অম্বলিকা গুহ — ভারতের কলকাতাভিত্তিক একজন স্বাধীন গবেষক। ২০১৮ সালে প্রকাশিত অম্বলিকা গুহের Colonial Modernities: Midwifery in Bengal, C.1860–1947 বইটি মূলত দেখাতে চেয়েছে, বাংলায় ১৮৬০ সাল থেলে ১৯৪৭ সালের ভেতর ধাত্রীবৃত্তি কীভাবে প্রচলিত দাইদের থেকে সরে গিয়ে পেশাদার ধাত্রী ও চিকিৎসকদের আধিপত্যপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছিল। একই সাথে মানবশিশু জন্মদানের মতো একটি প্রাকৃতিক বিষয়কে কিভাবে ঔপনিবেশিক শাসন একটি চিকিৎসার বিষয়ে পরিণত করেছিল, আর এই পরিণত করার পেছনে সেই সময়ের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকদের তৎপরতা, যার অন্যতম ছিল সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে লেখালেখি, তারই সামাজিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছে এই বই। অম্বলিকার বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক শিবলী নোমান।
স্থানীয় চিকিৎসাবিষয়ক ভাবনাসমূহের সাথে এমনতর বোঝাপড়ার পরও, স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে একটি আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তৈরি করতে অ্যালোপ্যাথিক ঔষধের নির্দিষ্ট কিছু জ্ঞানতাত্ত্বিক বিষয়কে গ্রহণ করা হয়েছিল। এ ধরনের প্রস্তুতিহীন ধারাগুলোকে নারীদের ভেতর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো।
অ্যানাটমি বিষয়ক জ্ঞান ছিল এমনই এক ধারা। ১৮৭০ এর দশকের শুরু থেকে নারীদের জার্নালগুলোর মাধ্যমে মানুষের শরীরের কর্মপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো। মানুষের শরীরের অ্যানাটমি ও জীববৈজ্ঞানিক বিবরণ প্রকাশের মাধ্যমে নারী পাঠকদের আলোকিত করার ক্ষেত্রে শারীরিক ক্রিয়া শিরোনামে নিয়মিত প্রবন্ধ প্রকাশ করে বামাবোধিনী পত্রিকা যেমন এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিলো, তেমনি বঙ্গমহিলা-র মতো স্বল্পপরিচিত ম্যাগাজিনগুলোও এক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল না। ১৮৭৫ সালে স্বাস্থ্য রক্ষা শিরোনামে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রবন্ধসমূহে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রণালী, রক্তসঞ্চালন, হজম প্রক্রিয়ার মতো মানুষের শরীরের অ্যানটমি ও ফিজিওলজি বিষয়ক বিস্তারিত বিবরণ থাকতো; সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো কপাটিকা ও ধমনীসমূহের অবস্থান ব্যাখ্যা করে অন্ত্র, ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের রেখাচিত্র। এসব প্রবন্ধে পঞ্চন্দ্রিয়র কার্যপ্রণালীর সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীরও বিস্তারিত বর্ণনা থাকতো।৫৯ মানুষের শরীরের অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি বিষয়ে এমন নির্দেশনাসমূহ পশ্চিমা চিকিৎসা বিজ্ঞানের রোগশয্যাগত/বৈজ্ঞানিক প্যারাডাইম থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে নারীদের শিক্ষিতকরণের প্রক্রিয়াটি তাই ছিল জটিল ও সাংঘর্ষিক অর্থসমূহে আবৃত। উপনিবেশবাদ দ্বারা বিষাক্ত হয়ে না পড়া গার্হস্থ্যের পবিত্রীকৃত এলাকায় রক্ষকের নতুন সংজ্ঞায়িত ভূমিকার সাথে সাথে এক্ষেত্রে নারীদেরকে স্থানীয় চিকিৎসা জ্ঞানের ভাণ্ডার হিসেবে চিন্তা করা হয়েছিল। এর ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত পশ্চিমা চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন প্যারাডাইমকে প্রান্তিকীকৃত করে জ্ঞানের পুরনো ধরণগুলোকে পুনরায় গ্রহণের মনোভাব তৈরি হয়। তারপরও অ্যানাটমিতে নারীদের শিক্ষিতকরণের প্রয়াস ও বাড়িতে জন্মদান প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নে তাদেরকে দায়িত্ব দেয়ার