নগুগি ওয়া থিওঙ্গো সাহিত্য ও রাজনীতির দুনিয়ায় চেনা একটি নাম। তাঁর বিখ্যাত বই Decolonising the Mind: The Politics of Language in African Literature (1986)। ঔপনিবেশিক রাজনীতি, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বোঝার দারুণ প্রতিনিধি-পুস্তক এই বই। বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন শিবলী নোমান।
আফ্রিকান কল্পকাহিনির ভাষা
সাত
১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে পশ্চিম জার্মান ফেডারেল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জ জোসেফ স্ট্রাউস এক দাপ্তরিক সফরে পশ্চিম আফ্রিকার স্বাধীন প্রজাতন্ত্র টোগোতে এসেছিলেন। স্ট্রাউসকে এই সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন টোগোর রাষ্ট্রপতি ইয়াদেমা।১৩ উপলক্ষ? ১৮৮৪ সালের বার্লিন কনফারেন্স বাতিল ঘোষণা? এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পশ্চিম ইউরোপ ও আফ্রিকার সম্পর্ককে তৈরি করা যেখানে থাকবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সমতা? না! উপলক্ষটি ছিল টোগোর রাজা ৩য় এমলাপাকে একটি অসম চুক্তির মাধ্যমে টোগোকে জার্মান রাইখের রাজ্যে পরিণত করার শতবর্ষপূর্তির আয়োজন। এসময় রাষ্ট্রপতি ইয়াদেমা জার্মান রাজকীয় ঈগলের (নাকি আমেরিকান?) একটি ভাস্কর্যও স্থাপন করেন, ঔপনিবেশিকতার প্রতিরোধ নয় বরং ঔপনিবেশিকতার মাহাত্ম্যকে স্মরণ করে। গভর্নর জেনারেলের বাসভবনটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। আর এসবের জন্যে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল তার সবই নেয়া হয়েছিল টোগোর কৃষক ও শ্রমিকদের থেকে। আর এসবের ফলে যে ১৮৮৪ সালকে লাখ লাখ আফ্রিকান স্মরণ করে ঐতিহাসিক লজ্জার বছর হিসেবে, যখন থেকে শুরু হয়েছিল পশ্চিমের দ্বারা আফ্রিকার শতবছরব্যাপী অপমানের যুগের, সেই সময়ের মাহাত্ম্য উদযাপিত হলো একজন আফ্রিকান রাষ্ট্রপতির দ্বারা। একজন পশ্চিম জার্মান কলামিস্ট সরাসরি আসল কথাটি বলেছিলেন (দেখুন Nordbayerischer Kurier, ৬ জুলাই ১৯৮৪), ‘‘এটি মনে করা যেতে পারে যে স্ট্রাউস এবং তার নিমন্ত্রণদাতারা একই দৃষ্টিভঙ্গি লালন করবেন। এবং তাই হওয়া উচিত। স্মৃতিবিধুর ব্যক্তিরা ছাড়া আর কোন জার্মানের এই দোষানুভূতি লালনের প্রয়োজন নেই যে আমাদের ঔপনিবেশিক শাসন ছিল খুবই স্বল্পদৈর্ঘ্যের যার আর কোন চিহ্ন নেই।”১৪ সঠিক। ঔপনিবেশিকতার জন্যে জার্মান প্রচেষ্টা ছিল অন্যান্য ইউরোপিয়ান জাতির চেয়ে অনেক স্বল্পদৈর্ঘ্যের। সেটি কি মারকাস ক্লেভেনের জুলাই মাসের ‘উই জার্মান’ শীর্ষক মন্তব্য কলামে আরও বেশি স্মৃতিবিধুরতা ছড়িয়ে দিচ্ছিলো? ভুলটা আসলে পশ্চিম জার্মানির এই সাংবাদিকের নয়। টোগোর রাষ্ট্রপতির এই সামষ্টিক আত্মবিলোপের আত্মমর্যাদাহীন আচরণের পেছনে উপকূলীয় এলাকায় পশ্চিম জার্মান যুদ্ধজাহাজগুলোর কোন চাপ ছিল না। শুধুমাত্র ছিল সাহায্য হিসেবে মার্ক১৫ দানের মাধ্যমে আরও বেশি মার্ক মুনাফা আকারে টোগোর মানুষের থেকে বের করে নিয়ে আসার ব্যাপার স্যাপার। আর রাষ্ট্রপতি ইয়াদেমা অপেক্ষা করছিলেন তার ভাগ বা কমিশনের জন্যে।
