‘সহজিয়া’র সঙ্গে সহজ কথা

সমকালীন গল্পকার কুমার দীপ। এ বছর বই মেলায় বেরিয়েছে তাঁর গল্পের বই যে পাখি ফিরতে পারে না নীড়ে। তাঁর বই ও গল্প বিষয়ক ভাবনা নিয়ে কথা বলেছি আমরা।

 

সহজিয়া : গল্প লেখার দিকে ঝুঁকেছেন কীভাবে? গল্প কেন লেখার মাধ্যম হলো?

কুমার দীপ : গল্প লেখার দিকে কীভাবে ঝুঁকেছি, এটা খুব নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। আমার লেখালেখির শুরুটা প্রায় পঁচিশ বছর আগে। মাধ্যমিক স্তরের শেষস্তরে থাকা আমার লেখালেখির শুরুটা কবিতা দিয়েই, কিন্তু গল্প লেখা চেষ্টাটাও প্রায় একইসময়ে। বিশেষ কোনো প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা থেকে নয়, অনেকট খেয়ালিপনার ভেতর দিয়েই। ছোটবেলা থেকে গল্প পড়ার প্রতি প্রবল একটা ঝোঁক ছিলো। আমাদের বাড়িতে বড়ো সাইজের একটি ঠাকুরমার ঝুলি ছিলো, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের। সেখানকার গল্পগুলো কী যে ভালো লাগতো! এক-একটি গল্প অনেকবার পড়েছি তাই শুধু নয়, পড়ে পড়ে একাধিক মানুষকে শুনিয়েছিও। এরপর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটদের রামায়ণছোটদের মহাভারত হাতে পেলাম।

 

হাইস্কুলে পড়ার সময়গুলোতে শুরু হয় শরৎচন্দ্র-বঙ্কিমচন্দ্র-ফাল্গুনী-নীহাররঞ্জন… প্রমুখের উপন্যাস পাঠ, কলেজ জীবনে ব্যাপকতা পায়। বিশেষত শরৎচন্দ্রের বইগুলো যখন একের পর গোগ্রাসে গিলেছি, নিজের ভেতরে বোধকরি গল্প-উপন্যাস লেখার প্রেরণা অনুভবর করেছি। এবং লেখালিখির কোনো ব্যাকরণসূত্র অনুসন্ধান না-করেই গল্প ও উপন্যাস লেখার আকাঙ্ক্ষায় কলম চালাতেও শুরু করেছি। দু-তিনটি গল্প এবং গোটাদুয়েক উপন্যাসও শুরু করেছিলাম সেই ‘৯৪/‘৯৫ সালেই; যদিও সেগুলো পরিণতি বা প্রকাশের আলো দেখেনি কোনোদিনই।

 

গল্প কেন লেখার মাধ্যম হলো ? অধিকাংশ লেখকেরই একটি প্রিয়তম মাধ্যম থাকে, আমারও ছিলো এবং আছে। আমার প্রধান ভালোবাসাটা কবিতাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু লিখতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে উপলব্ধি করেছি, আমি যা বলতে চাই, তার সব কথা-ই কবিতা দিয়ে বলা সম্ভব নয়। সাহিত্যের সকল মাধ্যমেরই আসলে একেক ধরনের বিশেষত্ব আছে, সেই বিশেষ কথাটা বলতে হলে বিশেষ মাধ্যমেরই শরণ নিতে হয়। আমিও তাই শুধু কবিতায় আটকে থাকি না, গল্প লিখি, প্রবন্ধ লিখি; এমনকি শিশুদের জন্যেও লেখার চেষ্টা করি কদাচিৎ।

 

প্রতিবছর হাজার হাজার বই বের হচ্ছে, প্রচুর অনলাইন-অফলাইন সাহিত্য হচ্ছে, কিন্তু সাহিত্যের যে উন্নত ও গৌরবোজ্জ্বল যাত্রা, সেখানে বিরাট ফাঁকি থেকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখাই বেঁচে আছে, কিন্তু উজ্জ্বলভাবে নয়।

সহজিয়া : যে পাখি ফিরতে পারে না নীড়ে’র গল্পগুলোর বিষয় কী?

