুত তাদের প্রতিদিনকার এ জীবনকেই অনুসরণ করেছে। ব্যক্তি ও সমষ্টির পারস্পরিকতায় — উচ্চারণে এবং অনির্বচনীয় শরীরী ভাষায় — অতীত ও ভবিষ্যতসহ বর্তমানকে চোখের সামনে যথাসম্ভব প্রত্যক্ষগোচর করাই ছিল ক্যামেরার লক্ষ্য। যে-বয়ান রচিত হবে এসব টুকরা অভিজ্ঞতার বিহিত বিন্যাসে, তার গন্তব্য কী? বলা যায়, গন্তব্য প্রধানত এমন দর্শক, যারা প্রত্যক্ষত ওই জনজীবনের অংশ নয়। আমাদের এ মন্তব্যের প্রাথমিক কারণ ক্যামেরার গতিবিধি। চরিত্রগুলোর কোনোটির নজর বা মন অনুসরণ করেছে, ক্যামেরার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা সম্ভবত এ সিনেমায় ঘটে নাই। তাছাড়া, ক্রমবিন্যস্ত শটের প্রকার-প্রকরণও প্রমাণ করে, ইন্দ্রিয়কে প্রবলভাবে আক্রান্ত-করা শটগুলো স্থানীয়দের ভোগ্য নয়। এ অবস্থানের নৈতিকতা এবং জনজীবনের বয়ান নির্মাণের ক্ষেত্রে তার উপযুক্ততা বিষয়ে পরে আসছি। আপাতত আবার ফেরা যাক প্রকৃতি বিষয়ক আলাপে।
শুনতে কি পাও সিনেমার ভিত্তি এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বিপর্যস্ত মানুষের নাড়ি ও হাড়ির খবর আবিষ্কার করা তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। প্রশ্ন জাগে, বিপর্যস্ত মানুষগুলো ওই বিপর্যয়কে বা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী প্রকৃতিকে কী চোখে দ্যাখে? আমরা দেখব, তাদের কাছে এটা নিয়তির মতো। এরকম না হোক, প্রকৃতির অন্য নানারকম খেয়াল-খুশির সাথে তাদের পরিচয় আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার তারা নিজেরাই প্রকৃতির সেরকম এক খেয়ালের অসহায় শিকার হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির এরকম ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠার পেছনে দুনিয়ার অন্য এলাকার নাম না-জানা বহু মানুষের হাত আছে কি না, সে প্রশ্ন তাদের জাগে নাই। একে আমরা পরিচালকের তরফে কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় হিসাবেই দেখতে চাই। কিন্তু যাদের কাছে এ টেক্সট বিশেষ রকম বার্তাসহ পৌঁছাবে, তাদের কাছে তো মানুষের তৈরি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইতিমধ্যেই বড় সত্য হয়ে হাজির; অথবা এ সিনেমা সাধারণ নৃবিজ্ঞানের বাইরে আদৌ-যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তার অন্যতম কারণও তো দুনিয়াজুড়ে জোরদার হয়ে-ওঠা প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর একটির অন্তরঙ্গ চিত্রমালা। কাজেই রচয়িতার দিক থেকে ওই বৃহত্তর পটভূমির সাথে তাঁর বয়ানটিকে বেঁধে দেয়ার একটা জরুরত ছিল। পরোক্ষভাবে তিনি এ বাবদ রীতিমতো বিস্তর এনতেজাম করেছেন। আর প্রত্যক্ষত কাজটি সেরেছেন একটিমাত্র দৃশ্যে।
চায়ের দোকানের পাশে বাঁশের বেঞ্চিতে বসে আধা বা পুরা খালি-গায়ে রেডিওতে বিবিসি শুনছিল কয়েকজন। খবরে জলবায়ু-পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক রাজনীতির কয়েক টুকরা উচ্চারিত হয়। শ্রোতারা-যে বিশেষভাবে সংবাদটিতে উৎসুক হয়ে আছে, তেমন মনে হল না। পুরা সিনেমায় আর কোথাও এ ধরনের কোনো উল্লেখ নাই। কিন্তু টেক্সটের মধ্যে প্রকৃতি বিষয়ক বড় পরিসরের জরুরি স্মারক হিসাবে থেকে গেল দৃশ্যটি।
