শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ : উচ্চতর গবেষণার রূপরেখা

সম্প্রতি রাফাত আলম মিশুর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ : উচ্চতর গবেষণার রূপরেখা শীর্ষক বই। বাংলা বিভাগে অনুসৃত গবেষণার প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম এই বই। পাঠকদের জন্য বইটির ভূমিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো ভূমিকার প্রথম কিস্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান বয়সী। অর্থাৎ ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যে বারোটি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল, বাংলা বিভাগ সেগুলোর একটি। তখন এর নাম ছিল ‘সংস্কৃত ও বাঙ্গালা বিভাগ’। সে হিসেবে এই বাংলা বিভাগ একটি শতবর্ষী বিভাগ। ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই সংস্কৃত ও বাঙ্গালা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। সূচনাপর্বে বিভাগে চারজন শিক্ষক নিযুক্ত হন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) ছিলেন বিভাগের অধ্যক্ষ। অন্য তিনজন শিক্ষক : শ্রীশচন্দ্র চক্রবর্তী, রাধাগোবিন্দ বসাক (১৮৮৫-১৯৮২) এবং মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫-১৯৬৯)। এঁদের মধ্যে বাংলা বিষয়ের একমাত্র শিক্ষক ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। অপর তিনজন সংস্কৃতের। ১৯২১ সালে বাংলা অনার্স শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র একজন। শুরু থেকেই বাংলা বিভাগে ছিল গবেষণার অনুকূল পরিমণ্ডল।

 

বাংলা সাহিত্যের অনেক নতুন বিষয় এই বিভাগের মাধ্যমেই প্রথম অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে পাঠক্রমভুক্ত হয়। বিশেষভাবে বলা যায় প্রাচীন সাহিত্যের কথা। ১৯২১ সালে বাংলা অনার্স শ্রেণির জন্য পাঠ্য বিষয়ে যখন বৌদ্ধগান অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখনও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পাঠ্য হয়নি। ১৯৩৭ সালে বাংলা বিভাগ ও সংস্কৃত বিভাগ আলাদা হয়ে যায়। স্বতন্ত্র বিভাগ হবার পর বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। সে-হিসেবে তিনিই স্বতন্ত্র বাংলা বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ। তাঁর অধ্যক্ষতায় ১৯৩৭ সালে বাংলা বিভাগে বাংলায় বিএ অনার্স ও এমএ কোর্স চালু হয়। তুলনাসূত্রে উল্লেখ্য, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও বাংলায় অনার্স চালু করেনি; এমনকি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে) বাংলায় সরাসরি এমএ ডিগ্রির ব্যবস্থা ছিল না। ১৯৫০ সালে আবারও দুই বিভাগ একীভূত হয়ে গঠিত হয় ‘বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগ’। বোঝা যায় বাংলা এ-বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছে। পঠন-পাঠনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।

 

উনিশ শতকের শুরুতে বাংলা ভাষার উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলা ভাষার ওপর সংস্কৃতের আধিপত্য ও আরোপণের বিপরীতে চল্লিশের দশকে পাকিস্তান আন্দোলনের জোয়ারে সাহিত্যিক বাংলা ভাষার এক ধরনের পরিবর্তন ঘটে। ‘বাংলাদেশের বাংলা’র আলাদা চারিত্র্য তখন থেকে দৃশ্যমান হতে দেখা যায়। বাংলা বিভাগেও এর প্রভাব পড়ে। ১৯৭০ সালে বাংলা ও সংস্কৃত আলাদা বিভাগে পরিণত হয়। সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলা বিভাগ স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। জ্ঞানবিদ্যা-শিক্ষা-পঠন-পাঠন এবং বাংলাদেশ জনাঞ্চলের সমাজ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে বাংলা বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। রাষ্ট্রভাষা-প্রশ্নে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র বাংলার প্রতি স্পষ্ট সমর্থন (১৯৪৮), ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে বিভাগের শিক্ষকশিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, পাকিস্তানি সামরিকতন্ত্রের যুগে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন (১৯৬১), সপ্তাহব্যাপী সাড়াজাগানিয়া ‘ভাষা ও সাহিত্য সপ্তাহ’ আয়োজন (১৯৬৩), সাড়ম্বরে পহেলা বৈশাখ পালন (১৯৬৪), ‘রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি’ (১৯৬৭), ‘বাংলা ভাষা সংস্কার’-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দীপ্র অবস্থান, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনজন শিক্ষক ও চার জন শিক্ষার্থীর জীবনবিসর্জন, স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যে-কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে বিভাগের সম্মিলিত অবস্থান — ইত্যাদি ঘটনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় বাংলা বিভাগের সমান্তরালতাকে নির্দেশ করে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাপর জ্ঞান-শৃঙ্খলার মতো বাংলা বিভাগ সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে তার পাঠক্রম তৈরি করেছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপযোগিতার ভিত্তিতে এর পরিমার্জন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সর্বাগ্রে যে বিষয়টি জড়িত তা হলো — গবেষণা — উচ্চতর গবেষণা। বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আদি বিভাগ হিসেবে, জ্ঞানকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শুরু থেকেই একটি গবেষণাভিত্তিক বিভাগ হিসেবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে। ১৯৫৭ সাল থেকে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের (১৯১৯-১৯৬৯) উদ্যোগে ও সম্পাদনায় বাংলা বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয় গবেষণামূলক পত্রিকা ‘সাহিত্য পত্রিকা’। এই পত্রিকা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে বাংলা ভাষার প্রথম উচ্চতর গবেষণামূলক পত্রিকা হিসেবে বিবেচিত হয়। ‘সাহিত্য পত্রিকা’ বাংলা বিভাগ থেকে এখনও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।

 

ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দ্বারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিচিত্র বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ-বই রচিত হয়েছে। সৃষ্টিশীল সাহিত্যরচনাতেও বাংলা বিভাগের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু এ-কথা অবশ্য স্বীকার্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার অ্যাকাডেমিক মান নির্ধারণ ও স্বীকৃতির জন্য গবেষণা-ডিগ্রির সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সার্বিক গবেষণা কার্যক্রমে এটি বহিস্থ ব্যাপার হলেও শিক্ষাকাঠামোতে এর বিশেষ মূল্য আছে। বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি ও জাতীয় গুরুত্বকে বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা ডিগ্রি তথা পিএইচডি ও এমফিল গবেষণাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে। বিশেষত, বাংলাদেশ বাংলাভাষা ভিত্তিক জাতিতাত্ত্বিক রাষ্ট্র হবার কারণে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণার প্রধান দায়িত্ব বর্তায় বাংলা বিভাগের ওপরই — বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ওপর। এই বিভাগ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিচিত্র বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার বিশ্বজনীন ও কেন্দ্রীয় দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে। স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্তি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ বিধি অনুযায়ী একজন গবেষক চার বছর মেয়াদী পিএইচডি বা দুই বছর মেয়াদী এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারে।

