তেরো শতকের ফারসি ভাষার কবি জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমি; পুরো নামের বদলে যাঁর নামের জন্য কেবল রুমিই চলে। রুমির কাব্যসম্ভার থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উক্তির অনুবাদ করেছেন দেবজ্যোতি ঘোষ, সঙ্গে যুক্ত করেছেন ছোট্ট একটি ভূমিকা।
রুমির মতই হৃদয়ে জ্বলে
প্রেমের তীব্র দহন,
অথচ সভ্যতার অভিশাপে বাঁধা দেহ ও মন!
— ইকবাল
রুমির মেধা, ব্যক্তিত্ব বা কবিত্ব — এগুলোর কোনটির ধারে কাছে যাবার ক্ষমতা দূরে থাক, তাঁকে স্পর্শ করার চেষ্টা করাটাও আমার পক্ষে স্পর্ধা। ‘রুমি’ অত্যন্ত পরিচিত এক নাম হলেও রুমির কবিতা অনুবাদ করব এমন কোন চিন্তা থেকে আমার পথচলা শুরু হয়নি, শুরু হয়েছিল নিছকই ব্যক্তিগত ভালো লাগা থেকে।
পারিবারিকভাবে একটি ধর্মীয় আবহের মধ্যে বড় হয়ে ওঠার সুবাদে বৈষ্ণববাদ, সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে সুফিবাদ, প্রেমের মাধ্যমে স্রষ্টার আরাধনা করার এই চর্চাগুলো সম্পর্কে একটা ভালো লাগা বরাবরই ছিলো। রুমি, হাফিজ, গালিব, হাল্লাজ, সারমাদ এঁদের কবিতা, সবচেয়ে বড় বিষয় এঁদের কবিতা আমার ভাবনার জগতকে বড় একটা নাড়া দেয়, ভিন্ন আঙ্গিকে চিন্তার সুযোগ করে দেয়।
রুমির কবিতার ভাষান্তর প্রথম শুরু হয় মূলত সামাজিক ফেসবুকে রুমিকেন্দ্রিক বিভিন্ন গ্রুপের পোস্ট, মেমে, কোট — এই জাতীয় ছোট ছোট কবিতাংশ থেকে। ভাষান্তর বা অনুবাদ ঠিক বলা যায় না, এগুলো থেকে রুমির ভাবনাকে নিজের মধ্যে আনতে চেষ্টা করা, তাঁর কবিতাগুলোকে নিজের মত করে প্রকাশ করার চেষ্টা করাটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। শুরুর দিকে খুবই অনিয়তিভাবে কাজগুলো করা হয়েছিল, একান্তই ব্যক্তিগত ভালো লাগার জায়গা থেকে।
কাজগুলো এরপর বন্ধু-সুহৃদ-শুভাকাঙ্ক্ষীদের নজরে আসতে থাকে। বলাই বাহুল্য, এই কাজে তাদের উৎসাহ নিশ্চিতভাবেই ছিলো আমার চেয়ে শতগুণে বেশি! তাদের পীড়াপীড়ি আর উৎসাহেই এরপর ভাষান্তরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মানের দিকটা অবশ্য দিন দিন কমেছে বলেই আমার বিশ্বাস। এরপর তাদের উৎসাহেই এক সময় হাত দেওয়া হয় নির্দিষ্ট কোনও বইতে।
ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরের এই কাজের শুরুর দিকের অধিকাংশ কবিতার উৎস ছিলো ফেসবুক। অবশ্য পরবর্তী সময়ে এদের অনেকগুলোকেই বিভিন্ন বইতে খুঁজে পাওয়া গেছে! আর বর্তমান ভাষান্তরের এই কাজের বেশিরভাগ অংশই নেওয়া হয়েছে ক্যামিল আর কবির হেলসিংকির রুমি ডেলাইট: এ ডে বুক অব স্পিরিচুয়াল গাইডেন্স নামক বইটি থেকে। এই বইটি আবার রুমির বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী থেকে বাছাই করা ৩৬৫টি অধ্যাত্মিক ছত্রের/কবিতাংশের একটি সংকলন। ছোট ছোট এই ছত্রগুলো অনুবাদ করতে গিয়েই বেশ ভালো রকম হিমশিম খেতে হয়েছে! আর অল্প কিছু কবিতা নেওয়া হয়েছে কোলমান বার্কসের আরেক বিখ্যাত বই রুমি: দি বুক অব লাভ থেকে। এই বইটি থেকে ভাষান্তর করতে গিয়েই বুঝেছি, আমি এখনও কতটা অক্ষম! এই গ্রন্থের বড় বড় কবিতাগুলো ভাষান্তর করতে গিয়ে মনে হয়েছে আপাতত এই কাজ ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সব মিলে কতটা কী হয়েছে তা আমি জানি না, সে ভার আমি পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিতে চাই। আমার প্রাপ্তি কেবল রুমিকে আরেকটু বেশি জানতে পারার আনন্দটুকুই।
০
মাটির পৃথিবী থেকে বিদায় নেবো একদিন
তোমার আমার মিলন হবে ভালোবাসার ভুবনে।
১
ঠিক বেঠিকের সীমানা পেরিয়ে
ওই দূর পরবাসে,
সামনে এসে দাঁড়াও বন্ধু
আমায় ভালোবেসে।
২
আজীবন খুঁজে যাওয়া
তোমার আমার মনের সেতুটা!
৩
প্রেমিকের বুকে বয় না হতাশার দীর্ঘশ্বাস,
প্রেমিকের অনুরক্ত হৃদয়ে অসম্ভবের বাস।
৪
ভালোবাসা বয়ে আনে হাজার অসুখ,
অথচ আমি তাকে স্বর্গসুখ বলি।
৫
আত্মা আমিই,
হাজারো শরীর জুড়ে বিচরণ আমার,
সবাই বলে “আমার”, “আমার”,
“আমিই আমার!’’
কেউ বলে না “তুমিই আমি!’’
৬
শূন্য থেকে ঘুরতে ঘুরতে জীবনের আগমন,
বিক্ষিপ্ত তারা মেশে ধুলিতে যেমন।
৭
দুঃখ থেকে পালিও না,
দুঃখের মাঝেই খোঁজো দুঃখের দাওয়াই,
কণ্টক পেড়িয়েই তবে ফোঁটে গোলাপ,
চুনিও তো কেবল পাথর মাত্র।
৮
প্রেমের পায়ে গড়াগড়ি খায়
সকল গর্ব-গরিমা!
৯
নিয়েছে যে জিতে নিঃশ্বাস,
তোমার বরষ-মাস,
তাকেই সঁপিও প্রাণ।
১০
কথারা ছুটি নিক,
হৃদয়ে হৃদয়ে চলুক আলাপন।
চলবে
খুব সুন্দর!❤️