পরাগ চৌধুরি মূলত অনুবাদক। বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য অনুবাদ করেছেন বাংলায়। ভীষণ পড়ুয়া মানুষ তিনি। অভিজ্ঞতার ঝুলিও বিশাল বড়। এবার তিনি প্রবেশ করেছেন স্মৃতির অন্দরমহলে। স্মৃতি মানুষের বড় শক্তি। স্মৃতি ছাড়া ইতিহাস হয় না, স্মৃতি ছাড়া সাহিত্যও হয় না। পরাগ চৌধুরির এই স্মৃতিলেখা একই সঙ্গে স্মৃতি ইতিহাস ও সাহিত্য। চমৎকার তাঁর পর্যবেক্ষণ শক্তি, স্মৃতির বয়ান ছাপিয়ে গিয়েছে উপন্যাসের কাঠামোকেও।
আমার নানু কাপড় চোপড় সব গুছিয়ে নিতে বল্ল। ছোট মামার কলেজ খোলা। শীঘ্র ময়মনসিংহ পৌঁছাতে হবে। কিন্তু আগামী কাল নানুর ছোট বোনের আসার কথা। নানু বলে গাঙে গাঙে দেখা হয় বোনে বোনে হয় না। তাই দেখা হতেই হবে। ছোট মামার তাড়নায় আমাদের আগামী কালই বেরিয়ে পড়তে হবে। দুপুরের দিকে। যেতে হবে গরুর গাড়িতে। সেটা খুব মজার। মস্ত কাঠের চাকার একঘেঁয়ে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ কানে গুঁজে দুই ধারের দুলতে থাকা পাটক্ষেতের ঘেরাওয়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। বর্ষার বৃষ্টিতে খুবলে খাওয়া পথ খুব বেশি কষ্ট দিতে থাকলে ইচ্ছামতো গাড়ি থেকে নেমে পিছনে হেঁটে যাওয়া। মাঝপথে এক থুত্থুড়ে পাকুড় গাছের ছায়ায় থেমে কিছু খেয়ে নেবার ছলে গরুগুলোকে একটু শুয়ে জিরুতে দেয়া। তার আগে তারা পায় কুঁড়া পানি ও কিছু ঘাসের বকশিশ।
নাশতা খেয়ে ছোট মামা আর বাহলুল মামা ডালিম গাছের নিচে মোড়ায় বসে মাছ ধরার চার বানায়। বাহলুল মামা আগেই পিঁপড়ার ডিম কুঁড়া আর লালি জোগাড় করে রেখেছিল । শিরি খালা চাঙ থেকে দুইটা ডুলা নামায়। আজ আমাদের গাঙপাড় যাবার কথা। ভোত্তা শাক ঐদিকের ক্ষেতের আলেই বেশি জন্মায়। এমন সময় দখিন পাড়ার সবাই যাকে বুলা মাসি ডাকে সে হন্তদন্ত হয়ে এসে নানুর কানে কানে ফিসফিসিয়ে কিছু বলে। নানু লাইলাহা ইল্লাল্লা বলে ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে বড় নানুকে চোখে ইশারা করে। বুলা আর নানু তাড়াতাড়ি তাহের মামার ঘরের দিকে যায়।
শিরি খালা চুপচাপ সবকিছুই দেখে। কিন্তু ভান করে এদিকে তার নজর নাই। খুব অলস ভঙ্গিতে রান্নাঘরের বেড়ায় গুঁজে রাখা তিনটা ছেনি টেনে তোলে। বড় নানু ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে শিরি খালা আমাকে কানে কানে বলে, তামাশা দেখবি? গোপন তামাশা। আমার সাথে আয় জলদি। কয়েক দিন ধরে তাহের মামাকে রান্নাঘরের পাশের ফাঁকা জায়গাটায় বাঁশ চাটাই আর ছন দিয়ে একজন কামলাসহ একটা ছোট নিচুমতো ঘর বানাতে দেখেছি। নানুকে জিজ্ঞেস করায় বলল কেন বানায় তা সময় আসলেই জানবি।
