হিমেল বরকত, আমার ‘দ্রোণাচার্য’!

কাল্পনিক কিংবা বাস্তবিক, যাই বলি না কেন, ভারতীয় কাহিনী-কথা ও সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষাগুরুদের একজন হলেন দ্রোণাচার্য। আচার্যতুল্য গুরু ছিলেন বলে, দ্রোণ হয়ে উঠেছিলেন দ্রোণাচার্য। কৌরব বংশের তরুণ প্রজন্মকে (কৌরব ও পাণ্ডব উভয় অংশকে) শিখিয়েছেন অস্ত্রবিদ্যা। সে বিদ্যা এমনই চৌকস ছিল যে, তাঁর দু’জন শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ। কর্ণ (যদিও তিনি কৌরব নন) ও তাঁর অনুজ অর্জুন।

 

এমন জগদ্বিখ্যাত গুরু-শিষ্য পরম্পরা আমরা প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসেও পাই। মহাগুরু সক্রেতিসের শিষ্য প্লাতো, প্লাতোর শিষ্য অ্যারিস্তাতল। এই ত্রি-দার্শনিককে যখন একসূত্রে পাঠ করা যায়, তখন মনে হয়, জ্ঞানজগতে এক মহাবিপ্লব করে বসে আছেন তাঁরা। কিন্তু, তবুও, গুরুরূপে আমার দ্রোণের প্রতিই আগ্রহ বেশি। সেই দ্রোণ, ‘মহাভারতে’ যাঁর ভূমিকাকে নানাভাবে পাঠ করা হয় বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি গুরু দ্রোণ, আচার্য দ্রোণ হিসেবেই সসম্মানিত হন।

 

আমি আমার সদ্য প্রয়াত শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমেল বরকতকে (২৭ জুলাই ১৯৭৭- ২২ নভেম্বর ২০২০) আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্রোণাচার্য হিসেবে অনুভব করি আজও। তাঁর অকাল প্রয়াণে সে অনুভূতি আরও দীর্ঘ হচ্ছে। দীর্ঘতর হচ্ছে। আমি আমার এক একান্ত স্বজনকে হারিয়ে ফেললাম৷ মনে হচ্ছে কবি ভুল বলেননি, ‘ভালোবেসে যাকে ছুঁই, সেই যায় দীর্ঘ পরবাসে’! কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন তাঁর বন্ধু অকালপ্রয়াত প্রতিভাধর কবি আবুল হাসানের প্রয়াণে। আমি কথাটি ধার করলাম আমার দ্রোণাচার্যের প্রয়াণে।

 

হিমেল বরকত একাধারে ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক, গীতিকার, গবেষক ও অবশ্যই শিক্ষক। তাঁর প্রতিটি পরিচয়ই মূখ্য। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন একাডেমিক হিসেবে তিনি প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। খুব স্বল্প সময়েই গবেষণা ও শিক্ষকতার ক্ষেত্রে তিনি একটি মানদণ্ড ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কিন্তু হায়, তিনিও চলে গেলেন, মাত্র ৪৩ বছর বয়সে! কতকত আড্ডা, রাত ১২-১টার ছাত্র-শিক্ষকের উদ্ভাবনী সব ফোনালাপ, সব এক লহমায় স্মৃতি হয়ে গেল!

 

প্রতি পাঁচ বছর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রজন্মের কাল ধরা হয়, তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছিলাম তাঁর একদম প্রথম প্রজন্মের শেষ ব্যাচের শিক্ষার্থী। কিন্তু, আমাদের ব্যাচের দুঃখ হলো এখানে যে, আমাদের আগে-পরের প্রতিটি ব্যাচই স্নাতক পর্যায়ে অন্তত তাঁর একটি করে কোর্স পেলেও আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে!

