কানুরাম কুজুরের জীবন-যাপন

সাক্ষী কুমারীর সোহরাই চিত্রকলা

আমোদপুরের বাসিন্দাদের আজ আমোদের দিন। বুড়োরা এই দিনটিকে আমোদ বলেই জানে। আমোদের মধ্যে থাকতে হলে আমাদেরও যেতে হবে আমোদপুরে। ঠিক করলাম আমরা আমোদপুরে যাবো। ভাদাই পর্বকে ঘিরে আমোদপুরের ঘরবাড়ি চকচক করবে বলেই আমরা ধরে নিয়েছি। যাত্রাপথে কাঁচাপাকা রাস্তা মিলে ন’দশ মাইল পাড়ি দিয়ে আমোদপুরে পৌঁছানো যায়। সকাল সকাল পাড়ায় পাড়ায় মাদলের গম্ভীর তাল বেজে উঠবে বলে আমরা কান সজাগ করে রাখি। রবিদা’র বাড়ির পেছনে বিশাল সেই গাছের নিচে পাড়ার সব লোক জুটেছে। কিশোর-কিশোরী সমেত পাঁচজন নতুন কাপড়ে দাঁড়িয়ে। কেলি-কদমের মতো সেই কারাম বৃক্ষের নিচে পূজা অর্চনা করছেন পাড়ার উপস্থিত সকলে। জল ঢেলে গাছের গোড়া লেপে তাতে তেল সিঁদুর মেখে ধূপ দিয়ে চারদিকে আচ্ছন্ন করে তুলেছে তারা। আমরা যেহেতু আমোদপুরের যাত্রী আর রবিদা পূর্বপরিচিত তাই এতো ভিড়ে ঠিকই আমাদের জায়গা হলো। রবি দাদা বয়সে আমাদের থেকে বছর দশেক বড়ো হলেও বহুবার আসা-যাওয়ায় বন্ধুস্থানীয় হয়ে উঠেছে। আমাদের দলবলের বন্ধুদের দেখার সাথে সাথে রবি দাদা দু’হাত জোর করে নমস্কার জানায়।

 

পাচুলি বৌদি কোমরে গিট দিয়ে শাড়ি পেঁচিয়েছে। কালো হাতে জ্বলজ্বল করছে সাদা শাঁখা, খয়েরি রঙের পলা ঘিরে রেখেছে দুদিক থেকে। কপাল ভরা সিঁদুরের রঙ। খোঁপা বেঁধেছে ঠিক মাথার মাঝখানে। যেন সাঁইজির আখড়ার কোনো বাউলানি। সকলে চলছে কারাম ডালের পিছনে পিছনে।

 

পরিস্কার সাদা সুতো দিয়ে গাছটাকে ঘিরে দেবে। একে এক বিবর্ণ সবুজ গাছের শরীর সুতোর রঙে সাদা হয়ে গেলো। পাতা গুনে গুনে গাছের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে বৃদ্ধ কানুরাম কুজুর প্রথম ডাল কাটলেন। এরপর ভিন্ন পাড়ার লোকজনের ডাল কাটার বাধা দূর হলো। এই নিয়ম চলে আসছে পাড়ায় পাড়ায়। যারা ভিন পাড়ার লোক তারা অন্য পাড়ায় আগে ডাল কাটার অধিকারী নয়। কারাম গাছ এখন আর সহজে জন্মে না। সঙ্কটে পড়ে এক পাড়ার লোক অন্য পাড়ায় ছুটে বেড়ায়। কানুরাম কুজুর কাকা কাটা ডাল উপবাসী কিশোর-কিশোরীর মাথায় তুলে দেয়। বাঁকা পিঠে কানু কাকা গলায় তুলে নেয় মাদল। আজও মাদল বাজলে কানুরামের চোখে মুখে রক্ত শিহরিত হয়ে ওঠে। কাটা ডালের অংশগুলো কোলে নিয়ে প্রত্যেক বাড়ির সামনে সেদিন তারা যাবেই। বাড়িতে বাড়িতে আজ আমোদের বরণ।

 

কানু কাকার সাথে যেদিন প্রথম দেখা সেদিন কাকা ছোট্ট এক সাইকেলে চড়ে বাজার থেকে ফিরছিলেন। উঁচু-নিচু রাস্তা পাড়ি দিয়ে কানু কাকা সাইকেল নিয়ে নেমে যান বাড়ির আঙিনায়। পায়ে হেঁটে কানুকাকা বেশি এগুতে না পারলেও সাইকেলে চড়ে কাকা বাজারঘাট ঘুরে বেড়ান খুব সহজেই। সামনের দিকে বয়সের ভাড়ে ঝুঁকে পড়েছেন। ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে কানুকাকা সাইকেলে বসে থাকেন। মনেহয় হাতদুটো ধনুকের দুই প্রান্ত যেনো দড়ির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। পথ হাঁটলেও কানু কাকার কোমড় আর সোজা হয় না। গরুর দড়ি হাতেও কানু কাকা আনুভূমিক হেঁটে যান।

