দেবেন্দ্রনাথের (১৮১৭-১৯০৫) ১৫ জন সন্তানের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথের (১৮৪২-১৯২৩) অবস্থান তৃতীয়, পুত্রদের মধ্যে দ্বিতীয়। নবছর বয়সে উপনয়ন হয়েছিল। প্রচলিত প্রথায় কান ছিদ্র করে মাথা মুড়িয়ে শূদ্রের মুখদর্শনে ব্রাহ্মণত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে তিনদিন তাকে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল। চিরন্তন সনাতন প্রথাপদ্ধতি অনুসারেই সেদিন সত্যেন্দ্রনাথের পইতা দেওয়া হয়েছিল। দুর্গা ও জগদ্ধাত্রীসহ বাড়িতে পূজাপার্বণে নানা উৎসব-আয়োজন হতো। রাতব্যাপী যাত্রাপালা অব্যাহত থাকতো। রাত জেগে যাত্রাপালা দেখা ছোটদের পক্ষে সম্ভব হতো না। ঘুমিয়ে গেলে শেষরাতে এদেরকে জাগিয়ে দেয়া হতো। ব্যায়ামচর্চার অভ্যাস ছিল ছোটবেলা থেকেই। জোড়াসাঁকোর বাড়ি থেকে গড়ের মাঠ পর্যন্ত প্রায়ই হেঁটে যেতেন। দিঘিতে তিনভাই বাজি ধরে সাঁতার কাটতেন। কলার ভেলা ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতেন। কুস্তি শেখাও অব্যাহত ছিল। হিরাসিং পালোয়ান কুস্তিতে তালিম দিতে আসতেন।
পাঠশালায় গুরুমশায়ের কাছেই সত্যেন্দ্রনাথের শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল। বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কারের কাছে কিঞ্চিত সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেছিলেন। বাণেশ্বরের শিক্ষাপদ্ধতি পছন্দ না হলেও আইসিএস পরীক্ষায় এটি সত্যেন্দ্রনাথের বেশ কাজে লেগেছিল। আইসিএস পরীক্ষায় বৃটেনের ছাত্ররা গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা নিতো। সত্যেন্দ্রনাথ নিয়েছিলেন সংস্কৃত ও আরবি। আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে বিষয় দুটি বেশ সহায়ক হয়েছিল। এসময় ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ঈশ্বরচন্দ্র নন্দী ছিলেন প্রতিষ্ঠান-প্রধান। ইংরেজি পড়াতেন এই শিক্ষক। ছাত্রদের ইংরেজিতে সুদক্ষ করে গড়ে তুলবার জন্য প্রতি সপ্তাহে বক্তৃতার আয়োজন করতেন। এখান থেকেই ইংরেজির ভিত গড়ে ওঠে।
পরবর্তী কালে সত্যেন্দ্রনাথকে হিন্দু স্কুলে (১৮১৭) ভর্তি করে দেওয়া হয়। কৃতিত্বের স্বীকৃতি-স্বরূপ উপহার পেয়েছিলেন রবিনসন ক্রশো গ্রন্থখানি। গ্রন্থটি বালক সত্যেন্দ্রনাথের কাছে অত্যন্ত সুখপাঠ্য ছিল। সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন বন্ধু তারকানাথ পালিতকে। আজীবন তারকানাথের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব বিদ্যমান ছিল। বছর কয়েক পরে হিন্দু স্কুল থেকে এসটি পলস স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিছু দিন বিদ্যাসাধনার পর আবার ফিরে এসেছিলেন হিন্দু স্কুলে। সেখান থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে।
এখান থেকেই উনিশ বছর বয়সে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে বিলেতে পাড়ি জমান। সেখানে জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুরের বাসাবাড়িতে আপাতত আশ্রয় নেন। মাসকতক পর Windsor এর কাছাকাছি এক সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারের ছাত্রাবাসে ওঠেন। সঙ্গে ছিলেন বন্ধুবর মনোমোহন ঘোষ। প্রায় দুবছর অধ্যয়নের পর ১৮৬২ সনে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। বন্ধু মনোমোহন ফেল করলেও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইতালি-ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণপূর্বক ১৮৬৪ সালের শেষভাগে স্বদেশে পৌঁছেছিলেন। প্রথম আইসিএস অফিসারকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সেদিন বেলগাছিয়ার বাগানবাড়িতে কলকাতার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়েছিলেন।
