ইসরাইল নামক ‘রাষ্ট্র’-কে কোন নরম নামে ডাকবার উপায় নাই, এটা একটা সেটলার কলোনিয়াল স্টেইট । Ilan Pappé ইসরাইলকে “The Settler Colonial state in the Twenty-First century” বলেন। ইসরাইলের রিভিশনিস্ট বা নিউ-হিস্টরিয়ান ধারার প্রধান তিনজন — Ilan Pappe, Benny Morris, Avi Shlaim — ছাড়াও নুর মাসালহা, রাশিদ খালিদিসহ সব ইতিহাসবিদই ইসরাইলকে সেটেলার কলোনিয়াল স্টেইট নামেই ডাকেন। নোম চমস্কি বলেন, Settler colonialism is the most extreme and sadistic form of imperialism। বিপুল পরিমাণ প্যালেস্টাইনিদের উচ্ছেদ ও উৎখাতের মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্রকে গঠন করা হয়েছে।
১৯৪৮ সালে সাড়ে সাত লক্ষ প্যালেস্টাইনিকে নিজ দেশ থেকে উৎপাটন করা হয়, যাকে আল-নাকবা বলে ডাকা হয় । কিন্তু ইস্রাইলের নিও-হিস্টোরিয়ান ইলান পাপে এই নাকবা শব্দটির ভেতরে লক্ষ করেন কিছুটা কোমল ভাব; তিনি এই উৎপাটনকে বলেন, Ethnic cleansing এবং এটি সম্পূর্ণ পূর্ব-পরিকল্পিত। তবুও ‘নাকবা’ শব্দেরর ব্যবহারকে তিনি অস্বীকার করেন না করলেও এর নৃশংসতাকে মনে রাখতে বলেন।
আরেক নিউ হিস্টোরিয়ান বেনি মরিস (Benny Morris) অবশ্য বলতে চান ফিলিস্তিনিদের এই চলে যাওয়া ইজ্রাইলের রাষ্ট্রীয় কোন পরিকল্পনার ব্যাপার ছিলনা, যুদ্ধের ফলে এই প্যালেস্টাইনিরা চলে গেছে : not by design but by war. কিন্তু ১২৬ জন ভিক্টিমের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে রোজমেরি এসবার তার Under the Cover of War: The Zionist Expulsion of the Palestinians গ্রন্থে এবং আর আজস্র গবেষক এটাকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদই বলেন। পশ্চিমে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদকে ক্যাটাস্ট্রফি বলতে চাওয়াকে ইলান পাপে দূষণীয় বলতে চান, কেননা এতে বলপূর্বক উচ্ছেদের ধারণাটা উহ্য হয়ে যায়, কারণের মধ্যে প্রকৃতির স্বাভাবিকতা আরোপ হয়ে যায়। সুনামি বা ভূমিকম্প বা নদি ভাঙনে বসত ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটাকে তখন বলা যেত ক্যাটাস্ট্রফি । কিন্তু এটা তো ক্লিয়ারকাট এথনিক ক্লিঞ্জিং এবং ক্ষেত্রবিশেষে জেনোসাইড।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদকে রাশিদ খালিদিও এথনিক ক্লিঞ্জিং বলেই অভিহিত করতে চান । তার মতে এটি “ethnic cleansing with repeated massacre”। নুর মাসালহা তাঁর সুবিখ্যাত বই The Palestine Nakba: Decolonising History, Narrating the subaltern, Reclaiming Memory-তে বলেন, নাকবা এখনো শেষ হয়নি, এটা চলমান এখনো, প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিরা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে ইসরাইলি নৃশংস আগ্রাসনে। নাকবা ফিলিস্তিনিদের আইডেনটিটি ফরমেশনের অংশ, ইসরাইলি এই ক্রূরতাকে আড়াল করে অনেক সময় প্যালেস্টাইনিদের স্টেইটহুডের দাবীকে খাটো করা হয়। নুর মাসালহার মতে, নাকবা কোনো ট্র্যাজেডি না কারণ ট্র্যাজেডি ঘটে থাকে কোনো ভুক্তভুগীর ত্রুটি বা ভুলের ফলাফল হিসেবে। ইসরাইলি রাষ্ট্র গঠনের এই পুরো প্রক্রিয়ার ভেতরে প্যালেস্টাইনিদের সামান্যতম কোনো দোষ, ত্রুটি বা ভুল ছিলনা। তাই এই নাকবা স্পষ্টতই একটা ক্রাইম। এটা প্যালেস্টাইনিদের কোনো অপরাধ বা ভুলের ফল নয়, এটা সুস্পষ্ট রূপে জায়োনবাদী মতাদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসরাইলসহ পশ্চিমা পরাশক্তিসমূহের সম্মিলিত অপরাধ। ইউরোপ ইহুদিদের প্রতি যে আচরণ করেছিল তার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ, তারা সেইসব ঘটনাকে সামনে আনতে দেয়নি যা তাদেরকে চিহ্নিত করে খুনি, দখলদার বা ঔপনিবেশক হিশেবে ।