কুমার দীপ : যে পাখি ফিরতে পারে না নীড়ে আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ। প্রকাশ করেছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী। ১০টি গল্প আছে এখানে। ‘মরণোত্তম’, ‘মোজাম ব্যাপারীর দাঁড়ানো বৃত্তান্ত’, ‘পরকীয়া’, ‘সুরঞ্জনা ফিরবে কি?’, ‘আমির আলির খোঁড়াখুঁড়ি’, ‘নো এন্ট্রি’, ‘একটি সান্ধ্যভ্রমণের ময়নাতদন্ত’, ‘মাটি ও আঁধারের কাহিনি’, ‘যে পাখি ফিরতে পারে না নীড়ে’, ‘তবু অনন্ত জাগে’। ৫টি গল্প করোনাকালেই লিখিত, ২০২০ সালে পৃথিবীর মানুষ যে অন্যরকম বাস্তবতায় বিপর্যস্ত, অকল্পনীয় ও বিস্ময়কর জীবন দেখছিল, তার কিছু নমুনা আছে গল্পগুলোতে।

 

প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তার আতঙ্কে মোড়ানো সেই বন্দি দিনগুলোতে মানুষ ও তার সভ্যতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হৃদয়ে কাটিয়েছি অসংখ্য প্রহর। কোনো কোনো গল্পে এমন নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ বাস্তবতা ঠাঁই পেয়েছে যে, সেটাকে ভাষায় চিত্রায়িত করতে গিয়ে আমি নিজেও আবেগাক্রান্ত হয়েছি, চোখ ভিজে গেছে। শেষ গল্পটিতে এমন একজন মায়ের চরিত্র আছে, যিনি একে একে তার দুটো ছেলে, জামাই, স্বামী… সবকিছু হারাচ্ছেন, কিন্তু নিজের বেঁচে থাকছেন। বেঁচে থাকার যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে আত্মহত্যাও করতে যাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। একটি গল্পে আছে- একজন মানুষ নিজেই নিজের কবর খুঁড়ছে সারারাত জেগে।

 

করোনাকালের বাইরের গল্পগুলোও রূঢ়, এবং ভিন্ন বাস্তবতার। যে-গল্পগুলো এই সমাজেরই কিন্তু প্রায় কেউ-ই তুলে ধরতে চান না, নীরবেই কিছু মানুষের জীবনকে পুড়িয়ে চলে, সেরকম কয়েকটি দৃশ্যকে ধারণ করবার চেষ্টা আছে। কোনো কোনো গল্পে অস্তিত্বের সংকট এতো গভীর যে, উপলব্ধি করতে পারলে মানবিকতার একটি দুয়ার খুলে যেতে পারে তার মনে।

 

সহজিয়া : সমকালীন গল্পের কোন বিশিষ্টতা আপনাকে ভাবিয়ে তোলে?

কুমার দীপ : সমকালীন গল্প বলতে যা দেখছি, তার অধিকাংশই প্রথাগত, তবে কেউ কেউ আছেন, যারা প্রথাগত গল্প লিখতে চান না। প্রথাগত গল্পের ভেতরে যেমন দুর্বল ও মাঝারি মানের গল্পও আছে, তেমনি বেশ শক্তিশালী দু-একটি গল্পও মাঝে-মধ্যে পাওয়া যায়। যারা প্রথাগত গল্প লিখতে চান না, তাদের অনেকেই আঙ্গিকগত দিক থেকে অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করেন। দু-একজন গল্পকার আছেন, যাদের বলবার ভঙ্গি একেবারে অভিনব ও আনকোরা। ভাষায় মুন্সিয়ানা বা আভিজাত্যের ছাপ এখন কম দেখা যায়, তার বদলে কথ্য বাংলা এবং আঞ্চলিক সংলাপের ব্যাপকতা লক্ষণীয়।