আরও আরও অযৌক্তিকতা আছে। জায়ারের মবুতো১৬ আফ্রিকার সর্বোচ্চ যথার্থতা দেখাতে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে বহুগুণ বৃহৎ এক এলাকার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে একটি পশ্চিম জার্মান রকার কোম্পানিকে। আফ্রিকান নেতাদের একটি দল সম্প্রতি চাদে ফ্রান্সের সামরিক বাহিনী প্রেরণের অনুরোধ করেছে যেন লিবিয়ার ‘সাম্রাজ্যবাদী’ হুমকি থেকে ফরাসি স্বার্থকে রক্ষা করা যায়। পার্লামেন্টে কোন আলোচনা ছাড়াই কেনিয়ার মই১৭ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি গড়ার ইচ্ছায় সায় দিয়েছে। আর কেনিয়ানরা এই ‘গোপন’ সমঝোতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে মার্কিন কংগ্রেসে এক বিতর্কের পরই। যে কেউ এর চেয়ে অনেক বেশি অবিশ্বাস্য ঘটনা বলতে পারবেন। বলতে পারবেন শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড, সমানভাবে নির্মম গণহত্যা যা পরিচালিত হয়েছিল জনসংখ্যার একটি অংশের উপর স্থানীয় নেতাদের দ্বারাই যারা আসলে সংরক্ষণ করছিল সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ। আসল কথা হলো, নব্য-ঔপনিবেশিক জগতের মবুতো, মই বা ইয়াদেমারা মার্কিন অত্যাধুনিক বন্দুকের মুখে পড়ে সাম্রাজ্যবাদের কাছে জোরপূর্বক আত্মসমর্পণ করেননি। তাদের চিন্তাভাবনা আসলে ছিল একই রকম। তারা আসলে তাদের নিজেদের দেশগুলোকে নতুন করে উপনিবেশিত করতে আধুনিক ভবনে বাস করা নব্য-ঔপনিবেশিক গভর্নরদের কাছে হাতজোড় করছিলেন। তারা তাদের নব্য-দাসরূপী জনগণের নিয়ন্ত্রক হয়েই খুশি ছিলেন। তারা খুশি ছিলেন মার্কিন নেতৃত্বে তাদের দেশের অর্থনৈতিক রক্তক্ষরণের তত্ত্বাবধায়ক হয়েই।
কীভাবে একজন লেখক বা একজন ঔপন্যাসিক এই নব্য-দাসদের দেখিয়ে তার পাঠকদের ধাক্কা দিবেন যেখানে তারা নিজেরাই নিজেদের উঁচু গলায় নব্য-দাস বলে ঘোষণা করে? কিভাবে আপনি আপনার পাঠকদের এসব গণহত্যাকারী, লুটেরা, ডাকাত, চোরদের দিকে নির্দেশ করবেন যেখানে এসব জনবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীরা এসব ঘটনা লুকানোর চেষ্টাও করে না? যখন কোন কোন ক্ষেত্রে তারা শিশু হত্যাকাণ্ড বা জাতীয় সম্পদের চুরি বা ডাকাতি কার্যত ও গর্বের সাথে উদযাপন করে? কিভাবে আপনি তাদের দাবি ও কথাবার্তাকে ব্যঙ্গ করবেন যখন তারা নিজেদের কথা দ্বারা সকল কাল্পনিক অতিরঞ্জনকেই পেছনে ফেলেছেন?১৮
আমি যখনই কেনিয়ার নব্য-ঔপনিবেশিক বাস্তবতার ব্যাপারে ভাবছিলাম, তখনই আমি চিত্রায়নের কাল্পনিক ধরন বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কিন্তু একজন লেখক বা যে কোন লেখকেরই মাত্র একটিই অবলম্বন থাকে, তা হলো সে নিজে; সেসব চিত্র যা ভেসে বেড়ায় তার চিন্তায়, এসবই তার আশেপাশের বিশ্বকে প্রতিফলিত করে। চিন্তার রসায়নের ফলে এসব ভিন্ন ভিন্ন চিত্র, প্রতিফলন, ভাবনা, ছবি, শব্দ, অনুভূতি, দৃশ্যপট, স্বাদ ও সকল বোধ একীভূত হয়ে একটি গুণাত্মকভাবে আলাদা কিন্তু বাস্তবতার একক চিত্রকল্প বা চিত্রকল্পের সমষ্টি তৈরি করে।