শিরি খালার পিছনে ছুট দিয়ে ওদের উঠানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঐ ছোট ঘর থেকে কষ্টভরা চাপা গোঙানির শব্দ পাই। ভয় পেয়ে আমি পিছন থেকে খালার হাত টেনে ধরি। ঝটিতি হাত ছাড়িয়ে খালা বেড়ার ফুটা দিয়ে বন্ধ ঘরের ভেতরে প্রাণপনে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করে । তখন বারবাড়ি থেকে আসতে থাকা তাহের মামা হঠাৎ হাঁক দিয়ে ওঠে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কোত্থেকে ছুটে আসা বড় নানু খালার লম্বা বেনি ধরে টান দিলে উঁহু বলে খালা বেড়া থেকে সরে আসে। ভাগ্নির সামনে বড় নানুর এমন শাসনে অপমানে ও চুলের ব্যথায় খালার চোখে পানি এসে যায়।
চুলটুল আঁচড়ে পরিপাটি হয়ে এগিয়ে আসে পেয়ারা। জিজ্ঞাসু চোখে শিরি খালাকে দেখে। ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই জানে না সে। আমি তর্জনী দিয়ে চোখের নিচে আঁচড় কেটে তাকে অশ্রু দেখিয়ে কাজে মগ্ন বড় নানুকে দেখাই। পেয়ারা ডুলা তুলে নিয়ে শিরি খালাকে হাত ধরে টেনে তোলে। উঠানে নেমে ডান দিকে তাকিয়ে দেখি তাহের মামা একটা ছোট পুঁটুলি কাঁধ সমান উঁচুতে তুলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর বড় নানা মাথায় সাদা টুপি পরে দুই কানে আঙুল দিয়ে নিচু গলায় আজান দিচ্ছে। সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে আমারা ডালিম গাছের তলা দিয়ে বাইরে চলে আসি। ডান দিকে ঘুরে বড় রাস্তার জাম গাছের নিচের মাচায় বসি সবাই। জুৎ হয়ে বসে শিরি খালা সহজ গলায় বলে, ধুৎ আইজো মাইয়ার জন্য দেখতে পারলাম না । ভাবীর কোলে আবু কেমনে আইলো দেখতে চাইছিলাম। পেয়ারা চুপচাপ থাকলেও আমি বিজ্ঞের মতো বলি, এটা আবার দেখার কী আছে? জন্তুদের আবু যেমনে হয় তেমনে। শেষ। এইখানে বসে তোমার গোপন কথা বলার ছিলো। – : তুই একটা গাধা। একটা না তোরা দুইটাই গাধা। সেইদিন বাঁশ বাগানে যা দেখলি সেইটাই গোপন কথা। যেইটা কাউরে কওয়া যায় না। তোদের মাথায় গোবর ঠাসা। চল বেলাবেলি গাঙপার যাই।
হঠাৎ দেখা গেল আমাদের বাঁদিকে দূরে বড় রাস্তা ধরে একটা ধূলার ঘূর্ণি এদিকে এগিয়ে আসছে । ডানদিক ধরে আসছে রিকশা । আমরা তিনজনই ঝটিতি উঠে দাঁড়াই। এই ঘূর্ণির ভিতরে নাকি শয়তান থাকে। ঘূর্ণিটা কাছে আসার আগেই আমরা উঁচু বড় রাস্তার ঢাল বেয়ে দৌড়ে নাড়া ক্ষেতে নেমে পড়ি। দূরে গাঙ দেখা যায়। কিন্তু কয়েক কদম গিয়েই ঘাস ছাওয়া দুই আইলের সংযোগে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ি আমি । এখানেই আমি ডুবেছিলাম। বেশিদিনের কথা না। মাত্র গত বর্ষাতেই এইখানে আমার মৃত্যু হবার কথা ।