কয়েকটা দৃশ্যে দেখি দিগন্তজুড়ে কালো মেঘ। এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশ। তবে ভীতিকর আবহটা না-ওয়াকিফ দর্শকদের জন্য। ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য এ পরিস্থিতি মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর মধ্যেই চলে তাদের জীবন ও জীবিকা। বৃষ্টির প্রলম্বিত দৃশ্যটি এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। আমরা দেখব, এ দৃশ্যে বৃষ্টি ‘সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো’-ধরনের কিছু নয়; বরং অনেক দিক থেকেই স্বাগত জানানোর মতো ব্যাপার। দৃশ্যটিকে সামগ্রিক জীবনযাপনের এক টুকরা কথিকা করে তুলতে চেয়েছেন পরিচালক। জাল ফেলে মাছ ধরছে এক নারী। হাসগুলো গা ধুয়ে নিচ্ছে ধারাজলে। রাখীসহ আরো কেউ কেউ নাইছে বৃষ্টির পানিতে। এরকম পরিষ্কার পানি তাদের নোনাজলের কাব্যে আজকাল বিরল হয়ে উঠেছে। কাজেই ঘরে ঘরে চাল বেয়ে ঝরে-পড়া পানি ধরে রাখার তোড়জোড় শুরু হয়। পরিষ্কার পানিতে গোসলের সুযোগ নেয়া, আর খাবার পানি সংগ্রহের ব্যস্ততা চিত্রিত করে দৃশ্যটি ওই জনপদের গভীর বাস্তবের সাথে একাত্ম হয়ে উঠেছে।
দুয়েকটি দৃশ্য এমন আছে, যেগুলোকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হিসাবে পড়া যায়। উজ্জ্বল চাঁদ বা বিকালের পড়তি সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে পানিতে। অবশ্য পানির প্রবহমানতা দৃশ্যমান থাকায় এসব আয়োজনকেও জীবনের বহমানতার সাথে মিলিয়ে দেখার সুযোগ আছে, যে ভাবটা অন্তর্লীন প্রবাহ হিসাবে পুরা সিনেমাতেই শনাক্তযোগ্য। যদি ওই দৃশ্যগুলোর ‘সৌন্দর্য’কে আমলে আনিও, তাহলে বলতে হয়, সংশ্লিষ্ট কোনো চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করে সেগুলোর জন্ম হয় নাই। এগুলো দর্শকের জন্য পরিচালকের বাড়তি তোহফা। অবশ্য এ বস্তু শুনতে কি পাও সিনেমায় নিতান্ত বিরল।
যে দৃশ্য ঘণ্টা দেড়েকের এই সিনেমায় বিরামহীন দেখা গেছে, তাকে বলতে পারি প্রকৃতির সাথে মানুষের ভেদহীন বসতি। লঙ ডিপ শটে বারবার দেখি বিস্তীর্ণ জলাভূমির উপর ছড়ানো আকাশে সাদা-কালো মেঘমালা; দেখি আইলায় বিধ্বস্ত গাছ-গাছালি আর বাড়িঘরের ধ্বংসচিহ্ন; চাষের অনুপযোগী হয়ে ওঠা মাটি আর জোয়ার-ভাটার তেলেসমাতি। পানি-প্রবাহের একটি দৃশ্য বেশ কবার চিত্রিত হয়ে ওই জনপদের প্রায় শনাক্তকারী চিহ্ন হয়ে উঠেছে : ক্লোজ শটে পানির তীব্র প্রবাহের সাথে স্রোতের উচ্চকিত আওয়াজ কয়েক মুহূর্ত চলার পরে মিডিয়াম শটে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। এমনিতেই আওয়াজকে উচ্চকিত করে কানকে সজাগ করে তোলার প্রতি কামার আহমাদ সাইমনের বাড়তি আগ্রহ আছে। এসব দৃশ্যে স্রোতের তীব্রতা উচ্চকিত শব্দের সাথে মিলে ইন্দ্রিয়কে সহসা সচকিত করে তোলে। দর্শকের মনে পানিময় একটা ভূগোলের আবহ তৈয়ার করে। এর সাথে যোগ করতে হয়, ক্রিয়ারত মানুষের সাথে একই ফ্রেমে উপস্থাপিত পানির ছবি। রাস্তায় লোক চলছে, একই ফ্রেমে পাশের জলাশয়; চায়ের দোকানে আড্ডা চলছে, পাশে নদীর প্রবাহ; ঘরে স্বামী-স্ত্রী কথা চালাচালি করছে, জানালা গলিয়ে সেই ফ্রেমে ঢুকে পড়ছে পেছনের জলরাশি। এই শেষোক্তটি বোধ হয় এ সিনেমায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফ্রেম। জানালা খোলা রেখে বাইরের পানিকে পুনরাবৃত্ত কায়দায় ঘরে টেনে আনাকে আনমনা কাজ ভাবার কোনো সুযোগ নাই।