শুরুর কথা

বাংলা বিভাগে পিএইচডি কার্যক্রম শুরু হয় প্রথমত ও প্রধানত বাংলা বিভাগের খ্যাতিমান শিক্ষক ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের উৎসাহ ও নির্দেশনায়। তাঁর গবেষণা-তত্ত্বাবধানে ১৯৫৯ সালে ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’ শীর্ষক শিরোনামে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন নীলিমা ইব্রাহিম (১৯২১-২০০২)। সে-হিসেবে নীলিমা ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত গবেষক। পরবর্তীকালে তিনি বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা বিভাগ থেকে ছয় জন পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।

 

স্বাধীনতার পর পিএইচডি গবেষণার ক্ষেত্র, পরিধি, সংখ্যা সবই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলা বিভাগের পিএইচডি গবেষণা প্রায় সবই বাংলা ভাষাতেই সম্পন্ন হয়েছে (দুটি ব্যতীত)। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার ও মর্যাদা প্রদান করার ক্ষেত্রে এ-বিষয়টি দিকচিহ্ন হিসেবে বিবেচ্য। বাংলা বিভাগে এমফিল কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৭ সাল থেকে; এবং ১৯৭৯ সালে দুইজন গবেষক এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়েছেন প্রায় দুইশত গবেষক এবং ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এমফিল ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়েছেন প্রায় সার্ধশত গবেষক। এঁদের মধ্যে অনেক এমফিল গবেষক পরবর্তীকালে পিএইচডি গবেষণাও করেছেন। এ-পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলা বিভাগের পিএইচডি গবেষণায় সর্বাধিক সংখ্যক গবেষণার তত্ত্বাবধান করেছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (১৯৩৬-২০০৮)। ডিগ্রিপ্রাপ্তির পর অনেক অভিসন্দর্ভ পরবর্তীকালে বিভিন্ন সররকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকাশনা সংস্থা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময়ে মূল অভিসন্দর্ভ থেকে শিরোনাম-বিষয়সূচি ও মূল অংশের কিঞ্চিৎ পরিমার্জনা ঘটেছে এবং গবেষকদের লেখক-নাম ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমান প্রবন্ধে গবেষকদের প্রাতিষ্ঠানিক নাম এবং গবেষণা-শিরোনামের ক্ষেত্রে অভিসন্দর্ভে মুদ্রিত রূপটি গ্রহণ করা হয়েছে।

পিএইচডি গবেষণার বাইরে ষাটের দশকে রবীন্দ্রচর্চা হয়েছে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে। কিন্তু ওই কালপর্বে বাংলা বিভাগ থেকে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে কোনো পিএইচডি গবেষণা হয়নি।

গবেষণা-পদ্ধতি

উচ্চতর গবেষণা মূলত সত্য অনুসন্ধান ও নবতর জ্ঞানের উন্মোচনের জন্য অনুসৃত সুশৃঙ্খল পদ্ধতি। ভাষা ও সাহিত্য সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রেও এ-কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। তথ্য ও তত্ত্ব — উভয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গবেষণা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কিছু নিয়ম-বিধি মান্য করা হয়। গবেষণা পরিচালনা করার আগে একজন গবেষণা-তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন করতে হয়, যিনি গবেষণার পুরো সময় গবেষণা বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন। গবেষণার শুরুতেই একজন গবেষককে একটি সুনির্দিষ্ট শিরোনাম নির্ধারণ ও গবেষণার রূপরেখা বা প্রস্তাব তৈরি করতে হয়। এই রূপরেখার মধ্যে উল্লেখ থাকে — ভূমিকা বা প্রস্তাবনা, গবেষণার উদ্দেশ্য, গবেষণার পরিধি, গবেষণা-পদ্ধতি, প্রকল্পিত গবেষণা-অভিসন্দর্ভের গঠন-পরিকল্পনা বা অধ্যায়-বিভাজন, প্রাথমিক উৎসের গ্রন্থতালিকা, দ্বৈতীয়িক বা মাধ্যমিক উৎসের গ্রন্থতালিকা ইত্যাদি। গবেষকমাত্রই বিভিন্ন গবেষণা-পদ্ধতি যেমন — বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি, পাঠ-মূল্যায়নধর্মী পদ্ধতি, বর্ণনামূলক পদ্ধতি, তুলনামূলক পদ্ধতি, ঐতিহাসিক পদ্ধতি, নন্দনতাত্ত্বিক পদ্ধতি, সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতি, তত্ত্ব-প্রয়োগমূলক পদ্ধতি, দালিলিক পদ্ধতি, ক্ষেত্র-সমীক্ষা পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত থাকেন। একটি গবেষণাকর্মে এসব পদ্ধতির এক বা একাধিক অনুসৃত হতে পারে।

 

বাংলা বিভাগের উচ্চতর গবেষণার প্রথম পর্বে (পাকিস্তান আমলে) ঐতিহাসিক পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষকদের মূল লক্ষ্য ছিল ঐতিহ্য-অনুসন্ধান। ষাটের দশকের গবেষণায় তাঁরা বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা সাহিত্যের বিশেষ কিছু দিক মূল্যায়ন করতে চেয়েছেন। লোকসাহিত্য বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে ক্ষেত্র-সমীক্ষা পদ্ধতি বেশি ক্রিয়াশীল থেকেছে। কবিতা-কথাসাহিত্য-নাটক-প্রবন্ধ প্রভৃতি সাহিত্যের গবেষণায় বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি ও পাঠ-মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে। তবে বেশির ভাগ গবেষাণায় বর্ণনামূলক পদ্ধতির অনুসৃতি দেখা যায়। তত্ত্ব-প্রয়োগমূলক পদ্ধতির ব্যবহার সীমিত। বাংলা বিভাগ থেকে সম্পাদিত গবেষণাসমূহের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় — মূল গবেষণায় বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসৃত হলেও কোন উদ্দেশ্যে কোন গবেষণা-পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

গবেষণার প্রবণতা

গবেষণা-প্রবণতা বোঝার সুবিধার্থে বাংলা বিভাগ থেকে সম্পন্ন গবেষণাসমূহকে তিনটি কালপর্যায়ে বিভক্ত করা যায় — এক. একাত্তর-পূর্ব পর্যায় (পাকিস্তান শাসনামল); দুই. একাত্তর-পরবর্তী পর্যায় (বিশ শতকের বাংলাদেশ : ১৯৭১-২০০০) এবং তিন. একুশ শতক (২০০১-২০২০)। পাকিস্তানি শাসনামলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা ছিল মূলত পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির বিপরীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রকাশ হিসেবে। গবেষণার ক্ষেত্রেও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ ছিল সংকীর্ণ। বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এবং আপাত কৌশল অবলম্বন করে বাংলা বিভাগের গবেষকগণ শেষ পর্যন্ত ছিলেন সত্যসন্ধ। ওই কালপর্বের উচ্চতর গবেষণার প্রধান প্রবণতা — মুসলিম ঐতিহ্য-সন্ধান, বাংলা সাহিত্যচর্চার ইতিহাসে মুসলিম কীর্তি-অন্বেষণ। এবং এর ভেতর দিয়েও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে উদারনৈতিক ও মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সাহিত্য-বিশ্লেষণ এ-কালের গবেষণার অন্যতম দিক। তবে সাহিত্যগবেষণায় মুসলিম অবদান অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাকে কেবল পাকিস্তানায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা যাবে না। পাকিস্তানি শাসন এ-ধরনের চিন্তনক্রিয়ার একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছিল ঠিক; কিন্তু বাংলা সাহিত্যে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অবদান যেখানে ছিল অনেকটাই অনালোচিত ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্বীকৃত, সেখানে এ-ধরনের গবেষণার ফলে সেই অপরিচয়ের দূরত্ব অবসিত হতে থাকে। পাকিস্তানপর্বে রবীন্দ্রসাহিত্য-গবেষণায় কালের বৈরিতা অতিক্রমণের চেষ্টা করতে হয়েছে গবেষকদের।

