অন্যমনস্ক দিনগুলি ।। কিস্তি : ৫

এই উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে এই মুহূর্তের গল্প; যে গল্পের ভেতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছি আমরা এবং সমগ্র বাংলাদেশ। চমৎকার ভঙ্গিতে গল্প বলে গেছেন সালাহ উদ্দিন শুভ্র। এই গল্প নিশ্চিতভাবে টেনে নেবে আপনাকে। কারণ আপনিও সম্ভবত জড়িয়ে আছেন এই উপন্যাসের সঙ্গে।

রাতে ডায়েরি লেখার পর অদ্ভুত একটা আমেজ আসছিল পরে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোই লাগছিল মনের মধ্যে অনেক কথা ভেসে আসছে রেখা বা শ্যামলীর কথায় ঠিক মন বসাতে পারছিলামা না নিজের পুরোনো দিনের কথায় বার বার ফিরে যাচ্ছিলাম লেখাটার কথা ভাবছিলাম আবার কখন লিখতে বসব? লেখাটা আমার একান্ত নিজের বিষয়ে হয়ে যাচ্ছে কাউকে বলা যাবে না, জলির সঙ্গে আমার ঘটনাগুলো নিশ্চয় রেখা কেন — কোনো স্ত্রী বাস্তব জীবনে ভালোভাবে নেবে না আর এগুলো তাকে বলারও কিছু নাই সে যে রোকন সাহেবকে পছন্দ করে সেটা কি আমাকে বলে? শুধু পছন্দই তো না সুযোগ পেলে ছাদে তারা একা হয়ে যাচ্ছে সেদিন তো রোকন সাহেবের বউও বাসায় ছিল না তাহলে? তাদের মধ্যে একেবারেই কিছু নাই — এটা আমি কীভাবে বুঝব? আর আমাকে দিয়ে মদ খাওয়ানোর প্ল্যানটাও তো তাদেরই এসব কেন করছে তারা? তার যদি কিছু সিক্রেট থাকতে পারে, আমারো সিক্রেট থাক — সমস্যা কী?
সকালে নাশতার পর টিভি রুমে বেশ কিছু সময় আড্ডা দিলাম রেখা আজ কামিজ পড়েছে সাধারণত সে শাড়ি পরে তবে কামিজ পড়লে ওকে বেশ আকর্ষণীয় লাগে আমার কিছুটা কামভাব জাগল আমি তাকালাম আমার বউয়ের চোখে সেও তাকাল কিছুটা অবাক হলো হাসলো একটু মুচকি দুজনের মধ্যে এমন ইশারার বিনিময় আগে কখনো হয় নাই মনে হয় বা হতো শুরুর দিকে মনে পড়ছে না, তবে খুব উত্তেজনা হচ্ছে এরপর গোসল, খাওয়া নিজের রুমটা যেন গোপন দুনিয়া আমার হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে, সেটায় প্রবেশ করলাম নিজে নিজে একা থাকার একটা আসক্তি আছে এই আসক্তি আমাকে পেয়ে বসছে ধীরে ধীরে আর ডায়েরি লেখার এক সিক্রেট স্পেসে আমি প্রবেশ করে গেছি

 

সেখানে শুধু আমি আর আমার ফেলে আসা অতীত আমার ক্যাম্পাস, সেই ঢাকা, গ্রিন রোডের বাসা, দারুণ দুশ্চিন্তাময় রাজনীতির কাল, জলি, হাসনাত, নওশের, মুনিয়া, চিত্রা, হাজরা আরো কত বন্ধুর ভিড় সেই সব মুখচ্ছবি, ঘটনা, তাদের কথা বলা, জলির ইশারা, তার শরীরের বাঁকে বাঁকে আমার অবদমন, অলস সব দুপুরবিক্ষিপ্ত রাত, সমস্ত কিছু কনসিভ করে একা একা তাদের এই রোমন্থনের কালে একাকিত্ব আর আড়াল আমার অতি প্রয়োজন হয়ে উঠল গোসল করতে করতে জলির কথাই মনে হচ্ছিল সে আমাকে বলছিল, ‘আমার মনে হয় তুই লেখক হবি কারণ তুই ক্যারিড আউট হস না তুই সব কিছুর সঙ্গে থাকিস কিন্তু কোনো কিছুর সঙ্গে নিজেকে গুলিয়ে ফেলিস না তুই গুলিয়ে যেতে চাইলেও পরিস্থিতি তোকে আলাদা করে দেয়

