বো ধি ক থা সংকলন : ২
সন্ন্যাসী, ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভগবান শ্রীরজনীশ বা ওশো সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু-পরবর্তী কালে অটুট তাঁর প্রভাব। মূল হিন্দি থেকে ওশোর মিট্টি কে দিয়ে বইটির অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ।
স্বর্গের প্রবেশ দ্বারে খুব ভিড় চলছিলো। চারপাশ থেকে অপেক্ষারত অনেকেই দরজা খোলার স্লোগান দিচ্ছিলো। কিন্তু দ্বাররক্ষী ধমক দিয়ে সবাইকে বললো, ‘তোমরা সকলে অপেক্ষা কর, তোমাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই তবে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে। আমরা খোঁজ নেব যে ধর্ম তোমরা পালন করে এসেছ তা লিখিত শাস্ত্র থেকে পেয়েছিলে নাকি সরাসরি ঈশ্বরের কাছ থেকে।’
ভিড়ের মধ্য থেকে এক সন্ন্যাসী দ্বাররক্ষীর দিকে এগিয়ে এসে বললো, ‘আমার জন্য তো অন্তত দরজা খুলে দিবে। বয়স হয়েছে। আমি সারাজীবন অনেক তপস্যা, উপবাস করে এসেছি। আমার সময়ে আমার চেয়ে বড় তপস্যী আর কেউ ছিলো না।’
দ্বাররক্ষী জবাব দিলো, ‘স্বামীজি একটু অপেক্ষা করুন। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখি আপনি জীবনভর তপস্যা কেন করেছিলেন? আমি যতদূর জানি যেখানে কিছু পাওয়ার জন্য সামান্য কণা পরিমাণ আকাঙ্ক্ষা জাগে সেখানে ত্যাগ বলে কিছুই থাকে না।’
এর কিছুক্ষণ পর সন্ন্যাসীকে পেছনে রেখে ভিড় থেকে কয়েকজন দ্বাররক্ষীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘আমরা সমাজ সেবক। সারাজীবন সমাজ সেবায়, মানুষের সেবায় জীবন দিয়েছি। আমাদের জন্যও কি দরজা বন্ধ থাকবে?’
দ্বাররক্ষী জনতার সেবকদের উদ্দেশ্যে বললো, ‘আপনারাও দেখি বেশ ভুল পথে আছেন। যে সেবা কিছু পাওয়ার আশা তৈরি করে, সেটা সেবা নয়। তবুও আমরা আপনাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছি। খোঁজ খবর নিয়েই তবে প্রবেশ করতে দেব।
এরপর ভীড় থেকে একে একে প্রবেশকারীরা দ্বাররক্ষী অনুনয় বিনয় করে নিজেদের অবস্থার কথা জানাতে লাগলো। ঠিক তখন দ্বাররক্ষীদের নজর গেল ভিড়ের পেছনের অন্ধকারে এক বৃদ্ধের দিকে। দ্বাররক্ষী পেছন থেকে সেই বৃদ্ধকে সামনে আসার অনুরোধ করলো। সেই বৃদ্ধটির চোখে জল ছিল। আর সে বলতে লাগলো, ‘আমি এই ভিড়ের কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কোথায় এসে পড়লাম। আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। কোথায় আমি আর কোথায় স্বর্গ? আমিতো গণ্ডমূর্খ। শাস্ত্রে কি লেখা আছে, কি নেই এর কিছুই আমার জানা নেই। সন্ন্যাস কি জিনিস তাও আমার অজানা কারণ আমার কিছুই তো ছিলো না যা আমি সন্ন্যাসের জন্য ত্যাগ করবো। আর সেবা? আমি কখনো কারো সেবা করিনি। এর সামর্থ্যই বা কোথায় আমার? তবে প্রেম আমার হৃদয়ে পূর্ণ। আমিতো প্রেমের নদীতেই ভেসে চলছি জীবনভর। কিন্তু প্রেমতো স্বর্গে প্রবেশের জন্য কোনো যোগ্যতাও নয়। কৃপা করে তুমি কি আমাকে বলবে নরকের দ্বার কোনদিকে? হয়তো সেটাই আমার স্থান অথবা সেখানেই আমার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
বৃদ্ধের কথা শুনতেই দ্বাররক্ষী দরজা খুলে মাথা নুইয়ে তাকে স্বাগত জানিয়ে বললো, ‘আপনার মানবজীবন ধন্য, পরিপূর্ণ। আপনি অমৃতকে উপলব্ধি করেছেন। স্বর্গের দ্বার আপনার জন্য সবসময়ই খোলা থাকবে।’
জীবনের পরিপূর্ণতাই কি পরমাত্মার প্রার্থনা নয়?
অথবা জীবনের পরিপূর্ণতাই কি মোক্ষ নয়?
পড়ুন ।। কিস্তি ১
Khandaker Mustafizul
অনেকবেশি ভালো লাগলো!
ভালো লাগল।