বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য ।। কিস্তি : ১

গীতা দাস একজন সাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকায় তার কলাম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। সহজিয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য প্রসঙ্গে। আজ প্রকাশিত হলো কিস্তি ১

 

ভূমিকা

সাহিত্যতত্ত্ব দিয়ে সাহিত্য বিচার-বিশ্লেষণ ও ময়নাতদন্ত করেন তাত্ত্বিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিত্বরা। পাঠক স্বতঃস্ফূর্তভাবে পড়েন। তারা পড়তে পড়তে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে পড়েন এবং পড়ার পর ভাবেন। সহপাঠকদের সঙ্গে ভাবনা বিনিময় করেন, আলোচনা করেন,পর্যালোচনা করেন এবং পাঠ-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

 

একজন অনুসন্ধানী পাঠক হিসেবে বুঝতে পারি সাহিত্যিকদের সাহিত্য সৃষ্টি নিয়ে আলোচিত কিছু তত্ত্ব আছে, তথ্য আছে, আছে মতাদর্শ এবং আছে শাখা-প্রশাখা। যেমন: মৌলিক লেখা, অনুবাদ, ভাবানুবাদ ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যচর্চা হয়। এরই সূত্র ধরে পাঠকমাত্রই জানি মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা চিরাচরিত প্রথা। সাহিত্যিকরা পৃথিবীব্যাপী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সৃজনশীল কর্ম অব্যাহত রেখেছেন। কেউ কেউ মাতৃভাষার বাইরে ইংরেজিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টিতে নিয়োজিত। নিজের সৃষ্টিকে বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে দিতে, আন্তর্জাতিক পরিচয় ও পাঠকের জন্য তাঁরা দ্বিতীয় ভাষায় (Second language) সাহিত্যচর্চা করেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম বসবাসরত দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মাতৃভাষার বাইরে ঐ ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে।

 

আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অধুনাকালে ব্যবহৃত একটি ধারণা ‘Exophony’। দুই বা ততোধিক ভাষায় সৃজনশীল লেখার চর্চাকে বলে ‘Exophony’। যিনি স্বাধীনভাবে দুই বা ততোধিক ভাষায় সৃজনশীল লেখার চর্চা করেন তিনি ‘Exophonic’ সাহিত্যিক। এধরনের সাহিত্যিকরা কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা অভিবাসী কিংবা সামাজিক অথবা রাজনৈতিকভাবে অনগ্রসর কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। অনেকেরই দুটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ও (Bicultural Identity) থাকে। তবে উল্লিখিত সম্প্রদায়গুলোর পরিচয় বহনকারী কোনো একটা বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেমন: চিনুয়া আচেবে, ক্যারেন ব্লিক্সেন, কাহলিল জিবরান, স্যামুয়েল বেকেট প্রমুখরা হলেন ‘Exophonic’ সাহিত্যিক।

 

আবার সাহিত্যিকদের অবস্থা ও অবস্থানকে ভিত্তি করেও নামাকরণ আছে। যেমন : ডায়াসপোরা সাহিত্য। “ডায়াসপোরা পরিস্থিতিতে বাস করছেন অর্থাৎ কোনো কারণে নির্বাসনে থেকে বা জীবিকার অন্বেষণে নিজ দেশ ছেড়ে ভিনদেশে বাস করছেন এমন পরিস্থিতিতে কোনো লেখক যে সৃজনশীল সাহিত্য রচনা করেন সেটি ডায়াসপোরা সাহিত্য।”[i] স্যার ভি. এস. নাইপল, ঝুম্পা লাহিড়ী, কাজুও ইশিগুরো প্রমুখরা ডায়াসপোরা সাহিত্যিক।

নিজ দেশে পরবাসী। এদের লেখা ডায়াসপোরা সাহিত্যের গণ্ডিতে বিবেচিত হয় না। এ গোষ্ঠীর সাহিত্যকর্ম সাহিত্যের মূলধারায় আলোচিত হয় না। এদের কেউ ভাষাগত সংখ্যালঘু, কেউবা জাতিগত সংখ্যালঘু। তাদের রচিত সাহিত্যকে আমরা সংখ্যালঘুর সাহিত্য (Minority Literature) বলতে পারি।