কেনিয়াত্তা ও মইর অধীনে কেনিয়ার যে নব্য-ঔপনিবেশিক বাস্তবতা ছিল তার চিত্রকল্পের খোঁজে আমি আরও একবার ফিরে গিয়েছিলাম মৌখিক ঐতিহ্যের কাছে।
আট
সাহিত্যের ক্ষেত্রে ফাউস্ট১৯ থিমের প্রতি আমি দীর্ঘসময়ব্যাপী কৌতুহলী ছিলাম। এই থিমটি ইউরোপিয়ান সাহত্যে বিভিন্ন সময় ফিরে এসেছে, যেমন মারলোয়ের ফস্তাস, গ্যাটের ফাউস্ট, থমাস মারিনের ড. ফস্তাস এবং বুলগাকোভের মাস্টার অ্যান্ড মারগারিটা। কিন্তু আমার সবসময়ই মনে হতো যে পার্থিব সম্পদ, বুদ্ধি ও ক্ষমতা পেতে একজন ভালো মানুষের তার আত্মাকে শয়তানের কাছে সমর্পণ করার গল্পটি সার্বজনীন এবং এর শেকড় কৃষকশ্রেণির লোকবিদ্যায় প্রোথিত। বিভিন্ন জাতীয় ঐতিহ্যে এসবের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। সাহিত্য বিভাগে আমার সহকর্মী ওয়ুয়োর আনিউম্বা কেনিয়ার বিভিন্ন জাতীয়তার মৌখিক সাহিত্য নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন এবং আমাকে বলেছিলেন যে জাদুকর চরিত্র আছে এমন অনেক গল্প তিনি খুঁজে পেয়েছেন।
১৯৭৬ সালে বিভাগের আরেক সহকর্মী কাভেস্তা আদাগালার সাথে পশ্চিম কেনিয়ায় সফরের সময় আমি প্রথমবাবারের মতো ইদাখোর মানুষের আদলের পাথর দেখেছিলাম। এসব দেখে আমার সেই অনুভূতি হলো যেন আমি যা খুঁজে বেড়াচ্ছি তার খোঁজ পেয়েছি। লিমুরুতে ফিরে আমি একশ পৃষ্ঠার বেশি লিখেছিলাম। শিরোনাম? ডেভিল অন দ্য ক্রস, কিন্তু এটি লিখেছিলাম ইংরেজিতে। ১৯৭৭ সালে কামিরিথুতে কাজ করে উপন্যাসের প্রতি আমার সকল আগ্রহ আমি হারিয়েছিলাম। জেলে থাকার সময় আমি কাহিনীটি মনে করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেই লেখার সামান্য অংশও আমার মনে পড়েনি। কিন্তু ইদাখোর সেসব পাথরগুলো আমার স্মৃতিতে থেকে গিয়েছিল। কৃষকশ্রেণি এই মানুষরূপী পাথরগুলো সম্পর্কে কী কিংবদন্তী তৈরি করেছিল? ইদাখোর চিত্রগুলো মিলে গিয়েছিল গিকুয়ু ওরাটিউরের মানুষখেকো রাক্ষসের সাথে। মারিমুর২০ ছিল দুইটি মুখ, একটি সামনের দিকে আর অপরটি পেছনের দিকে। পেছনের মুখটি লম্বা চুল দিয়ে ঢাকা থাকতো। তারা ছিল নিষ্ঠুর, লোভী আর বেঁচে থাকতো মানুষের শ্রমের উপর নির্ভর করে। সাম্প্রতিক সময়ের মারিমুদের কী অবস্থা? আমি যে চিত্রকল্পের খোঁজ করছিলাম মারিমু চরিত্রগুলো কি আমাকে তা সরবরাহ করবে?
দক্ষিণ কোরিয়ার কবি কিম চি হার বিভিন্ন কাজ বিশেষত ফাইভ ব্যান্ডিটস ও গ্রাউন্ডলেস রিউমার্স-এ আমি দেখেছিলাম কতটা দারুণভাবে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার নব্য-ঔপনিবেশিক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার জন্যে মৌখিক ধরন ও চিত্রকল্পগুলো ব্যবহার করেছিলেন। মৌখিক ঐতিহ্যের অন্যতম সফল অস্ত্র হলো ব্যঙ্গবিদ্রূপ।
আর এরপর একদিন আমি বুঝতে পারলাম! কেন আমি সেই সব মানুষের গল্প বলবো না যারা সাম্রাজ্যবাদী বিদেশি শয়তানদের কাছে নিজের ও তার জাতির আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে? কেন আমি সেই শয়তানের গল্প বলবো না যে তার মাহাত্ম্য খুঁজে পায় আরেক শয়তানের ভেতর? কেন সেই সব ডাকাতের কথা বলবো না যারা জনগণের সম্পদ ডাকাতি করে তৃপ্তি পায়?