ফলে (যা পরের অংশে আলোচিত হবে) পুরাতন জ্ঞানের বিপরীতে নতুন ধারার জ্ঞানকে সুবিধা দেয়া হয়। এটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশের ভেতর বিদ্যমান চিকিৎসা ঐতিহ্যের চেয়ে পশ্চিমা চিকিৎসা জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বের ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসযোগ্যতাকেই নির্দেশ করে। জ্ঞানের এই নতুন ও পুরাতন ধারার ভেতর ভাঙন খুব কম সময়ই তীক্ষ্ণ ছিল, বরং বেশির ভাগ সময় এটি ছিল এই দুই ধারার ভেতর সমন্বয় সাধন। বিজ্ঞানের রেটরিক ও জ্ঞানের বিদ্যমান ধারাগুলোর ব্যাখ্যায় এর প্রভাবই জ্ঞানের গঠন ও তা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অধিক কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল।
উনিশ শতকের মধ্যভাগে জন্মদান প্রক্রিয়ায় দাইদেরকে একইসাথে সমালোচনা করা ও অন্তর্ভুক্ত করা ছিল বিদ্যমান ঐতিহ্যের সাথে পশ্চিম থেকে গ্রহণ করা নতুন বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনার সমন্বয় সাধনে উপনিবেশিত অভিজাতদের এক জটিল প্রচেষ্টা।
জন্মের ফিজিওলজি ও অ্যানাটমি
বাঙালিদের পুনরুত্থানের উদীয়মান ডিসকোর্সে ‘স্বাস্থ্য রক্ষা’-র কেন্দ্রীয়তার ফলে নারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ধাত্রীবৃত্তির এলাকাটি উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ধীরে ধীরে সচেতনতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। ‘নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার’ (বাংলায় ও বাংলা ম্যাগাজিনে একে বলা হতো পেঁচোয় পাওয়া) এর ফলে শিশুর জীবনহানির প্রতি সচেতনতা দাই ও বাঙালি গার্হস্থ্যের অজ্ঞ নারীসমাজের বর্বর চর্চাগুলোকে পরীক্ষার মুখে ফেলে। শিশু লালন-পালনের নীতিগুলো সম্পর্কে বাঙালি নারীদের অজ্ঞতার ফলেই শিশুর অপ্রয়োজনীয় জীবনহানি ঘটে এমন বক্তব্যই ১৮৫৭ সালে প্রকাশিত শিশু লালন-পালন সংক্রান্ত প্রথম দিকের গ্রন্থগুলোর রচনাকে ত্বরান্বিত করেছিল।৬০ বামাবোধিনী দুঃখপূর্ণভাবে দেখিয়েছিল যে, সম্ভাব্য পিতা-মাতার অপার্থিব প্রার্থনা, ধ্যানজ্ঞান ও প্রথাগত ব্রত পালনের মাধ্যমে শিশুজন্মের বিষয়টি যেখানে বাঙালি গৃহস্থে অত্যন্ত আকাক্সিক্ষত একটি বিষয় ছিল, সেখানেই অযৌক্তিক চর্চাসমূহ ও অপরিচ্ছন্ন পারিপার্শ্বের কারণে শিশুর জীবনের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি ঘটে।৬১
১৮৭০ এর দশক থেকে শিশুমৃত্যু সংক্রান্ত অস্বস্তিকর প্রতিবেদনগুলো সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, অমৃত বাজার পত্রিকা ১৮৭৬ সালে একজন ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস বা আইএমএস কর্মকর্তার দ্বারা প্রণীত প্রতিবেদনের আলোকে জানায় :
১৮৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করা হিন্দু শিশুদের ভেতর হাজারে ৫৯৬ জন এক বছরের ভেতর মারা গিয়েছে, মুসলিমদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৭৩৫ এর কম নয়; যেখানে দ্বিতীয়োক্তদের বার্ষিক গড় ৫৯৮…শহরে জন্মগ্রহণ করা একজন দেশীয় শিশুর জীবন ধারণের সম্ভাবনা একজন কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনের সম্ভাবনার চেয়েও কম।৬২
