ঔপনিবেশিক আধুনিকতা : বাংলায় ধাত্রীবৃত্তি (১৮৬০-১৯৪৭) ।। কিস্তি : ২

ভূমিকা

অম্বলিকা গুহ — ভারতের কলকাতাভিত্তিক একজন স্বাধীন গবেষক। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন থেকে পড়ালেখা সম্পন্ন করেছেন। তিনি নিউজিল্যান্ড এশিয়া সোসাইটিরও একজন সদস্য। ২০১৮ সালে প্রকাশিত অম্বলিকা গুহের Colonial Modernities: Midwifery in Bengal, C.1860–1947 বইটি মূলত দেখাতে চেয়েছে, বাংলায় ১৮৬০ সাল থেলে ১৯৪৭ সালের ভেতর ধাত্রীবৃত্তি কীভাবে প্রচলিত দাইদের থেকে সরে গিয়ে পেশাদার ধাত্রী ও চিকিৎসকদের আধিপত্যপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছিল। একই সাথে মানবশিশু জন্মদানের মতো একটি প্রাকৃতিক বিষয়কে কিভাবে ঔপনিবেশিক শাসন একটি চিকিৎসার বিষয়ে পরিণত করেছিল, আর এই পরিণত করার পেছনে সেই সময়ের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকদের তৎপরতা, যার অন্যতম ছিল সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে লেখালেখি, তারই সামাজিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছে এই বই। অম্বলিকার বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক শিবলী নোমান

 

এই সময়ে নারীদের বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ব্যক্তিগত শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে বারংবার আলোচনা হচ্ছিলো। সাধারণত পুরুষ লেখকদের দ্বারা রচিত এসব লেখায় স্পষ্টভাবেই পিতৃতান্ত্রিক বিধানগুলো উঠে আসতো, এগুলো ছিল নারীদের দৈনন্দিন জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার সূক্ষ্ম কিন্তু পরিব্যাপ্ত এক পদ্ধতি। ১৮৬৪ সালে প্রকাশিত নারীদের ম্যাগাজিন বামাবোধিনী পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই স্বাস্থ্যরক্ষা শিরোনামে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি বিস্তারিত অংশ ছিল। ভালো স্বাস্থ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হিসেবে পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনাচরণ এবং কাজ ও বিশ্রামের ভেতর ভারসাম্য আনয়নে আলোকপাত করে ধারাবাহিক কিছু নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রকাশিত হয়েছিল।৩৩ ১৮৬৭ সালে বামাবোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত শারীরিক স্বাস্থ্যবিধান শীর্ষক ধারাবাহিক প্রবন্ধসমূহে স্বাস্থ্যের যত্নবিষয়ক এমন কিছু নীতিমালা ছিল যা একটি সুরক্ষিত সত্তার ধারণাকেই পুনরায় শক্তিশালী করে।৩৪ যদিও অশালীন গল্পগুজবে মেতে না থেকে নারীদের জন্যে বিনোদনের ‘যথার্থ’ উপায় নির্দেশ করাই ছিল এই প্রবন্ধগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, আর এ থেকেই নারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার পিতৃতান্ত্রিক ব্যগ্রতা ফুটে উঠে।৩৫

 

১৮৭০ এর দশকে বাংলার বিস্তৃত সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট হিন্দুদের ইতিহাস, ধর্ম ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অত্যন্ত উত্তেজিত উত্থান দ্বারা আকারপ্রাপ্ত হয়েছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে এতে ছিল ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ ও ‘সাংস্কৃতিক গোঁড়ামি’। তবে অমিয় সেন আমাদেরকে এটিও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে হিন্দু ঐতিহ্যসমূহের পুনর্জাগরণের ভেতরই এই ‘সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ’-এর নির্যাস প্রোথিত ছিল না, বরং এটি ছিল ঐতিহ্যের বিশেষ কিছু বিষয়কে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে ‘অনানুপাতিক গুরুত্ব’ প্রদানের প্রবণতা।৩৬ এটি ছিল ১৮৬০ এর দশক থেকে ১৮৯০ এর দশকে ঔপনিবেশিক শাসকদের ক্রমাগত বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী নীতিমালার পরিণাম এবং এর ফলাফল ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের মুক্তিপরায়ণ ও প্রগতিশীল সক্ষমতাসমূহ থেকে উপনিবেশিত অভিজাতদের ক্রমবর্ধমান মোহমুক্তি।৩৭

 