 

কারাম ঘরে এসেছে। সকলের উৎসবের কমতি নেই এই দিনে। সবার ঘরে ঘরে পঁচা হাড়িয়া আর চোয়ানির আয়োজন চলছে মাসখানিক ধরে। উৎসবের পিঠার সাদা আর হলুদ রঙে ডালি ভরে ওঠে। বাড়ি বাড়ি পরিভ্রমণ করে সকলকে জানিয়ে কারাম ডাল চলে আসে উৎসবের বেদিতে। কানুরাম কুজুর একে একে সবকটি ডাল মাটিতে পুতে সাদা সুতোয় বেঁধে দেয়। এরপর কারাম ডালে হাড়িয়া নিবেদন করে ধূপ-দীপ দিয়ে কারাম বৃক্ষে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে চলে কারাম আবাহন। কানুরাম এভাবেই দেখে আসছে জীবনের শুরু থেকে এই পঁচাত্তর বয়সের জীবনে। গান কানুরামের মুখস্থ না থাকলেও এসব গানে ঠিকই তাল মেলাতে পারে কানুরাম। আবাহনী সংগীতে মুখরিত কারাম বেদীর চারপাশ।

চালে কুমড়া ধীরে

চালে কুমড়া ধীরে

সাতো ভাইয়া, সাতো ভাইয়া॥

কারাম গারায় সাতো ভাইয়ে, সাতো ভাইয়ে

কারাম গারে॥

সাতোসে রানী সেওয়া খায়

ছোটো ভাইয়া রে মান্দার বাজায়

বড়ো ভাইয়া কারাম গাটায়

ডানডানে তারে ঘুঘুর বাজায়॥

চালে রাইসকা ধীরে

পীরাহ উপরে কারাম গাটায়

কাহে বাহিনে রোপায়॥

চালে মান্দিরা ধীরে।

ওরাওঁ সমাজের বাৎসরিক উৎসব হলে হবে কি এখানে জৌলুস বলে তেমন কিছু নেই। বাড়ির বাইরের ফাঁকা অংশে সামিয়ানা খাটানো হয়েছে। মূল রাস্তা থেকে উৎসব-অঙ্গনে আসার পথের দুদিকে দড়িতে রঙিন কাগজ কেটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে কিছু কাগজ। অল্প কিছু চেয়ার রাখা হয়েছে বসার জন্য। যেহেতু রাতভর চলবে কারাম পূজা তাই ইলেক্ট্রিক আলোর ব্যবস্থা আছে। সে আলোও একেবারে উজ্জ্বল নয়। চেয়ারে বসা লোকজন সবই বাঙালি, হয় হিন্দু বাবু নয়তো মুসলমান। ওরাওঁরা নিজেদের হিন্দু-মুসলমান কোনটাই ভাবতে পারে না। উৎসব অনুষ্ঠানে চেয়ার-টেবিল ব্যাপারটি তাদের বেশি দিনের শেখা নয়। সাজগোছ বলতে এটুকুই। চোখে পড়ার মতো ব্যাপার হলো শিশু-নারী-পুরুষ সকলে নতুন কাপড় পড়বে।

তহসিলদার তাকে বোঝাতে চায় — কাগজ নেই বলেই অন্যরা জমি দখল করে কানুরাম। আপনি কাগজ করান।

ধীরে ধীরে আমোদপুরে শরতের সন্ধ্যা নামে। সন্ধ্যার হলুদ অন্ধকারে আমোদপুরের দূর-দূরান্ত থেকে ভেসে আসে মাদলের ধ্বনি। পাহাড়পুর, এনায়েতপুর, কাঁঠালীপাড়া, বিনোদপুরের রাত আজ নির্ঘুম। পৃথিবীর অন্য সকল রাতের থেকে আজ আমোদপুরে ভিন্ন রাত নামে, কারামের প্রাগৈতিহাসিক রাত। সন্ধ্যা পার হয়ে গেলে সবাই আসন নিয়ে বসে পড়ে কারাম বেদীর নিচে। যেনো কোন সেই আদ্যিকাল থেকে মুখ থ্যাবড়ানো, চ্যাপ্টা নাকের আদি মঙ্গোলয়েড এই জাতিগোষ্ঠী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে কারাম বৃক্ষের তলে। আমাদের কাছে যেনো মানুষ নয় বুনো কোনো প্রাণী। আমোদপুরের বাঙালি বাবুরা অবশ্য এদের বুনোয়া বলেই ডাকে। তবে রবিদাকেই বলতে শুনেছি — ও বাবু, বুনুয়া কী? বুনুয়া যে কুন্টি হাতে আইচচে!

