ডিকলোনাইজিং দ্যা মাইন্ড ।। কিস্তি : ১৩

নগুগি ওয়া থিওঙ্গো সাহিত্য ও রাজনীতির দুনিয়ায় চেনা একটি নাম। তাঁর বিখ্যাত বই Decolonising the Mind: The Politics of Language in African Literature (1986)। ঔপনিবেশিক রাজনীতি, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বোঝার দারুণ প্রতিনিধি-পুস্তক এই বই। বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন শিবলী নোমান

প্রাসঙ্গিকতার সন্ধান

এক

এতক্ষণ পর্যন্ত আমি সামগ্রিক সৃজনশীল সাহিত্য এবং বিশেষত থিয়েটার ও কল্পকাহিনীর ভাষা নিয়ে কথা বললাম। আমার ‘আফ্রিকান কবিতার ভাষা’ নিয়েও আলোচনা করা উচিত। কিন্তু এই একই বিষয়গুলোই আসলে কবিতার ক্ষেত্রে অনেক বেশি তীক্ষ্ণভাবে প্রযোজ্য। আফ্রিকান ভাষায় এবং স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ওরাটিউরগুলোতে (মৌখিক সাহিত্য) কবিতার উপস্থিতি ও ধারাবাহিক বিকাশের ফলে ইংরেজি, ফরাসি কিংবা পর্তুগিজ ভাষায় লিখিত আফ্রিকান কবিতা নিয়ে কথা বলা সুষ্পষ্টভাবেই অযৌক্তিক। এগুলোকে আফ্রো– ইউরোপিয়ান কবিতা বলা যেতে পারে। কিন্তু কখনোই আফ্রিকান কবিতা নয়, যেগুলো আফ্রিকানদেরই লেখা। যেমন সোয়াহিলি ভাষার কবিতাগুলো শতাব্দীপ্রাচীন। যেখানে দেখা যায় হাসান নামক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মহান যোদ্ধার আখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক কাব্য যা সোমালি ভাষাভাষী সবাই জানে এবং অন্তর দিয়ে অনুভব করে, সেখানে বিদেশি ভাষার সেরা আফ্রিকান কবিদের লেখা একটি ছত্রও আফ্রিকার কোন কৃষক জানেন না। কবিতার অন্যান্য ভাষাগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যাবে প্রকাশভঙ্গির একটি আলাদা আফ্রিকান ভাষা বিদ্যমান এমন বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কথা বলতে হবে যেসব বিষয়ে এই মুহূর্তে আমি কল্পনাও করতে পারি না; এসব ক্ষেত্রে থিয়েটার ও কল্পকাহিনীর মতো কবিতাকেও নিজের ভেতর একটি আলাদা ভাষা ধরে নেয়া হয় যার রয়েছে ছন্দ, তাল, অন্ত্যমিল, অর্ধ অন্ত্যমিল, আভ্যন্তরীণ অন্ত্যমিল, নকশা ও চিত্রকল্প।

 

তার চেয়ে আমার চেষ্টা করা উচিত এতক্ষণ ধরে আলোচিত আফ্রিকান সাহিত্যের ভাষা নিয়ে রাজনীতির ভিত্তিমূলে থাকা বিষয়াদির সারসংক্ষেপ করা। আর এটি হলো আমাদের সাপেক্ষে ও পুরো বিশ্বের সাপেক্ষে আমাদের নিজেদেরকে স্পষ্টভাবে দেখার উদ্দেশ্যে মুক্তিপ্রয়াসী প্রেক্ষাপটের সন্ধান। আমি একে বলতে চাই ‘প্রাসঙ্গিকতার সন্ধান’ এবং আমি শুধুমাত্র সাহিত্য লেখাই নয় বরং বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাহিত্য শিক্ষাদান ও এর ক্রিটিক্যাল দিকগুলোতেও দৃষ্টি দিতে চাই। অন্যভাবে বলতে হয়, আফ্রিকা ও পুরো বিশ্বে সাহিত্য থাকলে, কোন ক্রম অনুসরণ করে শিশুদের কাছে এই সাহিত্যগুলো উপস্থাপন করা হবে? এর ভেতর রয়েছে দুইটি প্রক্রিয়া; বিষয় পছন্দ করা এবং ঐ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যাখ্যা। এই দুইটি প্রক্রিয়া পছন্দ করে নেয়া বিষয়ের প্রতি জাতীয় ও শ্রেণিগত পছন্দ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করবে ও এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। চূড়ান্তভাবে, পছন্দ ও দৃষ্টিভঙ্গির জাতীয় এবং এমনকি শ্রেণিগত ভিত্তিগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং প্রভাবিত হবে বাস্তবতাকে অনুধাবন করার জন্যে আমাদের দার্শনিক ভিত্তি দ্বারা, এটি এমন এক বিষয় যার উপরে আর কোন আইন চলে না। আপনারা হয়তো দেখতে পাচ্ছেন যে সবকিছুর দ্বারা সবকিছু প্রভাবিত হচ্ছে এমন এক দুষ্টু চক্রে আমরা জড়িয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমাকে ভিত্তির প্রশ্নটি ব্যাখ্যা করতে দিন।

