শ্যারন ওল্ডসের কবিতা : প্রথম পর্ব

শ্যারন ওল্ডস একজন মার্কিন কবি যিনি ১৯৮০ সালে প্রথম স্যানফ্রান্সিসকো পুরষ্কারে ভূষিত হন। তিনিই প্রথম মার্কিন নারী কবি যিনি টি.এস.এলিয়ট পুরষ্কারেও পুরষ্কৃত হন তার কবিতার জন্য। এরপরে ২০১৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়ে সবার নজরে আসেন। তবে তার কবিতার বিষয়বস্তু আর তার সাবলীল উপস্থাপনা এসব পুরস্কার ছাড়াও নজরে নিয়ে আসার যোগ্যতা রাখে। ছোটবেলা থেকেই নানান ধরনের পারিবারিক অত্যাচারের স্বীকার হন মদ্যপ পিতার কারণে। তার কবিতায় তার ব্যক্তিগত জীবন যেভাবে উঠে আসে তা আমাদের জীবনকে সহজেই ছুঁয়ে যায়। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন কবিতায় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে নিয়ে আসার। পাঠক কীভাবে বিষয়টিকে নেবেন সেটা না ভেবেই। তার ফলেই আমরা তার কাছ থেকে এমন অসাধারণ কিছু কবিতা পাই, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি সৃজনশীল লেখা বিষয়ে শিক্ষকতার সাথে জড়িত পড়েন। বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের লুকোনো দিক, যৌনতা, নারীর প্রতি বৈষম্য প্রভৃতিই তার কবিতার মূল উপজীব্য। শ্যারনের একগুচ্ছ কবিতা অনুবাদ করেছেন সায়মা মণিকা। সেগুলো থেকে ছাপা হলো প্রথম পর্ব

 

আমি বলতে পারিনি

লাফ দিয়েছিলাম বাস থেকে

কখনো বলতে পারিনি।

সেই চলন্ত বাস থেকে

কোলে শিশুটিকে নিয়ে

কেননা জানতাম না আমি।

বিশ্বাস করে নিয়েছি আমি আমার গল্পটি,

পড়ে গিয়েছিলাম অথবা ছেড়ে দিয়েছিলো বাসটি

শূন্যে যখন আমার এক পা।

 

মনে রাখবোনা আমার চোয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া।

ফেলে আসি কিনা বাস স্টপ সেই উদ্বেগ।

শূন্যে পা ফেলার প্রস্তুতি

তাকিয়ে ছিলো একদৃষ্টে শিশুটি তার (মায়ের) দিকে

উদ্যত যখন আমি ঝাঁপ দিতে।

হাঁটু একটি রাস্তায়

ঘঁষে ঘঁসে তুলছি, ভাঁজ করছি ওটা (হাঁটু)

পিছলে পড়ে যাচ্ছি বাসস্টপের দিকে

লাফ দিয়ে উঠলো চালকটি

হেসে উঠলো আমার মেয়ে

“আবার করো”।

 

কখনো করিনি আর

সতর্ক হয়ে গেছি।

লক্ষ করলাম সেই সুন্দরী যুবতী মায়ের দিকে

লাফিয়ে ফেলেছিলো যে অল্প করে চলন্ত যান থেকে

থামানো রাস্তায়।

তার (মায়ের) জীবন তার নিজের হাতে

তার জীবনের জীবনও (সন্তানের) তার নিজের হাতে।

 

শয়তান বলে

আবদ্ধ আমি এক ছোট্ট কাঠের বাক্সে

বসানো রাখালের ছবি

ফলকের ঠিক মাঝ বরাবর।

সাজানো বাক্সটি দাড়িঁয়ে আছে

খোদাই করা পায়ের উপরে ।

সোনারি আর হৃদয়াকৃতির তালা

আছে এর গায়ে আঁঁকা

আর নেই কোনো চাবি।

চেষ্টা করছি লেখার সেই মুক্তির কথা।

কাঠের সুরভিত বন্ধ বাক্স থেকে

এলো শয়তান সেই আবদ্ধ বাক্সে আর বললো

আমি তোমাকে বের করে নিয়ে যাবো,

বলো যে আমার বাবা খারাপ

আর আমি বলি, আমার বাবা খারাপ।

হেসে শয়তান বলে, খুলছে এটা( দরজা)।

বলো, আমার মা দালাল

“আমার মা দালাল”।

খুলে গেলো আর ভেঙে গেলো কিছু যখনই আমি বললাম।

সোজা হয়ে উঠলো আমার মেরুদণ্ড সেই বাক্সে।

ব্যালেরিনা পিঠের গোলাপি পিনের মতো

রুবি পাথরের মতো কালো চোখে

বিশ্রাম নিচ্ছে কাঠের বাক্সের চকচকে অংশে

আমার পাশে।

বলে শয়তান আমার কানের কাছে এসে

যৌন সম্পর্ক করো, মৃত্যু কামনা করো ফালতু বাবার।

আওযাজ পাই যেন অতীতের বন্দিদশার।

তার (মায়ের) আলমারিতে শিশুর বাক্সে যেমন

স্থির দৃষ্টির ভয়ংকর পিপাসিত গোল গোল চোখ গোলাপের চারপাশে যেমন থাকে।

ঘৃণা নিয়ে নিজের দুঃখের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো।

ফালতু বাবার মৃত্যু চাই, তার সাথে যৌন সম্পর্ক করি।

খুলে গেলো কিছু একটা।

জিজ্ঞেস করলো শয়তান, অনেক ভালো বোধ করছো না?