 

কবে হয়তো কোনো আর্য জনগোষ্ঠীর তাড়া খেয়ে ওরাওঁরা ঘরছাড়া হয়েছিলো কেউ বলতে পারে না। আর্যরা ওরাওঁদের ধাওয়া করে কোনো মুন্ডাদের অঞ্চলে ঢুকে পড়েছিলো সে কতকাল আগের কথা। মুন্ডারা হয়তো সেদিন উৎসব উপলক্ষে গায়ে রঙ মেখে মেতে উঠেছিলো আনন্দে, আকাশ রঙ করে সেদিন বসন্তের সন্ধ্যা নেমেছিল। আর্যদের চৌকষ চাহনিতে তারা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলো। মুন্ডাদের কাছে পলায়নপর ওরাওঁদের কথা তারা জানতে চায়। আর্যদেরকে মুন্ডারা পাল্টা প্রশ্ন করে- কুঁড়ুখ, তারা কোন রঙের লোক ছিল? নিজেদের গায়ের রঙ দেখিয়ে বলে- ‘ই-রাং-না উ-রাং’ অর্থাৎ কুঁড়ুখরা এই রঙের না ঐ রঙের লোক। আর্যরা তাদের ভাষা বোঝে না, সনাক্ত করতেও পারে নাই। ফলে অন্যদিকে কুঁড়ুখদেরকে খুঁজতে যায়। এভাবে ‘ই-রাং না উ-রাং’ বলতে বলতে ‘উ-রাং’ উরাঁও তে পরিণত হয়েছে ওরাওঁ। এই গল্পগুলো চন্দ্ররামের জানা গল্প। কানুরাম ইতিহাস কি জানে না, এই বেদনাদগ্ধ গল্পই কানুরামের ইতিহাস।

 

আকাশের চাঁদ হালকা ভেজা বর্ষার মতো আলো দিচ্ছে আমোদপুরে। আমরা এই আমোদপুরের পথঘাট সবই চিনে নিয়েছি আরও আগে। শক্ত সবল মাটি আর প্রবল জঙ্গলে ঘেরা আমোদপুরের রাস্তাঘাট ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা উৎসব অঙ্গনে পৌঁছাই। এ অঞ্চলের রাস্তাঘাটে হাঁটলেই মনেহবে ক্রমশই মানুষ তার অতীতে ফিরে যাচ্ছে। এই অতীতের ইতিহাস মানুষের অবচেতনে এতো বহু আগেই ঢাকা পড়েছে যে তার সুলুক সন্ধান কেউ করে উঠতে পারে না। রাস্তায় ধানী কলমীর রঙিন বাহার অথবা কোনো জঙ্গলে আলকুশির দুলতে থাকা, সুঘ্রাণ ছড়ানো বনমালী ফুলের মগ্ন বাতাস মানুষের অবচেতনকে নাড়া না দিয়ে পারে না। কোনো রাস্তাঘাটের ফাঁকা প্রান্তরে দাঁড়ালে মনেহবে ক্ষেতখামারের এই শূন্যতা আকাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে, এক প্রান্তরে নেমে অন্য প্রান্তরে দিন থাকতে পৌঁছানো হয়তো সম্ভব নয়। একারণে আমরা প্রতিবারই নিজেদের আমোদপুরের যাত্রী ভাবতে ভালোবাসি। পৃথিবীতে আমোদপুর বলে দ্বিতীয় আর কোনো স্থান আছে বলে মনেহয় না।

 

কানু কাকার ঝাপসা চোখ, জড়ানো কথাবার্তা, কোনো কোনো শব্দ উচ্চারণের মাধুর্য বৃদ্ধকেও মায়াময় করে তুলেছে। আমরা তিনজন- এনাম, বাদল আর অপু কানু কাকার কাছে পরিচিত মুখ। আমরাও বসেছি কানু কাকার কারাম গল্প শুনতে। কাকা গল্প বলে যান, যেনো অনন্ত সময় ধরে চলে কাকার গল্প বলা —