 

অথচ, হিমেল স্যারের ‘মেঘনাদবধকাব্যে’র ক্লাস হয়ে উঠেছিল তাঁর নিজস্ব পাঠদান পদ্ধতির এক সিগনেচার। এই কোর্সটি আমাদের পড়াতেন আমাদের আরেক অন্তরাত্মার শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুমন সাজ্জাদ। বিভাগের তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে, নিজস্ব পাঠদান প্রজ্ঞা ও প্রক্রিয়ায় তিনিও প্রভুত জনপ্রিয় ছিলেন৷ তাঁর পাঠদান পদ্ধতিটিও এতোটাই সৃষ্টিশীল ছিল যে, আমরা যারপরনাই তা উপভোগ করতাম। তবুও, বাকি ব্যাচগুলোর বিজ্ঞাপন দেখে মনে হতো, হিমেল স্যারের এই কোর্সটা না পেয়ে আমরা কী বঞ্চিতটাই না হয়েছি!

 

মজা করেই হোক বা অনুযোগ করে, এই বঞ্চিত হওয়ার আলাপ বহুবার স্যারের সামনে এনেছি আমরা, স্যার শুধু স্বভাবসুলভ মুচকি হেসেছেন, কখনওবা ‘হিমেলীয় অট্টহাসি’-তেও ফেটে পড়েছেন! কিন্তু, আমরা খুব সচেতন থেকেছি যে, আমাদের মন্তব্যে যেন এমন কিছু সামনে না আসে, যা হিমেল বরকতকে সুমন সাজ্জাদের বাইনারি বানিয়ে দেয় কিংবা সুমন স্যারকে লঘু করে তোলে। কেননা, এ ব্যাপারটি পুরো ক্যাম্পাসই জানে যে, আমরা তো আরও অধিক জানি, বাংলা বিভাগের দু’জন শিক্ষক একদমই মানিকজোড় — হিমেল বরকত ও সুমন সাজ্জাদ।

 

এটা কেন হয়েছিল জানি না, কিন্তু ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকেই হিমেল স্যার ও সুমন স্যারকে এক বন্ধনীতে ভাবতে আমার ভালো লাগত৷ স্বস্তিবোধ হত। শক্তিবোধ হত। ক্যাম্পাস জীবনে আমাদের করা প্রথম ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের হিমেল বরকত, সুমন সাজ্জাদ ও খোরশেদ আলম। তাঁরা তখন প্রভাষক, তরুণ শিক্ষক। তবুও, মাথা বর্গা না দিয়ে শিক্ষার্থীদের নৈতিক আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছিলেন। হিমেল স্যার ছাত্রাবস্থা থেকেই ছিলেন সুমন স্যারের ‘নেতা’। এমনকি খোরশেদ স্যারকেও আগলে রাখতেন। এগুলো তাঁদেরই কাছে শোনা।

 

ঘটনাচক্রে, হিমেল স্যার নানা ঘটনঅঘটনের মধ্য দিয়ে বিভাগে সুমন স্যারের পরে যোগ দিয়েছিলেন শিক্ষক হিসেবে। তবে, দু’ জনের সম্পর্কের মধ্যে পেশাদার এ ক্রমাবস্থান কখনই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষত সৃষ্টি করেনি। বরং, বড় ভাই হিসেবে হিমেল স্যার সুমন স্যার, এবং একই সঙ্গে খোরশেদ স্যারের সকল শুভ উদ্যোগের প্রেরণাদাতা ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে তাঁদের এ সন্নিহিত থাকা, শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদেরও তাঁদের পরস্পরের প্রতি সন্নিহিত করেছে। প্রথম বর্ষে করা ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানাতে গিয়েছিলেন বলে, সেই যে মনে হয়েছিল এঁরা আমার আপনজন, আত্মার আত্মীয়, আজও তা অটুট আছে। এই যে কমরেডশিপ বোধ করা, এটা আমাদের বহুদিনের পারস্পরিক ঐকান্তিক চিন্তা ও চর্চার আস্ফালন। আহা, একজন হরিহর আত্মীয়, একজন অগ্রজ কমরেড এ জগতে আমার, কী অবেলায়ই, কী অবলীলায়ই না সব সাঙ্গ করে ফেললেন!

