চল্লিশ পেরুলেই চালশে! গেয়েছেন কবির সুমন। আদতে কী তা-ই? বিজ্ঞান কী বলে? সত্যিই কি বদল ঘটে চল্লিশের পর? কী ভাবে চল্লিশ উত্তীর্ণ পুরুষ? চল্লিশ পেরুনো পুরুষের পৃথিবী খানিকটা জটিলই বোধ হয়। রিডার্স ডাইজেস্ট ২০০৯ সালে প্রকাশ করেছিল বিশেষ প্রতিবেদন Men’s Midlife : Survival Guide। এই প্রতিবেদনের কেন্দ্রবিন্দু চল্লিশ-উত্তীর্ণ পুরুষ। যার শুরুটা হয়েছে এমন এক পুরুষের গল্প দিয়ে যার সব আছে : সুদর্শন স্ত্রী, তিনটি সন্তান, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইডের পাহাড়ের স্বপ্নের মতো বাড়ি। তবু এই ধাতব শিল্পপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী একটি পাঁচ তারকা বাণিজ্যিক হোটেলে বসে মাথা গুঁজে বলেন, ‘‘আমি কেন শূন্যতা বোধ করি?’’ ডাইজেস্টের ভাষায় এখানেই শুরু হয়ে গেছে ধনি ব্যবসায়ী রব ব্র্যান্ডবার্গের মিডলাইফ বা মধ্যবর্তী জীবন। তিনি বুঝতে পারেন স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। টাকা বানানো হয়ে পড়েছে অর্থহীন। মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে শূন্যতার বোধ। চল্লিশ পেরুলে এরকমই ঘটে যেন।
মন
চল্লিশের ধাক্কায় অনেকে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ হয়ে পড়েন উল্টো আচরণের; কম বয়সী মেয়েদের সঙ্গে মজা কুড়াতে পছন্দ করেন। চুলে কলপ দেন, হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন। পৃথিবীকে প্রমাণের চেষ্টা করেন এখনও তরুণ আছেন তিনি। The Marital Mid Life Crisis প্রতিবেদনের লেখক অ্যানি ব্রেলসফোর্ড বলেন, ‘‘পুরুষরা হঠাৎ করেই চারপাশ নিয়ে ভয়ের কবলে পড়েন। হায়, জীবনের অর্ধেক পেরিয়ে এসেছি, যা-কিছু করতে চেয়েছিলাম তার কিছুই করি নি।’’ পুরুষরা ভাবেন জীবন আমাকে পেরিয়ে গেছে। আমার আর সময় হবে? হয় এখনই, নয়তো সময় নেই। — এমন এক বোধ তাড়া করে পুরুষকে। আত্মীয় স্বজনের মৃত্যু, চাকরিতে পরিবর্তন, বেকারত্ব, বিয়ে ভাঙার খবর — সব কিছু মিলিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে পুরুষ।
শরীর
শরীরে বাসা বাঁধে রোগ। বৈবাহিক সম্পর্ক এসময় সব চেয়ে নিচু স্তরে নেমে আসে। চল্লিশের পর প্রতি বছর টেস্টোস্টেরন হরমোনের হার কমতে থাকে। দুর্বল হয়ে আসে পেশী, শরীরে মেদ জমে, আলস্য পেয়ে বসে। অবসাদ ক্লান্ত করে তোলে।
যৌনতা
চল্লিশের পর পুরুষের যৌনতা কেমন? এ বিষয়ে কৌতুক করে বলা হয়, এ বয়সে যৌনতা শরীরের নিম্নভাগ থেকে মাথায় গিয়ে ওঠে; অর্থাৎ শরীরে যৌনতার আগ্রহ কমতে থাকলেও মন জুড়ে শরীরী তৎপরতা চলতেই থাকে। সত্যি কথা হলো, টেস্টোস্টেরনের হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমতে থাকায় শরীর আর আগের মতো সাড়া দেয় না। চল্লিশ-উত্তীর্ণ পুরুষের কেউ কেউ ভুগে থাকেন উত্থান-শিথিলতা বা ইরেকটাইল ডিজফাংশনে।
