অ্যাডাম গ্লেসার একজন সাবেক পর্নতারকা — যিনি অভিনয় করা ছেড়ে দিয়েছেন। ছেড়ে দেয়ার যৌক্তিক কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দ্যা কুইন্ট ম্যাগাজিনে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে কথা বলেছেন পর্ন ইন্ডাসট্রির ভেতর-বাহির নিয়ে। বিশেষ করে ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে অ্যাডাম কিছু কথা বলেছিলেন। কারণ পর্নবিশ্বে ভারত খুব দ্রুত সময়ে একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ইন্টারনেটে পর্ন সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। ২০১৬ সালের তথ্যমোতাবেক ভারতে ৭৫ভাগ মোবাইল ডাটা ব্যবহার করা হয়েছে পর্ন দেখার কাজে। অ্যাডামকে কেবল ভারতীয় পরিস্থিতি নয়, সামগ্রিকভাবে পর্ন-সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, অ্যাডামের যৌনতা সম্পর্কিত বইও আছে।
অ্যাডামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘এই আপনি আকর্ষণীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সেক্স করেছেন এবং টাকা পেয়েছেন, আপনি তো স্বপ্নের জগতেই ছিলেন অ্যাডাম — তাই নয় কি?’ অ্যাডাম বলেন, ‘প্রথমত সবাই পর্নস্টার হতে পারে না। সাইজ-ইস্যু একটা বড় ব্যাপার। আপনাকে গড় সাইজের মানুষ থেকে আলাদা হতে হবে।’
‘দ্বিতীয়ত এমন কিছু পরিস্থিতিতে আপনাকে পারফর্ম করতে হবে — যা কৃত্রিম, ন্যাচারাল নয় — অন্য মানুষের সামনে আপনাকে বলা হচ্ছে আপনাকে কী করতে হবে, কখন করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আপনাকে এমন মানুষের সঙ্গে সেক্স করতে হবে, যে কিনা মোটেও আকর্ষণীয় নয়, নয়তো সেদিন আপনি টাকা পাবেন না।’
আপনি পর্নে যা দেখেন তার সবটা আপনারা বিশ্বাস করবেন না। মুভিতে যতোই বাস্তব আর স্বতঃস্ফূর্ত মনে হোক-না-কেন, আদতে তা নয়।
‘কিছু মেয়ে আছেন বাস্তব জীবনে লেসবিয়ান, কিন্তু টাকার জন্য পুরুষদের সঙ্গে সেক্স করতে হয়। পুরুষদের প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণ নেই; কিন্তু টাকার জন্য তাদের তা করতে হয়। একইভাবে এমন পুরুষ আছেন যারা গে নন, কিন্তু তারা গে পর্নে অংশ নেয়, কারণ তারা বেশি টাকা পায়।’
অ্যাডাম বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় ৯৫ ভাগ পুরুষ পারফর্মারকে কিছু-না-কিছু পরিমাণে পুরুষাঙ্গের উত্থান দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ওষুধ খেতে হয়। আর আপনারা পর্দায় পায়ুকামের যেসব দৃশ্য দেখেন, তা বাস্তবায়নের জন্য পর্দার পেছনে অনেক কিছু করতে হয়, অনেক কিছু।’
অ্যাডামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘গত কয়েক দশকে পর্ন ইন্ডাসট্রি দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে বেড়েছে। ইন্ডাস্ট্রি কি বদলেছে?’ জবাবে বলেন, ‘একটি কারণে আমি পর্ন ইন্ডাসট্রি থেকে বেরিয়ে গিয়েছি, তা হলো পদ্ধতিগতভাবে ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠেছিল নারীবিদ্বেষী। মেয়েদের ঠেসে ধরা, মেয়েদের দিকে থুতু ছিটানো — মুভিতে এসবের চিত্রায়ণ বেশি বেড়ে গিয়েছিল। এটা আমার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিষয়টা আসলে সম্মতির ব্যাপার, এবং লোকেরা আনন্দের অভিজ্ঞতা নিচ্ছে — উভয় পক্ষ, সব পক্ষ; এটা বিষয় নয় কত জন মানুষ সেখানে আছে।’
অ্যাডাম যোগ করেন, ‘নিশ্চিতভাবেই হার্ডকোর কনটেন্টের একটি বাজার আছে। তা না হলে, তারা এসব তৈরি করতেন না। কিন্তু যেসব বস্তু তৈরি করা হচ্ছে সেসব করা হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ফ্যান্টাসি পূর্ণ করার জন্য। এরকম করা হচ্ছে এ উদ্দেশ্যে নয় যে, কেমনভাবে করা উচিত কিংবা ব্যক্তিজীবনে আপনি কীভাবে কী করবেন — তার নির্দেশনা এসব।’
