হাদিউল ইসলাম নব্বইয়ের দশকের কবি। তাঁর কবিতায় দৃশ্যমান লোকায়ত জীবনের ছাপ। গ্রাম-প্রকৃতি ও সংস্কৃতির উপাদান তাঁর কবিতার ভাষাকে দিয়েছে স্বতন্ত্র স্বভাব।
অচেনা মাথুর
প্রমিত বাসনা ঠেলে উঁকি দেয় পুনশ্চ বিনাশ
সমুহ সমুদ্র দু’চোখে লুকালে নুনের কসম
আর দুগ্ধবতী গাভীর ফিকে দোহাই
সমুখে দাঁড়াও, প্রেম ভারে নত দু’হাত বাড়াও
সমুহ সমুদ্র দু’চোখে লুকালে নুনের কসম
আর দুগ্ধবতী গাভীর ফিকে দোহাই
সমুখে দাঁড়াও, প্রেম ভারে নত দু’হাত বাড়াও
রবিঠাকুরের পূজাপর্বগানে তোমাকে ডেকেছি
খাঁ খাঁ হাহাকারে, কিম্বা চন্দ্রালোক বেদম প্রহারে
যখন দু’চোখে নির্মল জোনাকি চঞ্চল বিহারে
আমাকে প্রেমিক, ছন্নছাড়া পথে একাকী কুসুম
আহা তপোবন, এই শুঁড়িখানা দখিনা সমীর
তোমার নৈবেদ্য
খাঁ খাঁ হাহাকারে, কিম্বা চন্দ্রালোক বেদম প্রহারে
যখন দু’চোখে নির্মল জোনাকি চঞ্চল বিহারে
আমাকে প্রেমিক, ছন্নছাড়া পথে একাকী কুসুম
আহা তপোবন, এই শুঁড়িখানা দখিনা সমীর
তোমার নৈবেদ্য
তুমিও অধরা, সাধের বাঁশরি তবুও বাজাই
স্বীয় শিরাতন্ত্রে শত-ক্ষত-সুর, অচেনা মাথুর
হেমন্তে
পিঠা বানানো হাতের প্রতিটা আঙুল
হাস্যোজ্জ্বল, উনুনের পাশে বসে দেখা
ঘোরলাগা তুরুপের তাস ছুঁড়ে দেওয়া পিঠা
তেলে ভাসছে বিভিন্ন সময়ে বিবিধ আদল
লোভাতুর, গোপন অরব শীৎকারে
এতো যে ম্যাজিক, এমন হেমন্তে —
হাস্যোজ্জ্বল, উনুনের পাশে বসে দেখা
ঘোরলাগা তুরুপের তাস ছুঁড়ে দেওয়া পিঠা
তেলে ভাসছে বিভিন্ন সময়ে বিবিধ আদল
লোভাতুর, গোপন অরব শীৎকারে
এতো যে ম্যাজিক, এমন হেমন্তে —
নাড়ার আগুনে এতো উস্কানি, অবদমন
সবে তো শিশির ঝরেছে কাঁঠাল পাতা থেকে
কড়াইয়ে হাসছে তেল, রাঙাপ্রবণ পিঠার
জিল্লতি দেখে নতুন হৃদয় লতিয়ে উঠছে —
কুলগাছে আলোকলতার বিভা
সবে তো শিশির ঝরেছে কাঁঠাল পাতা থেকে
কড়াইয়ে হাসছে তেল, রাঙাপ্রবণ পিঠার
জিল্লতি দেখে নতুন হৃদয় লতিয়ে উঠছে —
কুলগাছে আলোকলতার বিভা
উঠানে বাজছে রেডিও, আহা বৃত্তের মধ্যমা
পল্লিগীতি আব্দুল আলীম, অথবা আব্বাস
অপূর্ণাঙ্গ চাঁদ সাধ্যমতো ছুঁড়ে দিচ্ছে নেপথ্য বেহাগ
পল্লিগীতি আব্দুল আলীম, অথবা আব্বাস
অপূর্ণাঙ্গ চাঁদ সাধ্যমতো ছুঁড়ে দিচ্ছে নেপথ্য বেহাগ
কতিপয় কুত্তা
কতিপয় কুত্তা আমাকে শাসিয়ে গেলো
ওদের ভাদ্দর মাসে আমি কেনো
লাঠিভর করে হাঁটি?
ওদের ভাদ্দর মাসে আমি কেনো
লাঠিভর করে হাঁটি?
আমার বিপন্নতায় কোতোয়ালের কী এসে যায় !
দেশ
মাঠে মরা গরু
শকুনে কুকুরে খাচ্ছে
কাক খুব একটা পাচ্ছে না সুযোগ
রাতে শেয়ালেরা, সকালে হাড্ডির খাঁচা
কিছু কাক পালাক্রমে ঠোকরাচ্ছে চোখ
শকুনে কুকুরে খাচ্ছে
কাক খুব একটা পাচ্ছে না সুযোগ
রাতে শেয়ালেরা, সকালে হাড্ডির খাঁচা
কিছু কাক পালাক্রমে ঠোকরাচ্ছে চোখ
এ আমার দেশ, আর কিছু বোকাসোকা লোক
আশ্চর্য বেহালা
গভীর বেহালা বাজে দূরতম নক্ষত্র পাড়ায়
যেন হাওয়া, মুখে সুর নিয়ে বেদনা ছড়ায়
উজ্জ্বল জোছনার রাতে
যেন হাওয়া, মুখে সুর নিয়ে বেদনা ছড়ায়
উজ্জ্বল জোছনার রাতে
হেসে ওঠা সোনালু বা জারুলের মাথা
রোদের সকালে গূঢ়ার্থ প্রকাশ করে পাখি-সম্মেলনে
রোদের সকালে গূঢ়ার্থ প্রকাশ করে পাখি-সম্মেলনে
আমি রোজ রোজ এইসব দেখে শুনে
অমৃত গরলে এক দাওয়াই তৈরি করি
বর্ণমালা জোড়া দিই, এর ভেতরে কটাক্ষ সুন্দরীর
অথবা উপেক্ষা কোনো গান
আশ্চর্য বেহালা বুকে-কাঁধে, আঙুলে আঙুলে
সমর্পিত জলে ও বাতাসে, পায়রার বিভা ও মোজরায়
অমৃত গরলে এক দাওয়াই তৈরি করি
বর্ণমালা জোড়া দিই, এর ভেতরে কটাক্ষ সুন্দরীর
অথবা উপেক্ষা কোনো গান
আশ্চর্য বেহালা বুকে-কাঁধে, আঙুলে আঙুলে
সমর্পিত জলে ও বাতাসে, পায়রার বিভা ও মোজরায়
সুখপাঠ্য কবিতা।
অসাধারণ মুগ্ধতা পুরো কবিতা জুড়ে