পড়শি দেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানাশোনা ও বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে উর্দু, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, কাশ্মীরি, তেলেগু, পশতু ইত্যাদি ভাষার সাহিত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে গৃহীত ও আলোচিত হয় ইংরেজি ভাষার সাহিত্য। ঔপনিবেশিক মানসিক দাসত্ব এর প্রধান কারণ। আমরা একটু উল্টো পথে হাঁটতে চাই; দেখতে চাই আমাদের প্রতিবেশী ভাষাসমূহের সাহিত্য। আর তাই শুরু করছি নতুন আয়োজন ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার কবিতা। হিন্দি থেকে ওড়িয়া কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ।
ও ড়ি য়া ক বি তা
শক্তি মহান্তি (জন্ম: ১৯৭৪) সমসাময়িক ওড়িয়া কবিতায় উল্লেখযোগ্য একজন। এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ,তিনটি উপন্যাস এবং গল্পের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা। রাধু মিশ্র মূলত ওড়িয়া সাহিত্যিক এবং অনুবাদক। ওড়িয়া ভাষা থেকে অনুবাদের মাধ্যমে ওড়িয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবিকে হিন্দিভাষী পাঠকের কাছে তুলে ধরার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর।
রৌদ্রের স্টিকার
ফুটপাতের ছায়ায় পেয়ে যাবে
সেই তোতা, যে সব কথা বলতে পারে না
কিন্তু তোমার ভাগ্যের হিসাব ঠিকই বলে দেবে
খাঁচার বাইরে রাখা চার-পাঁচটা খাম থেকে
একটাকে বাছাই করতে হয় এই রৌদ্রে
রৌদ্রে দেখ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এম্বুলেন্স
এর সাইরেন তুমি শুনতে পাওনা
সেই লোকটাকে দেখছ না, যে কষ্টে আছে কিংবা কোমায়
রাজপথ ধরে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
নার্সের পরনে সাদা কাপড়ও তার কাছে কাফনের মতো মনে হবে
হয়তো প্রখর রৌদ্রে তার শরীরও হয়ে আছে বরফের মতো নিথর
রৌদ্রে পলাশের মতো দুলছে শহর
গাড়ির ভেতর আইসক্রিম হাতে নেওয়া সেই লোকও
গায়ের ঘাম মুছে, জুতা ঘষতে ঘষতে চলে যাচ্ছে
জলখানার দিকে, ছায়া যেনো তার
চুর চুর হয়ে ভেঙে যাচ্ছে
পিচঢালা কালো পথের উপরে
মুখে পর্দা এঁটে, গোলাপী টপ পড়া যে মেয়েটি
রৌদ্রের শামিয়ানা চিরে রাস্তা পাড় হয়ে যাচ্ছিল
প্রখর রৌদ্রে তার বুকে গেঁথে যাওয়া চাকার নিশান
হয়তো আগামীকাল সকালের প্রথম খবর হবে
সিঁদুর পরিহিত দেবীর মতো দেখতে
এই ডাকবাক্স, যেটাকে ডাস্টবিন ভেবে
কখনো কখনো কেউ প্রেম পত্র ফেলে গেছে
রৌদ্র তাপে নয়, হাতের ঘামে ভিজে যাওয়া
সেই খামের কথা কেবল ডাক পিয়নই জানে
এফএম রেডিওতে প্রখর রৌদ্রের খবর শোনা যাচ্ছে
সমস্ত পথ গোলমোহরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে
দেখো ওদিকে পারদের মতো চমকাচ্ছে মরীচিকা
পথ আটকিয়ে বসে আছে সুন্দরী ট্রাফিক পুলিশ
এক নতুন পথের দিকে ইশারা দিয়ে ডাকছে।
ফেরিওয়ালা
বাবুজি, এই চশমা নাও, স্বপ্ন দেখা যায় চমৎকার
চোখের ভেতরে থাকা যত ভয়, অশ্রুসজল চোখে ডুবে
থাকা ছায়া, সব দূর হয়ে যাবে এই চশমা দিয়ে