 

জলির এসব কথা আমি কখনো মন থেকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবি নাই আমি ওর কথা বলার দিকেই তাকিয়ে থাকতাম ওর কথা শুনতে শুনতে অন্য কিছু ভাবতাম জলি আমার সমস্যাটা ধরে ফেলেছিল পরে আমিও অবাক হয়ে গেছি নিজের অদ্ভুত আচরণের খোঁজ পেয়ে আমি আসলেই একজনের কথা শুনতে শুনতে অন্য কোথাও যেন হারিয়ে যেতাম এটা যে একজনকে অবজ্ঞা করার শামিল তা বুঝতে পারতাম না বেশিরভাগ মনে করত আমি তাদের কথা শুনছি মনযোগ দিয়ে আসলে তো শুনছিলাম না যাই হোক, জলি বলার পর বিষয়টা থেকে বের হতে আমার অনেক সময় লেগেছিল তবে কখনো আমি লিখব তা মোটেই কল্পনাতেও ছিল না লেখালেখি আমার সঙ্গে যায় না হাসনাতের সঙ্গেও না সে প্রচুর কথা বলত জলি বুঝত প্রচুর কথা বলা লোকেরা লেখক হতে পারে না আরো অনেক কিছু এসব ভাবতে ভাবতে গোসল শেষ হলো রেখা দেখলাম গোসল করলেও শাড়ি পরে নাই সে কি আমার তাকানোটা ফলো করেছে? দুজনে খেতে বসলাম রেখা বলল আমাকে যেন কেমন দেখাচ্ছে আমি বললাম কই?

উহু, দেখাচ্ছে কিছুটা আলাভোলা দেখাচ্ছে

আমি একটু লজ্জা পেলাম হাসলাম, ওর দিকে তাকালাম সেও সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকাল রেখা আমার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের ছোট আমাদের পারস্পরিক আকর্ষণ এখনো আছে বলে মনে হলো হঠাৎ সে বলে উঠল, ‘কারো প্রেমে পড়েছ নাকি?’

আমি হা হা করে হেসে উঠলাম ধরেনের কথার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না কী বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না বললাম, ‘প্রেম মানে কী?’

সে হাসল, বলল, ‘প্রেম মানে চুল না আঁচড়ানো, হঠাৎ আনমনে হয়ে যাওয়া কী যেন একটা ভাবা

 

আমি বুঝলাম, বউ আজ বেশ ফুরফুরা মেজাজে আছে কী জন্য আছে কে জানে? রোকন সাহেবের সঙ্গে কিছু কী হচ্ছে তার? আরো এগিয়েছে বিষয়টা? আমাকে বলছে মানে আসলে নিজের কথাই বলছে? কিন্তু আমি কী খেয়াল করেছি রেখা উদাস হয়ে যাচ্ছে কিনা? এলোমেলো পোশাক পরছে কি না? কথা কম বলছে কিনা? আমি তাকে শুধু সন্দেহ করছি, কিন্তু খেয়াল করছি না আমি আবার তার দিকে তাকিয়ে বললাম, সত্যি কথাটাই বললাম, ‘আমার সকল প্রেম তো তুমিই, প্রেম না থাকলেও তুমি

শুনে হেসে উঠল রেখা কিছুটা লজ্জাও পেল মনে হচ্ছে

আর কে এই করোনায় প্রেম করবে বলো?’

কেন এখনই তো ডিজিটাল প্রেমের সময়

ডিজিটাল প্রেম করবেয়াং ছেলেমেয়েরা আমাদের বয়স চল্লিস পার হয়ে গেল আর আমি কাজ করি অর্থ নিয়ে, টাকা যার টাকা আছে কিন্তু টাকার কারবার করতে হয় না, ধরো তার প্রেম হতে পারে বউ থাকার পরেও কিন্তু আমার চাকরি তো টাকার হিসেব নিয়ে আমার আর সুযোগ কই?’