সেটলার কলোনিয়ালিজম কীভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে প্যাট্রিক উলফের একটা আর্গুমেন্ট আছে, যাকে বলে লজিক অব এলিমিনেশান। যেকোন সেটলার কলোনিয়ালিজম নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে এই logic of elimination ব্যবহার করে। জায়োনিজমের মতাদর্শিক পিতা থিয়োডোর হার্টজেল তার OlD-New Land বইয়ে সেই ১৯০২ সালে (আমেরিকাতে অনুদিত ১৯৪১ সালে) বলেছেন, ‘If I wish to substitute a new building for an old one , I must demolish before I construct’। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এই নির্মূলকরণের যুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইনিদেরকে তাঁদের ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ ক’রে এবং তাদের গ্রামগুলিকে বোমা ও বুলডোজার দিয়ে ধবংস ক’রে ।
আবার Patrick Wolfe বলেন, যেকোনো সেটলার কলোনিয়ালিজম “destroys to replace”। গ্রাম বা বসতি উচ্ছেদের পর বনায়ন কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। বনায়ন কর্মসূচির নাম “ Made the desert bloom” এবং এই “চমৎকার” উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সে ইউরোপ-আমেরিকার কাছে তাদের সেটেলমেন্ট বা অবস্থিতির “ন্যায্যতা ও সৌন্দর্য” তুলে ধরে । সাথে সাথে এর ফলে ইজরাইল আরেকটা কাজ করে, যাকে ফ্রয়েডের ভাষায় বলে “ডিনায়াল”। আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবে সিগ্মুন্ড ফ্রয়েড কথিত ডিনায়ালের সবগুলো প্রকারই এই সেটলার স্টেইট ব্যবহার করে।
জায়োনিস্টরা দশ ধরনের যুদ্ধ চালাচ্ছে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে : ১। ঐতিহাসিক ২। ভৌগোলিক ৩। সামরিক ৪।প্রত্নতাত্ত্বিক ৫।ধর্মীয় ৬। আইনি ৭। রাজনৈতিক ৮। অর্থনৈতিক ৯। বেইজ্জতকরণ (Defamation) ১০। প্রতারণা ক্যাম্পেইন ( Deception)। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন উপনিবেশিক শক্তি এমন সর্বাত্মক যুদ্ধ চালায়নি কোন ভূমির উপর।
Denial of fact-এর মাধ্যমে সে যে আরবের বুকে দখলদার শক্তি, এটাকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে; আবার, নাকবা-কে স্বীকার করলেও ঘটনা হিসেবে নাকবার যে বিশালত্ব ও গভীরতা, তা-কে ইজরাইল অস্বীকার ক’রে এই মিথ্যার প্রচার ঘটায় যে, তারা স্বেচ্ছায় গেছে, তাই প্যালেস্টাইনি কোনো রিফিউজির অস্তিত্ব নাই। একে Minimisation বলে। দলিল, প্রমাণ, সাক্ষ্যকে অস্বীকার (Denial) করা জায়োনিজমের অন্যতম চিহ্ন । সাংবাদিক ও কলামিস্ট Ari Shavit তার অত্যন্ত বিখ্যাত বই My Promised Land:The Triumph and Tragedy of Israel-এ একেবারে বদলে যাওয়া লিড্ডা নামক এক গ্রাম ধ্বংসের গল্প বলেছেন। পশ্চিম জেরুজালেমের এক সময়ের ডেপুটি মেয়র মেরন বেনভেনিসটি তার Sacred Landscape :The Buried History of the Holy Land Since 1948 বইয়ে নিজহাতে আল-বাসসা অঞ্চলে অলিভ ট্রিজ উৎপাটন করে কলাবাগান করবার কথা স্মরণ করেছেন।