পুনর্জাগরণের এই চেতনা চিকিৎসা বিষয়ক রচনাসহ স্বদেশীয় সাহিত্যগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এই সময়কালে জেন্ডার সম্পর্কের পুনর্গঠনে বিশেষ অনুরণন তৈরি করেছিল। ১৮৮০ এর দশকে বাঙালি ভদ্রলোকদের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত নিবিষ্টতা নতুন মাত্রা ধারণ করে। বাঙালিদের ধরে নেয়া ভঙ্গুরতার পেছনে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তার ভেতর অল্প বয়সে গর্ভধারণ এবং মা ও শিশুকে দুর্বল করে দেয় এমন রোগসমূহের মূল কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ ও অপরিণত বয়সে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি এই সময়ের প্রতিফলক বিতর্কগুলোতে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়। এ সময়ের কর্তৃত্বশীল পুনর্জাগরণবাদী চেতনাকে ধারণ করে ধাত্রীবৃত্তি সংক্রান্ত কতিপয় চিকিৎসা বিষয়ক রচনায় সামাজিক ও চিকিৎসাগত দিক থেকে বাল্যবিবাহের নেতিবাচকতাসমূহ বর্ণিত হয়। এর একটি ভালো উদাহরণ হলো ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হরনাথ রায়ের ধাত্রী-শিক্ষা সংগ্রহ।৩৮ একটি প্রকাশ্য হিন্দু পুনর্জাগরণবাদী সুরে রায় বাল্যবিবাহের মতো ‘অধঃপতিত’, ‘অযৌক্তিক’ প্রতিষ্ঠানের শুরু খুঁজে পেয়েছেন ‘অত্যাচারী’ মুসলিম শাসনে, এর মাধ্যমে বৈদিক যুগে এর সূচনাকে প্রত্যাখ্যান করে ঐ সময়ে এর পূর্ণ অনুপস্থিতির দাবি করা হয়। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে মুসলিম শাসক গোষ্ঠীর লা¤পট্যপূর্ণ স্বভাব থেকে হিন্দু কন্যাদের চরিত্র রক্ষা করতেই হিন্দুরা বাধ্য হয় অল্প বয়সে তাদের কন্যাদের বিয়ে দিতে। সামাজিক ও চিকিৎসাগত উভয় দিক থেকেই রায় বাল্যবিবাহের নিন্দা করেছেন। সামাজিকভাবে তিনি এর নিন্দা করেছেন একে শিশু বৈধব্য এবং শিশু বধূর সাথে বরের আবেগীয় সম্পর্কের অভাবের মতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করে। চিকিৎসাগত দিক থেকে তিনি অল্প বয়সে মাতৃত্বের ফলে জাতির ভবিষ্যত সদস্যদের দুর্বলতার দিকে আলোকপাত করেছেন।৩৯ তিনি বলেন অল্প বয়সে ঋতুস্রাব শুরুর ফলে হিন্দু নারীদের অল্প বয়সে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া ও গর্ভধারণের ফলেই হিন্দু জাতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যদি ‘বিবর্তন’-এর সূত্র বিশ্বাসযোগ্য হতো, তাহলে অল্প সময়ের ভেতর হিন্দু জাতি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।৪০

 

হরনাথ রায়ের রচনাগুলো পুনর্জাগরণবাদী মনোভাবের সাথে সম্পর্কিত ছিল যেখানে মুসলিমদের ভয়ে মেনে নেয়া চর্চা হিসেবে বাল্যবিবাহের সমালোচনা করা হচ্ছিলো। বাল্যবিবাহ বিতর্ক নিয়ে আরো বেশি প্ররোচনামূলক একটি ধারা যা উনিশ শতকের শেষ দশকে প্রধান হয়ে ঊঠে তা হলো হিন্দু ঐতিহ্যের অভেদ্য অংশ হিসেবে এই প্রথার গুণকীর্তন, আর এর ফল ছিল ধর্মীয় কারণে এর অকাট্যতা। তানিকা সরকার দেখিয়েছেন যে পুনর্জাগরণের যুগে আধিপত্য করা রক্ষণশীলতা কিভাবে ভদ্রলোকদের মনোযোগ ‘পুরুষত্বের পরীক্ষা’-র এলাকা হিসেবে জনপরিসর থেকে সরিয়ে “পরিচালনা করার একটি সংস্থা, নেতৃত্ব দেয়ার একটি সেনাবাহিনী, শাসন করার একটি রাষ্ট্র” হিসেবে পরিবারের উপর স্থাপনের কারণ হয়েছিল।৪১ এরই ফলাফল হিসেবে, দাম্পত্য জীবনের অর্থ হিসেবে স্বামীদের প্রতি হিন্দু স্ত্রীদের ‘ভালোবাসা ও সম্মতিপূর্ণ সমর্পণ’-এর ধারণা হয়ে উঠেছিল পরিবারের পরিচালনা ও ‘স্থানীয়’ পুরুষত্বের বিবৃতির মূল চাবিকাঠি। আদতে এটিই ছিল বাইরের দুনিয়ার অধীনতার ক্ষতিকে পুষিয়ে দেয়ার একমাত্র টেকসই পথ। সরকারের এই অবস্থানকে শক্তিশালী করে মৃণালিনী সিনহা দেখিয়েছেন বাঙালি নারীদের শরীর কিভাবে পুনর্জাগরণবাদী জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা ‘স্থানীয় পুরুষত্ব’ প্রদর্শনের এক এলাকায় পরিণত হয়েছিল এবং ঔপনিবেশিক পুরুষত্বের রাজনীতিতে তাদের সহায়তার কারণেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতি তার মুক্তিপরায়ণ সম্ভাবনাসমূহ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। সম্মতির বয়স সংক্রান্ত বিতর্কের উত্তেজিত সময়কাল জুড়ে নারীদের ম্যাগাজিনগুলোর ‘কৌতুহলপূর্ণ’ নিশ্চুপতার জন্যেও এটিই দায়ী।৪২

