শিশির আজমের কবিতা

ডুবোজাহাজের রাজহাঁস

অনেকদিন ধরে আপনাকে ঢুঁ মারছি মিস্টার ফ্রয়েড, আপনি গা কচ্ছেন না
শরিয়তে বীজের তাড়না : বেহুদা পাহারাদার ভালবাসে মাটির শানকি

 

নালিশ আজকের না। আগ্নেয় গোলক টুটোফাটা হলো মানব-মানবী কৃষিক্ষেতে
দু-একটা বুনো উল্কা প্লাস্টিকচটিতে অনুধ্যান
বৈকালিক ডানাদের ছায়া ক্ষমা নিয়ে অন্য এক আচ্ছন্নতা ভূমিহীন আকাঙ্ক্ষার
অথবা যা শুল্ক নিশ্চয়তা তা-ই যুদ্ধ মনে হবে, বিধর্মী পললে তরবারি
পৃথক ভূখণ্ড নেই, সূর্যাস্তের রং জ্বলে ওঠা দেখি অনিমিখ
অবৈদিক সমাজের শুক্রপ্রবণতা কাষ্ঠদ্রব্যাদিতে নির্বিকার লেপটে আছে
গৃহীদের গ্রীষ্মক্রোড়ে গহনা ও ইতর কুকুর
খোলো খিল, ভয়-গতি-অনিত্যতা দুচ্ছেই
দুমিনিট ইচ্ছা ও অনিচ্ছার — সমৃদ্ধির মতো আত্মহত্যা চিন্তারূপ অবিকল
নিবিড় নৈকট্য, মনে হয় নকশালবাড়ি

 

কিন্তু এটা কেবল মহড়া, লাশ টানাটানি, ল্যবরেটরিতে বিষণ্ণতা চেপে আছে
একটিই চোখ নিয়ে যার ঘরসংসার
তিনি পিছলে যাবেন, তিনি অভিশপ্ত হয়ে পড়বেন
রেশম পোকার নিয়ন্ত্রণে স্বস্তিবোধ হতে পারে অথবা আঁধারে ব্যাধি ধর্মবোধ
একে এক বাক্যে ভালবাসা বলা অশুদ্ধতা
জটিলতা
তো টেলিগ্রাফের তার ঢেউলাগা সবুজের মাথা হয়ে দিগন্ত পেরিয়ে গেছে
এর পর ধানকাটা শুরু
মেঘে ও নেশায় আকাশ উথলে উঠে
মৃত্যু নিয়ে ভাবনাচিন্তা ও দাপাদাপি শুরু হয়
তুমি যে এখন বুড়ো, এতে মেরুদণ্ড সোজা রাখাটা সহজ
খুট করে দরজা বাজলো
আরক্ত উদ্যানে প্রবালের আঁশ
সলতেয় ম্যাচ ঠুকে আদিবাসী গম্বুজটা নিচু করে নাও
খাঁচা ও আষাঢ়ে গল্প মাথা পেয়ে যাবে

 

বায়ুতে লালের ছোঁপ। রাজপুতানীর চুমকি-বসানো ঘাগড়ায় শস্যগাথা
এমনিতে সন্দেহ এসেছে, সৌন্দর্য ও ডুবসিঁড়ি কথা বলে
আমাদের ব্রতকথা পিটুলি চিরুণি
আমাদের মঙ্গলপ্রতীক পিটুলি পালকি
শুধু আলপনা, আর খানিকটা আঁচ আসে অস্ট্রিক সভ্যতা হতে
রাতে ছিল আমিষের ভোজ, নরম সকাল গাঢ় হলো টুটোফাটা হলো
মগ্ন কোড়াপাখি বেদনা জাগালো অন্নদাপুকুরে
মাগধী প্রাকৃত ভাষা চৈত্রহাওয়ায় তখন গভীর অগ্নুৎপাত
ভবিষ্যত ভুলবোঝাবুঝি আর জগৎ রহস্যময়
হরিণ ও বাঘ বেমক্কা পালটে ফেলে বিচরণক্ষেত্র
এমন যে নির্বাক বৃক্ষের লতাপাতা জ্বলছে, মানুষ কেবলই দৃশ্য গিয়ে খায়

 

বইখাতাপত্রসহ শান্তিলেখা আকাশে উদ্বেল, দুই চোখে শ্রাবণের চারাগাছ।
মা স্বতন্ত্র, গুহামুখ কখন খুলেছে
দহন উঠবে বৃষ্টি আর ভেজানো পালকে
অসাবধানতা মনে করে পিছু ফেরা চলবে না
শান্তিলেখা আগুনে কাঁপছে নীল চোখদুটো শান্ত রেখে
মাতৃত্বের মতো নয়
ইবনে বতুতার চোখে দেখা নয়
আগুনকে পাশে রেখে সমুদ্রের দিকে নৃতত্ত্ব ধাবিত
সীমাবন্ধনের বোধ কলকে পায়নি
সমুদ্র ও শান্তিলেখা ঝিঁঝিপোকাদের মতো গোলমেলে
সবুজ অক্ষর ও বিচ্ছিন্ন ধোঁয়াদের খোঁয়াড়ে প্যাঁচামি

 

বিপদের আঁচ হতে বাঁচতে চাও? তাও অসম্পূর্ণ। বিচিত্র উজ্জ্বল শিক
কতো সম্ভাবনা ধরে রাখে
ঘুটি ও অনিশ্চয়তা
পেপসির ক্যান ও গর্ভনিরোধক কবিতা
চাঁদের কোটর হতে মাতৃহারা কুকুরের আহাজারি
এই গ্রহ আর পরশপাথর বাগদীপাড়ায় শুয়ে পড়েছিলো
তুমি জানতে না? গ্রন্থি কেটে গেলে জ্যোতিষ্মান বাঁক সৃষ্টি হয়