৬ বছরের বেশি কাল ধরে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা ক’রে ওয়ালিদ খালিদি ও তার ত্রিশ সদস্য বিশিষ্ট টিম ১৯৪৮ সালে ধবংস হওয়া ৪০০ গ্রাম ও সেগুলোর অধিবাসীদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও সন্নিবেশ করেছেন ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত তাদের বই All That Remains:The Palestinian Villages Occupied and Depopulated by Israel in 1948-তে । কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাদিয়া আবু এল হাজ্ তাঁর “ট্রাবল উইথ আর্কাইভ” বকৃতায় বলেন, হ-লো-কস্টের যারা ভিক্টিম তাঁদের অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মূল্য দেওয়া হয়, কিন্তু নাকবার শিকার প্যালেস্টাইনি রিফিউজিদের সাক্ষ্যের কোন epistemological status স্বীকার করা হয়না। মিথাচার ও অস্বীকৃতি এবং নির্মূল ও দখল — এগুলো ইসরাইলি রাষ্ট্রের ব্যবহৃত প্রাত্যহিক টুল ।
জ্ঞান ও ক্ষমতার যে সম্পর্কের কথা এডওয়ার্ড সাইদ বলেছিলেন, সেই কাঠামো দিয়ে ইহুদিদের প্যালেস্টাইনি ভুমির উপর যে দাবি, তাকে ব্যখ্যা করা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাইবেলীয় প্রত্নতাত্ত্বিক, ঔপনিবেশিক প্রশাসক, খ্রিস্টধর্মীয় পণ্ডিদের বাইবেলে উল্লেখিত ভূমিসমূহ নিয়ে গবেষণার শুত্র ধরে ‘জুইস হোমল্যান্ডে’র ধারণা ফলবান হয়ে উঠেছিল। ইংরেজদের ঔপনিবেশিক পরিকল্পনার সমতুল্য ঘটনা এটি । Theologies of liberation in Palestine-Israel নামক তাঁর সম্পাদিত সংকলনগ্রন্থের এক প্রবন্ধে নুর মাসালহা বলেছেন, আধুনিক কালের অনেকগুলো ঔপনিবেশিক তৎপরতা বাইবেলকে ব্যবহার করেছে। বাইবেলের “মেগা নেরেটিভ” কেনানের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উৎপাটন ও হত্যায় সম্মতি যুগিয়েছে।
১৯৬৭ সালে গাজা আর পশ্চিমতীর দখলের পর বাইবেলের “প্রতিশ্রুত ভূমি”র ধারণাকে ভিত্তি ধ’রে ইহুদিধর্মতত্ত্বে মেসিয়ানিক জায়োনিজমের উত্থান ঘটে। এর ফলে এমন এক রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্বের উদ্ভব হয় যা আধুনিক প্যালেস্টাইনি বা কেনানাইটদের ধ্বংস দাবি করে। এই ধর্মতত্ত্ব প্যালেস্টাইনিদেরকে মনে করে ইহুদিদের চূড়ান্ত মুক্তির পথে বাধা। এ মনে করাটার রাজনৈতিক ফলাফলই হচ্ছে এথনিক ক্লিঞ্জিং। বর্তমানে এ তথ্য তো জানাই যে, মধ্যপ্রাচ্যেই প্রায় ৬ মিলিয়ন প্যালেস্টাইনি উদ্বাস্তু আছে এবং ৭০ শতাংশ প্যালেস্টাইনিই হয় বাস্তুহারা, নাহয় দেশান্তরী। খ্রিস্টান জায়োনিস্টরাও এ কাজে সহযোগী কারণ, তাদের মতে, প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা জেসাসের দ্বিতীয় আগমনের জন্যে জরুরি। এবং যখন পৃথিবীতে যিশু খ্রিস্টের আবার আগমন ঘটবে, তখন তিনি ইহুদিদের খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরিত করবেন। প্যালেস্টাইনি আরবদের উচ্ছেদ না ঘটালে এটি সম্ভব নয়। সুতরাং এই Theology of Dispossession বা উচ্ছেদের ধর্মতত্ত্বও বলপূর্বক ইসরাইলি রাষ্ট্রের জন্মের মতাদর্শিক ভিত্তি। Restoring Palestine: 2000 years of Mapping বক্তৃতায় প্রসিদ্ধ গবেষক ড.সালমান আবু সিত্তা জানান, জায়োনিস্টরা দশ ধরনের যুদ্ধ চালাচ্ছে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে : ১। ঐতিহাসিক ২। ভৌগোলিক ৩। সামরিক ৪।প্রত্নতাত্ত্বিক ৫।ধর্মীয় ৬। আইনি ৭। রাজনৈতিক ৮। অর্থনৈতিক ৯। বেইজ্জতকরণ (Defamation) ১০। প্রতারণা ক্যাম্পেইন ( Deception)। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন উপনিবেশিক শক্তি এমন সর্বাত্মক যুদ্ধ চালায়নি কোন ভূমির উপর।
