যখন ফুটিল কমল ।। কিস্তি : ৭

পল ক্লী

বায়োগ্রাফিক্যাল ফিকশন বা আত্মজৈবনিক কথাসাহিত্য — যখন ফুটিল কমল। লেখার পরিণতি কী দাঁড়াবে লেখক নিজেই তা ভালো বলতে পারবেন। জাহিদুর রহিম চমৎকার গদ্যে উপহার দিয়েছেন জীবন ও দর্শনের মৌলিক প্রশ্ন ও উত্তর।

 

আরও কাছে এসো যেন দেখার শখ মেটে,

মদ দাও আরও যেন কিছুটা নেশা কাটে

[করিব অওর ভি আও কে শওকে দিদ মিটে

শরাব আওর পিলাও কে কুছ নেশা উতরে]

— ফয়েয আহমদ ফয়েয

 

আমি ঘুমাচ্ছি, কিন্তু ঘুমের মাঝেও দানা বাঁধছে অশান্তি। যে চেতন বোধের দাপটে আমি কোনঠাসা কুকুরের মতো করে দিন কাটাই, সেই চেতন আমাকে ঘুমের মাঝেও তাড়িয়ে বেড়ায়। ঘুমালেও মনে হয় কাজ আছে, উঠতে হবে। উঠবো তো বটেই, কিন্তু মাথায় একটা ভোঁতা চাপ, একটা বিবশ অনুভব ভর করে, যেন তাড়া আছে।

 

ঘুমানোর মুহূর্তগুলো ছোট হয়ে আসে। আমি কি ছয় ঘণ্টা ঘুমাব, মানে ৩৬০ মিনিট; মানে ২১৬০০ সেকেন্ড, মাত্র এতোটুকু সময়! একটা গোপন অ্যালার্ম যেন আমার বালিশের চারপাশে। উঠতেই হবে এই ভাবনা ঘুমের ভেতরেও হারিয়ে যায় না। ঘুমালেই শুনি আমার জানালার পর্দার আড়ালে কোথায় যেন অনেকগুলো ঘড়ি থেকে টিক টিক শব্দ হচ্ছে। সেই শব্দে মাঝে মাঝে রাত দুইটা বা তিনটার দিকে আমার ঘুম ভাঙে। ঘড়ি মিলিয়ে দেখি সময়, একটু আগেই শুয়েছি। আবার একটু পরেই উঠবো। এর মাঝেই আমার ঘুমানো আর এই ঘুম ভাঙা। এই সামান্য জাগরণে মনে হয় আসলে এই ঘুম বিরতি আমার ট্রানজিট। আমি এক এয়ারপোর্টে আটকে আছি অসহায় হয়ে, দুই মহাদেশের মাঝে। পরের বিমানে উঠবো, বা কখনই হয়তো উঠবো না।

 

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে বুঝি যে, আমি আসলে এতক্ষণ ঘুমাইনি। অর্ধ-চেতন বোধে অবশ ছিলাম কেবল। মাথার উপরে মশারি, পুরনো ফ্যান, লাইট — এগুলো দেখি। আমি আলো জ্বালিয়েই ঘুমাই, অন্ধকারের ভয় থেকে। ছোট বাসাটি নানান জিনিসে ঠাসা। শোবার বিছানার সামনেই একটা ড্রেসিং টেবিল। ঘুম ভেঙে গেলে সরাসরি আয়নাতে নিজেকে দেখতে পাই। নিজেকে খুব অদ্ভুত লাগে। মনে হয় আয়নায় দেখা মানুষটি আমি নই। তাকে অনেক সজীব আর প্রাণোচ্ছল লাগে। বেশির ভাগ আসবাব পুরনো হলেও মজবুত আর ভারি। শোবার ঘরে এই আয়না আর আলমারি ছাড়া কিছুই নেই। বাকি যতটুকু জায়গা বাসার, মানে আর দেড় ঘর ভরা বই। আর ব্যবহার্য নানা জিনিস বইয়ের ফাকে ফাকে আমি দরকারে খুঁজে নেই। এই রাতের ঘুম ভাঙা হঠাৎ আমাকে যেন এক শূন্য মাঠে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করে, ‘কী করছি আমি।’ কী করছি? সারাদিন কী করি আমি? আমি আমার জীবনের ফেলে আসা পথ গুলোকে দেখতে পাই। কীভাবে কেটে গেলো এতগুলো বছর? আরও এতদিন তো বাঁচব না।

 