অপর এমন জনগোষ্ঠীও আছেন যারা নিজ দেশের রাষ্ট্রভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করেন। অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখা যায়, এই জনগোষ্ঠী মাতৃভাষার স্থলে রাষ্ট্রীয় ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে বাধ্য হন। কারণ তাঁদের মাতৃভাষা এখানে অচল আনি। নিজ গোষ্ঠীর যাপিত জীবনের কথা তাদের দ্বিতীয় ভাষায় রচিত সাহিত্যে প্রতিফলিত। অনেক সময় তারা শিক্ষা ও জীবিকার সন্ধানে স্বজাতি ও নিজ ভাষাগোষ্ঠীর ভৌগোলিক সীমানার বাইরে অবস্থান করেন, কিন্তু রাষ্ট্র নামক নিজ বাসভূমে বসবাস করেন। তবে রাষ্ট্রীয় মূলকাঠামো ও জাতিসত্ত্বার সঙ্গে তাদের একাত্ম থাকার যুক্তি মোটেই মজবুত নয়। তারা ‘Internally displaced person’ বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি। বাস্তুচ্যুত শুধু স্থান অর্থে নয়, নিজস্ব সামাজিক বৃত্ত অথবা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল হতে বিচ্যুত কিংবা বিচ্ছিন্নও হতে পারে। অথবা নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান ব্যাহত বা উপভোগে বাধা অর্থেও হতে পারে। তাদের লেখায় পরবাসী অবস্থানের মতোই বেদনা অনুরণিত। কিন্তু তারা পরদেশে বসবাসকারী না। নিজ দেশে পরবাসী। এদের লেখা ডায়াসপোরা সাহিত্যের গণ্ডিতে বিবেচিত হয় না। এ গোষ্ঠীর সাহিত্যকর্ম সাহিত্যের মূলধারায় আলোচিত হয় না। এদের কেউ ভাষাগত সংখ্যালঘু, কেউবা জাতিগত সংখ্যালঘু। তাদের রচিত সাহিত্যকে আমরা সংখ্যালঘুর সাহিত্য (Minority Literature) বলতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের বাঙালি মুসলমানদের রচিত ‘মিঞা সাহিত্য’ হলো সংখ্যালঘুর সাহিত্য। এছাড়া ১৯৮১ সালে চীনে সংখ্যালঘু সাহিত্যিকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল Border Literature.

 

সংখ্যালঘুর সাহিত্য বিষয়টি অনুধাবনের জন্য সংখ্যালঘু শব্দটি, তাদের অবস্থা ও অবস্থান বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সংখ্যালঘু একটি কম্পমান শব্দ। রাজনৈতিক শব্দ। এ শব্দটি নিজেই যেন অসহায়ত্বের সমার্থক শব্দ। সংখ্যালঘু নিছক একটি শব্দমাত্র নয়; স্থান, সময় ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক সহিংসতা, বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের ইতিকথা ও ইতিহাস।

 

United Nations Sub-Commission on Prevention of Discrimination and Protection of Minorities-এর স্পেশাল র‍্যাপোটিয়ার ফ্রান্সেসকো কাপোতর্তি ১৯৭৯ সালে সংখ্যালঘুর সংজ্ঞায় বলেছেন, “A group numerically inferior to the rest of the population of a State, in a non-dominant position, whose members – being nationals of the State – possess ethnic, religious or linguistic characteristics differing from those of the rest of the population and show, if only implicitly, a sense of solidarity, directed towards preserving their culture, traditions, religion or language.”[ii]

অর্থাৎ, যখন কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বিশ্বাস, ভাষা, ধর্ম বা ভাষাগত উৎপত্তির ভিন্নতার কারণে কোন সম্প্রদায় জনসংখ্যায় কম হয়, তখন সেই সম্প্রদায়টি সংখ্যালঘু হিসেব পরিচিতি পায়। আরও বিশ্লেষণ করে বললে সংখ্যালঘুর বৈশিষ্ট্য শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, তারা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক ও নিয়ামক নয়, এবং সংখ্যাগুরু থেকে তারা ভিন্ন। জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে রাষ্ট্রীয় মূলস্রোতের বাইরে তাদের অবস্থান। নিজের মাতৃভাষা চর্চা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। অনেকের নিজস্ব কোনো হরফও নেই। যেমন: পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী, সিলেটে মণিপুরী ও খাসিয়া, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ অন্যান্য এলাকায়ও রয়েছে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, যারা জাতিগত সংখ্যালঘু। বাংলাদেশে বিহারীরা ভাষাগত সংখ্যালঘু। বাঙালি হিন্দুরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু। প্রসঙ্গত একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এখানে উল্লেখ করা যায় যে, বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দুরা জাতি ও ভাষা বিবেচনায় সাহিত্যের মূলস্রোতের অন্তর্ভূক্ত, অবশ্য এক সময়ে অনেকে আবার বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের রচনার ক্ষেত্রে এসব বিবেচনাকে পাশ কাটিয়ে ‘মুসলিম সাহিত্য’ বলে বিভাজন করেছেন।