ইসরাইলের তেলাবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্লোমো স্যান্ড তাঁর The Invention of the Jewish People এবং The Invention of the Land of Israel বই দুটিতে ইহুদিজাতি ও আধুনিক ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, প্যালেস্টাইনের সাথে ইহুদিদের কোন জন্মগত ঐতিহাসিক যোগসূত্র নাই। প্রাচীন ইহুদিদের অনেকেই ছিল “কনভার্টেট” যারা কোনদিন “হোলি ল্যান্ড”-এ পা-ও ফেলেনি। ইহুদি জনগণের (people) একীভূত জাতি(nation) হয়ে ওঠা এক আধুনিক ঘটনা ও নির্মাণ। ইহুদিদের নির্বাসনের ঘটনাকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, আর তাদের “আলিয়া” বা ফিরে আসার বয়ানকেও। তাছাড়াও নুর মাসালহা তার Palestine: A Four thousand Year history বইতে দেখিয়েছেন ঐতিহাসিক প্যালেস্টাইন আর ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের প্যালেস্টাইন এক নয় ।
প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনৈতিক ইহুদিবাদ ইউরোপের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বর্ণবিদ্বেষের ফলাফল। আর ইউরোপ ও আমেরিকাই ইহুদি রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত ও স্থিত রাখবার জন্যে প্রধানতম খুঁটি।
দুই
ইসরাইল নামের এই রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেন ও পরবর্তী সময়ে আমেরিকার যে ভূমিকা তার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ হাজির করেছেন ঐতিহাসিকরা। সভ্যতার নিশানবরদার এই ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যিক শক্তির হাত ধরে কতো কতো অন্যায় যে সংঘটিত হয়েছে, তার হিসাব অগোচরেই রাখা হয় । আমরা রাশিদ খালিদি ও আভি শ্লাইমের ইশারা ধরে জায়নিস্ট কলোনিয়াল প্রোজেক্টে এদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার বিস্তার ঘটাবো ।
জায়োনিস্ট রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটিশদের ভূমিকার বিস্তারিত বর্ণনা পাই আভি শ্লাইমের ‘‘বেলফোর এন্ড ইটস কনসিকোয়েন্স’’ নামক রচনায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেইন তিনটি চুক্তি করেছিল যেটির প্রত্যেকটি আরেকটির সাথে সাংঘর্ষিক। একটাকে মান্য করলে, অপরটি আপসেআপ বাতিল হয়ে যায়। যেমন, ১৯১৫ সালে ব্রিটেইন শরীফ অফ মক্কার সাথে প্রতিশ্রুত বদ্ধ হলেন যে, উসমানি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে আরবের শাসন ক্ষমতা এবং প্যালেস্টাইনও তাদের হাতে থাকবে। কিন্তু ১৯১৬ সালে আরব রাষ্ট্রসমূহকে ভাগাভাগি করে নিজেদের প্রভাব বলয় বা Sphere of influence–এ আনার জন্যে ব্রিটেইন ফ্রান্সের সাথে এক গোপন চুক্তি করে। চুক্টিটি সাইকস-পিকট নামে পরিচিত। এই চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ ইজরাইল এবং প্যালেস্টাইন, জর্দান, দক্ষিণ ইরাক ইত্যাদি অঞ্চল থাকবে ব্রিটেনের, আর ফ্রান্স নিয়ন্ত্রণ করবে সিরিয়া, লেবানন, ইরাকের উত্তরাংশ ইত্যাদি।