এইসব চিন্তা করতে করতে কখনো আমার নিজের কাছে ফিরে আসি। এই ‘নতশির শিখর হিমাদ্রির’ কাছে। ভেতরটা তখন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কীসের যেন এক অস্থিরতা, কিসের যেন এক তাড়না অনুভব করি। ভেতর থেকে একটা গ্লানি একটা বিষণ্ণতা বেরিয়ে আসার যেন পথ খুঁজছে। এ রকম অবস্থায় আমি বুঝতে পারি, এক জোড়া পূর্ণ, বিস্ফোরিত আর ক্লান্ত চোখ গভীর নিষ্ঠা আর কৌতূহলে আমাকে দেখছে। এক জোড়া গভীর অন্তর্ভেদী চোখের তীব্র দৃষ্টি আমার শরীর ভেদ করে আমার ভিতরে ঢুকে পড়ছে। মস্তিষ্কের নিউরনগুলোতে একটা ঝড় শুরু হয়, যেই ঝড় চলে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েদির মাথায়।

 

যেই দৃষ্টি আমার উপরে নিবিষ্ট সেটাকে স্বাভাবিক দৃষ্টি বলা যায় না। আমি যতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম তখনো কি এই দৃষ্টি ঠিক এভাবেই আমাকে দেখছিল? রাতের এই নীরব প্রহরে যখন কবি দুঃখী আর চোর ছাড়া কেউ জেগে নেই, সেই মুহূর্তের নীরবতা ভেঙ্গে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলি। একটা অদ্ভুত আতংক আমাকে গ্রাস করে। আমি সহসা টের পাই আমার ভেতর এক গোপন তাড়নার অস্তিত্ব। এই তাড়না খুব স্থূল আর নির্লজ্জ। এতটাই যে এটা পূরণ করতে ভালোবাসার কোন দরকার হয় না। এই নির্লজ্জতার দাপট এতো বেশি যে ভালোবাসার কাছে কোণঠাসা হয়ে পরে। আমি এক দৃষ্টিতে এই গোপন বাসনার চোখে চোখ রাখি।

 

অনেক সময় তাকিয়ে থেকে বুঝলাম, এর চোখের পলক ও পড়ছে না, মুহূর্ত উত্তরণে এর মাঝে নেই কোনো পরিবর্তন, আমার অস্বস্তি হয়। নিজেই চোখ নামিয়ে ফেলি। বুঝলাম এই সময়ে এখানে এক পরিবর্তন দরকার। প্রশ্ন করলাম, ‘কী নাম তোমার?’

প্রায় নিঃশব্দে উত্তর এলো প্রেম। উত্তর দিয়েই এই প্রথম চোখ সরিয়ে নিল সে।

আমি যেন নিজের সাথেই কথা বলছি। মুখ তুলে বললাম, ‘কী বিশ্রী দিন আজ, এখনো ঘরের ছাদ হতে গরমের হল্কা বের হচ্ছে! তুমি টের পাচ্ছ?’

— পাচ্ছি।

কেমন নিরুত্তাপ শীতল স্বর তার। মনে হয় এই স্বর চেনা অথচ কোনদিন শুনিনি।

— তুমি কতদিন ধরে এখানে আছ?

— কোথায়?

— এখানে এই বাড়িতে?

— আমি তো তোমার সাথেই থাকি।

— তোমার বয়স কত?

— তোমার সমান হবে।

আমি বুঝলাম শুধু প্রশ্ন করলেই আমি উত্তর শুনতে পারব। এছাড়া তার কোন কথা আমি শুনবো না। মুহূর্তে মনে পড়ে গেলো কাল দুপুরে দেখা একটা দৃশ্য। আমি ভয়ে আর শঙ্কায় প্রায় ককিয়ে উঠলাম। দেখেছিলাম মৃতদেহ বহনকারী একটা দল বেশ জোরে জোরে যাচ্ছিল। এতো জোরে যে খাটিয়ায় শোয়ানো মৃত মানুষটা আরেকটু হলে পড়েই যেত নিচে। মরে গিয়েও নিজের আপনজন আর সহকর্মীকে যেন বিব্রত করেছিল লোকটা। আমার নিজেকে সেই লোকটার জায়গায় মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এটা বেশ তো যদি আমি কোন সুন্দর উপত্যকায় সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে মরে যেতাম। আমার দুঃখ আর কান্না শোনার জন্য থাকতো কোমল বাতাস। আমার সামনে থাকতো দিগন্ত আর মাথার উপর প্রশান্ত আকাশ আমি আমার মৃত্যুতেও কাউকে বিব্রত করতে চাই না।

 

আমি কি ভেবে বললাম, জানো প্রেম কাল দুপুরে যখন আকাশ আঁধার করে এলো, আমি ফিরছিলাম, দেখলাম এক মৃতকে বহন করা মানুষেরা কি ভয়ংকর তাড়া করছিল। যে আরেকটু হলেই ফেলে দিত। তাদের তাড়া দেখে বুঝছিলাম মৃতদেহ কতটা অস্বস্তিকর জীবিত মানুষের জন্য।

— কেন অস্বস্তিকর?