২
সত্যেন্দ্রনাথকে আমরা প্রথম ভারতীয় আইসিএস অফিসার হিসেবেই জানি। সাহিত্যে-শিল্পে না হলেও চাকরিবাকরিতে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি, উজ্জ্বল করেছিলেন ঠাকুর পরিবারের মুখ। পিতা দেবেন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন অপরাপর সন্তানও অনুরূপ সুখ্যাতি অর্জন করুক। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে (১৮৬১-১৯৪১) পাঠিয়েছিলেন বিলেতে। উদ্দেশ্য ছিল সত্যেন্দ্রনাথের মতো আইসিএস অফিসার বানানো। আইসিএস না হলেও অন্তত ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরবে। এজন্য রীতিমত প্রাকপ্রস্তুতিও ছিল। বিলেতের ভাষাসাহিত্য-সংস্কৃতি প্রসঙ্গে দরকারি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথকে কিছুদিন অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথের কাছে বোম্বাইতে থাকতে হয়েছিল।
সত্যেন্দ্রনাথ অনুজ রবীন্দ্রনাথকে ডাক্তার আত্মরাম পাণ্ডুরাং তরখরার পরিবারে রেখেছিলেন। উদ্দেশ্য বিলেতি সংস্কৃতি রপ্ত করা। এরপরেই না রবীন্দ্রনাথের বিলেত গমন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কোনোটাই হতে পারেননি; না আইসিএস, না ব্যারিস্টার। এজন্য ঠাকুর পরিবারের দুঃখও কম ছিল না।
দ্বারকানাথ (১৭৯৪-১৮৪৬) পাশ্চাত্য স্টাইলে জীবনযাপন করলেও পুত্র দেবেন্দ্রনাথকে ঐ পথে আনতে পারেননি। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন পিতার উল্টোপথে। প্রিন্সপুত্র থেকে হয়েছিলেন মহর্ষি। রামমোহনের (১৭৭২-১৮৩৩) ব্রহ্মধর্মেই আস্থা রেখেছিলেন তিনি। সন্তানকেও সেইপথেই পরিচালনা করতে চাইতেন। এসময় ঠাকুর পরিবারে নিয়মিত উপাসনা হতো। সে উপাসনায় সন্তানেরাও উপস্থিত থাকতেন। এদের ভুলত্রুটি শুধরে দিতেন তিনি। বিলেত গমনের পূর্বপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল।
দেবেন্দ্রনাথ খুব সাবধানী মানুষ ছিলেন। ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলেও সমসাময়িক সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে খানিকটা সমন্বয় করেই চলতে চাইতেন এই সমাজনেতা। সত্যেন্দ্রনাথের মাধ্যমেই ঠাকুর পরিবারে বিলেতি হাওয়া লাগে। বদলে যেতে থাকে ঠাকুর পরিবারের অন্দরমহল। কিন্তু সেটি খুব সহজে হয়নি। সাহেবি অনুকরণের জন্য সত্যেন্দ্রনাথকে ভর্ৎসনা করতেন দেবেন্দ্রনাথ। পুত্রকে স্বপথে ফিরিয়ে আনতে চাইতেন। তবে উপদেশ অথবা ভর্ৎসনায় থেমে যাননি সত্যেন্দ্রনাথ। পর্দাপ্রথা উচ্ছেদে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। অন্তত দুটি জায়গা থেকে এই প্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। প্রথমত বিলেত থেকে। সেখানে বিবাহিত-অবিবাহিত রমণীর স্বাধীন চলাফেরায় মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। নানাবিধ সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পরার মতো। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে নারীরাই ছিল পরিবারের হর্তাকর্তা। দ্বিতীয় প্রেরণাটি এসেছিল কর্মস্থল বোম্বাই থেকে। সেখানে বিলেতের ন্যায় না হলেও বঙ্গদেশের তুলনায় নারীরা ছিল অনেকটাই স্বাধীন ও মুক্তমনের বাসিন্দা। মুক্ত আলোবাতাসে তারা স্বাধীনচিত্তে চলাচল করতে পারতো। অতিথি আপ্যায়নেও অংশগ্রহণ করতে পারতো।