 

শুনে আবার হাসলো রেখা হসলে ওকে ভালো দেখায় খাওয়া শেষ হলো আমাদের রুমে গিয়ে সিগারেট খেয়ে শুয়ে ছিলাম রেখার কথাই ভাবছিলাম সে কিছু গোপন করতে চায় কিনা বুঝে উঠতে পারলাম না আমার এক ক্লায়েন্ট আছে যার বোন জামাই রোকনের বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার সেই লোকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে রোকন সাহেবের বিষয়টা লোকটা নিশ্চয় ছাত্রীটাত্রীর সঙ্গে করে বেড়ায় আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য অনেক ঘটনা আছে এরকম স্বেচ্ছায়অনিচ্ছায় নানা ঘটনা ঘটত বলে শুনেছিলাম শিক্ষকরা বাবা বা অভিভাবকের মতো এটা শুনলে অবশ্য হাসনাত হাসত এরকম একটা ফিউডাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এসব ভাব চাষ করতে হয় টিচাররা ছাত্রীদের কী ডাকবে, কী করবে বুঝে উঠতে পারে না বলে বাপের আসন নিয়ে বসে থাকে যাই হোক রোকনের খোঁজটা একবার নিয়ে রাখতে হবে সে আমাকে খেলে দিলে তাকেও আমার খেলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে সে যদি কিছু করে আমার বউয়ের সঙ্গে আর আমি চুপচাপ দেখে যাব তা হতে পারে না ফলে সেই ক্ল্যায়েন্টকে ফোন করে রোকনের বিষয়ে একটা কিছু করার ভাবনা মাথায় নিলাম 

যদিও গন্ধ পাচ্ছিলাম না সিগারেট খাওয়ার কারণে। কোনো একটা গন্ধ খুঁজছিলাম আমি রেখার চুলে, ঘাড়ে, চিবুকের কাছটায়।

লাকডাউন হলেও হঠাৎ করে যেন অনেক কাজের মধ্যে পড়ে গেলাম চাপা উত্তেজনা, লুকোচুরি খেলায় নেমে পড়লাম ঘুম আসছিল না বলে সিগারেট ধরলাম একটা সময়ে রেখা ঘরে ঢুকল ওর আঁশফলের মতো বুক দুটো চোখে পড়ল আমাকে সিগারেট খেতে দেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল তার আগে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এল শ্যামলী আর রাফা মনে হয় ঘুমাচ্ছে রেখার আচরণে কৌতুহল হলো সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে আমিও বিছানায় এলাম সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ধরল পোড়া তামাকের গন্ধে ভরা মুখের ভেতর তার মুখ ডুবিয়ে দিল জিব দিয়ে খুঁজে নিল আমার জিব গোল গেঞ্জির ভেতর হাত ঢুকিয়ে বুকে পেটে তারপর আমার শিশ্নে বুলাতে লাগল হঠাৎ কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি তার স্পর্শে যদিও গন্ধ পাচ্ছিলাম না সিগারেট খাওয়ার কারণে কোনো একটা গন্ধ খুঁজছিলাম আমি রেখার চুলে, ঘাড়ে, চিবুকের কাছটায় কিছুই নাকে আসছিল না

 

আমি তাকে ওপরে রেখে আরে নিচে নামতে থাকলাম ওর বুকের কাছে এসে মিষ্টি দুধের গন্ধ পেলাম রেখা তার বুকজোড়া আমার মুখে ঘষতে লাগল আমি তাকে জাড়িয়ে ধরে বিছানায় গড়ান দিলাম এখন আমি তার ওপরে রেখা এবার বিপরীত আচরণ করতে থাকল নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু আমি তাকে ছাড়তে চাইলাম না দুই হাত দিয়ে মাথার দুপাশে চেপে ধরে আমি তাকে লেহন শুরু করলাম আবেশে চোখ বুজে এল তার নিশ্বাস নিতে থাকল ঘন ঘন আমি নিজেকে চেপে ধরলাম তার উরু সন্ধিতে সেখানে অস্থিরতা রেখা কিছু বলছে না মুখে আবেশে জোখ বন্ধ করে আছে মুখে একটা কামভাব ফুটিয়ে তুলেছে ওর কিছুটা গোল নাকের পাটা পুলে উঠছে আমি বললাম, ‘কী চলে যেতে চাইছিলে কেন?’ রেখা হা হা করে হাসল

