৭. কবি ও কবিতার সন্ধানে

সাহিত্য-সমালোচনা ।। মোহাম্মদ আজম ।।  বাতিঘর

 

বাংলাদেশের সাহিত্য-সমালোচনা দুর্বল – এ কথা প্রায় আপ্তবাক্যের মতো সত্য হয়ে আছে। কিন্তু সে আপ্তবাক্য মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে সাম্প্রতিক কালের স্বল্পসংখ্যক সাহিত্য সমালোচকদের হাতে – মোহাম্মদ আজম তাঁদের একজন। সুস্পষ্ট তত্ত্বদৃষ্টি নির্মাণ এবং তার আলোকে ব্যাখ্যা করার ঝোঁক আছে আজমের। কবি ও কবিতার সন্ধানে বইটিতে দেখা মেলে আজমের এই বিশিষ্ট প্রবণতার। দশটি প্রবন্ধের এই সংকলনে বাংলা কবিতার পরম্পরাকে বোঝার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বাংলা কবিতার আধুনিকতাবাদী পাঠের সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করেছেন। প্রবন্ধগুলোর দুটি ভাগ। এক ভাগে আছে কবিতা সম্পর্কিত তাত্ত্বিক বিচার; আরেক ভাগে আছে ‘বিশেষভাবে’ বাংলাদেশের কবি বলে চিহ্নিত কবিদের কবিতার বিশ্লেষণ। কিন্তু সামগ্রিক আলোচনায় কোনো ভাগই পরস্পরকে ছেড়ে যায় নি। বরং পরস্পর সংগ্রথিত ও বিমিশ্রিত।

 

কবিতা আলোচনায় আজম প্রথাগত আধুনিকতাবাদী হাতিয়ার অবলম্বন করেন নি। প্রধানত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পাটাতন প্রস্তুত করে খানিকটা সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনাসূত্রে কবি ও কবিতাকে পাঠ করেছেন। উপনিবেশিত বঙ্গদেশের দুই ভাগের আধুনিকতা, জীবনযাপন ও কবিতার ইতিহাসের স্বতন্ত্রতা তাঁর আরাধ্য। জসীম উদ্দীন, ফররুখ আহমদ, শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদের কবিতা বিশ্লেষণের তাত্ত্বিক পটভূমি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আধুনিক সাহিত্য যেহেতু বিশুদ্ধত মধ্যবিত্তের আত্মিক প্রকাশ, সেহেতু দুই আলাদা মধ্যবিত্তের সাহিত্যপাঠ একই তরিকায় হতেই পারে না।’ মূলত এই অবস্থানই মোহাম্মদ আজমের কবিতা পাঠ ও বিশ্লেষণের চাবিকাঠি। বাংলাদেশে একাডেমিক সাহিত্য সমালোচনা সাধারণত তালিকাপ্রবণ – উপমা, রূপক, চিত্রকল্প আর কবিতার উক্তি অধ্যুষিত সমালোচনার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে তাঁর অবস্থান। বাংলাদেশের সাহিত্য সমালোচনার ইতিহাসে বইটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে নেবে বলে প্রত্যাশা করি।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here