উনিশ শতকের বাংলায় ভদ্রলোকদের পরিচিতি পুনর্গঠনের জটিল প্রক্রিয়ায় নারীদের ‘অধঃপতিত’ অবস্থার প্রশ্নকে এর সংস্কারবাদী/আধুনিকায়িত আত্মোন্নয়নের আলোচ্যসূচির মূল বিষয়ে পরিণত করেছিল।

১৮৯১ সালের জানুয়ারিতে আইনসভায় স্যার অ্যান্ড্রু স্কোবল দ্বারা উত্থিত দ্য এইজ অব কনসেন্ট বিল-এ ভারতীয় নারীদের যৌন সম্পর্কে সম্মতিদানের ন্যূনতম বয়স দশ থেকে বাড়িয়ে বারো করা হয়েছিল। প্রথমদিকে নতুন এই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সরকার দ্বিধান্বিত থাকলেও সংস্কারবাদীদের চাপে শেষ পর্যন্ত একে মেনে নেয়া হয়। ভারতের অন্যান্য অংশের চেয়ে বাংলায় এই বিলের ফলে অভূতপূর্ব বিশাল আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।৪৩ বিলের প্রধান বিরোধিতাকারী হিসেবে পুনর্জাগরণবাদীরা দাবি করেছিল যে যৌন সম্পর্কের বয়স দশ থেকে বারো বছরে বৃদ্ধির মাধ্যমে হিন্দুদের প্রধান দশ প্রথার একটি, গর্ভধান প্রথাকে ভাঙা হয়েছে।৪৪ এটি ছিল হিন্দুদের শাস্ত্রীয় বিধান এবং অলঙ্ঘনীয় ধর্মীয় চর্চায় হস্তক্ষেপ। রক্ষণশীলদের তুমুল প্রতিক্রিয়ার মুখে বিলের পক্ষে থাকা চিকিৎসক ও উদার সংস্কারবাদীদের কণ্ঠ দুর্বল হতে হতে থেমে যায়। পরে দেখা গিয়েছিল যে বিলের বিরোধিতাকারীদের কণ্ঠও আসলে ছিল ক্ষণস্থায়ী। অমিয় সেন যথার্থই বলেছেন যে, যেহেতু মানুষরা দ্রুতই ‘আত্ম-অভিব্যক্তির নতুন নতুন মাধ্যমে’ সরে যাচ্ছিলো, তাই “রাজনৈতিক শক্তি ও প্রস্তুতিকে ভালোভাবে পরীক্ষা করার ভিত্তি” হিসেবে সম্মতির বয়স সংক্রান্ত বিষয়টি মূলত ‘প্রতীকী’ ছিল।৪৫ ১৮৯০ এর দশকে ও আরও শক্তিশালীভাবে বিংশ শতকের শুরুতে বাল্যবিবাহ চিকিৎসায় জড়িত মানুষ ও উদার সামাজিক সংস্কারকদের মনোযোগ আকর্ষণ জারি রেখেছিল।৪৬ শতাব্দীর পরিবর্তনের সময় ভদ্রমহিলাদের থেকে এটি জটিল প্রতিক্রিয়া বের করে এনেছিল এবং ১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকের ভারতীয় নারীবাদী ডিসকোর্সে ভালোভাবে উঠে এসেছিল। উনিশ শতকের বাংলায় সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গড়ে উঠা নারীশিক্ষা আন্দোলনের ভেতরই নারীদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক বিষয়াদি সম্পর্কে বাঙালি নারীদের সচেতনতার শেকড় প্রোথিত ছিল।

 