ওরা জেগে যাবে

আমি বললাম, ‘কিন্তু আমিও তো জেগে গেছি

তুমি তো জেগেই ছিলে

হু, জেগে ছিলাম না, জেগে উঠলাম

রেখা মিষ্টি হি হি শব্দের হাসি দিয়ে বলে সে আমাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল পাগলের মতো চুমু খেতে লাগল মাথার চুলে হাত বুলাল লুঙ্গিটা খুলে নিজেও সালোয়ার খুলে ফেলল এখন আমরা আধো ল্যাংটা আমি গেঞ্জি আর ওর কামিজ খুলে ফেললাম নিজের নগ্ন বুকে রেখার নগ্ন বুকের স্পর্শে তরঙ্গ বয়ে গেল আমরা দ্রুত তেতে উঠলাম ওর উষ্ণ শরীরে প্রবেশ করলাম আমি দ্রুত মেতে উঠলাম একে অন্যকে নিয়ে

 

এরপর রেখা চলে গেল আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম সন্ধ্যা নামার আগে উঠলাম ওরা কেউ বাসায় নেই তার মানে সবাই চা খেতে গেছে আমি নিজে লাল চা বানিয়ে রুমে গিয়ে ডায়েরিটা দেখতে থাকলাম কী লিখেছি মনে হলো এখনো কতকিছু লেখা বাকি লিখতে কষ্ট হয় তারপরও লেখা ছেড়ে উঠলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল যেন লেখাটা আমার ভেতর অন্য কেউ যে আমাকে চরিয়ে বেড়াচ্ছে সন্ধ্যা হতে হতেই ওরা চলে এল এসে রেখা বলল, আমি চাইলে আজ আবার যেতে পারি রোকন সাহেবের বাসায় আমি হাসলাম মনে মনে বললাম, বাহ তাহলে তো বেশ ভালোই দুজনে বেশ যোগাযোগ আছে সন্ধ্যার পর কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না এমন সময়ে রোকন ফোন দিলেন আমিও রাজি হয়ে গেলাম

 

তার বউবাচ্চা এখনো ফেরেনি কবে ফিরবে ঠিক নেই তার বাসায় গিয়ে আমি বসতে বসতে সব সাজানো হয়ে গেল তিনি ঢালতেও দেরি করলেন না আজ নতুন বোতল আগেরটা একাই শেষ করে দিয়েছেন তিনি আমার উছিলায় নাকি তিনি বেশি বেশি মদ খাচ্ছেন রেখাই নাকি তাকে বলেছে আমাকে মদ খাওয়াতে, আড্ডা দিতে বাহ, বেশ ভালোই তাহলে, ভাবলাম আমি রেখা রোকন সাহেবকে খুব পছন্দ করেছে সেটা নিশ্চিত হওয়া গেল সে চায় আমিও রোকন সাহেবের মতো হই গুড গুড  প্রথম পেগটা দ্রুতই শেষ হলোতারপর আমি বললাম, ‘বাহ আপনাদের তো বেশ ভালো বন্ধুত্ব হলোরোকন হাসলো বললো, ‘আপনি খুব লাকি, রেখা খুব ভালো জানি আমার সঙ্গে বন্ধু হয়েছে বলা যাবে নাতবে কথা হয় আরকি

 

আমি আর কিছু বলালম না ভাবলাম চুপ করে থাকাটাই ভালো আমি যে সন্দেহ করছি তাদের আর আমার সন্দেহ যে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে সেটা এখনই বুঝতে দেওয়া যাবে না আমি অন্যভাবে রোকনকে ধরব এখানে আসার আগে আমি তার ফেসবুক ঘেঁটে এসেছি আমি তাকে পলিটিক্যালি ধরব সে সবসময় সরকারের সমালোচনা করে আসছে তার দেখলাম প্রচুর লাইক তা শালা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররা দেখা গেল লাইক না দিলে নম্বর দেয় না এদের কোনো বিশ্বাস নাই আর এখন তো এমন অবস্থা যে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লেখলে প্রচুর লাইক এটা একটা কৌশল লাইক পাওয়ার যেন এসব লাইকাররা তাদের চাঁদে পৌঁছায় দেবে এসব ট্রেন্ডের মধ্যে আমি কখনো ছিলাম না

 

