বো ধি ক থা সংকলন : ১
সন্ন্যাসী, ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভগবান শ্রীরজনীশ বা ওশো সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু-পরবর্তী কালে অটুট তাঁর প্রভাব। মূল হিন্দি থেকে ওশোর মিট্টি কে দিয়ে বইটির অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ।
একটা ঘটনার কথা শুনেছি। যুদ্ধ চলছিলো। কোনো নির্জন পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল এক ধর্মপুরোহিত। হঠাৎ করে চারপাশে বোমাবাজি শুরু হয়ে গেল। বোমাবাজি শুরু হতেই পুরোহিত রাস্তার পাশে তৈরি করা সৈন্যদের বানানো একটি গুহায় আশ্রয় নিল। গুহার ভেতরে প্রবেশ করতেই সে লক্ষ্য করল সৈনিকদের এক অফিসার আগে থেকেই সেখানে লুকিয়ে রয়েছে। পুরোহিতকে দাঁড়ানোর জায়গা করে দিয়ে এক কোনায় সরে গেল সে। দুজনের চোখেমুখে আতঙ্ক। গুহার আশেপাশে বোমা পড়ছিল। পুরোহিতের হাত-পা থরথরিয়ে কাঁপছিল। চোখ বন্ধ করে দুই হাত জোড় করে পুরোহিত ঈশ্বরকে স্মরণ করতে লাগলো। মাঝে চোখ খুলে পুরোহিত দেখতে পেল, সৈনিকদের সেই অফিসারও চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছে। বেশ কিছুক্ষণ বাদে যখন বোমা পড়ার শব্দ বন্ধ হয়ে গেল তখন ধীরে ধীরে চোখ খুলে ধর্মপুরোহিত সৈনিকদের অফিসারকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু মনে করবেন না, আমি লক্ষ্য করেছি আপনিও চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছিলেন।’ সৈনিকদের অফিসার উত্তর দিল, ‘জীবন বাঁচানোর গুহায়, নাস্তিক কোথায় পাবেন?’
তোমরাও কি ভয়ের কারণেই ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়াও না? তোমাদের সকল প্রার্থনাও ভয়ের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত নয় কি? মনে রাখতে হবে, ভয়ের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম সত্য ধর্ম নয়। আমি ভয়হীন আস্তিকের চেয়ে ভয়শূন্য নাস্তিককেই বেশি পছন্দ করি। কারণ ভয়ের মধ্য দিয়ে পরমাত্মার নৈকট্যলাভ একেবারেই অসম্ভব। সত্যকে পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো অভয়।
বিচার করে দেখ, ভয় কখনো প্রেমে রূপান্তরিত হতে পারে? যদি ভয় প্রেম হতে না পারে তাহলে প্রার্থনা হবে কেমন করে?
প্রার্থনা হলো প্রেমের পূর্ণতা। কিন্তু মানুষের প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি মন্দির ভয়ের ইট দিয়ে নির্মিত। আর ভয় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বর ভয়ের ভাবনা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আর একারণে আমাদের সকল ক্রিয়াকলাপ অসত্য হয়ে পড়েছে। কারণ যাদের ঈশ্বর সত্য নয়, তাদের আর কি সত্য হতে পারে?
যাদের প্রেম অসত্য, প্রার্থনা অসত্য, তাদের প্রাণও যদি অসত্য হয় পড়ে তাহলে আশ্চর্যের কি আছে?
প্রেমের দ্বারা, কেবল প্রেমের দ্বারাই প্রার্থনা সত্য হয়ে থাকে।
আর হৃদয় দিয়ে, কেবল হৃদয় দিয়েই তাকে জানা সম্ভব। আমি বলবো প্রেম কর। কারণ প্রেমের প্রগাঢ়তাই জীবনকে প্রার্থনায় পরিণত করে দেয়। আমি বলবো পরমাত্মার তৃষ্ণাকে জাগাও, এই জাগরণই পরমাত্মার দর্শন। সত্যের দর্শন। প্রেম আর প্রেমের তৃষ্ণা। যে এই দুই বীজ-মন্ত্রকে উপলব্ধি করতে জানে তার জন্য আর সব পথ সহজ হয়ে যায়।
পরমাত্মার মন্দির কোথায়? যখন কেউ আমাকে একথা জিজ্ঞেস করে, তখন আমি বলি প্রেম আর প্রেমের তৃষ্ণায়।
(চলবে)