 

আকাশের বুক চিরে বর্ষা নেমে এলো। বরফের ছোটবড় আরও চাঙর রয়েছে
মা আর মেয়ের জন্য একমাত্র ক্লোজশট
গৃধিনীডানায় সমাহিত অকাট্য পুস্তক
কুড়িজন অবতার ভাঙা দাঁতে কাঁতরায়; ময়রাকে বলি
জিলিপিতে প্যাঁচ কষো, তোমার বেঢক জীবনের রাজহাঁস, ভাঙা কাঁচ

 

কৌটো খুলে তেলে ছেড়ে দাও দেখো উজবুক মেয়েছেলে সব কিরকম
আছড়িবিছড়ি করে পরীক্ষামূলক পরাবাস্তরের রক্তকণিকায়
যশোর টাউন হল ময়দানে বিক্রি হচ্ছে দাঁতের মাজন
প্রতি শিশি দশ টাকা দশ টাকা দশ টাকা
শুধুমাত্র আজকের জন্য কোম্পানির সরাসরি ছাড় পাঁচ টাকা
কাকা ভাই বোন বন্ধুগণ যার যার জায়গায় দঁড়িয়ে আওয়াজ দিন
পৌছে যাবে খগেন বাবুর অবনি টুথ পাউডার
পাঁচ টাকা পাঁচ টাকা পাঁচ টাকা

 

পৃথিবীর গর্ভবেদনায় আরও শান্তি, খড়কুটো আর গড়ানো সমৃদ্ধ ডিম
ইলশেগুঁড়িতে শীতশীত গৃহভোলা ঘুড়ি
কার্তিকের পাখনায় ছোট ছোট নক্ষত্রের পুণ্যস্রোত
অনেক কিংবদন্তি ও বাউলমন্ত্র স্বস্তিকার পর্যায়ে এসেছে
ইলেক্ট্রিসিটিতে বৌদ্ধমত স্তরে, দাবদাহে ও শস্যদানায় ভিনচরিত্রের
ম্যানেজার কিছু জানবে না
যৌথখামারের প্রাচীনত্বে সেতু ওগরানো শ্যাওলা
চুলোয় দিয়েছি টাটকা বেগুন আর আমার বা হাত
সামাজিক অন্ধকারবর্ষ একাত্ম হয়েছে দেনাপাওনায়

 

অন্ধকারে গাছকাটা আর ডুবন্ত কেশর তোমরা দেখনি
শিমুলের শাখা হতে নির্জন মাটিতে ঝরে পড়ে মুঘল নন্দনবোধ
যা মূলত দরবারি
নরখাদকেরা ধোয়া তুলসি পাতায় আত্মপ্রতিকৃতি আঁকে, বিড়ালেরা আঁচড়ায়

 

ক্ষেরো রোদে শান্তিলেখা নেয়ে উঠেছিলো
উথলে ওঠে অসমাপ্ত শব্দগুলো, এমনকি অন্ধ পাথরও
এ হলো চলিত কথা, নকাশি মৌসুম
আর মাতৃগন্ডোলায় যখন দাঁড়ালো তাম্রলিপি
উজান সংগীত, ক্ষেরোলিপি যা ভাসিয়ে দিয়েছিলো শান্তিলেখা

 

ধূসর সাইকেলরিং বনপথে শুন্শুন্
ছিকের ঝোলানো হাড়ি, নক্ষত্রের অম্নানতা গৌড় সাম্রাজ্যের ক্ষিপ্রতা চেয়েছে
বিন্দু
বিদিশায় ছিরিছাঁদ পাল্টি খাচ্ছে
অখণ্ড ঝিলিক

 

অর্থাৎ প্রার্থনা যতো যা-ই হোক কফিনের বসন্ত জাঙাল
গোলমেলে
রেলইস্টিশন থেকে শান্ত প্রতিবেশীদের ঘর কত কাছে
তবু ঘুম সবার হয় না
এক মায়াজাল হতে সূর্যমুখী কেল্লা
লক্ষ্মীপেঁচা জানালায় চোখ দিলে অবোধ পালংক ভাসতে ভাসতে
সাত আসমান
ভাষাবর্গক্ষেত্র বিস্ফোরিত
যা ভেবেছিলেন কালিদাস
উদ্ভিদের মর্মরীতি মারাত্মক সংকেত দেয় পরাবাস্তববাদের আপ্লুত শ্মশানে
অনেক পার্থিব দুর্বলতা ছুরির আগায় নুনসহ প্রিয় হয়ে ওঠে
ধর্মপ্রাণ, তরমুজবনে চাঁদ নেমে এলো, অদূরে শেয়াল
নির্জন আঙুল লাল হলো পায়রার বুকে, বুকে লোম ছিলো
সীমাছাড়া প্রান্ত
এক শৈলশ্রেণী মাতৃত্বের মতো মাটি পুড়িয়েছে

 

আমিষের স্তরে মানববসতি প্রাকৃতিক : মা ও মেয়ে রক্তকররীতে বিঁধে আছে
কিন্তু যমুনায় ভাঙা-আধভাঙা অস্ত্রপাতি বহে গেলো
দেবদারুগাছে অনেক বসন্ত আর যুদ্ধ
শান্ত হয়ে আছে — কাকাতুয়াটিকে নিয়ে পা বাড়াই জঙলার মাঠে

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here