 

কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকার সমাজবাস্তবতা পরিস্ফূটনের জন্য আঞ্চলিক সংলাপের ব্যবহার লেখকের দক্ষতারই পরিচয় বহন করে, কিন্তু গড়ে সকল চরিত্রের মুখে, এমনকি গল্পকথনেও আঞ্চলিকতার যথেচ্ছ ব্যবহার এবং এগুলোর কোনো কোনোটি যখন বিভিন্ন অঞ্চলের শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো একটি এলাকার ভাষা না-হয়ে বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিকতার একটি ককটেল হয়ে ওঠে, তখন কিন্তু বিষয়টি কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তোলে। আমাদের বাংলার যে একটা প্রতিষ্ঠিত প্রমিত রূপ রয়েছে, তার উপরে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যদি এই আঞ্চলিকতার প্রয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত থাকে। সময়ই বলে দেবে সবকিছু।

 

সহজিয়া : ‘বাংলা ছোটগল্প কি মরে যাচ্ছে?’ — পুরনো এই প্রশ্নটির জবাবে আপনি কী বলবেন?

কুমার দীপ : বাংলা ছোটগল্প মরে যাচ্ছে কি না এই প্রশ্নটি নিয়ে একাধিক লেখক লিখেছেন, তবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখাটাই সকলের কাছে পরিচিত ও আলোচিত। তিনি শুধু অসাধারণ কথাশিল্পীই ছিলেন না, শিল্প-সাহিত্যের একজন পর্যবেক্ষকও ছিলেন। যে-সময়ে প্রশ্নটি উত্থাপিত ও আলোচিত হয়েছে, সেই সময়ে বা তার আগে-পরে বাংলা ছোটগল্প কিন্তু বেশ কয়েকজন বড়ো লেখকের হাত ধরে এগিয়ে চলছিল। তো, সেই ষাট-সত্তর-আশির প্রেক্ষাপটে যদি ছোটগল্পের মরা বাঁচার প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আজকের প্রেক্ষাপটে কী বলা যেতে পারে ‘ছোটগল্প কি মরে গেছে?’ নাম উল্লেখ না-করেই বলি, বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলায় ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত যারা গল্প লিখেছেন, যে-ধরনের গল্প লিখেছেন; তাদের সাথে, তাদের গল্পের সাথে কোনোভাবেই কি আজকের কোনো গল্পকারের তুলনা চলে ? আমার স্বল্পপাঠে সেরকম গল্পকার নেই বললেই চলে। তার মানে, ছোটগল্প কি তবে সত্যিই মরে গেছে ?

 

আমার উত্তর হলো — না, তবে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে যে বেঁচে আছে, একথা বলবার কোনো সুযোগ নেই। একসময়কার স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্রটি যেমন বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার চাপে পড়ে কোনোরকমে ক্লাসে ওঠে কখনও কখনও, বাংলা ছোটগল্পের বর্তমান অবস্থাটাও বোধকরি সেরকম। কিন্তু শুধু ছোটগল্পের ঘাড়ে এই দোষ চাপাবো কী করে ? কবিতা বা উপন্যাস, কিংবা শিল্প-সাহিত্যের কোনো শাখা-ই কি বিশেষ দাপটের সঙ্গে বেঁচে আছে এখন ? প্রতিবছর হাজার হাজার বই বের হচ্ছে, প্রচুর অনলাইন-অফলাইন সাহিত্য হচ্ছে, কিন্তু সাহিত্যের যে উন্নত ও গৌরবোজ্জ্বল যাত্রা, সেখানে বিরাট ফাঁকি থেকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখাই বেঁচে আছে, কিন্তু উজ্জ্বলভাবে নয়। আর ইদানীং ফেসবুক-ইউটিউব প্রভৃতি অনলাইন মিডিয়া যেভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে, আবার একই সঙ্গে সমাজ ও রাজনীতিতে যেভাবে মৌলবাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে শিল্প-সাহিত্য নামক বৃক্ষটির চাষাবাদই কতটুকু থাকবে, সেটাই আশঙ্কার বিষয়।