 

পিএইচডি গবেষণার বাইরে ষাটের দশকে রবীন্দ্রচর্চা হয়েছে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে। কিন্তু ওই কালপর্বে বাংলা বিভাগ থেকে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে কোনো পিএইচডি গবেষণা হয়নি। ১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে গবেষকদের মুক্ত ও স্বাধীনভাবে গবেষণার সুযোগ তৈরি হয়। অনেকেই সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উৎকৃষ্ট গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। আবার অনেক গবেষণাই হয়েছে বিবরণধর্মী; বিশ্লেষণধর্মী নয়। দ্বিতীয় পর্বের গবেষণার প্রধান প্রবণতা ছিল আধুনিক চিন্তা ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে উনিশ ও বিশ শতকের প্রধান প্রধান ধারার সাহিত্যবিচার। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা যেমন — কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, লোকসাহিত্য প্রভৃতির ভেতর থেকে আবহমান বাঙালির সমাজ-রাজনীতি ও জীবনায়ন অনুসন্ধান এই কালের গবেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এছাড়া সাহিত্যের অভ্যন্তরীণ শিল্পমূল্য নিরূপণেও গবেষকদের আগ্রহ লক্ষ করা যায়। শিল্পমূল্য নিরূপণে বিশ শতকের প্রথমার্ধের তত্ত্ব-মতবাদগুলো বেশি ক্রিয়াশীল থেকেছে, সমকালীন তত্ত্ব-মতবাদের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ সে-তুলনায় কম দেখা যায়। প্রথম প্রজন্মের কাজ হিসেবে সেগুলোর মূল্য আছে।

 

এই কালপর্বের গবেষণার আরেকটি দিক হলো সৃজনশীল ও মননশীল ধারার কৃতী সাহিত্যিকদের জীবন ও কর্মের মূল্যায়ন। এই ধরনের গবেষণার মধ্য দিয়ে একজন সাহিত্যিক, চিন্তক বা মনীষী সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা প্রদানের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। সত্তর ও আশির দশকের বেশিরভাগ গবেষণায় সাহিত্যের সংখ্যাগত ও কালগত পরিধি ছিল বিস্তৃত। ফলে গবেষণা হয়েছে সামূহিক দৃষ্টিকোণ থেকে। নব্বইয়ের দশক থেকে গবেষণায় সূক্ষ্মতর দৃষ্টিকোণের প্রাধান্য দেখা যায়। নব্বইয়ের দশকের আরেকটি প্রবণতা হলো — বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা। এ-বিষয়ে পৃথক অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হবে। বিশ শতকের বাংলাদেশ-পর্বে রবীন্দ্রসাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে গবেষণা হয়েছে; কিছু কাজ সমাদৃত হয়েছে, তবে সংখ্যার দিক থেকে কম। আশির দশকে মধ্যযুগ নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই ধারার গবেষণা ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে যাত্রা করেছে। লোকসাহিত্য বিষয়ক গবেষণার সমৃদ্ধ পর্যায়ও এই কালপর্ব।

 

একুশ শতকের বাংলাদেশের গবেষণায় পূর্ববর্তী কালেরই অনুসৃতি দেখা যায়। গবেষণার পরিমাণগত দিক বৃদ্ধি পেলেও গুণগত দিক নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে স্বল্প পরিমাণে হলেও মতবাদ-ভিত্তিক গবেষণা এই কালপর্বে সম্পন্ন হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলা সাহিত্য বা বাংলাদেশের সাহিত্যের সামগ্রিক মূল্যায়ন নয়, বরং বিশেষ প্রবণতার নিরিখে সাহিত্যের বিচারবিশ্লেষণ একুশ শতকের উচ্চতর গবেষণার অন্যতম প্রবণতা। কোনো একক সাহিত্যিকের সামগ্রিক সাহিত্য মূল্যায়নের চেয়ে এক বা একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ দিক অনুসন্ধান, নিরীক্ষা-প্রবণতা বর্তমান কালের গবেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। একুশ শতকে নজরুলসাহিত্য বিষয়ে গবেষণার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়েও গবেষণা সংখ্যাগত দিক থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল ভাষা ও সাহিত্য নয়, সাহিত্যের বাইরেও বাংলা বিভাগ থেকে পারফরমেন্স আর্ট, ঐতিহাসিক তথ্য অনুন্ধান, সমাজতত্ত্ব-নৃতত্ত্ব, ভাষাবিজ্ঞান, শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ের মতো অনেক বিচিত্র বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে এই কালপর্বে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ, নতুন নতুন তত্ত্ব ও মতবাদের বিকাশ, ভাষা ও সাহিত্যের আন্তর্জাতিকায়নের ফলে একুশ শতকের গবেষণার প্রবণতা একমুখী নয়। বহুমুখ-প্রবণতা একুশ শতকের উচ্চতর গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা

প্রাচীন বঙ্গ জনপদ থেকে নানা ঘটনার অনুষঙ্গে কালের যাত্রায় বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বাংলাদেশ একই সঙ্গে একটি জাতিতাত্ত্বিক রাষ্ট্র। বাংলাদেশে বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে অনিবার্যভাবে সংযুক্ত আছে বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য। এই জনাঞ্চলের ভূগোল সুদূর অতীত থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ছিল অনুকূল। জলবায়ু ও জীবনযাপন পদ্ধতির আভ্যন্তর উদারতার মধ্যে বিকশিত হতে পেরেছিল বাংলার মতো একটি প্রাকৃত ভাষা। বাংলা সাহিত্যচর্চা ও পরবর্তীকালে গবেষণার উর্বর ভূমি এই বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে বাংলাদেশ চিহ্নিত হলেও ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই অঞ্চলের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় চিহ্নিত হতে থাকে। শুধু তা-ই নয় বাংলাদেশ অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য পাওয়া যাবে প্রাচীন জনপদের চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য থেকেও। এই ভৌগোলিক অঞ্চলেই রচিত ও বিকশিত হয়েছে প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন সাহিত্য। লোকসাহিত্যের অনেক সমৃদ্ধ ভান্ডার বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্মাণে বাংলাদেশের সৃজনশীল সাহিত্যিক, কবি ও প্রাবন্ধিকগণ নিজ নিজ সৃজনক্ষেত্রে উজ্জ্বল অবদান রেখেছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন পর্যন্ত উচ্চতর গবেষণায় বাংলাদেশের সাহিত্য ছিল উপেক্ষিত।