ভেঙে গেলো যেন আলোটুকু

দামি আর সুদৃশ্য কোনো পিনের ওপর

খোদাই করা আছে দুই রঙের কাঠে।

অন্ধকার বন্ধ বাক্সে

বলি শয়তানকে

জানো তুমি, আমিও তাকে (বাবাকে) ভালোবাসি

ভালোবাসি তাদের তবু

বলতে চাইছি কী ঘটেছিলো আমাদের হারানো অতীতে

বললো সে (শয়তান) হেসে, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই

বলো এখন যন্ত্রণার কথা।

দেখি আমি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে

বাক্সের ঠিক মুখের কাছে।

বলে শয়তান, বলো আমার বাবার মোরগ

আর মায়ের যোনী।

আমি (শয়তান) তোমাকে বাইরে নিয়ে আসবো

প্রসারিত হয় কব্জার কোণ।

দেখি যতক্ষণ না আগের আমাকে আমি

সময়ের সীমা পেরিয়ে।

সংযুক্ত যখন তারা বিছানায় একে অপরের সাথে।

উচ্চারণ করলাম যখন যাদুমন্ত্র

মোরগ, যোনী

ত্রস্তে বললো শয়তান, বেরিয়ে এসো।

তবে ভারি হয়ে উঠলো বাতাস কালো ধোঁয়ার মতো

ঠিক দরজার মুখে।

বললো সে, এসো।

অনুভব করছি আমি তার নিঃশ্বাস কণ্ঠস্বরের ভেতরে

সেই শুরু থেকেই।

প্রস্থান পথ তো শয়তানের মুখে।

বললো সে (শয়তান), এসো আমার মুখে

তুমি সেখানেই (শয়তানের মুখে) আছো ইতোমধ্যে।

আর বন্ধ হতে থাকলো বিরাট এক কব্জা।

আরে না, আমিও তাদের ভালোবাসি

শক্ত করে রাখি আমার শরীর সেই কাঠের বাক্সে

টেনে বের করে শয়তান নিজেকে নিজে

চাবির গর্ত থেকে।

আর আটকা পড়ে থাকলাম আমি বাক্সে।

বন্ধ করে দিয়ে তালা

নিজের জিভের মোম দিয়ে,

বললো সে (শয়তান), এটা এখন তোমার কফিন।

ঠিক শুনতে পাইনি আমি।

কেননা তখন উষ্ণ করে নিচ্ছি আমার ঠান্ডা হাত

তাকিয়ে নৃত্যরতার রুবি চোখে।

আর আগুনে আবিষ্কার করে ফেললাম হঠাৎ করেই

ভালোবাসার জ্ঞান।

 

অনাগত

দেখতে পাই মাঝেমাঝেই আমি

আমাদের মাথার চারপাশে

গ্রীষ্মে রাস্তার আলোর চারপাশে মশার মতো

আমাদের অনাগত সন্তানদের এক ঝলক।

 

অপেক্ষা করছে তারা

মনে হয় মাঝে মাঝেই আমার

ঝিমাচ্ছে কোনো অপেক্ষাগারে চাকররা যেন

খেয়াল করছেনা ঘণ্টাধ্বনির দিকে কোনো

 

পড়ে থাকা প্রেম পত্রের মতো

পরিত্যাক্ত পোস্ট অফিসে

দেখি কখনো তাদের

 

আজ রাতে অথবা মাঝে মাঝে

দিব্যদৃষ্টি দিয়ে অন্ধকারে দেখার মতো

মনে হয় তাদেরই একজন

সমুদ্রের ধারে পাহাড়ের কিনারায়

দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে দু’হাত মেলে

মরিয়া হয়ে আমার দিকে।

 

শেষ

গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা

খুনি হয়ে উঠলাম যেন একসাথে

যখন এলো সেই মুহূর্ত সবকিছু তো আগের মতোই

বেঁচে থেকেও সেই যুবক-যুবতী যেমন মৃত ছিলো।

যখন বিছানায় কথা হয় এ বিষয়ে

হতবিহবল ছিলো না তো এই টুকরোটি

জানালায় গেলাম আমরা

তাকাই টুকরো হয়ে যাওয়া গাড়ির অংশের দিকে

পুড়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া কাঁচের গুঁড়ো

এটা করেছি যেন আমরা।

বের করলো পুলিশ দেহগুলোকে

রক্তাক্ত ছিলো যেন নবজাতকের মতো

ছোট আর ধোঁয়া বেরুনো দরজার ফাঁক দিয়ে

শুইয়ে দিলো পাহাড়ের গায়ে

ঢেকে দিলো ভেজা কম্বল দিয়ে।

পড়তে লাগলো রক্ত আমার পায়ের ওপর দিয়ে গড়িয়ে চটিতে

দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি, যেখানে ছিলাম যতক্ষণ না

সরিয়ে ফেললো দেহ গুলো এ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে

একের পর এক।

আবৃত করা ব্যান্ডেজ দিয়ে মাথা আর চোখের ক্ষতস্থানে

নতজানু হয়ে আমাকে বসতে হয়েছিলো পরদিন সকালে

ওই মেঝেতে এক ঘণ্টা যাবত

পরিস্কার করতে আমার রক্ত

ঘষেছি ভেজা কাপড় দিয়ে

সেই চকচকে স্বচ্ছ দাগগুলো

ভোজ উৎসব শেষে যেমন কড়াই

ভিজিয়ে রাখতে হয় দীর্ঘ সময়।

3 মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো উদ্যোগ। সম্ভবত অসাবধানতাবশত ছোট্ট একটা সংশোধনী প্রয়োজন। ” ছোটবেলা থেকেই নানান ধরনের পারিবারিক অত্যাচারের স্বীকার হন মদ্যপ পিতার কারণে।” স্বীকার না শিকার?

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here