পর্নোগ্রাফি : পাঠ ও ভাষ্য

সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

পর্নোগ্রাফি — নতুন প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটি সমস্যা? নাকি এন্টারটেইনমেন্ট? আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতি কীভাবে দেখছে পর্নোগ্রাফিকে? কবে থেকে শুরু হলো মানুষের এই যৌন উদ্দীপনাময় সৃষ্টি, উপস্থাপন ও প্রদর্শনী? এই প্রশ্নগুলো স্থানিক নয়, বৈশ্বিক। কারণ প্রযুক্তি অন্য সব কিছু মতো পর্নোগ্রাফিরও বিশ্বায়ন ঘটিয়েছে। যদিও বাংলা অঞ্চলে অ্যাকাডেমিক ও নন-অ্যাকাডেমিক পরিসরে পর্নোগ্রাফি নিয়ে ‘সিরিয়াস’ আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। কিন্তু আধুনিক আর্কাইভিং প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন বন্দি হচ্ছে মানুষের যৌনদৃশ্য।

 

পর্ন নির্মাণ ও প্রদর্শন এখন একটি বিরাট ইন্ডাস্ট্রি। বিশ্ব জুড়ে এর অগণিত ভোক্তা। ধর্মীয়, আইনি, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নকে বিচার করা হয়, দাঁড় করানো হয় কাঠগড়ায়। কিন্তু নেতিবাচকতা ও ইতিবাচকতার যুগ্মবৈপরীত্যমূলক দৃষ্টিতে পর্নকে বিবেচনা করা খুব সমস্যাজনক। কারণ পর্নের সংজ্ঞায়ন ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে নির্মাতা, ভোক্তা ও তাত্ত্বিকদের দৃষ্টিভঙ্গি বহুমাত্রিক।

 

সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে যেমন মতভেদ আছে, তেমনি মতভেদ আছে মনস্তাত্ত্বিকদের মধ্যে। কারো কারো মতে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার মূলে আছে পর্নোগ্রাফির সহজপ্রাপ্য প্রযুক্তিকেন্দ্রিক পরিপ্রেক্ষিত। কেউ কেউ মনে করেন, পর্ন কেবলই অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্ট। কারো কারো মতে পর্নোগ্রাফি হলো তত্ত্ব, ধর্ষণ হলো তার প্রয়োগ। আবার কারো মতে একাকিত্ব ও যৌন উদ্দীপনার সহায়ক উপকরণ হলো যৌনদৃশ্যসম্বলিত ভিডিওগ্রাফি। কিন্তু এর ভয়াবহতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকের ভাষ্যে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে নগ্নতা, যৌনতা ও পর্ন।

 

ইউরো-আমেরিকান বিদ্যাজগতে পর্নোগ্রাফি সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের বিষয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন, নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, গণমাধ্যম অধ্যয়ন একক বা সম্মিলিতভাবে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকে পাঠ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের জন-সংস্কৃতি, জনস্বাস্থ্য, যৌনতা ও যৌন-সহিংসতার প্রবণতা সম্পর্কে বুঝতে চাইলে পর্নোগ্রাফির অ্যাকাডেমিক পাঠ জরুরি বলে মনে করি। ‘বিকৃত যৌনাচার’ ও যৌন-সহিংসতার সমকালীন পটভূমিতে পর্নোগ্রাফি এবং তার অডিয়েন্স বা ভোক্তার মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের প্রাসঙ্গিকতা দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে।

 

আমরা পর্নোগ্রাফি বিষয়ক বেশ কিছু লেখা প্রকাশ করতে চাই। আমরা চাই, বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হোক, উন্মুক্ত হোক বাসনার জগত। যৌনতা সম্পর্কিত ট্যাবুগুলো ভাঙুক। যৌনতার সীমানা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হোক। আমরা কিছু সাক্ষাৎকার ও তাত্ত্বিক আলোচনা প্রকাশ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এবার থাকছে সানি লিওনি ও মিয়া খলিফার সাক্ষাৎকার। আশা করি, আমরা বুঝতে পারব, পর্নোগ্রাফি কতোটা বাস্তব, আর কতোটা ফিকশন। ফিকশন ও ফ্যান্টাসিকে গুলিয়ে ফেলে বাস্তবকে দূষিত করে তুলছি কি?

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here