৬. নির্বাচিত কবিতা ।। আহমদ ইলিয়াস

 অনুবাদ কবিতা ।। জাভেদ হুসেন ।।  প্রথমা

 

বাংলাদেশে খ্যাতি তাঁর কম, কিন্তু উর্দু কবিতার বিশ্বে খুব পরিচিত একটি নাম আহমেদ ইলিয়াস। বাংলাদেশের উর্দুভাষী কবি তিনি। জাভেদ হুসেন উর্দু থেকে অনুবাদ করেছেন আহমেদ ইলিয়াসের কবিতা। বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাসে এই সংকলন একটি মাইল ফলক হিসেবে প্রোথিত হলো বলে মনে করা যায়। উর্দু-বাংলার আপতা বৈরি সম্পর্ককে খারিজ করে দেয় জাভেদ হুসেনের উদ্যোগ। দীক্ষিত ও দৃষ্টিবান পাঠকমাত্রই জানেন বাংলাদেশে উর্দু ও ফারসি কবিতার রূপ-রস-সুন্দরকে উজাড় হাতে ঢেলে দিয়ে চলছেন জাভেদ। বাংলাদেশে উর্দু-ফারসি শের-শায়েরির সাকি তিনি। তাঁরই হাতে পরিবেশিত হয়েছে আহমেদ ইলিয়াসের কাব্যসুরা – নজম, গজল, শের, রুবাইয়াৎ ও কাতা।

 

ইলিয়াস কেমন কবি? এক কথায় : অসাধারণ রোমান্টিক। তিনি বলেন, ‘না আগন্তুক না পরিচিতি কেউ/ এই সব মুখ আমার আপন/ চোখের ঘুম কত মিথ্যা ছিল/ এই সব স্বপ্ন – কত সত্য।’ তাঁকে পড়তে গিয়ে জানতে হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ভঙুর মানচিত্রে ভেঙে গিয়েছিল তাঁরও জীবন। কলকাতা থেকে পাকিস্তানে এসেছিলেন ১৯৫০-এ। বিচিত্র তাঁর জীবনের পরিক্রমা। শেকড় গেঁড়েছিলেন এই বঙ্গদেশেই। অনেকেই জানেন না, আহমেদ ইলিয়াস বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল দীপ্র ও প্রখর। জাভেদ খুব চমৎকারভাবে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের যে বেহাল রূপ আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দেখতে পাই, সেই বাস্তবের সাপেক্ষে ইলিয়াস রোমান্টিক। কিন্তু নিজের কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি বলে দেন যে যত দিন এই রাষ্ট্র নামের কাঠামো যথেষ্ট রোমান্টিক হতে না পারবে, তত দিন মানুষের দুর্ভোগ উপশমেরও কোনো সম্ভাবনা নেই।’ ইলিয়াসের কবিতা পড়তে পড়তে ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের রক্তক্ষরণের ধ্বনিও শোনা যায়। আমরা এখন যাকে ‘পার্টিশন সাহিত্য’ বলে থাকি, তার নজির আহমেদ ইলিয়াসে কবিতা।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here