মিয়া কালিস্তা মূলত পরিচিত মিয়া খলিফা নামেই। এই পরিচিতির পেছনে আছে ২০১৪ সালে মাস তিনেকের জন্যে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে তার যুক্ত থাকা। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে বিবিসি-তে প্রচারিত হার্ডটক অনুষ্ঠানে মিয়া খলিফা একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন স্টিফেন স্যাকার। এতে উঠে এসেছে তার পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার কারণ, ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে আসা ও তার প্রতিক্রিয়া এবং পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে নানা আঙ্গিকের আলোচনা। এই সাক্ষাৎকারে মিয়া খলিফা অনেক মিথ্যা কথা বলেছেন এমন দাবি করে বেশ কিছু ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়। তবে অনুবাদক মিয়ার বক্তব্যের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের চেয়ে পর্নোগ্রাফির ভেতর-বাহির নিয়ে মিয়ার আলোচনার মূল বিষয়গুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন, আর এই সত্য-মিথ্যা যাচাই আসলে অনুবাদকের পক্ষে সম্ভবও নয়। অনুবাদের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারটিকে পাঠোপযোগী করতে কিছুটা পরিমার্জন করা হয়েছে। মূল সাক্ষাৎকারটি পাওয়া যাবে এখানে https://www.youtube.com/watch?v=i2qplvJ6SLs। বন্ধনীর ভেতর বাবহৃত শব্দ অনুবাদকের সংযোজন।)
স্টিফেন স্যাকার: হার্ডটকে আপনাদের স্বাগতম। আমি স্টিফেন স্যাকার। সেক্সের সাথে মানুষের চিন্তাবিষ্টতা একেবারেই নতুন কিছু নয়, কিন্তু ইন্টারনেটের আগমণে কামনার প্রতিটি এলাকা আবিষ্কার ও তার নেতিবাচক ব্যবহার খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। অনলাইন পর্ন ইন্ডাস্ট্রি প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা তৈরি করলেও এসব মুনাফার ফলভোগী হলো কর্পোরেট মোড়লরা; কোনভাবেই যৌন দৃশ্যে বা যৌনকর্মে অভিনয় করা নারী বা পুরুষরা নয়। আমার আজকের অতিথি মিয়া খলিফা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে একজন পর্ন পভিনেত্রী ছিলেন। হিজাব পরে যৌন দৃশ্যে অভিনয় করে তিনি বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত হয়েছিলেন। বছরাধিককালের হুমকি ও অনিরাপত্তাবোধের পর এখন তিনি কথা বলছেন। পর্ন ইন্ডস্ট্রি ও একবিংশ শতাব্দীর সংস্কৃতি সম্পর্কে তার গল্প আমাদের কী বলে? মিয়া খলিফা, হার্ডটকে আপনাকে স্বাগতম।
মিয়া খলিফা: আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে ধন্যবাদ।
স্টিফেন: বিভিন্ন দিক থেকে আপনি একজন খুবই বিখ্যাত নারী। ইন্সটাগ্রামে আপনার এক কোটি ৬০ লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। তবে আপনার এই খ্যাতির মূলে রয়েছে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে আপনার সংক্ষিপ্ত সময়ের যোগাযোগ। এই বিষয়টির সাথে মানিয়ে নেয়া কি আপনার জন্যে কঠিন?
মিয়া: নিশ্চিতভাবেই। ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ার পর আমি ডিলিট করেছিলাম…আসলে, আমি আমার ইন্সটাগ্রাম ডিলিট করিনি। ইসলামিক স্টেটের সমর্থকরা সেটি হ্যাক করে বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিয়েছিল। তাই ইন্সটাগ্রাম সেই অ্যাকাউন্টটি সরিয়ে দেয়। এরপর এক বছর পর্যন্ত আমি নতুন করে আরেকটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করিনি। আর এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাকে বলা যেতে পারে একজন সাবেক ও কুখ্যাত পর্নস্টার হিসেবে আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়ে বিদ্যমান আখ্যানগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত। আর তাই আমি আবার একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করি কারণ সম্ভবত আমি হতে চাচ্ছিলাম একজন ‘প্রভাবক’, আসলে সঠিক শব্দটি খুঁজে পাচ্ছি না।
স্টিফেন: হুম, কারণ যদি আপনি আপনার নাম লিখেন গুগলে, যেমনটা আমার করতে হয়েছে গবেষণার জন্যে…
মিয়া: ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে?