ভদ্রমহিলাদের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে শিক্ষিতকরণ

উনিশ শতকের বাংলায় ভদ্রলোকদের পরিচিতি পুনর্গঠনের জটিল প্রক্রিয়ায় নারীদের ‘অধঃপতিত’ অবস্থার প্রশ্নকে এর সংস্কারবাদী/আধুনিকায়িত আত্মোন্নয়নের আলোচ্যসূচির মূল বিষয়ে পরিণত করেছিল। হিন্দু নারীদের অধঃপতিত অবস্থাকে হিন্দু সভ্যতার নিকৃষ্টতার নির্ভুলতা হিসেবে বর্ণিত ঔপনিবেশিক অভিযোগ পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের আত্মসত্তাকে তাড়িত করতো। এর ফলে নারীদের নিম্নাবস্থানের জন্যে দায়ী বিশেষ কিছু অবক্ষয়ী সামাজিক প্রথা রহিতকরণে সামাজিক সংস্কারক ও ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের ভেতর সহায়তামূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এর ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড ও এর ফল হিসেবে ১৮২৯ সালে এই প্রথা বাতিলের আইন প্রণয়ন এবং ১৮৫৬ সালের বিধবা পুনর্বিবাহ আইন। তবে এসবের চেয়ে ফলপ্রসূ সংস্কারবাদী উদ্যোগ ছিল নারী শিক্ষার সূচনা যা নারীদের আধুনিকায়নের টেকসই ভিত্তিতে পরিণত হয়েছিল, যদিও এটি হয়েছিল হিন্দু পিতৃতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার গাঠনিক কাঠামোর ভেতরে অবস্থান করেই। পার্থ চ্যাটার্জী বলেন এসব ধারা নারীদেরকে ঘরের ‘আভ্যন্তরীণ’ ‘আত্মিক’ রাজত্বের সাথে নারীদেরকে প্রতীকীভাবে যুক্ত করে যার পেছনে হিন্দু জাতির সত্যিকার নির্যাস অধিষ্ঠিত। তাই নারীদেরকে শিক্ষিত ও উত্তোলিত করা হলেও তাদেরকে পরিবার ও ঘরের ঐতিহ্যবাহী বন্ধনের সাথে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। জুডিথ ওয়ালশ বলেছেন ইংরেজি শিক্ষা ও আধুনিক কর্মপরিবেশের সাথে ভদ্রলোকদের পরিচিতির ফলে ঘর ও বাইরের বৃহৎ সঙ্গতি রক্ষার জন্যে নারীদের ভূমিকার পুনর্গঠন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল। নারীদেরকে একজন রোমান্টিক সঙ্গী ও ‘পরিবারকেন্দ্রিক’ বধূ এবং সাথে সাথে একজন দক্ষ গৃহিণী হিসেবে ভেবে নেয়ার বিষয়টি বাস্তবে ছিল এক বিদেশি ভাবনা। তথাপি এই ভাবনা তার বৈদেশিকতা থেকে বেরিয়ে আসে এবং নিজেকে ঘরের এক নতুন আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী পৃথিবীর সাথে যুক্ত করে।৪৭

 

নারীদেরকে তাদের অধঃপতিত অবস্থা থেকে তুলে আনার ক্ষেত্রে নারীশিক্ষার বিষয়টি যখন কার্যকর পথ হিসেবে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বীকৃত তখন এই শিক্ষার প্রকৃতি ও আধেয় উত্তপ্ত বিবাদের এলাকায় পরিণত হয়। ১৮৪০ এর দশক থেকে চলে আসা নারীশিক্ষার পাঠ্যক্রমের আধেয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাগুলোতে নারীদের ‘মেয়েলি’ সংবেদনশীলতাসমূহের বৃদ্ধি ও পরিশোধন নিশ্চিত করতে ভদ্রলোক ও ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের গভীর সচেতনতা প্রতিফলিত হয়। ১৮৬৩ সালে বেথুন সোসাইটি-তে দেয়া এক বক্তৃতায় হাথওয়ার৪৮ মহারাজা কুমার হরেন্দ্র কৃষ্ণ নারীশিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্পষ্টভাবে এই কথাগুলো বলেন :

হিন্দু নারীদের জন্যে আমাদের এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা উদ্ভাবন প্রয়োজন যা তাদেরকে একজন সম্মতিদায়ী সঙ্গী, একজন ভালো মা, একজন বুদ্ধিমতী ও ভালোবাসাময় স্ত্রী এবং একজন দারুণ গৃহিণীতে পরিণত করবে। আমরা চাই আমরা যে সভ্যতার অংশ তার দ্বারা স্বীকৃত নৈতিক গুণাবলিসমূহে তারা ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে; এবং সেইসব উচ্চমার্গীয় মানসিক শিক্ষা ধারণ করবে যা তার স্বামীর আলোকিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহূর্তগুলোতে একজন স্ত্রীকে প্রবোধদায়িনী হিসেবে সামনে আনবে; একজন মাকে তার সন্তানের দায়িত্ব নেয়া কিংবা অন্ততপক্ষে প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়ার মতো করে গড়ে তুলবে; এবং ঘরের একজন নারী সেইসব দারুণ সামাজিক স্বস্তি সরবরাহ করবে যেসব দ্বারা অলৌকিক শব্দ — ঘর-এর চিত্র অঙ্কিত।৪৯

নারীদেরকে সূচিকর্ম, এমব্রয়ডারির মতো বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে এসব লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করা হয়েছিল, এর সাথে এতে থাকতো ব্যাকরণ, ভূগোল ও গণিতশাস্ত্রে ভাসা-ভাসা জ্ঞান।৫০ পাঠ্যক্রমে শুদ্ধ বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্রকে এক পাশে সরিয়ে রাখা হলেও, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীদের তুলনামূলক গুরুত্বপ্রাপ্তির ফলে গার্হস্থ্যের যৌক্তিক ব্যবস্থাপনা ও মাতৃত্বের মতো ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসস্পর্কিত বিজ্ঞানে ন্যূনতম জ্ঞানার্জনকে জরুরি মনে করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় নতুন নারী বা ভদ্রমহিলাদের ভূমিকাগুলো আরো স্পষ্টভাবে সামনে চলে আসে।

 

বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীদের শিক্ষিতকরণের জন্য ব্রাহ্ম সমাজ কর্তৃক ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বামাবোধিনী পত্রিকা ভদ্রমহিলাদের ধারণা গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এক্ষেত্রে “পশ্চিমা আধুনিকায়ন যা নারীদের বহির্জগত সম্পর্কে জানাতে চায় এবং স্থানীয় ঐতিহ্য যা তাদেরকে বহির্জগতের অংশ হতে দিতে চায় না, এই উভয়ের সাথে কীভাবে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া যায়” তাই ছিল নেতাদের মূল চ্যালেঞ্জ।৫১ অন্তঃপুর শিক্ষা বা গৃহশিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত করার মাধ্যমে বামাবোধিনী এই উভয়সঙ্কটে কাজ করে। ‘অন্তঃপুর শিক্ষার মূল সংগঠক’ হিসেবে ১৮৬০ এর দশকে বামাবোধিনী পাঠ্যক্রম প্রকাশ করা শুরু করে। বাংলা সাহিত্য, ব্যাকরণ এবং ভূগোল, পাটিগণিত, ও বিজ্ঞানে প্রাথমিক জ্ঞানদানের পাশাপাশি এতে স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়টিও নিয়মিত ছিল।৫২ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এটি রমনীর কর্তব্য, ধাত্রীবিদ্যা ও শিশু পালন শিরোনামের অধীনে গার্হস্থ্য, গর্ভধারণ ও শিশু লালন-পালন বিষয়ে শিক্ষা ও নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করতো।

 

গার্হস্থ্যের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ঘরের পুনর্গঠন ছিল কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি ও গার্হস্থ্যের স্পষ্ট ভিক্টোরিয়ান ভাবনাসমূহে জোর দেয়ার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নতুন ডিসকোর্স গৃহ-ব্যবস্থাপনার পুরাতন ঐতিহ্যগুলোকে বাতিল করছিল যেখানে ‘শৃঙ্খলা’ ও ‘স্বাস্থ্যবিধি’ না থাকার অভিযোগ ছিল। এর একটি উদাহরণ দেখা যায় রমণীর কর্তব্য শীর্ষক ধারাবাহিক প্রবন্ধসমূহে যেখানে লেখক গৃহকে তিনটি আলাদা অংশে ভাগ করার ক্ষেত্রে ভদ্রমহিলাদের ভূমিকা সম্পর্কে লিখেছেন; এই তিনটি অংশ হলো বাস ভবন (ড্রয়িং রুম), শয্যা ভবন (বেডরুম) ও ভাণ্ডার ভবন (রান্নাঘর)। স্পষ্টতা ও শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য খাবার ও অন্যান্য ভোজ্য পণ্যসমূহকে চিহ্নিত কৌটায় রাখতে; বেডরুমকে বায়ুময়, পরিষ্কার, সঠিকভাবে ধুলিমুক্ত ও যথাযথভাবে সজ্জিত রাখতে; এবং বালিশ, চাদর ও বেড শিটসমূহকে রোদে রাখতে ও মশা থেকে মুক্ত রাখতে ভদ্রমহিলাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।৫৩

 

একই কারণে সংস্কারকদের দ্বারা স্বাস্থ্য বিজ্ঞানও নারীশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল যেখানে আরোগ্যকরণ ও পরিচর্যাকে ‘প্রাকৃতিক’ মেয়েলি বিষয় হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছিল।৫৪ আগে যেমন বলা হয়েছে, মধ্য উনিশ শতকের বাংলায় নারীশিক্ষা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের ক্ষেত্রে বালিকাদেরকে গণিতশাস্ত্র ও বিজ্ঞান পাঠদানে এক ধরনের সাধারণ অসমর্থন ছিল।৫৫ তারপরও একজন গৃহিণী বা গৃহকর্ত্রী হিসেবে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও ছোট ছোট রোগ প্রতিরোধী জ্ঞানকে ভদ্রমহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় গণ্য করা হতো। সমসাময়িক নারীদের স্বাস্থ্যবিষয়ে অজ্ঞতা নির্দেশ করে বামাবীধিনী-তে একজন লেখকের মাতম এর একটি আদর্শ উদাহরণ। দুঃখপূর্ণভাবে তিনি বলেন :

