কারেনজিৎ কৌর ভোহরা — এ নামে খুব কম মানুষই তাঁকে চেনেন; কিন্তু সবাই চেনে ও জানে সানি লিওনিকে। কারেনজিৎ ও সানি লিওনি মূলত একই ব্যক্তি। বিশ্ব পর্ন ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ-তারকার একজন সানি। খুব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পর্ন ছবিতে অংশ নিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে যৌন ও শরীরী উপস্থাপনাকে গ্রহণ করেছেন জীবিকা ও জীবনের অংশ রূপে। ২০১০ সালে উভকামী সানি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ বারোজন পর্নতারকার একজন। ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে পর্নগ্রাফিতে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তীকালে সানি আসন করে নিয়েছেন বলিউডি চলচ্চিত্রে। ২০১২ সালে পুজা ভাটের ইরোটিক থ্রিলার জিসম টু-তে অভিনয় করেন।
২০১৫ সালে ভারতীয় এক নারী সানির বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ে অভিযোগ তোলেন যে, সানির ওয়েব সাইট ভারতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে। ২০১৭ সালে বেঙ্গালুরুতে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সানির পারফর্ম করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর পর্ন-অতীতের জন্য প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়; প্রতিবাদকারীরা গণ-আত্মহত্যার হুমকি দেয়। কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামালিঙ্গা রেড্ডি সানি লিওনির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ২০১৮ সালে চেন্নাইয়ের একজন অ্যাকটিভিস্ট সানির বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তোলেন; যা ভারতীয় আইন বিরুদ্ধ বলে তিনি মনে করেন। অভিযোগকারী এও বলেন, সানি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সমাজের নৈতিক বিন্যাসকে ধ্বংস করছেন।
তথ্যগুলো এ-ই প্রমাণ করে যে, সানি লিওনি ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য বিরাট এক ‘সাংস্কৃতিক সমস্যা’; যদিও ভারতীয় সংস্কৃতিতে পর্ন চলচ্চিত্রের স্রষ্টা সানি লিওনি নন। প্রশ্ন হলো : সানি লিওনি তাঁর সামগ্রিক কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কী?
‘এটা অন্য কোনো চাকরির মতোই একটা চাকরিমাত্র।’
সানি লিওনি পর্নোগ্রাফিকে দেখেছেন শতভাগ পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁর এরকম দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন চোখে পড়ে। ২০১৪ সালে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রণব দীক্ষিত যখন সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি কখনো কোনো পর্ন-তারকার সঙ্গে কথা বলি নি।’ সানি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছিলেন, ‘ধীরে। আমি মানবজাতিরই অংশ।’ সানি ‘পর্ন’ শব্দটি পছন্দ করেন না, তিনি বলতে চান, ‘অ্যাডাল্ট এনটারটেইনমেন্ট।’ তাঁর মতে, ‘এটা অন্য কোনো চাকরির মতোই একটা চাকরিমাত্র।’ এতটাই পেশাদারি ব্যাপার যে, সানি বলেন, ‘কাজ শেষে তারা তাদের স্ত্রী-মেয়েবন্ধু-ছেলেবন্ধুদের কাছে কিংবা তাদের কুকুরের কাছে যান। অনেকে মনে করেন পর্ন যেন ‘উন্মত্ত বুনো বন্য পশ্চিমা ইন্ডাস্ট্রি। আদতে তা নয়।’
২০১২ সালে আইডিভা ম্যাগাজিনকে সানি বলেছিলেন, ‘আমি কেবল আমার স্বামীর সঙ্গে কাজ করি, এটা একটা বিরাট পার্থক্য তৈরি করে। কেননা দিন শেষে কোনো পুরুষ বা নারীই চান না তাঁর সঙ্গী অন্য কারো সঙ্গে সেক্স করুক। এটিই স্বাভাবিক মানবিক বৈশিষ্ট্য।’
প্রায় কাছাকাছি ধরনের কথা বলেছেন টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘অ্যাডাল্ট ছবিতে অভিনয়ের জন্য আপনার স্বামী অভিযোগ তোলেন নি?’ সানি বলেন, ‘সে আমার সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সমর্থন দেয়। সে আমার দিনের প্রতিটি পদক্ষেপ জানে। আর আমাদের সম্পর্ক মনোগ্যামাস বা একগামী।’