আমেরিকা ও ভারতের পর্ন বিষয়ক তুলনা টেনে প্রশ্ন করা হয়, ‘পর্নের সব চেয়ে ক্রমবর্ধমান ভোক্তা হিসেবে ভারতীয়দের আমেরিকার কাছ থেকে শেখার কিছু আছে? কারণ আমেরিকা শুরু থেকেই পর্ন দুনিয়ার উঁচু সিঁড়িতে অবস্থান করছে।’ অ্যাডাম বলেছেন, ‘প্রথমত, আপনি পর্নে যা দেখেন তার সবটা আপনারা বিশ্বাস করবেন না। মুভিতে যতোই বাস্তব আর স্বতঃস্ফূর্ত মনে হোক-না-কেন, আদতে তা নয়। দ্বিতীয়ত, বিষয়টি নিয়ে খোলামেলাভাবে কথা বলতে শুরু করুন।’
অ্যাডাম আরও বলেন, ‘এখানে এই আমেরিকায় প্রচুর সংখ্যক ধার্মিক মানুষ আছেন যাঁরা এ বিষয়ে কথা বলতে স্বস্তি বোধ করেন না। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি বুঝতে শুরু করেছেন যে, এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। তাঁরা বুঝতে শুরু করেছেন বাবা-মা বা সঙ্গী হিসেবে কথা বলাটাই একমাত্র উপায়।’ ভারতীয় সংস্কৃতির স্বভাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি, একটি ভারতীয় গৃহাস্থলিতে কাপলদের মধ্যে যৌন বিষয়ক যোগাযোগ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু সঙ্গীকে এই প্রশ্ন করাটা খুব সমস্যাজনক নয়, তুমি কীভাবে করতে পছন্দ করো? আমার কাছ থেকে তুমি কীভাবে চাও? আমি বাজি ধরে বলতে পারি, অনেক নারী জানেনই না তাঁরা আদতে কী পছন্দ করেন? কারণ কেউ তাঁদের কখনো জিজ্ঞেস করে নি, নিজের জন্য এ বিবেচনাটি তাঁরা করেনও নি। আমি এটা জানি, কারণ আমেরিকাতেও ব্যাপারটি এরকমই।
সকল পুরুষের জন্য ছোট্ট পরামর্শ — আপনি কী করে বিছানায় একজন নারীর মনে ঝড় তুলবেন? আপনি তার তৃপ্তি সম্পর্কে সচেতন হোন। বিশ্বাস করুন, এটা আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।’
অ্যাডাম তাঁর পর্ন-ক্যারিয়ারের স্মরণযোগ্য অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘ফিমেল ইজাকুলেশন বা নারীর রতিস্খলন বলতে একটা ব্যাপার আছে। এ ব্যাপারে এমনকি আমেরিকাতেও সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। কিন্তু আমি এ বিষয়ে মুভি বানাতে শুরু করি। মেয়েরা এত দিন ভাবত, তারা বোধ হয় সেক্স করার সময় বিছানায় প্রস্রাব করছে। কিন্তু এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ামাত্র — এখন যেটিকে বলা হয় ফিমেল ইজাকুলেশন। অনেক নারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন এ বিষয়ক ছবি তৈরি করার জন্য। তারা বলেছেন যে, তারা চমকে গিয়েছেন, অন্য মেয়েদের বেলায়ও এরকম ঘটে। আর তাই এ সবের অংশ হতে পেরে ভালো লাগে।’
অ্যাডামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আমাদের সত্যিকার সেক্স এডুকেশন নেই, পর্ন সেই শূন্যতা পূরণ করছে। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?’ জবাবে বলেন, ‘কোনো কনটেক্সট বা পরিপ্রেক্ষিত ছাড়া পর্ন দেখা খুবই বিপদজনক। ধরুন একজন পুরুষ হিসেবে আপনি দেখছেন কোনো নারীকে জাপটে ধরে প্রায় দমবন্ধ করে আটকে ফেলা হয়েছে, আর আপনি ভাবলেন এরকমই করতে হয় এবং আপনার যৌনসঙ্গীর সঙ্গে ঠিক তা-ই করতে গেলেন। তার মানে এটা আপনাকে খুবই আগ্রাসী করে তুলেছে। কিন্তু এ ধরনের আগ্রাসী আচরণ আপনি করতে পারেন না, যদি না এ ব্যাপারে অপর পক্ষের পূর্ণ সম্মতি না থাকে।
আর তাই, একজন প্রশিক্ষক হিসেবে আমি বলতে চাই, পর্ন এমন হাতিয়ার যা দু দিক থেকেই কাটে। আপনি এমন সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন যে, এটা দেখে লোকেরা আনন্দ পাবে। প্রতিটি ধরনের সেক্সের নাম আপনি বলতে পারেন, যা লোকেরা উপভোগ করবে, কিন্তু আমি দেখাতে পারবো এমন মানুষ আছে যারা সে ধরনের সেক্স পছন্দ করে না। তবে সম্ভবত এমন মানুষ পাবেন না — যে অর্গাজম বা শীর্ষসুখ উপভোগ করে না।’
ভারতীয়দের জন্য অ্যাডামের চূড়ান্ত বক্তব্য হলো, ‘যৌনতা খুবই ভালো জিনিস, যৌনতা খারাপ বিষয় নয়। এটাই এক নম্বর ব্যাপার। যৌনতা কেবল জন্মদানের বিষয় নয়। যৌনতা সবার আনন্দের জন্য — যার এর সঙ্গে যুক্ত তাদের সবার আনন্দের জন্য। আমি সবাইকে বলবো পর্ন দেখার চেয়ে বই পড়ুন, অন্যান্য উৎস ব্যবহার করুন এবং যৌনতা বিষয়ে নিজেদের শিক্ষিত করে তুলুন।’
সূত্র : দ্যা কুইন্ট
আরও পড়ুন