এই ঘড়িটা হাতে দিয়ে দেখ, খুব সুন্দর মানাবে কব্জিতে
এর কাটার টিকটিক শব্দ, অদৃশ্য টিকটিকির তিন সত্যের মতো
এই ঘড়ি পড়ে সময়ের বাইরেও ঘুরে আসতে পারবে তুমি
এর কাঁটা দিয়ে সময়কে পাজামায় সেলাই পর্যন্ত করতে পারবে
একটু এই মুখোশটা পড়ে দেখ
বাইরে কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না, এর আড়ালে
চোখ বন্ধ করে থাক আর নিজেকে কণিষ্ক রাজ মনে কর
দেখতো, এই কলম তোমার বুক পকেটে কী সুন্দর মানাবে
সাদা কাগজ নিয়ে বসো আর কলম থেকে বের হতে দাও তোমার রক্ত
কালো কালি দিয়ে নয় বাবুজি, রক্ত দিয়ে লেখ কবিতা
নাও, এই রুমালে অশ্রুর প্রতিটি বিন্দু ফুল হয়ে ফুটে
অনেকটা তাজা মনে হয় চুম্বনের লেগে থাকা দাগ
বেঁধে দেখ নিজের মাথায়, কাফেরের মতো মনে হবে তোমাকে
বাবুজি, চাবির রিংও আছে, দেখাচ্ছি দাঁড়াও
তোমার সমস্ত রহস্যগুলোকে গেঁথে রাখবে কোমড়ে
যারা বার বার তোমার প্রেমে পড়ে যায়
অথবা গতবছরের পুরানো ক্যালেন্ডারে ঝুলিয়ে দিও
যার প্রতিটি তারিখ এখন কেবল ইতিহাস
একটু এই আয়নায় তাকিয়ে দেখতো
তোমার পিছু নেওয়া পুরানো স্মৃতি সব স্পষ্ট দেখতে পাবে
মোবাইলের তড়িৎ ছবির ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া
তোমার উজ্জ্বল চেহারাও স্পষ্ট দেখতে পাবে এই আয়নায়
ওহ! কিছুই পছন্দ হলো না তোমার, অসুবিধা নেই
কিন্তু নিজের ভেতর যাওয়ার দরজা বন্ধ করো না!
আমি চলে যাচ্ছি; নাও ফ্রিতে দিয়ে যাচ্ছি এই কালো চুম্বক
রেখে দাও, এটা তোমাকে অন্য এক পথে নিয়ে যাবে,
যে পথ আর সব থেকে আলাদা; ঠিক সেদিকে
যেদিকে কেবল তুমিই রয়েছ।
হিসাব
উঠে পড় আর দেখ আলোর চক্রান্তে
এক সকাল এসে হিসাব চাইছে
বিদ্যুত বিল চাইছে, রেশন কার্ড চাইছে
সবজি আর আগরবাতির খরচ, অটোওয়ালার বকেয়া
উপরে ক্যালেন্ডারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কত অনিদ্রিত রাত
অথবা বন্ধ করে দেওয়া এলার্মের ঘুম যা এখনো ভাঙেনি
সে বরাবরই মধ্য রাতে আসে
নিজের সেই জরিওয়ালা রাজপোশাকে
বাজারে খরিদ্দারির সময় ধাক্কা খাওয়া কাঁধে
হাত রেখে, বুকের উপর বসে পড়ে
তাকেও তো হত্যা করে সকাল আসে আর হিসাব খোঁজে
এত দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে তোমার দেহাবশেষ
কত দ্রুত বেড়ে চলছে ব্লাড সুগার !
ঘর কেনার ই এম আই!
এখনো তাকিয়ে দেখছি হাওয়াই জাহাজের দিকে
এত বেশরমভাবে যে,
নিজের মোবাইলের রিংটোনও বুঝতে পারি না ভিড়ে
এরকম আরও কত কি
যখন সেই মনোহারী জিনিসগুলো কিনি
পিঠ ঠেকিয়ে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গগুলোকে
তাদের সঙ্গে কাটিয়ে আসা অগণিত মুহূর্ত
গ্লাস উপচে আমার বুকের উপর গড়িয়ে পড়ে
আর রেলস্টেশনের মতো আমার হাতের উপর
রেখা টেনে যাওয়ার হিসেবও চাইতে থাকে নির্দয় সকাল
রেল স্টেশনে কাটানো গতরাতে
জানোয়ারের মতো এক লাশ
কিছু কবিতার পঙক্তি, মদের খালি বোতল
যন্ত্রণা থেকে বাঁচার কিছু গোপন স্বপ্নের সিডি
সুগন্ধীর এক বোতল
এই সবকিছু একটি কালো পলিথিনে ভরে
ময়লার ড্রামে ফেলে আসা সকাল
আবার নতুন করে হিসেব লেখার জন্য
ডায়রির একটা নতুন পাতা খুলতে থাকে।
2 & 1 pachcina kn?