জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও করোনা

দুঃসহ এক দুর্বিপাকের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব; একটি ভাইরাস ধ্বংস করে দিচ্ছে মানুষের শরীর, অর্থনীতি, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি — এমনকি রাষ্ট্র। মহামারীর অভিঘাতে তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতি বিশ্লেষিত হচ্ছে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিসর থেকে সম্পন্ন হয়েছে অসংখ্য গবেষণা। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্যবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, অণুজীব বিষয়ক বিদ্যার গুরুতর দায়িত্ব প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করা। আদতে বিশ্ব জুড়ে হচ্ছেও তা-ই। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞানী ও গবেষক এ কাজে নেমেছেন। তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ একজন ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ।

 

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর করোনা সংক্রমণ বিষয়ক বই বাংলাদেশের করোনা প্রেক্ষাপট ও চালচিত্র। বইটির অধিকাংশ প্রবন্ধ বিগত এক বছর ধরে পত্রিকা বা ওয়েব পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। অর্থাৎ আনোয়ার খসরু অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে বছর খানেক ধরে করোনা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং সে বিষয়ে সুচিন্তিত মত দিয়েছেন। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যথার্থ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে বলা ভালো, এই বই কোনো গবেষণাগ্রন্থ নয়, তথ্যের কাঁটাতার পেরিয়ে আপনাকে বুঝে নিতে হবে না করোনা পরিস্থিতির সামগ্রিক বিষয়।

আনোয়ার খসরু মূলত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করোনা-সংকটের ব্যাখ্যা করেছেন। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান, অনুজীব বিজ্ঞানের আলোকে করোনাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, খাদ্যাভ্যাস, ফিজিওথেরাপি, নিওনরমাল পরিস্থিতি, ভেষজ খাবার ইত্যাদির তাত্ত্বিক ও সাধারণ বিবরণ প্রদান করেছেন।

আনোয়ার খসরু মূলত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করোনা-সংকটের ব্যাখ্যা করেছেন। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান, অনুজীব বিজ্ঞানের আলোকে করোনাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, খাদ্যাভ্যাস, ফিজিওথেরাপি, নিও-নরমাল পরিস্থিতি, ভেষজ খাবার ইত্যাদির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিবরণ প্রদান করেছেন; পর্যালোচনা করেছেন করোনা মোকাবিলার জন্য প্রাপ্ত জরুরি তথ্য ও উপাত্তসমূহ। খুব সহজ ও সরলভাবে পাঠযোগ্য করে তুলেছেন বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তুকে; জোর দিয়েছেন মানুষের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতি। প্রকৃতপক্ষে এ বইয়ের ভেতর দিয়ে খুব সহজেই বুঝে ওঠা যায় করোনার জীবতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা।

 

এ ধরনের কাজ প্রকৃতপক্ষে জনপ্রিয় বিজ্ঞান বা পপুলার সায়েন্সের কাজ। আমাদের দেশে এ ধরনের কাজের পরিমাণ খুব বেশি নয়। প্রধানত বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে এ জাতীয় লেখার পক্ষে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায় না। অথচ বিজ্ঞান সচেতনতার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তুকে সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপনের কোনো বিকল্প নেই। কেননা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ববিশ্বে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু বিজ্ঞানী যদি চাবিকাঠি দিয়ে দেন, তাহলে সাধারণের পক্ষে সম্ভব সে পথে ঢুকে দরকারি জ্ঞান লাভ করা। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য।

 

এক সময় আবদুল্লাহ আল মুতী, আলী আনোয়ার বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন গদ্য লিখতেন। পরবর্তী কালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মোহাম্মদ কায়কোবাদ বিজ্ঞানকে বিভিন্নভাবে জনপ্রিয় করেছেন। তা শুধু শিশুকিশোরদের মন হরণ করে নি; বিভিন্ন বয়সের পাঠক আগ্রহী হয়ে সেসব লেখা পড়েছেন। আনোয়ার খসরু পারভেজ গবেষণার পাশাপাশি জনপ্রিয় রীতিতে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখায় হাত দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে। যারা করোনা মহামারী সম্পর্কে সহজভাবে জানতে ও বুঝতে চান তাদের জন্য বাংলাদেশের করোনা প্রেক্ষাপট ও চালচিত্র অত্যন্ত সহায়ক একটি বই। এ বই আপনাকে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিকভাবে সচেতন করে তুলবে।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here