আবার ১৯১৭ সালে বালফুর ঘোষণার মাধ্যমে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্যে জাতীয় আবাসভূমি “National home for the Jewish” প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে আরবদেরকে পরিপূর্ণ ও চূড়ান্ত স্বাধীনতা দেবার যে প্রতিশ্রুতি ব্রিটেইন দিয়েছিল, সেটার সাথে বালফুর ঘোষণা পুরোই সাংঘর্ষিক। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালফুর লিখেন, “প্যালেস্টাইনের বর্তমান বাসিন্দাদের সাথে আমাদের পরামর্শের প্রয়োজন নেই। জায়নিজম ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক তা ৭ লক্ষ আরবের আশা-আকাঙ্খার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।“ অথচ আরবরাই ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ৯৪ শতাংশ। বালফুর ঘোষণা নিয়ে দুই ধরণের মতামত আছে। একটা হিউম্যানিটারিয়ান স্কুল, আরেকটাকে বলে ইম্পেরিয়ালিস্ট স্কুল। মানবতাবাদী ঘরানা মনে করে, একটা প্রাচিন জনগোষ্ঠীকে তাদের পূর্বপুরুষদের সুপ্রাচীন ভুমিতে ফিরিয়ে দেবার মহতী প্রচেষ্টা এটি। অন্যদিকে ইম্পেরিয়ালিস্ট স্কুল এই ঘোষণাকে ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী হিশেবনিকেশের ফল বলেই মনে করে। উল্লেখ্য যে, অধিকাংশ ঐতিহাসিকই মনে করেন, বালফুর ঘোষণা ব্রিটেনের বৃহত্তর সাম্রাজ্যিক বিবেচনার ফল ।
বালফুর ঘোষণার সময় ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লয়েড জর্জ। যারা অটোম্যান সাম্রাজ্যকে ভেঙে কিছু ক্লায়েন্ট স্টেইট তৈরি করতে চেয়েছিল তাদের নেতা ছিলেন জর্জ ফ্লয়েড। তাছাড়া টম সেগেভের মতে, লয়েড জর্জের জায়োনিজমকে সমর্থনের পেছনে জায়োনিস্টদের প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে তার একটা ভুল ও অতিরঞ্জিত ধারণা ছিল। তিনি মনে করতেন, ইহুদিদের রাশিয়া, আমেরিকা ও সাবটারেনিয়ান অঞ্চলে এদের প্রভাব আছে। তার জানা ছিল না যে, জায়নিস্টরা জুইশ কমিউনিটির একটা ক্ষুদ্র অংশ। অনেক ইংরেজ ইহুদিরা জায়োনিজমের ভেতরে যে অন্তর্গত জাতীয়তাবাদী চেতনা সেটার বিরোধী ছিলেন। জর্জ লয়েডের মন্ত্রী পরিষদের একমাত্র ইহুদি সদস্য ছিল মন্টেগু। ব্রিটিশ ক্যবিনেটে ‘Anti-semitism of the present Government” শিরোনামে তিনি চারপাতার একটা স্মারকলিপি প্রদান করেন। যেখানে তিনি বলে, জুডাইজম একটা ধর্ম, এটি কোন জাতি নয়। জুইশ স্টেইট তৈরি করার কোন অর্থ হয় না। প্যালেস্টাইনের ইহুদিরাষ্ট্র ব্রিটেন, আমেরিকা বা অন্যান্য জায়গায় বসবাসকারী ইহুদীদের সমানাধিকারের বিরুদ্ধে ।
আভি শ্লাইম বালফুর ঘোষণাকে আরবের প্রাণকেন্দ্রে ইহুদি রাষ্ট্রকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতীক বলেছেন। প্যালেস্টাইনি আরব জনগোষ্ঠীকে ভিটেমাটি ছাড়া করবার জন্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জুনিয়র এলাই ছিল এই জায়নিজম। কারণ জায়নিজমের লক্ষ্যই ছিল, ইউরোপিয় ইহুদিদেরকে প্যালেস্টাইনে এনে বসতি গড়া। আবার, ব্রিটিশদের লক্ষ ছিল প্যালেস্টাইনে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখা, সে ক্ষেত্রে জায়োনিজম প্যালেস্টাইনে ব্রিটিশ উপস্থিতিকে লেজিটিমাইজ করে। এভাবে তারা একে অপরের সহযোগী হয়ে থাকে ।
তবে ঐতিহাসিকরা দেখান যে, জায়নিজমকে সমর্থন ছাড়াই, অর্থাৎ ইসরাইলে ইহুদিরাষ্ট্র গঠনে তৎপরতা ছাড়াই তারা তাদের প্রভাব ধরে রাখতে সক্ষম ছিল। কারণ আরবরা ইতোমধ্যেই ব্রিটিশদের মিত্র ছিল। আরব অঞ্চল তুর্কি খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রাজিও ছিল, সে ক্ষেত্রে প্যালেস্টাইনকে তাদের অধীনে রাখলে ব্রিটিশ প্রভাব অক্ষুণ্ণ থাকত। তাই ব্রিটিশ স্বার্থের জন্যে বালফুর ডিক্লারেশন ছিল “a colossal strategic blunder”। আভি শ্লাইম বলেন, বালফুর ঘোষণা একই সাথে “crime and mistake”। প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে এটা ছিল ব্রিটেনের ক্রাইম, আর ব্রিটিশ পলিসির দিক থেকে এটা ছিল এক “মিসটেইক”, কারণ এটার ইতিবাচক ফল ব্রিটিশ শাসন ভোগ করতে পারে নাই ।
ইসরাইলের পুরোনো ধারার ইতিহাসবিদগণ বলেন, শেষ দিকে ব্রিটিশরা প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র-গঠনের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু ইলান পাপের নেতৃত্বে ইসরাইলের রিভিশনিস্ট ধারার ইতিহাসবিদরা দলিল প্রমাণ সহকারে দেখান যে, ব্রিটেইন ইসরাইল রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে সমর্থন করেছে এবং প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্রের উদ্ভবকে সবসময় বাধাগ্রস্তই করতে চেয়েছে ।
তিন
শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় ইহুদিদের জন্যে বর্ণবাদী বা এপার্টহিড রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাশিদ খালিদি অপর পরাশক্তি আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে বেশ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তার One hundred Years of Palestinian State বইটিতে । খালিদ রাশিদি সরকারি নথিপত্র এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেখান যে, ১৯১৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত — এই একশত বছরে নানা আকারে প্যালেস্টাইনিদের উপর পাঁচ পর্যায়ে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই যুদ্ধের নানা পর্যায়ে বর্তমান বিশ্বের সব পরাশক্তি যুক্ত ছিল। রাশিদ খালিদি বালফুর ডিক্লারেশনকে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধঘোষণা বলে উপস্থাপন করেছেন। কয়েকবার পরিমার্জিতকরণের মাধ্যমে ৬৭ শব্দের এই সুলিখিত ঘোষণাটি ইতিহাসের এক ভয়াবহ দলিল। এই দলিলে আরবদের সম্মতির কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে প্যালেস্টাইনে “National Home for the Jews” নির্মাণের ঘোষণা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। কলমের খোঁচায় এতে অদৃশ্য করে দেওয়া হয় প্যালেস্টাইনিদের নিজ ভূমির প্রতি অধিকারকে, মুছে দেওয়া হয় তাদের ঐতিহাসিক স্মৃতিকে আর সবচেয়ে বড় কথা, খোদ তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয় যেন এটি অধিবাসীবিহীন এক ভূমি।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৯৮৬ সালেই আমেরিকান সিনেটে ঘোষণা করেছিলেন, ইসরাইলকে আমরা সমর্থন করি কেন — এই কৈফিয়ত দেওয়া আমাদের বন্ধ করতে হবে। আমরা তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি এখানে। যদি ইসরাইলের অস্তিত্ব নাও থাকতো, আমেরিকাকে এই অঞ্চলে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্যে ইসরাইল আবিস্কার করতে হত।