সংকটের শুরু
সংকটের শুরু হয় তখনই, যখন পুরুষটি নিজেকে ভাবতে থাকে বিশ বছর বয়সী যুবকের মতো করে। সংস্কৃতি ভেদে পুরুষের আচরণ ভিন্ন হয়। উন্নত দেশে পুরুষরা দ্রুত গতিশীল গাড়ি কিনতে আগ্রহী হয়, ডিস্কো-পার্টিতে তরুণ বয়সের মতো করে নিজেকে হাজির করে। পুরনো বিয়েটিকে পেছনে ফেলে কম বয়সী মেয়েদের দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে এসব কর্মকাণ্ড সব সময় সম্ভবপর না হলেও পুরুষরা তারুণ্যের উপযোগী কর্মকাণ্ড করতে দারুণ আগ্রহ দেখান। অল্প বয়সী নারীর সংস্পর্শে আসতে চান, তরুণদের উপযোগী পোশাক পরেন, চুল-জুতা-পোশাক নিয়ে হঠাৎ অতিরিক্ত আগ্রহ দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চল্লিশ উত্তীর্ণ পুরুষের লক্ষ্যবিন্দু হয়ে ওঠে অল্পবয়সী নারী।
মিডলাইফের দশ লক্ষণ
১. চাকরি পরিবর্তন : কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরির কথা ভাবতে থাকেন। বাড়িতে এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
২. মৃত্যুঝুঁকি : অনেকে মৃত্যুঝুঁকি নেয়ার ভাবনাচিন্তা প্রকাশ করেন। ‘‘লাইফ ইজ শর্ট’’ — এই দার্শনিকতা পেয়ে বসে।
৩. যত্ন-আত্তি : নিজের বেশভূষা শরীরের যত্ন নেয়া আরম্ভ করেন কেউ কেউ। চুল আচড়ে দেখেন, পাকা চুল বাছাই করেন, পাকা দাড়ি দেখে বেদনা বোধ করেন।
৪. বিশ বছর বয়সের দিকে ফিরে যাওয়া : বিশ বছর বয়সের দিকে ফিরে যাওয়ার অপচেষ্টা দেখা যায়। যেমন : মিউজিক কনসার্টে যাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান করা, পার্টিমুখী হওয়া ইত্যাদি।
৫. শরীরচর্চা : অতিরিক্ত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার প্রবণতা দেখা দেয় অনেকের মধ্যে।
৬. মাত্রাতিরিক্ত খরচ : কারো কারো মধ্যে দেখা যায় অতিরিক্ত খরচ করার ঝোঁক। দামি টিভি, ডিভাইস কিনে ফেলেন।
৭. প্রেম-প্রেম খেলা : পুরুষের মধ্যে প্রবিষ্ট হয় এই বোধ — ‘‘বুড়িয়ে যাই নি।’’ অতএব নিজের কন্যার চেয়েও কমবয়সী মেয়ের সঙ্গে প্রেম-প্রেম খেলা খেলতে বাধে না।
৮. পুরনো প্রেমের খোঁজে : নতুন প্রেম যখন জমে ওঠে না, তখন চাই পুরনো প্রেম। আর তাই এখানে ওখানে খুঁজে ফেরেন পুরনো প্রেমকে।
৯. দায়িত্বজ্ঞানহীনতা : কেউ কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেন। সময়, প্রয়োজন, গুরুত্ব ভুলে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করে বসেন।
১০. স্মৃতি রোমন্থন : অতিরিক্ত স্মৃতিরোমন্থনে কাতর হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। আমাদের সময় এটা ছিল, ওটা ছিল… আহা, কেমন দিন ছিল…! এমন অনুভূতি পেয়ে বসে।
রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে