উপন্যাস ।। অদিতি ফাল্গুনী ।। সংবেদ
অদিতি ফাল্গুনী অনেকটা ডকুফিকশনের ভঙ্গিতে লিখেছেন ক্রমাগত হত্যার সেরেনাদে। সমকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার একটি ফিকশনাল দলিল এই উপন্যাস। ধর্মচিন্তা বনাম মুক্তচিন্তা, লেখক-ব্লগার হত্যাকাণ্ড, রাষ্ট্র ও ধর্ম প্রভৃতির সংঘাতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের মুখশ্রী স্পষ্ট করেছেন অদিতি। প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে ইসলামি খিলাফতের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও প্রসঙ্গ, মধ্যযুগের ইউরোপের চার্চ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক। মূলত বিগত এক-দেড় দশকে বাংলাদেশ তৈরি হওয়া বিভীষিকাময় রক্তক্ষয়িত বাস্তবতার বিবরণ এই উপন্যাস। কিন্তু বাংলাদেশে স্থিরীকৃত থাকে নি অদিতির পটভূমি।
এই উপন্যাস আমাদের দেখিয়ে দেয়ে সভ্যতার খুন ঝরা ইতিহাস। ফুলের দোকানের সামনে খুন, রাস্তায় খুন, বাড়িতে খুন, ধর্ষণ, জখম, কতল — এরকম একটি পর্ব খুব ঝাঁকি দিয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ভিত্তি ধরে। সম্ভবত ধর্মকেন্দ্রিক একটি মনস্তাত্ত্বিক বিভক্তি সংগোপনে ঘাপটি মেরে বসে আছে, যার এক পাশে ধর্ম, আরেক পাশে ধর্মহীনতা — অনেকটাই গন্তব্যহীন লড়াইয়ের মতো। এই লড়াই যতো না বুদ্ধিবৃত্তিক বা মতাদর্শিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কানাগলির দিকে ধাবমান লড়াই। লেখক হিসেবে মতাদর্শিকভাবে অদিতি কোন পথ বেছে নিয়েছেন, সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই উপন্যাসে বাস্তবতা বয়ান ও নির্মাণের পদ্ধতি। আমরা আগেই বলেছি অদিতি প্রামাণ্য উপন্যাস গড়ে তুলেছেন; সে কারণে প্রত্যক্ষ ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ এবং একদম সমকালীন ঘটনাকে হাজির করেছেন উপন্যাসে। তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন পত্রিকার নথি, কবিতা, দার্শনিক উক্তি ইত্যাদি। এই সমাবেশ পাঠককে একটি সময় থেকে নিয়ে যায় অন্য একটি সময়ে, ঐতিহাসিক সময়ের সঙ্গে মিলন ও বিচ্ছেদের ভেতর দিয়ে পাঠক চিনতে পারেন সমাকালীন বাংলাদেশের একটি ভয়াল পর্বকে।