 

একটা সময় পর্যন্ত সাহিত্য-গবেষণার দিক ছিল পশ্চিমবঙ্গ-কলকাতামুখী। অথচ এখন পর্যন্ত উচ্চতর গবেষণায় বাংলাদেশ অনেকটা অপরিচিত ও অনাদৃত পশ্চিমবঙ্গ-কলকাতার অ্যাকাডেমিক পরিমণ্ডলে। বাংলাদেশের সাহিত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্মাণের যোগ প্রত্যক্ষ। এ-দেশের স্বকীয় রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক চেতনাসমূহকে ধারণ করেই বাংলাদেশের সাহিত্যের চারিত্র্যের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা সেই স্বজাত্যবোধ ও স্বসংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতাকে চিহ্নিত করে। নব্বইয়ের দশক থেকে গবেষকদের মধ্যে বাংলাদেশের ভাষা-সাহিত্যসংস্কৃতিসহ আরও বিচিত্র বিষয়ে গবেষণার আগ্রহ দেখা যায়।

 

স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পূর্তি, গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ক গবেষণায় গবেষকদের আগ্রহের প্রভাবক হয়ে থাকতে পারে। এ-ক্ষেত্রে বাংলা বিভাগের উচ্চতর গবেষণা পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলা বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করতে গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং তত্ত্বাবধান করেছেন। এই ধারা পরবর্তীকালে আরও গতিলাভ করেছে, এখনও অব্যহত আছে। গবেষণার শিরোনামে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাহিত্য সবিশেষ স্থান করে নিয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাঠ থেকে স্বভূমি-স্বজাতি-স্বসমাজ সম্পর্কে অনুধ্যান, এসম্পর্কিত নতুনতর ধারণার আবিষ্কার ও নির্মাণ এবং বিশ্বপরিসরে বাংলাদেশের সাহিত্যকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ-ধরনের গবেষণার গুরুত্ব অনেক। বাংলা বিভাগ থেকে সম্পাদিত বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কিত অধিক সংখ্যক গবেষণা সেই ইতিবাচকতার প্রমাণ। প্রবন্ধের শেষাংশে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট শিরোনামযুক্ত গবেষণার একটি তালিকা ডিগ্রিপ্রাপ্তির কালানুক্রমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

বর্তমান প্রবন্ধের তথ্যসূত্র প্রসঙ্গে বর্তমান প্রবন্ধে উপস্থাপিত গবেষণা শিরোনাম-গবেষকের নাম-তত্ত্বাবধায়কের নাম-ডিগ্রিপ্রাপ্তির সন — এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে সংরক্ষিত নথি থেকে। বিষয়সূচির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে প্রধানত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রক্ষিত পিএইচডি ও এমফিলের অভিসন্দর্ভ-সংরক্ষণাগার (Rare Section) থেকে; এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের Dhaka University Institutional Repository অংশ থেকে। উল্লেখ্য, এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য বাংলা বিভাগ থেকে সম্পাদিত সামগ্রিক গবেষণার পরিচিতি ও প্রবণতা উপস্থাপন। বর্তমান প্রবন্ধের আলোচনা পিএইচডি ও এমফিল গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

 

এর বাইরেও বাংলা বিভাগের উচ্চতর গবেষণার একটি বিস্তৃত জগৎ রয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষকচেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলা সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা গ্রন্থে ওই সময়পর্ব পর্যন্ত (১৯৭৮) পিএইচডিসহ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। এ-আলোচনায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তৎকালীন বাংলাদেশের আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় — রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের উচ্চতর গবেষণার নানা দিক, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয় তুলে ধরেছেন। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান রচিত আরও একটি গ্রন্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা-বিভাগের ইতিহাস (১৯২১-২০০১) বর্তমান নিবন্ধের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে সহায়তা করেছে। অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী (জ. ১৯৫৯) রচিত বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য গ্রন্থের একটি প্রবন্ধে পিএইচডি-এমফিল গবেষণা ছাড়াও বিশ শতকের বাংলাদেশের সাহিত্য-গবেষণার বিশদ বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। এছাড়াও বাংলা বিভাগের উচ্চতর গবেষণার ইতিহাস, প্রবণতা ও গুরুত্ব বুঝতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (১৯৩৭-২০২০) রচিত ‘বাংলা বিভাগের কথা’ (শতবর্ষের পথে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা অ্যালামনাই, ঢাকা, নভেম্বর ২০১৯) প্রবন্ধটি।

 

বর্তমান প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের পিএইচডি ও এমফিল গবেষণার বিষয়ভিত্তিক পরিচিতি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আশা করা যায় — অতীতের গবেষণাকর্মের গতিপ্রকৃতি ও প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে; একই সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিচিত্র ও নতুনতর বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার ভবিষ্যত উজ্জ্বলতর হবে। এখানে শুরু থেকে বর্তমান (জানুয়ারি ২০২১) পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে সম্পন্ন পিএইচডি ও এমফিল গবেষকদের নাম ও ডিগ্রিপ্রাপ্তির সন-সহ গবেষণার বিষয়ভিত্তিক পরিচিতি উপস্থাপন করা হলো।

কবিতা বিষয়ক পিএইচডি

কবিতা বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধতম ক্ষেত্র। কবিতা বিষয়ক গবেষণা বরাবরই গবেষকদের অন্যতম আগ্রহের জায়গা। বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত যুগবিভাগে ‘আধুনিক’ বলে চিহ্নিত সময়ে রচিত কবিতা, কাব্যচর্চার ধারা-কাব্যপ্রকরণ ও কাব্যসাহিত্যে সমাজরাজনীতির স্বরূপ-সন্ধান কবিতাবিষয়ক পিএইচডি গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের কাব্য গবেষণার বড় জায়গা জুড়ে আছে। সে বিষয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করা হবে। কিন্তু কিছুটা বিস্ময় জাগায় — এখন পর্যন্ত মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা বা কাব্য-সাহিত্য নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে বাংলা বিভাগ থেকে একটিও পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন হয়নি। এ-তালিকায় আরও যুক্ত করা যায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বিহারীলাল চক্রবর্তীসহ উনিশ শতকের আরও অনেক কবি ও তাঁদের কাব্যকৃতিকে। বাংলা কবিতা নিয়ে প্রথম পিএইচডি : মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক (১৮৫৭-১৯২০) (১৯৬৯)। এখানে উনিশ ও বিশ শতকের ১৫ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী কবি ও ১৩ জন মুসিলম ধর্মাবলম্বী কবির কবিতায় হিন্দু-মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের জীবনায়ন অনুসন্ধান করা হয়েছে। উল্লেখ্য পাকিস্তানপর্বে গবেষণার এরূপ শিরোনাম অস্বাভাবিক নয়। তবে গবেষক অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে এই গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। মোঃ সাঈদ-উর রহমান, পূর্ব বাঙলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও সমকালীন কবিতা (১৯৭৯) — এই গবেষণার পটভূমি ব্যাপক ও বিশাল। এগারোটি অধ্যায়ের মধ্যে প্রধান দশ অধ্যায়ে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের দশটি পর্যায়ের অনুপুঙ্খ ও দালিলিক উপস্থাপনা আছে এই গবেষণায়। শুরু হয়েছে চল্লিশের দশকের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে। প্রতিটি অধ্যায়ের প্রথম অংশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনাপ্রবাহ বড় জায়গা জুড়ে আছে; দ্বিতীয় অংশে উক্ত সময়পর্বে রচিত ও প্রকাশিত কবিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও কবিতার প্রবণতা নির্ধারণে তৎকালীন রাজনীতি ও সংস্কৃতির সংশ্লিষ্টতা অনুধাবন করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। সামগ্রিক বাংলা কবিতা নিয়ে কাজ : মাহবুবা সিদ্দিকা, আধুনিক বাংলা কবিতায় সমাজসচেতনতা (১৮৯৯-১৯৪৮) (১৯৮৯); বেলু রানী বড়ুয়া, আধুনিক বাংলা কবিতায় বুদ্ধপ্রসঙ্গ (২০০৮)।