সে যেন কিছুই বোঝে না এমন করে প্রশ্নটা করলো। বেশ অবাক হয়ে। আমিও অবাক হয়ে গেলাম সে প্রশ্ন করলো দেখে। আমার কাছে এটা খুব সতত আর স্বচ্ছ জানা। এতো স্বচ্ছ যে, কেও যে জানেনা, সেটাই আমাকে বিস্মিত করে।

 

অস্বস্তিকর এজন্যই যে এই যে মানুষটা যে তাদের মতোই ছিল আজ কই যেন গেছে। তার এমন কিছু হয়েছে যার ব্যাখ্যা মানুষ করতে পারছে না। আর তার এই না হয়ে থাকা জীবনের অনিত্যতার দর্শনকে জীবন্ত করে তার সামনে নিয়ে বসে আছে, তাই অস্বস্তি। তবে কালকের বিষয়ে আরেকটা কারণ সম্ভবত হতে পারে আবহাওয়া ভালো ছিল না। বৃষ্টি হবে হবে করছিল। এটা শববাহকদের জন্য খুব কষ্ট কর। এছাড়া কবরেও পানি জমে যেতে পারে। সে সম্ভবনাও তো আছে।

— তাহলে কই মরা ভালো?

সে এমনভাবে প্রশ্ন করলো যেন এটা একটা চয়েজ। একটা অপশন। আমি বললাম নিঃসঙ্গ মানুষের উচিৎ হাসপাতালে মরা। এবার সে আরেক অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসলো, কিন্তু মরতেই বা হবে কেন?

আমি বললাম এই কেন কোন উত্তর নাই, যেমন উত্তর নাই তুমি জন্মেছ কেন? তবে এটা সত্যি যত কিছুর জীবন আছে, সব কিছুর মৃত্যু আছে। যার জীবন নাই, কেবল তার মৃত্যু নাই। তুমি বিভিন্নভাবেই মরতে পার। ধীরে ধীরে তুমি বয়স্ক হবে। তোমার এতো সুন্দর যৌবন হারিয়ে যাবে। তোমার হাঁটা চলা করতেও কষ্ট হবে। তোমার ভেতরের ভাইটাল অরগানগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হবে। কাজ কমিয়ে দিবে। প্রতিক্রিয়া কমিয়ে দিবে। যে তুমি একদিন দশ কিমি দৌড়ে যেতে সেই তুমি দশ কদম ফেলতে পারবে না সেই একই পা নিয়ে। এর মানে ভেবে দেখো, এই পা তোমাকে চালায়নি, চালিয়েছে একটা প্রাণশক্তি। সেটা ধীরে ধীরে কমে যাবে। অথবা মৃত্যু হতে পারে আকস্মিক। যে ভাবেই মর, মৃত্যু আসবে, হঠাৎ তুমি মরে যাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই, আর মরতেই হবে।

— ‘বেশ তাহলে মরবো’। কেমন এক ক্লান্ত, বিষণ্ণ আর ডুবে যাওয়া গলায় বলল সে।

আমি বললাম, কিন্তু জানো একটা কথা ভেবে খুব দুঃখ হয়।

— কী কথা?

— জীবনের কথা।

— জীবনের কোন কথা?

সকল ভালোবাসার কথা। যত কিছু আমি ভালোবেসেছিলাম আর যত কিছু আমাকে ভালোবেসেছিল। মানুষ তো কেবল সুখের কথা ভাবে। শোনো বলি, আমি মানুষ সুখি না হয়েও ভালোবাসতে পারে। এখানেই জীবন জয়ী মরণের উপর। ভালোবাসা নিজেই চমৎকার এক সুখের ইশারা। এই যে জীবন — কত মধুর এই ছোট জীবন — সুখি না হয়েও দিব্যি কাটিয়ে দেয়া যায়। রিলকে লিখেছিলেন ‘‘দুজন মানুষ নিঃসঙ্গতার প্রাচীর না ডিঙিয়েই, এই দেয়ালের অস্তিত্ব বজায় রেখেই একে অপরের কাছের মানুষ হয়ে থাকবে — ভালোবাসার মূল সূত্রই তো এই’।

 