কারমা ও ধারমা মোট সাত ভাই। একবার সাতো ভাইয়ের ছয় ভাই বাণিজ্য করবার তেইকনে নৌকা নিয়া বাড়ি থাকি বাই হয়্যা যায়। কেবল ছোট ভাই বাড়িতে থাকি যায়। সগলে বাড়ি থাকি বাই হয়া গেইলে ঘরত ট্যাকা কড়ি শ্যাষ হয়া যায়। সেই কারণে ছোট ভাই ও বৌদিরা মিলে শুরু করে কারাম ডালের পূজা। যেহেতু কারাম ত্রাণকর্তা। একটানা তিনদিন চলে অনুষ্ঠান কিন্তু অন্য ভাইরা আইসে না। যখন নদীর ঘাটত বাকি ছয় ভাই ফিরি আইসে তখন সগলে দূর থাকি ঘণ্টা বাজায়। বাড়িত্ উৎসব আমোদ কাঁয় শোনো কার কতা।

— ছিটারে গাওয়া ভাইয়া।

এই কথার সাথে সাথে সকলে কারাম ডালে চাল-ডাল ছিটিয়ে দেয়।

ছোট ভাই দেইখপ্যার আইসে। ভগমানের এমন কাম দেইখপ্যার আসিয়া ছোটভাইও মাদল বাজাবার শুরু করে। একে একে সগলে আসি একে কাম করে। অনুষ্ঠানে বেভোর হয়া পড়ে। সব শ্যাষোত কারমা আসি এই অনুষ্ঠান দেখি রাগে ক্ষোভে কারাম ডাল নদীত ফেলে দেয়। তারপর হইলো কি সগলে ভাত খাবার বসিল। ভাত খাবার বসি দেখে বড়ো ভাই কারমার ভাতোত পোকা। সগলে কয় কে বড়ো ভাই হামার ভাতোত পোকা নাই তোর ভাতোত পোকা ক্যানে! তখন ধারমা কয় দাদা তুই ডাল অবহেলা করছিস। এবার কারমা ও ধারমা দুইজনে মিলে ডাল খোঁজে। অনেক দূর যাওয়ার পর খিদ্যা নাগলে বরাই গাছের বরাই খাবার ধরি দেখে কারমার বরাইগুলা পোকায় ভরা। কারমা ও ধারমা মনেকরে কারাম ডালকে অপমান করার জন্য এমন হইছে।

 

কানুরাম কুজুর হঠাৎ হই দিয়ে বলে — ছিটারে গাওয়া ভাইয়া, ছিটারে গাওয়া ভাইয়া। পরপর দুবার বলার ফলে উপস্থিত সকলে আবার কারাম ডালে ফুল, আতপ চাল ছিটিয়ে দেয়। কেউ কেউ হাড়িয়ার জল ছিটিয়ে দেয়। চারিদিকে হাড়িয়ার মাতাল গন্ধে পূজার বেদী ভরে ওঠে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ বাড়ির ভিতরে আসা-যাওয়ার করতে থাকে। এদের সকলেই কম বেশি পথচলে দুলতে দুলতে। হাড়িয়ার প্রভাব ততক্ষণে তাদের মধ্যে কাজ শুরু করে।

 

কানুরাম কুজুর গল্প বলতে থাকে — আবার দুইজনে না খায়া হাঁটা দেয়। কোনটে সে কারাম ডাল! কোনো ঠাঁই নাই। ভাসে দেওয়া ডাল দেখা যায় না। দোনো ভাই যাইতে থাকে যাইতে থাকে যাইতে থাকে। যাইতে যাইতে আবার খিদা নাগে। এবার ডুমুর খাবার ধরি দেখে স্যাটেও পোকা। আম খাবার ধরি দেখে আমোত্ও পোকা। কারমা জলের তিয়াসে মরমর অবস্থা। নদীর জল খাবার ধরি দেখে তাও অক্তে নাল হয়া আছে। খালি কারমা খাবার গেলেই পোকা ধারমার বেলায় ভালো।

 

তারপর যাইতে আছে যাইতে আছে, যাইতে যাইতে ঘপাত করি দ্যাখে নদীত কারাম ডাল ভাসি যায়। সেই ডাল তুলি নেওয়ার পর আর কোনো খাবারোত ধারমা পোকা দেইখপ্যার পায় না। এবার বাড়িত ডাল আনি পুঁতি দিলে কারমা। মান্দোল বাজে কারাম পূজা শুরু হয়। হঠাৎ চারিদিকে মাদলের বাজনা শুরু হয়ে যায়।

কানুরাম জোর দিয়ে বলে — ছিটারে গাওয়া ভাইয়া।

সকলে কারাম ডালে চাল-ডাল ছিটিয়ে দেয়। আশেপাশের লোকের গায়েও কেউ কেউ ছিটিয়ে দেয় হাড়িয়া।