 

উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকে সংখ্যালঘুর সাহিত্য  (Minority’s Literature) বলা যেতে পারে। কারণ, দ্বিতীয় ভাষায় সাহিত্যচর্চার সাথে Exophony ও ডায়াসপোরা সাহিত্যচর্চার পার্থক্য রয়েছে। দ্বিতীয় ভাষায় সাহিত্যচর্চা হলো মাতৃভাষার বাইরে যে-কোনো ভাষায় সাহিত্যচর্চা। অন্যদিকে, Exophony সাহিত্যচর্চায় ব্যবহৃত ভাষার সংখ্যা বিবেচ্য, ডায়াসপোরা সাহিত্যে লেখকের অবস্থান বা অভিবাসনের বিষয়টি বিবেচ্য। আর রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কর্তৃক সৃষ্ট পরিবেশে উদ্ভূত অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত ব্যক্তির নিজদেশে দ্বিতীয় ভাষায় সাহিত্যচর্চা হলো সংখ্যালঘুর সাহিত্য।

‘সংখ্যালঘু’ শব্দটিরও স্বীকৃতি দেয় না। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাকস্বাধীনতার বিষয়টি থাকে সংকুচিত ও নিয়ন্ত্রিত। কৌশলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তথাকথিত জনপ্রেম, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম এবং একাত্মতার অজুহাতে সংখ্যাগুরুর সাথে একীভূত করে চাপিয়ে রাখে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাহিত্যের সঙ্গে সংখ্যালঘুর সাহিত্যের পার্থক্য রয়েছে। যেমন: অভিজিৎ সেনের রহু চন্ডালের হাড় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাযাবর বাজিকরদের কাহিনি। তিনি পশ্চিম বাংলার দিনাজপুরের বালুঘাট মহকুমার তপন থানায় চাকরি করতে গিয়ে বাজিকরদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে আগ্রহী হন। পরবর্তীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বাজিকরদের দেড়শ বছরের পরিক্রমা নিয়ে রচনা করেন নিয়ে এক মহাকাব্যিক উপন্যাস রহু চন্ডালের হাড়। মহাশ্বেতা দেবীর মুণ্ডা জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম ও বিদ্রোহ নিয়ে লেখা উপন্যাস অরণ্যের অধিকার। তিনি উপন্যাসটি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “কে.এস. সিং এর ‘ডাস্ট স্টর্ম অ্যান্ড হ্যাংগিং মিস্ট’ বইটি পড়ে আমি ‘অরণ্যের অধিকার’ লিখতে অনুপ্রাণিত হই।” ঐতিহাসিক চরিত্র বিরসা ও মুণ্ডা নৃগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে মহাশ্বেতা দেবী তাঁর এই উপন্যাসে অবিস্মরণীয় করে রেখেছেন। অভিজিৎ সেন বা মহাশ্বেতা দেবী কোনো প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জীবনযাপনকে কেন্দ্র করে, উপজীব্য করে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। তারা এ সাহিত্য সৃষ্টি করতে গিয়ে নিজ অবস্থান, নিজস্ব জাতিগত অবস্থান নিয়ে কোনোরকম আতঙ্কে ছিলেন না। কোনো চরিত্র সৃষ্টিতে বা কোনো ঘটনার বিশ্লেষণে তারা দ্বিধাগ্রস্ত হননি। ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে অথবা লোকশ্রুতির অকপট ব্যবহারে শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনোরকম ভয়-ভীতির আশঙ্কা করেননি।

 

