অন্যমনস্ক দিনগুলি ।। কিস্তি : ৬

এই উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে এই মুহূর্তের গল্প; যে গল্পের ভেতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছি আমরা এবং সমগ্র বাংলাদেশ। চমৎকার ভঙ্গিতে গল্প বলে গেছেন সালাহ উদ্দিন শুভ্র। এই গল্প নিশ্চিতভাবে টেনে নেবে আপনাকে। কারণ আপনিও সম্ভবত জড়িয়ে আছেন এই উপন্যাসের সঙ্গে।

 

জলির সঙ্গে আমার দেখা হলো এক নভেম্বর। একই দিনে প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস দেখা করতে গেলেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তারা দুজনের বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে। আমাদের মধ্যেও উদ্বেগ ছিল, আমার আর জলির মধ্যে। জলির প্রেম ভেঙে গেলে আমার জন্য একটা সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। আর জলিরও তখন দুর্বল একটা অবস্থায় থাকার কথা ছিল। যদিও বাস্তবে আমি দেখলাম যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জলি যেন আমার কাছ থেকে আরো দূরে সরে গেল। খালেদা জিয়ার জন্যও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন থাকবে তিনি কী বুঝতে পেরেছিলেন। পারতেও পারেন। তাদের কাছে অনেক খবর আগে থেকেই থাকে। পলিটিক্যাল কারণে সেগুলো মোকাবিলা করতে পারেন না হয়ত। সবকিছু ছেড়েছুড়ে নির্বাসনে যাওয়ারও সুযোগ থাকে না তাদের।

 

আমাদের ব্যাপারটা অত বড় ছিল না। বিশাল ঢাকা শহরের বড় বড় বিল্ডংয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের প্রেম হওয়া না-হওয়ার টানাপড়েন সামান্য ঘটনাই। অন্তত রাজনৈতিক কুজ্ঝটিকার সেই সময়।

 

সেদিন জলি আরো বেশি করে বুঝিয়ে দিল যে, আমি তার বন্ধুই, সে একা হয়ে গেলে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ। এর বেশি কিছু নয়। প্রেম আমাদের মধ্যে হবে না। জলি যেন আরো খোলতাই হয়ে উঠেছে। হাসছে যেন নতুন করে, ঝলমলে রোদ উঠছে যেন তার চারপাশে। শরীরের সমস্ত আড় ভেঙে গেছে। শেষ হয়ে যাওয়া সম্পর্ক নিয় সে কিছু বলল না। আমরা এ কয়দিনে কী করেছি, হাসনাতের কী অবস্থা এসব জানতে জানতে রিকশায় আমরা রায়েরবাজার থেকে ধানমন্ডি সাতাশে আসলাম। ঢাকা কেমন চুপচাপ হয়ে পড়েছে। কী হচ্ছে, কী হবে এমন একটা চাপা উত্তেজনা মানুষের মনে।

 

মানুষের মধ্যে যে ভাগ নাই তা না। তবে বিভিন্ন ভাগের মানুষদের একটা কমননেস আছে, সেটা হলো কী হতে যাচ্ছে তারা কেউ জানে না। আসলে হয়ত, কী হবে সেটা বড় রাজনৈতিক দল বা নীতি-নির্ধারকরাও জানে না। তারাও পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছে না। আঠাশ অক্টোবরের মারামারির পর সব কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে। নতুন কিছু যে সহসা ঘটে গেল না সেটাই বরং বিস্ময়ের। এ ঘটনার যে ক্যাজুয়ালটিজ, সে তুলনায় কিছু ঘটল না। একটা বড় বিপ্লবেও এত সংঘাতময় পরিস্থিতি থাকে না। এসব নিয়েই আমরা আলাপ করছিলাম- আমি আর হাসনাত গত কয়েকদিন। হাসনাত তার নিকটজন ওই নারীকে হারিয়ে কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। সে ইনসিকিউরিটিতেও ভুগছিল। ফলে হলে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অবশ্য ওর হলে আসার আরেকটা কারণ আছে। আমি সেটা গোপন করলাম জলির কাছে।

সে দিন জলির উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমি তাল মেলাতে পারছিলাম না। সে একটা গেঞ্জি, ট্রাউজার আর ওড়না গায়ে জড়িয়েছিল। রিকশার ঝাঁকুনিতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আমার হাত চলে যাচ্ছিল। সে আমাকে হেসে বলল, কীরে মজা নেস? আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।