কারমা পাপ থাকি মুক্তি পায়। কারমা আর ধারমা একসাথে বসবাস করে। এরপর থাকি চালু হইলো ডাল পূজা। এবার কানুরাম কুজুর গল্প শেষ করে উঠে পড়ে।

কুজো শরীর নিয়ে কানুরাম বাড়ির ভিতরে যায়। ঘরভর্তি পিঠার আয়োজন। কানুরামের চোখ যায় হাড়ি ভরা সাদা ভাতের পঁচানি হাড়িয়ার দিকে। আরও চোখ যায় টলটলে জলের চোয়ানির দিকে। চোয়ানির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে যেনো কানুরাম চোয়ানির মধ্যে নিজের ছবি দেখতে পায়।

 

কে এই কানুরাম কুজুর। হ্যাঁ আমি কানুরাম কুজুর। পিতা : চন্দ্ররাম কুজুর, মাতা : চিন্তামণি মিনজি। পুত্র : রবিরাম কুজুর, কন্যা : শুকো কুজুর। কানুরাম আসলে জীবনে কি চেয়েছে? একসময় খরগোশ মেরেছে, খরগোশ মেরে কানুরাম অন্য ভাইদের সাথে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেছে। কানুরাম কোনোদিন ভাই ছাড়া কোনো হিসেবে বসে নাই। বড়ো হিসেবে কানুরাম বাবার মতো করেই চালিয়ে নিয়েছে সংসার। আমোদপুরে কুজুর বংশের আজ স্বচ্ছল দিন কানুরামের ঘরে। এই নিয়ে মানুষ কত কথাও বলে। কানুরামের বেশি কথা শুনতে হয় হিন্দু-মুসলমানের কাছ থেকে। কোনোদিন ভাইদের ঠকিয়ে খায় নাই কানুরাম। উপরে ভগমান ধারমা আর নিচে মানুষ সকলে জানে তার কুজুরের আচরণ, পাপ-পুণ্য, বিবেক।

 

এরপর কানুরাম মাতালের মতো হাড়িয়া গিলতে থাকে, সাথে সাথে কয়েক গেলাস চোয়ানি। তারপর আকাশে যখন মধ্যরাতের চাঁদ জ্বলজ্বল করছে তখন ঘোর লাগা কানুরাম বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে ভাই যতীন কুজুরের কাছ থেকে মাদল নেয়। নয়া যুবকের মতো মাদলে বারি দেয় কানুরাম। একদিকে রবিরাম অন্যদিকে কানুরাম সমান তালে মাদল বাজতে থাকে। এই পাড়ার কারাম গানের ভান্ডার শুকো কুজুর। বিয়ের আগে থেকেই শুকো কুজুর মাদলের তাল শুনলেই জুড়ে দিতো গান। শুকোর মনে রাখার দারুণ শক্তি। কতশত গান যে শুকো জানে তা কেউ বলতে পারে না। মাদলের তালে তালে হাত ধরে ধরে পায়ের মাপ ঠিক রেখে আগে পিছে দোল দিয়ে শুকো কুজুর সকলকে নিয়ে গান গাইতে থাকে-

কারামাকা দিনে পানিমাই বারেশা

পানি শনেমনে আ-আওয়ায় হো

ধীরে বেরশো পানি

রাসে বেরশো পানি

কারামকা ডাইরা ভিজি গেলা হো …

কারামাকা ডাইরা ভিজি গেলা হো …

 

আমরা তিনবন্ধু- এনাম, বাদল আর অপু। হাত ধরাধরি করে নেমে পড়ি। রবিদা আমাদের শিখিয়ে দিতে থাকে নাচের তাল তবুও বারবার তাল ভঙ্গ হয়ে যায়। বাদল মাঝে মাঝে বড়ো বেশি ছেলেমানুষী করে বসে, একেবারে আধুনিক ঘরনার নাচটাচ দিয়ে বসে অনুষ্ঠানের মধ্যে। হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। নাটকে অভিনয় করা বাদল তাই কখনো কখনো বয়সী কানুরাম কাকার সামনে গিয়ে মাথায় দুহাত দিয়ে বুক উঁচু করে নাচতে থাকে, কানুরাম কাকা মাদলের আওয়াজ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের সাথে মনু এসে জুটে যায়। আমরা মাদলের তাল ঠিক রেখে ধীরে ধীরে নাচটা কিছুটা হলেও আয়ত্ত করে ফেলি। ভোর রাত হতে হতে কারাম ডালের তলে মানুষ কমতে থাকে। কেউ কেউ অধিক মাতাল হয়ে সেখানেই অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে থাকে।

বাবা এরা আদিবাসীগোর জমি খায় আর আমোদের দিন আদিবাসী মেয়েছইলের শরীল খোঁজে গো বাবা।

