বীজ উপন্যাসে প্রকাশিত হয়েছে এক তরুণীর তীব্র সংবেদনা; পর্যবেক্ষণশীল চোখ দিয়ে সে দেখেছে নিজের ভেতর ও বাহির। মনিরুল ইসলামের লেখা এই উপন্যাস আপনাকে নিয়ে যাবে সমকালীন জীবনের অন্দরমহলে।
২৩
বিভাস আর ইমরান ঝগড়া করতেছে। হাতাহাতি। মারামারি। মা বলতেছে, ‘মেয়েছেলে নিয়ে খুনাখুনি পর্যন্ত অইয়া যায়। ইগুলা বালা না।’ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি দেখছি। খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা হাসপাতাল। ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ আসছে নাকে। হাসতে হাসতে একজন নার্স বলছে, ‘ব্লিচিং পাওডার দিয়ে দাঁত মাজলে খুব ভালো।’ নার্সটি সিভিল ড্রেসে আছে। পরনে লাল-খয়েরি একটা ম্যাক্সি। সমানে পানের পিক ফেলছে দেয়ালে। খুব বিরক্তি লাগছে আমার। বললাম, ‘খালা, এমনে কইরা পিচকারি ফালাইয়ো না। মাইনষ্যে দেখলো কী ক’বো?’ আমার কথায় কান দিলো না খালা। বললো, ‘তোর মা কীরম আছে? একটা পুলার লাইগ্যা কত কী যে করলো। আল্লারে কই, আল্লা তুমি দেও। দুঃখীর মনে আশা পূর্ণ করো।’ রাগে গা কাঁপতে শুরু করলো আমার। ছিহ্, কী বিশ্রী এই মহিলা। মাকে বলবো, মা যেন কোনোদিন এই মহিলার সঙ্গে কথা না বলে।
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা আমার। আমি মরে যাচ্ছি। আমি অসুস্থ। কিছুই পড়াশোনা হচ্ছে না। পরশু দিন ফিজিক্স প্রথম পত্র পরীক্ষা। সব ভুলে গেছি আমি। রিভিশন না-দিলে এক লাইনও লিখতে পারবো না। চিৎকার করে আমি মাকে ডাকছি। নেই। বাসায় কেউ নেই। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মশা ভনভন করছে ঘরে। পাঁচতলার ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াত। সবাই চলে গেছে। সারা বাড়ি কাঁপিয়ে চিৎকার করছি আমি। মা…? ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে হিয়া এসে বললো, ‘কী হয়েছে বলো, এখন থেকে আমিই এ-বাড়ির অভিভাবক।’ কষ্টে কান্না এলো। আমি কাঁদছি। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন বাপের বাড়ি পরের বাড়ি হয়ে গেছে। এখানে আমার কোনো দাম নেই। মা কাঁদছে। মায়ের কাছে সবাই সমান। বিয়ে হলেই কী, না-হলেই কী! তার কিছু করার নেই এখানে। বাবা নেই। মা নেই। এখন জমিজমা নিয়ে বোনদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করতে কে যাবে।
কমোডে বসে থাকতে ভালো লাগছে। উঁহ্ মাথাটাই সমস্যা। চিলিক পাড়ছে। এ-নিয়ে কয়বার যে এলাম! খাবারের কারণেই সমস্যাটা হল কিনা! ‘বালা অইয়া যাবো, মা। তর বাপ গেছিলো, ডাক্তারের উনে। বালা কইরা কইয়া ওষুদ নিয়া আইছে। কইছে বড়জোড় চার-পাঁচ দিন লাগবো।’, কথা বলতে বলতে মা জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। গা দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে আমার। পাগুলো লেপের নিচ থেকে বের করে দিলাম। ‘মা পাও দুইডা পুইড়া যাইতেছে। বালতিতে ভিজায় রাখবো।’ আমি বললাম। মনে হচ্ছে, গরম লাল তার দিয়ে আমার মগজটা কেউ বেঁধে রেখেছে। ফালি ফালি করে কাটছে। বললাম, ‘মা, বাড়িতে এতো কথা কীসের? তাদেরকে চুপ করতে বলো।’ মা বললো, ‘কই, কতা কেরা কইতাছে? কেউ তো কিছু কইতাছে না। তুই ঘুমা।’ বললাম, ‘মা, শোনো, বাথরুমে গরম পানি ঢালবে, বুঝছো? নয়তো কেঁচো উঠে। সাদা টাইলসে লাল কেঁচো দেখলেই আমি বুঝে ফেলি। আমার ঘেন্না লাগে।’
নাহার খালা এসেছে। লিচু এনেছে। পচা কালো লিচু। ‘গাছের জিনিস। ভাবলাম কয়ডা নিয়া যাই।’ বাবার সঙ্গে ফাজলামি করছে খালা। পান খাওয়া দাঁতগুলো কেমন বিশ্রী কালো। ‘দুলাবাই, আঙ্গরে ছাড়া কিন্তু মেয়া বিয়া দিবার পাবাইন না।’ রান্নাঘর থেকে টুংটাং হাড়ি-পাতিলের শব্দ আসছে। কেউ যেন চা-বানায়। কে চা বানায়? আমি ডাকলাম, রিয়া? উত্তর নেই। ঘুমের মধ্যেই আমি বুঝলাম, রিয়া ইউনভার্সিটিতে, ও বাসায় নেই!
