গবেষণা ।। প্রশান্ত ত্রিপুরা ।। সংবেদ
নৃবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় অনন্য একটি নাম প্রশান্ত ত্রিপুরা। এ বইয়ে বাংলাদেশের ঔপনিবেশিক চারিত্র্যটি বুঝতে চেয়েছেন তিনি; দেখিয়েছেন ‘ঔপনিবেশিক অতীত’ কী করে বর্তমানকে শাসন করে। আর এর ব্যাখ্যায় তিনি স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশে রাষ্ট্রের অতীত ও বর্তমান। বইটিকে তিনটি অংশে ভাগ করেছেন প্রশান্ত : ‘ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান ও আত্মপরিচয়’, ‘ভাষা, সংস্কতি ও সাহিত্যের আঙিনায় ঔপনিবেশিকতার ছায়া’ এবং ‘ঔপনিবেশিককতার উত্তর খোঁজায় ইতিহাসের বোঝা’; এই তিনটি অংশে ছড়িয়ে আছে অনেকগুলো প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ : আত্মপরিচয় কী? ঔপনিবেশিকতা, জাতীয়তাবাদ ও আত্মপরিচয়ের সম্পর্ক কী? কীভাবে অপরীকরণ ঘটে? রাষ্ট্রীয় আইন-নীতি-সংবিধান কী করে আত্মপরিচয়ের প্রশ্নগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে? বাংলাদেশে আদিবাস, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ইত্যাদি বিষয়ক প্রশ্ন ও বিতর্কের যৌক্তিক জবাব ও ভাষ্য উপস্থাপন করেছেন প্রশান্ত ত্রিপুরা। দরকারি তথ্য-উপাত্তের ব্যাখ্যা আমাদের নিয়ে যায় বাংলাদেশের ভিন্ন এক বাস্তবতায়।
প্রশান্ত ত্রিপুরার সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য বাংলাদেশের বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে বুঝতে ভীষণভাবে সহায়তা করে। তিনি লিখেছেন, ‘তথাকথিত মূলধারার বিভিন্ন উপস্থাপনায় আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত যে বাংলাদেশকে হাজির করা হয়, তা যে শুধু ঔপনিবেশিকতার ছায়াতেই ঢাকা, তা নয়, একই সাথে বর্তমান সময়ের প্রবল জাতীয়তাবাদেও মোড়া থাকে। এই প্রবণতার বাইরে যে বাংলাদেশের উপর এই গ্রন্থে আলোকপাত করার চেষ্ট করা হয়েছে, তা হল বহুজাতির, বহুভাষার এবং বহুসংস্কৃতির বাংলাদেশ।’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বয়ান – যা শুনতে পড়তে দেখতে অভ্যস্ত নয় জাতীয়তাবাদী চিন্তা দ্বারা অধিকৃত মন। প্রশান্তের বই সেই মনটিকেই দাঁড় করায় প্রশ্নের মুখোমুখি।