ভরা বর্ষায় এই ক্ষেতগুলি রাস্তা বরাবর পানিতে ডুবে গাঙের সঙ্গে একাকার হয়ে ঠিক যেন একটা সমুদ্র হয়ে যায়। তখন বড় রাস্তাটা কুমিরের মতো কোনওক্রমে নাক জাগিয়ে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে করতে শ্বাস নেয়। গত বর্ষায় আমি নানুর সঙ্গে কয়েক দিনের জন্য এসেছিলাম । উদ্দেশ্য কালেঙ্গা যাওয়া । মাঝেমধ্যে বাপের বাড়ি না আসতে পারলে আমার নানুর নাকি দম আটকে আসে। একদিন আমরা ও আউয়াল মামা সদ্য সমুদ্র হতে থাকা বন্যার পানিতে দামলানোর উদ্দেশ্যে হুড়োহুড়ি করে ঢাউস কাণ্ডওলা জাম গাছের নিচে পানিতে নামি।
একটু দূরে ছোট মামা আর বাহলুল মামা কামলাসহ নৌকা থেকে শুকনো রাস্তার উপর ধানের আঁটি নামাচ্ছে । আমার সঙ্গী তিন জনই সাঁতার জানে। আমি পানির নিচে মাথা ডুবিয়ে কোনওক্রমে দুই হাতে খামচে খিমচে
হাত দেড়েক হড়কে যেতে শিখেছি। কিন্তু উৎসাহে সবচে বেশি টগবগে হচ্ছি আমি। ওদের সঙ্গে বুক পানিতে একচোটে অনেকখানি হেটে দাঁড়াতে গিয়ে একটা গর্তের মধ্যে পিছলে পড়ি। তখন পানি আমার মাথার উপর দিয়ে বইছে। থই না পেয়ে নাকমুখ দিয়ে সমানে পানি সেঁধোচ্ছে পেটে। সঙ্গীরা সবাই পানিতে মহানন্দে দামলাচ্ছে। আমার হাপুস হাবুডুবু কেউ দেখতেই পাচ্ছে না। আমার পেট যখন পানি-ঢিমিস তখন নজর পড়ে আউয়াল মামার। সে সময় আমি পুরাই ডুবে গেছি। তার চিৎকারে বড় দুই মামা আমাকে উদ্ধার করে। তারপর ছোট মামার কাঁধে ঝুলে পানি বমি করতে করতে বাড়ি পৌঁছাই আমার সঙ্গীদের আনন্দ মাটি করে।
এর মাত্র দুই দিন পরে সন্ধ্যাবেলা উঠানের কোনার গাছ থেকে মায়ের জন্য সুপারি পাড়তে পড়ে গিয়ে আউয়াল মামা মারা গেল। কথা ছিলো সারাদিনের মধ্যে যে কোন একসময় এক বাদি সুপারি পাড়ার। কিন্তু ভুলে যাওয়ায় তিন সন্ধ্যায় মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করতে মামা সবার অজানিতে সুপারি গাছ বেয়ে উঠে পড়ে। সুপারির বাদি টেনে ছিঁড়ে নামার সময় শয়তান নাকি ধাক্কা দিয়েছিলো। তিনসন্ধ্যায় গাছে উঠলে শয়তান ক্ষেপে যায় । এই মৃত্যুর জন্য মামার মা নানু নিজেই নিজেকে দায়ী ঠাউরে নেয়। এরপর থেকে কেউ ধরে না আনলে সুযোগ পেলেই গোরখানায় চলে যেত। আউয়াল মামার কবরের পাশে ঘণ্টাকে ঘণ্টা কান্নাকাটি করতো। একটা গ্লানির ভেতর ডুবে ডুবে একসময় বর্তমানের সঙ্গে যোগ হারিয়ে আউয়ালময় জীবনে ঢুকে পড়ে নানু। লোকে বলে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই জ্বরের অছিলায় নানু চোখ মুদে জীবন পেরিয়ে তার আদরের ছোট ছেলের পাশেই বিছানা পাতে।