আমার এক এলাকার মামা আছেন। তার একটা ছোট ফ্ল্যাট ছিল গ্রিন রোডে। তিনি হুট করে বিদেশ চলে গেলেন, যাওয়ার আগে আমাকে তার ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে গেলেন। বললেন সেখানে থাকতে। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম সেখানে উঠে যাব। যে কারণে হাসনাতকে আমার রুমটায় থাকতে বলেছিলাম। মামা তার ফ্ল্যাটে আমাকে থাকতে বলেছেন, সেটা যেন হাতছাড়া না হয়। আর আমিও একই কারণে হাসনাতকে উঠতে বলি আমার সিটে। বিষয়টা অন্য সময় হলে হয়তো জলি জানতে পারত। কারণ সকাল-বিকাল আমাদের আড্ডা হতো। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেটাতে ভাটা পড়ল। জলি এমন মেয়ে না যে ব্রেকআপ হয়ে যাওয়ার পর অনেক দিন ক্যাম্পাসে আসবে না। অন্তত আমাদের কাছে সে আসতই। পল্টনের মারামারির কারণে সবাই বেশ ভয় পেয়েছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ভয় বেশি। তাই সে আর ক্যম্পাসে আসে নাই আমি তাকে বলি নাই।

 

সে দিন জলির উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমি তাল মেলাতে পারছিলাম না। সে একটা গেঞ্জি, ট্রাউজার আর ওড়না গায়ে জড়িয়েছিল। রিকশার ঝাঁকুনিতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আমার হাত চলে যাচ্ছিল। সে আমাকে হেসে বলল, কীরে মজা নেস? আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আসলে মজা নেয়ার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিল না। কিন্তু আমি তো জলিকে চাই। ফলে ওর শরীরের ঘনিষ্ঠ যে আমি হতে চাইছিলাম না তাও তো না। এই দোটানার মধ্যেই আমরা চলছিলাম আর কথা বলছিলাম। জলি এত কথার মধ্যেও তার সদ্য প্রেম ছুটে হওয়া, এ কয়দিন সে কীভাবে কাটাল সেসব কিছু বলছিল না। আমি ভাবছিলাম তার দগদগে বিচ্ছেদের ঘায়ে আগ বাড়িয়ে খোঁচা দেব না। কিন্তু জলিকে দেখে মোটেও আমার ক্লান্ত, শান্ত, বিষণ্ণ মনে হলো না। বরং মনে হচ্ছিল সে যেন মুক্তি পেয়েছে, স্বাধীনতা পেয়েছে, ভার নেমে গেছে তার মন থেকে। তার শরীরটা এ কয়দিনে আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে। তার ভারি বুকের দিকে আমার দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল।

 

নিজেকে সংযত রাখার যথেষ্ট চেষ্টার মধ্যেই জলি আমাকে খোঁচাটা দিল। তখনই আমার মনে হলো মেয়েদের তৃতীয় নয়ন থাকে। আর সেই তৃতীয় নয়ন কোনো নির্দিষ্ট স্থির অংশে বসে থাকে না। সেগুলো ঘুর ঘুর করে। কে কখন তাদের দিকে কীভাবে তাকাল তারা বুঝতে পারে। ওর ওই দৃষ্টিসীমা ডিঙিয়ে আমার পক্ষে সদ্য পূর্ণ ঘুম দিয়ে ওঠা, গোসল শেষে বের হওয়া পূর্ণ যৌবনা নারীর শরীরের স্পর্শ পাওয়ার লোভ সংবরণ করা কঠিন ছিল। আমার নিজেকে প্রশ্রয় দেওয়ার পক্ষে যুক্তি হলো, আশ্বাসও তো ছিল। জলিকে আমি মুখে না বলি সে তো জানে, হাসনাত, কমল সবাই তাকে জানিয়েছে আকারে-ইঙ্গিতে। জলি কখনো না করে নাই তাদের আমার বিষয়টা। আমি প্রেম করতে চাই তার সঙ্গে এটা সকাল বেলা রোদ ওঠার মতো ঘোষণা দেওয়া ব্যাপার! জলির শুষ্ক আচরণে সে দিন আর কথা আগাল না। সাতাশ নম্বর এসে জলি একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেল তার বাসায়। আমি আমার হলে। এরপর দীর্ঘ সময় জলির সঙ্গে আমার দেখা হয়নি, কথাও না।

 