বাংলাদেশের পরিবর্তিত বাস্তবতা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে দলের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম নতুন প্রজন্ম আর মনে রাখছে না যেমন এই লোকটা ফেইসবুকে তাকে আমি দেখলাম সে নুরুল হক নুরদের সমর্থক তার হয়ত ধরণাাও নাই কারার এই নুরু বিষয়ে আমার বস কবির হোসেনের মূল্যায়নটা ভালো এক সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন বামের লোকজন সমাজ বিশ্লেষণটা ভালো বুঝতে পারে তার মতে, নুরুল হক নুররা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি থেকে উঠে আসা না আবার তারা কেন্দ্রও না তারা প্রন্ত ঘেঁষা একটা জনগোষ্ঠি থেকে উঠে আসা এদের মূল ইনকাম সোর্স রেমিট্যান্স, কৃষি, ছোট ব্যবসা এদের তেমন সাহিত্যিক ফিগার নাই তাদের একমাত্র হিমালয় চূড়া সরকারি চাকরি সেটা চাইতে গিয়ে তারা এখন রাজনীতি করছে কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস, কত ঘটনা এসব সম্বন্ধে এদের ধারণা নেই মুখস্ত বিদ্যা আছে ফলে এরা কখনো আওয়ামী লীগের মর্ম বুঝতে পারবে না সেই নুরদের প্রশ্রয় দিচ্ছে আরো অনেকের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোকন সাহেব এটা খুব সহজ ব্যাপার না দেশ বামদের আর আওয়ামী লীগদের ছাড়া বাকি সব দল ফ্রম নো হয়ার বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে আমার বস এসব বলেন তার মুড খুব ভালো থাকলে

 

তিনি বলেন, অবশ্য জামায়াতও ছিল এদেশে অনেক আগে থেকে কিন্তু জামায়াত তো হেরে গেছে একাত্তরেই তার রাজনীতি এখানেই শেষ তবে নুরুল হকদের মধ্য দিয়ে জামায়াতের বাচ্চারা টিকে থাকবে যে লাড়াইটা বিভিন্ন সময়ে থেমে থেমে হয়েছে জামায়াতের বিরুদ্ধে, সেই পল্টনে, শাহবাগেসেসব আর হবে না জামায়ত তেলাপিয়ার মতো বেড়ে উঠবে অল্প পানিতেই

 

এসব বলার পর তিনি আবার তেলাপিয়ার গল্প করতেন জানেন তো তেলাপয়িা দেশে কে এনেছে? পাকিস্তান আমাদরে দেশের মানুষ তো যেকোনো বিষয়ে খুব কৌতুহলী হয় তো তারা দেখল যে এক প্রজাতির মাছ এসেছে সেগুলো খুব দ্রুত বাড়ে অল্প পানিতেই হয়ে যায় জামায়াত রকম কোথাও কোনো জায়াগা পেলেই বেড়ে উঠবে তা কোথায় যেন ছিলাম এতক্ষণ আমরা?

 

তখন আবার আমাদের মনে করিয়ে দিতে হয় আমরা কোন বিষয়ে ছিলাম তিনি তখন আবার সূত্র ধরেনহ্যাঁ এই যে নুরারা, আমি একে নুরাই বলব নুরারাও নাকি এদেশে রাজনীতি করবে আপনারা ইউরোপআমেরিকায় যান, সব জায়গায় দুই দল  নতুন কেউ সেসব দেশে মনযোগ কাড়বে এটা অসম্ভব ঘটনা অথচ আমাদের এখানে তা ঘটছে কারণ হলো সেই যে এদেশে মানুষ কিছু একটা পেলে সেটা নিয়ে মেতে থাকে এটা হলো চিন্তার প্রিমিটিভ অবস্থা যে কারণে কেউ আসলে তাকে নিয়ে বেশ লাফালাফি শুরু হয়ে যায় আগে পরে কী হবে সেটা নিয়ে আর ভাবে না তারা

 

আমরা তার কথা শুনে যাই বস বলে না, তার কথা শুনতে অন্তত আমার ভালো লাগে দৃষ্টি পরিষ্কার হয় অনেক কিছু জানা যায় তিনি বলেন, ‘নুরারা হলো মধ্যপ্রাচ্যের টাকায় বড় হওয়া মানে তাদের বাপভাইরা টাকা পাঠায় তারা পড়াশোনা করে সত্তরআশিনব্বই পার হয়ে যে নতুন সময় এসেছে তখনকার মানুষ এদেরে কাছে একাত্তরের গুরুত্ব কম যে কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল নিয়ে এদের মনোকষ্ট হয় না এদেশ থাকবে, মুক্তিযুদ্ধ থাকবে, তার পক্ষবিপক্ষ থাকবে সব সময় থাকবে নতুন এই একদল ছেলে এসে সব নষ্ট করে দিচ্ছে