 

অভিযোগ অনেকটাই সত্য, আজকের গল্পের ভেতরে বিবরণ আর ব্যাখ্যার প্রাচুর্য আছে কিন্তু সেই টান টান গল্প নেই। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে।

সহজিয়া : এই তো সেদিন একজন গল্পপাঠক ও সমালোচক বলছিলেন, এ সময়ের গল্পে টানটান গল্প নেই… বিবরণ আর ব্যাখ্যা আছে… আপনার কী মনে হয়?

কুমার দীপ : অভিযোগ অনেকটাই সত্য, আজকের গল্পের ভেতরে বিবরণ আর ব্যাখ্যার প্রাচুর্য আছে কিন্তু সেই টান টান গল্প নেই। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন : গল্পহীন গল্প লেখার আকাঙ্ক্ষা। এখন একটা সংস্কৃতি চালু রয়েছে, গল্পের ভেতরে কোনো গল্প থাকবে না, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিবরণ থাকবে, নানারকমের ডাইমেনশন থাকবে। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের মতো উঁচুমানের লেখকের হাতে এই ধারার উন্নত রূপ আমরা পেয়েছি, কিন্তু সকলেই যদি এহেন ধারা অনুসরণ করেন, তাহলে তো তার মান অবনত হবেই। একজন গল্পকার চরিত্রের মনের খবর জানবেন, কিন্তু সেটা যখন গল্পের মাধ্যমে না-বলে কেবল বিবরণের মাধ্যমে বলেন, সেটাকে পাঠক অনেক সময় গল্প বলে গ্রহণ করেন না। আর একটি বিষয় আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যক্ষ জীবনবোধের অভাব। আমাদের অধিকাংশ লেখকই এখন নগরকেন্দ্রিক জীবন-যাপন করেন, কর্পোরেট অফিসের চার দেয়ালের ভেতরে বসে কল্পনার হাত ধরে বিভিন্ন ধরনের মানুষকে নিয়ে গল্প ফাঁদেন। ফলে কল্পিত চরিত্রের গতিবিধি ও তাদের মুখের সংলাপগুলো ঠিকমতো অনুধাবন করা লেখকের পক্ষে সম্ভব হয় না। নিজের মতো করে একটা আরোপিত মনস্তত্ব প্রয়োগ করেন কিংবা আত্মপ্রজ্ঞাজাত ব্যাখ্যা-বিবরণ দেন। এটা গল্পের জন্য হিতকর নয়।

 

সহজিয়া : গল্পের আঙ্গিকগত দিক নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

কুমার দীপ : গল্পের আঙ্গিকগত দিক নিয়ে আমার ভাবনা ঠিক একমুখী নয়। যখন যেরকমভাবে লিখতে ইচ্ছে হয় বা গল্পের বিষয়বস্তু যেরকম আঙ্গিক প্রত্যাশা করে, আমি সেরকমভাবে লিখতে চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় এমন অসাধারণ কিছু গল্প আছে, যেগুলো তার আঙ্গিক নয়, বিষয়বস্তু এবং লেখকের দক্ষতার গুণে বিখ্যাত হয়েছে। তারাশঙ্কর-বিভূতি-মানিক কিংবা জগদীশ-জ্যোতিরিন্দ্র-নরেন্দ্ররা তো আঙ্গিককে খুব বেশি গুরুত্ব দেননি, কিন্তু তাদের গল্প ? মানিকের ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর কথা মনে পড়লে তো সবসময়ই আমার শরীর শিহরিত হয়। শতাধিক বছর আগের লেখা ‘পোস্টমাস্টার’ কিংবা ‘একরাত্রি’র মতো গল্প আজও কি অভিভূত করে না আমাদেরকে ?