স্টিফেন: হ্যা। আসলে এটি আমার কাজের অংশ ছিল। কিন্তু আসল কথা হলো, এটি করা হলে অসংখ্য ভিডিওর লিংক চলে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে ‘পর্নস্টার’ শব্দটি দেখা যায়। এটি এমন এক বিষয় যা থেকে আপনি কখনোই বেরিয়ে আসতে পারবেন না…
মিয়া: প্রথমত আমি বলতে চাই পুরো বিষয়টা খুব রূঢ় শোনাচ্ছে। তবে আমি (বেরিয়ে আসার) চেষ্টা করছি।
স্টিফেন: হ্যাঁ, এখন আমি বুঝতে পারছি।
মিয়া: আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
স্টিফেন: আমি আসলে এটি বলতে চাই নি যে আপনি চান ইন্টারনেটে আপনাকে এভাবে দেখা যাক। কিন্তু প্রযুক্তি আসলে এভাবেই কাজ করে, মানে ইন্টারনেটের কাজ করার এটিই পদ্ধতি।
মিয়া: হ্যাঁ। গুগুলে আমাকে নিয়ে ইতিবাচক আধেয় খুব বেশি নেই আর আমরা এটি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। একমাত্র বা অনেকগুলো বিষয়ের প্রথম বিষয় হলো এসব সাইটের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু এসব সাইটের হোমপেইজে এমন ভাবে অনেক কিছু লেখা থাকে যেন আমিই আসলে এই সাইটগুলো চালাচ্ছি। এমনকি উইকিপিডিয়ায় আমার পেইজে তারা লিখে দিয়েছে যে ঐ সাইট আমার আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইট। আর আইনি পদক্ষেপসহ আমরা অসংখ্যবার চেষ্টা করেছি এগুলো ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু তারা কিছুই শুনেনি। আমরা অসংখ্য প্রস্তাব দিয়েছি।
স্টিফেন: এই বিষয়গুলো নিয়ে একে একে আলোচনা করা যাক। একজন বালিকা যাকে তার জন্মভূমি লেবানন থেকে তার অভিভাবকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছিল; যে বিদ্যালয়ের শিক্ষা পেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ছিল স্পষ্টভাবেই বুদ্ধিমান; যে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে; কিভাবে জড়িয়ে গেলেন সেক্স বা পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে?
মিয়া: আমি মনে করি না আত্মসম্মানের স্বল্পতা কারও সাথে বৈষম্য করে। আপনি একটি দারুণ পরিবার থেকেই আসুন কিংবা আসুন তেমন কোন পরিচয়হীন এক পরিবার থেকে। আমার পুরো বাল্যকাল আমি অতিরিক্ত শারীরিক ওজন নিয়ে কাটিয়েছি আর আমি কখনোই ছিলাম না পুরুষদের মনোযোগ পাওয়ার মতো আকর্ষণীয় বা তেমন উল্লেখযোগ্য। আর কলেজে থাকার প্রথম বছরে হঠাৎ করেই আমি এই ওজন কমাতে সক্ষম হলাম, ছোট ছোট কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে। আর যখন আমি পাশ করে বের হলাম তখন একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধনের জন্যে আমি তৈরি ছিলাম। আমি অত্যন্ত সচেতন ছিলাম আমার স্তন নিয়ে কারণ ওজন কমার প্রথম প্রভাব এর উপরই পড়েছিল। আমার ওজন প্রায় ৫০ পাউন্ড কমে গিয়েছিল, আমি জানি না সেটি আসলে কত কেজি বা অন্য কিছু!
স্টিফেন: এটি আসলেই উল্লেখ করার মতো পরিমাণ…
মিয়া: হ্যাঁ।
স্টিফেন: এটি আপনার শরীর, আপনার শারীরিক গঠনকে বদলে দিয়েছিল।
মিয়া: পুরোপুরি। তখন আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল আমার স্তন নিয়ে। তাই আমি চাচ্ছিলাম এগুলো আগে যেমন ছিল, কম-বেশি সেই অবস্থায় ফিরে যেতে। আর একবার যখন আমি তা করে ফেললাম, তখন আমি পুরুষদের মনোযোগ পেতে শুরু করলাম। আর আমি এর সাথে পরিচিত ছিলাম না। আর আমি ভাবতাম এগুলো চলে যাবে যদি না আমি একে ধরে রাখি এবং যা আমাকে করতে বলা হয়েছিল বা আমার কাছ আশা করা হয়েছিল তা না করি। তাছাড়া আমি যখন প্রথমবারের মতো একে অনুভব করি, অর্থাৎ প্রশংসা বা এর বৈধকরণ, আমি চাই নি এটি চলে যাক।
স্টিফেন: হুম। আমার মনে হয় আসলেই আপনার পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান ছিল। আপনি ছিলেন একজন তরুণ স্নাতক, খুঁজে নিতে চাচ্ছিলান কোন একটা চাকরি। আর আপনি রাস্তায় নজরে পড়েছিলেন কোন এক লোকের যে বলেছিল, “আমি তোমার সাথে কাজ করতে পারি।” আর এরপর সে খোলামেলাভাবেই বলেছিল এটি পর্ন ব্যবসা। আপনার ভেতর এমন কী কাজ করেছিল যা আপনাকে ঐ অবস্থা থেকে দৌড়ে না পালিয়ে এতে যুক্ত করেছিল?
মিয়া: না…এটি আসলে এমন ছিল না। এটা শুধুমাত্র এমন ছিল না যে, “আচ্ছা তুমি কি পর্নে অভিনয় করতে চাও?” এটি এর চেয়েও বেশি ছিল। “ওহ, তুমি খুব সুন্দর!”, অথবা, “তুমি কি মডেলিং করতে চাও?” “ওহ, তুমি কি জানো তোমার একটি দারুণ শরীর আছে?”, অথবা, “আমার মনে হয়ে তুমি ন্যুড মডেলিং করলে ভালো করতে পারবে।” অনেকটা এমন ছিল। আর আমি যখন স্টুডিওতে গিয়েছিলাম, সেটি ছিল খুবই সম্মানজনক একটি জায়গা। মায়ামির ডোরাল ফ্লোরিডায় দারুণ এক লোকেশনে ছিল সেটি। এটি ছল খুব পরিচ্ছন্ন। সেখানে যারা কাজ করতো সবাই ছিল ভালো। সেখানকার সবগুলো শয়নকক্ষ সাজানো ছিল পারিবারিক ছবি দিয়ে। মানে সেখানে এমন কিছু ছিল না যা ছিল কৌশলী কিংবা আমাকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো। আর সেখানে…প্রথমবার যখন আমি প্রবেশ করি, সেটা পর্ন চলচ্চিত্রে আমার প্রথম অভিনয় ছিল না। এটি ছিল দ্বিতীয়বারের সময়। প্রথমবারে মূলত সেই “তুমি কি এটা করতে চাও?” আর চুক্তিস্বাক্ষর জাতীয় বিষয়গুলো বেশি ছিল।
স্টিফেন: আপনি কথা বলছিলেন এমন মানুষদের সম্পর্কে যারা অনভিজ্ঞ তরুণ নারীদের ব্যবহার করে। আমি খুব অবাক হচ্ছি, সেটি নিয়ে এখন আমরা কথা বলবো। আপনার কি কখনো ধোঁকায় পড়ার মতো অনুভূতি হয়েছে? যখন আপনি আপনার কমবয়সী নিজের দিকে ফিরে তাকান, এখন আপনার বয়স ২৬, তখন আপনি ছিলেন ২১ বছরের; আপনি যখন সেই ২১ বছর বয়সীর দিকে তাকান তখন কি আপনার মনে হয় যে তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল? সে ছিল অবস্থার শিকার?