কিছুদিন আগেও আমাদের দেশের নারীসমাজ বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা স¤পর্কে জানতো। এমনকি এখনও গ্রাম এলাকার নারী কিংবা শহরের বয়স্ক নারীরা ছেলে-মেয়েদের ছোট ছোট রোগের চিকিৎসা করে থাকেন; এটি অন্যান্য গার্হস্থ্য কাজের মতোই একটি শিক্ষামূলক কাজ। ঘরের কোন সদস্য অসুস্থ বোধ করলে প্রথমেই চিকিৎসককে না ডেকে গৃহকর্ত্রী আগে তার যাচাই-বাছাইকৃত ঔষধ প্রয়োগ করে অসুস্থতা নিরসনের চেষ্টা করতেন এবং বহুক্ষেত্রে এতে সফলও হতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে বালিকারা বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্জন করলেও এই বিষয়ে কোন কিছু শিখছে না এবং কেউ এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনাও করছে না।৫৬

১৮৭০ ও ১৮৮০ এর দশকের এমন অনেক রচনাই ঐ সময়ের কর্তৃত্বশীল পুনর্জাগরণবাদী ধারার প্রতিফলন হিসেবে ‘ঐতিহ্যবাহী’/স্থানীয় চিকিৎসা জ্ঞানের সংগ্রহশালারূপে ভদ্রমহিলাদের চিত্রায়িত করার আশেপাশে সমবেত হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী ঔষধসমূহের গুরুত্বের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্ত ও সমাধানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত পশ্চিমা অ্যালোপ্যাথি ঔষধের অযোগ্যতাকে অনুমান করে নেয়া হয়েছিল। এর একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল হোমিওপ্যাথি, যা জার্মান উদ্ভূত হলেও খুব সহজেই জনপ্রিয় বাঙালি মননে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিল। বিদ্বজ্জনেরা খুঁজে পেয়েছেন যে, অব্যয়বহুল আত্ম-আরোগ্যের প্রতিজ্ঞার উপরই স্বাস্থ্যবিষয়ক অসংখ্য ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির বিস্তার বৃদ্ধি নির্ভর করছিল। ‘রাষ্ট্রীয় ঔষধ’ বা আরও ঘৃণাপূর্ণপভাবে ‘ইংরেজ ঔষধ’ হিসেবে চিহ্নিত অ্যালোপ্যাথির বিপরীতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির যে ঝোঁক তা ঐ সময়ের নিয়ন্ত্রক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণবাদী আবেগের সাথে খাপ খেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাইরে অবস্থান করার পরও অভিজাত ভদ্রলোকদের চেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথি জনপ্রিয় হতে থাকে এবং এই প্রক্রিয়াতেই স্থানীয় বিষয়ে পরিণত হয়।৫৭ এক্ষেত্রে ১৮৭১ সালে বামাবোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত গার্হস্থ্য চিকিৎসা প্রণালী শীর্ষক প্রবন্ধের লেখক বলেন :

যেসব নারীরা কিছুটা উন্নত পদ্ধতিতে শিক্ষার্জন করছে তারা একজন উপযুক্ত ও শিক্ষিত ব্যক্তির পর্যবেক্ষণে থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বইগুলোর অনুবাদ পড়তে পারে। আমি কিছুটা সাহসের সাথে বলতে পারি যে হোমিওপ্যাথি ঔষধ বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান তাদের জন্যে উপকারি প্রমাণিত হবে।৫৮

 

টীকা ও সূত্র

33 ‘Svasthyaraksha: Griha Parishkar (Preserving Health: Cleaning the House)’, Bamabodhini Patrika, Vol.1, No.1, 1864, 11–12. এই প্রবন্ধ ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখার উপায়সমূহ নিয়ে পরামর্শ দেয়। এই সিরিজের দ্বিতীয় প্রবন্ধ কিভাবে জামা-কাপড় পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। দেখুন, ‘Svasthyaraksh: Bastra Parishkar’ (Preserving Health: Cleaning the Clothes), Bamabodhini Patrika, Vol.1, No.5, December 1864, 79–80.তৃতীয় প্রবন্ধ শরীর পরিচ্ছন্ন রাখার উপায়সমূহ নিয়ে পরামর্শ দেয়। দেখুন, ‘Svasthyaraksha: Deha Parishkar’, Bamabodhini Patrika, Vol.1, No.7, 1865, 77–80.