 

তবে একথা ঠিক যে, রবীন্দ্রনাথের সময়ে বসে যে-আঙ্গিকে তিনি অসাধারণত্ব দেখাতে পেরেছেন, আজকের দিনে বসে সেই আঙ্গিকে গল্প লিখলে অভিজ্ঞ পাঠকের সেটা পাঠযোগ্য না-হতে পারে। কমলকুমার মজুমদার তাঁর ভাষা ও আঙ্গিকের কারণেই অতি বিশেষ। শহীদুল জহিরের মতো দু-একজন আছেন, যারা আঙ্গিকে অসাধারণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। সুবোধ ঘোষের ‘অযান্ত্রিক’ বিষয় হিসেবে অদৃষ্টপূর্ব, তবে লেখকের কৃতিত্বের কারণেই অসামান্যত্ব লাভ করেছে। সন্দীপন-অমিয়ভূষণ-ওয়ালীউল্লাহ-হাসান আজিজুল হক- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এঁরা কিন্তু কেউ আঙ্গিক নিয়ে বিশেষ কসরত করেননি। গভীর জীবনবোধ, গল্পের বিষয়ের সাথে সাথে তার ভাষা ও উপস্থাপনশৈলিকে একটা মাত্রা দেওয়ার প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই তাদের ছিলো।

 

সহজিয়া : ইদানিং অনুগল্প লেখা হচ্ছে। কারণ কী? স্থানস্বল্পতা, সহজপাঠ্য?

কুমার দীপ : অণুগল্প লেখার কারণ কী, এটা বলা মুশকিল, তবে আমিও লিখেছি দু-চারটে। এমনিতেই ছোটগল্পে অতৃপ্তি থেকে যায়, অণুগল্পে আরও বেশি। নব্বইয়ের দশকে ভোরের কাগজের ‘পাঠক ফোরাম’ যে ফিচার লেখার প্রতিযোগিতা হতো, আমিও যেখানে অনেকবার লিখেছি; ওগুলো তো অণুগল্পের মতোই। জানি না, ওই ফিচারগুলো অণুগল্প চর্চার পথে অনেককে প্রেরণা দিয়েছে কি না, তবে অণুগল্প চর্চার প্রবণতা যে পরে বেড়েছে, একথা বলা যায়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলা উভয় বাংলাতেই এখন অণুগল্পের চর্চা আছে, কিন্তু ওটা যে ঠিক ছোটগুল্পের বিকল্প জায়গা নিতে পেরেছে, তা কিন্তু একেবারেই নয়। একটা রচনাকে তার কাঙ্ক্ষিত বা উপযুক্ত পরিসরে উপস্থাপন করে পাঠকের বাহবা অর্জন করাটাই আসল ব্যাপার, সেটা গল্প হলো না কি অণুগল্প হলো, এটা খুব বড়ো নয়। স্থানস্বল্পতা অণুগল্পের কারণ কি না জানি না, তবে অণুগল্প সময়ের হিসেবে সহজপাঠ্য হলেও অনুধাবনের ক্ষেত্রে হতে পারে না বলেই আমার ধারণা। গদ্যকবিতার মতো ইঙ্গিতময় ভাষার ব্যবহার অণুগল্পকে একটা ভিন্ন শৈল্পিক মাত্রা দিতে পারে কখনও কখনও। হয়তো অতোটা প্রাসঙ্গিক নয়, তবু উল্লেখ করছি যে, এবছরই পুঁথিনিলয় প্রকাশনী থেকে কথাশিল্পের আঙিনায় নামে একটি গদ্যের বই বের হচ্ছে, যেখানে একটি প্রবন্ধে আমার গল্প তথা কথাসাহিত্য বিষয়ক ধ্যান-ধারণার ছাপ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here