আমি শুধু পৃথিবী থেকেই নয়, আমার পরিবার ও আমার আশেপাশের মানুষের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। আর এটি ছিল বিশেষভাবে ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে আসার পর, তখনও আমি ছিলাম একাকী। আর আমি জানি কিছু ভুল আসলে কোনভাবেই ক্ষমা করা যায় না। কিন্তু সময় সব ক্ষত পূরণ করে দেয় আর বিষয়গুলো এখন ভালো হয়ে উঠছে।
মিয়া: আমি মনে করি তার কাছে তখন এমন কোন উপায় ছিল না যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারতো যে তার অবস্থানের সুযোগ নেয়া হচ্ছে। আর সে বুঝে নি যে তাকে যা যা বলা হয়েছে তা আসলে ছিল মিথ্যা। হয়তো খুব বেশি মিথ্যা ছিল না। কিন্তু তারা আসলে চাচ্ছিলো আমাকে বিভ্রান্ত করে তাই করাতে যা তারা চায় যে আমি করি। আমি আসলে নিজেকে একজন ‘অবস্থার শিকার’ হিসেবে দেখি না। আমি এই শব্দটা পছন্দ করি না। আমিই আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যদিও সেগুলো ছিল ভয়াবহ সব সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি নারীদের যদি প্রস্তাব দেয়াও হয় তাহলে সেই প্রস্তাব দেয়ার কৌশল বা উপায়ে পরিবর্তন আসা প্রয়োজন।
স্টিফেন: এটি একটি ইন্ডাস্ট্রি এবং হাজার কোটি ডলারের একটি ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্রীয় উপাদান হলো তরুণ মানুষেরা, নারী ও পুরুষরা যাদেরকে ক্যামেরার সামনে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় আর তারা তাতে রাজি হয়। আপনার এসব ভিডিও—যেগুলো হাজার হাজার বার ভিউ হয়েছে—তৈরি করার প্রক্রিয়ায় আপনার নিজের আসলে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব ছিল?
মিয়া: কিছুই না। খুবই অল্প। অনেকটা এক পোষাক থেকে আরেক পোষাক পরার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র “হ্যা” বা “না” বলার মতো। ক্যামেরায় কী রেকর্ড করা হচ্ছে, এর মূলভাব, বিষয়, কোথায় ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে এসব বিষয়ে খুব অল্পই নিয়ন্ত্রণ থাকতো। এই বিষয়গুলো আসলে আপনার হাতে নেই।
স্টিফেন: কিন্তু আমার কাছে একজন বহিরাগত ও মৌলিক বিষয় হিসেবে অবশ্যই সম্মতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। যদি তারা আপনাকে এমন ধরনের সেক্সে অভিনয় করতে বলে যা আপনি কোনভাবেই করতে চান না…
মিয়া: না, তারা আপনাকে জোর করতে পারবে না। কোনভাবেই না।
স্টিফেন: নিকট অতীতে আপনি সেক্স ভিডিওতে অভিনয় করার সময় আপনার নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে আগ্রহদ্দীপক আলোচনা করেছেন। আপনি বলেছেন যে আপনার এক ধরনের ব্ল্যাক আউট হতো আর এখন যখন আপনি পেছনে ফিরে তাকান তখন অনেক কিছুই স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন না। আপনি কি আমার কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন যে, আপনার মাথার ভেতর কী চলছিল, যখন আপনি এই ইন্ডাস্ট্রির গভীরে প্রবেশ করেছিলেন?
মিয়া: আমার মনে হয় যখন আমি এই কথা বলেছিলাম তখন আসলে যে শব্দটি আমি খুঁজে পাই নি তা হলো অ্যাড্রেনালিন। আমার মনে হয় আমার অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ ছিল খুব বেশি। কারণ আমি জানতাম আমি যা করছি তা ছিল আমি যা যা করবো বলে ভেবেছিলাম সেগুলোর সীমার চেয়ে একেবারে বাইরের বিষয়। অথবা এমন কিছু যা আমি করবো বলে ভাবতে পারতাম তার চেয়েও ভিন্ন। তাই অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ ছিল সর্বোচ্চ। যা পেছনে ফিরে তাকিয়ে যা যা ঘটেছিল তার সবকিছু স্মরণ করা কঠিন করে তুলে।
স্টিফেন: আপনার কি এখন এ ব্যাপারে কথা বলা কঠিন মনে হচ্ছে?