শিশুমৃত্যু নিয়ে জনগণের অস্বস্তি দাপ্তরিক প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে আরো বৃদ্ধি পায়, বিশেষত ১৮৮১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে যেখানে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর উচ্চহারগুলো প্রকাশিত হচ্ছিলো।৬৩ ১৮৮১ সালের আদমশুমারিতে আতঙ্কজনকভাবে দেখা যায় যে “কোলকাতায় জন্ম নেয়া প্রতি হাজার শিশুর ভেতর ৪৮৮ জন ১২ মাস বয়স পূর্ণ করার আগেই মারা যায়…ভারতে এবং বিশেষত কোলকাতার মতো জনবহুল শহরে একজন নবজাতকের জন্মের প্রথম কিছু দিন তাকে যে পারিপার্শ্বিকতা ঘিরে রাখে তাকে স্মরণ করলে এটি মোটেও অবিশ্বাস্য কিছু নয়”।৬৪ পেঁচোয় পাওয়া (নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার) রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা বিষয়ে প্রভাবশালী অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ ঐতিহ্যের প্রতিযোগিতামূলক ব্যাখ্যাগুলো ১৮৮৬ সাল থেকে চিকিৎসা সম্মিলনী-তে প্রকাশিত হচ্ছিলো।৬৫ এ ধরনের প্রকাশনাগুলো চিকিৎসা পেশা সম্পর্কিত মানুষের বাইরেও বিস্তৃত পাঠক গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।৬৬ আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ার বিশেষ উপাদান হিসেবে শিক্ষিত মাতা তৈরি ক্ষেত্রে ধাত্রীবৃত্তির পুনর্গঠনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছিলো। বিদ্যমান ধাত্রীবৃত্তির চর্চাকে সমস্যাপূর্ণ মনে করার বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির যে ধারণা তা অনেকাংশেই ছিল অন্তঃপুর/জেনানার নারীদের শিক্ষিতকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত খ্রিস্টান নারী মিশনারিদের সচেতনতামূলক পদক্ষেপের প্রতি সাড়াপ্রদান।৬৭ কলকাতা মেডিকেল কলেজে ১৮৬৪ সালে একটি বাংলা ক্লাসের সূচনার ফলে পুরুষ শিক্ষার্থীদের ভেতরও ধাত্রীবৃত্তির চিকিৎসাজনিত গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যাদের অধিকাংশই ছিল ভদ্রলোক শ্রেণির সদস্য।৬৮ এর একটি জ্বলজ্বলে উদাহরণ হলো ১৮৬৬ সালে এই শিক্ষার্থীদের দ্বারা ধাত্রীবৃত্তির তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের দাবি উত্থাপন; যার ফলাফল ছিল ১৮৬৮ সালে একজন ‘স্থানীয় সাব-অ্যাসিস্টেন্ট সার্জন’-কে ধাত্রীবৃত্তির শিক্ষক হিসেবে স্থায়ীভাবে নিয়োগদান।৬৯ যদিও সন্দেহ ছিল যে নতুন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা দ্রুতই তাদের জ্ঞানের মাধ্যমে জেনানায় প্রবেশ করতে পারবে কি না, তারপরও এই ঘটনা নিশ্চিতভাবেই পশ্চিমা চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা সরবরাহকৃত ধাত্রীবৃত্তির জ্ঞানের নতুন প্যারাডাইমকে কার্যকর করতে ভদ্রলোকদের আগ্রহকেই নির্দেশ করে। নারীদের এলাকায় সরাসরি প্রবেশানুমতির অনুপস্থিতিতে ভদ্রলোকেরা তাদের নতুন জ্ঞানকে বামাবোধিনীর ‘গৃহ শিক্ষা’-র শক্তিশালী ধারার মাধ্যমে ভদ্রমহিলাদের ভেতর ছড়িয়ে দেয়ার এক বিকল্প পন্থা আবিষ্কার করে।
বামাবোধিনী পত্রিকায় ১৮৬৬ সালে শুরু হয়ে ১৮৭০ এর দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত ধাত্রীবিদ্যা ও শিশু পালন শিরোনামে যেসব প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল তা ছিল জেনানা বা অন্তঃপুরের বিচ্ছিন্ন নারীদের পশ্চিমা চিকিৎসা ভাবনার সাথে পরিচিত করাতে ভদ্রলোকদের সংস্কারবাদী ধারার প্রথমদিকের উদ্যোগ, আর এটি ঘটেছিল ১৮৮৫ সালে ডাফরিন ফান্ডের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশের দুই দশক আগে। ১৮৬৩ সাল থেকে ১৯২২ পর্যন্ত প্রকাশিত হওয়া সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী নারীদের ম্যাগাজিন হিসেবে বামাবোধিনী এক বিস্তৃত পাঠককুল ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।৭০ ধাত্রীবিদ্যা ও শিশু পালন শীর্ষক বিভাগের উদ্দেশ্য ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীদের তাদের নিজেদের শরীরের ফিজিওলজি ও অ্যানাটমির সাথে পরিচয় করানো এবং প্রজনন কর্মকাণ্ডের সাথে বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া তৈরি, যেন প্রসবের সাথে স¤পর্কিত অসত্য ধারণাগুলো অপসারণ করা যায় এবং নতুন তথ্যের উপর ভিত্তি করে গর্ভধারণ ও শিশুজন্ম স¤পর্কে আরো বেশি যৌক্তিক বোঝাপড়া তৈরি করা যায়।