ভারতের পর্নোগ্রাফিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘পেশাগত কাজের অংশ হিসেবে আমি যা করি, ভারতে তা বেআইনি। কিন্তু আমি আমার কাজকে ভালোবাসি! আমি আমার জীবনকে ভালোবাসি! আমি অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রির সব কিছুকে ভালোবাসি। আপনি এমন কিছু সুন্দর জিনিস তৈরি করছেন জুটিদের জন্য কিংবা একজন একাকী মানুষের জন্য যার কারো সঙ্গে মিলিত হবার সযোগ নেই। হতে পারে, তার হয়তো সামান্য ভালোবাসাই দরকার। ইন্ডাস্ট্রি কাজ করে মানুষের মন নিয়ে।’
বলিউডি চলচ্চিত্রে যুক্ত হবার পর তাঁর দুটো দুুনিয়া : এক দিকে চলচ্চিত্র, অন্য দিকে অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রি। দুটো কি একই সঙ্গে চালানো সম্ভব? আইডিভাকে সানি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় না, আমি পারব। এখানে শ্যুট করা আমার জন্য বৈধ নয়। আমি কখনোই একথা বলব না যে, আমি আর কখনোই অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রির অংশ হবো না। এখন আমি যা, যার শেকড় নিহিত আছে সেখানেই।’ ভারতে পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে বলেন, ‘আমার মনে হয় ভারত পর্নোগ্রাফির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এই প্রজন্ম টিভিতে ‘বোল্ড সিন’ দেখতে অভ্যস্ত। যাই হোক, পরিস্থিতি বদলাতে আরও সময় লাগবে।’ টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন যে, ভারতীয়রা পর্নোগ্রাফিকে মোটাদাগে ভালোভাবেই নেয়; কিন্তু এ ব্যাপারে কথা বলতে চায় না, সেটা অন্য বিষয়। তাঁর মতে, ভারতীয়রা রক্ষণশীল। কিন্তু একই সঙ্গে এও স্মরণ করিয়ে দেন, তার মানে এই নয় যে, মার্কিনিরা উদার। লোকেরা এমন মনে করলেও যেমন উদার তাদের ভাবা হয়, ততোটা তারা নয়। সানির ভাষ্যে, লাঞ্চ বা ডিনারের সময় যৌনতা নিয়ে কথা বলে না।
সিএনএন-আবিএন-এর বহুবিতর্কিত সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক ভূপেন্দ্র চৌবে সানিকে বলেন যে, অনেক হাউজ ওয়াইফ আছেন, যাদের অনেকে ইন্ডিয়ান, অনেকে কেবল হাউজ ওয়াইফ নন, অনেক বিবাহিত নারী আছেন যাঁরা সানি লিওনকে মনে করেন তাঁদের স্বামীদের জন্য হুমকি। তাঁরা মনে করেন, সানি লিওন তাঁদের স্বামীদের হরণ করে নিয়ে যাবে। জবাবে সানি বলেন, ‘দুঃখিত আমি মোটেও আপনার স্বামীকে চাই না। আমার নিজেরই স্বামী আছে। আমি তাঁকে ভালোবাসি। সে অনেক উত্তেজক, সেক্সি, স্মার্ট আর অনেক মেধাবী। দুঃখিত, আমি আপনার স্বামীকে চাই না।’
চৌবে সানির অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে সানি তাঁর পেশাদারিত্ব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘…এখানে বসে আমি আপনার সঙ্গে বলছি টাকার বিনিময়ে। এভাবেই ঘটে থাকে। দিন শেষে এসব ব্যবসামাত্র। আমরা সবাই কাজ করি, কেননা আমরা পরিবারকে খাওয়াতে পরাতে চাই। কিন্তু আপনি যখন সিনেমা শিল্পে কাজ করেন তখন সেখানে আপনার প্যাশনের দরকার পড়ে, আর সেক্ষেত্রে সব সময় প্যাশনের প্রয়োজন।’
সানিকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কি আপনার দিকে একজন শিল্পীর দৃষ্টিতে তাকান?’ সানির পাক্কা জবাব, ‘আমি আমার দিকে তাকাই একজন এন্টারটেইনার হিসেবে।’ চৌবে সানিকে আরও কড়া প্রশ্ন করেন, ‘আপনি জানেন টিপিক্যাল বলিউডি পরিভাষায় আপনি একজন আইটেম গার্ল। আপনি কি একজন আইটেম গার্ল?’ সানি বলেন, ‘আমি নিজেকে অন্য কেউ হিসেবে বিবেচনা করি না, আমি একজন মেয়ে যে কাজ করতে চায়।’ প্রকৃতপক্ষে পর্নোগ্রাফিক অতীত নিয়ে সানির কোনো অনুতাপ নেই; কারণ তিনি মনে করেন সে অতীত না থাকলে আজ যেখানে তিনি আছেন সেখানে তিনি থাকতে পারতেন না। ইন্ডিয়ান টাইমসের সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটাই বলেছেন।
* ঋণ : ইন্ডিয়ান টাইমস, আইডিভা ডট কম, দ্যা মিন্ট।
আরও পড়ুন