মিয়া: হ্যাঁ। কিছুটা।
স্টিফেন: আচ্ছা। এখন আমি বুঝতে পারছি। আর আপনি কি মনে করেন এটি কোন পার্থক্য তৈরি করে—আমি আসলে আপনার কাছে শুধু জানতে চাচ্ছি, আপনি একজন আরব বংশোদ্ভূত, আপনার অভিভাবকরা এসেছেন লেবানন থেকে—…
মিয়া: হ্যাঁ, আমি লেবানন থেকে এসেছি। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই।
স্টিফেন: ঠিক তাই। আপনি একজন আরব আর আরব সংস্কৃতি সামগ্রিকভাবে খুবই রক্ষণশীল। আপনি কি মনে করেন যে এটি ছিল আরেকটি স্তর যা আপনাকে খুলে ফেলতে হয়েছিল এই ব্যবসায় আসার জন্যে?
মিয়া: সম্ভবত। আমার মনে হয় এর একটি অংশ ছিল বিদ্রোহ করা। আর এর পেছনে ছিল সীমা ও চরিত্রের চেয়ে অনেক বাইরের এমন কিছু করতে চাওয়া যা এমনকি আমাকেও চমকে দিয়েছিল।
স্টিফেন: আমার মনে হয় এটি খুব বোকার মতো প্রশ্ন হবে, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আপনার পরিবার আপনি কী করছেন সে ব্যাপারে কিছুই জানতো না।
মিয়া: না। আর যখন তারা এই বিষয়ে জানতে পেরেছিল তারা আমাকে তাদের অংশ হিসেবে অস্বীকার করেছিল।
স্টিফেন: তাই?
মিয়া: হ্যাঁ।
স্টিফেন: এটা অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন ছিল।
মিয়া: হ্যাঁ। আমি শুধু পৃথিবী থেকেই নয়, আমার পরিবার ও আমার আশেপাশের মানুষের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। আর এটি ছিল বিশেষভাবে ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে আসার পর, তখনও আমি ছিলাম একাকী। আর আমি জানি কিছু ভুল আসলে কোনভাবেই ক্ষমা করা যায় না। কিন্তু সময় সব ক্ষত পূরণ করে দেয় আর বিষয়গুলো এখন ভালো হয়ে উঠছে।
স্টিফেন: বিষয়গুলো পরিবর্তিত হচ্ছে?
মিয়া: হ্যাঁ।
স্টিফেন: আমি আপনাকে এই ইন্ডাস্ট্রির গতি-প্রকৃতির আরেকটি দিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাই আর তা হলো ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও টাকা। প্রথমেই, আমরা এ নিয়ে বলেছি, নারী ও পুরুষরা হলো এই ব্যবসার মূল পরিবেশক (তাদের অভিনয়ই এখানে আসল)। কিন্তু আপনি যাদের সাথে কাজ করেছেন সেখানে কি কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অবস্থানে কোন নারীকে দেখেছেন?
মিয়া: হ্যাঁ, অবশ্যই। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ও অন্য যারা কাজ করতেন তাদের খুব কাছের মানুষ ছিল একজন নারী। সে ছিল খুব ভালো, সম্মানীয়, পেশাদার। এখানে অনেক নারী কর্মী আছে। পেছনে অর্থাৎ সেলস এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলোতে তারা কাজ করে। তাই, অফিসগুলোতে নারী দিয়ে পূর্ণ থাকে। আর আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কিভাবে তুমি এই চাকরি খুঁজে পেলে? মানে কিভাবে এমন একটি চাকরিতে তুমি আবেদন করেছো?” আর সে বলেছিল একজন বন্ধুর মাধ্যমে।
স্টিফেন: হুম। এর আর্থিক দিকটিও খুব অন্যরকম। যখন আপনি একটি ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন হিজাব পরে—আমি এর ব্যাপারে একটু পরই কথা বলবো—এটি কিছু সময়ের জন্যে আপনাকে পর্নহাবে—যেটি হলো পর্নোগ্রাফির অ্যাগ্রেগেটর সাইট—সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন অভিনেত্রীতে পরিণত করেছিল। আর আপনি জানেন এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিল আর আপনি পেয়েছিলেন লাখ লাখ ভিউ। কিন্তু পর্ন দুনিয়ায় এমন তারকাখ্যাতি অর্জনের পরও আপনার অভিনয় করা ১২টি ভিডিও থেকে আপনি সব মিলে পেয়েছেন ১২ হাজার মার্কিন ডলার। আর এখনও আপনার কাজ করা কোম্পানি ব্যাংব্রোস ও অ্যাগ্রেগেটর সাইট পর্নহাবের জন্যে আপনি লাখ লাখ ডলার উপার্জন করে দিচ্ছেন। এটি কিভাবে সম্ভব?
মিয়া: আসলে এটি এরকমই। আমিই একমাত্র নই যার সাথে এমন হয়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে আমার সাথে করা চুক্তিটি ছিল বাজে বা আমার ম্যানেজার দক্ষ ছিল না। এমন নয়। আমার কোন ম্যানেজার বা এজেন্ট ছিল না।
স্টিফেন: একদমই না?
মিয়া: না।
স্টিফেন: কোন উপদেষ্টা নয়, কিছুই না?
মিয়া: না।
স্টিফেন: আর আপনার বয়স ছিল ২১। আপনি মাত্র আপনার শৈশব থেকে বের হয়েছিলেন!