জলির সঙ্গে আমার আবার দেখা হওয়ার আগে দেশে অনেক কিছু হয়ে গেল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় চলে এল। তার আগ পর্যন্ত অনেক নাটক, দৃশ্যপটে অনেক উত্তেজনা, উদ্বেগ- সবকিছু হলে বসেই উপভোগ করছিলাম আমি আর হাসনাত, কমল, নকীব।

 

সে দিন জলিকে নামিয়ে দিয়ে হলে ফিরে দেখি হাসনাত ঘুমাচ্ছে। আমরা তখন অনেক রাত জাগি আর দিনে ঘুমাই। ঘুম থেকে উঠে খেয়ে-দেয়ে ক্যাম্পাসেই হাঁটাহাঁটি করি আর দেশের অবস্থা নিয়ে আলাপ করি। আটাশ অক্টোবরের পর হাসনাতের উদ্বেগটা অনেক বেড়ে গিয়েছিল দেখলাম। সে কিছুতে সহিংসতা মেনে নিতে পারে না আমি দেখেছিল। কী জন্য কে জানে। কোনো সাইকো অ্যানালিসিস আমি করতে যাই নাই। তার জীবনে অনেক টানাপড়েন। নিজে নিজে সে তার পরিবারকে দাঁড় করিয়েছে। আমার প্রতি সে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম এসব কৃতজ্ঞতা বন্ধুত্বকে, সম্পর্ককে ম্লান। কেউ একদিন তোর জীবন বাঁচাল, কেউ তোরে চাকরি দিল — পরবর্তী সময়ে তুই নিজেকে তার প্রতি সাবমিট করে দিলি, তার সব অপকর্মের প্রশ্রয়দাতা হইলি, নট লাইক দ্যাট। লাইফ ইজ ভাস্ট। এখানে যখন যা হবে তখন তার বিচার।

 

আমারও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার কারণ কম না। মোস্টলি তার কথা বলার জন্য। সে অনর্গল বলতে পারত। কোনো একটা বিষয়ে একবার এটা বললে পরের বার উল্টাটাও বলত। আমার পক্ষে তার কথা শুনে শুনে পরিস্থিতি বুঝার সুযোগ ঘটত। ওর কথা আমি শুনতাম, ভাবতাম, কিন্তু বিশ্বাস করতাম না। ও ছিল হাইপার লেবেলের বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সে বলত। তার ভাষ্য, এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা মূলত এনজিও ওয়ার্কার। সেই জটিল, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে বুদ্ধিজীবীরা সব এনজিওদের পোঁ ধরে বসেছিল। তাদের একটা মূল সমস্যা ছিল নিউট্রালিটি। আসলে নিউট্রালিটি বলে কিছু নাই। এটা একটা ভেগ কথা। অ্যাসথেটিক্স। ধর তুই কোনো আর্ট এক্সিবিশনে গেলি, সঙ্গে তন্বী ললনা। তুই আর্টও না, আর্টিস্টও না, ক্রিটিকও পারিস না, তব কইলি — সুন্দর। এই যে তোর বলাটা হইল পলিটিক্যাল নিউট্রালিটি, কোনো কামের না। একটা ইডিওলজিক্যাল বয়ান নিয়ে হাজির হওয়া। যেন তাদের কোনো পক্ষ নাই, কোনো দল নাই। সবসময় একটা ভালো ভালো, মিষ্টি মিষ্টি আবহের মধ্যে নিজেদের রাখতে চায়, ভাবে দেশটাও তাদের মতো হবে।

 

আর ওয়ান-ইলেভেনর সেই সময়ে হাসনাত বলেছিল, ‘দেখবি এনজিওগুলা আরো দুর্বল হবে।’ কারণ তারা নিজেদের তাস খেলে ফেলেছে, তারা নিজেদের পক্ষের একটা সরকার কায়েমের জন্য উঠে-পড়ে লেগে সেটাকে বাস্তবায়ন করেছে। যদিও মূল ক্ষমতা তাদের কাছে কখনো ছিল না। থাকার কথাও না। তারা সবসময় মাখন খাওয়া লোক। তারা ভেবেছিল নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি লোকগুলা বুঝতে পারে না। আসলে এখানকার মানুষ বা রাজনীতির প্রতি তাদের এক ধরনের পারসেপশন আছে, যেটা নেগেটিভ। তারা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ধারণা নিয়ে আসে। আরে ওদের মতো করে তো আমাদের সংসার চলবে না। আমেরিকায় বহু বর্ণের মানুষ, তাদের এনসেস্টররা বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে বাস করছে। তাদের শাসন করা, সেখানে তাদের থাকাটা আমাদের মতো হবে না। তাদের শাসন, আর আমাদের শাসনের যে পার্থক্য সেটা এনজিওয়ালারা বুঝতে পারে না। তাদের ল্যান্ডের ধারণা আমাদের ল্যান্ডের ধারণা এক না। এখানে আমরা জমির মালিকানা নিয়ে অনেক বিবাদে লিপ্ত, আমাদের জনঘনত্ব বেশি, মানে হিউম্যান যে স্পেস সেটা বিপুল। আমারা একে অন্যের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় লিপ্ত, অন্যের অনেক কিছু আমরা ঠিক করে দিতে চাই। এগুলা অনেক কিছু থেকে আমাদের বের হইতে হবে এগুলার মধ্যে থেকেই। কিন্তু ওপর থেকে কোনো শাসন চাপায়া দিয়ে সেগুলা হবে না। এনজিওয়ালারা মানুষের মাথার মগজে বাস করতে চায়।

