কবিতা ।। রথো রাফি ।। আনন্দম
আমাদের পাঠাভ্যাসে অক্ষর ও বালির পৃথিবীর মতো কবিতার বইয়ের নজির খুবই কম। বাংলায় এরকম আকার, আয়তন ও বিস্তৃতির কবিতার বই বের হয় না। রাফির বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৩২। নিশ্চিতভাবেই ব্যতিক্রমী প্রকাশনা। কারো কারো মনে হতে পারে, রথো রাফির বইটি বুঝি কবিতা নয়, কাব্যগ্রন্থেরই সংকলন! আদতে হয়তো তা-ই। ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ কালপর্বের, অর্থাৎ দুই দশকের কবিতা সংকলিত হয়েছে বইটিতে। এক মলাটের ভেতর আছে সাতটি ভাগ; প্রতিটি ভাগে ছড়িয়ে আছে নানা রকমের কবিতা – দীর্ঘ, হ্রস্ব, টানা গদ্য, ফিকশনাল, লিরিক্যাল, ডায়ালজিক্যাল ইত্যাদি। কখনোবা কনফেশনাল কবিদের মতো লেখা কবিতা, কখনোবা দেখা দিয়েছে প্রতীকময়তা, কখনোবা মৃদু দার্শনিক উচ্চারণের কবিতা। চকমপ্রদ বই অক্ষর ও বালির পৃথিবী আলাদা মনোযোগ দাবি করে।
রাফিকে মনে হয় অন্তর্মগ্ন কবি। তাঁর মগ্ন চোখ ধীরস্থির, চকিত চমকে কম্পমান নয়। যেন পরিপার্শ্বকে দেখছেন মৃদু, মোলায়েম ও শান্ত দৃষ্টিতে। কুয়োয় উঁকি দেয়ার মতো করে তিনি যেমন নিজের ভেতরভাগ দেখেন, তেমনি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেন বিপুল আকাশ। সেই দিগন্ত দেশকালখচিত এক মানচিত্র যেখানে ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ, নিপীড়ন রাষ্ট্রখণ্ড ও ব্যক্তিমানুষ একাকার হয়ে যায়। ভাষা, শব্দ, অনুভূতি, দার্শনিকতা নিয়ে খেলার ঝোঁক আছে রাফির, যা তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয় সবার থেকে। কবিরা তুলে আনেন অভাবিত ভাবনাপুঞ্জ, চিত্র কিংবা চিত্রকল্প; রাফির রূপদক্ষ বয়ানে এর দেখা মেলে বারবার; যেমন বলেছেন, ‘সোনার করাতে কাঠ কাটে সে/ গাছ কি ব্যথা পায়!’ কিংবা ‘মানুষ তোমরা কী করে জুডাসের নিন্দা করো/ ঈশ্বরকে অনিন্দ্য রেখে!’ অক্ষর ও বালির পৃথিবী দিয়ে রথো রাফি দিয়ে স্থায়ী একটি ঘরই বাঁধতে পেরেছেন বলে মনে হয়।