কারামের সকালের সময়টা বড়ো বেশি বেদনাবিধুর। কারো মুখেই থাকে না স্বাভাবিক কথাবার্তা। বিশেষ করে সকল পুরুষ হাড়িয়া খেয়ে মাতাল আর আমরা কিছুটা হাড়িয়া আর কিছুটা না ঘুমের কারণে অস্বাভাবিক হয়ে ছিলাম। কারাম বিসর্জনের আয়োজন চলে পাড়ায় পাড়ায়। সকলে এসে হাড়িয়া ঢেলে দেয় বেদিতে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষ খোঁপায়, কানে ডাল ও গমের চারা গাছ গুঁজে দেয়। বুড়ো কানুকাকার দুকান জুড়ে চারা গাছ, গলা থেকে ঝুলানো মাদল। রবিদা আর পাচুলী বৌদি একসাথে বাড়ি থেকে খোঁপায় কানে চারা গাছ দিয়ে বের হয়ে আসে। পাগলের মতো বেদিতে মাথা কুটতে থাকতে শুকো কুজুর। এরপর ডাল তুলে চলে শূন্য কারাম বেদি প্রদক্ষিণ। সেখানেও গান অবধারিত। বিসর্জনের গানে ভারি হয়ে আসে সকলের গলা। উৎসব অঙ্গনে কানুকাকা তার অন্যান্য ভাইদের সাথে কোলাকুলি করেন। রবি কুজুর, যতীন কুজুরের সাথে এই যেনো তার শেষ দেখা, বয়স বেড়ে গেলে উপজাতি, আদিবাসী, বাঙালি সকলেরই এক অবস্থা দাঁড়ায়। মৃত্যুর কথা ভেবে ভেবে যেনো আরও তরল ও সহজ হয়ে ওঠে এই আদিম সরল মানুষগুলো। নদীর ঘাটে শুকো কুজুরের কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভেসে আসে কারাম বিসর্জনের গান-

ইউল্যাতো রাস্কি কারাম

যোখায় পেল্যায় শায়েল মায়েল

নান্জিকি, যোখায় পেল্যায়॥

ইন্নাতো কালোয় কারাম

যোখায় পেল্যায় জানাম টুআর

নান্জিকি॥

ইউল্যাতো রাস্কি কারাম

যোখায় পেল্যায় শায়েল মায়েল

নান্জিকি, যোখায় পেল্যায়॥

আইজেতো আইলে কারাম

দিয়া বারবার বাতি কারাম

কাইলেতো আইলে কারাম

শার শামুদার নাদি কিরানে যাবে

বাবুরে ‘কানুরাম’ তোর মোরালি সামাদায়

তোর মোরালি সামাদায়।

বাইনিগে ‘পাচোলা’ বাইনি

তোর খোপাভার সামাদায়

কারাম খোপাভার সামাদায়।

বাবুরে ‘কানুরাম’ তোর পাগোড়ি সামাদায়

তোর পাগোড়ি সামাদায়।

 

কানুরাম সেটেলমেন্ট অফিস থেকে ফেরে। অফিসারের সব কথা সে বুঝতে পারে না। শুধু এটুকু জানে যে জমিজমাতো হিন্দু-মুসলমান দখল করে নিয়েছে যা আছে তা তিনভাই মিলে চাষবাস করি এখন আর কাগজ পত্রের কি দরকার। তহসিলদার তাকে বোঝাতে চায় — কাগজ নেই বলেই অন্যরা জমি দখল করে কানুরাম। আপনি কাগজ করান। তিনভাই  জমে ভাগে চাষ করেন তাতে সমস্যা নাই, দরকার হলে তিনভাইয়ের নামে সমান দলিল করেন।

 

সেদিন এসব কথা শুনে কানুরাম বাড়ি ফিরে এসেছিলো সন্ধ্যা হবার আগে আগে। বাঁকা কুজো কানুরাম এখনো অনায়াসে সাইকেল চালাতে পারে। সারা শরীর জুড়ে পরিশ্রমের ছাপ। কোথাও কোনো থলথলে মেদ কানুরামের নেই। পড়নে সাদা অথচ হলদেটে ধূতি। বাকি শরীর ফাঁকা। সহজেই হাওয়া বাতাস লাগে। শীত ছাড়া কানুরাম আজ পর্যন্ত কখনো শরীরে কাপড় দেয় নাই।

 

কানুরাম ভাইদের ডেকে ভূমি অফিসের সকল কথা শোনায়। অন্ধকারে ভাইদের চোখে অবিশ্বাসের আলো দেখতে পায় না।

