পড়শি দেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানাশোনা ও বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে উর্দু, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, কাশ্মীরি, তেলেগু, পশতু ইত্যাদি ভাষার সাহিত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে গৃহীত ও আলোচিত হয় ইংরেজি ভাষার সাহিত্য। ঔপনিবেশিক মানসিক দাসত্ব এর প্রধান কারণ। আমরা একটু উল্টো পথে হাঁটতে চাই; দেখতে চাই আমাদের প্রতিবেশী ভাষাসমূহের সাহিত্য। আর তাই শুরু করছি নতুন আয়োজন ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার কবিতা। হিন্দি থেকে মারাঠি কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ।
মা রা ঠি ক বি তা
দিলীপ চিত্রে (১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮- ১০ ডিসেম্বর ২০০৯) সুবিখ্যাত ভারতীয় কবি। তিনি মারাঠি এবং ইংরেজি দুই ভাষাতে লেখার পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও চিত্রকলা নিয়ে কাজ করেছেন। তুষার ধবল মারাঠি থেকে তার কবিতাগুলো হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন।
কবির কাজ
কবির কাজ
প্রতিটি মুহূর্তে কঠিন হতে থাকে
তোমার কি মনে হয় —
আমি স্বেচ্ছায় বাছাই করে
নিয়েছি এই পাহাড়কে?
এমন উচ্চতার সঙ্গে
নিজেকে টেনে ধরা ছাড়া আর
কোনো বিকল্প নেই যখন —
বাস্তবতা কেমন মিইয়ে যাচ্ছে!
চুপিচুপি মিনার হেঁটে যায় দেখ,
সব সভ্যতা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
শৈশবের খেলার ঘর
এক ধূসর পাহাড়ের চূড়ায়
আমার শৈশবের খেলার ঘর শূন্য পড়ে আছে
ভাঙা, ঘুন পোকায় খাওয়া সব আসবাব
কেবল অক্ষত দাদির জাঁতা আর
দেব-দেবীর সোনালি পিতলের মূর্তি
পাখিদের মৃত্যুর পরও
তাদের ডাক বয়ে যায় এদিকে সেদিকে
এক ধূসর হাওয়ার আবাদ শুরু হয়
সূর্য উঠার পূর্বে রক্তিম আকাশে —
যেখানে শব্দ, শিল্পের মিহি নকশায়
একাকিত্ব বণ্টন করে অনায়াসে
আমার দাদির আওয়াজ
নগ্ন স্ফুলিঙ্গে থরথরিয়ে কাঁপছে
সেই খালি ঘরে পায়চারি করি এদিকে সেদিকে
গ্রীষ্ম আর বসন্ত বিদায় হলো সেই কবে
পেছনে ফেলে আসা এক বৃদ্ধ শিশু
কেবল বয়সের কামরা খুঁজে বেড়াচ্ছে।
বেদনার দাগ এক বিলম্বিত সনেট
সংগীত, গণিত, স্মৃতি, কবিতা
সবই বেদনার দাগ রেখে যায়
মৃত্যুরও রয়েছে তাঁর নিজস্ব জ্যামিতি
সব নিরাকারবাদীই আকারের ঘোর সমর্থক
অথচ তাঁর কৃপা তাঁর কোনো দাগ রেখে যায় না
গুরু যেমন নিজের কাজেই নিজের স্বাক্ষর রেখে যায়
বাখ এবং তুকারাম এখনো আমার হৃদয়ে
আমার বেদনার উল্লসিত বীজ
মানুষ আমরা, মনুষত্বের প্রদীপ জ্বালাতে
যন্ত্রণার কষাঘাতের জীবন এবং মৃত্যুর অনুভবে
প্রেমের সত্য বয়ে যায় আমাদের নিঃশ্বাসে
এক অদ্ভুত চুম্বকীয় ঝড়ে
সংগীত, গণিত, স্মৃতি, কবিতা
সবই বেদনার দাগ রেখে যায়।
মৃত্যু সেই জননাঙ্গ
মৃত্যু সেই জননাঙ্গ —
আমরা সকলে খুঁজে বেড়াই
প্রেমের হারিয়ে যাওয়া সে অঙ্গ
এক অন্ধকার মাংসাশী কম্বল
যার নিচে শরীর অদৃশ্য হয়ে যায় ক্রমশ
এক কামুক আর ভিজে যাওয়া মোহ
চুম্বন দিয়ে গাছ বানিয়ে ফেলে
তোমার চামড়াও এক রসালো গ্রহ
যেখানে আর কিছু নয় কেবল ঘাস গজাতে থাকে
রাশির পিঞ্জরে বাঁধা আকাশের পশু
যার পাশবিক গন্ধ
নতুন কিছুর সন্ধানে উড়ে বেড়ায়
আর আমার অশ্লীলতার খোঁজ সেই থেকে
আরও পড়ুন
স্যার এই প্রশ্নটা আমার মাথায় অনেক দিন ধরে জটলা পাকিয়ে আছে। আমরা আমাদের সাহিত্য আলোচনায়, তুলনা কিংবা উদাহরণ দেয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি/ ইউরোপীয় সাহিত্যকে যতোটা মূল্যায়ন করি ঠিক ততোটাই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ, তাদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করি। আমরা সবাই মোটামুটি পাশ্চাত্য সাহিত্যের সাথে কমবেশি পরিচিত কিন্তু দেখা যায় মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান এইসব প্রতিবেশী দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা পুরোটাই অজ্ঞ।
এর কারণ কি স্যার? আর এক্ষেত্রে আমাদের পূর্বসূরি যেসব গুনীমান্যি ব্যক্তিরা ছিলেন কিংবা বর্তমানেও যারা আছেন তারাও কখনো ওইভাবে কিছুই বলে না কেন স্যার?
আমাদের তো উচিত এসব দেশের শিল্প সাহিত্য সম্পর্কে জানা অথচ এত এত বছর চলে যাচ্ছে আমরা এখনও অন্যের চাপিয়ে দেয়া বিষয়বস্তু থেকে বের হতে পারছি না, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক নয় কি?