১৮৬৭ সালে বামাবোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের প্রথম দিকের একটি প্রবন্ধে এই ধারার প্রবন্ধ প্রকাশের লক্ষ্যগুলো নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা হয় :
গর্ভবতী নারীদের ভেতর বিরাজমান শক্তিশালী কুসংস্কার ও অজ্ঞতাসমূহের ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই গর্ভধারণের সময় তাদের দায়িত্বসমূহ স¤পর্কে তাদের সচেতন করা উচিত। ধাত্রীবৃত্তি স¤পর্কে সুচারু জ্ঞানার্জনের জন্যে উদর, শ্রোণিচক্রের কার্যক্রম এবং জরায়ুতে ভ্রƒণের অবস্থানের পরিবর্তন স¤পর্কে শিক্ষাগ্রহণ জরুরি। যাই হোক, বামাবোধিনীতে এ ধরনের বিষয়ে বিস্তারিত লেখা অযৌক্তিক। ধাত্রীবৃত্তি সংক্রান্ত যেসব বিষয় নারী পাঠকরা পাঠ করতে অস্বস্তি বোধ করবে না, তাই এখানে আলোচিত হবে।৭১
লেখক এভাবেই নারী পাঠকদের কাছে সরবরাহকৃত জ্ঞানের মানদণ্ডগুলো নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে এই ধারার প্রবন্ধগুলো গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার জীববৈজ্ঞানিক বিবরণ, গর্ভবতী নারীর যত্ন (গর্ভকালীন যত্নের আদিচিহ্ন), প্রসবকালীন ব্যবস্থাপনা এবং প্রসবের পর মা ও শিশুর যত্নের মতো গর্ভধারণবিষয়ক ব্যাপৃত পরিসরে নিজেকে বিস্তৃত করে।৭২ ১৮৪১ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে ধাত্রীবৃত্তিকে যুক্ত করার পর শিশুজন্মের চিকিৎসা ডিসকোর্স গঠনে এসবের আকর্ষণীয় অনুরণন ছিল। এসব প্রবন্ধ এই সাক্ষ্যই দেয় যে, পৃথিবীর অন্য অনেক অংশের মতোই উনিশ শতকের বাংলাতেও নারীশরীরের অ্যানাটমি বিষয়ক জ্ঞান পুরুষদের দখলেই ছিল যেখানে নারীশরীরকে পুরুষদের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বস্তু মনে করা হতো। তারপরও নারীদের কাছে নারীশরীরের অ্যানাটমি বিষয়ক জ্ঞান সেই মাত্রায় ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন ছিল যার দ্বারা গর্ভকালের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি সম্পর্কে তাদের আলোকিত করা যায় এবং পরিবার ও জাতির স্বার্থে শিশুর জীবনকে সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের শিক্ষিত করা যায়।
ধাত্রীবিদ্যা সিরিজের প্রথম দিকের প্রবন্ধগুলো জন্মদানের স্থানের সমালোচনার মাধ্যমে শুরু হয়। একদম প্রথম দিকের একটি প্রবন্ধে ঘরের মূল অংশের ভেতর শিশুজন্মদান সম্পন্ন করতে না পারার কারণ হিসেবে বিদ্যমান ‘কুসংস্কার’ ও ‘অজ্ঞতা’-কে দোষারোপ করা হয়। এসব আলোচনা থেকেই ঘরের সবচেয়ে নোংরা ও বায়ু চলাচলের অনুপযোগী কোণায় সূতিকাগৃহ (জন্মদানের স্থান) গঠিত হয় যার ফলে শিশুর জীবনে অপূরণীয় ক্ষতিসাধিত হতো। যদিও প্রশস্ত, দক্ষিণ দিকে খোলা জানালাওয়ালা বায়ুময়’ ঘরকে জন্মদানের আদর্শ স্থান হিসেবে নির্বাচনের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছিলো।৭৩ ভদ্রলোক ও ঔপনিবেশিক রচনাসমূহে বারংবার সূতিকাগৃহ ব্যবস্থাকে বাতিলকরণের মাধ্যমে ডাফরিন ফান্ডের উদ্যোগগুলোর জন্যে জায়গা করে দেয়া হয় যেখানে নারীদের দ্বারা পরিচালিত হাসপাতালসমূহের দেশব্যাপী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জন্মদান প্রক্রিয়াকে হাসপাতালের বিষয়ে পরিণত করা হয়েছিল, যা পরের শতকে সংশয়পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধের মধ্যবর্তী বছরগুলোতে বাংলায় মা ও শিশুমৃত্যু সংক্রান্ত জনবিতর্কসমূহে অসুস্থতা ও গর্ভধারণ পরবর্তী জটিলতাসমূহের আবাসভূমি হিসেবে সূতিকাগৃহের চিত্রায়ন নতুন করে কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।
