১. আমার দেখা নয়াচীন

স্মৃতি ।। শেখ মুজিবুর রহমান ।। বংলা একাডেমি

 

১৯৫২ সাল। বঙ্গবন্ধুর তখন তরুণ। বয়স মাত্র ৩২। এই তরুণের চোখে দেখা নতুন চিনের স্মৃতিলিপি আমার দেখা নয়াচীন। বঙ্গবন্ধু তখনও বঙ্গবন্ধু হন নি। তরুণ নেতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ১৯৫২ সালের ৯ই জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে বছরই ২ই অক্টোবর থেকে ১২ই আক্টোবর চিনের পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেখানে যোগ দেন। তাঁর দেখা দিনকয়েকের স্মৃতিলিপি আমার দেখা নয়াচীন। এ লেখা লিখেছিলেন বছর দুই পরে। তখন তিনি কারাগারে রাজবন্দি।

 

বঙ্গবন্ধুর সব বইয়ের মতো এ বইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথমত, বঙ্গবন্ধুর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লেখা বই যেকোনো অর্থেই ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে; দ্বিতীয়ত, তরুণ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয় মেলে এই লেখায়; তৃতীয়ত, চিন, কমুউনিজম, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর দেখা মেলে; চতুর্থত, পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানী শাসনের মূল্যায়ন পাওয়া যায়; পঞ্চমত, লেখক বঙ্গবন্ধুর নিঃসন্দেহে একজন চমৎকার পর্যবেক্ষক এবং দারুণ নিজস্বতামণ্ডিত তাঁর ভাষা। অন্ততপক্ষে এই পাঁচটি কারণে এ বই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আমার দেখা নয়াচীন বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতার ফসল। কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে থাকা প্রোপাগান্ডা সম্পর্কে সচেতন থেকে পরিবর্তিত চিনকে বিচার করেছেন তিনি। নিজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শের প্রতি কোনো অন্ধত্ব দেখা যায় না। বরং কমিউনিস্ট চিনের ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রশংসাবাক্য দ্বারা অভিষিক্ত করেছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক এই যে, বঙ্গবন্ধু চিনের ইতিহাস সম্পর্কে দারুণ সচেতন ছিলেন। সামন্ততন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদী শাসন, আফিম বাণিজ্য, স্বৈরতন্ত্র, মাও সে তুঙের বিপ্লব — সমস্ত বিষয়কে একটি সুতোয় তিনি বাঁধতে পেরেছেন।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here