ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার কবিতা : ১

পড়শি দেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানাশোনা ও বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে উর্দু, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, কাশ্মীরি, তেলেগু, পশতু ইত্যাদি ভাষার সাহিত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে গৃহীত ও আলোচিত হয় ইংরেজি ভাষার সাহিত্য। ঔপনিবেশিক মানসিক দাসত্ব এর প্রধান কারণ। আমরা একটু উল্টো পথে হাঁটতে চাই; দেখতে চাই আমাদের প্রতিবেশী ভাষাসমূহের সাহিত্য। আর তাই শুরু করছি নতুন আয়োজন ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার কবিতা। হিন্দি থেকে গুজরাটি কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ

গু জ রা টি ক বি তা

মণিলাল দেশাই (১৯৩৯-১৯৬৬) গুজরাটি কবি। এক্সপেরিমন্টোল কবিতা রচনার পাশাপাশি গুজরাটি সাহিত্যে ‘লিটলম্যাগ আন্দোলন’ এবং ‘আধুনিক কবিতা আন্দোলনে’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করলেও ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত তাঁর একমাত্র কাব্যসমগ্র রানেরী গুজরাটি সাহিত্যে সমাদৃত। কবিতার পাশাপাশি গুজরাটি ভাষায় তিনি গজল এবং গীত রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গুজরাটি গান ‘উমবারে উভি সামভরো রে বোল ভালামা’ গুজরাটের একটি জনপ্রিয় গান। হিন্দি সাহিত্যের অনলাইন সদানীড়া.কম এর জন্য এই কবিতাগুলো গুজরাটি থেকে হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন কবি সাভরাজ।

 

তারার মধ্যে

তারার মধ্যে
অপলক তাকিয়ে থাকা
কোনো চোখ খুঁজে বেড়াব
তেমন কবি নই আমি

 

শীতের ঠান্ডায় মাটির চুলার পাশে
উষ্ণতা কুড়িয়ে জেগে থাকা
সে রাতের একাকিত্বে
কবিতা লেখার সাহস নেই আমার

 

তোমার মতো আমিও
ঘড়িতে ঠিক ছয়টা বেজে গেলে সকাল দেখি
অথচ ক্ষীণ হতে থাকা হাসনাহেনার গন্ধে
ভোরের আগমন বুঝতে পারিনা

 

কারো ইরমিশ* সমান প্রেম
দিয়ে মার্বেল পাথরের সৌধ নির্মাণ করবো
তেমন ধনী ব্যক্তিও আমি নই
আর সে জন্যই আমি
মণিলাল ভগবান দেশাই।

*ইরমিশ: ইরমিশ শব্দটি সিন্ধি এবং ফার্সি ভাষায় ব্যাবহৃত হয়। এর কয়েকরকম অর্থ হয়-স্বর্গবাসী অথবা স্বর্গীয় ফুল। মণিলাল দেশাই মূলত সিন্ধি ভাষা থেকে সরাসরি গুজরাটি ভাষায় শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

 

সময়

সময়
রাস্তায় পড়ে থাকা কোনো পাথরের
বালুকণা নয়, হয়তো আলো…

 

সময়
কোনো বৃদ্ধের হাড়ে জমে থাকা চর্বি নয়
হয়তো মৃত্যু…

 

সময়
কোনো চলমান রথের চাকা নয়
হয়তো অশ্ব…

 

সময়
সূর্য কিংবা চাঁদ ডুবে যাওয়ার
কোনো পাত্র নয়, হয়তো নদী…

 

সময়
কোনো বিমুখ জলাধারে নীল পানির ভেতরের
অন্ধকার নয়, হয়তো জলাধার

 

প্রায়শ্চিত্ত

যখন তুমি
গঙ্গার নোংরা জলে চোখ বন্ধ করে
পিতার শ্রাদ্ধ করছো

 

যখন তুমি হরিদ্বারে
ঘামের গন্ধ লেগে থাকা কোনো পুরোহিতকে
দিয়ে গৃহ শান্তির মন্ত্র পড়াচ্ছ

 

যখন তুমি
অফিস থেকে সত্য নারায়ণের সঙ্গে
আলাপ শেষে, ফার্সি রোডে কোনো সুন্দরী
পতিতার সঙ্গে শুয়ে আছ

 

যখন তুমি
কৃষ্ণ থেকে রাধাকে আলাদা করে
চার আঙ্গুল কাপড় দিয়ে চুনিয়া বানাচ্ছ
ঠিক তখন —
স্বর্গে যার নামে দেবতারা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে
সেই মাঝ বয়সী খোদা
দাড়ি কাটার পর ফিটকিরি ঘষতে ঘষতে
হয়তো নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে।

 

পীতাম্বর

তোমরা যে ঈশ্বরের পূজা কর
গতরাতে মন্দিরের দেওয়াল থেকে
হারিয়ে গিয়েছে তাঁর ঝুলানো পীতাম্বর

 

মন্দিরের পেছনে কৌটিলী বারে
উড়ে গিয়ে আটকে গেছে
আর এখন পতাকার মতো ফড়ফড়
করে আওয়াজ তুলছে

2 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here