নিশ্চিতভাবেই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ সংগ্রামের প্রেক্ষাপটেই প্রাসঙ্গিকতা ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান সঠিকভাবে বুঝতে পারা ও অর্থপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব।

একটি বিষয়ে আমরা কিভাবে দেখি — আমাদের চোখ দিয়েও — তা নির্ভর করে ঐ বিষয়ের সাপেক্ষে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি তার উপর। যেমন আমরা সবাই এখন আছি এই লেকচার হলে। কিন্তু আমরা রুমের কী কী দেখছি এবং কতটা দেখছি তা নির্ভর করছে আমরা এখন কোথায় বসে কথাগুলো শুনছি তার উপর। আপনারা সবাই আমার পেছনের দেয়াল দেখতে পাচ্ছেন, আর আমি দেখতে পাচ্ছি আপনাদের পেছনের দেয়াল। আপনাদের অনেকে এমন অবস্থানে বসে আছেন যার মাধ্যমে অন্য অনেকের চেয়ে আপনারা এই হলের অনেক কিছু বেশি দেখতে পাচ্ছেন। যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো, আমরা যদি সবাইকে এই হলে থাকতে দেই ও হলটিকে বর্ণনা করতে বলি, তাহলে এখানে আজ যতজন ব্যক্তি আছেন ঠিক ততগুলো আলাদা আলাদা বর্ণনা পাওয়া যাবে। আপনারা কি সাতজন অন্ধ মানুষের হাতি দেখার সেই গল্পটা জানেন? তাদের ভেতর একটি হাতির ভৌত গঠন বিষয়ে পরস্পরের সাথে সাংঘর্ষিক ধারণা ছিল। তারপর তারা হাতিকে ছুয়ে দেখার ও অনুভব করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তারা প্রাণিটির আলাদা আলাদা অংশ ছুয়েছিল; কেউ পা, কেউ কান, কেউ দাঁত, কেউ লেজ, কেউ শুঁড় আর কেউ পেট। আর তাই ঘরে ফিরে হাতির ভৌত প্রকৃতি, আকার ও আকৃতি নিয়ে তাদের ভেতর আরও বেশি বিভক্তি তৈরি হয়। তারা আসলে হাতিটিকে বোঝার জন্যে আলাদা আলাদা অবস্থানে বা ভৌত ভিত্তিতে অবস্থান করছিলেন। আর ভিত্তিকে সবসময় ভৌতই হতে হয় এমন নয়, বরং এটি হতে পারে দার্শনিক, শ্রেণিগত বা জাতীয়।

 

এই বইয়ে আমি দেখাতে চেয়েছি যে আমরা কিভাবে নিজেদের বা আশেপাশের পরিবেশকে দেখি তা সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক ও নব্য-ঔপনিবেশিক পর্যায়গুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক বা অবস্থানের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ আজকে যদি আমরা আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক অস্তিত্বের জন্যে কিছু করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে খুব ঠাণ্ডা মাথায় ও সচেতনতার সাথে দেখতে হবে যে সাম্রাজ্যবাদ আমাদের সাথে কী করেছে ও বিশ্বজগতের প্রেক্ষিতে আমাদেরকে কিভাবে প্রদর্শিত করেছে। নিশ্চিতভাবেই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ সংগ্রামের প্রেক্ষাপটেই প্রাসঙ্গিকতা ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান সঠিকভাবে বুঝতে পারা ও অর্থপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব।