আর এসব পথের মাধ্যমেই আমি গিকুয়ু ভাষায় কাইতানি মুথারাবাইনি নামের উপন্যাসটি লিখেছিলাম। কাইতানি মুথারাবাইনি-তে একটি মাতুতু ট্যাক্সিতে নাইরোবি থেকে ইলমোরোগে ভ্রমণ করা ওয়ারিঙ্গা ও আরও ছয়জনের গল্প বলা হয়েছে। ট্যাক্সির যাত্রীরা তাদের নিজেদের ভেতর কিছু একটা মিল পেয়েছিল। তারা সবাই শয়তানের আয়োজনে চোর ও ডাকাতদের ভোজসভায় আমন্ত্রণ পেয়েছিল। এই ভোজসভার কেন্দ্রে ছিল সাতজন চতুরতম চোর ও ডাকাতকে বেছে নেয়ার এক প্রতিযোগিতা। এরা হবে সেই সাতজন যারা জনগণের সম্পদ ও অধিকার ডাকাতি করার ব্যাপারটিকে শিল্পের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। অন্যদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিদেরকে তাদের চমকপ্রদ ডাকাতি ও অর্জনের অভিজ্ঞতা বলতে হতো। সেখানে একজন ডাকাত ছিল যে ডাকাতি ও চোরাকারবারি করে প্রচুর সম্পদ গড়েছিল, কিন্তু এই সম্পদের প্রতি তার এক ধরনের অসন্তুষ্টি এসেছিল। কেন? কারণ তার কাছে এত এত টাকা থাকার পরও তার আছে মাত্র একটি হৃৎপিন্ড ও একটি মাত্র জীবন, ঠিক সে যাদের ক্ষতি করেছে তাদেরই মতোন। কিন্তু হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রযুক্তি আসার পর তার মাথায় একটি বুদ্ধি এসেছে। সে একটি বিশাল কারখানা নির্মাণ করতে চায় যেখানে মানুষের শরীরের খুচরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বানানো হবে, এতে থাকবে অতিরিক্ত লিঙ্গও। এর ফলে প্রকৃত ধনী ব্যক্তিরা অমরত্ব কিনতে পারবে আর গরিবরা থেকে যাবে মৃত্যুর বিশেষাধিকারে। কিন্তু সে তার এই লক্ষ্য তার স্ত্রীকে বলে ফেলেছিল। তার স্ত্রী উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল দুইটি মুখ, দুইটি পেট, দুই বা ততোধিক হৃৎপিন্ড ও দুইটি যোনির মাধ্যমে এখন ধনীদের স্ত্রীদের গরিবদের স্ত্রী থেকে আলাদা করা যাবে ভেবে।
‘‘যখন আমি তার মুখে দুইটি নারী যৌনাঙ্গের কথা ও একটির বদলে তার দুইটি যোনি থাকার সম্ভাবনার কথা শুনলাম, আমি আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলাম। আমি তাকে স্পষ্টভাবেই বলেছিলাম যে সে দুইটি মুখ, অথবা দুইটি পেট, অথবা শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ কয়েকটি করে নিলেও আমি আপত্তি করবো না। কিন্তু দুইটি…না, না! আমি তাকে এসব বাজে কথা ভুলে যেতে বলেছিলাম। তখন সে তর্ক করা শুরু করেছিল এই বলে যে যদি এমনই হয় তাহলে আমিও দুইটি লিঙ্গ নিতে পারবো না। আমি তাকে তিক্তভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘তুমি কেন দুইটি চাও? আমাকে বলো দুইটি দিয়ে তুমি কী করবে?” সে প্রতিবাদ করে বললো, ‘‘তুমি কেন দুইটি চাও? তুমি দুইটি দিয়ে কী করবে? তোমার যদি দুইটি থাকে, আমারও দুইটি থাকতে হবে। আমাদের অবশ্যই যৌনতার সমানাধিকার থাকতে হবে।”
‘‘এসময় আমি খুবই রাগান্বিত হয়ে যাই। আমি তাকে বলি সমানাধিকারের কথা ইউরোপ বা আমেরিকায় বলতে। আমরা আফ্রিকান আর আমাদের অবশ্যই আফ্রিকান সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। আমি তাকে সজোরে মুখে আঘাত করি। সে কাঁদতে শুরু করে। আমি তাকে আবার আঘাত করি। আমি যখন তাকে তৃতীয়বার মারতে যাই সেই মুহূর্তে সে হার মেনে নেয়। সে বলেছিল আমি চাইলে তিনটি বা ১০টি লিঙ্গও নিতে পারি। সে একটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে।”
‘‘আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাবুন! প্রতিটি ধনী ব্যক্তি পেতে পারেন দুটি মুখ, দুইটি পেট, দুইটি লিঙ্গ, দুইটি হৃৎপিণ্ড—মানে দুইটি জীবন! আমাদের টাকা আমাদের জন্যে অমরত্ব নিয়ে আসবে! আমরা মৃত্যুকে রেখে দেবো গরিবদের জন্যে। হা! হা! হা!”
‘‘মুকুটটি এনে দাও। এত সময় পর এটি তার যোগ্য মালিককে খুঁজে পেলো!”