মিয়া: হ্যাঁ। মানে মানুষের মস্তিষ্ক ২৫ বছরের আগ পর্যন্ত পুরোপুরি বিকশিত হয় না। তার মানে আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অংশটির আরও গড়ে ওঠার প্রয়োজন ছিল।
স্টিফেন: হ্যাঁ।
মিয়া: আমাকে কী করতে হবে তা বলার মতো বা একে ভুল বলার মতো কেউ ছিল না।
স্টিফেন: পর্ন ব্যবসার বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি একটি ভিডিও তৈরি করলে তা অনলাইনে সারাজীবনের জন্যে থেকে যায়। আর এটি যত জনপ্রিয় হয় এতে তত বেশি হিট হয়। আর আমরা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছি না, আপনার অনেক ভিডিও মধ্যপ্রাচ্যেও খুব জনপ্রিয়।
মিয়া: মধ্যপ্রাচ্যে এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়।
স্টিফেন: এটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক!
মিয়া: কারণ তারাই আবার আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে টুইট করে।
স্টিফেন: একদম! আমরা একটু পরই এতে ফিরে আসবো। কিন্তু অর্থনৈতিক দিকের বিষয়টি হলো, আপনি যতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন না কেন—এই ব্যবসার এক নম্বর তারকা—আপনার কোন অধিকার বা তেমন কিছুই নেই আপনার এই জনপ্রিয়তার ক্ষতি পূরণ করার!
মিয়া: না, একদমই না।
স্টিফেন: আর, মানে আজও কি এভাবেই পর্ন চুক্তিগুলো কাজ করে?
মিয়া: একদম এভাবেই। সবার জন্যে। সবাই, পুরুষ, নারী, যেই এখানে আসুক।
স্টিফেন: এখন আমি নির্দিষ্টভাবে আপনার সেই কুখ্যাত ভিডিওটির ব্যাপারে কথা বলতে চাই যেটির কথা আমি শুরুতেই বলেছিলাম। যে ভিডিওতে তিনজন তরুণের ভেতর আপনি ছিলেন একজন আর আপনি মাথায় পরেছিলেন মুসলিম নারীদের হিজাব। আর পুরো ব্যাপারটি এগিয়ে গিয়েছিল সেক্সের দিকে। আপনি অবশ্যই জানতেন এটি কতটা উসকানিমূলক ছিল!
মিয়া: আমি তাদেরকে প্রকৃতপক্ষেই বলেছিলাম যে তোমরা আমাকে খুন হওয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছো।
স্টিফেন: আর তারা কী বলেছিল?
মিয়া: তারা শুধুই হেসেছিল।
স্টিফেন: আপনি কেন তখন বলেন নি যে আমি এটি করছি না (করতে পারবো না)?
মিয়া: ভীতি। আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি জানতাম যে আমি যদি না বলি, মানে তাহলে তারা আপনাকে এটি করার জন্যে জোর করবে না। সেক্ষেত্রে সেটা হতো ধর্ষণ। কেউ আপনাকে সেক্স করার জন্যে জোর করবে না। কিন্তু আমি আসলে তারপরও ভীত ছিলাম। মানে, আমি… রেস্টুরেন্টে আপনাকে পরিবেশিত খাবার ঠিক না থাকার পরও ওয়েটার যখন জানতে চায়, “সবকিছু ঠিক আছে?”, তখন কি সত্য কথা বলতে আপনি কখনো ভীত, মানে ভীত নয়, বরং সন্ত্রস্ত (নার্ভাস) হয়েছেন? আমিও তখন এমন ভীত ছিলাম। আমি ছিলাম সন্ত্রস্ত (নার্ভাস)।
স্টিফেন: আপনি যা বলছেন তার মানে হলো পর্ন ইন্ডাস্ট্রির যে ক্ষমতা বিন্যাস, মানে মূলত এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ন্ত্রণ করা পুরুষদের সাথে আপনার মতো একজন তরুণ ২১ বছর বয়সী অভিনেত্রীর ভেতর যে ‘সম্মতির ধারণা’, তা মূলত অর্থহীন।
মিয়া: একদম। যখন একটি কক্ষে চারজন শেতাঙ্গ পুরুষ প্রযোজকের উপস্থিতিতে আপনি এমন কিছু বলেন আর তারা উত্তরে শুধুই হাসে, এটা এক ধরনের বিধ্বস্ত অবস্থা। আর এর ফলে আপনার পুনরায় কিছু বলার মতো অবস্থা থাকে না। এটা অনেকটা এখানকার চুক্তি স্বাক্ষরের মতোই। মানে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ও সিইও একটি রুমে আপনার সাথে বসে আছে আর অপেক্ষা করছে কখন আপনার চুক্তিপত্র পড়া শেষ হবে। আর যখন আপনি এটি পড়ছেন, আপনি আসলে এর কিছুই ঠিকমতো বুঝতে পারবেন না কারণ আপনার দিকে অন্যদের এভাবে তাকিয়ে থাকার দরুণ আপনি থাকবেন খুবই সন্ত্রস্ত (নার্ভাস)।
স্টিফেন: হুম। যখন আপনি ঐ বিশেষ ভিডিও চিত্রটি ধারণ করার পর ঐ এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন কি আপনি জানতেন যে এটি আপনার জন্যে একটি বিপর্যয় হতে যাচ্ছে?