না, কেউ চা-বানায় না। শুনশান নীরবতা চারদিকে। ঘরে লাইট জ্বলছে। শরীরের ওপর থেকে লেপ-কম্বল সব সরিয়ে ফেললাম আমি। ঘামে ভিজে গেছি। ‘মা, বাথরুমে যাবো।’ গলা দিয়ে আস্তে আস্তে স্বর বেরোচ্ছে। এখন রাত না দিন? ঘড়িতে সাড়ে চারটা বাজে। বিকাল সাড়ে চারটা নাকি রাত? খুব দুর্বল লাগছে। মাথা ওঠাতে পারছি না। মা এলো। সঙ্গে রিয়া। রিয়া বললো, ‘এখন কেমন লাগছে, আপু? আমি হাসলাম। বললাম, ‘মা, বাথরুমে যাবো।’ মা আমাকে ধরে উঠালো। রিয়া এগিয়ে এলো। বললো, ‘আমি ধরছি। তুমি যাও। স্যালাইন আরেক প্যাকেট গুলে ফেলো।’ বাথরুম থেকে এসেই যতদূর পারি স্যালাইন খাই। ডাক্তার নাকি তাই বলেছে। ডাব এনেছে বাবা। কখন যেন ডাবের পানিও খেলাম। ‘ডাবের পানি আরও আছে?’, জিজ্ঞাসা করলাম। কাচের একটা জগ থেকে রিয়া গ্লাসে ঢেলে দিলো। ‘এখন রাত না দিন?’, আমি প্রশ্ন করলাম। রিয়া বললো, দিন। বিকাল। বললাম, ‘আমি কবে থেকে অসুস্থ, মা?’ আইজকা সকাল থাইক্যাই, মা বললো, ডাক্তার কইছে টেনশনের কিছু নাই। বললাম, ‘ফ্যান দিয়ে দাও মা।’ মা ফ্যান দিচ্ছে না। বলে, ‘তুই শো আমি বাতাস করতাছি।’ পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো। বাবা জিজ্ঞাসা করলো, এখন কেমন লাগছে? বললো, ‘একটু দেও পরে বন্ধ করে দিয়ো।’
বন্ধ করার প্রশ্ন আসছে কেন? মাথাটা তীব্র ব্যথা করছে আমার। রাগ লাগছে। সবার ওপর। রাগে আমার গা চিড়চিড় করছে। যেন আমার অসুস্থতার জন্য মা-ই দায়ী। সবাই দায়ী। মা বললো, ‘একটু পরেই দেখবা আবার কাঁইপ্যা কাঁইপ্যা জ্বর আবো।’ আল্লা যে কীয়ের অসুখ দিল।’ হঠাৎ দাদির কথা মনে পড়লো। ‘দাদি কই?’, জিজ্ঞাসা করার মত শক্তিটুকুও গায়ে নেই। চোখ বন্ধ করলে একটু ভালো লাগে। তখনই মাথা ব্যথাটা বেড়ে যায়। একটা ইলেকট্রিক জোঁক ঢুকে গেছে মাথায়। প্রচণ্ড খারাপ লাগছে আমার। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমি উঠে বসলাম। কোনোরকমে বিছানা থেকে পাশ ফিরে মেঝেতেই বমি করলাম। পেটের নাড়িভুড়ি উল্টে বেরিয়ে আসতে চাইছে। খুব বেশি বমি হলো না। স্যালাইন আর ডাবের পানি যেটুকু খেয়েছিলাম বেরিয়ে এলো। রিয়া একটা বালতি আনলো। মা বললো, কুলি করতে। মার আদেশ পালন করলাম আমি। বালতিতে কুলি করলাম। মা আমাকে শুইয়ে দিলো।
বালতিতে করে ফুল বিক্রি করছে একটা ছেলে। ইমরান। বললো, ‘কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। কিছু যদি বিক্রি হয়। তাতেই লাভ। মাকে আর অন্য বাড়িতে কাজ করতে হবে না।’ নীল রঙের একটা বালতিতে কিছু রজনীগন্ধা। আরেকটা বাঁশের ঝুড়িতে একগাদা গোলাপ নিয়ে বসে আছে ইমরান। সাদা রঙের টুপি মাথায় দিয়ে এমডি স্যার এলেন। ফুল কিনতে। আমাকে দেখে ফেললেন তিনি। কাঁচুমাচু করে আমি বললাম, ‘স্যার, দীর্ঘদিন আমি অসুস্থ ছিলাম। তাই স্কুলে আসতে পারিনি।’ স্যার বললেন, ‘এই ছেলে কি তোমার ভাই? ফুলের দাম এতো বেশি চায় কেন? হাস্নাহেনা ফুল কি আমি চিনি না?’
অনেক রোদ। ছাতাটা নিয়ে বের হইনি। রোদ একদম মগজের ভেতরে গিয়ে লাগছে। কোত্থেকে দৌড়ে আসলেন হিরা চাচা। বললেন, ‘শহরের পরিস্থিতি বালা না। উপ্রে থাইক্যা গুলির অর্ডার। দেহামাত্র গুলি।’ আমি বললাম, ‘লেবুপাতা নিবার আইছি। কয়েকটা পাতা নিয়াই যামুগা। কাল আমার বিয়ে।’ স্লোগান হচ্ছে চারপাশে। ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। হিরা চাচাকে কোথাও দেখছি না। গোলাগুলি শুরু হয়ে গেল। পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি। বাসা খুঁজে পাচ্ছি না। হেঁটে হেঁটে আমি ক্লান্ত। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। একটা মেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। হাতে ঘড়ি গায়ে সুন্দর একটা ফ্রক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তাকে বুঝতে দিলাম না যে, পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি। বললাম, ‘এই মেয়ে কয়টা বাজে?’ মেয়েটা হিয়া, আমাকে চিনতে পারছে না। বললাম, ‘ আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার ম্যাডাম। চলো, বাসায় চলো। ধুলার মধ্যে বাইরে ঘুরে বেড়ানো নিষেধ।’
কতগুলো ছেলে একটা মিছিল নিয়ে আসছে। মিছিলে ইমরানকে দেখা যাচ্ছে। হাত নেড়ে নেড়ে সে স্লোগান দিচ্ছে। কতগুলো লোক নিমিষেই জড়ো হয়ে গেল। ‘রাষ্ট্র নিষেধ করেছে। রাষ্ট্র চাইলে সব করতে পারে। রাষ্ট্র হল একটা গাড়ি। একে না-ভাঙলে নতুন গাড়ি পাওয়া যাবে না।’ আমার খুব ভয় করছে। আমি তাকে ইশারা করছি ও যেন চলে আসে। আমাকে সে দেখতে পায়নি। বললাম, ‘যে যাই বলুক। নির্বাচনে গোলমাল হবেই। মানুষ মরবেই।’ টিএসসির সামনে দিয়ে তামান্নার সঙ্গে কোথাও যাচ্ছি। চারপাশে ঝকঝকা রোদ। হইহট্টগোল। আমার কেন জানি খুব শীত লাগছে। ‘এই বার খুব শীত পড়বে দেখিস’, আমি বললাম। তামান্না একটা সাদা শাড়ি পড়ে আছে। তার দাদা মারা গেছে। ‘দাদা মারা গেলে কি সাদা শাড়ি পরতে হয়?’, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। বললো, ‘পরলেও ক্ষতি নেই। কেউ চাইলে পরতে পারবে।’ আমি আর হাঁটতে পারছি না। তামান্না আমাকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পা অবশ হয়ে গেছে আমার। আমি হাঁটতে পারছি না। আশেপাশে কেউ নেই। দেয়ালে হেলান দিয়ে আমি বসে আছি। আমি অসুস্থ। গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ঘর অন্ধকার। যেখানে যা কিছু থাকার সেখানে বসে আছে তাদের ছায়া। পাশে কেউ শুয়ে আছে। কে? মা নাকি দাদি? মা। একটু ভালো লাগছে। মাকে ডাকলাম। বললাম, বাথরুমে যাবো। নিজেই যেতে পারবো বলে মনে হচ্ছে। মাকে বললাম, শুয়েই থাকতে। আমি যেতে পারবো।