নয়
একটি শৈল্পিক কাজের অভ্যর্থনা বা গ্রহণ করে নেয়াও সেই কাজেরই অংশ। অথবা বলা যায় কাজটির এই গ্রহণ করা (বা ভোগ!) ঐ বিশেষ শৈল্পিক বিষয়টির পুরো সৃজনশীল প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণতা দান করে। তাই এখন আমি সংক্ষেপে আপনাদের বলতে চাই কিভাবে কাইতানি মুথারাবাইনি উপন্যাসটিকে গ্রহণ করা হয়েছিল। এটি পরিবারগুলোতে পঠিত হয়েছিল। প্রতি সন্ধ্যায় একটি পরিবারের সবাই একত্রিত হতেন এবং তাদের একজন শিক্ষিত সদস্য সবার জন্যে এটি পাঠ করতেন। শ্রমিকরাও নিজেদের ভেতর দল গঠন করতেন, বিশেষত দুপুরের খাওয়ার বিরতির সময়, আর তারা তাদের ভেতর একজনকে বলতেন বইটি পাঠের জন্যে। এটি পাঠ করা হয়েছিল বাসে, ট্যাক্সিতে, সাধারণ বারগুলোতে।
এসব বিষয়াদির একটি মজাদার বিষয় ছিল বারগুলোতে ‘পেশাজীবী পাঠকারী’-দের উদ্ভব। বারে পানরত কিন্তু মনোযোগী শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তারা জোরে জোরে বইটি পাঠ করতেন। পাঠকারী যখন বইয়ের কোন চমকপ্রদ অংশে উপনীত হতেন আর দেখতেন তার পানীয়র পাত্র খালি হয়ে গিয়েছে, তখন তিনি বইটি নামিয়ে রাখতেন। তখন বারের মালিকের উদ্দেশ্যে কেউ কেউ হাক দিয়ে উঠতেন, ‘‘তাকে আরেক বোতল বিয়ার দাও না!” এভাবে আমাদের পাঠকারী তার পানীয়র পাত্র খালি না হওয়া পর্যন্ত পড়ে যেতেন। পাত্র খালি হলে তিনি বই নামিয়ে রাখতেন আর রাতের পর রাত এই একই ঘটনা চলতে থাকতো যতদিন না পুরো উপন্যাসটি পড়া শেষ হয়।
আমি এখন যে পদ্ধতিগুলো বলছি এগুলো মূলত ছিল মৌখিক ঐতিহ্যের সাথে উপন্যাসটিকে মানানসই করে নেয়ার পদ্ধতি। কাইতানি মুথারাবাইনি-কে এর নন্দনতাত্ত্বিক আনন্দ এবং এটিকে ব্যাখ্যা, মন্তব্য ও আলোচনা করার চেয়ে আরও বেশি গ্রহণ করা হয়েছিল আগুনের পাশে বসে গল্প বলার এবং দল বেঁধে গল্প শোনার পুরনো ঐতিহ্যের সাথে। দল বেঁধে শৈল্পিক বিষয়াদি একসাথে গ্রহণের এই বিষয়টিই ছিল আদর্শ নিয়ম, যার অংশবিশেষ আমরা এখনও থিয়েটারে আর খুবই ক্ষুদ্রাংশ চলচ্চিত্রে খুঁজে পাই।
উপন্যাসটির (এবং এনগাহিকা এনদিনদা নাটকের, যা একই সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল) বিতরণ প্রক্রিয়া ছিল প্রকাশের জন্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খুব অল্প সময়ের ভেতরই এটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে বইয়ের দোকান, পাঠাগার ও তথ্যকেন্দ্রগুলো আসলে শহুরে ইংরেজি-শিক্ষিত অংশকে সেবাপ্রদানের জন্যে কাজ করে। মলাটের ভেতরের বিলাসিতার সাথে শহুরে দরিদ্র ও গ্রামীণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। তাদেরকে অশিক্ষিত মনে করা হয় আর তারা অনেকেই আসলে তাই; তাদের আরও মনে করা হয় দরিদ্র, তাদের অধিকাংশই আসলে তাও। দারিদ্রতা এবং নিরক্ষরতার ফলে যে নিঃসঙ্গতা, তা একজন কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে? এসব বিষয় কি আশঙ্কাজনক হারে, ধরুন একটি উপন্যাসেরই ভোগকে সীমাবদ্ধ করে দেয় না? এগুলো সবই হয়তো সত্য। দারিদ্রতা ও নিরক্ষরতা হয়তো জ্ঞান ও তথ্যকে খুব বাজেভাবে সীমাবদ্ধ করে দেয়। এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা যা আসলে জ্ঞান, তথ্য ও সাহিত্যজগতে প্রবেশাধিকার প্রশ্নের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদির ভিত্তি। কিন্তু কিছুদিন পরই এই ভারসাম্যহীন ও অসম ব্যবস্থাদির আশেপাশেই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল। এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অধিকাংশ মানুষের আবাসস্থল গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বইয়ের দোকান ও পাঠাগার সুবিধার দারুণ ঘাটতি ছিল। তারা দরিদ্র আর অশিক্ষিত, তাই তারা বই কিনতে ও পড়তে পারে না, আর তাই এসব জায়গায় বইয়ের দোকান বা পাঠাগারের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু বইয়ের দোকান ও পাঠাগার না থাকার ফলে তাদের এই নিরক্ষর জীবনযাপনের চক্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে ও সেই চক্র ভেঙে ফেলতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও তথ্যের উৎস থেকে তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। শহুরে কেন্দ্রগুলোর ধনী অংশটির কাছে খুব সহজেই যা পাওয়া সম্ভব ছিল, সেসব বিষয় প্রাপ্তি থেকে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলো ছিল বঞ্চিত। শ্রেণিকক্ষের বাইরে দিক-নির্দেশনা এবং আনন্দলাভের জন্যে পাঠাগার থেকে বই ধার নেয়া কিংবা বই কেনার অভ্যাস এখানে গড়ে উঠেনি। এরকম এলাকাগুলোতে আপনি কিভাবে উপন্যাসকে পৌঁছে দেবেন?