এসব কথা বলে তাকাতেই আমি তাকে খুঁজে পেলাম না। এতক্ষণ যাকে ‘প্রেম’ বলে দেখেছি। নিজে নিজের উপর বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি। আমার ভেতরের জড়তা আর অস্থিরতা দুটোই যেন কেটে যাচ্ছে। বুঝে ফেলেছি আজ রাতে আর ঘুম হবে না। নিজের ভেতরে এক নতুন, স্বাভাবিক আর অপ্রত্যাশিত জাগরণ টের পাচ্ছি। আমি জানি, আমি মানুষের কোনো উদাহরণ নই। আমি জানি, আমি আত্মরক্ষার প্রয়োজনে কতটা নিচে নামতে পারি। আমি জানি আমার ভেতরের যেই দাস মানুষ আছে যাকে শিকল দিয়ে দিনের আলোয় বেঁধে রেখে মানুষ কাজ করায় সামান্য কিছু নোংরা কাগজের বিনিময়ে, কিন্তু আমি এই দাসত্বের বন্ধন স্বীকার করি না, আমি এটা মানি না। এটা মেনে নিলেই মানুষ অভিশপ্ত এক বন্ধন কে মেনে নেয়। যদিও সে ‘সুখ’ নামক কতগুলো বস্তু কিনতে পারে, কিন্তু সে আসলে এক ‘ক্রীতদাস’। কখনো সে এই বন্ধন হতে বের হতে পারেনা। এক শয়তানকে নিজের ঈশ্বর মেনে নেয়, যার নাম অর্থ।

 

শেষ রাতের এক দিক ভোলা জাগরণ আমার কাছে জীবনের কিছু রহস্যকে খুব সাধারণ আর সহজ করে সামনে নিয়ে আসে। আমি বুঝতে পারি। ভালোবাসা এক রহস্যময় বিষয়। ভালোবাসার মধ্যে সুখের নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু ভালোবাসা নিজেই সুখের এক অপূর্ব ইশারা।

 

সব স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের এক গোপন চাবিকাঠি আছে। পৃথিবীর আর কেউ সেই রহস্যের চাবি-কাঠির সন্ধান পায় না। এক দম্পতির রহস্যের সাথে মিলবে না অন্য কারো রহস্য। লোকে আমাকে প্রশ্ন করে ভালোবাসার ভিত্তি কী কীসের অভাবে ভালোবাসা মরে যায়? সেটা কি সাহচর্য? আজ কেবল মনে হয় ভালোবাসার ভিত্তি হল ‘শ্রদ্ধা’। শ্রদ্ধা ছাড়া ভালোবাসা সেটা যেমনই হোক বেশিক্ষণ টিকে না, টিকতে পারে না। কারণ মানুষের একান্ত যেই অস্তিত্ব তার সমান্তরাল, যে কোন কিছু সহ্য করা মানুষের জন্য কষ্টকর। শ্রদ্ধা তৈরি করে সহিষ্ণুতা। এই সহিষ্ণুতাই ভালোবাসার জীবন্ত চাদর। যেই ভালোবাসার জন্য মানুষ ঘর ছাড়ে, ঘর বাঁধে সেখানে শুধু শ্রদ্ধা না থাকলেই সব হারিয়ে যায়। ভালোবাসা খুব রহস্যময় কিন্তু এর দাবি খুব ছোট। আমি আমার জীবন দিয়ে অনুভব করেছি এই দাবি। অভিন্ন স্বার্থ আর অভিন্ন অনুভব — ব্যস এর বেশি কিছু না। কিছুই না। এজন্যই সংসার দরকার মানুষের, দরকার সন্তান। মানুষের ভালোবাসার অনুভবের প্রসারণের জন্য।

 

আমার ভাবনার প্রহর রাতের প্রহরের সাথেই গড়িয়ে চলে। এভাবে ঘুম ভেঙে একা একা বিছানায় জেগে আমার এই সব ভাবনাগুলো আমার জীবনের প্রতি এক বিদ্রূপ চাহুনি দিয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি জীবনের এই সব ভাবনা আর অনুভব আমার ভেতরের কামনা, বাসনা আর আবেগগুলোকে নির্বিকার এক শক্ত খোলসে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে। এই যে ভোর আসি আসি করছে, দূরে কোথাও এতক্ষণে আলো ফুটে গেছে, জেগে গেছে চরাচর, এর সাথেই আমার ভেতরের পশুটা আড়মোড়া ভেঙে যেন জেগে উঠছে। আমি বুঝতে পারি, সব সুখেরই শেষ আছে, কিন্তু ভালোবাসা অন্তহীন।

(চলবে)

পড়ুন ।। কিস্তি : ৬

যখন ফুটিল কমল ।। কিস্তি : ৬

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here