 

এ লেখাটি মূলত হিমেল স্যারকে নিয়ে আমার ‘এলিজি’ বা শোকগাথা। কিন্তু, সুমন স্যার এখানে প্রাসঙ্গিক কারণেই আসছেন। আরেকটি প্রসঙ্গ বলি। টুইস্টটা ইন্টারেস্টিং।

 

সুমন স্যার তো ভীষণ উদ্যোগী মানুষ। আমাদের প্রজন্মকে গড়ে তোলার পেছনে সুমন স্যারের অবদান অবিস্মরণীয়। ‘বটতলা’ সাহিত্য পত্রিকা যে গড়ে উঠল, তা তো সুমন স্যারেরই প্রশ্রয়ে। বাংলা বিভাগে ‘সুমন সাজ্জাদের ছাত্র’ হিসেবে আমাদের কয়েকজনের বেশ জোরালো তকমা ছিল তখন। মজার বিষয় হলো, বটতলা গোষ্ঠীর প্রায় সবাইই মাস্টার্সে ‘সৃষ্টিশীল সাহিত্য’ নামক কোর্সটি বেছে নিয়েছিল। এটি পড়াতেন হিমেল স্যার এবং এটাই মূল ভূমিকা পালন করেছে কোর্সটি পছন্দ করার।

 

গোষ্ঠীবদ্ধভাবে ‘সুমন সাজ্জাদের ছাত্র’রা নিবিড় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ‘হিমেল বরকতের ছাত্র’ও হয়ে উঠল (এ লেখাতেও সুমন সাজ্জাদের প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিকতা শেষ হলো)। এ কোর্সটি ছিল এমন যে, সকল একাডেমিক আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হলেও, হিমেল স্যারের বহুল প্রতীক্ষিত কোর্স ক্লাস আমাদের জন্য হয়ে উঠেছিল তাঁর সঙ্গে বিগত চার বছরে না হয়ে উঠতে পারা অনানুষ্ঠানিক আড্ডাগুলোর ‘মেকআপ আড্ডা’! হিমেল স্যার যেহেতু ক্যাম্পাসে থাকতেন না, ফলে ৯টা-৫টা সময়ের বাইরে তাঁর সংস্পর্শ আমরা পেতামই না। যতটুকু পেতাম সেটাও বিভিন্ন ক্লাসের ফাঁকে, স্যারের বিভাগীয় কার্যালয়ে। এ কারণে ‘সৃষ্টিশীল সাহিত্য’ কোর্সটি হয়ে উঠেছিল আমাদের জন্য মহার্ঘ!

 

পাশাপাশি, অনার্সে হিমেল স্যারের ক্লাস করার সুযোগ না পাওয়া তো আমাদের তাড়িত করতই। অনার্সে কেন এমনটা হয়েছিল, তা আমাদের জানার কথা নয়। তবে, তেমনটা না হলেই ভালো হতো। অন্তত আমাদের কবিতার যে কোন একটা কোর্স যে কোন একটা বর্ষে হিমেল স্যারের হাতে সঁপে দিলে আমাদের ব্যাচের কোনদিনই ‘হিমেল স্যারের ক্লাস পাইনি’ জাতীয় আফসোস করতে হতো না। কিন্তু, তবুও সেই স্নাতক পর্যায়েই এই অধম তাঁর দিকে আরও ঘন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। স্নাতক পর্যায়ে আমি যে থিসিস করি, তার তত্ত্বাবধায়ক হতে সম্মতি দিয়েছিলেন হিমেল স্যার। পরে, বিভাগীয় পরীক্ষা কমিটিও তা অনুমোদন করে। বলা চলে, তাঁকে কোর্স শিক্ষক হিসেবে না পাওয়ার বেদনা আমি অনেকটা ব্যক্তিগত অভিপ্রায়ে আদায় করে নিয়েছিলাম। সেটা আরও বহুধা বিস্তৃত হয়েছে মাস্টার্সে ও অসম্পন্ন পিএইচডিতে।

 

এভাবেই আমার একাডেমিক তথা প্রাতিষ্ঠানিক বিস্তৃতির পুরোটাই প্রায় হিমেল স্যারের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগরে। আমার গবেষক মনকে তিনি উসকে দিয়েছেন, যা খুশি চিন্তা করার জায়গা দিয়েছেন। অবারিত লেখার যথেচ্ছ প্রেরণা, উৎসাহ ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। ভরসা দিয়েছেন। আর দিয়েছেন এক পৃথিবী সমান ভালোবাসা। আমি ওই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেকে নিক্তির বাটখারায় মাপার তুল্যযোগ্য করার চেষ্টা করেছি৷