এই সমস্যার প্রকৃত কোন সমাধান ছিল না। প্রকাশকরা তাদের ভ্যানগুলোকে কখনো কখনো ভ্রাম্যমাণ দোকান হিসেবে ব্যবহার করতেন। তারা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। এর ভেতর একটি ছিল ছাড়কৃত মূল্যে বা প্রয়োজনে পরে ফেরত নেয়া হবে এমন ভিত্তিতে বইটির কয়েক কপি একটি দোকান বা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে যাওয়া। তবে কিছু উদ্যমী পাঠক প্রকাশকের কাছ থেকে নিজস্ব উদ্যোগে বইটির পাঁচ-দশ-বিশ কপি একসাথে কিনেছিলেন আর গ্রামীণ এলাকা ও খামারগুলোতে তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে কিছু বিস্ময়কর ব্যাপারও ঘটেছিল। এ ধরনের একজন বিক্রেতার নাম ছিল নগিগি ওয়া ওয়চিরা। তাকে উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়েছিল একটি খামারে ফেরার পর, যেখানে তিনি মাসখানেক আগে বইটির দুই বা তিন কপি বিক্রি করেছিলেন। তাহলে বাইরে আসলে এমন ধরনের বই আছে! তিনি কি আরও এমন বইগুলো তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া দয়া করে অব্যাহত রাখবেন? তারা তাদের সীমিত সম্পদ ব্যবহারে আরও মিতব্যয়ী হয়ে সবসময়ই কয়েক কপি কিনতে পারে। আর এভাবে কাইতানি মুথারাবাইনি নামের উপন্যাস তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে নগিগি একজন নায়কে পরিণত হয়েছিল!
এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উপন্যাসটি ভালোই বিক্রি হয়েছিল। বলা যেতে পারে ‘সাহসী’ প্রকাশক মোটামুটি বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছিলেন। প্রকাশক প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার কপি ছেপেছিলেন। তার আশা ছিল তিন থেকে পাঁচ বছরের ভেতর তিনি এগুলো বিক্রি করবেন। অর্থাৎ তারা বছরে হাজার কপির কিছু বেশি বিক্রি করে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বইটি প্রকাশের এক মাসের মাথায় তাদেরকে আরও পাঁচ হাজার কপি ছাপাতে হয়েছিল, আর ঐ বছরের ভেতরই আরও পাঁচ হাজার। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮০ সালের এপ্রিলে। একই বছরের ডিসেম্বরের ভেতর তাদের পনের হাজার কপির মোট তিনটি মুদ্রণে যেতে হয়েছিল। এই সময়সীমার ভেতর কেনিয়ায় কোন ইংরেজি ভাষায় লেখা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। প্রকাশক আমাকে বলেছেন যে বছরে এখন উপন্যাসটির প্রায় হাজার কপি বিক্রি হয়, যা খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রকাশিত ইংরেজি ও কিশওয়াহিলি ভাষার বেস্ট-সেলার বইগুলোর সাথে রয়েছে।
উপন্যাসটি এখন পর্যন্ত ইংরেজি, সুইডিশ, নরওয়েজিয়ান ও জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সম্ভাবনা আছে রুশ ও জাপানি সংস্করণের। কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শেতানি এমসালাবাইনি নামে উপন্যাসটির কিশওয়াহিলি ভাষায় অনুবাদ, যার ফলে গিকুয়ু ভাষার সাথে কিশওয়াহিলির সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
