মাটির প্রদীপ : ৩

সন্ন্যাসী, ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভগবান শ্রীরজনীশ বা ওশো সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু-পরবর্তী কালে অটুট তাঁর প্রভাব। মূল হিন্দি থেকে ওশোর মিট্টি কে দিয়ে বইটির অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ

বো ধি ক থা সংকলন : ৩

ধর্ম ধর্ম ধর্ম। ধর্মের কতশত বিচার চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে, কিন্তু এর পরিণাম কী? আমি যার সঙ্গেই কথা বলি সেই শাস্ত্র বাক্য শুনিয়ে দেয়। শাস্ত্রে এটা আছে, শাস্ত্রে ওটা আছে। অথচ মানুষ নিরন্তর দুঃখ, দুর্দশা আর যন্ত্রণায় ডুবে মরছে। আর আমরা কিনা শাস্ত্রবচন, শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত আওড়িয়ে বেড়াই কথায় কথায়। মানুষ প্রতিনিয়ত পশুত্বকে বরণ করছে আর আমরা কিনা সেই আদিম যুগের আদিম শাস্ত্র মাথা ঝুঁকিয়ে বুকে ধারণ করছি।

মৃত শব্দ আর বাক্যে আমরা অন্ধের মতো ডুবে আছি।  আর সত্য এই মৃত শব্দ আর বাক্যের জঞ্জালে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ। আমরা এতটাই অন্ধ যে, সামান্য অনুসন্ধান করার মতো ক্ষমতাটুকুও আমাদের লোপ পেয়ে গেছে।

আমরা বলি একরকম আর জীবনযাপন করি আরেক রকম। কেননা আমরা নিজের স্বাভাবিক, স্বতস্ফূর্ত অস্তিত্বকে অস্বীকার করে পুরোনো শাস্ত্র আর বিচারে অন্ধ। আশ্চর্যের কিছু নেই, এই বিরুদ্ধাচরণ আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। চোখ থাকতেও কি আমরা অন্ধ নই? এই অস্তিত্ব, জীবনের স্থিতি যা আমাদের সামনে বর্তমান আমরা সেটাকে অগ্রাহ্য করে যতই পুরানো শাস্ত্র বাক্য পাঠ করি না কেন তা আমাদেরকে দ্বিচারিতায় ফেলবেই। সত্য নিজেই প্রস্ফুটিত হয়ে অস্তিত্বে ধরা দিলে আর সব জ্বীর্ণ, পুরানো বন্ধন থেকে মুক্ত করবেই আর না হলে অন্ধকারে ডুবিয়ে নিয়ে যাবে। সার্কাসের বাঘের মতো শেখানো সত্য জীবনের প্রতিটি পদে স্ববিরোধ তৈরি করে।

পাহাড় চূড়ায় খাঁচায় পোষা একটা তোতাপাখি ছিলো। মালিক তোতা পাখিটিকে যা শিখাতো দিনরাত সেটাই আওরাতো। পাখিটি দিনরাত আওরাতো, ‘স্বতন্ত্রতা, স্বতন্ত্রতা, স্বতন্ত্রতা। একবার এক পরিব্রাজক সেই পাহাড়ে গিয়ে যখন গিয়ে উঠলো, তোতা পাটখিটির দিনরাত আওরানো শব্দ ‘স্বতন্ত্রতা’ তার মর্মে খুব করুণভাবে আঘাত দিলো। সেও যোদ্ধা ছিলো। নিজের দেশকে বাঁচাতে কয়েকবার তাঁকে জেলখানায় বন্ধি থাকতে হয়েছিল। আর তোতা পাখিটি যখন সেই পাহাড়ের খাচায় থেকে ‘স্বতন্ত্রতা’ শব্দটি উচ্চারণ করতো তখন সে বড়ই দুঃখ পেত। এক রাতের অন্ধকারে সেই পরিব্রাজক তোতার মালিক ঘুমিয়ে গেলে স্বতন্ত্রতাকামী তোতা পাখিটিকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেই তোতা পাখিটি কোনোভাবেই খাঁচা থেকে বের হচ্ছিল না। বরং খাঁচার শেকল কামড়ে আরও জোরে ‘স্বতন্ত্রতা, স্বতন্ত্রতা শব্দটি উচ্চারণ করছিলো।  অনেক কষ্ট করে সেই পরিব্রাজক তোতাটিকে খাঁচা থেকে বের করে উড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে অবাক হলেন, সেই তোতাটি খাঁচার মধ্যে আনন্দ নিয়ে বসে বসে আওরাচ্ছে, ‘স্বতন্ত্রতা, স্বতন্ত্রতা’ বলে।

(চলবে)

পড়ুন ।। কিস্তি ২

মাটির প্রদীপ : ২

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here