ছোটগল্প ।। সাগুফতা শারমীন তানিয়া ।। প্রথমা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পোস্টমাস্টার’ গল্পের সমাপ্তি অংশ থেকে নেয়া নাম দ্বিতীয় ভ্রান্তিপাশ। সাগুফতা শারমীন তানিয়ার ছোট্ট বইটিতে আছে ষোলটি গল্প – জীবনের ষোলআনা গল্প যেন। তাঁর গল্প পড়ে সন্দেহ থাকে না যে, তিনি এক দীক্ষিত দর্শক; জীবনকে ছুঁয়ে ছেনে দেখার আকুল বাসনায় বর্তমান থেকে ফিরে যান আতীতে, অতীত পর্যটন শেষ আবার ঘুরে আসেন বর্তমানে। এমনকি বাদ থাকে না পুরাণের কল্প-পৃথিবী। কজন পারে এমনভাবে দেখতে? দারুণ গভীর থেকে দেখতে জানেন সাগুফতা। মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, অভ্যাস, প্রকৃতি, সম্পর্ক, স্মৃতি নানা কিছুর মিশ্রণে হয়ে ওঠে তাঁর গল্প। টানটান উত্তেজনা নেই, ঘটনার তীব্র তুমুল আকস্মিকতা নেই; কিন্তু গল্পের অন্দরমহলে আছে জীবনের টুকরো টুকরো গল্পের প্রগাঢ় আহ্বান।
খুব সূক্ষ্মভাবে, মন দিয়ে পড়তে হয় সাগুফতার লেখা। কারণ তাঁর ভাষা, সাংস্কৃতিক বয়ান, পাঠ ইত্যাদির প্রমাণিকতা গড়ে তোলে দীর্ঘ বাক্যের গড়ন-কাঠামো। ভাষা নিজেই যেনবা সৌন্দর্য হয়ে ফোটে। অনেকেই গল্প লেখেন, কিন্তু ভাষা তৈরি করতে পারেন খুব কমসংখ্যক লেখকই। সেদিক থেকে সাগুফতার আছে সিগনেচার ভাষাবৈশিষ্ট্য, আছে নিজস্ব বয়ানভঙ্গি। সে বয়ানে একজন মধ্যবিত্ত অধ্যয়নপ্রবণ স্মৃতিগ্রস্ত মন কথা বলে ওঠে। সে কারণে আদর্শ লিপি, দূরদর্শনে প্রচারিত রামায়ণ, হোমিও হল, উঠতি গ্রাম-শহর — আশির দশকের শেষ প্রান্তের মফস্বলি স্মৃতির এক নস্টালজিক ঢেউ আছড়ে পড়ে গল্পের পটভূমে। গল্পের এই স্মৃতিজাগানিয়া স্বরটিও সাগুফতার গল্পের বিশেষত্বের অংশ। এমন অন্তরঙ্গ স্মৃতিবিবরণ সমকালে খুব কম গল্পকারের হাতেই মূর্ত হয়ে উঠেছে। নব্বই দশক পরবর্তী বিশ্বায়িত ভুবনের বাসিন্দা হিসেবে সাগুফতা যথার্থ গল্প লিখতেই সক্ষম হয়েছেন। আর তাই তাঁকে দেখা যায় স্থানিক, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরিসরের কথক রূপে।