খালারা এগিয়ে গেলেও আমাকে থামতে দেখে আবার ফিরে আসে। শিরি খালা এক ঝটকা টানে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া আমাকে নিয়ে ছুট দিলো। কিন্তু আমি আজো জানি সেদিন আউয়াল মামা না দেখলে ওখানেই আমার জীবনান্ত হতো। ছুটতে ছুটতে একসময় আমারা সবাই দাঁড়িয়ে পড়ি। আইলের পাশে একটা ঝোপালো গাছ হলুদ সবুজ ছোট ছোট ফলে সেজে আছে। তাই দেখে পেয়ারা খালা ঝলমলিয়ে ওঠে : ট্যাপারি। ট্যাপারি। আহা কতো দিন পরে তোরে পাইলাম। পক্ষীয়ে দেখে নাই অখনো। খুব মজার। — বলেই হলুদ ফলগুলো দুই হাতে ছিঁড়ে টপাটপ মুখে পুরতে থাকে। দেখাদেখি আমিও একটা ছিঁড়ে মুখে পুরে স্বাদ বোঝার চেষ্টা করি। টক মিষ্টি রসময় বিচিসর্বস্ব পাখির আহার। তবে নানুর কাছে শুনেছি এদেশে আসা ইংরেজরা নাকি এটা দিয়ে জেলি বানিয়ে পাউরুটিতে মাখিয়ে খেত।
ফল খাওয়া শেষে আরেকটু এগোতেই গাঙপাড়ের হুল্লোড় শোনা গেল। শিশুরা মায়ের সঙ্গে পানিতে নেমেছে । আরেকটু বড়রা নিজেরাই একশো। তাদের পাড়া মাথায় করা হৈ চৈ থেকে একটু দূরে মনে হলো একটা নতুন বৌ একাকী একমনে কাঁসার থালাবাটি মাজছে। আমার গাঙে নামা নিষিদ্ধ । আমি না থাকলে মনে হয় দুই খালাও নেমে পড়তো। এখন দুইজন দুই বন্ধু খুঁজে নিয়ে বহুদিন দেখা না হাওয়া উসুল করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমি মা আর বাচ্চাদের শাসন-অবজ্ঞার চেঁচামেচির জঙ্গল থেকে একটু দূরে কাজ করতে থাকা নতুন বৌয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে তার কাজ দেখি ।
ভেসে ভেসে একটা ফুলসহ কচুরিপানা হাতের কাছে এলে বৌ ফুলটা ছিঁড়ে আলো পিছলে পড়া কাঁসার থালার উপর রেখে কচুরির ঝাড়টা মাঝগাঙের দিকে ঠেলে দেয়। ফুল রাখতে গিয়ে ঘোমটার ফাঁকে আমাকে দেখতে পায়। অচেনা মানুষ। হাত ইশারায় আমাকে কাছে ডাকে বৌ। কথায় কথায় আমার ইতিহাস ভূগোল জেনে নেয়। তার কথায় মমতা থাকলেও কন্ঠস্বর একটু পুরুষালি। তার বাম হাতের লালরঙা কাঁচের চুড়ির টুং টাং শব্দে তা ঢাকা পড়ে যায়। কথা বলতে বলতে ডান হাতের রূপার মোটা বালা একটা আর পায়ের খাড়ুজোড়া খুলে নিয়ে বৌ এবার গাঙের বালু দিয়ে তা মাজতে থাকে। শেষে পানিতে ধুয়ে নিলে গয়নাগুলো নতুনের মতো ঝকঝক করে ওঠে।