বোম্বাই থেকে বঙ্গদেশে ফিরে স্ত্রীকে গর্ভমেন্ট হাউজে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গৃহবধূকে প্রকাশ্যে অফিসে দেখে প্রসন্নকুমার ঠাকুর নাকি রাগলজ্জায় দৌড়ে পালিয়েছিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন বঙ্গবাসিন্দারাও অনুরূপভাবে স্বাধীনচিত্তে উন্মুক্ত আলোবাতাসে নেমে আসুক। কেবল চাওয়াতেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাস্তবায়নও করে দেখিয়েছিলেন তিনি। শুভকাজের শুভারম্ভ করেছিলেন স্বগৃহ থেকেই। সমস্যা দেখা দিয়েছিল পোশাক নির্বাচন নিয়ে।
বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পারসি এবং গুজরাটি মেয়েদের শাড়ির স্টাইল খানিকটা পরিবর্তন-পরিমার্জন করে বঙ্গনারীর শাড়ির প্রচলন করেছিলেন এবং বোম্বাই নারীর ‘চোলি’র অনুরূপ কাঁচুলি নির্মাণ করেছিলেন। এই শাড়ি এবং কাঁচুলি প্রবর্তনের কৃতিত্ব ঠাকুর পরিবারের বিশেষ করে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সম্ভবত এরপরেই স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনীকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন বোম্বাইয়ে। গাড়িতে করে জাহাজ ঘাটে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পিতা দেবেন্দ্রেনাথের বাঁধায় পালকি করেই সেদিন যেতে হয়েছিল তাকে।
বোম্বাই থেকে বঙ্গদেশে ফিরে স্ত্রীকে গর্ভমেন্ট হাউজে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গৃহবধূকে প্রকাশ্যে অফিসে দেখে প্রসন্নকুমার ঠাকুর নাকি রাগলজ্জায় দৌড়ে পালিয়েছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথকে লিখতে দেখি, ‘আমি প্রথমবার বোম্বাই থেকে বাড়ী এসে আমার স্ত্রীকে গভর্ণমেন্ট হাউসে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে কি মহা ব্যাপার! শত শত ইংরাজ মহিলার মাঝখানে আমার স্ত্রী — সেখানে একটি মাত্র বঙ্গবালা — তখন প্রসন্নকুমার ঠাকুর জীবিত ছিলেন। তিনি তো ঘরের বৌকে প্রকাশ্যস্থলে দেখে রাগে লজ্জায় সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন।’
প্রসন্নকুমার পালালেও সত্যেন্দ্রনাথ পালাননি। বরং শক্তহাতে হাল ধরেছিলেন ঠাকুর পরিবারের। সহস্র বর্ষের পর্দাপ্রথার অবরোধ থেকে নারীকে মুক্ত করেছিলেন। অনুজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথও (১৮৪৯-১৯২৫) সেদিন অগ্রজকেই অনুসরণ করেছিলেন। তখনও ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে এক টেবিলে খাবার খেতে অভ্যস্থ ছিলেন না। সত্যেন্দ্রনাথ নারীপুরুষের একসঙ্গে ডাইনিং টেবিলে খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেদিন মেয়েরা এতো লজ্জা পেয়েছিল যে, অর্ধভোজনেই উঠে আসতে হয়েছিল। স্মৃতিচারণে সৌদামিনী (১৮৪৭-১৯২০) দেবীকে লিখতে দেখি, ‘প্রথম প্রথম আমরা লজ্জায় খেতে পারতাম না — অল্প কিছু মুখে দিয়ে বসে থাকতাম, ক্রমে ক্রমে আমাদের লজ্জা ভাঙল। মেজ বউঠাকুরাণীই বোম্বাই ধরনের শাড়ি পরা আমাদের মেয়েদের মধ্যে প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন।’ এই মেজ বউ জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বেশ লজ্জাবতী রমণী ছিলেন। চিরদিনের স্বসংকোচ দূরে ঠেলে দিতে সত্যেন্দ্রনাথকে কম সাধ্যসাধনা করতে হয়নি।
৩