কীসের সরকার। কীসের রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্র জনগণের নয়। এ সরকার গণতান্ত্রিক নয়। এরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নেতাদের ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য।
কেমন অসহায় দেখাচ্ছে নিজেকে। মুখটা তেলতেলে হয়ে আছে। শরীরে কেমন একটা অসুস্থতার গন্ধ। চুলগুলো এলোমেলো। পেটের সমস্যাটা ভালো হচ্ছে না। মুখটা বিস্বাদ লাগছে। মনে হচ্ছে ব্রাশ করলে ভালো লাগবে। কিন্তু ভয় লাগছে ব্রাশ করতে। নিজেকে দেখলাম ভালো করে। মনে মনে ভাবলাম, কীসের অসুস্থতা! অসুস্থ মনে করলেই অসুস্থ। এমন ভাব করলাম যেন আমি অসুস্থ নই। চুলগুলো বাঁধলাম। মুখ ধুইলাম। ফ্রেশ লাগছে। আমি সুস্থ। আমি সুস্থ। আমি সুস্থ।
সঙ্গে সঙ্গে মাথা ব্যথা শুরু করল। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা। শরীরের দুর্বলতা তো আছেই। মা জেগেই আছে। অপেক্ষা করছে আমার জন্য। স্যালাইন খেলাম। খাওয়ার পর পর একটু বমির ভাব হল। কিন্তু বমি হল না। আবার শুয়ে পড়লাম। শুয়ে থাকতে থাকতে গা-ঘাড় ব্যথা করছে। আমার মা। মার সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছা করছে আমার।
: আজান দিয়েছে মা?
: কী জানি দেকতো।
: দুইটা পঁচিশ। দেয় নাই। ঘুমাইছো কয়টায়?
: বারোটা সাড়ে বারোটার দিকে।
: দাদি কই? দাদিরে দেখলাম না।
: সারাদিন তর দাদিই বইয়া আছিল। এহন ঘুমাইতেছে। আম্মার শরীরডাও বালা না। ঠা-া-মা-াই লাগলো কিনা? রাইতে ইনুই ঘুমাবার চায়। আমি কইলাম, আপনে যাইন। আমি থাকমুনে।
: নাহার খালারে স্বপ্ন দেকলাম। স্বপ্নে দেহি আঙ্গর উনে আইছে।
: ঘুমা।
: ঘুম আসতাছে না। তুমি ঘুমাও। আমি একটু রেস্ট নেই। শুইয়া থাকি চুপ কইরা। মাথা ব্যথাডা কমতাছে না।
অফিসে যাইনি। কাউকে জানানোও হয়নি। ফোনটা কোথায়? ‘মা আমার ফোনডা কই?’, জিজ্ঞাসা করলাম। ঘুম ঘুম স্বরে জবাব দিতে দিতে মা উঠলো। বললো, ‘রিয়া মুনে অয় টেবিলে রাকছে।’ ফোনটা এনে দিলো মা। বললাম, ঘুমাও। মা বললো, ‘এত রাইতে ফোন টিপিস না। চোক বন্ধ কইরা শুইয়া থাক এমনেই ঘুম আবো।’
বিভাস ফোন করেছিলো। ইমরান ফোন করেছিল কয়েকবার। মিসড কল ওঠে আছে। ইমরান এসএমএস পাঠিয়েছে একটা। ৩৬ বিসিএসের রিটেনে হয়েছে তার। অফিসে যাইনি কেন? একবার ফোন করল ধরলাম না। আমাকে নিয়ে সে টেনস্ড। ফেসবুকে ঢুকলাম। এখনকার হট টপিক সুন্দরবন, রামপাল। সবাই সুন্দরবন নিয়ে পোস্ট করছে। সেভ দা সুন্দরবন। ইমরানের লম্বা স্ট্যাটাস। তার পোস্টের মূল কথা, সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক বর্ম, তাকে রক্ষা করতে হবে। একদিন এই নিয়ে বিভাসের সঙ্গে তর্কই বাঁধিয়ে দিলো ইমরান।
