সদানন্দ মণ্ডল তরুণ কবি। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর মনোজাগতিক আলোড়নের সুতীব্র প্রকাশ লক্ষ করা যায় তার কবিতায়। ভাষাকে ভেঙেচুরে দেখার চেষ্টাও লক্ষ্যযোগ্য।
পাঁচফোড়ন
শিরিষের শানানো সূর্য ডেকে যায় কিচিরমিচির।
আদর্শলিপি পাঠদান শেষে সুবোধ ফের
মন্দ হয়ে চলে, শোকের মতো কালো মোড়কে।
সতীর্থ কাক টেনে দেয় খড়ির রেখা, সাদা-শব।
আকাশ চিরে রোদ নামে, নরম কান্নার মতো।
ঘরে ঘরে নামে বে-আবরু বৌভাত,
ফাগুনের আগুন তখন মৃত্যুর লাহান গাঢ়।
মানুষের আলপথ রেখে মালতীর নগর।
নারীরা ওখানে নদী হয়, ডোরাকাটা সবুজে শুয়ে শুয়ে।
বুকের উর্বরতায় ফসল ফলে, বোরো এবং আমনের মতো।
তোমার রূপে ঝলসে যাওয়া এক আদিম মানব
বিদ্যুৎ চমকালেই ছুটে যায় আকাশ মেরামতে।
শরীরে ঢুকে পড়ে পাঁচফোড়নের মতো প্রেম।
সাঁতরে বেড়ানো সাগর ভালোবাসে জল আর ঢল।
ভাংতি
হুঁকা বদলের মতো হাতে হাতে ঘুরে গেলো সুরভির
প্রেম, নাভির ভাঁজে কতক বেশ্যা-পুরুষ।
এক পুটে দান মেরে সাপের জিভে, কেউ কেউ দেখে
এলো বেহুলা-বাসর।
কলিকাতা হারবাল আ্যাওয়ার্ড কার ঘরে গেলো?
আদিমতার লাস্ট সিনে শিশ্নের ফোঁসফোঁস; ভাতঘুমে
নাক ডাকে মধ্যবয়সী রতি।
মাংকি টুপিতে গেঁথে যাক ঠান্ডার জৌলুস।
গাছি-বউদের এখন রসের গতর; কলার পাতায় পাতায়
গুড়ের সেলাই।
সরে সরে অবসর গোয়ালা বধূর, ভাসুরের নামে কোনো
জিবকাটা নেই।
নলি বেয়ে হেঁটে আসা রতির সার্কাস নজর বন্দীর নামে
শুধু চেয়েছে নজর; নজু কাকার ঘরজোড়া পুরানো
সংসার।
ভাংতি কেলাপে আমি গুটিয়েছি হাত।
বীজধান চিনে নিলে ন্যাশনাল চাষারা; আমিও হয়ে
যাবো কলমের চারা।
প্রতিমা
তখনো রতির খেল, আরতির ভেলকি।
কানাই ঢাকির দু হাতে ভর্তি একঢাক পুজো।
দাইমা ছাড়াই তো ওর ঘরে নতুন কান্না আসে,
পুরাতন লুঙ্গির ন্যাতাটা এখন ব্যস্ত বেজায়।
ধুনুচি নাচের ফাঁকে টি-ব্রেকের নামে
কাসিয়ালের কণ্ঠে নামে একদফা ভেজা কাশি।
চরণামৃত আর নেকটার সিরাপ তখন বিকল্প সমাধান।
খড়কুটোর অভাবে মহাদেব ঘোষ কোনো দিনই বড়ো
হতে পারেনি,
ওর চোখে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।
ঘোষপত্নীর বাপের বাড়িতে তিথির বয়ানে চলে
ঘোষ ডেয়ারির ছড়াছড়ি।
পঞ্চ মিষ্টির খবর কি পঞ্চানন রাখে?
মণ্ডপ শোডাউনে ব্যস্ত তখন আমার ঈশ্বর।
হামাগুঁড়ি
সিঁড়িতে ছড়িয়ে আছে শৈশবের হাউরহাঁটা,
মর্নিং ওয়াকের সাথে হোক বিনিময় প্রথা।
লিফটের বগলে বগলে পাখার হিড়িক
তবু আকাশ ছোঁয়া হয়নি আমার।
এক বাদ্যিওয়ালার রক্তে আমার হৃদয় গড়ানো।
রংধনুর আড়ালে বর্ষার লজ্জারা হামাগুঁড়ি দেয়,
লুটোপুটি খেলে ভাঙে না তবু নির্জলা একাদশী।
পল্লীর বুকে আঁকা বিদ্যুতের প্রেম,
ওখানে লোডশেডিং ঘুমায় কোলবালিশ সমেত।
জীবন বিয়োলে আঁতুড় ঘরে কেঁদে ওঠা জমজ দুঃখ
ওলানের মতো ঝুলন্ত দোলনায় দুলিনি কখনো।
বিছুটি পাতার মতো আমি ভালোবাসি শরীর,
দু’হাতে মেখে আছে ফানানোর নেশা।
যৌবনে চর জাগলে বুঝে নিও শাওনিকা,
যোনির আলপথে বাঁধা আইবুড়ো প্রেম।
রাজত্ব
ওজনের ভোগে কেউ কেউ বিকিয়ে গেলো বেকুব দীর্ঘশ্বাস,
দুর্গা টু রাস এক্সপ্রেসে তবু আসেনি প্রতিমা।
খড়ের ভাস্কর্যে দফায় দফায় মুখোশ বদল।
আলোচাল মাখা হাতে ছুঁয়ে দিতে পারি পানভাত হৃদয় তোমার।
ভেসে যায় শব; ডাবের মতো।
শকুনের অভিশাপে মরে নাকি গাই!
চৈত্রের উদোম কেবল গাভিনের দায়।
গঙ্গাস্নান শেষে শান্তনুরা প্রেমে পড়ে গঙ্গার।
হেডলাইনে ঝালিয়ে নিলো চেনা শিরোনাম
সত্যের সন্ধানে সত্যবতী।
বিচিত্রবীর্যের ঘরনিরা পেলো নাকি বিচিত্র বীর্যের স্বাদ?
কয়েকটা মুদ্রায় কিনেছি রাজত্ব; দাবারা মতো।
হাতি-ঘোড়া, সৈন্য-সামন্ত, সিকি-আনা-পোয়া বারো।
কতো দরে আত্মা বিকোলে রাজকন্যা পাওয়া যায়?
বিনিময় প্রথায় বাজি রেখে আলসেমি প্রেম
রিখটার স্কেলে মেপে নেবো জামাই-আদর।
বেলের মতো ঝরবে তখন আকাশপাকা চাঁদ।