পৃথিবীব্যাপী, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের ক্ষমতাধর শক্তি নিজ রাষ্ট্রে সাধারণত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এমনকি ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটিরও স্বীকৃতি দেয় না। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাকস্বাধীনতার বিষয়টি থাকে সংকুচিত ও নিয়ন্ত্রিত। কৌশলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তথাকথিত জনপ্রেম, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম এবং একাত্মতার অজুহাতে সংখ্যাগুরুর সাথে একীভূত করে চাপিয়ে রাখে। ফলে তারা অস্তিত্বের সংকটে দিনাতিপাত করে। সুতরাং, এমন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর রচিত বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম ‘সংখ্যালঘুর সাহিত্য’ বলে বিবেচ্য হওয়াই সমীচীন এবং তাদের লেখায় নিজ জনগোষ্ঠীর সমষ্টিগত সংকট ও সংগ্রামের চিত্র বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ সংখ্যালঘুর সাহিত্য। এমনকি ঐতিহাসিকভাবে সাম্প্রদায়িক কারণে তৎকালীন সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের রচিত সাহিত্য নিজ ভৌগোলিক সীমানায়ও সংরক্ষণ করা যায়নি।

 

আলোচনায় প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীর বাংলা ভাষায় সৃষ্ট সাহিত্য বিষয়টি স্থান পাবে। বাংলাদেশে তাদের অবস্থা ও অবস্থান বিষয়ক আলোচনাও এখানে প্রসঙ্গক্রমে অন্বেষণ ও বিশ্লেষণ করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, তারা দ্বিতীয় ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেছেন বিশ শতকের ত্রিশের দশকে।

 

এ প্রসঙ্গে শুভ্র জ্যোতি চাকমা বলেছেন, “চুনীলাল দেওয়ান ছিলেন একজন হ্যাডম্যান। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের থেকে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন চিত্রশিল্পী। তিনি কলকাতা আর্ট কলেজে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ফাইন আর্টসে ডিপ্লমা পাশ করেন। … ১৯৩০ খ্রীস্টাব্দে তাঁর রচিত ২টি শিরোনামহীন বাংলা কবিতা পাওয়া গেছে। … চুনিলাল দেওয়ান–এর কবিতা রচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে আধুনিক সাহিত্য চর্চা শুরু হয়েছিল এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। তাঁর পূর্বে কোন পাহাড়ি আধুনিক সাহিত্যচর্চা করেননি।”[iii]

 

কথাসাহিত্যের অন্যতম শাখা ছোটগল্প বিষয়ে জানা যায়, তিরিশের দশক থেকেই পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর বাংলা ভাষায় রচিত ছোটগল্প স্থানীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ সমন্ধে নন্দলাল শর্মা জানিয়েছেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোটগল্প লেখা শুরু হয়েছে বিশ শতকের ত্রিশের দশকে। মূলত ‘গৈরিকা’ (১৯৩৬-১৯৫১) পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই ছোটগল্প চর্চা শুরু হয়। গৈরিকা পত্রিকায় বেশ কয়েকটি শিল্পসফল ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে অনেকে লেখকই ছোটগল্প রচনা ছেড়ে দেন। … পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ছোটগল্পকার কুমার কোকনদাক্ষ রায় (১৯১১-১৯৮৬)। ত্রিশের দশকে তিনি ছাত্রাবস্থায় ছোটগল্প লিখতে শুরু করেন। কলকাতার মাসিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক দেশ, চট্টগ্রামের দেশপ্রিয় প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি তখন ছোটগল্প লিখতেন।”[iv]

 

বিপ্রদাশ বড়ুয়া ও নন্দলাল শর্মার অনুসন্ধান থেকে আরও জানা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীর বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু হয়েছিল স্বভূমে নয়, বরং স্বজাতির বলয়ের বাইরে সুদুর কলকাতায়।

 