 

মাঝে মাঝে অবশ্য আমার মনে হয় হাসনাত ঠিকই বলতেছে। ওর একটা দেখার দৃষ্টি আছে। সে অনেক গভীর থেকে, অনেক পেছন থেকে বিষয়গুলা ভাবতে পারে। আমি অতটা পারি না। তবে তার সঙ্গে থেকে থেকে আমারও ভাবনায় আসে।

 

এভাবেই দিন কাটছিল। আমার মধ্যে যতটা বিষাদ ভর করার কথা ছিল ততটা করে নাই কিছুটা হাসনাতের জন্য, বাকিটা স্থান পরিবর্তনজনিত ব্যস্ততার কারণে। আমি মামার গ্রিন রোডের ওই বাসায় উঠতে শুরু করলাম ধীরে ধীরে। মামার বাসাটা বেশ আধুনিক, গোছানো। বড় বাসা কিন্তু ফাঁকা। মামা আবার খুব সেয়ানা। তিনি আমার সঙ্গে মেইলে যোগযোগ রাখেন, ফোনে না। সে জন্য জীবনে প্রথম আমারে ইয়াহুতে মেইল খুলতে হলো। ফোনে মাঝে মাঝে মেসেজ পাঠিয়ে মেল চেক করতে বলেন। আমার একটা অ্যাকাউন্টও খুলতে হলো তখন ব্যাংকে। সেখানে তিনি খুব কম কিছু টাকা পাঠাতেন। আমি আবার বাসা থেকেও বাবার কাছ থেকে টাকা নিতাম। ফলে ছাত্র হিসাবেও বেশ পয়সাওয়ালা ছিলাম তখন। যে কারণে মাঝে মাঝে মামার বাসায় গিয়ে মদ খাওয়ার আয়োজন হতো। সেগুলার কিছু কিছুতে জলি হাজির থাকত। সে আরো পরের ঘটনা। ততদিনে মামার বাসায় আমি থিতু হয়ে গেছি। ওই বাসায় ওঠার প্রথম দিককার যে একাকীত্ব, কী করব কী করব ভাব সেটা কেটে গেছে। আমি দিব্যি এরপর মামার বাসায় একা সময় কাটিয়ে দিতে পারতাম। হাসনাতও আমারা অনুরোধে বলতে গেলে আসন গেড়েছিল ওই বাসায়।

 

এই মামা আসলে আমার মায়ের মামাতো ভাই। পাশাপাশি গ্রাম। তার সঙ্গে আমার হঠাৎ পরিচয় ঢাকার অ্যারামে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হব মনে হয়। মদ খেতে গেছি জীবনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার। মামা ধানমন্ডিতে থাকতেন তখন। তিনি দীর্ঘদিন ওই এলাকায় ডিশের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অ্যারামে বসে একা একা মদ খাচ্ছিলেন। আমি তখন বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরলাম যে পাশের লোকটা থেকে আমি কিছু আদায় করে নেব। তো আমি সোজা গিয়ে সেই লোকের কাছে নিজের কথা বললাম। তিনি আমার জন্য একটা বিয়ার অর্ডার করলেন। তখন পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি তো জানতাম না তিনি আমার মামা, অথবা আমি কিছুটা বোকা কিছিমের। ফলে আসল পরিচয় বলে দিলাম। তিনি শুনে আরো জানতে চাইলেন মুরাদনগর কোন গ্রাম। আমি বললাম যাত্রাপুর। যাত্রাপুর কাদের বাড়ি? যাত্রাপুর লোকমান সাহেবের বাড়ি।