— জমি নেখাপড়ায় খরোচ বিশি। থাকি না ক্যান নেখাপড়া। খাইচো তো সগলে একসাথে।

— না, নেজের নামে জমি না হইলে কি হইল! গেরাম জানে পাতারের জমি কানু কুজুরের।

অন্য ভাইরা এসব বলে যায়।

কানুরাম অনেক বুঝিয়েছে আলাদা আলাদা জমি দলিল করতে অনেক টাকা চেয়েছে ভূমি অফিস। কোনো ভাই টাকা দিতে রাজি না। কানুরাম পিতার আসনে বসা বড়ো ভাই। কারমা-ধারমার গল্প মনে করে ভাইদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কানুরাম বুঝতে পারে সেই খরগোশ শিকার করে সমান ভাগ করে খাওয়া ভাইদের জীবন অনেক পাল্টেছে। সেসব অতীত দিন কারামের বিসর্জনের ঘোর লাগা হাড়িয়া খাওয়া মাথার মতো বিস্মৃত হয়ে যায়। আজ কানুরাম যেনো নিজেই কারমা। তার সকল খাবারে পোকায় ভরা।

শোনেন বাবা অপু, মোসলমান আর হেন্দু পাড়ার লোকজন যেন গানের মধ্যে না ঢোকে, বুঝলেন বাবা?

কানুরাম কুজুরের আত্মসম্মান আছে। সেতো বিড়ালের মতো ময়লা ঢেকেই রাখতে চেয়েছে আজীবন। সেদিন হেমন্তের এক সকালে শুকো কুজুর তার ছেলেকে নিয়ে খেলছে। সবে বছর দুয়েক হবে বয়স। আঙুল ধরে ধরে টানছে আর ছড়া কাটার মতো কুড়ুখ ভাষায় আওড়ে যাচ্ছে মুখে মুখে বিভিন্ন কথা। এপাড়ায় নতুন ছেলেরা কুড়ুখ ভাষায় পারদর্শী নয়। শুকো চায় তার ছেলে কুড়ুখ শিখে রাখুক। বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে টান দিচ্ছে আর বলে যাচ্ছে,

— গোহলা উইয়্যা ক্যারা। বাংলা করেও দিচ্ছে শুকো- হাল বইতে গেছে। তর্জনী ধরে বলছে,

— মান্ডাম কি বিতি, ভাত-তরকারি রান্না করে।

হঠাৎ শোরগোলে পাড়ায় হৈচৈ পড়ে গেছে। রবিদা হাউমাউ করে বের হয়েছে। আমরা আমোদপুরের যাত্রীরা উঠেছিলাম মনুদের বাড়িতে। রবিদার বাড়ি থেকে ঠিক পশ্চিমের জঙ্গলটার ধার দিয়ে নেমে যাওয়া রাস্তার মাথাতেই মনুদের বাড়ি। বাড়িতে প্রকাণ্ড দুটো পুকুর, পাড়ের মধ্যে বয়সী আমগাছ, প্রায় বড়ো বৃক্ষের মতো পুরণো সফেদার গাছ। দূর থেকে মনুর বাবা রবিদা সমেত চিৎকার দিচ্ছে। আমরা সকলে জঙ্গলের ধারে কারাম গাছের নিচে গিয়ে দেখি কানুরাম কাকার লাশ গাছে ঝুলছে।

 

কানুরাম বাঙালিদের বিশ্বাস করতে পারেনি। আমাদের বিশ্বাস করতেও কাকার বছরখানিক লেগে গেছে।

আমার হঠাৎ মনে পড়ে কারামের রাতের বেলা কানুরাম কাকা আমাকে ডেকে বলেছিলো — শোনেন বাবা অপু, মোসলমান আর হেন্দু পাড়ার লোকজন যেন গানের মধ্যে না ঢোকে, বুঝলেন বাবা? বাবা এরা আদিবাসীগোর জমি খায় আর আমোদের দিন আদিবাসী মেয়েছইলের শরীল খোঁজে গো বাবা। হামরা আদিবাসী মনে করি সগলে ভালো। মোর বাপের জমিজমা বেবাক বাঙালির‌্যা দখল করছে।

 