আফ্রিকান ভাষাগুলোর ভেতর এ ধরনের যোগাযোগকে আমি আফ্রিকান উপন্যাসের প্রকৃত ভিত্তিস্থাপক বলে মনে করি। ইবো ভাষায় লেখা একটি উপন্যাস অনূদিত হতে পারে ইয়োরুবা ভাষায় এবং ঘটতে পারে এর উল্টোটাও। ধোলুয়ো বা মাসাই ভাষায় লেখা একটি উপন্যাস অনূদিত হতেই পারে দুই বা তিনটি কেনিয়ান ভাষায় কিংবা কেনিয়ার বাইরের আফ্রিকান ভাষাসমূহে। আর এভাবেই একটি দেশের ভেতর আলাদা জাতিসত্তাসমূহের সাহিত্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ভেতর প্রকৃত সংলাপের মাধ্যমে একটি প্রকৃত জাতীয় সাহিত্য এবং সংস্কৃতি তথা একটি প্রকৃত জাতীয় সংবেদনশীলতার ভিত্তি রচিত হতে পারে। আর পুরো আফ্রিকার লিখিত শিল্পের ভেতরে এভাবেই একটি প্রকৃত আফ্রিকান সংবেদনশীলতার ভিত্তি পাওয়া যেতে পারে। এর আরেকটি প্রভাব হবে অনুবাদ শিল্পের বিস্তৃতি, যা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হবে (আর স্নাতকদের জন্যে খুলে যাবে আরেকটি পেশার দরজা!) এবং এর জন্যে প্রয়োজন হবে আফ্রিকান ভাষাসমূহের আরও দৃঢ় ও প্রতিশ্রুতিপূর্ণ শিক্ষণ ও পাঠপদ্ধতি। দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে হয় আফ্রিকান উপন্যাস ও সাহিত্যের একটি প্রগতিশীল আন্দোলনে এভাবেই প্রতিটি আলাদা বিষয় প্রতিটি বিষয় থেকে শক্তি সঞ্চারিত করবে।
দশ
আফ্রিকান উপন্যাসের ভবিষ্যত তাই নির্ভর করছে একজন আগ্রহী লেখক (যিনি আফ্রিকান ভাষার প্রতি সময় ও মেধা প্রয়োগে প্রস্তুত), একজন আগ্রহী অনুবাদক (যিনি আফ্রিকান ভাষাগুলোর একটি থেকে আরেকটিতে অনুবাদের জন্যে তার অনুবাদ শিল্পের সময় ও দক্ষতা প্রয়োগে প্রস্তুত), একজন আগ্রহী প্রকাশক (যিনি প্রস্তুত সময় ও অর্থ বিনিয়োগে); অথবা নির্ভর করছে একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র যে বর্তমানে বিদ্যমান নব্য-ঔপনিবেশিক ভাষাতাত্ত্বিক নীতিমালার রাশ টেনে ধরবে এবং জাতীয় প্রশ্নগুলো গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাধান করবে তার উপর। আর চূড়ান্ত বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি আগ্রহী ও বিস্তৃত পাঠকসমাজ। কিন্তু এই সকল বিষয়াদির বাইরে একজন লেখকই হলো সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি, যার দ্বারা এই কলুষিত চক্র ভেঙে আফ্রিকান ভাষাসমূহে কল্পকাহিনী রচনা করা সম্ভব। কল্পকাহিনীর লেখকই হতে পারেন, কিংবা তাকেই আসলে হতে হবে পথপ্রদর্শক। ইতিহাসে এমনটাই ঘটেছে রাশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে, এরপরই অন্যান্য বিষয়াদি তাদের অনুসরণ করেছে। যখন সেই দিন আসবে, যখন আফ্রিকান লেখকরা তাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার জন্যে আফ্রিকান ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে, তখন আফ্রিকান উপন্যাস প্রকৃতভাবেই ফিরে আসবে তার নিজের স্থানে। এটি নিজের ভেতর জায়গা করে দেবে আফ্রিকার বিভিন্ন অংশের মানুষের সংস্কৃতির বিষয়াদির আর তার পাশাপাশি যুক্ত হবে এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা পুরো বিশ্বের উপন্যাস বা কল্পকাহিনীর সবচেয়ে প্রগতিশীল বিষয়াদির সঙ্গে।
আফ্রিকান কল্পকাহিনী, বিশেষত আফ্রিকান উপন্যাসের ভাষার চরিত্র বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসার সময় এখনও আসেনি। আর এখানে আমি কল্পকাহিনীকে একটি ভাষা হিসেবেই বিচার করেছি। কিন্তু আমি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলতে পারি যে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আফ্রিকান মানুষের সংগ্রামের মূলধারার সাথে পুনঃসংযোগ ও কৃষক সমাজের সমৃদ্ধ মৌখিক ঐতিহ্যের ভেতরই এটি তার ধরন ও চরিত্রকে খুঁজে পাবে। এর মাধ্যমে এটি আফ্রিকার সাধারণ প্রাসঙ্গিকতার খোঁজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি পালন করবে।