 

আমার দাদা একসময় চেয়ারম্যান ছিলেন তার নামে বাড়ির পরিচয় হয়ে গেছে। তিনি জানতে চাইলেন, লোকমান সাহেবের বাড়ির কার ছেলে আমি। ততক্ষণে বিয়ার আমার গলায় ঠেকে গেছে। না পারছি ওগলাতে, না পারছি গিলতে। আমার অবস্থঅ দেখে তিনি পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, খাও সমস্যা নাই, এসব কোনো ব্যাপার না, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো, এসব একটু-আধটু খাবা, দুই-চারটা মারামারি করব — নাইলে আর স্টুডেন্ট লাইফ কীসের। ফলে তাকে আমার বাবার নামও বলতে হলো, শরিফ আহমেদ। বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা না হলেও গণ্যমান্য। তিনি তার বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে চেয়ারম্যান পদে না দাঁড়ায়ে প্রতিপক্ষকে ছেড়ে দিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। সেই সুবাদে তার নামও রটেছিল। তার স্ত্রী লাকি বেগম। আমি তার ছেলে। সব শুনে মামা তার পরিচয় দিলেন। আমি লজ্জায় শেষ। তিনি বার বার আশ্বস্ত করলেও আমার দ্বিধা কাটছিল না। ফলে দ্রুত বার ছেড়ে বেরিয়ে আসি।

 

মামা আমাকে তার একটা কার্ড দিয়েছিলেন যোগযোগ করার জন্য। তার বিষয়ে আমি তখনো কিছু জানি না। এর কয়েক বছর পর, যখন আমি আরো লায়েক হয়ে উঠেছি, তখন মা একদিন ফোন দিয়ে বললেন তার কথা। যে সেই নাসিম মামা আমার সঙ্গে কথা বলবেন, তার একটা ফ্ল্যাট আছে গ্রিন রোডে, সেখানে আমাকে থাকতে বলবেন। আমি তখন মায়ের কাছ থেকে তার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিলাম। নাসিম মামা ব্যবসায়ী মানুষ। তার রাজনৈতিক যোগাযোগ সব দলের সঙ্গেই। বিচিত্র ব্যবসা করেন তিনি। মূল ব্যবসা সর্বশেষ ছিল ইলেকট্রনিক পণ্য। এক সময় তিনি ভিওআইপি ব্যবসা দিয়ে শুরু করেন। দেশ ছাড়ার সময়ও তিনি সেই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পরদিনই তিনি দেশ ছাড়েন। এর প্রায় পনের দিন পর আমাকে তার বাসায় থাকার প্রস্তাব দেন। চাবিটা তিনি রেখে গিয়েছিলন তার বিশ্বস্ত এক লোকের কাছে। সেই লোক হলে এসে আমাকে চাবি দিয়েি গিয়েছিল। অজাতশ্মশ্রূ সেই লোকটার মাথায় টাক। চোখে চশমা, মুখে কোনো কথা নাই। আমাকে গেস্ট রুমে দেখামাত্র দাঁড়াল, আমি যে কে তাও জিজ্ঞাস করল না, কোনো কথা বলল না — চাবিটা দিয়ে আবার চলে গেল।

 

তবে মামার বাসায় থাকতে শুরু করি আরো পরে। শুরুতে কোনো কোনো দিন রাত পর্যন্ত থেকে আবার হলে ফিরে গেছি। সে সময় অলমোস্ট অল দ্য টাইম হাসনাত আমার সঙ্গী। জলির অনুপস্থিতিজনিত শূণ্যতা আমাকে পেয়ে বসল না। এর জন্য দেশের রাজনৈতিক অবস্থার একটা দায় তো আছেই। কারণ কেউ কারো কিছু মানতে চাইছে না। কখনো মনে হয় বিএনপি ব্যাকফুটে আবার মনে হয় আওয়ামী লীগ ব্যাকফুটে। নভেম্বরেও রাস্তায় কিছু কিছু সংঘাত হলো। বিদেশি কূটনীতিকদের আর এনজিও ও সুশীল সমাজের তৎপরতা বাড়তে থাকল। ফলে আসলে তিনটা পক্ষ বেশ নাড়াচাড়া করছিল। জানুয়ারির বিশ তারিখ নির্বাচনের তারিখ ঠিক হওয়ার পর মনে হচ্ছিল পরিস্থিতি আবার শান্ত হবে। আওয়ামী লীগ প্রথমে নির্বাচনে যাবে না বলে ঠিক করলেও বেশ কিছু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা আবার নির্বাচনে গেল। বিশেষ করে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে তারা যেসব চুক্তি করেছিল তাতে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে যাবেই সে বিষয়ে আর দ্বিধা থাকল না অন্তত হাসনাতের। তার আগে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বেশ কড়া বক্তব্য রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগকে দেশের স্বার্থ রক্ষা ও ধর্ম নিয়ে বিষোদ্গার করেন। এর পর দেখা গেল আওয়ামী লীগ খেলাফত মজলিশের সঙ্গে চুক্তি করল। বিশেষ করে শালিসে ফতোয়া দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আওয়ামী শুভানুধ্যায়ী অনেকে।