মিয়া: আমার মনে হয় পরবর্তী দিনের আগে পর্যন্ত বিষয়টি আমাকে সেভাবে ভাবায় নি। কারণ অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ তখনও পর্যন্ত ছিল খুব বেশি। কিন্তু এই নিঃসরণ শেষ হওয়া মাত্রই আমার পুরো দুনিয়া চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। আমি পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম এই কারণে যে আমি ভেবেছিলাম কেউ কখনো এই ব্যাপারে জানতেও পারবে না। হাজার হাজার নারী আছে যারা সেক্স করার সময় তা ধারণ (রেকর্ড) করে আর এ ধরনের কাজ করে এবং কেউ তাদের নামও জানে না। কেউ জানে না তাদের আসল পরিচয়। কেউ তাদের চিনতেও পারে না। তাই আমি আসলে এটি করতে চাচ্ছিলাম আমার নিজের একটি নোংরা গোপন বিষয় হিসেবে। কিন্তু, পুরো ব্যাপারটি আমার প্রতিকূলে চলে গিয়েছিল।
স্টিফেন: আসলেই তাই হয়েছিল। তবে নির্মাতা ও অ্যাগ্রেগেটরদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি ছিল এক সাফল্য, সরাসরি লাখ লাখ ভিউ!
মিয়া: তারা আমাকে বলতো দারুণ কঠিন এক সাফল্য।
স্টিফেন: আচ্ছা। কিন্তু আসলে বাস্তবতা ছিল এমন যে এখন পুরো বিশ্ব আপনাকে চিনতো সেই পর্ন তারকা হিসেবে যে হিজাব পরেছিল।
মিয়া: হ্যাঁ।
স্টিফেন: আর আপনি হুমকি পাচ্ছিলেন?
মিয়া: হ্যাঁ, পাচ্ছিলাম। আমি বলবো না আইএস থেকে কারণ আমি মনে করি না যে আইএস-এর সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত কারও আসলে টুইটার অ্যাকাউন্ট আছে।
স্টিফেন: টুইটারে এর সমর্থনে কিছু হচ্ছিলো?
মিয়া: অবশ্যই। হ্যা। একজন মানুষের শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে এমন এক ছবিতে তারা ফটোশপ করে আমার ছবি যুক্ত করেছিল আর বলেছিল, আমি সঠিকভাবে জানি না তারা আসলে কী বলেছিল, অনেক কিছুর সাথে তারা লিখেছিল আমিই হলাম তাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
স্টিফেন: আমি ভাবতে পারছি না সেই মুহূর্তে আপনি আসলে কতটা একাকীত্ব অনুভব করেছিলেন। কারণ আপনি এগুলো আপনার পরিবারের সাথেও আলোচনা করতে পারছিলেন না, নিশ্চিতভাবেই আপনি পারছিলেন না।
মিয়া: না। না। এটি ছিল আতঙ্কজনক। কিন্তু আমার খাপ খেয়ে নেয়ার পদ্ধতি হলো হিউমার। তাই আমি উত্তর দিয়েছিলাম, “ঠিক আছে, যতক্ষণ না তোমরা আমার স্তন কেটে নিচ্ছো! এগুলো ব্যয়বহুল!”
স্টিফেন: কারণ আপনার বয়স ছিল ২১। আপনি একটু আগেই আমাকে বলেছিলেন, এটা ছিল আপনার জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। কিন্তু পাঁচ বছর পর এসে আপনি এ কথা বলতে পারছেন। আপনি যা করেছেন তার জন্যে আপনার নিজের উপর কতটুকু দায়িত্ব নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মিয়া: শতভাগ। আমিই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। মেনে নিয়েই যে এই ইন্ডাস্ট্রিতে সমস্যা আছে। আমি যে ফাঁদে পড়েছিলাম তাতে যেন অন্য মেয়েরা না পড়ে সেজন্যে আমাদের কিছু করা দরকার। কিন্তু দিনশেষে এটি আমারই পছন্দ ছিল।
স্টিফেন: ঐ ভিডিওটি যখন ভাইরাল হলো আর আপনার চেহারা পরিচিত হয়ে গেলো অত্যন্ত উসকানিমূলক কিছু একটার সাথে যুক্ত থাকার কারণে, আর আপনি হত্যার হুমকিও পাচ্ছিলেন, এই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে আপনি কি খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
মিয়া: আমি বলবো না এটি খুব দ্রুত ছিল। কারণ আমি আসলে তখনও সন্ত্রস্ত (নার্ভাস) ছিলাম। আমি জানতাম না তারা কিভাবে এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আমি আসলে এক মাস পর তাদের সবাইকে একটি বৈঠকে ডেকেছিলাম এটি শেষ করার জন্যে। তাদের প্রত্যেকের চেয়ারের সামনে আমি একটি করে পদত্যাগপত্র রেখেছিলাম। আর আমি তাদেরকে আমার অনুভূতি সম্পর্কে বলেছিলাম। তারা আমাকে ওখানে থেকে যাওয়ার জন্যে রাজি করাতে চেষ্টা করেছিল। তারা আমাকে বলেছিল এই সব বিষয় স্থায়ী হবে না। তারা বলেছিল আমি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি আর আমি আমার দুরবস্থাকে অতিরঞ্জিত করছি।
স্টিফেন: সেই সময়ে কি আপনাকে আপনার নিরাপত্তার জন্যে কোন ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল? আপনাকে কি আপনার নিজের অ্যাপার্টমেন্ট ত্যাগ করতে হয়েছিল?
মিয়া: আমি ততদিনে আমার অ্যাপার্টমেন্ট ত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু তার কারণ ছিল কেউ একজন গুগল ম্যাপে আমার অ্যাপার্টমেন্টের লোকেশনের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে নিয়েছিল।
স্টিফেন: তাহলে বলতে হয় তারা আপনাকে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের একটি যন্ত্র হিসেবেই দেখেছিল?
মিয়া: নিশ্চিতভাবেই।
স্টিফেন: কিন্তু আপনার তখনও কোন উপদেষ্টা ছিল না। ছিল না আইনজীবী। আপনার কিছুই, কিছুই ছিল না।
মিয়া: আমার বয়স ছিল ২০ (সম্ভবত প্রকৃত বয়স হবে ২১)। ঐ বয়সের কেউ কি তা রাখে!