 

সাহিত্যে এই বিষয়গুলো দেখা সবসময় সহজ নয়। আর এজন্যেই আজকের আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রাসঙ্গিকতার সন্ধানে কোন ক্রমে কী পড়ানো হবে এবং কোন দৃষ্টিভঙ্গি বা ক্রিটিক্যাল পদ্ধতিতে তা করা হবে সে বিষয়ে সংগ্রামের উদাহরণটি আমি ব্যবহার করতে চাই। আমি শুরু করতে চাই ‘দ্য গ্রেট নাইরোবি লিটারেচার ডিবেট’ নামে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয়গুলোতে সাহিত্যবিষয়ক শিক্ষাদান সংক্রান্ত বিষয়টির সংক্ষিপ্ত বর্ণনার মাধ্যমে।

 

দুই

বিতর্কটি খুব সরলভাবে শুরু হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, যখন ইংরেজি বিভাগের তৎকালীন প্রধান ড. জেমস স্টুয়ার্ট আর্টস ফ্যাকাল্টি বোর্ডের কাছে ইংরেজি বিভাগের উন্নয়নের জন্যে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। প্রস্তাবগুলো বিভিন্ন দিক থেকেই ছিল প্রাসঙ্গিক। কিন্তু সেগুলো সবই দুইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাক্যের অনুগামী ছিল :

এই মহাবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস এবং এর রয়েছে একটি শক্তিশালী পাঠ্যক্রম, যেখানে আধুনিক পশ্চিমের উদ্ভবের সময় থেকে একটি একক সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা পাঠদানের মাধ্যমে একে ইতিহাস, দর্শন ও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত করা হয়েছে। তারপরও একে কিছুটা কম ব্রিটিশ হতেই হবে এবং অন্যান্য ইংরেজি লেখা (আমেরিকান, ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকান, কমনওয়েলথ) এবং মহাদেশীয় লেখাগুলোর দিকে তুলনামূলক উদ্দেশ্যগুলো সাধনের জন্যে কিছুটা ঝুঁকতেই হবে।১

মাসখানেক পর, ১৯৬৮ সালের ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন আফ্রিকান প্রভাষক ও গবেষক ড. স্টুয়ার্টের প্রস্তাবের জবাবে তখন যেভাবে ইংরেজি বিভাগ গঠিত ছিল তা ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান। ইংরেজি ঐতিহ্য ও আধুনিক পশ্চিমের উদ্ভবই ছিল কেনিয়া ও আফ্রিকার সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রীয় বিষয়-প্রস্তাবের এই অংশটি নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছিলেন। আফ্রিকা আসলে পশ্চিমের একটি সম্প্ররসারণ–তারা এই ধরনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রত্যুত্তরে তারা আরও বলেন,

আমাদের মূল প্রশ্ন হলো, যদি ‘একটি একক সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা পাঠদানের’ প্রয়োজনীয়তা থেকেই থাকে, তাহলে সেটি কেন আফ্রিকান নয়? কেন আফ্রিকান সাহিত্য কেন্দ্রে থাকতে পারবে না যেন আমরা এর প্রেক্ষিতে অন্য সংস্কৃতিগুলোকে দেখতে পাই?২

 