 

34 ‘Sharirik Svasthyabidhan’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.52, Nov.1867, 640–642. এটি ছিল ১৮৬৭ ও ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধসমূহের সিরিজের একটি অংশ মাত্র।

 

35 অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে শিশুজন্মের সময় সরাসরি যুক্ত না হয়েও নারীদের উপর নজরদারিতে পুরুষের আগ্রহ জর্ডানোভা উল্লেখ করেছেন। উনিশ শতকের বাংলাতেও একই বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। গার্হস্থ্যকর্মাদি পরিচালনা থেকে জন্মদান পর্যন্ত সকল বিষয়ে বাঙালি ভদ্রলোকদেরকে নারীদের পরামর্শ প্রদান করতে দেখা যায়। বিস্তারিত জানতে দেখুন, L.J. Jordanova, ‘Natural Facts: A Historical Perspective on Science and Sexuality’, in Carol P. MacCormack and Marilyn Strathern, eds. Nature, Culture and Gender, Cambridge: Cambridge University Press, 1980.

 

36 Amiya P. Sen, Hindu Revivalism in Bengal, 1872–1905: Some Essays in Interpretation, Delhi: Oxford University Press, 1993.

 

37 Tanika Sarkar, ‘Conjugality and Hindu Nationalism: Resisting Colonial Reason and the Death of a Child-Wife’, in Tanika Sarkar, ed. Hindu Wife, Hindu Nation, 196–197. ভাইসরয় লিটন কর্তৃক ১৮৭০ এর দশকে ইস্যুকৃত স্বদেশীয় গণমাধ্যম আইনগুলো এবং ১৮৮৩ সালে ভাইসরয় রিপন কর্তৃক প্রণীত ইলবার্ট বিল-এর বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের ব্যাপক বিরোধিতা বৈষম্যমূলক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে ভারতীয় বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ব্রিটিশ অপরাধীদের বিচারের সুযোগ রাখা হয়েছিল। ভারত ও ব্রিটেনে ব্রিটিশদের দ্বারা গঠিত প্রতিবাদে ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের বর্ণবাদী প্রকৃতি সামনে চলে আসে।

 

38 হরনাথ রায়ের বইটি ইন্ডিয়ান ডেইলি নিউজ, দ্য স্টেটসম্যান, ইন্ডিয়ান মিরর, দ্য হোপ, বঙ্গবাসী, সঞ্জিবনী এবং অমৃত বাজার পত্রিকা-র মতো সেই সময়ের সংবাদপত্রগুলো থেকে ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ লাভ করে। বইটি শুধুমাত্র চিকিৎসা বিষয়ক চর্চাকারীদের জন্যেই উপকারী বিবেচিত হয় নি বরং “দেশের ভেতরের সবচেয়ে প্রান্তিক অংশে” বাস করা সাধারণ মানুষের জন্যও এটি ছিল উপকারী। দেখুন, ‘Advertisement: Dhatree-Siksha by Babu Haronath Roy, LMS’, The Amrita Bazar Patrika, 24 November 1887.

 

39 Haranath Ray, Dhatri-Sikkha Samgraha (Midwife’s Vade-Mecum), Calcutta: Bengal Law Report Press, 1887, 349–359.

 

40 কিছুটা ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপটে মার্ক সিঙ্গেলটন দেখিয়েছেন যে, শতাব্দীর পরিবর্তনে কী রকম লক্ষ্যণীয়ভাবে ভারতীয় যোগী চর্চা উনিশ শতকের শেষ দিকের সামাজিক ডারউইনবাদ ও সুপ্রজনন-সংক্রান্ত কতিপয় বিষয়াদিকে “আধুনিক বিজ্ঞানকে আদি সত্য হিসেবে ঢেলে সাজানোর” চেষ্টায় গ্রহণ ও ‘স্থানীয়করণ’ করেছিল। Mark Singleton, ‘Yoga, Eugenics and Spiritual Darwinism in the Early Twentieth Century’, International Journal of Hindu Studies, Vol.11, No.2, 2007, 138.

 

41 Sarkar, ‘Conjugality and Hindu Nationalism’, 197.

 

42 Sinha, Colonial Masculinity, Chapter 4.

 

43 Charles Heimsath, ‘The Origin and Enactment of the Indian Age of Consent Bill, 1891’, The Journal of Asian Studies, Vol.21, No.4, 1962, 491–504.

 

44 Sen, Hindu Revivalism in Bengal, 379.

 

45 প্রাগুক্ত, ৩৯২

 

46 উদাহরণ হিসেবে দেখুন, ‘The Age of Consent Bill’, Dainik o Samacara Chandrika, 25 January 1891, R.N.P (Reports on Native Newspapers); Boyle Chunder Sen, ‘The Calcutta Medical Society: The Nubile Age of Females in India’, Indian Medical Gazette, Vol.25, 1890, 306–312.