গাঙের ঐ পাড় দিয়ে একটা অলস জেলে নৌকা ভেসে যায়। মাঠের মাঝে কোথাও থেকে রাখালের বিরহব্যাথা ভেসে আসে গাঙপাড়ে। একটু পরে মায়েরা শিশুদের তাড়া দেয় পানি ছেড়ে উঠে আসার জন্য। পানিতে ডুব দিয়ে দিয়ে ওদের চোখ হয়েছে রক্তছুট লাল। এখন এদের কাঁদাকাটা উপেক্ষা করে টানাটানি করে তুলে আনতে হবে। বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। বৌ আমাকে বলে, যাও। চান কইররা বাইত যাওগা তুমার খালাজিগো লগে। আমিও যামুগা অহন। কাম শেষ। বেইট্টাইনরা গেলেগা আমিও দুই ডুব দিয়া ফিরবাম। ফুলডা আইজ তুমিই নেও। সুন্দর না? আমি পাইলেই ফুল ছিরি। বদভ্যাস ছারতারি না। — বলে মৃদু মৃদু হাসে নতুন বৌ। আমিও একটু হেসে ফুলটা এক হাতে ধরে আরেক হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে খালাদের কাছে ফিরে যাই।
আইলে উঠে আমরা দ্রুত হাতে নাড়ার ফাঁকে গজিয়ে ওঠা কালচে সবুজ রঙা ভোত্তা শাক তুলে ডুলায় ভরতে থাকি। শিরি খালা বলে, কিরে ঐ বেডা তরে ফুল দিলো আর তুই নিলি? ক বেডার লগে কী কী গল্প করলি? তরে খারাপ কিছু কয়নাই তো?
: না তো, খারাপ কিছু বলবে কেন? আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি কোন বাড়ির মেহমান। জানতে চাইলো ঢাকায় কী কী দেখার আছে। তার খুব ইচ্ছা ঢাকায় বেড়াতে যায়। শাঁখারিটোলায় তার এক মামা থাকে পরিবার নিয়ে। এইসব আরো কত কি।-
: তুই কি জানস ঐডা বেডা মানুষ। বেডি না।
: কি যে বাজে কথা তুমি বলো না খালা ।
: বাজে কথা না রে বেডি। তুই পেয়ারারে জিগা। বাইতে গিয়া তর পেয়ারের নানুরে জিগাইস। দেহিস কি কয়।
: আমি তো দেখলাম শাড়ি পরা। ওর হাতে চুড়ি পায়ে রূপার মল। লম্বা চুল ঘোমটা দিয়ে ঢাকা।
: তর মাথা দেখছস। অর আসল নাম বাপমায় রাখছে রাধামাধব সাহা। অরে জিগাইলে কয় রাধা সাহা। ছুডু ফুজির কাছে শুনছিলাম মার ঘরে জন্মাইছে বেডা হইয়া কিন্তু ওর বিশ্বাস ও একটা বেডি। মাইনষে তারে বেডা কয় কেরে সেইডাই সে বুঝে না। বাপমায় অনেক সাধু সন্ন্যাসী পীর মুর্শিদ তাবিজ কবচ দিয়াও ওরে বুঝাইতে পারে নাই যে ও একটা বেডা। মাইরধরও করছে শুনছি। কিন্তু কিছু কইররাই অর বিশ্বাস থাইক্কা অরে লরানি যায় নাই। শেষে অর অন্য ভাইবোন আর বাপমায় হার মানছে। তার কথাই মইন্না নিছে। অহন সে সবকিছুই করে বেডিগো মতন। একটা মানুষরে তো আর ফালাইয়া দেওন যায় না। কিন্তু অর লগে কেউই মিশে না। বেডারাও না বেডিরাও না। দেখছস না বেকের থাইক্কা দূরে একলা একলা কাম করে। গুছুল করে। বারির মানুষ ছারা কেউ তার লগে মিশে না । আমার খুবই কষ্ট হয় অর লাইগ্গা।
রাধার গল্প শেষ হতে হতে আমারা বড় রাস্তার জাম গাছতলায় পৌঁছে যাই। কিন্তু এই বেডাবেডির গোলমেলে বিষয়টার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারি না আমি। অবসরে নানুকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে। আপাতত দুই দিক থেকে আসা শাড়ি পেঁচানো রিকশা দুটোর মাঝখান দিয়ে রাস্তা পার হতে মনোযোগী হই আমি।