 

সেই নুরুদের পক্ষ নিচ্ছে এই রোকন লোকটা তাকে রাজনৈতিকভাবে ধরার জন্য আমি একটু ক্ষেপে উঠলাম দ্বিতীয় পেগে চুমুক দিয়ে কিছুটা কটাক্ষ করে বললাম, ‘ভাই তো দেখি ফেইসবুকে খুব অ্যাক্টিভ।

হা, তা কী করবো বলুন, মাথায় নানা চিন্তা আসে লিখে ফেলি

আপনি দেখলাম নুরদের সমর্থক

নুররা খারাপ কী? ওরা কথা বলছে বলুক না

কিন্তু ওরা তো ধরেন এই যে সফট জামায়াতদের আশ্রয়স্থল

সফট জামায়াত মানে?’

এই যে ধরেন যারা কঠিনভাবে জামায়াত না কিন্তু জামায়াতি ধারণা, মত, কালচারে বিশ্বাস করে তাদের একটা সংগঠন

আপনার কথা আমি বুঝতে পারলাম না আচ্ছা ধরেন দেশে তো জামায়াত আছেই এখন আপনি তাদের কী করতে চান?’

আমি চাই এরা চিহ্নিত হোক সবাই বলুক এরা স্বাধীনতাবিরোধী, এরা দেশের শত্রু

এটা কি চলতেই থাকবে?’

হা, থাকবে

তো নুরদের সমস্যা কোথায়?’

তারা জামায়াতের লোকদের গ্রহণ করে নিতে বলবে

তাইলে তারা কি করবে, চুপ করে থাকবে? ভোট হবে না জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, সীমান্তে মানুষ মরবে, তারপরও সবাই চুপ করে থাকবে?’

চুপ করে থাকবে কেন, প্রতিবাদ করবে তবে তাদেরও তো বুঝতে হবে দেশটা এতদিন একভাবে চলেছে এখন একটা স্ট্যাবল সরকার থাকলে এসব সমস্যা চলে যাবে তাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে

 

শোনেন, আমি আপনাকে বলি আমি যদিও শিক্ষক কিন্তু শিক্ষা নিয়ে আমার অত এটাকে কী বলে, ধরেন অথরিটারিয়ান কোনো অবস্থা নাই মানে শিক্ষাকে আমি অথরিটি মানি না আপনার সামনে কেউ একজন আসলো, আপনি দেখলেন লোকটা ভদ্র, মার্জিত শিক্ষিত সে কিন্তু তখন আপনাকে কী বলে এক্সপ্লেয়েট কী করে করতে হয় সেগুলো কিন্তু জানে সে তখন আপনাকেই এমনভাবে কিছু একটা বলবে যে আপনার স্বার্থের বিরুদ্ধেও যদি সেটা যায় তখন বুঝতে পারবেন না শিক্ষিত মানে আপনার চেয়ে যে আরেকজন শিক্ষিত তাকেই কিন্তু আপনি ঠিক বলে মানতে চাইবেন কিন্তু যে শিক্ষিত না তার চলনেবলনে অশিক্ষিত ব্যাপারটা রয়ে গেছে, তার কথা আপনি মানতে চাইবেন না তাকে লিডার মানতে চাইবেন না এখন নুরদের যে জেসচার সেটা যাকে বলে আমাদের লোকাল জেসচার, অশিক্ষিত, অভদ্র, অপরিশীলিত মনে হবে যে কারণে আপনারা তাকে মেনে নিতে পারেন না আপনি মার্কসবাদ বলতে কী বুঝেন? মার্কস বলছেন, নিপীড়ি, বঞ্চিত, শোষিত, শ্রেণির কথা এরা তো হলো সেই শ্রেণি শ্রমিক শ্রেণির লোক এদের মাবাবা কৃষিকাজ করে বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এদের ভাইরাবোনরা গার্মেন্টসে চাকরি করে এখানে এরা হলো মার্কসের সেই শ্রেণি এরা তো কথা বলবেই আপনার নির্ভরতা হলো কৃষি, পোশাক, রিমিট্যান্স —তো সেই শ্রেণির চাপ আপনি নিবেন না? ফ্রম নো হোয়ার তারা নিজেদের অরগানাইজ করেছে আর এখানে সামাজিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা যে শ্রেণির মানে আমরা মধ্যবিত্ত যাদের ছেলেমেয়েরা ভাবে যে, আমার তো থাকাখাওয়ার সমস্যা নাই তাহলে যাই একটু শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে, বঞ্চিতদের পক্ষে রাজনীতি করি, পার্টি করি কিন্তু এর ফলাফল কী? কন্তিু এর ফলাফলটা কী? ফলাফল শূন্য এখানে আমরা সেই শিক্ষত এলিটদের দ্বারা প্রবঞ্চিত সেখানে ওরা দাঁড়িয়েছে