কর্মে যোগদানের পূর্বে সত্যেন্দ্রনাথকে হিন্দুস্থানি ও গুজরাটি ভাষায় পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে তাকে আহমেদাবাদে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই থেকে সত্যেন্দ্রনাথ শেষদিনতক বিচারিক কাজে নিযুক্ত ছিলেন। বিচারিক কর্ম নিরপেক্ষ হওয়ার কথা থাকলেও ঔপনিবেশিক শাসক সম্প্রদায় বিচারকার্যে অন্যায় হস্তক্ষেপ করতো। আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রবাসজীবন গ্রন্থে সত্যেন্দ্রনাথকে লিখতে দেখি :
আমি যখন ধূলিয়ায় অ্যাসিষ্টণ্ট জজ হইয়া কর্ম্ম করি, তখন সেখানকার ম্যাজিষ্ট্রেট প্রিচার্ড সাহেব আমার কোর্টে চারিজন আসামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্যের মকদ্দমা আনিয়া উপস্থিত করেন। সেই মকদ্দমায় তিনি নিজে ফরিয়াদী, নিজেই সাক্ষী, তাহার একতরফা সাক্ষ্য সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য নহে এই বলিয়া আসামীদিগকে নিরপরাধ সাব্যস্ত করিয়া খালাস দিয়াছিলাম। এই বিচারে প্রিচার্ড সাহেব অসন্তুষ্ট হইয়া গভর্ণমেন্টে অভিযোগ করেন; গভর্ণমেন্ট আমার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল আনিয়া আমাকে স্থানান্তরিত করিবার আদেশ জারি করিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথের বদলি উপলক্ষে বিদায় স্বংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে সরকার আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং সরকারি কর্মচারির বদলি উপলক্ষে বিদায় সংবর্ধনা প্রসঙ্গে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সে আদেশ আজ অবধি বলবৎ রয়েছে। দীর্ঘদিন কর্মজীবন শেষে ১৮৯৭ সালে কর্ম থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ফিরে এসেছিলেন বঙ্গদেশে। কর্মজীবনে সর্বোচ্চ আসনে আসীন হতে পারেননি-এটি তাঁর বড় দুঃখ। এজন্য অনেকটা নিজেকেই দায়ি করেছেন। স্মৃতিকথায় তাঁকে লিখতে দেখি :
এক সময়ে আমাদের বাড়ী সরস্বতী পূজা হ’ত। মনে আছে একবার সরস্বতীর প্রতিমা অর্চ্চনায় গিয়েছি — শেষে ফিরে আসবার সময় আমার হাতে যে দক্ষিণার টাকা ছিল তাই দেবীর উপরে সজোরে নিক্ষেপ করে দে ছুট! তাতে দেবীর মুকুট ভেঙে পড়ল। এই অপরাধে তখন কোন শাস্তি পেয়েছিলুম কি না মনে নাই, কিন্তু হাতে হাতে সাজা না পেয়ে থাকি তার ফলভোগ এখন বুঝতে পারছি। বাঁশীতে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। আমার বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা ক্ষয়ে যাচ্ছে — স্মৃতিভ্রংশ হ’তে আরম্ভ হয়েছে। আমি যে আমার সার্ব্বিসের সর্ব্বোচ্চ শিখরে উঠতে পারিনি সেও ঐ কারণে। সরস্বতী প্রসন্ন থাকলে হাইকোর্টের আসন অধিকার করে পদত্যাগ করতে পারতুম। — আমার ভাগ্যে আর তা হ’ল না।
৪
সত্যেন্দ্রনাথ আর দশজন এলিটের ন্যায় নিজেও ব্রিটিশভক্ত ছিলেন। তাঁকে লিখতে দেখি, ‘ঐতিহাসিক যুগের পূর্ব্বে আমাদের পূর্ব্বপুরুষগণ একবংশজাত ছিলেন বলিয়াই আজ আমরা এমন অবিলম্বে এমন অভূতপূর্ব্বভাবে এই আত্মীয়তা অনুভব করিয়া থাকি।’ সত্যেন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করতেন এবং সেই অনুভবেই আজীবন ব্রিটিশের অধীনে চাকরি করে গেছেন। কিন্তু বঙ্কিমের ন্যায় তাঁর কপালেও পদোন্নতি জোটেনি। এজন্য ব্রিটিশকে দায়ী না করে সরস্বতীর প্রতি নিজের অশ্রদ্ধাকেই দায়ী করেছেন। তাই সত্যেন্দ্রনাথের আধুনিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবু বাল্য বিয়ে, বিধবা বিয়ে, দেবদাসী, পর্দাপ্রথা, নারীশিক্ষা — এসব বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথের ইতিবাচক অবদান নিঃসন্দেহে স্মরণীয়। বিশেষত পর্দাপ্রথা অপসারণে তিনি তো রীতিমত পথিকৃতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।