 

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমার স্নাতকের গবেষণা “বিনয় ঘোষের বয়ানে ‘বাংলার রেনেসাঁস'” গ্রন্থনামে প্রকাশিত হয়। কিন্তু, এই গ্রন্থ প্রকাশের টোটকা হিমেল স্যার আমাকে ২০১১-১২ সালেই দিয়ে রেখেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এমনভাবে অভিসন্দর্ভের বিন্যাস করবা যেন পরবর্তী সময়ে সেটাই অনতি পরিশ্রমে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পারো। ফলে, শুধু করার জন্য করা না, কাজটা খুব সিরিয়াসভাবে করবা। ‘ অভিসন্দর্ভের চূড়ান্ত ড্রাফট হাতে পাওয়ার পর, স্যারের একটি ছোট্ট মন্তব্য গবেষক হিসেবে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। স্যার বলেছিলেন, ‘সাধারণত আমাদের গবেষকরা কারও কাজকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে না দেখে, শুধু প্রশংসা করার জন্যই অভিসন্দর্ভ লেখে। তুমি যে বিনয় ঘোষের অবস্থানের সমালোচনা করেছো, এটা খুবই প্রশংসনীয়।’ স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্যার, তাহলে কি বই হিসেবে প্রকাশ করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই! প্রস্তুতি নাও।’

 

এর পর প্রস্তুতি তো দূরের কথা, সেই পাণ্ডুলিপি পড়ে রইল প্রায় তিন বছর। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করে আমার মনে হলো, বইটা বের করা দরকার। রাতে স্যারকে ফোন দিলাম। স্যার তো আমার চেয়েও দ্বিগুণ উৎসাহী হয়ে উঠলেন, কিন্তু সময় যে কম সেটাও মনে করিয়ে দিলেন৷ প্রকাশনা, ভূমিকা লেখা ইত্যাদি নানা বিষয়ে স্যারের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ হলো। খুব দ্রুতই প্রকাশক পেয়ে গেলাম৷ জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী। অঞ্জন দা দায়িত্ব নিয়েছেন শুনে স্যার পুলকিত হলেন বেশ৷ অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ছাত্র জীবনে হিমেল বরকতদের নেতা ছিলেন। সেই অর্থে অঞ্জন দা আমাদেরও নেতা। ফলে, সময় খুব কম থাকলেও, প্রকাশনার ক্ষেত্রে তেমন ধকল আমাদের পোহাতে হয়নি৷ মূল চ্যালেঞ্জ ছিল ভূমিকা লেখা নিয়ে। স্যার যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক, ফলে স্যারের কাছেই আমি প্রস্তাব দিলাম, ভূমিকা লেখক কে হবেন তা নির্ধারণের। অনেক ভেবেচিন্তে আমরা ঠিক করলাম, আনু স্যারকে রাজি করাতে হবে। স্যার বললেন, ‘আনু স্যার লিখলে সবচেয়ে ভালো হয়। আশা করি, স্যার রাজি হবেন। স্যারের সঙ্গে তুমি কথা বলো।’ আমি বললাম, ‘স্যার রাজি না হলে?’ তিনি বললেন, ‘প্রয়োজনে আমিও কথা বলব।’ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বিপুল ব্যস্ততার পরও ভূমিকা লিখতে সম্মত হলেন। জানার পর হিমেল স্যারের সে কী আনন্দ!

 

স্নাতকোত্তরে, স্যারের সেই যে সৃষ্টিশীল সাহিত্যের কোর্স, সেখানে আমাদের একটি করে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করতে হতো। আমি নিয়েছিলাম প্রবন্ধ। পাণ্ডুলিপি হতে পারবে এ৪-এর সর্বোচ্চ ৪০ পৃষ্ঠা। এতে করে আমার প্রবন্ধ দাঁড়িয়েছিল ৮টি। এটিও গ্রন্থাকারে প্রকাশের মতো করেই প্রস্তুত করা, স্যারের পরামর্শ মোতাবেক। গ্রন্থ হলে হয়তো আরও কিছু প্রবন্ধ যুক্ত হতো। অথচ, গত ৭-৮ বছর ধরে এটিও অকেজো পড়ে আছে। স্যার বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়েছেন প্রবন্ধের এই বইটি বের করার। কিন্তু, আমাদের এখানে বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ গ্রন্থের বাজারপ্রিয় হওয়ার কিছু ঘাটতি আছে। তার ওপর লেখক যদি হন আনকোরা কেউ, তাহলে প্রকাশক তো আরও ঝুঁকি নিবেন না! তবুও, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশের জন্য একজন প্রকাশক পেয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু, পরপর দু’ বছর দু’টি বই বের করা ও প্রচারক্লান্তির ঝুঁকি আমি নিতে চাইনি। স্যারকে খোলামেলা এটা বলার পরে, স্যারও সময় নিতে বলেছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাইতে আমি উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ায়, সেটা আর সম্ভব হয়ে উঠল না।

