ইতিহাস ।। মহিউদ্দিন আহমদ ।। বাতিঘর
বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কালপর্ব ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫। এর এক প্রান্তে আছে নতুন রাষ্ট্রগঠন, আরেক প্রান্তে আছে রাষ্ট্রনায়কের হত্যাকাণ্ড; মধ্যবর্তী কাল জুড়ে আছে রক্তক্ষয় আর অন্ধকারের আড়াল। কোনো কিছুই যেন স্পষ্ট নয়। ৭৫-পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আরও বেশি অস্বচ্ছ লাগে এই পর্বটিকে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন এই পর্বটি বোঝা ছাড়া সম্ভবত পরবর্তী ইতিহাস বোঝা সম্ভব নয়। কেন একটি নতুন রাষ্ট্র রক্তক্ষয়ের দিকে এগিয়ে গেল? কেন হত্যা করা হলো রাষ্ট্রনায়ককে? কারা কীভাবে বপন করেছিল হত্যার বীজ? কেমন ছিল মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকার গঠনের প্রথম বছরগুলো? কেন দূরত্ব তৈরি হলো বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের? কেমন ছিল বামপন্থীদের ভূমিকা? কীভাবে বদলে গেলো আওয়ামী লীগের অন্দরমহলের রাজনীতি? – এমন অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন মহিউদ্দিন আহমদ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের পঞ্চাশ বছর হতে চলল। কিন্তু অনেক অনেক ঐতিহাসিক প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ মীমাংসা এখনও হয় নি। মহিউদ্দিন আহমদ অমীমাংসিত প্রশ্নগুলোর দিকে বরাবরই ধাবমান। বেলা-অবেলা বইটি আরেকটি নতুন সংযোজনমাত্র। এ বই লিখতে গিয়ে বিভিন্ন বই-পত্রিকা ব্যবহারের পাশাপাশি বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করেছেন। অত্যন্ত শ্রমসাধ্য এই বই। তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই বিশ্লেষণ এবং সেগুলোকে একটি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উপস্থাপন করা সহজ কাজ নয়। মহিউদ্দিন আহমদ একনিষ্ঠ গবেষকের মতো করে সেই কাজটি করেছেন। চমৎকার একটি কথা বলেছেন বইটির ভূমিকায়, ‘দৃশ্যমান রাজনীতির আড়ালে যাঁরা কলকাঠি নাড়েন, তাঁদের আসল চেহারা মঞ্চের উজ্জ্বল আলোয় সব সময় ধরা পড়ে না। নেপথ্যের চেহারাটা কদাচিৎ গণমাধ্যমে উঠে আসে।… ইতিহাসচর্চার জন্য এই আজানা দৃশ্যগুলো সামনে তুলে আনা জরুরি।’ মহিউদ্দিন দৃশ্যমান করে তুলতে চেয়েছেন আজানা দৃশ্যগুলোকে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম তিন বছরের ঐতিহাসিক উত্থান-পতন বোঝার জন্য এই বই প্রধান সহায়ক গ্রন্থ।