 

অপরদিকে হাসনাতের কথায়, নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস সবচেয়ে ফিশি আচরণ করেছেন। নভেম্বরের শুরুতে তিনি প্রেসিডেন্ট থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বনে যাওয়া ইয়াজুদ্দিনকে সাহস জোগালেন। নভেম্বরের শেষে তিনি বললেন, নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন হয়ে গেলে নাকি দেশে শান্তি ফিরে আসবে। এক-এগারো আমলে তিনি পার্টি গঠনের উদ্যোগ নিলেও হাসনাত অনেক কথা বলেছিল। তার মতে ইউনূস সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি মনের মধ্যে একটা রেখে বাইরে অন্য আচরণ করবেন এটা স্বাভাবিক। অথবা ব্যবসায়ের প্রয়োজনে তিনি কোনো একটা পক্ষে থাকবেন, সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু তিনি একেবারে দল গঠনের জন্য উঠে-পড়ে লাগবেন সেটা ঠিক ছিল না। দল গড়ার পুঁজি তার ছিল না। নোবেল দিয়ে রাজনীতি করার মতো দল গঠন সম্ভব না। নোবেলজয়ীরা অনেক তত্ত¡ কপচাতে পারেন, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক সংগঠন করার যোগ্যতা থাকে না। রাজনীতি করে কেউ নোবেল পেতে পারেন সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু হাসনাতের প্রশ্ন হলো, তিনি বাংলাদেশের নানা অঞ্চল ঘুরে এসেছেন, এদেশের মানুষের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন, তার মতো সব বুঝে ফেলা একটা লোক, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের মতো একটা দলের একেবারে অন্দরে চলে গেছেন, তিনি কী করে কি ভুলটা করে বসলেন? অনেক সময় মানুষ ক্ষমতা পেয়ে দিশা হারিয়ে ফেলে। হাসনাতের অনুমান, ওয়ান-ইলেভেন প্রজেক্টের সঙ্গে ইউনূস সাহেবকে যত জড়ানো হোক, তার অবস্থান যে এর পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে ছিল এমনটা মনে হয় না। হুট করে উপমহাদেশের মতো একটা সমাজে রাজনৈতক দল করে ফেলার বুদ্ধি তাকে পশ্চিমা কেউ দিতে পারে। কারণ সেসব দেশের ধারণা এখানে দুই বেমগের ঝগড়ায় মানুষ অতিষ্ঠ এবং তারা কাউকে পেলেই ওই দুজনকে ভুলে যাবে। তাদের ভুল পরিকল্পনায় ইউনূস সাহেব কেন নিজেকে জড়ালেন কে জানে?

 

হাসনাত পরে বলেছিল, ওয়ান-ইলেভেন সম্ভবত খুব মেধাবী পরিকল্পনা ছিল না। হুট করে হয়ে গেছে এবং তা আবার চলেও গেছে। তবে তাদের ওই সময়টা বাংলাদেশের পরিস্থিতিটাকে অনেক দিক দিয়ে বদলে দিয়েছে। অনেক তাত্তি¡ক যেমন কালচারাল আন্দোলনের কথা বলেন, এখানে এই সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রভাব অনেকটা সেই কালচারাল মুভমেন্টের মতো প্রভাব তৈরি করে দিয়ে গেছে।

 