লীগ অব নেশনের ম্যাণ্ডেটের মাধ্যমে ব্রিটেইন প্রশাসনিক অধিকার পেয়েছিল প্যালেস্টাইনে আর জুইশ ন্যাশনাল হোম নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সেখানে ইউরোপীয় ইহুদিরা বসতি স্থাপন ও জমি কেনা শুরু করেছিল। এগুলোর বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতার জন্যে ১৯৩৬ থেকে ৩৯ সাল পর্যন্ত আরবরা যুদ্ধ করে। গ্রেট রিভোল্ট নামে এই যুদ্ধ পরিচিত। তো এই “বিদ্রোহ”কে ব্রিটিশরা নির্মমভাবে দমন করে এবং পরিণত বয়সের প্রায় দশ শতাংশ পুরুষকে হত্যা করে ।
প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধ সংগঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর — ১৯৪৭ সালে। UN resolution 181-এর মাধ্যমে প্যালেস্টাইনকে দুইভাগে ভাগ করা হয় : একটা ইহুদি রাষ্ট্র ও আরেকটা আরব রাষ্ট্র। জাতিসংঘের এই রেজুলিউশানও প্যালেস্টাইনীদের মতামত বা সম্মতির কোনো ধার ধারার প্রয়োজন বোধ করেনি। ফলাফল হিসেবে যুদ্ধ শুরু হয়। জায়োনিস্ট মিলিশিয়া বাহিনী গঠনে আমেরিকা, রাশিয়া সবাই সাহায্য করে। যুদ্ধের বেশ পূর্ব থেকেই নাকবা বা প্যালেস্টাইনিদের বিতারণ শুরু হয়। এই যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয় এবং ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হয় ।
প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের তৃতীয় পর্যায় হিশেবে রাশিদ খালিদি উল্লেখ করেছেন ১৯৬৭ সালের UN Security council Resolution 242-কে। রাশিদি দলিল দিয়েই দেখান যে, আমেরিকার সেক্রেটারি অব ডিফেন্স — রবার্ট ম্যাকনামারা — মোসাদ প্রধানকে যুদ্ধ করবার সিগনাল দেন, অপরদিকে, আরবদেরকে সতর্ক করেন যুদ্ধ না করবার জন্যে এবং ইসরাইলকে যুদ্ধে বিরত রাখবেন বলেও আশ্বস্ত করেন। আমেরিকার সহযোগিতায় ইসরাইল যুদ্ধ ঠিকই করে এবং ঐতিহাসিক প্যালেস্টাইনের শেষ দুই খণ্ডাংশ — পশ্চিম তীর ও গাযা — দখল করে নেয়। ১৯৬৭ সালের UN resolution 242-তে প্যালেস্টাইনের নামও উল্লেখ নাই, বিশেষ জোর দিয়ে উল্লেখ নাই প্যালেস্টাইনি উদ্বাস্তু ও বাস্তুহারাদের প্রসঙ্গও। দখলকৃত অঞ্চল থেকে দখলদারদের সরে যাওয়ার সময়ও নির্ধারণ করা হয় না। এভাবে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে সুকৌশলে আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা দেওয়া হয়।
চতুর্থ পর্যায় ১৯৮২ সাল। ইসরাইলের তৎকালীন ডিফেন্স মিনিস্টার, মিস্টার শ্যারন আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেইটের সাথে দেখা করেন। আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেইট তাকে বলেন , ”Make sure you have a good pretext”। “Green signal for Israeli invasion” — নোট আকারে লেখা এই কথাটুকুও নথিবদ্ধ আছে এখনও। এই যুদ্ধে লেবাননকে আক্রমন করা হয়, পিএলওকে বহিস্কার করা হয়, বৈরুতকে করা হয় অবরুদ্ধ ।