নরকের দরজা খুলে গিয়েছিল! ১৯৬৮ সালের বাকি সময় আর ১৯৬৯ সালেও বিতর্কটি চলছিল, আর তা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল শিক্ষকদের গ্রাস করেছিল। এক্ষেত্রে মাত্র চারটি বাক্যের মাধ্যমে আজও কেনিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজনীতি প্রশ্নে যা গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক তার মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। বিতর্কের বিস্তারিত বিষয়াদি ছিল একই ও কৌতুহলজনক। সকল পক্ষই ছিল আফ্রিকান, ইউরোপিয়ান ও অন্যান্য সাহিত্যসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত। কিন্তু কোনটি থাকবে কেন্দ্রে? আর কোনটি থাকবে বহির্সীমায়? কেন্দ্র কিভাবে বহির্সীমার সাথে সম্পর্কিত হবে? এভাবে শুরু করার ভিত্তিবিষয়ক প্রশ্নটির মাধ্যমে প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতার পুরো প্রশ্নটি বিভিন্ন অংশের ও প্রতিটির সাথে প্রতিটি বিষয়ের গুরুত্ব ও সম্পর্ক পরিবর্তিত করে দিয়েছিল।

 

এই বিতর্কের গুরুত্ব ও এর এতটা উত্তপ্ত হয়ে উঠার কারণ বুঝতে হলে আমাদেরকে আফ্রিকায় ইংরেজি অধ্যয়ন, একজন আফ্রিকান শিক্ষার্থীর কী ধরনের সাহিত্যের মুখোমুখি হতে হতো এবং আফ্রিকার সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্বে সংস্কৃতির ভূমিকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর আলোকপাত করতে হবে।

 

তিন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উগান্ডা, নাইজেরিয়া, ঘানা, সিয়েরা লিয়ন, কেনিয়া এবং তানজানিয়ায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের বৈদেশিক শাখা স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি অধ্যয়নকে একটি কাঠামোতে নিয়ে আসা হয়েছিল। আর খুব অল্প পার্থক্যসমেত এই প্রতিষ্ঠানগুলো লন্ডনে যা পড়ানো হতো তাই পড়াতো। উদাহরণ হিসেবে ইংরেজি বিভাগের কথা বলা যেতে পারে যেখানে পড়ানো হতো শেক্সপিয়ার, স্পেন্সার ও মিল্টন থেকে জেমস জয়েস ও টি. এস. এলিয়ট, আই. এ. রিচার্ডস ও অনিবার্যভাবে এফ. আর. লেভিস পর্যন্ত। আমাদের দৈনন্দিন পাঠের ভেতর থাকতো ম্যাথিউ আর্নল্ডের হেলেনাইজড ইংরেজ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মিষ্টতা ও আলোর খোঁজ; টি. এস. এলিয়টের একটি উচ্চসংস্কৃতির অ্যাংলো-ক্যাথলিক সামন্তবাদী ঐতিহ্য যারা সন্দেহপূর্ণভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও শাসন করতেই জন্মানো বর্ণবাদী অংশের কাছাকাছি থাকে এবং লেভিসের ‘গ্রেট ট্রেডিশন অব ইংলিশ লিটারেচার’ ও সাহিত্যের নৈতিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে তাঁর পীড়াপীড়ি। এসবের প্রতিটি অনুচ্ছেদ, প্রতিটি শব্দে নৈতিক গুরুত্ব অনুধাবনের জন্যে, এমনকি শেক্সপিয়ারের কমা ও দাড়ির ব্যাখ্যায় আমরা কতগুলো সেমিনারে অংশ নিয়েছি? আর্নল্ড কেটল ও রেমন্ড উইলয়ামস হলো দুইজন ক্রিটিক্যাল চিন্তক যাদের কারণেই একটি ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার ভেতরে থেকেও আমার ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন অর্থপূর্ণ হয়েছিল, যদিও ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সালেও তাদের বিষয়ে পড়ানোটা ছিল খুবই প্রান্তিক ও ক্ষণিক সময়ের জন্যে। কিন্তু এখানে আমি দেখাতে চাচ্ছি না কোন লেখক বা সমালোচক আমাদের জন্যে বেশি উপযোগী ছিলেন কিংবা বিশ্ব সম্পর্কে কারা অন্য ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতেন। এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটি যে এরা সবাই ইংরেজি ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত ছিলেন। এসবের বাইরে শুধুমাত্র নাটক নিয়ে পড়ার সময়েই আমাদের সামনে আসতেন ইস্কিলাস, সফোক্লিস ও অ্যারিস্টটল কিংবা ইবসেন, চেখভ, স্ট্রিন্ডবার্গ ও সিং, তাদের অইংরেজি খেয়ালি ও আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে। ইংরেজি ঐতিহ্যের কেন্দ্রিকতা ও সার্বজনীনতা বুঝতে পারা যায় মাকারেরেতে প্রফেসর ওয়ার্নারের শেক্সপিয়ার ইন আফ্রিকা শীর্ষক উদ্বোধনী বক্তৃতার শিরোনাম থেকে। এই বক্তৃতায় তিনি পরমানন্দিত হয়েছিলেন এটি দেখে যে তাঁর শিক্ষার্থীদের অনেকে তাদের আফ্রিকান গ্রামে জেন অস্টিনের উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে চিহ্নিত করতে পারছিলেন। তাই ইংরেজি সাহিত্য আফ্রিকাতেও প্রযোজ্য; আফ্রিকান পরিস্থিতিতে ইংরেজি অধ্যয়নের পক্ষের বিষয়টি প্রমাণিত। বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ্যক্রম এমনভাবেই তৈরি করা হতো যেন এর ভেতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ইংরেজি পাঠের সনদ আনার জন্যে কতিপয় ভাগ্যবানকে তৈরি করা যায়। তাই সেসব পাঠ্যক্রমের গঠনও ছিল প্রায় একই। শেক্সপিয়ার, মিল্টন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, কিটস এবং কিপলিং হলো সেইসব নাম যাদের সাথে আমি পরিচিত হয়েছিলাম মাকারেরেতে আসার আগে।