বিভাসের কথা হলো, কোথায় কী হচ্ছে বা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জনগণের রাষ্ট্র আছে। সরকার আছে। নেতারাই সিদ্ধান্ত নেবে। এবং তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কোনো পক্ষ চাইলে এর প্রতিবাদও করতে পারে। কিন্তু করতে দেওয়া হবে না, এ-নিয়ে গোঁ ধরার পক্ষপাতী সে নয়। ইমরান গেলো ক্ষেপে। কীসের সরকার। কীসের রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্র জনগণের নয়। এ সরকার গণতান্ত্রিক নয়। এরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নেতাদের ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য। মোটা অঙ্কের ঘুষের লেনদেন হয় এখানে। বিভাসের পাল্টা কথা হলো এ-সব কল্পিত অভিযোগ দেওয়ার চেয়ে প্রতিবাদকারীদের উচিত কোথায় কোথায় অনিয়ম হচ্ছে জনগণের সামনে তা উন্মোচন করে দেখানো।
ইমরান আরও ক্ষেপে গেলো। তা তো করছেই। সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। সঠিক তথ্য কোনো পত্রিকা ছাপবে না। ছাপতে দিবে না। মিডিয়াতেও দালালের অভাব নেই। বিভাস হাসলো। ফিনিশিং টানলো সে। আমরা যদি এমন একটি রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা করে থাকি যার নেতারা দেশ বেচে, মিডিয়া দালাল, বুদ্ধিজীবীরা দালাল, জনগণ সরকার মানে না, প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া তাহলে আমাদের ভালো থাকার অধিকার নেই। চিৎকার করে লাভ নেই। কার চিৎকারে আস্থা রাখবো আমরা। আর আস্থার কথাই যদি আসে, তাহলে রাষ্ট্রের কথাতেই আমাদের আস্থা রাখা উচিৎ। একজন নাগরিকের এটাই কর্তব্য। সরকার আমরাই। সরকার আমাদের থেকে আলাদা কিছু নয়। ইমরান অ্যাটাক করলো বিভাসকে। বললো, ‘এগুলো আপনার কথা নয়। রাষ্ট্রের দালালদের কথা।’ বিভাস হাসলো।
একসঙ্গে হলেই এরা তর্ক করে। খুবই বিরক্ত লাগে আমার। বিভাসের কথাগুলোই আমার পছন্দ হয়। তার কাছে যখন সমালোচনা করি ইমরানের। বিশেষ করে তার ক্ষেপে যাওয়া। ও যা বুঝে তাকেই সঠিক মনে করা। এসবের যখন নিন্দা করি। বিভাস তখন চুপ করে থাকে। কী জানি ভাবে। মনে হয় আমার সমালোচনাগুলো সে গ্রহণ করে না।
বিভাসকে একটা এসএমএস করে দিলাম। আমি খুব অসুস্থ। তোমাকে এবং তোমাদের সবাইকে মিস করছি। কবে অফিসে যেতে পারবো, জানি না।
ঘুম আসছে না। মাথা ব্যথাটা আর সহ্য হচ্ছে না। চিপ দুইটা দপদপ করছে। দাঁতে দাঁতে কামড় দিয়ে থাকলে একটু ভালো লাগে। ছেড়ে দিলে আবার ব্যথা করে। আবার রাথরুমে যেতে হবে। মা ঘুমাচ্ছে। তাকে আর ডাকলাম না। অসহ্য অবস্থা। এসে শুয়ে পড়লাম আমি। ফোনের আলোতে খারাপ লাগছে। চোখ ব্যথা করছে। এরমধ্যেই তিনটা বেজে গেল। তিনটা তেরো।
(চলবে)
পড়ুন ।। কিস্তি : ২০