স্টিফেন: আমি আসলে বুঝার চেষ্টা করছি যে ঐ অবস্থাটি না জানি কতটা কষ্টকর ছিল! এবং এখনও, কারণ আপনি এখানেও খুব ভারসাম্য রক্ষা করে বসে আছেন আর অবশ্যই একটি দীর্ঘ সময় পার হয়েছে, আপনিও আগের স্থান থেকে এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আপনি কি মনে করেন আপনার এই অভিজ্ঞতার কারণে আপনার ভেতর কোন ধরনের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস আছে?
মিয়া: হ্যা। আর আমার মনে হয় তা তখনই ঘটে যখন আমি বাইরে যাই। কারণ মানুষ যেভাবে আমার দিকে তাকায়, আমার মনে হয় মানুষ আমার কাপড় ভেদ করে আমার শরীর দেখতে পায় আর তখন আমি লজ্জায় ডুবে যাই। আমার মনে হয়, এটি আমাকে এমন মনে করায় যে আমি আমার গোপনীয়তার সকল অধিকার হারিয়েছি। আসলেই এটি হয়েছে, কারণ একটি গুগল সার্চই তা করতে পারে।
স্টিফেন: হ্যা। আর সেই চিত্রগুলো আপনি মুছে ফেলতে পারেন না। যদিও এগুলো খুবই গভীরভাবে আপনার ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু এর উপর আপনার কোন অধিকার নেই। পৃথিবীর কাউকেই এগুলো দেখা থেকে বিরত করার কোন অধিকার আপনার নেই।
মিয়া: ঠিক।
স্টিফেন: এটি খুবই কঠিন।
মিয়া: খুবই।
স্টিফেন: আর আমি এও ভাবছি যে, এটি আপনার গল্প হলেও আসলে এটি অন্যান্য পর্ন অভিনেতা ও অভিনেত্রীদেরও গল্প।
মিয়া: সম্প্রতি আমার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর থেকে আমি আসলে সেটিই দেখছি। আর মানুষরা এগিয়ে আসছে। আমার ম্যানেজার আমার কাছে আসা মেইলগুলো যাচাই-বাছাই করে আর যখনই এমন কিছু পায় সেগুলো আলাদা করে আমার কাছে পাঠায়। যখন আমি সেক্স ট্র্যাফিকিং ও জোরপূর্বক পর্নোগ্রাফিতে আসতে বাধ্য হওয়া মেয়েদের কথাগুলো পড়ি, কিংবা পড়ি পুরুষদের দ্বারা তাদের অবস্থার সুবিধা গ্রহণ ও চুক্তির মাধ্যমে—যেসব চুক্তিপত্রের অনেক শব্দের অর্থও তারা জানে না—মেয়েদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার গল্পগুলো, তখন আমার মনে হয়, ঠিক আছে, সম্ভবত আমার কথা বলা শুরু করা, ঐ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা আসলে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ অন্যান্য মানুষরাও একইরকম অনুভব করে। যদি তারা পর্নোগ্রাফির মতো গভীর বিষয়ের সাথে নিজেদেরকে সম্পর্কিত করতে নাও পারে, তারা একে সম্পর্কিত করতে পারে নিজেদের অনিরাপদ বোধ করা ও ইচ্ছা না থাকার পরও অনেক কাজ করার জন্যে তাদের উপর তৈরি করা চাপের মাত্রার সাথে।
স্টিফেন: ঠিক। আপনি যেভাবে বাইরে এসে কথা বলাকে বেছে নিয়েছেন তা পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত থাকা খুব অল্প সংখ্যক মানুষই করেছে। আমার ধারণা তাদের কথা না বলার কারণগুলো সব দিক থেকেই যৌক্তিক। কিন্তু আপনি এখন একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়েছেন। কারণ আমরা এটি বলতে পারি যে, কুখ্যাতি কিংবা ভিন্ন আঙ্গিকের খ্যাতির সুবিধাকে আপনি এখন ভিন্ন একটি কাজে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি পেছনে তাকিয়ে এবং এখন এক ধরনের ক্যম্পেইনার বা অ্যাক্টিভিস্ট হতে চেয়ে থাকেন, তাহলে সেটি কি সমাজ যেভাবে পর্নোগ্রাফিকে দেখে থাকে, যেভাবে পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করে ও এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষগুলোকে যেভাবে বিচার করে, সেই দৃষ্টভঙ্গিকে পরিবর্তনে আপনার একটি মিশন?
মিয়া: মানে, সবাই পর্ন দেখে। আপনি কি আপনার পুরো জীবনে কখনো পর্ন দেখেছেন?