 

বিশ শতকের তিরিশের দশকে আধুনিকতাবাদী বলে পরিচিত কবিদের জীবনকবিচৈতন্য ও কাব্যকৃতি নিয়ে স্বতন্ত্র কয়েকটি কাজ সম্পন্ন হয়েছে : বেগম আকতার কামাল, বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য (১৯৯০); সিদ্দিকা মাহমুদা, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিমানস ও কাব্য (১৯৯০); মোঃ নুরুল আমিন খান, বুদ্ধদেব বসুর কবিতা : বিষয় ও প্রকরণ (১৯৯০)। এখন পর্যন্ত এই গবেষণাকর্মগুলো একক কবির কবিতা বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার পথিকৃৎ। কবি কায়কোবাদকে নিয়ে একমাত্র গবেষণা : ফাতেমা কাওসার, কায়কোবাদ : কবি ও কবিতা (১৯৯৬)। কবি জসীমউদ্দীন নিয়ে কয়েকটি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে : সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, জসীমউদ্দীন : কবিমানস ও কাব্যসাধনা (১৯৮১); সেলিমা খালেক, জসীমউদ্দীনের কবিতা : অলংকার ও চিত্রকল্প (১৯৯১); বিমল কান্তি গুহ, জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ ও বিষ্ণু দে-র কবিতায় লোকজ উপাদানের ব্যবহার (১৯৯৭)। তিরিশের কবিতা দিয়ে দশকওয়ারী কবিতা বিষয়ক গবেষণা শুরু হয়।

 

তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশক পর্যন্ত আলাদাভাবে গবেষণা সম্পাদিত হয়েছে : মোঃ আসগর আলী সরকার, তিরিশোত্তর বাংলা কবিতা : শিল্পরূপ বিচার (১৯৯০); এ. কে.এম. মাসুদ রাজা, ত্রিশোত্তর পাঁচজন কবির অধ্যাত্মচেতনা (জীবনানন্দ দাশ,অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু এবং বিষ্ণু দে) (২০০৫); মোহাম্মদ গোলাম মাওলা, চল্লিশের (১৯৪১-১৯৫০) কবিতায় সাম্যবাদী চেতনার রূপায়ণ (২০০৫); মোঃ বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, বাংলাদেশের ষাটের দশকের কবিতা : বিষয় ও প্রকরণ (২০০৮); মোহাম্মদ রেজাউল করিম তালুকদার, চল্লিশের দশকের চারজন কবির কবিতা : বিষয় ও প্রকরণ [আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান] (২০১৪); মোহাম্মদ কুদরত-ই-হুদা, ষাটের দশকে জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিকাশ ও বাংলাদেশের কবিতা (১৯৬১-১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ) (২০১৮); তৌহিদুল ইসলাম, বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের বাংলাদেশের কবি ও কবিতা (২০১৯)।

 

উল্লেখ্য তিরিশ ও চল্লিশের দশকের কবিতা-গবেষণায় পশ্চিমবঙ্গের কবিতার প্রাধান্য এবং পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের কবিতা — কবিতায় স্বাদেশিকতা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও কবিতার ভৌগোলিক স্বাতন্ত্র্য। বাংলাদেশের কবিতা বিষয়ে প্রথম কবিতার নিবিড়-পাঠভিত্তিক গবেষণা করেন বায়তুল্লাহ্ কাদেরী। ষাটের দশকের কবিতার আলোচনার সূত্রে বিশ্লেষিত হয়েছে প্রাক্-ষাটের দশকের বাংলাদেশের কবিতার প্রবণতা ও বৈশিষ্ট্য। মূলত নন্দনতাত্ত্বিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এই গবেষণায় কবিতার মূল্যায়ন করা হয়েছে। আরেকটি গবেষণায় ষাটের দশকের কবিতার ধারা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণার নবতর মূল্যায়ন করেছেন মোহাম্মদ কুদরত-ই-হুদা। পূর্বে উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকের পর থেকে বাংলাদেশের সাহিত্য গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

 

কবিতাগবেষণার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের কবিতা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু গবেষণাকর্ম : দিলারা হাফিজ, বাংলাদেশের কবিতায় ব্যক্তি ও মানুষ (১৯৯৮); মোঃ নুরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশের কবিতায় লোকজ উপাদানের ব্যবহার (১৯৪৭-১৯৯০) (২০০২); মোঃ আনোয়ার হোসেন ভূইয়া, বাংলাদেশের কবিতায় লোকসংস্কৃতি (১৯৪৭-১৯৯৬) (২০০২); মোঃ আমিনুল ইসলাম সরকার, বাংলাদেশের পাঁচজন কবির কবিতায় চিত্রকল্পের ব্যবহার (২০০৫); কে. এম. শাহাবুদ্দিন, বাংলাদেশের কবিতা : উত্তরাধিকার ও নতুন অর্জন (উনিশ শ সাতচল্লিশ থেকে সমকাল পর্যন্ত) (২০১৩); রওশন আরা, বাংলাদেশের কবিতায় স্বদেশচেতনার প্রকৃতি ও রূপান্তর (১৯৪৭-২০০০) (২০১৩)। বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে এককভবে কাজ হয়েছে কেবল শামসুর রাহমানকে নিয়ে : নূরুন্নাহার ফয়জের নেছা, শামসুর রাহমানের কবিতা : বিষয় ও প্রকরণ (২০১২); তারানা নুপুর, শামসুর রাহমানের কবিতার নান্দনিকতা (২০১৮)। সংগীত-গানে কাব্যমূল্য নিরূপণ বিষয়ক কিছু কাজ হয়েছে : খান আসাদ্জ্জুামান, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এর গানের কাব্যমূল্য (২০১৫); মোঃ শফিউল ইসলাম, লালন শাহের গান : তত্ত্ব-দর্শন ও শিল্পরূপ (২০১৫)।