 

47 Judith Walsh, ‘The Virtuous Wife’. মেরেডিথ বোর্থউইক ১৮৪৯ থেকে ১৯০৫ সালের ঔপনিবেশিক বাংলায় গার্হস্থ্যজীবন, দা¤পত্যজীবন ও মাতৃত্বের পুনর্গঠন বিশ্লেষণ করেছেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন, Meredith Borthwick, The Changing Role of Women in Bengal, 1849–1905, Princeton, NJ: Princeton University Press, 1984, Chapters 4, 5 and 6.

 

48 কুমার হরেন্দ্র কৃষ্ণ ছিলেন হাথওয়ার মহারাজ এবং সরকারের প্রতি তার আনুগত্যের জন্য ‘বাহাদুর’ খেতাবপ্রাপ্ত। ১৮৬৮ সালে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি-র সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

 

49 Kumar Harendra Krishna, A Lecture on Female Education in Bengal: Delivered at the Bethune Society, Calcutta: Bengalee Press, 1863.

 

50 Borthwick, The Changing Role of Women, Chapter 3; Malavika Karlekar ‘Kadambini and the Bhadralok: Early Debates Over Women’s Education in Bengal’, Economic and Political Weekly, Vol.21, No.19, 1986, 25–31.

 

51 Krishna Sen, ‘Lessons in Self-Fashioning: “Bamabodhini Patrika” and the Education of Women in Colonial Bengal’, Victorian Periodicals Review, Vol.37, No.2, 2004, 177.

 

52 স্বাস্থ্য, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে নারীদের শিক্ষা নিয়ে বামাবোধিনী পত্রিকা-য় প্রকাশিত কতিপয় প্রবন্ধ নিয়ে পরবর্তীতে একটি সংকলন বামাবোধিনী সভা-র পৃষ্ঠপোষকতায় নারীশিক্ষা নামক বই আকারে প্রকাশিত হয়। নারীশিক্ষার অগ্রগতিতে একটি অসাধারণ অবদান হিসেবে গণমাধ্যমে বইটির প্রশংসা করা হয়। দেখুন, Bharati Ray, Shekaler Nari Siksha: Bamabodhini Patrika (1270–1399), Calcutta: Women’s Studies Research Centre, 1998, 71–75.

 

53 ‘Ramanir Kartabya,’ Bamabodhini Patrika, February 1887, No.265, 302–306.

 

54 এটি এল. জে. জর্ডানোভার আগ্রহোদ্দীপক আলোচনার সাথে মিলে যায়, যেখানে তিনি বলেছেন কিভাবে অষ্টাদশ শতকের ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে নারীদেরকে ‘প্রকৃতি’ ও পুরুষদেরকে ‘সংস্কৃতি’-র সাথে চিহ্নিত করাকে একটি বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসার আবরণ দেয়া হয়েছিল এবং এর ফলে এটি অযৌক্তিক, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ও প্রাচীন নারীদের উপর আধুনিকতা, আলোকায়ন ও প্রগতির শক্তি হিসেবে পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের ন্যায্যতা প্রতিপাদন ও স্বাভাবিকীকরণে ব্যবহৃত হয়েছিল। Jordanova, ‘Natural Facts’.

 

55 Karlekar, ‘Kadambini and the Bhadralok’.

 

56 ‘Ramanir Kartabya (Duties of a Woman)’, Bamabodhini Patrika, Vol.3, No.262, December 1886, 230–231. . শতাব্দীর পরিবর্তনের সময় একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি অন্তঃপুর নামক আরেকটি প্রখ্যাত কিন্তু নারীদের দ্বারা পরিচালিত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে দেখুন, ‘Grihaswasthye Ramanir Drishti (Attention of Women towards Household Chores)’, Antahpur, Vol.VII, No.IX, January 1905, 210–213.

 

57 দেখুন, David Arnold and Sumit Sarkar, ‘In Search of Rational Remedies: Homeopathy in 19th-Century Bengal’, in Waltraud Ernst, ed. Plural Medicine: Tradition and Modernity, 1800–2000, London and New York: Routledge, 2000, 40–57. আরও দেখুন, Das, ‘Debating Scientific Medicine’.

 

58 ‘Garhasthya Cikitsa Pranali (Methods of Home Treatment)’, Bamabodhini Patrika, Vol.8, No.100, December 1871, 242.

(চলবে)

 

পড়ুন ।। কিস্তি : ১

ঔপনিবেশিক আধুনিকতা : বাংলায় ধাত্রীবৃত্তি (১৮৬০-১৯৪৭) ।। কিস্তি : ১

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here