কায়সার হকের কবিতা

সূত্র : ফাউন্টেইন ইন্ক ম্যাগাজিন

বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষার কবি কায়সার হক। একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে দীর্ঘ কাল শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর বই : Pariah and Other Poems (2017) এবং Published in the Streets of Dhaka (2012)। কায়সার হকের তিনটি কবিতা অনুবাদ করেছেন অনুবাদক মো. নুরুল ইসলাম

 

নাঙ্গা পাগলার জাতীয় ভাষণ

আমার সুপ্রিয় দেশবাসী
পুরুষ ও নারীকূল
চলে এসো
বেঁধে ফেলো কোমরে গামছা
শক্ত করে

গোটা দুনিয়ায় সবচেয়ে
ঝলমলে সেতু, চলো
নিজেরাই বানিয়ে ফেলি
নিজেদের পকেটের টাকায়
প্রাকৃতিক পুঁজিতে

ঝাঁজাল রবি, মৌসুমি মেঘের বহর
মন জাগানিয়া গোসলের পর
রংধনুর রঙ্গে মাখা সেতু
সমস্ত আসমানে পাখা মেলা সেতু

চলে এসো
ছুঁড়ে ফেলে দাও
তোমাদের বাহারি পোশাক
বলো, পরবো না এই জঞ্জাল আর
কোনদিন
কেবল বিদেশে চালান দিতে
রেখে দিবো
বিদেশি পয়সা জমাতে
রেখে দিবো

 

রাজাধিরাজের মত
সাজবো আমরা
গায়ে আকাশ মুড়িয়ে
মিছিলে যাবো
স্বপ্নের সেতু পেরিয়ে
সাত সাগর মাড়িয়ে
বিশাল তের নদী পেরিয়ে
অধরা স্বপ্নরাজ্য ছাড়িয়ে

 

যুদ্ধ 

স্যার

আপনি তো

দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন

প্রশ্নের সুরে বললেন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী

 

জ্বি

১৯৭১ সালে

লাখো মুক্তিযোদ্ধার জীর্ণ সাধারণ

কিন্তু অনড় সেই বাহিনীতে

আমিও ছিলাম এক মুক্তিযোদ্ধা

 

যেহেতু এখন

বিজয় দিবস আসছে আবার

অতি অল্প শব্দে যদি

আমাদের একটু বলতেন

যুদ্ধ আসলে কি জিনিস

 

আচ্ছা

যুদ্ধ তো আসলে যুদ্ধই

 

কিন্তু এটা আসলে কেমন হয়

 

যুদ্ধ, অনেকটাই যৌন মিলনের মত

থাকে দু’য়ের কারুকাজ

 

তুমি পিছু পিছু ঘুরতে থাকো

নাকে গন্ধ শুকে শুকে

অপরপক্ষ তোমায় খানিকটা জ্বালায়

সুন্দর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে

গুন গুন করে গান ধরে মনে মনে

তুমি থাকো অপেক্ষায়

 

উত্তেজনা চরমে ওঠে

কোন এক দর্শনে

 

নিজের অস্ত্র সাথে নিয়ে

তুমি পেছনে লেগে থাকো

কোনঠাসা করার আপ্রাণ চেষ্টা

একদম ঘিরে ফেলো চারিদিকে

তারপর সজোরে বিশাল আক্রমণ

 

তবুও এক দিক থেকে

যৌন মিলনের মত নয় যুদ্ধ

দিতে পারে না তৃপ্তি সমান

উভয়কে

 

সীমানা

ধরো, তোমার স্বপ্নের নারী

নেই তোমার আশেপাশে, কারণ

থাকে সে অনেক দূরে

কল্পনা করো সীমানার ওপারে।

 

অনেক ঠেলা-ধাক্কার পরে

জনবহুল বাসে শরীর পাকিয়ে

যাত্রা করলে তুমি,

অস্বচ্ছ রাতে, কোন এক ফেরিতে করে

সার্চলাইটের আলোতে ক্ষত-বিক্ষত তুমি,

 

সীমানার এই মলিন নগরে

এক-পাওয়ালা রিকশাশ্রমিক সারাদিন ঘুরে

নিয়ে যায় তোমায় নগরের সবচেয়ে

ভালো হোটেলের সবচেয়ে ভালো

৬/৮ এক রুমে।

 

কিন্তু সীমান্ত পাড়ি দেয়া ছেড়ে

শুয়ে পড়ে তুমি কল্পনা করো

সেই নারীর, এবং এই সীমানারঃ

পৃথিবীকে টুকরো টুকরো করা

ধারালো এক নিখুঁত ছুরি

 

পৃথিবীর অজান্তেই

ছিন্ন করে আবার জুড়ে দেয়

এক সাথে ক্ষনিকের মাঝে এক পলকে

অদেখায় এই ছুরি চলে

শত শত ঘরের বুকের ‘পরে

 

বিকৃত এক মেজাজে —

সারা পরিবার বসে খায়

এক পতাকার তলে

ভিন জাতির স্বরে গুন গুন গান ধরে

মলমূত্র ত্যাগ করে আরেক পতাকার তলে।

 

ক্ষুব্ধ নীলাভ চাঁদের ছায়ায়

তুমি শুয়ে থাকো

ঐ ভাগ্যরেখার ‘পরে।

তুমি, তোমার বাসনা, এই সীমানা

এখন একাকার।

 

পতাকাহীনতার পতাকা বিশ্বজনীন

ধরেছো তুমি উড্ডীন।

পাখির কলতানের সুরে

প্রভাতের প্রথম আলো

সশব্দে জানায় লাল সালাম।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here