ধাত্রীবিদ্যা সিরিজের পরবর্তী প্রবন্ধগুলোতে জন্মদানের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়াদি থেকে সরে গিয়ে প্রসব বেদনার শারীরতাত্ত্বিক বা ফিজিওলজিক্যাল বর্ণনায় আলোকপাত করা হয়। নারীদেরকে তিন ধরনের প্রসব বেদনা চিহ্নিত করা শেখানো হয়, স্বাভাবিক প্রসব বেদনা, বিলম্বিত প্রসব বেদনা ও অস্বাভাবিক প্রসব বেদনা। প্রত্যেক ধরনের প্রসব বেদনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানানো হয়েছিল এবং অস্বাভাবিক প্রসব বেদনার ক্ষেত্রে মা ও শিশুর সম্ভাব্য বিপদগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছিল। প্রত্যেকটি স্তরেই দাইদের দায়িত্বসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তারপরও এসব আলোচনায় শিশুজন্মের প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে মনে করার ধারাটিই কর্তৃত্বপূর্ণ থেকে যায় ও এমন আলোচনাগুলোতে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। এক্ষেত্রে এমন একটি প্রবন্ধের উপসংহারে এর লেখক বলেন :
শিশুর জন্মের সাথে সাথে জরায়ুর আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে ঈশ্বরের অলৌকিক ক্ষমতারই প্রতিফলন ঘটে। প্রসব বেদনাকে অন্য কোন ব্যথার সাথে তুলনা করা যায় না কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং প্রাকৃতিকভাবে ও দ্রুতই এর ব্যথা দূরীভূত হয়। অন্য কোন ব্যথাই এত দ্রুত নিজে নিজে কমে যায় না।৭৪
একই সময়ে, জন্মদানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে ‘অস্বাভাবিকতা’-র সম্ভাব্যতাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। জন্মদানের শারীরবৃত্তিক প্রকৃতি ও এর অস্বাভাবিক বিষয়গুলোতে একত্রে আলোকপাতের ফলে ধাত্রীবৃত্তিকে সমস্যায়িতকরণ ও কিছু মাত্রায় রোগবিদ্যার সাথে যুক্তকরণের প্রথম চিহ্নগুলো ফুটে উঠে। ধাত্রীবিদ্যা সিরিজের ধাত্রীর কর্তব্য শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক এভাবে শুরু করেন :
জরায়ুর ভেতর যে স্বর্গীয় বিধানে ভ্রূণ বেড়ে উঠে ও শক্তিসঞ্চয় করে, সেক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়ায় দাইয়ের পালনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা যায় না। কিন্তু দাইয়ের জন্যে সামান্য যে ভূমিকা থেকে যায়, সেখানে দাই অনভিজ্ঞ হলে এমন বিপজ্জনক ঘটনা ঘটতে পারে যা মা ও শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়।৭৫
দাইকে তার অপরিচ্ছন্ন ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্যে অনুযোগ করেও তিনি দাইয়ের উপর প্রসবোদ্যত নারীকে পরীক্ষা করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আরোপ করেন। দাইকে প্রথমত পরীক্ষা করতে হবে, ভ্রূণের মাথা প্রথমে দৃশ্যমান হয় নাকি শরীরের অন্য কোন অংশ; দ্বিতীয়ত, জরায়ুতে ভ্রূণের অবস্থান; তৃতীয়ত, মায়ের শ্রোণিচক্রের বিপরীতে ভ্রূণের মাথার অনুপাত; চতুর্থত, ভ্রূণেরহৃৎপিণ্ডের অবস্থান; এবং শেষত, উদরের আকার ও ওজন।৭৬ যদি মা এসব পরীক্ষা করতে দিতে লজ্জাবোধ করেন, সেক্ষেত্রে তাকে এসব পরীক্ষার উপযোগিতা উপলব্ধি করানোর দায়িত্বও দাইকে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এটি উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে মায়ের শ্রোণিচক্রের বিপরীতে ভ্রূণের মাথার অনুপাত” বিষয়ক সচেতনতার মাধ্যমে সেই চিকিৎসা ধারার ক্ষীণ সূচনা চিহ্নিত হয় যেখানে স্বাভাবিক/শারীরবৃত্তিক জন্মদান ও অস্বাভাবিক/রোগবিদ্যাগত জন্মদানকে চিহ্নিত করার জন্য আনুপাতিক অসামঞ্জস্যতার সম্ভাব্যতা চিহ্নিতকরণে গুরুত্বারোপ করা হতো।৭৭ এর ফলেই বিংশ শতকের মধ্যভাগে পেলভিমেট্রি (শ্রোণিচক্রের আকার পরিমাপের পদ্ধতি) পেশাদার ধাত্রীবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়। এ কারণে ১৮৬০ এর দশকে জনপ্রিয় বাংলা প্রিন্ট মাধ্যমে এসব ভাবনার প্রকাশ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্কারবাদী ডিসকোর্সে দাইদের উত্তরোত্তর বাতিল করার প্রবণতা সত্ত্বেও ভারতীয় জন্মদান চর্চায় তাদেরকে অপরিহার্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। দাইদেরকে হটিয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় একমাত্র টেকসই পথ ছিল তাদেরকে প্রসব বেদনার তিনটি পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নিয়মানুগ ও তথ্যবহুল ধারা গ্রহণ করতে শিক্ষা প্রদান করা। দাইদের দ্বারা গর্ভবতী নারীদের বারংবার জেরা করা ও ভ্রূণের মাথাকে জোরপূর্বক বের করে আনার চর্চাকে বর্বর উল্লেখ করে এসবের বিরুদ্ধে তাদেরকে সতর্ক করা হয়। উনিশ শতকের মধ্যভাগে জন্মদান প্রক্রিয়ায় দাইদেরকে একইসাথে সমালোচনা করা ও অন্তর্ভুক্ত করা ছিল বিদ্যমান ঐতিহ্যের সাথে পশ্চিম থেকে গ্রহণ করা নতুন বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনার সমন্বয় সাধনে উপনিবেশিত অভিজাতদের এক জটিল প্রচেষ্টা। এরপরও দাইদেরকে আলোকিত করার জন্য যা যা লেখা হতো তার বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকতো জন্মদানের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়াদির সাথে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীদের পরিচিত করানো এবং দাইদের অসুরক্ষিত ও অবৈজ্ঞানিক কাজের প্রকৃতি স¤পর্কে তাদের সচেতন করে তোলা।৭৮
ধাত্রীবৃত্তির বৈজ্ঞানিক দিকে নারীদের শিক্ষিতকরণের যে লক্ষ্য বামাবোধিনী পত্রিকা ঠিক করেছিল সেই সীমা তারা ধীরে ধীরে অতিক্রম করে যায়। ১৮৭২ সালে প্রকাশিত মাতৃগর্ভ ও গর্ভশিশু শীর্ষক প্রবন্ধে মায়ের গর্ভের ভেতর ভ্রূণের বেড়ে উঠার ধাপগুলোর রঙিন চিত্রায়ন করা হয়।৭৯ ভারতী-র মতো অন্যান্য সমসাময়িক জার্নালও বাংলায় ধাত্রীবৃত্তি ব্যবস্থাপনার বৈজ্ঞানিক পথসমূহ ব্যাখ্যা করতে কিছু পৃষ্ঠা বরাদ্দ করেছিল।৮০
১৮৮০ এর দশকে চলিত বাংলা ভাষায় প্রজনন বিজ্ঞান বিষয়ে বাঙালি চিকিৎসা স¤পর্কিত ব্যক্তিদের লেখা প্যামফ্লেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, এসব প্যামফ্লেটে দাই ও বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাঠকদের উদ্দেশ্য করে লেখা হতো।৮১ উদাহরণস্বরূপ, ১৮৬৭ সালে সম্ভাব্য মা ও দাই উভয়কেই ধাত্রীবৃত্তির বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষিতকরণের উদ্দেশ্যে যদুনাথ মুখার্জীর ধাত্রীশিক্ষা প্রকাশিত হয়।৮২ ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত ডক্টর অন্নদা চরণ খস্তগীর রচিত আ ট্রিটিজ অন দ্য সায়েন্স অ্যান্ড প্র্যাক্টিস অব মিডওয়াইফরি উইদ ডিজিজেজ অব চিলিড্রেন অ্যান্ড উইমেন-এ প্রথমবারের মতো ফোরসেপ, ফিলেটস ও ভেকটিসের মতো অস্ত্রোপচারের যন্ত্রাদির চিত্রায়ন এবং এদের ইতিহাস ও শিশুজন্ম প্রক্রিয়ায় ভূমিকা নিয়ে একটি অধ্যায় বরাদ্দ করা হয়।৮৩ ১৮৮০ এর দশকে ক্ষিরোদাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ধাত্রীবিদ্যা-ও জন্মপ্রক্রিয়ায় অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বর্ণনা করে, যা ছিল ডক্টর প্লেফেয়ারের ধাত্রীবৃত্তি সংক্রান্ত জনপ্রিয় বইয়ের অনুবাদ।৮৪ এটি অনুমান করা কঠিন নয় যে এমন চিকিৎসা সংক্রান্ত রচনাগুলো জেনানার নারীসমাজের ভেতর খুব কমই পাঠক খুঁজে পেয়েছিল।৮৫ তবুও ২য় অধ্যায় দেখাবে যে, এ ধরনের প্রকাশনাগুলো ধাত্রীবৃত্তিকে বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছিল।
তথ্যসূত্র ও টীকা
58 ‘Garhasthya Cikitsa Pranali (Methods of Home Treatment)’, Bamabodhini Patrika, Vol.8, No.100, December 1871, 242.
59 ‘Svasthya Raksha’, Bangamahila, Vol.1, No.5, 1875. সমসাময়িক অন্যান্য জার্নালেও এমন প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে দেখুন, ‘Svasthyaraksha o Shorir Palan (Preservation and Care of Health)’, Paricarika, Vol.4, No.2, July 1882, 24–27.
60 Shib Chunder Bose, Sisupalan, Part I, Serampore: Mission Press, 1857, Introduction.
61 দেখুন, ‘Dhatribidya: Sutikagar (The art of Midwifery: The Site of Birth)’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.52, November 1867, 636.বাঙালি গৃহস্থে অবৈজ্ঞানিক পথে জন্মদান পরিচালনার প্রতীক হিসেবে শিশুমৃত্যুর প্রতি সচেতনতার প্রকাশ চলমান ছিল। উদাহরণ হিসেবে দেখুন, ‘Svasthya’, Bharati, Vol.1, No.5, 1877, 180–183; Nanibala Dasi, ‘Sutikagar e prasutir Cikitsa (Care of Pregnant Woman at the Site of Birth)’, Antahpur, Vol.6, No.5, August 1903.
62 ‘Scraps and Comments’, The Amrita Bazar Patrika, 19 October 1876.
63 Hemantakumari Chaudhury, ‘Sutikagriha (The Site of Birth)’, Antahpur, Vol.9, 1902, 133.
64 J.A. Bourdillon, Report of the Census of Bengal, 1881, Vol.1, Calcutta: Bengal Secretariat Press, 1883, 68. এর আগে, ১৮৭৩ সালের একটি দাপ্তরিক প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয় যে, ‘নবজাতক ও কমবয়সী শিশুদের’ ভেতর মৃত্যুহার ব্রিটেনের চেয়ে বাংলায় উচ্চ ছিল এবং এর আগের কোন প্রতিবেদনে প্রকাশিত শিশু মৃত্যুহারের নিম্নহারের একমাত্র কারণ ছিল ‘ত্রুটিপূর্ণ নিবন্ধন’। দেখুন, Ordinary General Mortality in the Districts in Bengal, Including the Mortality in Selected Areas, Part I, 1873, 7.
65 অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদের আলোকে নিওনাটাল টিটেনাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা বিষয়ে একটি সিরিজ ১৮৮৬ সালে চিকিৎসা সম্মিলনী-তে প্রকশিত হয়েছিল। দেখুন, Jagabandhu Basu, ‘Allopathy: Anture Chheler PechoyePawa Rog (Neonatal Tetanus of the Infant)’, Cikitsa Sammilani, Vol.2, 1886, 180–182, 216–218; Annadacharan Khastagir, ‘Homeopathy: Nabaprasuto Sisur Dhanushtankar Rog (Neonatal Tetanus of the New-Born Infant)’, Cikitsa Sammilani, Vol.2, 1886, 218–220; Abinashchandra Kaviratna, ‘Baidyamate Anturchheler Rog (Neonatal Tetanus of Infant according to Ayurveda)’, 183–185 and 220–224.
66 চিকিৎসা সম্মিলনী-র চাঁদার তালিকা থেকে চিকিৎসা স¤পর্কিত নয় এমন বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে এই জার্নালের জন্য নিয়মিত চাঁদা দিতে ও তা পাঠ করতে দেখা যায়। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল জেলাসমূহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটগণ, জমিদারগণ, ‘হেড ক্লার্কগণ’, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীগণ এবং ‘হেড পণ্ডিতগণ’, যারা সম্ভবত ছিলেন শিক্ষক। দেখুন, ‘Mulyaprapti (Subscription List)’, Cikitsa Sammilani, Vol.3, 1887 and ‘Mulyaprapti (Subscription List)’, Cikitsa Sammilani, Vol.4, 1884.
67 Margaret Ida Balfour and Ruth Young, The Work of Medical Women in India, Oxford: Oxford University Press, 1929, 81.ডেভিড আর্নোল্ড জেনানার ‘অউপনিবেশিত’ এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মিশনারিদের সামগ্রিক ভূমিকার উল্লেখ করেছেন। দেখুন, Arnold, Colonising the Body, 256.
68 ১৮৪৮ সালে, কলকাতা মেডিকেল কলেজের নতুন স্থাপিত ধাত্রীবৃত্তি ওয়ার্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে গর্বের সাথে ঘোষিত হয় যে, তাদের ছয়জন কলেজ স্নাতক কলকাতায় ও এর আশেপাশে সফলতার সাথে স্থায়ী হয়েছে এবং নারীদের প্রসবের কেইসসমূহের ব্যবস্থাপনা করছে, যদিও এক্ষেত্রে তাদের শরীরে হস্তচালিত হস্তক্ষেপ মূলত অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি আরও বলেছিল যে, সূতিকাঘর/আঁতুরঘরে নারীদেরকে বন্দি করার চর্চা “কলকাতার সম্মানিত স্থানীয়দের দ্বারা স¤পূর্ণ পরিত্যাক্ত” হয়েছিল। ভদ্রমহিলাদের নিয়ে মেরেডিথ বোর্থউইকের বিস্তৃত অধ্যয়নে তিনি এই বক্তব্যকে “আশাবাদীতার অত্যন্ত মাত্রাজ্ঞানহীন অভিব্যক্তি” হিসেবে বিবেচনা করেছেন। দেখুন, Borthwick, Changing Role of Women, 156–157.