 

রোকনকে আমার কিছুটা উত্তেজিত মনে হচ্ছে তিনি একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন গোটা সিগারেট তার খাওয়া হচ্ছে না বেশিরভাগটা ছাই হয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে তিনি মাথাটা আবার অ্যাশট্রেতে রাখছেন তারপর নতুন সিগারেট ধরাচ্ছেন কখনো সিগারেটটাকে নিজের মুখের কাছে আনছেন কখনো নিজেই হাতে ধরা সিগারেটের দিকে এগিয়ে গিয়ে সেটা টানছেন তারপর মুখ হা করে ধোয়া ছাড়ছেন সিগারেটের ধোয়া এরপর ফ্যানের বাতাসে মিশে চড়িয়ে পড়ছে আমি তার উত্তেজনা দেখে যাচ্ছি

 

শোনেন আর যদি রাজনীতির কথা বলেন, তাইলে আপনাকে বলি কয়েকদিন আগে আমি একটা টিভি সিরিয়াল দেখছি হোয়াইট হাউসের রাজনীতি নিয়ে সেখানে ডেমোক্র্যাটদের জয় হয়েছে নতুন প্রেসিডেন্ট আসছে তারই এক কংগ্রেসম্যান ভাবছিলেন তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হবে কিন্তু করা হলো অন্যজনকে সেই থেকে ওই কংগ্রেসম্যান ক্ষেপে গেলেন তিনি সরকারের ভেতরে আরেক স্বতন্ত্র সংস্থা তার পক্ষে লোকজন জোগাড় করলেন এরপর সরকার প্রধান মানে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল, তার সরকারের প্রথম একশ দিনে শিক্ষা বিল তৈরি হবে সেই শিক্ষা বিলও আরেকজনকে স্যাবোটাজ করে সেই কংগ্রেসম্যান বাগিয়ে নিলেন সে জন্য তিনি ব্যবহার করলেন মিডিয়াকে তারপর তার নেতৃত্বে শিক্ষা বিল তৈরি হয় কিন্তু এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় শিক্ষকেরা

 

তখন সেই কংগ্রেসম্যান নিজ বাসায় পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা সাজিয়ে দোষ দেয় সেই শিক্ষকদের আন্দোলনকে এরপর সেই শিক্ষকনেতা কংগ্রেসম্যান টকশো করে টকশোতে কংগ্রেসম্যান কী কী সব বলে একটা হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করে যা অডিয়েন্স আন্দোলনরতদের ডিজমেন্টাল করে দেয় এরপর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কংগ্রেসম্যান দেখা করেন।’

সে কারণে বলছি, নুরদের রাজনীতি করতে দেয়া আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী না ওরা অবশ্য কতটা পারবে সেই প্রশ্ন আছে কিন্তু তারা এখনো দেশের প্রতিষ্ঠিত মেকানিজমের সঙ্গে সমঝোতা করে উঠতে পারে নাই