সূত্র ও টীকা
১৩ ইতিয়েন্নে ইয়াদেমা বা জিনাসিংবে ইয়াদেমা, ১৯৬৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টোগোর রাষ্ট্রপতি—অনুবাদক
১৪ মারকাস ক্লেভেন, Nordbayerischer Kurier, ৬ জুলাই ১৯৮৪ —লেখক
১৫ ১৯৪৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানি ও পরে একীভূত জার্মানিতে প্রচলিত মুদ্রা, ২০০২ সালে চালু হয় ইউরো—অনুবাদক
১৬ মবুতো সেসে সেকো, ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও পরে জায়ারের রাষ্ট্রপতি—অনুবাদক
১৭ ডেনিয়েল আরাপ মই, ১৯৭৮ থেকে ২০০২ পর্যন্ত কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি—অনুবাদক
১৮ কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি মইর দর্শন হলো “নায়ায়োবাদ”, অর্থাৎ আমার পদক্ষেপ অনুসরণ করো। সম্প্রতি তিনি তাঁর এই দর্শনকে কথার মাধ্যমে এমনভাবে বিস্তৃত করেছেন, যা সবচেয়ে উদ্ভাবনী ব্যঙ্গকারীকেও হারিয়ে দেয়। এখানে তিনি সকল কেনিয়ানকে তোতা পাখির বুলি বলার আহ্বান জানিয়েছেন :
‘‘পুরুষ ও ভদ্রমহিলাগণ, দীর্ঘবিস্তৃত খরা থাকার পরও আমরা কেনিয়ানরা সুখী। আপনাদের কাছে আমি বলতে চাই যে অগ্রসরতা বা উন্নয়নকে বুঝতে হলে সংবাদপত্রে নানা ধরনের বিষয়ে কোন বিতর্ক থাকা উচিত নয়। প্রয়োজন হলো সকল মানুষের একটি সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করে যাওয়া…
…আমি সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আর সবাইকে তোতা পাখির মতো বলে যাওয়ার জন্যে ডাক দিচ্ছি। এমজি কেনিয়াত্তার আমলে আমি কেনিয়াত্তার সুরে কথা বলতে থাকতাম যতক্ষণ না মানুষ বলেছিল এই লোকের কেনিয়াত্তার সুরে কথা বলা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। আমি বলি, আমার নিজের কোন চিন্তা ছিল না। কেন আমার নিজের চিন্তা থাকতে হবে? আমি কেনিয়াত্তার জন্যে কাজ করতাম এবং তাই আমার কেনিয়াত্তার খুশিমতো গাইতে হতো। যদি আমি অন্য কিছু গাইতাম তাহলে কি আপনাদের মনে হয় কেনিয়াত্তা আমাকে ছেড়ে দিতো? তাই আপনাদেরও গাইতে হবে সেই গান, যা আমি গাই। আমি যদি থামতে বলি, আপনাদের থামতে হবে। এভাবেই এই দেশ সামনে এগিয়ে যাবে। যেদিন আপনি একজন বড় মানুষে পরিণত হবেন, সেদিন আপনি আপনার নিজের গান গাইতে পারবেন আর তখন তা অন্যরাও গাবে…” (১৯৮৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদ্দিস আবাবা থেকে ফেরার পর রাষ্ট্রপতি মইর ভাষণের মূলভাবের অংশবিশেষ। )
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্বজ্জনেরা, কতিপয় সাংবাদিক, আর অবশ্যই প্রায় সকল সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা মইর কথার প্রতিধ্বনি করা শুরু করেছিল, তখন অন্য সকল ব্যঙ্গবিদ্রুপাত্মক বর্ণনা হার মেনেছিল। মিথ্যা অভিযোগ বা বন্দিত্বের শিকার সহকর্মীদের জন্যে তাদের কিছু বলার ছিল না। তবে নব্য-ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা ‘ভিন্নমতাবলম্বী’ আখ্যায়িতদের বিরুদ্ধে তাঁরা অনর্গল কথা বলে যেতেন—লেখক
১৯ ফাউস্ট হলো জার্মান কিংবদন্তী চরিত্র যে সফল হওয়ার পরও জীবনের প্রতি অসন্তোষ থেকে শয়তানের সাথে সমঝোতা করে নিজের ভালো আত্মার সাথে অসীম জ্ঞান ও পার্থিব সুখের বিনিময় করে—অনুবাদক
২০ গিকুয়ু মৌখিক সাহিত্যের মানুষখেকো রাক্ষস চরিত্র—অনুবাদক
পড়ুন ।। কিস্তি ১১