সব মিলিয়ে প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, প্রকৃতিতত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে বড় ফ্রেমটা এ সিনেমায় আছে। তবে খানিকটা পরোক্ষে। কিছুটা আবছা। থাকার জন্য যতটা দরকার ততটা। পুরো সিনেমাকে যদি একটা ফ্রেম হিসাবে কল্পনা করি, তাহলে ওই উপাদানগুলো থাকবে ফ্রেমের কিনার ঘেঁষে, বাইরের দিকে। ফোকাল পয়েন্টে থাকবে মানুষের জীবনযাপনের অঙ্গীভূত হয়ে জায়মান প্রকৃতি। বিধ্বংসী আইলার বিপর্যয়ের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়া সত্ত্বেও এ প্রকৃতি জনজীবনকে ছাপিয়ে প্রধান হয়ে ওঠে না; অথচ তাকে ভুলে থাকারও উপায় নাই।
৩
প্রথম শটটিকে পুরা সিনেমার দৃষ্টিকোণের দিক থেকে প্রতিনিধি-স্থানীয় শট বলতে পারি। আকাশ থেকে ভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত একটা প্রায়-স্থির লঙ শটে বসতি থেকে শোনা যাচ্ছে খুব স্পষ্ট শঙ্খ ও উলুধ্বনি, আর ভোররাতের খোলা আকাশের নিচে জুবুথুবু হয়ে আছে জীর্ণ ঘর-গেরস্থালি। এঘর-ওঘর থেকে দেখা যাচ্ছে চুলার আগুন। চোখের সাথে কানকে প্রায় একই মাত্রায় ব্যবহার করে, কোথাও কোথাও এমনকি কানকে অধিকতর সক্রিয় হতে দিয়ে, পরিচালক দর্শকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চেয়েছেন প্রায় পুরা সিনেমা জুড়ে। প্রথম দৃশ্যেই তার আভাস পাওয়া গেল। সে সাথে প্রতীকীভাবে আরেকটি কথাও হয়ত বলা থাকল — ক্যামেরায় চোখ রেখে দর্শক দ্রষ্টব্যকে দেখবে। চরিত্রের দৃষ্টিকোণ তালাশ করার জন্য ব্যস্ত হতে হবে না। দৃশ্যটাকে ভিত্তি-শট হিসাবে গণ্য করতে পারি। পরে সুযোগমতো এরকম আরো কিছু শট ব্যবহার করে বসতিটাকে স্থাপন করা হয়েছে চারপাশের বাস্তবতার পটে। একটা নির্ভেজাল বাস্তববাদী বয়ানের জন্য এটা খুব কাজের হয়েছে।
এরপর আমরা ক্রমাগত রাখী-সৌমেন-রাহুলকে দেখি। ঘরে, সংসারে, বাইরে, প্রাত্যহিক কাজকর্মে। তাদেরকে বিশেষভাবে দেখি। তবে আর-দশের সাথে তাদের যাপনের কোনো ফারাক যেন না হয়, সেদিকে পরিচালকের কড়া নজরও দেখি। বলা যায়, পরিচালক এক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রতিনিধিত্বের ধারণা নিয়ে এগিয়েছেন। একটি পরিবারকে অনেকগুলো পরিবারের হয়ে দিনযাপন করতে দিয়েছেন, যেন একটি পরিবারই মোটের উপর একশ পরিবারের যাপনকে তুলে ধরতে পারে। আবার বাছাই-করা পরিবারটির প্রত্যেক সদস্যের জন্য তৈরি করেছেন আলাদা পরিসর। তাদের দিনযাপনের সামগ্রিকতা তুলে এনেছেন এক-একটি নির্বাচিত ঘটনার উপস্থাপনায়। গেছেন এর বাইরেও। কর্মজীবন, স্কুল, রিলিফ বিতরণ, চায়ের দোকানের আড্ডা এবং প্রায়-আনুষ্ঠানিক সভা, কাছের ও দূরের হাটবাজার, বাঁধ-নির্মাণ ইত্যাদি।