সাহিত্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য শাখা হলো উপন্যাস। উপন্যাস কোনো একটি সামগ্রিক চিত্রকে বহন করে, যার উপজীব্য হতে পারে সময়, সমাজ, স্থান, রাজনৈতিক বা কারও জীবনের প্রেক্ষাপট। উপন্যাসের আকার যা-ই হোক না কেন, এর পরিসর বৃহৎ। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে যে-কোনো জনগোষ্ঠীর রচিত উপন্যাসের কথা। প্রয়াত কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লিখেছিলেন, ‘‘আমার কেবলই মনে হচ্ছে চাকমা শিল্পীর লেখা চাকমা ভাষার উপন্যাস চাই; সেই উপন্যাসের বেশির ভাগ লোক চাকমা, তাদের বাড়ি রাঙামাটি কী খাগড়াছড়ি কী সুন্দরবানের কোনো পাহাড়ি জনপদে, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্গে তাদের বঞ্চনা, অপমান ও প্রতিরোধ এমন মিলেমিশে থাকবে যে একটি থেকে আরেকটি আলাদা করা যাবে না। …’’[v]

 

যদিও বাংলাদেশে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে আরও অনেক ভাষা থাকলেও কথাশিল্পী চাকমা ভাষার কথা কেন বললেন তা নিয়ে অনেকে এ লেখাটির সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ভাষ্যে চাকমা জনগোষ্ঠীর রচিত বা কোনো নৃগোষ্ঠীর বিশেষ করে উপন্যাস রচনার গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা নৃগোষ্ঠী তথা সংখ্যালঘুর সৃষ্ট উপন্যাস রচনার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন এজন্য যে, উপন্যাসে তাদের যাপিত জীবনের দুঃখ-ব্যথা, শোষণ, নিপীড়ন, এবং সংগ্রামের সামগ্রিক চিত্র উঠে আসবে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে সংখ্যালঘুর নিজস্ব উপন্যাস সৃষ্টির মাধম্যে সংখ্যালঘুর সাহিত্যকেই প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, একবিংশ শতাব্দীতে চাকমা জনগোষ্ঠীর দুইজন সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় চারটি উপন্যাস লিখেছেন। কে. ভি. দেবাশীষ চাকমা প্রথম দশকে দুইটি ও দ্বিতীয় দশকে একটি, এবং বিপম চাকমা দ্বিতীয় দশকে (২০১৮ সালে) একটি উপন্যাস লিখেছেন।

 

এ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীসমূহের কথাসাহিত্য ও এর চর্চা নিয়ে পর্যালোচনার প্রয়াস রয়েছে। এ আলোচনায় আলোকপাত করা হবে মূলত তিনটি বিষয়ের উপরে। প্রথমত, বিশুদ্ধ সাহিত্যের দিক। দ্বিতীয়ত, সাহিত্যিকের লেখায় নিজ বাসভূমের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন। তৃতীয়ত ভাষার ব্যবহার।

 

আরও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যায়, বর্তমান আলোচনার উপজীব্য হলো কথাসাহিত্য এবং বিশেষ করে গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত কথাসাহিত্য। সুনির্দিষ্ট সাহিত্যিককে ভিত্তি করেও আলোচনা আবর্তিত হবে। এজন্য ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট সাহিত্যিকের বিভিন্ন মুদ্রিত (অনলাইন প্রকাশিত পত্র-পত্রিকাসহ) রচনা সম্ভার সংগ্রহ করে একত্রিত করা সম্ভব হলে, সেসবও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ অনুসন্ধান ও আলোচনার মূল পদ্ধতি হবে প্রান্তিক নৃগোষ্ঠী কর্তৃক রচিত কথাসাহিত্য বিশ্লেষণ করা, সহায়ক হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা এবং কথাসাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা।

 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচিতি গভীরভাবে প্রোথিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এর একটি উদাহরণ। এ অঞ্চলের একসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। এ চুক্তির বাস্তবায়ন, অর্জন ও সাফল্য নিয়ে অনেকক্ষেত্রেই এখনও নানা পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এখানে সমতলের মতো স্থানীয় সরকার কাঠামো ও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে প্রশাসনিক কাঠামো আছে। আছে শান্তিচুক্তির আওতায় স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিশেষ ব্যবস্থা। আর আছে বা ছিল সামরিকবাহিনীর অলিখিত কঠোর অবস্থান। আছে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব। রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি হেডম্যান ও কারবারী প্রথা রয়েছে। হেডম্যানদের ক্ষমতার পরিসর মৌজা পর্যায়ে এবং কারবারীদের পাড়া পর্যায়ে। পাহাড়ের গ্রামগুলো পাড়া হিসেবে বেশি পরিচিত এবং প্রত্যেক পাড়ায় রাজার প্রতিনিধি হিসেবে একজন করে কারবারী রয়েছেন।[vi] পার্বত্য চট্টগ্রামের গল্প উপন্যাসে রাজার এসব প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ও ভূমিকা বিভিন্নভাবে উল্লিখিত হয়েছে। এখানে জুম চাষকে কেন্দ্র করে নৃগোষ্ঠীদের জীবনযাপন। এরা জুম্ম জাতিগোষ্ঠী হিসেবেও পরিচিত, তবে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, বিশ্বাস,আচার-আচরণ, সামাজিক রীতিনীতি, বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি রয়েছে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীদের জনজীবনে প্রাত্যহিকতায় মিশে আছে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা, অসহায়ত্ব। তাদের নিজস্ব সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনযাপন অস্তিত্ত্বের সংকটে দোলায়িত।