 

আমার বই রাইটারস ইন পলিটিক্স-এর লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি শীর্ষক রচনায় আমি চেষ্টা করেছি বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার জন্যে শ্রেণিকক্ষ ও পাঠাগারে আফ্রিকান শিশুদের কাছে যেসব সাহিত্য থাকে তাদেরকে তিনটি বৃহৎ শ্রেণিতে ভাগ করতে।

ঔপনিবেশিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ওঠা সাহিত্য অধ্যয়নের চর্চাগুলো স্বাধীনতার পর কোন ধরনের সাংস্কৃতি পরিবর্তনের দ্বারা একেবারেই প্রভাবিত হয়নি।

প্রথমেই ছিল ইউরোপিয়ান সাহিত্যের মানবতাবাদী ও গণতান্ত্রিক মহা ঐতিহ্যগুলো যার ভেতর ছিল ইস্কিলাস, সফোক্লিস, বালজাক, ডিকেন্স, দস্তয়েভস্কি, তলস্তয়, গোর্কি, ব্রেখট প্রমুখ। কিন্তু তাঁদের সাহিত্য এর সর্বোচ্চ মানবিক ও সার্বজনীন পর্যায়েও ইতিহাসের ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতাই প্রতিফলিত করতো। এর বিশ্বের গঠন ও যেই বিশ্বকে এটি স্মরণ করে তা ঐ একই গঠনের পৃথিবীর একটি শিশুর কাছে যতটা পরিচিত ততটা কোনভাবেই এর বাইরের শিশুদের জন্যে নয়; একজন যতই চেষ্টা করুক তার গ্রামীণ আফ্রিকান গঠনে গল্পরত নারীদের জেন অস্টিনের চরিত্রের সাথে মেলাতে। শেক্সপিয়ারসহ এসব লেখকদের বোধহীন প্রতিভার অধিকারী, যাদের একমাত্র ধারাবাহিক গুণ ছিল করুণাময়তা, এমনভাবে তাঁদের উপস্থাপনের ক্রিটিক্যাল ঐতিহ্য এক্ষেত্রে কোন সহযোগিতা করতো না। ইউরোপের বুর্জোয়া সংস্কৃতি প্রশ্নে এসব লেখকদের ছিল তীক্ষ্ণ ও সবচেয়ে মর্মভেদী পর্যবেক্ষণ, কিন্তু তাঁদের রচনা সম্পর্কে এমনভাবে শেখানো হতো যেন তাদের একমাত্র বিবেচ্য ছিল ভালোবাসা, ভয়, জন্ম ও মৃত্যুর মতো সার্বজনীন বিষয়গুলো। মাঝে মাঝে তাঁদের মহত্ত্বকে বাইবেল ও সুইয়ের পর বিশ্বের প্রতি ইংরেজদের আরেকটি উপহার হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকায় আলো নিয়ে এসেছিলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ও যিশু খৃস্ট। আমাদের বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলতেন শেক্সপিয়ার ও যিশু খুব সরল ইংরেজি ভাষায় কথা বলতেন। এটি তিনি ততদিন বলেছিলেন যতদিন না পর্যন্ত কেউ একজন তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন যে যিশু কথা বলতেন হিব্রু ভাষায়। ইংরেজি সাহিত্যের ‘মহান ঐতিহ্য’ যেন ছিল ‘সাহিত্যজগত’ –এর মহান ঐতিহ্য!