কবিতা বিষয়ক এমফিল

বাংলা বিভাগ থেকে কবিতা বিষয়ে এমফিল গবেষণার ক্ষেত্রে কবিতায় রাজনীতির অনুসন্ধান একটি দিক : নাফিসা সাঈদ, বাংলা কাব্যে রাজনৈতিক চেতনা : সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা (১৯৮৬); নিতাই কান্তি দাস, পাকিস্তান আন্দোলন ও বাংলা কবিতা (১৯৯০)। এছাড়া গবেষণার মধ্য দিয়ে কবিতার বিষয়বৈচিত্র্য ও শিল্পবৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান আরেকটি দিক। গবেষণার এই দিকটি প্রথাগত। যদিও এই ধরনের গবেষণার মধ্য দিয়ে কবিতা ও কাব্যচর্চা সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা পাওয়া যায় : নাসিমা চৌধুরী, রামেশ্বর ভট্টাচার্যের কাব্যে অলংকার ব্যবহার (১৯৯৫); মিল্টন বিশ্বাস, জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসুর কাব্যচিন্তা (১৯৯৯); মোহাম্মদ রেজাউল করিম তালুকদার, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় শিল্পপ্রকরণ (২০০৮); জান্নাতুল ফেরদৌস, জসীমউদ্দীনের কাহিনী কাব্যের বিষয় ও প্রকরণ বৈশিষ্ট্য (২০১১); মোঃ ইসমাইল হোসেন সাদী, আহসান হাবীবের কবিতা : শিল্পীচৈতন্য ও কাব্যরূপ (২০১৩)।

নাটক বিষয়ক পিএইচডি

বাংলা নাটক নিয়ে প্রথম পিএচিডি গবেষণা : নীলিমা ইব্রাহিম, সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক (১৯৫৯)। পূর্বে উল্লেখ্য এটি বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম পিএইচডি গবেষণা। এই গবেষণায় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রচিত বাংলা নাটকে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক সমস্যা, ইংরেজি শিক্ষার প্রভাব ও জাতীয়তাবাদ প্রচারমূলক বিষয়সমূহ উদ্ঘাটন করার মধ্য দিয়ে সেই কালের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্যকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। উনিশ শতকের নাটক নিয়ে আরও একটি কাজ : ফেরদৌসী খান, উনিশ শতকের বাংলা নাটকে সমাজ জিজ্ঞাসা (২০০৮)। সাতচল্লিশ পরবর্তী বাংলাদেশের নাটক নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা : সুকুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের নাট্যচর্চা ও নাটকের ধারা (১৯৪৭-১৯৭৩) (১৯৮৬); সৈয়দা খালেদা জাহান, বাংলাদেশের নাটকে রাজনীতি ও সমাজ সচেতনতা (১৯৫২-১৯৭২) (২০০২)। একাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশে নাট্যসাহিত্য এগিয়েছে অনেক দূর। বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাকরণিক বৈচিত্র্য এবং কলেবরও। নাটক বিষয়ক গবেষণা পাঠের সাহিত্য থেকে উপস্থাপনা-শিল্পের দিকে এগিয়েছে। এ-বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা : সৈয়দ জামিল আহমেদ, Indigenous Theatrical Performance in Bangladesh : Its History and Practice (১৯৯৭)। এই গবেষণায় বাংলা নাটকের উপস্থাপনা শিল্পের প্রায় সবগুলো শাখা বিশ্লেষিত হয়েছে।

 

বাংলাদেশের নাটকে মঞ্চ-সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে কয়েকটি কাজ হয়েছে : মোজাহারুল আলম সেলিম, স্বাধীনতা উত্তর ঢাকাকেন্দ্রিক মঞ্চনাটকে রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা (১৯৭২-২০০০) (২০০৫); মোঃ আহমেদুল কবির, নাট্য-নির্দেশনার পঞ্চ-সূত্র : প্রসঙ্গ বাংলাদেশের চারজন পরিচালকের নির্দেশনাকৌশল (২০১৭)। বাংলাদেশের নাটকে ঐতিহ্যিক ও প্রান্তিক পর্যায়ে নাট্যচর্চা নিয়ে গবেষণাকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : মোঃ শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য : বিষয় ও ভাষারীতি (২০১৬); মোঃ সাইদুর রহমান, বাংলাদেশের জাতিতাত্ত্বিক নাট্যকলা : মারমা, মনিপুরী ও গারো নাট্য-নিরীক্ষা (২০১৭)। একক নাট্যকারের নাটক নিয়ে কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ময়না তালুকদার, মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাটকে সংস্কৃত নাটক ও নাট্যতত্ত্বের প্রভাব (২০১০); সামসুন নাহার, সমকালীন বাংলা নাট্যধারায় উৎপল দত্তের নাটকের বিশিষ্টতা ও স্বাতন্ত্র্য (২০১৫); শিল্পী খানম, সেলিম আল দীনরে নাটকের বিষয়বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক নিরীক্ষা (২০১৭)। যাত্রা বিষয়ক একমাত্র কাজ : মার্জিয়া আক্তার, বাংলাদেশের যাত্রা : বিবর্তনের রূপরেখা (২০১৭)।

নাটক বিষয়ক এমফিল

নাটক বিষয়ে এমফিল গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের নাটক-বিচার : রেহানা হোসেন আখতার, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নাটক (১৯৪৭-১৯৯০) (২০০০); বিদ্যুৎ সরকার, বাংলাদেশের নাটকে নিম্ববর্গের জীবন (১৯৭২-২০০৭) (২০১৪)। একক নাট্যকারের কোনো বিশেষ প্রবণতা বা সার্বিক মূল্যানধর্মী কাজও হয়েছে : তারানা নুপুর, বুদ্ধদেব বসুর মিথ-অবলম্বী কাব্যনাটকের ভাবাদর্শ ও শৈলীবিচার (২০১১); খাদিজা আক্তার, বাংলা নাটকে মন্মথ রায় (২০১৪); মীর হুমায়ুন কবীর, আনিস চৌধুরীর নাটক : জীবন ও শিল্প (২০১৫)। বাংলাদেশের যাত্রাপালা নিয়ে একমাত্র এমফিল গবেষণা : মোঃ মিয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে যাত্রাপালা (২০২০)।

কথাসাহিত্য বিষয়ক পিএইচডি

কথাসাহিত্যের অথবা এক বা একাধিক কথাসাহিত্যিকের কোনো প্রবণতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কথাসাহিত্য নিয়ে গবেষণাকর্ম সম্পন্ন হয়েছে : মাহমুদ উল আলম, বাংলা কথাসাহিত্যে যুদ্ধজীবন (১৮৬৫-১৯৪৭) (১৯৯৮); মোহাঃ মোকবুল হোসেন, বাংলাদেশের কথাসাহিত্য উত্তরবঙ্গের সমাজ ও ভাষা (২০০৪)। প্রবণতাভিত্তিক একক কথাসাহিত্যিক নিয়ে কাজ : মোঃ আশরাফুল ইসলাম, শামসুদদীন আবুল কালামের কথাসাহিত্যে নিম্নবর্গ ও মধ্যশ্রেণীর জীবন-রূপায়ণ (২০০৮); মো. আবদুস সোবহান তালুকদার, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্যে ফ্রয়েডের প্রভাব (২০১১); হোসনে আরা, মহাশ্বেতা দেবীর কথাসাহিত্যে আদিবাসী জীবন (২০১৬)। একাধিক সাহিত্যিকের সামগ্রিক কথাসাহিত্যকর্ম নিয়েও গবেষণা হয়েছে : আরজুমন্দ আরা বানু, শহীদুল্লা কায়সার ও জহির রায়হানের কথা সাহিত্য : বিষয় ও প্রকরণ (২০০৫); রোখসানা পারভীন চৌধুরী, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, হুমায়ুন আজাদ এবং সেলিনা হোসেনের কথাসাহিত্যে নারীবাদী ভাবনার প্রতিফলন (২০২০) ।

