বার্মা নীতি-সাহিত্য ।। কিস্তি : ২

বাংলাদেশের পাশের দেশ মিয়ানমার। এক সময় বার্মা বলেই যার পরিচয় ছিল। বৌদ্ধ ধর্ম, নীতিশাস্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গড়ে উঠেছিল বার্মা নীতি-সাহিত্য। প্রবাদ ও প্রবচনের মতো প্রচারিত এই নীতিমূলক রচনায় ছাপ পড়েছে হিতোপদেশ ও পুরাণ জাতীয় গ্রন্থের। সহজিয়া ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করবে বার্মা নীতি-সাহিত্য। জেম গ্রে’র PROVERBS AND MAXIMS from Burmese Sources OR THE NITI LITERATURE OF BURMA বই অনুসরণে অনুবাদ করবেন শাহেদ রহমান

 

১৬

যার সামান্য সৌন্দর্য আছে, সে দেখায় বেশি; যে অল্প জানে, সে প্রদর্শন করে বেশি; যে কলসিতে পানি কম, সেটি শব্দ করে বেশি; যে গাই দুধ দেয় কম, সে লাথি দেয় বেশি।

 

১৭

পাছায় ভর দিয়ে বসে থাকা ব্যাঙ কি সিংহ হতে পারে? ঘোঁৎ ঘোঁৎ করা শুয়োর কি নেকড়ে হতে পারে? দেখতে বাঘের মতো হলেও বিড়াল কি বাঘ হতে পারে? জ্ঞানের দিক থেকে সবাই কি এক হতে পারে?

 

১৮

রাজা কখনো সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না; জ্ঞানী কখনো সন্তুষ্টি পায় না সুভাষিত তর্ক-বিতর্কে; চোখ তৃপ্তি পায় না প্রেমিকাকে দেখে; সমুদ্র পরিতৃপ্ত নয় তার অবারিত জলে।

 

১৯

যে ব্যক্তি অধিক জানে, অথচ সেই জ্ঞান ফলপ্রদ নয়, সে আসলে মূক-বধির — সে স্বপ্ন দেখে, কিন্তু মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে পারে না।

 

২০

একজন কুমার তার মাটির পাত্রকে আঘাত করেন ভাঙার জন্য নয়, বরং পাত্রটিকে গড়ে পিটে তোলার জন্য; একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে আঘাত করেন জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য, আহত করার জন্য নয়।

 

২১

পাছার ওপর ভর দিয়ে বসে থাকা ব্যাঙ নিজেকে সিংহ ভাবে। আটকা পড়লেই কাক চিৎকার করে ওঠে, ‘বাঁচাও বন্ধু আমার।’ নিজেকে জ্ঞানী মনে করা মূর্খকে যখন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি প্রশ্ন করে, তখন মূর্খটি বলে ওঠে, ‘প্রিয় প্রভু আমার।’

 

২২

পাকা ডুমুর দেখতে লাল হলেও ভেতরটা ভরে থাকতে পারে পোকায়, যেমন পোকায় ভরে থাকে মন্দ লোকের হৃদয়।

 

২৩

আনারসের চার দিকে কাঁটা থাকলেও ভেতরটা ভরে থাকে মিষ্টি রসে, তেমনি মিষ্টি রসে ভরে থাকে সৎ লোকের হৃদয়।

 

২৪

চন্দন গাছ শুকিয়ে গেলেও তার গন্ধ লোপ পায় না, লোকের চোখ থেকে হারিয়ে যায় না পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া হাতির শোভা, পিষিয়ে ফেললেও আখের রস থেকে লুপ্ত হয় না মিষ্টি স্বাদ, একইভাবে দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার প্রকোপে পড়লেও জ্ঞানীর হৃদয় থেকে মুছে যায় না সদগুণ।

 

২৫

ক্ষুধার্ত হলেও সিংহ কখনো পাতা খায় না, কৃশ হয়ে পড়লেও সে কখনো হাতির মাংস খায় না।

 

২৬

সদ্বংশজাত কেউ সংকটে পতিত হলেও মন্দ উপায় অবলম্বন করে না।

 

২৭

পৃথিবীতে আনন্দদায়ক হলো চন্দনের গন্ধ, তার চেয়ে আনন্দদায়ক চাঁদের আলো; চন্দন কাঠ আর চাঁদের চেয়ে আনন্দদায়ক হলো ন্যায়ের পক্ষে উচ্চারিত সুন্দর বাক্য।

 

২৮

সূর্য কখনো পশ্চিমে উদিত হয় না, কখনোই নতজানু হয় না পর্বত-রাজ — মেরু, নরকের আগুন কখনো শীতল হয় না, পদ্ম কখনো জন্মায় না পর্বতশিখরে; একইভাবে সৎ ব্যক্তির বাক্য কখনো বদলায় না।

 

২৯

সুখকর বৃক্ষের ছায়া। তার চেয়ে সুখকর মাতা, পিতা, আত্মীয় পরিজন। তার চেয়ে সুখকর গুরুর সান্নিধ্য। তার চেয়ে আনন্দদায়ক রাজ-সংস্পর্শ। কিন্তু সব কিছুর চেয়ে সুখকর বুদ্ধের ছায়া।

 

৩০

মৌমাছি যেমন ফুলের প্রত্যাশী, তেমনি সৎ ব্যক্তি আশা করে গুণের; মাছি খুঁজে ফেরে নোংরা, গলিত দ্রব্য, যেমন মন্দ লোক খুঁজে ফেরে পরের কলঙ্ক।

চলবে

পড়ুন ।। কিস্তি : ১

বার্মা নীতি-সাহিত্য ।। কিস্তি : ১

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here