 

এরপর ছিল সেইসব উদার ইউরোপিয়ানদের সাহিত্য যাদের কাল্পনিক অনুসন্ধানে আফ্রিকা কখনো কখনো স্থান করে নিয়েছিল। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো অ্যালান প্যাটনের ক্রাই, দ্য বিলাভড কান্ট্রি। এখানে তার চারপাশে হওয়া বর্ণবাদী সহিংসতাকে এড়িয়ে চলা একজন আফ্রিকান হলো আদর্শ নায়ক। এখানে শ্রদ্ধাভাজন স্টিফেন কুমালোকে৩ এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে আমাদের সকল সমবেদনা যেন থাকে তারই সাথে। তিনি হলেন বাইবেলের সেই চরিত্রের মূর্ত প্রকাশ যিনি শত্রুর দ্বারা নিজের ডান গালে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর নিজের বাম গাল সেই শত্রুর দিকে পুনরায় আঘাতের জন্যে এগিয়ে দেন। কুমালো ছিলেন আফ্রিকান প্রেক্ষাপটে সেসব আমেরিকান চরিত্রগুলোর পূর্ববর্তী সাহিত্যিক বর্ণনা যারা ভেবেছিলেন সাবানের বুদবুদ উড়িয়ে আর লাঠি ও বন্দুকধারী পুলিশদের ফুল দিয়ে তারা ভিয়েতনাম যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারবেন। মিস্টার জনসন উপন্যাসে জয়েস ক্যারি তার উদারতাবাদের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন। এই উপন্যাসে তিনি এক নির্বোধ আফ্রিকানকে দেখিয়েছেন নায়ক হিসেবে। মিস্টার জনসন হলেন আবেগে পূর্ণ ও শিশুসুলভ উষ্ণতাসম্পন্ন এক আফ্রিকান, যিনি নাচেন এবং মজা করতে পছন্দ করেন। উপন্যাসে তাকে মৃত্যুর শাস্তি দেয়া হয়। কী ছিল তার সবচেয়ে শেষ ইচ্ছা? ইউরোপিয়ান ডিস্ট্রিক্ট অফিসারের ছোড়া গুলিতে মৃত্যুবরণ। ডিস্ট্রিক্ট অফিসার তার ইচ্ছাপূরণ করেছিলেন। আমরা কি আমাদের ঘোড়া আর বিড়ালের জন্যে তাই করি না? মূল বিষয় হলো এই উপন্যাসের পাঠক ডিস্ট্রিক্ট অফিসার ও মিস্টার জনসন উভয়েরই প্রশংসা করবেন তা ধরে নেয়া হয়, কারণ তারা একটি মানবিক যোগাযোগ স্থাপন করেছেন; যেমনটা করে ঘোড়সওয়ার ও ঘোড়া কিংবা প্রভু ও দাস। কারেন ব্লিক্সেনের বই আউট অব আফ্রিকা-ও একই ধরনের উদার ছাঁচে তৈরি। আফ্রিকানরা হলো বিশেষ ধরনের মানব প্রজাতি যারা আধ্যাত্মিকতার অধিকারী ও অতীন্দ্রিয়বোধসম্পন্ন অথবা তাদের রয়েছে পশুর প্রবৃত্তি ও প্রাণশক্তি; এগুলো হলো সেসব বৈশিষ্ট্য যেগুলো ‘আমরা ইউরোপে’ হারিয়ে ফেলেছি।