 

এমফিল সুরভী দাস, জহির রায়হানের কথাসাহিত্য : সমাজ ও রাজনীতি (২০০৩); কাকলী সুলতানা, প্রমথ চৌধুরীর কথা সাহিত্যের বিষয় ও আঙ্গিক চেতনা (২০০৬); মাহবুবা জিন্নত, কাজী আবদুল ওদুদের কথাসাহিত্যে বিধৃত সমাজ (২০০৭); হোসনে আরা, আবু ইসহাকের কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত জীবন ও তার শিল্পরূপ (২০০৭); নজরুল ইসলাম, বিভাগোত্তর বাংলা কথা-সাহিত্যে প্রতিফলিত সামাজিকঅর্থনৈতিক বাস্তবতা (২০১০); মো. শরিফুল ইসলাম, শহীদুল জহিরের জীবন, তাঁর কথাসাহিত্যের বিষয়বৈচিত্র্য ও প্রকরণ (২০১৭); আয়শা সিদ্দিকা, জহির রায়হানের কথাসাহিত্য : জীবন ও শিল্পবোধের স্বরূপ (২০১৮)।

উপন্যাস বিষয়ক পিএইচডি

বাংলা বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যের ওপর। অবশ্য গুণগত ও পরিমাণগত দ্বিবিধ দিক থেকে উপন্যাস-সাহিত্যের আয়তন অনেক বড়। রবীন্দ্র-উপন্যাস বিষয়ক গবেষণা সম্পর্কে অন্যত্র আলোচিত হবে। উপন্যাস নিয়ে প্রথম গবেষণা : নাজমা জেসমিন চৌধুরী, বাংলা উপন্যাস ও রাজনীতি (১৯৭৯)। এই গবেষণার পটভূমি অনেক বিস্তৃত। বঙ্কিমপূর্ব বাংলা উপন্যাস থেকে শুরু করে সমকালীন (ষাটের দশক পর্যন্ত) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল অনেকের উপন্যাস এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই গবেষণায় অনুসৃত হয়েছে ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতি। তত্ত্বের ভিত্তিতে উপন্যাস মূল্যায়ন বিষয়ক গবেষণা : আকিমুন নেছা, বাস্তবতাবাদ ও আধুনিক বাঙলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ (১৮৯০-১৯৫০) (১৯৯১)। বাংলা আঞ্চলিক উপন্যাস নিয়ে বৃহৎ পরিসরের গবেষণাকর্ম : মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, বাংলা সাহিত্যে আঞ্চলিক উপন্যাস (২০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) (২০০৯)। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে বৃহৎ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানিক ও সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিরূপণ এবং সেই অঞ্চলের ভূগোল ও জনজীবনকে উপজীব্য করে রচিত উপন্যাস সমাজতাত্ত্বিক ভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে উক্ত গবেষণাকর্মে।

 

এককভাবে বঙ্কিম-উপন্যাস নিয়ে কাজ : সারওয়ার জাহান, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস : সামাজিক প্রতিক্রিয়া (১৮৬৫Ñ১৯০৩) (১৯৮৩); মো. হারুনুর রশীদ, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে শব্দগঠন-কৌশলের স্বরূপ বিশ্লেষণ (২০১৮)। এছাড়া আরও উল্লেখ্য : মোছাঃ ফেরদৌসী খাতুন, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে নারীজীবন রূপায়ণের তুলনা (২০১১); মোছাঃ জেসমিন আরা, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসে সংসার-কাঠামো ও নারীর অবস্থান (২০১১); জোবায়ের মোহাম্মদ ফারুক, বঙ্কিম-পূর্ব বাংলা গদ্য কাহিনীতে তৎকালীন সমাজ (২০১০); মোছাঃ তছলিমা খাতুন, উনিশ শতকের বাংলা উপন্যাসে ইতিহাসচেতনা (২০১৫); স্বপ্না রায়, পাঁচটি বাংলা উপন্যাস ও বাংলা উপন্যাসে যুগান্তরের সূচনা (২০০২); জোবায়দা আক্তার, বিংশ শতাব্দীর মুসলিম ঔপন্যাসিকের উপন্যাসে জীবনের ও সমাজচিত্রের স্বরূপ (১৯০১-১৯৪০) (২০০৩)।

 

শরৎচন্দ্রের উপন্যাস নিয়ে বেশির ভাগ কাজ গতানুগতিক ও বর্ণনামূলক : পারভীন ববী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসে নর-নারী সম্পর্ক (২০১১); সেলিনা মমতাজ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রধান উপন্যাসসমূহের বিকাশ ও পরিণতিতে আকস্মিক ও অস্বাভাবিক ঘটনার প্রভাব (২০১৫)। বিশ শতকের প্রধান কয়েকজন ঔপন্যাসিকের উপন্যাস বিষয়ে সার্বিক গবেষণা হয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে দুটি : আবুল খায়ের মোঃ আশরাফউদ্দীন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও মানুষ (১৯৮৬); আরজুমান আরা বেগম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে নর-নারীর জীবনের রূপায়ণ (২০১১)। তারাশঙ্কর-উপন্যাস নিয়ে একক কাজ : ভীষ্মদেব চৌধুরী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৫)। তারাশঙ্করের জীবনবোধের সামগ্রিক মূল্যায়নে ও শিল্পদৃষ্টির উন্মোচনে এই গবেষণা অনুসন্ধিৎসুমহলে সমাদৃত হয়েছে। এসংশ্লিষ্ট আরও কিছু গবেষণা : নাসরীন আখতার, বিভূতিভূষণ ও তারাশঙ্করের উপন্যাসে অন্ত্যজ নারী চরিত্রের রূপায়ণ (২০০৯)।

 