পঞ্চম পর্যায়ের যুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধ। এ যুদ্ধ চলছে প্রতিনিয়ত। ২০০৫, ২০০৬ , ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৪, ২০১৯, ২০২১ — এভাবে এই যুদ্ধ চলছেই। লেখক অবশ্য ২০১৭ পর্যন্ত আলোচনায় এনেছেন। ২০১৪ সালে ২১ কিলোটনের বোমা ফেলা হয়েছে গাজায়, যা মধ্যম আকারের পরমাণু বোমার সমান। পৃথিবী চতুর্থ শক্তিশালী এক সামরিক বাহিনীর সাথে অসম যুদ্ধ চলমান রয়েছে ।
উপরে বর্ণিত, সব যুদ্ধ, সব আন্তর্জাতিক চুক্তি ও রেজুলিউশানগুলো স্থানীয় প্যালেস্টাইনি-আরবীয় জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ ও উৎপাটন করে ইহুদিবাদের স্বার্থ রক্ষার একক লক্ষেই পরিচালিত হয়েছে। প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ১০০ বছর ধরে পরিচালিত এই যুদ্ধগুলোর কোনোটাই ইসরাইল একা করে নাই; রাশিদ খালিদি জানাচ্ছেন, এই যুদ্ধগুলো কোনোটা প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ব্রিটেন-ইজরাইলের যুদ্ধ, কোনোটা ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইসরাইলের যুদ্ধ, কোনটা আমেরিকা-ইসরাইলের মৈত্রিতে যুদ্ধ। এইভাবে পরাশক্তিসমূহের সহায়তায় টিকে আছে ইসরাইল নামক এই জায়োনবাদী, সেটেলার কলোনিয়াল ও এপার্থিড স্টেইট। আমেরিকা কেন ইসরাইলকে ক্রমাগত সমর্থন করে যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে ইলান পাপে তিনটি কারণ উল্লেখ করেন : ১। খ্রিস্টান জায়োনিজম ২। ইহুদি লবি ৩। মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৯৮৬ সালেই আমেরিকান সিনেটে ঘোষণা করেছিলেন, ইসরাইলকে আমরা সমর্থন করি কেন — এই কৈফিয়ত দেওয়া আমাদের বন্ধ করতে হবে। আমরা তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি এখানে। যদি ইসরাইলের অস্তিত্ব নাও থাকতো, আমেরিকাকে এই অঞ্চলে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্যে ইসরাইল আবিস্কার করতে হত (If there were not an Israel, The United States of America have to invent an Israel to protect her interests in the region.)।
চার
ইতিহাসের মানদণ্ডে প্যালেস্টাইনিদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হলেও প্যালেস্টাইনি জনগণ এখনো নিজভূমে পরবাসী। সুতরাং দাবি সত্য হলেও ইতিহাসের উপর দখল প্রতিষ্ঠিত হলেও সবসময় জয়ী হওয়া যায় না। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে সত্য দাবি যেমন লাগে, তেমনি লাগে শক্তি ও সহায়তা। তবে প্রবল মিডিয়ার বিপুল মিথ্যাচার ও ইসরাইলি প্রপাগান্ডার বিপরীতে বিশ্বব্যাপী সোসাল মিডিয়ার যে উত্থান ও ভূমিকা তা আশাবাদী হওয়ার মতো। ইসরাইল রাষ্ট্র কখনোই টিকে থাকতে পারত না, এমন কি প্রতিষ্ঠাও হতে পারতো না, পরাশক্তির সহায়তা ছাড়া।
ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ও প্যালেস্টাইনি জনগণের পক্ষে বিবেকবান জনগণের তীব্র আন্দোলন হয়তো পরাশক্তিগুলোর ইসরাইল-নীতিতে পরিবর্তন আনবে। গাযাকেও বৃদ্ধি করতে হবে নিজের সামরিক শক্তি ও সক্ষমতা। সমাধান বহু দূরে মনে হলেও ইচ্ছে ও আশাকে বাঁচিয়ে রাখাও বড় কাজ, আনতোনিয় গ্রামসি যেমন বলেছেন, pessimism of the intellect, optimism of the will — বুদ্ধি হয়তো হতাশার কথা বলে, কিন্তু আশা আলো জ্বালে ।
অসাধারণ লিখেছেন। ফিলিস্তিন ভূখন্ড ও আধিপত্যবাদের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে লেখাটি রেফারেন্স হিসেবে কাজে দিবে।
তথ্যবহুল লেখা।
কাজের জিনিস।