হাসনাতের এসব উত্তজনাকর কিন্তু শুষ্ক আলাপের পাশে আমার শ্রোতা হয়ে বসে থাকাটা খুব আমোদজনক ছিল বলব না। সে আমাকে কোনো স্পাইস যোগ করতে পারছিল না। আসলে একেবারে উপায়হীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নিজেরা প্রস্তুত হয়ে বসে থাকা ভালো। এটাকে নাকি রণকৌশল বলে। আমাদের পর্যবেক্ষণ বা বিশ্লেষণ ভুল হোক — কিন্তু নিজেদের মতো করে অন্তত আপ-টু-ডেট তো থাকা যাচ্ছে। হাসনাত বলত, আমাদের এখানে মনসামঙ্গল কাব্যে তিনটা স্তর থাকত। একটা আকাশ, একটা পাতাল আর অপরটা মর্ত্য। আমরা হলাম পাতালবাসী। আকাশে আর মর্ত্যের কুশীলবদের মধ্যে আসলে কী ঘটছে আমরা বুঝতে পারতাম না। আমরা শুধু তাদের শব্দ বা আওয়াজ শুনতে পেতাম। মর্ত্য থেকে আমাদের জন্য যা যা পাঠানো হতো সেগুলো গ্রহণ করতাম — এটা হলো রাজনৈতিক হিসাব আরকি। আর আকাশের ব্যাপারটার ঠিক নাই। হতে পারে সেটা পশ্চিমা দেশ, হতে পারে সেটা অ্যাম্বাসি বা ফ্রম নোহয়ার কিছু একটা কারণে মর্ত্যে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

 

ওর এসব কথা শুনতে শুনতে হাসতামও। হলের আর বাইরের দোকানের খাবার খেতাম। মাঝে মাঝে চানখারপুল, স্টার কাবাব, নাজিরা বাজারের বিরিয়ানি খেয়ে হলে ফিরতাম। নিজের কিছু কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এর মধ্যে মামার সেই বাসায় শিফট করে ফেলেছি। বাসাটা বেশ আরামদায়ক। সেখানার দারোয়ানকে ফিট করে ফেলেছি রান্নার জন্য। মাঝে দুই নারী ফোন দিয়েছিল, তারা মামার বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে আমাকে ফোন করেছিল। আমি মামাকে বিষয়গুলো মেইলে জানালাম। তিনি তাদের অ্যাকাউন্ট নাম্বার নিলেন। তারপর কী হলো জানি না। এসব নারীর সঙ্গে মামার যোগযোগ কী নিয়ে আমি জানি না। মাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম মামা বিয়ে করেন নাই। তাহলে এই দুই নারী কে বুঝতে পারলাম না। তাদের সঙ্গে পরে আমার দেখা হয়েছিল যখন ওই বাসায় থাকতে শুরু করেছিলাম। তারা বেশ সুন্দর। ছিমছাম শরীর, লম্বা বাজু, ফরসার দিকে গায়ের রঙ, কাজলটানা চোখ, উঁচু করে খোপা বাঁধা, নিটোল বুক, ঝকঝকে হাসি — কোনো মডেল বা নায়িকাটাইপ কিছু হবেন। তারা ফ্ল্যাটে এসেছিলেন আমি ধারণা করি মামা আসলেই নাই বা তার ফ্ল্যাটটা এখনো আছে কি না এসব দেখতে। দুজন একসঙ্গে আসেন নাই অবশ্যই, আলাদা-আলাদা এসেছিলেন। তারা একে অপরকে জানেন না বলেই বুঝতে পারলাম। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আরো কিছু লোক এসেছিলেন ওই বাসায়। তাদেরও আমার অ্যাটেন্ড করতে হলো। তাদের কয়েকজনের অ্যাকাউন্ট নাম্বার নিলেন মামা। কাউকে অপেক্ষা করতে বললেন। যাদের যাদের মেইল আইডি আছে সেগুলো নিলেন।

 

আমার কাছে বেশ রহস্যজনক মনে হলো ব্যাপারগুলো। মামার ব্যবসাটা আমি ধরতে পারি নাই। হয়ত ভিওআইপি ব্যবসার লোক তারা। মামা কি আদম ব্যবসাও করত? কে জানে। সেই গণ্ডগোলের সময়গুলো পার হলে মামা একবার দেশে ফিরেছিলেন। তারপর আবার বিদেশে চলে যান। তার সেই বাসায় আমার যাওয়া হয় নাই এরপর। তার সঙ্গেও যোগযোগ হয় নাই। তিনি অবশ্য চেয়েছিলেন যোগযোগ রাখতে। কিন্তু আমার একটা সমস্যা ছিল। মা বলেছিলেন তার দেওয়া কোনো চাকরি যেন আমি না নেই। এটা মায়ের দিক থেকে প্রেস্টিজ ইস্যু ছিল। আমার দিক থেকেও। আমি সবসময় নিজের যোগ্যতায় চাকরি করতে চেয়েছিলাম। যদিও নিজের যোগ্যতা বলে আসলে কী আছে সেটা নিয়ে পরে আমি সংশয়ে পড়ে যাই। কারণ চাকরি করতে গেলে দেখা যায় যোগ্যতার স্থির-নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নাই। মাস্টার্স পাস, জেনারেল নলেজের বাইরেও জীবনে কোন অভিজ্ঞতা কখন, কোন কাজে লেগে যায় বলা মুশকিল।