 

তৃতীয় শ্রেণিটি ছিল রাইডার হ্যাগার্ড, এলসপ্যাথ হাক্সলি, রবার্ট রুয়ার্ক এবং নিকোলা মনসারাতের মতো লেখকদের লেখা পুরোদস্তুর বর্ণবাদী সাহিত্য। এ ধরনের সাহিত্যে মাত্র দুই ধরনের আফ্রিকান দেখা যেত, ভালো আর খারাপ। ভালো আফ্রিকান হলো তারাই যারা ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিকদের সহযোগিতা করে; বিশেষত সেই সব আফ্রিকান যারা তার নিজের মানুষ ও দেশকে দখল করে দাস বানিয়ে রাখতে ইউরোপিয়ান ঔপনবেশিকদের সাহায্য করে। এ ধরনের চরিত্রগুলোকে শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও সৌন্দর্যের ধারক হিসেবে দেখানো হতো। কিন্তু এসব শক্তি, বুদ্ধিমত্তা আর সৌন্দর্য সবই বেঁচে দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে খারাপ আফ্রিকান চরিত্রগুলোতে দেখানো হতো তাদেরই যারা তাদের দেশে বিদাশি আধিপত্য ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতেন। এমন চরিত্রগুলোকে দেখানো হতো কুৎসিত, দুর্বল, ভীরু ও প্রতারক হিসেবে। এসব রচনায় পাঠককে ঔপনিবেশিকতার সাহায্যকারী আফ্রিকানদের নিজের কাছাকাছি ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা আফ্রিকানদের থেকে নিজেকে দূরের মনে করার প্রণোদনা দেয়া হতো। পশ্চিমা গণমাধ্যমে আফ্রিকান বিভিন্ন শাসনামলের চিত্রায়নে এখনও এমন দৃশ্যই দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ কেনিয়া ও আইভরি কোস্টে যেসব শাসনামলের ফলে এসব দেশের ভবিষ্যত পরিণত হয়েছে ইউরো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের কাছে থাকা বন্ধকে, তাদের চিত্রায়িত করা হয় ব্যবহারিক, বাস্তববাদী, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক; এদেরকে কখনো কখনো এমনভাবেও দেখানো হয় যেন তারা তাদের দেশে অর্জন করেছে অতুলনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। কিন্তু অন্যান্য শাসন–যেমন নক্রুমাহর৪ ঘানা অথবা নাসেরের মিশর-যারা চেষ্টা করেছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার, তাদেরকে দেখানো হয় অতিসাধারণ, অবাস্তববাদী, অতিমাত্রায় তাত্ত্বিক ও কর্তৃত্ববাদী; আরও বলা হয় এগুলোর মাধ্যমে এসব দেশে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক গোলযোগই বৃদ্ধি পেয়েছে। টেলিভিশন ও জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে এই দৃশ্যপট কর্তৃত্বে আসার অনেক আগেই এই ঘরানার সাহিত্যগুলো প্রয়োজনীয় বর্ণবাদী শব্দভাণ্ডার ও চিহ্নাদি সৃষ্টি করেছিল।৫

 