 

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদের ২৭নং ধারায়  বলা হয়েছে, “যেসব দেশে জাতিগত, ধর্মগত অথবা ভাষাগত সংখ্যালঘু রয়েছে সেসব দেশে অনুরূপ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য তাদের গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে সম্মিলিতভাবে নিজেদের সংস্কৃতি উপভোগ, নিজেদের ধর্ম ব্যক্ত ও অনুশীলন অথবা নিজেদের ভাষা ব্যবহার করার অধিকার অস্বীকার করা যাবে না।”[vii] অনুসন্ধানে সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় ভাষায় রচিত কথাসাহিত্যে এ অধিকার স্বীকার ও অস্বীকারের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।

 

সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী কর্তৃক প্রণীত নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত আইন দ্বারা সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীদের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাহিত্যিকদের রচিত বাংলা কথাসাহিত্য বুঝতে হলে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনার অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তা না হলে তাদের সাহিত্যপাঠ নিজের বোধে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। কারণ এসব কথাসাহিত্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক অস্থিরতা, ভাষাগত বৈষম্য, সাংস্কৃতিকভাবে উৎখাত ও বঞ্চনার কথাই প্রতিফলিত হয়েছে। অধিকন্তু, বহিরাগত শক্তি কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীর বংশ পরম্পরায় লালিত সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ও সংস্কারের উপর আঘাত ও ধ্বংস করার বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের নমুনা পাই তাদের রচিত কথাসাহিত্যে। প্রাকৃতিক সম্পদে আজন্ম যে অধিকার তা থেকে বঞ্চিত বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বেদখল ও ধ্বংস করে তাদেরকে অস্তিত্বের সংকটে ছুঁড়ে ফেলার অসহায়ত্বে নিমজ্জিত গল্প-উপন্যাসের ঘটনাগুলো। জাতিগত সংখ্যালঘুদের জনজীবনের অন্তরাত্মার শূন্যতার বয়ান নিয়েই দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলায় রচিত সংখ্যালঘুর কথাসাহিত্য। সংখ্যালঘুদের কথাসাহিত্য মূল স্রোতধারার অলক্ষ্যে স্বতন্ত্র সরব অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে ধীর লয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

নন্দলাল শর্মার মতে,[viii] কথাসাহিত্যে নৃগোষ্ঠী জীবনের পরিচয় প্রথমবারের মতো পাওয়া যায় ষাটের দশকে প্রকাশিত বীরকুমার তঞ্চঙ্গ্যার ‘কুমারী ডারলুইপুই ও একটি বিধান’ এবং সলিল রায়ের ‘পাহাড়ের বুকে একটি সংসার’ ছোটগল্প দুটিতে। বিগত শতকের ত্রিশের দশকে ছোটগল্পকার কুমার কোকনদাক্ষ রায়ের হাত দিয়ে চাকমা জনগোষ্ঠী কর্তৃক বাংলা ভাষায় ছোটগল্প রচনা শুরু হলেও, বই আকারে প্রকাশ করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় নয় দশক।

 