প্রেসিডেন্ট তাকে বলেন, শিক্ষা বিল সংশোধন করতে কিন্তু তিনি বললেন, আন্দোলনের মুখে বিল সংশোধন করলে সরকারের পরাজয়, আন্দোলনকারীরা আশকারা পেয়ে যাবে, দেখুন রাজনীতি কিন্তু এমন কোনো ব্যাপার না যে জনস্বার্থ সর্বাগ্রে থাকবে এবং তাতে ওই প্রেসিডেন্টের সায় দেন পরে এক স্কুলছাত্র মারা গেল এখানেও মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে সেই কংগ্রেসম্যান ছাত্রের মৃত্যুটাকে ক্যাপিটালাইজ করলেন এতে সেই আন্দোলনকারীরা মানে শিক্ষকরা ভড়কে গেলেন শিক্ষকরা কী চান? তারা গায়ে রক্ত লাগাতে চান না সফেদ থাকতে চান সেই শিক্ষকনেতা এরপর কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন একান্তেশিক্ষকের ইমেজ চির সততার ইমেজ তারা অসততা দেখলে খেপে যান একান্ত বৈঠকে কংগ্রেসম্যান শিক্ষকনেতাকে ইচ্ছে করে খেপিয়ে তুললেন শিক্ষক নেতাটা ছিলেন রগচটা স্বভাবের তিনি ঘুষি মেরে বসলেন কংগ্রেসম্যানকে তার মুখ কেটে রক্ত পড়তে লাগল এবং কতটা চতুর সেই কংগ্রেসম্যান দেখুন তিনি বলছেন, আমি কাউকে বলব না আমাকে মারার কথা যদি তুমি ধর্মঘট তুলে নাও

 

বোঝেন অবস্থা এবং এরপরের দৃশ্য হল, সেই রক্ত গায়ে মেখেই লোকটা তার বউয়ের সঙ্গে সিগারেট খাচ্ছে এখন রাজনীতি বলতে যা চোখের সামনে দেখেন সেটাই সব না ভেতরে অনেক ঘটনা থাকে সেসব ঘটনা আপনাকে নিজের দেখার ক্ষমতা দিয়ে দেখে নিতে হবে সে কারণে বলছি, নুরদের রাজনীতি করতে দেয়া আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী না ওরা অবশ্য কতটা পারবে সেই প্রশ্ন আছে কিন্তু তারা এখনো দেশের প্রতিষ্ঠিত মেকানিজমের সঙ্গে সমঝোতা করে উঠতে পারে নাই তারা ক্ষমতাবানদের জন্য একটা সমস্যা কিন্তু আমাদের জন্য না, আমরা একই সমাজের আমাদের আর ওদের মধ্যে যে বিরোধ তা জিইয়ে রেখে সুবিধা নেবে ক্ষমতাসীনরা তারা মার্ক্সের সেই প্রলেতারিয়েত না আবার লুম্পেনও না তারা একটা বারগেনিং ফোর্স তাদের কথা বলতে দিলে অন্তত কথা বলার পরিবেশটা তৈরি হবে তারা তো বলছেই যে আওয়ামী লীগই তারা মূলত কিন্তু কথা বলতে চায় সেই ছেলেটাকে মেরে মেরে আপনারা বিরোধী দল বানিয়ে ফেলছেন আপানার এমনই তিলকে পেটাতে পেটাতে, বলতে বলতে তাল বানিয়ে ফেলেন, অধৈর্য করে ফেলেন

 

অনেকক্ষণ কথা বললেন তিনি মদ খেলেন, সিগারেট টানলেন, মাঝে মাঝে মেসেজ আসছিল। কিন্তু দেখছিলেন না কার মেসেজ কথা শেষ করে উঠে বাথরুমে গেলেন আমি তাকিয়ে থাকলাম তার যাওয়ার দিকে, শূন্য দেয়ালের দিকে, জমে যাওয়া অ্যাশস্ট্রের দিকে, মদের বোতল, গ্লাস, বাদাম, ঘরে চলতে থাকা টিভি, ফ্যান, অল্প একটা আলো জ্বলছে ঘরে, আমার মাথা টলছে টুংটুং করে আবার মেসেজ আসছে তার কে মেসেজ করছে? রেখা নয়তো! হয়তো তারা আমার সামনেই আমাকে আড়াল করে পরকীয়ার মজা নিচ্ছে নিজের অজান্তে মুখে একটা হাসি চলে এলো মাথাটা হেলে গেল রোকন লোকটাকে আমার হিপোক্র্যাট মনে হল নিজে একজন শিক্ষক হয়ে বলছে, শিক্ষকগিরি তার পছন্দ না তিনি আবার ফিরে এলেন ঘরে মুখে একটা মুচকি হাসি আমার মনে হল সেটা হাসি নয়, আমার জন্য তৈরি করে রাখা ধারাল ছুরির ফলা

 

পড়ুন ।। কিস্তি : ৪

অন্যমনস্ক দিনগুলি ।। কিস্তি : ৪

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here