69 West Bengal State Archives (WBSA), Proceedings of the Lieutenant Governor of Bengal, General Department, Medical Branch, Progs No.1–7, August 1867.যাই হোক, ১৮৪১ সাল থেকে অস্ত্রোপচার, উদ্ভিদবিদ্যা ও চিকিৎসা ব্যবহারশাস্ত্রের সাথে সাথে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ধাত্রীবৃত্তি শিক্ষাদানও শুরু করেছিল। দেখুন, CMC, Centenary Volume, Calcutta: Statesman Press, 1935. দ্বিতীয় অধ্যায়ে এই বিষয় বিস্তারিত আকারে আলোচিত হয়েছে।
70 কৃষ্ণ সেন বলেছেন যে, উনিশ শতকের শেষ চতুর্থাংশে একই ধরনের ম্যাগাজিনসমূহ আসার আগে পর্যন্ত ম্যাগাজিনের প্রতিটি কপি বিক্রি হয়ে যেত। Sen, ‘Lessons in Self-Fashioning’, 177.
71 ‘Dhatribidya (Midwifery)’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.50, September 1867, 597.
72 ‘Dhatribidya: Garbhabasthyay Prasutir Susrusa (Care of Pregnant Women)’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.51, November 1867, 616–619.
73 ‘Dhatribidya: Sutikagar (The Site of Birth),’ Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.52, November–December 1867, 636–637.
74 ‘Dhatribidya: Swabhabik Prasab (Normal Labour)’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.53, December 1867, 656.
75 ‘Dhatribidya: Dhatrir Kartabya (Duties of a Midwife)’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.54, January 1868, 676.
76 ‘Dhatribidya: Dhatrir Kartabya (Duties of a Midwife)’.
77 হেনড্রিক ভ্যান দেভেন্তার নামক একজন প্রখ্যাত ডাচ ধাত্রীবিদ ধাত্রীবৃত্তি নিয়ে তার অষ্টাদশ শতকের কাজে শ্রোণিচক্রের আকার ও ভ্রƒণের মাথার ভেতরের অসামঞ্জস্যতার উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন, Jean Donnison, Midwives and Medical Men: A History of the Struggle for the Control of Childbirth, London: Historical Publications Ltd, 1993.
78 ‘Svasthya’, Bharat, Vol.1, No.5, 1877, 180–183.
79 ‘Matrigarbha o Garbhasisu (Mother’s Womb and the Foetus Within)’, Bamabodhini Patrika, Vol.8, No.109, September 1872.
80 ‘Svasthya’, Bharati.
81 ঐসব বই কতজন দাইয়ের উপকারে এসেছিল তা জানা যায় না। তবে এটি মনে করা হয় যে, বাংলা ভাষার প্রাঞ্জলতা দাইদেরকে এমন প্যা¤পফ্লেটসমূহ থেকে তথ্য বুঝে নিতে সাহায্য করেছিল।
82 Jadunath Mukhopadhyaya, Dhatrisiksha ebong prasutisiksha arthat kathopakathanchhale dhai ebong Prasutidiger proti upadesh (Educating the Midwife and the Pregnant Woman Written in the Form of Dialogue), Chinsurah: Chikitsabodak Press, 1867.
83 Annada Charan Khastagir, Manabjanmatattva, Dhatribidya, Nabaprasut Sisu o Strijatir Byadhisangraha (A Treatise on the Science and Practice of Midwifery with Diseases of Children and Women), Second Edition, Calcutta: Girish Vidyaratna, 1878.
84 Khirodaprosad Chattopadhyay, Dhatribidya (Midwifery), Bhowanipur: Oriental Press, 1886.
85 কুমুদীনি সিনহা নামের একজন নারী তার সন্তানদেরকে আনন্দ চরণ খস্তগিড়ের পুস্তিকার নির্দেশনা অনুসরণ করে বড় করেছেন। এর উল্লেখ করেছেন মেরেডিথ বোর্থউইক। দেখুন, Borthwick, The Changing Role of Women, 163.
আরও পড়ুন
ঔপনিবেশিক আধুনিকতা : বাংলায় ধাত্রীবৃত্তি (১৮৬০-১৯৪৭) ।। কিস্তি : ২