চাকমা নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বিপম চাকমাই দ্বিতীয় ভাষা বাংলায় সর্বপ্রথম গল্প সংকলন প্রকাশ করেন। তাঁর গল্পগ্রন্থের নাম অজগর।  ১১টি গল্প নিয়ে এ সংকলন। বইটি তিউড়ি প্রকাশনী থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। এতে দ্বিতীয় ভাষায় রচিত নির্যাতিত সংখ্যালঘুর ইতিকথাই প্রথমবারের মতো মলাট বন্দী হয়ে বৃহত্তর পরিসরে প্রবেশ করেছে। লেখক তাঁর দ্বিতীয় ভাষা বাংলায় গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন বলেই মূলস্রোতের কিছু অনুসন্ধানী পাঠক তা পড়তে পেরেছেন, জানতে পেরেছেন। তবে সংখ্যাগুরুর সীমিত সংখ্যক পাঠকের মধ্যেই এই পাঠ ও লেখক পরিচিতি সীমাবদ্ধ। এই সৃষ্টিকর্মসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের রচনাকে বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তর ভূবনে পরিচয় করিয়ে দেয়া আবশ্যক। এ আবশ্যকতার দায়িত্ববোধ ও প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি থেকেই এ সংজ্ঞায়ন, শ্রেণীকরণ, এবং অনুসন্ধান।

(চলবে)

[i] মোজাফফর হোসেন, দক্ষিণ এশিয়ার ডায়াসপোরা সাহিত্য (ঢাকা: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., ২০২০)।

[ii] Francesco Capotorti, Study on the Rights of Persons Belonging to Ethnic Religious and Linguistic Minorities (New York: United Nations, 1979, para. 568).

[iii] শুভ্র জ্যোতি চাকমা, “বিংশ শতাব্দী পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সাহিত্য চর্চার নবজাগরণ,” জুম জার্নাল আগস্ট ২০২০। লিংক:https://www.jumjournal.com/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BE/

[iv] নন্দলাল শর্মা, আকাশে হেলান দিয়ে (রাঙামাটি: রাঙামাটি প্রকাশনী, ২০০৩)।

[v] আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সংস্কৃতির ভাঙা সেতু, “চাকমা উপন্যাস চাই” (ঢাকা: মাওলা বাদার্স, ২০১৩)। উল্লেখ্য যে, উদ্ধৃতিটিতে ‘সুন্দরবান’ লেখা রয়েছে। লেখক বান্দরবান লিখতে গিয়ে সুন্দরবান লিখেছিলেন কিনা বা কোনো প্রকার মুদ্রণ প্রমাদের কারণে এমনটা ঘটেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।]

[vi] Chittagong Hill Tracts Regulation, 1900 (Act 1 of 1900).

[vii] Article 27 of the International Covenant on Civil and Political Rights.

[viii] নন্দলাল শর্মা, আকাশে হেলান দিয়ে (রাঙামাটি: রাঙামাটি প্রকাশনী, ২০০৩)।

আগের লেখা‘সহজিয়া’র সঙ্গে সহজ কথা
পরের লেখাবার্মা নীতি-সাহিত্য ।। কিস্তি : ২
গীতা দাস
গীতা দাসের জন্ম নরসিংদী জেলার সদর উপজেলায়। তিনি একজন সাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই লেখালেখি করছেন। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকায় তার কলাম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়াও অনলাইনে পরিচালিত বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সাহিত্য বিষয়ক অনুসন্ধান ও সাহিত্য সমালোচনা তার নিয়মিত আগ্রহের বিষয়।

5 মন্তব্যসমূহ

  1. বহুদিন পর একটি আন্তরিক, খাঁটি, ভণিতাহীন পর্যালোচনা পড়ে উপকৃত, মুগ্ধ হলাম। আশাকরি, লেখক সংখ্যালঘু সাহিত্য নিয়ে আরো লিখবেন। বিশ্লেষকের রাজনৈতিক স্বচ্ছতা আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চাকমা সাহিত্য চাই’ লেখাটি নিয়ে বেশ কয়েকবার ইলিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, মনে পড়ে।

  2. চাঙমাদের প্রথম উপন্যাস “ফেবো”। যা চাঙমা বর্ণমালা ও চাঙমা ভাষায় রচিত।

  3. খুব ভালো লাগলো। আলাপচারিতায় জানতে পেরেছিলাম ভাষা নিয়ে কিছু লিখছেন। এখন মনে হচ্ছে তা আরও বিস্তৃত। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।

    আপনার জন্য শুভ কামনা।

  4. তথ্যবহুল। অনেক নতুন কিছু জানলাম।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here