একটা উদাহরণ দিয়ে বয়ানের বাস্তববাদী ও প্রতিনিধিত্বশীল উপস্থাপনের ধরনটি বলা যাক। রিলিফ আনার জন্য সৌমেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় একজন। পাশের ঘর থেকে আরেকজন যোগ দেয় তাদের সাথে। নদীতীরের লাউমাচার নিচে ডাঙায় তুলে রাখা নৌকা তারা সবাই মিলে খুব সাবধানে পানিতে নামায়। কাদাপানিতে পিছলা হয়ে থাকা মাটিতে সতর্কভাবে পা ফেলা থেকে শুরু করে নৌকা পানিতে নামানোর প্রতিটি কৌশলগত বাঁক ক্যামেরা দেখে রাখে, টুকে রাখে — খুব কাছ থেকে, খুব নিরিখ করে। রিলিফ বণ্টনের জায়গায় পৌঁছালে বিস্তর লোকের ভিড়ে আমাদের চেনা চরিত্রগুলোর আব্রু নষ্ট হয়। তাতেও পরিচালকের কোনো বিরাগ নাই। তিনি চান সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক চিত্র। এমনকি বালতিতে গম বা চাল পুরে হাতের পোঁচে দুইপ্রস্ত কমিয়ে নেয়ার দৃশ্যটাও পরিচালক বাদ দিতে চান না। সবাই মিলে ফিরতি পথে রিলিফের মালপত্র নৌকায় তুলে রওয়ানা দেয়ার পরে সমাপ্ত হয় রিলিফ অভিযান।
এ ধরনের প্রতিনিধিত্বশীল উপস্থাপনার একটা লম্বা তালিকা তৈরি করা যায়। সেদিকে না গিয়ে রিপ্রেজেন্টেশনের ধরন সম্পর্কে বললে বলতে হয়, নিখাদ বাস্তববাদী পটভূমিকায় নৃবিজ্ঞানীর কায়দায় জীবনের হুবহু প্রতিলিপি তৈরির ঝোঁকই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য পেয়েছে। বিস্তর ক্লোজ শটের ব্যবহার তারই প্রমাণ। নৌকার স্থিতি ও গতি, পানির নানান মাত্রার প্রবাহ, ছোট-বড় নানা ধরনের সাঁকো, সাঁকোতে পা টিপে-টিপে আগানো, কোদালে কুশলী হাতে মাটির বড় চাকা কেটে সেগুলো হাতে হাতে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া, চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলে-ওঠা আগুন, তরকারিতে পরিমাণমতো মসলা মেশানো ইত্যাদি দৃশ্য প্রথমত ও প্রধানত ধারণ করা হয়েছে ক্লোজ শটে। এরপর মাঝারি, চওড়া ও পূর্ণ-শটে সেগুলোর প্রতিষ্ঠা ঘটেছে। শটের বিন্যাস ও প্রতিনিধিত্বশীল উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালক সিনেমাটিকে রীতিমতো আদর্শ বাস্তববাদী উপন্যাসের প্রতিস্পর্ধী করে তুলতে পেরেছেন।
বলা যায়, পুরো টেক্সটে তিনটি ভাব সমানতালে বয়ে গেছে। একটি হল ওই ছোট্ট বসতির নৃবিদ্যা; দ্বিতীয়টি মানুষের বহমান জীবনের স্বভাব-চরিত্র; আর তৃতীয়টি দুর্যোগ মোকাবেলার নানা তল ও তৎপরতা।
বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় নারীর ও শিশুর আলাদা পরিসর ও ভাষার কথা। রাখী এ জীবন-নাট্যের প্রধান চরিত্র। সে-ই সবচেয়ে সপ্রতিভ ও সক্রিয়। কিন্তু সেটাই নারীর প্রতি মনোযোগের প্রধান প্রমাণ নয়। বরং আড্ডায়, লুডু খেলায়, চাল বাছতে বাছতে রাখী-সৌমেনের প্রেম-বিত্তান্তের উন্মোচনে নারীর ভাষা ও ভঙ্গির যে বিশিষ্ট ছাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে, তা শুধু বাস্তবের দায় মেটায় নাই, উপভোগ্যও হয়েছে। বর্গ হিসাবে শিশুর প্রতিও দেখি সে একই মনোযোগ। দ্বিতীয় দৃশ্যেই ছোট চার্জার লাইটের কেন্দ্রীভূত আলোয় চোখে পড়ে শিশুর উজ্জ্বল মুখ। মায়ের মুখটিও দেখি ওই আলোয়, যেনবা ছেলের উজ্জ্বলতার ভাগ পেয়ে মাও খানিকটা আলোকিত হল। রাহুলের এরকম আলোয়-ভরা মুখ আরো দেখা গেছে। তাকে যত্ন করে লেখাপড়া শেখানো, সাঁতার শেখানো, আর স্বপ্ন বুনে দেয়া হয়ত আলোকিত ভবিষ্যতেরই অভিযাত্রা। কিন্তু কেবল ভবিষ্যত নয়, বর্তমানের আধো-বুলির শিশুদলও পেয়েছে পর্যাপ্ত পরিসর।