স্টিফেন: হ্যাঁ, আমার পুরো জীবনে আমি পর্ন দেখেছি।
মিয়া: সেটাই। আমি মনে করি যেভাবে নারীদের পর্নোগ্রাফিতে নিয়ে আসা হয় সেটি পরিবর্তন হওয়া জরুরি। তাদেরকে যেভাবে প্রস্তাব দেয়া হয় তার পরিবর্তন দরকার। এটি এমন হওয়া উচিত যেন কোন ধরনের চাপে পড়ে এতে প্রবেশ বা এটি শুরু করার পরিবর্তে প্রয়োজন হলে নারীরা এটি খুঁজে নিতে পারে। আপনি তাদেরকে বাধ্য করতে পারেন না আপনার সামনেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে, একদম যেখানে আছে সেখানেই। এটি একজন আইনজীবীকে দেখাতে দিতে হবে। যদি এটি খুব বেশি চাওয়া হয়ে যায় তাহলে অন্তত স্বাক্ষরের আগে তাদেরকে কয়েকদিন সময় দিতে হবে যেন তারা নিজের বাসায় নিজের মতো এটি নিয়ে ভাবতে পারে ও কয়েকবার পড়তে পারে।
স্টিফেন: আমরা আগে অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি আর তাদের বেশিরভাগই ছিলেন মধ্যবয়সী বা তার চেয়ে বেশি বয়স্ক। এটি একটি দারুণ বিষয় স্টুডিওতে ২৬ বছর বয়সী একজনকে পাওয়া। চিন্তকদের একটি দল বলতে চান যে, সামগ্রিকভাবে আমাদের সংস্কৃতি পর্নাসক্ত—শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য নয় বরং অনেকগুলো দেশের ব্যাপারেই এটি বলা হয়। আরও বলা হয় যে তরুণরা খুবই অল্প বয়স থেকে পর্নোগ্রাফির প্রতি এত বেশি অরক্ষিত যে এর ফলে নারী ও পুরুষের পরস্পরকে সম্পর্কিত করার প্রশ্নে—যেভাবে তারা পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে ভাবে—খুবই ক্ষয়িষ্ণু, ক্ষতিকর বস্তুগত পরিবর্তন ঘটছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
মিয়া: অবশ্যই এটি সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। আর আমেরিকায় পর্নাসক্তি খুবই ব্যাপৃত একটি বিষয়, আমি নিশ্চিত এখানেও (যুক্তরাজ্যে)। পুরুষরা এসব ভিডিওতে যা দেখে তারা তাদের জীবনে নারীদের থেকে সেরকমটাই আশা করে। কিন্তু সেগুলো আসলে বাস্তব নয়। কেউ আসলে এরকম নির্ভুল হতে পারে না। কেউই তার ভালোবাসার মানুষের সাথে একটি বুধবারের রাতে ওইসব কাজে লিপ্ত হতে যায় না।
স্টিফেন: হুম। আমরা অনেক কথা বললাম আর আমি জানি এটি ছিল আপনার জন্যে কঠিন। অবশ্যই এটি মেনে নেয়া আপনার জন্যে কঠিন যে এখনও অনলাইনে আপনার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও আছে যা আপনার সংক্ষিপ্ত পর্ন ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু এই অবস্থা থেকে কি বেরিয়ে আসা আপনার পক্ষে সম্ভব প্রমাণিত হয়েছে? ভিন্ন কোন ক্যারিয়ারের দিকে এগিয়ে যাওয়া? এবং আপনার পর্নে যুক্ত থাকা বিষয়ক যে ভাবনা তার থেকে দূরে অবস্থান করা কোন মানুষের সাথে সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়া?
মিয়া: হ্যাঁ। আমি খুবই সৌভাগ্যবান ছিলাম কারণ আমার একজন মানুষের সাথে দেখা হয়েছিল যে কখনো আমার ব্যাপারে কিছু শুনে নি। এটি ছিল দারুণ! আমি একটা পর্যায়ে তাকে এ ব্যাপারে বলতে যাচ্ছিলাম। তখন সে আমাকে বলেছিল, “আমাদের ভেতর কথাবার্তা শুরু হওয়ার পর আমি গুগলে তোমাকে সার্চ করেছিলাম কারণ তোমার ৫০ লাখ ফলোয়ার আছে আর আমি যদি তোমাকে গুগল না করি তাহলে সেটিই বরং পাগলামো”। কিন্তু এরপর সেই সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার জন্যে খুব কঠিন ছিল। আর আমি মনে করি না এটি আমার জন্যে কঠিন ছিল কারণ একজন মানুষ খুঁজে বের করা ছিল কঠিন, বরং আসলে কঠিন ছিল এর ভেতর ছিল না এমন কাউকে খুঁজে বের করা। আমি কি বুঝাতে পেরেছি?
স্টিফেন: হ্যাঁ। বুঝা যাচ্ছে। আমার মনে হয় শেষ কথা হলো, আপনি যখন পর্ন তারকা ছিলেন তখন কখনো আসলে বিখ্যাত হতে চান নি। আপনি আসলে চেয়েছিলেন বিষয়টা গোপন থাকুক।
মিয়া: হ্যাঁ।
স্টিফেন: কিন্তু এখন আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি বিখ্যাত হওয়ার সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ।
মিয়া: হ্যাঁ। আর আমি নারী অভিনেত্রীদের থেকে প্রচুর ঘৃণার শিকার হই যারা বলে যে আমি অকৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি আসলে কখনোই এটি চাই নি।
স্টিফেন: আর আপনি যদি ২১ বছর বয়সী মিয়া খলিফার সাথে কথা বলতে পারতেন যে কিনা ফ্লোরিডার রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো আর একজন পুরুষ তাকে থামিয়ে বলা শুরু করেছে, “তুমি সুন্দর, খুব সুন্দর, আমি তোমার সাথে কাজ করতে পারি”। আপনি আজকে তাকে কী করতে বলতেন?
মিয়া: তোমার পার্সে পিপার স্প্রে থাকার পেছনে কারণ আছে। সেটি ব্যবহার করো। দৌড়াও।
স্টিফেন: মিয়া খলিফা, আপনাকে হার্ডটকে পাওয়াটা ছিল প্রীতিময়। অসংখ্য ধন্যবাদ।
মিয়া: ধন্যবাদ আমাকে ডাকার জন্যে।
আরও পড়ুন