 

সমাজবিজ্ঞানে পড়েও আমি যে একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছি তা কীসের যোগ্যতায়? পরিচিত এক বড় ভাই কেন যেন মনে করলেন আমাকে তার প্রতিষ্ঠানে নেবেন। তিনিও অবশ্য বর্তমান সরকারদলীয় লোক। আমাকে পছন্দ করতেন। আমার বাবার আওয়ামী লীগ করার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতেন। আসলে যে সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হই, তখন চাকরির খুব অনিশ্চয়তা ছিল। দীর্ঘ সময় বিভিন্ন নিয়োগ বন্ধ ছিল, বিএসএস এর জন আমি কখনো উপযুক্ত ছিলাম না। আমার মুখস্ত বিদ্যা খারাপ ছিল। ওই পরীক্ষা দিলেও পার পাইনি। তারপর একটা এনজিও সেখান থেকে এই কোম্পানি। এখানে আমার যোগ্যতা বলতে কিছু একটা যে কী ছিল তা ওই বড় ভাই জানবেন। আমি যদি পরে জানতে চাইতাম কেন আমাকে নিলেন সেটা হতো দুর্বলতা। আমি যেটা বুঝেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে যে, আমি একটা গণ্ডি থেকে বড় সাগরে নামতে যাচ্ছি, সেখানে না বলতে কিছু থাকবে না, সদা হা বলতে হবে। সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। পারি না, পারব কি — এ মেন্টালিটি মনের মধ্যে রাখা যাবে না। নিজে আসলে কী পারি সেটা যদি বুঝে ওঠা যায় তাহলে যেকোনো পরিবেশে যে কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা যায়। আর জীবনটা হলো অভিজ্ঞতা আর অভিজ্ঞতা। যা-ই করি না কেন তা অভিজ্ঞতা হয়ে নিজের মধ্যে জমা হয়।

 

যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল দুই হাজার ছয় থেকে আট সাল পর্যন্ত। এরপর যখন ক্যাম্পাস থেকে বের হলাম চাকরির জন্য কী করব কী করব একটা হতাশা নিয়ে ঘুরছিলাম। তখন সহজ ছিল ওই মামার কাছে গিয়ে চাকরি চাওয়া। কিন্তু মায়ের নিষেধ আর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মামার পজিশন কী হয়, কোন ঝামেলায় গিয়ে জড়িয়ে পড়ি এসব চিন্তা করে তার কাছে যাওয়ার সাহস আর হলো না। তিনি অবশ্য আমাকে বলেছিলেন, চাকরির কথা। নিজের কনফিডেন্সের কথা। তার ভাষ্য, ‘দেশে দুই ধরনের মানুষ অর্থ ও ক্ষমতায় সওয়ার হতে পারে। এক যারা খুব ছোট পজিশন থেকে বড় হয়েছে আর দুই যারা বিদেশ থেকে এসেছে। আমি দুই পজিশনেই শাইন করেছি। খুব ছোট অবস্থা থেকে উঠেছি আবার বিদেশ ঘুরেও এসেছি। আমার সঙ্গে থাকলে তোমার লস নাই। তুমি আমারে যে সাপোর্ট দিছো তা তুলনারহিত।’

 

যাই হোক তার সঙ্গে আমার যাওয়া হয় নাই। তবে তার বাসায় মউজ মাস্তি সবই হয়েছে। আমিও বেশ নিরিবিলিতে ভালো সময় কাটিয়েছি ওই বাসায়। গোটা ওয়ান-ইলেভেনের সময়টা ওই বাসায় দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছিলাম। আর হাসনাতের কথা শুনে শুনে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছিলাম। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত থাকবে না তা তো আর হয় না — এটা হাসনাত বলত। সে বলত, ‘শোন, সাধারণরা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে হয়ত বুঝতে পারে আসলে কী ঘটেছিল, অনেকে তাও বুঝতে পারে না। আর জিনিয়াসরা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তো বুঝেই আগামও অনেক কিছু বুঝে যায়।’

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here