শেষদিকে নাকি লোকজনের মুখরোচক গল্প তৈরি হয়েছিলো। একজন সৎ মানুষ শেষপর্যন্ত এমন অসৎ কাম করলো পাড়ায় পাড়ায় এই কথা চাউর হয়েছিলো। ভাইয়ের জমি নাকি সব নিজের নামে লিখে নিয়েছে। ওরাওঁ গোষ্ঠীর লোকের থেকে বাঙালিদের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অথচ কানুরাম পিতার সম্পত্তির তিনভাগের একভাগই চাষবাস করে। কিন্তু ভূমি অফিসের লোকজন রেকর্ড করতে এসে কানুরামের নামে সব জমির কবলা করে গেছে। জানা গেলো কবলার সাথে মূল জমির মালিকানার সম্পর্ক নেই। ততোদিনে কানুরাম কুজুর সকলের চোখে চোর, ভাইয়ের জমি দখলকারী। কানুরামের জমি নিয়ে খেদ ছিলো অনেক, বাঙালিদের দখল করা জমি উদ্ধারও করতে চেয়েছিলো চন্দ্ররাম কিন্তু নিজের জীবনই উদ্ধার হয়ে গেলো মধ্যখানে।

 

লম্বা এক ধুতি পড়া কানুরাম ঝুলে ছিলো কারাম ডালে। আমোদপুরের সকলে বলাবলি করছিলো,

— ফাঁস দেয়া মরার মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়ার কথা সেসব কই? ধুতির কোচটোচ সবইতো ঠিক আছে তাহলে ফাঁস দিলো কীভাবে! পরনের ধুতি একটুকুও নড়েনি কানুরামের তাহলে চন্দ্ররাম ফাঁস দিলো কীভাবে?

এরপর আমরা শুনেছিলাম দিন পাঁচেক কানুরামের ভাইদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। চায়ের দোকানি বাঙালিদের আড্ডায় রহস্যজনকভাবে কেউ কেউ অনুপস্থিত।

 

এ ঘটনার পর আর আমাদের সেবার আমোদপুরে থাকা হয়নি। আপনারা যারা আমোদপুরে যাবেন তারা কানুরাম কাকার সমাধি দেখতে পাবেন। রবিদাদের জঙ্গলে সেখানে শরৎ-হেমন্তে আলুকুশি ধরে, জঙ্গলের কোল ঘেঁষে সারি সারি কাঠমল্লিকার গাছ। সেখানে সন্ধ্যা হলে পেচা ডাকে, তার তলেই কানুরাম কুজুর ঘুমিয়ে আছেন। এরপর আমোদপুরে কারাম পূজার দিন ফিরে আসবে, ভাদ্র-সংক্রান্তিতে মাদলের শব্দ আমোদপুরের নিবিড় সন্ধ্যাকে মাতাল করে তুলবে। কিন্তু কানুরাম কুজুরের জীবন-যাপনের সেই নিরানন্দ শেষদিনটির কথা আমাদের কারাম বিসর্জনের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেবে। আমরা তিন বাঙালি কানুরাম কুজুরের মরণ ঠেকাতে পারিনি।

 

পরের বছর কি পরের বছর কোনো বছরই আমোদপুরে যাওয়া থেমে থাকে নাই। তবে কানুকাকা মারা যাওয়ার পর একবারই আমোদপুরের ভাদাই অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়েছিলো। সেদিন ভাদাই শেষে আমরা তিনজনই কমবেশি চোয়ানি-হাড়িয়া খেয়েছি। রাস্তা দিয়ে হাঁটছিতো হাঁটছি, হঠাৎ মনেহলো চারিদিকে থৈথৈ করে জল।

বাদল বলে উঠছে — আহা কত জল, জাল ফেললে মাছ পড়বে।

আমরা যখন আলকুশি ভরা জঙ্গলটার পাশ দিয়ে হাঁটছি তখন হঠাৎ করে শুনতে পেলাম — শোনেন বাবা অপু, মোসলমান আর হেন্দু পাড়ার লোকজন যেন গানের মধ্যে না ঢোকে, বুঝলেন বাবা?

 

এরপর দেখি অন্ধকারে কেউ জঙ্গলে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। কুঁজো হয়ে সাইকেলে স্থির বসে প্যাডেল ঘুরাচ্ছে কেউ। বাঁশবাগান, উলটকম্বলের গাছ পাশ কাটিয়ে সেই সাইকেল পাকা রাস্তায় হারিয়ে গেলো। আর আমাদের কানে বারবার বেজে উঠছিলো- শোনেন বাবা অপু, মোসলমান আর হেন্দু পাড়ার লোকজন যেন গানের মধ্যে না ঢোকে, বুঝলেন বাবা?

— আমরা পরস্পরের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকলাম।

আগের লেখামানুষ হাসে কেন?
পরের লেখাহিমেল বরকত কবিতা পুরস্কার ২০২০ ঘোষণা
সঞ্জয় সরকার
উত্তরবাংলার সারল্য আর তিস্তার প্রবহমান ধারায় বেড়ে ওঠা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জল আর জাদুতে গড়ে উঠেছে শিল্পের ভিত্তি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন। বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পাঠদান করছেন।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here