কামার বলতে চান বা দেখাতে চান একটু চাপা স্বরে। তার সামগ্রিক ভাষার জন্য ‘যথাবিহিত’ কথাটা খুব জুতসই। ক্ষমতাসম্পর্কের বিদ্যমান অসাম্য বা সাধারণ জীবনযাপনে ক্রিয়াশীল নৈতিকতার প্রহসন নিয়ে তাকে খুব একটা ভাবিত মনে হয় না। কিন্তু সুযোগ থাকলে আলগোছে দু-একটা কৌতুক করতেও ছাড়েন না। বাচ্চাদের স্কুলের কথাই ধরা যাক। দুর্যোগকালীন অস্থায়ী স্কুল। সামগ্রিক বাস্তবতা প্রকাশের জন্য এর দরকার ছিল। কিন্তু গালে হাত দিয়ে বসে থাকা আনমনা বালকের সামনে শিক্ষক খটমট প্রমিত বাংলায় রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের দায়িত্ব পড়াচ্ছে — এ দৃশ্যের কৌতুকরস আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। চায়ের দোকানের মব-ট্রায়ালে আবার শুনি মন্ত্রী-এমপিদের লোক-দেখানো তৎপরতার কৌতুক। পাঠ্যপুস্তক, প্রমিত ভাষা, দেশাত্মবোধক গান বা ইউনিয়ন পরিষদ-উপজেলা পরিষদ-মন্ত্রী-এমপি মিলিয়ে যে-রাষ্ট্র নিজেকে হরহামেশা জাহির রাখতে চায়, তার প্রতি বয়ানের বিশেষ বিরাগ প্রকাশ পেয়েছে এমন নয়, কিন্তু নির্জলা বাস্তবের মধ্যে স্বভাবতই-আরোপণমূলক এই কাঠামোগুলো আলগা ফুলঝুরির মতো বাজতে থাকে।
বাঁধে আশ্রয়-নেয়া আইলা-বিধ্বস্ত বসতিকে যদি প্রতীকীভাবে এ সিনেমার ক্লোজশট হিসাবে সাব্যস্ত করি, তাহলে বলতে পারি, মাঝে-মধ্যে লঙ শটে ধরা পড়েছে এর বাইরের দুনিয়া। চায়ের দোকানে ওই দুনিয়ার মানুষ হিসাবে দেখি মেম্বারদের। মাঝে মাঝে ক্যামেরার চোখে ধরা পড়েছে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত দু-চারটা পাকা দালান। ফুটবল মাঠে নারী-পুরুষের একসাথে খেলা দেখা ওই বাইরের দুনিয়ার সাথে সম্পর্কের নমুনা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য রাখী বাজারে গেলে, সেখানেও দর্শকদের সাথে বাইরের বিস্তর মানুষের দেখা হয়। ভাবগতভাবে বলতে পারি, বাইরের দুনিয়ার শটগুলোকে ঝাপসা রেখে বেড়িবাঁধের বসতিকে রাখা হয়েছে ক্লোজ শটে। কিন্তু এই বসতি-যে দুনিয়ার বাইরের বস্তু নয়, তার সাথে আশপাশের সম্পর্ক, ইউনিয়ন-থানা-রাষ্ট্র থেকে শুরু করে দুনিয়ার অন্য কেন্দ্রগুলোর কার্যকর-অকার্যকর নানা সম্পর্ক বজায় আছে, সে বোধটা ন্যারেটিভ থেকে মোটেই হারিয়ে যায় নাই। বাস্তবতা রক্ষার খাতিরে ওই সম্পর্কসূত্রের ইশারা রাখা জরুরি ছিল। রাখী-সৌমেন-রাহুলদের যাত্রা যে-ভবিষ্যতের দিকে, তার বৈধতা রক্ষা করাও দরকারি ছিল। কিন্তু, যেমনটা আগেই বলেছি, দুর্গত জনজীবনকে অবলম্বন করে একটি ‘চিরন্তন’ কাহিনি ফাঁদা সিনেমাটির চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। বরং চিত্রিত জীবনটি-যে এদের বাধ্য হয়ে যাপন-করা জীবন, সে বোধের তীব্রতা তৈরি করাই তার প্রধান লক্ষ্য। সে কারণেই ক্লোজ শটে এই জনবসতিকে রাখা যথার্থ হয়েছে।
পরিচালকের জীবনদৃষ্টির একটা অসাধারণ দিকই বলব একে যে, জরুরি বা মধ্যবর্তী অবস্থার বোধ কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না করেই এই জীবনাখ্যান যাপিত জীবনের মুহূর্তগুলোকে পরম মূল্য দিতে পেরেছে। শিশুর আলোকিত মুখ, ইনজিন-নৌকায় মুখে কাপড় চেপে হাসি আড়াল করার চেষ্টারত রাখীর মুখে বিচ্ছুরিত বিকালের আলো, কিংবা বাঁধের জন্য আনা বাঁশ কাটার দৃশ্য দেখতে সমবেত হওয়া উৎসুক মুখ — কোনোটাই পরিচালকের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয় নাই। বলা যায়, পুরো টেক্সটে তিনটি ভাব সমানতালে বয়ে গেছে। একটি হল ওই ছোট্ট বসতির নৃবিদ্যা; দ্বিতীয়টি মানুষের বহমান জীবনের স্বভাব-চরিত্র; আর তৃতীয়টি দুর্যোগ মোকাবেলার নানা তল ও তৎপরতা। এ তিনের কোনোটির অসম প্রাধান্য ঘটতে না-দিয়ে বিবরণীটিকে মসৃণ গতিতে বইয়ে দিতে পারা, আমাদের বিবেচনায়, পরিচালকের সর্বোত্তম কৃতি ও কীর্তি।
দৃশ্যপট উন্মোচিত হয়েছে এক শীতে। মাঝে বর্ষা গড়িয়ে আবার শীত এলো। দু-একটা শটে ঋতু-পরিক্রমাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন পরিচালক। এর দরকার ছিল। একদিকে ঋতুভেদে জীবনাচারের দৃশ্যমান বদল হয়। অন্যদিকে যে-বাঁধের উপর নির্ভর করছে দুর্গতদের নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাওয়া, তার জন্য দরকার শীতকাল। গত শীতে সরকারি সিদ্ধান্তের গ্যাঁড়াকলে পড়ে বাঁধ হয়ে ওঠে নাই। এবার নিশ্চয়ই হবে। নানাজনের আশ্বাসে বা আশাবাদে সে কথা আমাদের জানানো হয়েছে। লোক-সংগ্রহের প্রক্রিয়ার সাথেও আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঁশ কাটা ও পোঁতাসহ নানা কর্মকাণ্ড ঘটেছে আমাদের চোখের সামনেই। কাজেই শেষাংশের বাঁধ-সমাপনের বিরাট আয়োজন এ জীবননাট্যের জন্য এক জরুরি আকাঙ্ক্ষার মতো হয়ে ওঠে। বাঁধের শেষ দৃশ্যকে পরিচালক দর্শকের সাথে একাত্ম করে তুলতে পেরেছেন।
৪
কিন্তু যে-সিনেমা দুনিয়াজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে, পুরস্কার-সম্মাননা-সাফল্যে খুতি ভরিয়ে ফেলেছে, আর দেশেও প্রায় সমানতালে সুনাম কুড়িয়েছে, তার সম্পর্কে আজ এতকাল পরে এসব কথাবার্তা খুব আলাদা কোনো তাৎপর্য বহন করে না। আমরা এ আলাপ তুলেছি মূলত সিনেমার ভাষার এক অন্যতর সম্ভাবনার কথা বলতে। এবার সেদিকে যাওয়া যাক।
বাংলাদেশে দেখছি সিনেমাটি পুরস্কৃত হয়েছে নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে। অথচ একে ফিকশন হিসাবে দেখার যথেষ্ট অবকাশ আছে। প্রথম থেকেই প্রধান চরিত্রগুলোর আলাদা হয়ে ওঠা, আর ‘কাহিনি’র সম্মুখগতি শুনতে কি পাওকে কাহিনিচিত্র হিসাবে পড়তে প্ররোচিত করে। চরিত্রগুলোকে বাস্তব পটভূমিতে স্থাপন করার পরে অন্তত দুই দিক থেকে কাহিনির ‘বিকাশ’ ঘটিয়েছেন পরিচালক। একদিকে বাঁধ হওয়ার মধ্য দিয়ে পুরানা বসতিতে ফিরে যাওয়ার আশা, অন্যদিকে রাখী-সৌমেনের সম্পর্কের টানাপড়েন। বস্তুত, এ দুই চরিত্রের মান-অভিমান এবং কখনো কখনো ঈষদুষ্ণ কথা-চালাচালি পুরা সিনেমাটিকে কাহিনিচিত্রের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। তবু একে নন-ফিকশন মনে হওয়ার সঙ্গত কারণ আছে। বিশেষ জনগোষ্ঠীর পরিচয় নির্মাণের ঝোঁক এবং তদনুরূপ দৃশ্যভাষা নিবিড় ডকুমেন্টেশনের বৈশিষ্ট্য বহন করে। বলা যায়, কাহিনিচিত্র ও ডকুমেন্টারির প্রতিষ্ঠিত প্রকরণ দিয়ে এ সিনেমার জাত নির্ণয় করা খুব সহজ নয়। অন্তত বাংলাদেশের সিনেমাজগতে এ ধরনের কাজ আর কখনো দেখা যায় নাই।
কিন্তু শুনতে কি পাও সিনেমার পর্যালোচনায় জাত বিচারের আলাপও অত গুরুতর আলাপ নয়। সিনেমাটি রিপ্রেজেন্টেশন বা উপস্থাপনার সংকটের দিকে তীব্রভাবে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। যাকে ‘নিজ’-এর গণ্ডিতে ফেলা যায় না, তার রিপ্রেজেন্টেশনের সংকট সংস্কৃতি-অধ্যয়নের এক গুরুতর বিবেচ্য। কামার আহমাদ সাইমনের সমগ্র আয়োজনে এ মুসিবত থেকে যথাসম্ভব রেহাই পাবার হুঁশিয়ারি আছে। বিষয় হিসাবে নির্বাচিত জনগোষ্ঠীকে স্থানিক ও সংস্কৃতিগত পটভূমিতে রেখে যদি পরিকল্পিতভাবে সক্রিয় করা যায়, তাহলে আরোপণমূলকতা কমিয়ে আনতে পারার সম্ভাবনা বাড়ে। শুনতে কি পাও ছবিতে অনেকদূর পর্যন্ত সে ঘটনা ঘটেছে। সাফল্যের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য বিপরীত সম্ভাবনা অনুমান করা যাক।
চিত্রনাট্য রচনা করে, উপযুক্ত প্রাকৃতিক অবকাঠামোতে সেট নির্মাণ করে, এবং পর্যাপ্ত কলাকুশলী নির্বাচন করে এ সিনেমা কি রচনা করা যেত? ধরা যাক, কলাকুশলীদের অন্তত একাংশ নির্বাচন করা হল ওই জনগোষ্ঠী থেকেই। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, তবে বোধ হয়, যেত। পশ্চিমে ব্যাপকভাবে নির্মিত পুরানা জমানার ছবিগুলোতে অনেকটা এ ধরনের কাজই করা হয়। আদিবাসী বা বিশিষ্ট আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের বহু সিনেমায় এরকম করা হয়েছে। গবেষণার মধ্য দিয়ে যদি কয়েক শ বছর আগের বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা যায়, তাহলে সুতারখালি গ্রামের বাস্তবতা তৈরি করা যাবে না কেন?
কামার আহমাদ সাইমন সম্ভবত এই ‘অতিরিক্ত’ ভাষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পেয়েছেন মাঠ থেকে। মাঠের উপর কর্তৃত্ব না করে সহাবস্থান করার সিদ্ধান্ত তাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে।
এ ধরনের চলচ্চিত্র তৈরি করা যেত, এরকম ধরে নিয়ে কামার আহমাদ সাইমনের পদ্ধতি সম্পর্কে আলাপ করা যেতে পারে। একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হবে বাজেট। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, সুতারখালি গ্রামের ওই বসতিকে ভজিয়ে প্রয়োজনীয় ফুটেজ সংগ্রহ করা আর সেট বানিয়ে কাজটা করার মধ্যে আর্থিক ব্যবধানটা ঠিক কী পরিমাণ হতে পারে। কারিগরি দিক থেকে বাংলাদেশের মেক-আপ শিল্প দিয়ে সম্ভবত এরকম কাজ করা সম্ভবই নয়। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমা ইন্ডাস্ট্রি বা নিদেনপক্ষে বোম্বে থেকে ভাড়া করলে টাকা-পয়সা কেমন লাগতে পারে, সে সম্পর্কেও আমার ধারণা নাই। কিন্তু যদি এসব মুসিবতের সুরাহা হয়, তাহলেও বোধ হয় কিছু গুরুতর ফাঁক থেকেই যাবে। ভাষার যে-অন্তরঙ্গ মাত্রা ধরা পড়েছে এ পদ্ধতির ন্যারেটিভে, আয়োজন-করা শ্যুটিঙে যত ইমপ্রোভাইজেশন করা হোক না কেন, এ মাত্রার অন্তরঙ্গতা ধারণ করা বোধ হয় সম্ভব হত না। ভাষা তো শুধু সংলাপ, অভিনয় আর ক্যামেরার মুনশিয়ানা নয়। বরং এর অতিরিক্ত কিছু। প্রত্যেক সিনেমাই তার অজস্র কলাকৌশল ব্যবহার করে সেই ‘অতিরিক্ত’ ভাষার এনতেজাম করে।