একক ঔপন্যাসিক নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা : বিশ্বজিৎ ঘোষ, বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার রূপায়ণ (১৯৯৫); কাকলী মুখোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশের উপন্যাসে মানুষের অন্তর্জীবন ও বহির্বাস্তব (২০১১); সোয়াইব আহমেদ, কমলকুমার মজুমদারের উপন্যাসের শিল্পরীতি (২০০৬); মনীষা চৌধুরী, সতীনাথ ভাদুরীর উপন্যাস : জীবনভাবনা ও শিল্পদৃষ্টি (১৯৯৯); মোমেনুর রসুল, সতীনাথ ভাদুড়ীর উপন্যাস : ব্যক্তি-সমাজ-রাজনীতি ও শিল্পভাবনা (২০১৯); ইয়াসমিন আরা সাথী, সমরেশ বসুর উপন্যাসে মধ্যবিত্তজীবন (২০১৬); মোছাঃ পারভীন আক্তার, সমরেশ বসুর উপন্যাসে রাজনৈতিক জীবন ও তার রূপায়ণ (২০১৮); সোহানা মাহবুব, অমিয়ভূষণ মজুমদারের উপন্যাসে সময়চেতনা ও অস্তিত্বসংকটের রূপায়ণ (২০১৭); মুনিরা সুলতানা, দেবেশ রায়ের উপন্যাসে জীবনের অন্তর্বয়ন (২০১৯)। বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে প্রথম ও এখন পর্যন্ত সমাদৃত গবেষণা : রফিকউল্লাহ খান, বাংলাদেশের উপন্যাস : বিষয় ও শিল্পরূপ (১৯৯৫)। এই গবেষণায় সাতচল্লিশ পরবর্তী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সব উপন্যাসের বিষয় এবং তৎকালীন পরিপার্শ্ব ও প্রকরণকলা সবিস্তারে বিশ্লেষিত হয়েছে। উপন্যাস নির্বাচনে ও শিল্পরূপ বিচারে প্রতীচ্য উপন্যাসতত্ত্বের প্রতি গবেষকের অভিনিবেশ লক্ষ করা যায়। এই গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তার সামূহিক রূপ ও সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ।

 

বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে গবেষণাকর্মের সংখ্যাও অনেক : খোন্দকার শওকত হোসেন, বাংলাদেশের উপন্যাসে (১৯৪৭১৯৭০) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রতিফলন (২০০৭); মোহাম্মদ তাজুদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশের নদীভিত্তিক উপন্যাসে জীবনচিত্র (২০০৮); হামিদা বেগম, বাংলাদেশের উপন্যাসে সমুদ্র-উপকূলবর্তী জীবন ও জনপদ (২০১৩); চৌধুরী মোঃ তাশরিক-ই-হাবিব, বাংলাদেশের উপন্যাসে লোকজ উপাদানের ব্যবহার (২০১৭); নীলিমা আফরিন জানু, বাংলাদেশের উপন্যাসে মনোবিশ্লেষণ (১৯৪৭২০০০) (২০০৯); রওশন আরা বেগম, বাংলাদেশের মহিলা ঔপন্যাসিকদের উপন্যাসে সমাজচিত্র ও জীবনবোধ (১৯৭২-২০০০) (২০১১); সুরাইয়া গুলশান আরা, বাংলাদেশের উপন্যাসে নারী-পুরুষের সম্পর্কের রূপায়ণ (১৯৪৭-২০০০) (২০১৫); মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ইসলাহী, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও আবু ইসহাকের উপন্যাসে প্রতিফলিত সামাজিক মূল্যাবোধ (২০১২); আসমা জাহান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসে শ্রেণিচেতনা ও অস্তিত্ব অন্বেষা (২০১৯)।

উপন্যাস বিষয়ক এমফিল

উপন্যাস বিষয়ে এমফিল গবেষণায় বাংলাদেশের উপন্যাসের প্রাধান্য বেশি : খন্দকার শওকত হোসেন, বাংলাদেশের উপন্যাস (১৯৪৭৭০) : গ্রামীণ সমাজ (১৯৮৪); মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক উপন্যাস (১৯৪৭-১৯৮৬) (১৯৯৩); মোহাম্মদ গোলাম মাওলা, বাংলাদেশের উপন্যাসের শৈলীবিচার : ১৯৪৭-১৯৭১ (২০০০); মোহাম্মদ তাজুদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশে নদীভিত্তিক উপন্যাস (২০০৩); তাহমিনা বেগম, বাংলাদেশের উপন্যাসে নৈতিক বিবেচনা (১৯৭২-১৯৯২) (২০০৪); আসমা জাহান, বাংলাদেশের
উপন্যাসে শ্রেণী-চেতনার স্বরূপ (১৯৪৭-১৯৭১) (২০০৪); রীতা বসু, বাংলাদেশের উপন্যাসে জনজীবন (১৯৪৭-১৯৭১) (২০১১); এহছানি খানম, বাংলাদেশের মহিলা ঔপন্যাসিকের উপন্যাসে জীবনোপলব্ধি ও সমাজচেতনার স্বরূপ (১৯৭২-১৯৯৮) (২০১২)। বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের অনুসন্ধান স্বতন্ত্রভাবে গবেষণায় স্থান পেয়েছে : মোঃ আসাদুজ্জামান খান, বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের রূপ ও শিল্পসাফল্য (২০০০); সোহেলী নার্গিস, বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের রূপায়ণ (২০০১)।

 

বাংলাদেশ-পূর্ব বাংলা উপন্যাস নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে একক ঔপন্যাসিকের নির্দিষ্ট কয়েকটি উপন্যাস নিয়ে কাজ করার প্রাধান্য দেখা যায় : মোঃ সেলিম ভূঞা, তারাশঙ্করের তিনটি উপন্যাস : কৌমজীবনের রূপায়ণ (২০০৭); মোছাঃ শাহনাজ বেগম, আশাপূর্ণা দেবীর ত্রয়ী উপন্যাস : নারী জীবনের রূপ ও রূপায়ণ (২০০৫); মোঃ জাকির হোসেন, ‘আনোয়ারা’, ‘জোহরা’ ও ‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসে সমাজ বাস্তবতার স্বরূপ ও শিল্পমূল্য (২০১০); মোছাঃ পারভীন আক্তার, সমরেশ বসুর মিথ-অবলম্বী উপন্যাসের বিষয়-স্বাতন্ত্র্য ও শিল্পরূপ (২০০৭)। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিয়ে দুটি গবেষণা : মোছাঃ মাহফুজা সুলতানা হিলালী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঁচটি উপন্যাসে জীবন ও সমাজ (২০০৮); হুমা আফরোজ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে (১৯৩৫-১৯৩৬ সালে প্রকাশিত) নর-নারীর সম্পর্ক (২০১০)। একক ঔপন্যাসিকের উপন্যাস নিয়ে সার্বিক গবেষণা : বেগম শারমিনুর নাহার, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসে রাজনীতির স্বরূপ (২০১৪)।

 

বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের প্রকরণকলা নিয়ে ভিন্নধর্মী গবেষণা : সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস : উপমা-চিত্রকল্প প্রতীকের ব্যবহার (২০০৬)। বাংলাদেশের ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে সার্বিক মূল্যায়নধর্মী বেশ কয়েকটি গবেষণা আছে : মোহাম্মদ কুদরত-ই-হুদা, শওকত ওসমান ও সত্যেন সেনের উপন্যাস : আঙ্গিক বিচার (২০১১); মোঃ শহিদুল হাসান পাঠান, আলাউদ্দিন আল আজাদের উপন্যাসে : বিষয় ও প্রকরণশৈলী (২০১৬); মো. আলমগীর কবির, আহমদ ছফার উপন্যসে সমাজ ও জীবনের রূপায়ণ (২০১৭)। বিষয়নির্বাচনে ব্যতিক্রমধর্মী গবেষণা : মো: জাহাঙ্গীর আলম, বাংলা উপন্যাসে ‘খল’ নর ও নারী চরিত্র (২০১৭)।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here