এভাবে যেসব আফ্রিকান শিশু ঔপনিবেশিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাহিত্যের সাথে পরিচিত হতো, তারা ইতিহাসের ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত ও প্রতিফলিত হতে দেখতো। তাদের একান্ত পারিপার্শ্বিক পরিবেশসহ পুরো বিশ্বকে দেখার ব্যাপারটিই ছিল ইউরোকেন্দ্রিক। ইউরোপ ছিল মহাবিশ্বের কেন্দ্র। ইউরোপিয়ান বুদ্ধিজীবিদের অক্ষকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘুরতো। সাহিত্যে যেসব চিত্রের সাথে শিশুরা পরিচিত হতো, সেই সব চিত্রের বাস্তবতাই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতো ভূগোল ও ইতিহাস এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাঠের মাধ্যমে, কারণ এগুলোর কেন্দ্রও ছিল সেই ইউরোপ। এই বিষয়গুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় সাংস্কৃতিক বিষয়াদির সাথে একেবারে মিলে গিয়েছিল। এই বইতে আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি আফ্রিকান মানুষের উপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কিভাবে রাজনীতি ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে মানুষের উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায় না। আর এক্ষেত্রে যে কোন ধরনের একক ব্যাখ্যা ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নির্বিশেষে সাহিত্যবিষয়ক পাণ্ডিত্যপূর্ণ চর্চা পুরো ব্যবস্থার লক্ষ্য ও যুক্তির সাথে একেবারে মিলে যায়। যুদ্ধের পর উপনিবেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্যই ছিল একটি স্থানীয় অভিজাত সমাজ তৈরি করা, যারা পরবর্তীতে সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। কিপলিং এর কবিতা ইফ-এ সাম্রাজ্যের একজন ঠাণ্ডা মাথার শান্ত দাস সম্পর্কে বলা হয়েছে; সেই ভদ্র ব্যক্তিটি প্রতিরোধের উঠতি ঝড়ের মুখেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন; সেই ভদ্রলোকটি বিজয়োল্লাস ও বিপর্যয়কে দেখেন এবং দুইটি বিষয়কে একই অর্থে গ্রহণ করেন; ভদ্রলোকটি তার চারপাশে বিদ্যমান সন্দেহের পরও নিজের ভেতর ঔপনিবেশিকতার যথার্থতা প্রশ্নে একেবারেই সন্দেহমুক্ত; বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যবাদগুলোতে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা এসব বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ধরনের ভদ্রলোকদের পরিয়ে দিচ্ছিলো আফ্রিকান গাউন।

 

ঔপনিবেশিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ওঠা সাহিত্য অধ্যয়নের চর্চাগুলো স্বাধীনতার পর কোন ধরনের সাংস্কৃতি পরিবর্তনের দ্বারা একেবারেই প্রভাবিত হয়নি। ভাগ্যের পরিহাস হলো এসব বিভাগগুলো সেইসব দেশে কাজ করছিল যেখানে মৌখিক ঐতিহ্য হলো সব ধরনের লিখিত সাহিত্য যেমন কবিতা, নাটক অথবা গল্পের ভিত্তি –যার দ্বারা এসব দেশে জীবন ও শক্তি সঞ্চারিত হয় –সেখানে তারা তাদের চারপাশে থাকা সৃজনশীল ঝড়ের প্রেক্ষাপটে ছিল একেবারেই অপ্রভাবিত। আধুনিক পশ্চিমের উত্থানের পুরোটা সময় জুড়ে একটি একক সংস্কৃতি অধ্যয়নের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা এই সময়ে এসেও বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে সাহিত্য বিষয়ে পাঠদানের মূলনীতি হিসেবে কাজ করছিল।

 

এই প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ১৯৬৮ সালে এই মূলনীতির প্রত্যাখ্যান আসলে ছিল সাহিত্যবিষয়ক জ্ঞানতাত্ত্বিক বিতর্কের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতির প্রত্যাখ্যানের চেয়ে বেশি কিছু। এটি প্রশ্ন করছিল এই পুরো ব্যবস্থার পেছনে বিদ্যমান পূর্বধারণাগুলোকে, যেগুলোকে আমরা আত্মস্থ করেছি ও চালিয়ে গিয়েছি জাতীয় প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে কোন মৌলিক প্রশ্ন না করেই। প্রশ্নটি হলো, কোন ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আমরা পৃথিবীকে দেখি?

 

সূত্র ও টীকা

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, হোমকামিং, লন্ডন, ১৯৬৯, পৃ. ১৪৫ —লেখক

পূর্বোক্ত, পৃ. ১৪৬ —লেখক

ক্রাই, দ্য বিলাভড কান্ট্রি উপন্যাসের মূল চরিত্র—অনুবাদক

কোয়েমে নক্রুমাহ, ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত ঘানার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে শেষ জীবন কাটিয়েছেন গিনিতে—অনুবাদক

গামাল আব্দেল নাসের, ১৯৫৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান—অনুবাদক

পড়ুন ।। কিস্তি ১২

ডিকলোনাইজিং দ্যা মাইন্ড ।। কিস্তি : ১২

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here