কামার আহমাদ সাইমন সম্ভবত এই ‘অতিরিক্ত’ ভাষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পেয়েছেন মাঠ থেকে। মাঠের উপর কর্তৃত্ব না করে সহাবস্থান করার সিদ্ধান্ত তাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। ব্যাপারটা মোটেই এমন না যে, এ সিনেমায় কৃত্রিম আয়োজন নাই, বা পরিকল্পনার আগাম কোনো ছক কাজ করে নাই। কিন্তু ওই আয়োজন বা ছক নিজেকে মোটের উপর গোপন রাখতে পেরেছে। দৃশ্যভাষা কাহিনিকে অনুসরণ করছে না; বরং যাপিত জীবনের দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে কাহিনি দানা বাঁধছে — বাস্তববাদী বয়ানের দিক থেকে এ সিনেমার দৃশ্যভাষার সবচেয়ে গোড়ার বৈশিষ্ট্য বোধ হয় এভাবে বর্ণনা করা যায়।
অন্তত বাংলাদেশের সিনেমার অভিজ্ঞতায়, দেখতেই পাচ্ছি, কামার আহমাদ সাইমনের অর্জন যথেষ্ট। এ অর্জনের একেবারেই অন্যরকম এক সম্ভাবনা ও সাফল্যের দিকে এখানে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ধারণাটা বহু আগে প্রচার করেছিলেন ওয়াল্টার বেনজামিন, তাঁর সুখ্যাত ‘দি ওয়ার্ক অব আর্ট ইন দি এজ অব মেকানিকেল রিপ্রোডাকশন’ প্রবন্ধে। বেনজামিন প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিল্পমাধ্যম হিসাবে সিনেমাকে ব্যাখ্যা করেছেন অনন্য গণমাধ্যম হিসাবে। ভোক্তার দিক থেকে তো বটেই, নির্মাণের দিক থেকেও সিনেমার গণচরিত্রের সম্ভাবনা আবিষ্কার করেছেন তিনি। তাঁর মতে, সিনেমা বৈশিষ্ট্যগত কারণেই যে কোনো মানুষকে ফিতাবন্দি করতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, যে কোনো মানুষ সিনেমার কুশীলব হয়ে ওঠার অধিকার রাখে। স্রেফ কর্ম ও জীবনযাপনের বাস্তবতার মধ্যেই কেউ একজন চিত্রিত হতে পারে সিনেমার চরিত্র হিসাবে। ১৯৩৬ সালেই বেনজামিন লক্ষ করেছেন, রাশিয়ায় এ ধরনের সম্ভাবনা অন্তত অংশত বাস্তবের মুখ দেখেছে। বিপরীতে, পশ্চিম ইউরোপীয় সিনে-ইন্ডাস্ট্রি পুঁজিবাদী শোষণের অংশ হিসাবে একদিকে যে-কোনো মানুষের কুশীলব হয়ে ওঠার বৈধ সম্ভাবনা ঠেকিয়ে রেখেছে, অন্যদিকে সিনেমার কাছ থেকে মানুষের চাওয়াকেও বিচিত্র অলীক কল্পলোকের ঘেরাটোপে বন্দি করেছে। নায়ক-নায়িকা বা তারকার কৃত্রিম ভাবমূর্তি পয়দাকরণ আর অনন্ত রোমান্সের হাতছানি নিঃসন্দেহে এ প্রক্রিয়ার দুই প্রধান এলাকা।
দুনিয়ার বিচিত্র সিনেমা-উদ্যোগে সিনেমার ওয়াল্টার বেনজামিন-কথিত মুক্তির কোনো কোনো অংশ অর্জিত হয়েছে। আজকাল ক্যামেরার সহজলভ্যতা এবং সস্তায় চিত্রধারণের সুযোগ ওই সম্ভাবনাকে আরো অনেকদূর বাড়িয়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও নিশ্চিন্তে বলা যায়, শুনতে কি পাও সিনেমায় কামার আহমাদ সাইমনের আয়োজন এ ক্ষেত্রে এক অনন্য সাফল্য হিসাবেই বিবেচ্য।
এবং সিনেমার এ ভাষা কোনো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। পরিচালকের পরের ছবি নীল মুকুট সে সাক্ষ্যই বহন করছে।