 

করোনাকালীন সময়ে এবার দেশে ফিরে, মাত্র কিছুদিন আগেও এই পাণ্ডুলিপি নিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা হলো। মূলত এই পাণ্ডুলিপির শিরোনাম নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। ২০১৩ সালে বিভাগীয় পরীক্ষা কমিটিতে জমাদানের আগে এর প্রচ্ছদনাম নানা নাটকীয়তার পর আমরা নির্ধারণ করেছিলাম জীবনানন্দ দাশের কবিতার চরণ অবলম্বনে ‘এই পথে আলো জ্বেলে’। আনিসুল হকের উপন্যাসের রেফারেন্স দিয়ে আমি স্যারকে খানিকটা মজা, খানিকটা আফসোসের সুর করে বললাম, আমাদের এই শিরোনাম তো আর এখন বাজারে চলবে না, আমরা তো কুম্ভিলকবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ব! স্যার সব শুনে স্বভাবসুলভ অট্টহাসি দিয়ে বললেন, ‘সমস্যা নাই, প্রস্তুতি নাও।’

 

মনে পড়ে, সেবার প্রবন্ধ নির্বাচন করতে গিয়ে আমরা কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম, কেননা আমার বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ছিল পূর্ব-প্রকাশিত। একদিন এ বিষয়ে সিদ্ধান্তকল্পে স্যারের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছি। স্যার বলছিলেন, প্রকাশিত প্রবন্ধ পাণ্ডুলিপিতে রাখার ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখতে হবে। এরপরই ঘটল মজার একটি ঘটনা। ঠিক ওই মুহূর্তে স্যারের কক্ষে প্রবেশ করলেন অধ্যাপক ড. আআখম আশরাফউদ্দিন, নাসিম স্যার। মাত্র দশ সেকেন্ডেরও কম সময়ে তিনি ‘অবশ্যই প্রকাশিত লেখা পাণ্ডুলিপিতে রাখা যাবে’ মন্তব্য করে প্রস্থান করলেন। আমি আমার বিস্মিত চোখ স্যারের সামনে লুকোতে না পেরে তাঁকে বললাম, ‘নাসিম স্যার ফ্রম নো হোয়ার কী করে হঠাৎ বুঝলেন আমরা কী নিয়ে আলোচনা করছি?’ হিমেল স্যার মুচকি এসে বললেন, ‘আমরা নাসিম স্যারকে যেমনটা দেখি, উনি তার চেয়েও বেশি তীক্ষ্ণ। চাঞ্চল্য আছে, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ।’ নাসিম স্যারের সঙ্গে আমাদের কিংবা আমাদের সঙ্গে নাসিম স্যারের দূরত্ব বিভাগে তখন সুবিদিত। সেদিন আমি বুঝেছিলাম, ‘জাতে মাতাল (পড়ুন অস্থির) তালে ঠিক’ কথাটার মর্ম কী! নাসিম স্যারের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা তৈরি হয়েছিল।

 

এতো গূঢ় একাডেমিক সম্পর্কের বাইরে হিমেল স্যারের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক আসলে কমরেডশিপেরও সম্পর্ক, এটা আগেই বলেছি। আমাদের পুরোটা ক্যাম্পাস জীবনে যত ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, হিমেল স্যার প্রতিটি আন্দোলনেই সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক রাজনীতিতে মাঠে নামা না-নামার কিছু নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে অনেকের ক্ষেত্রেই। হিমেল স্যারের মধ্যে এসব কাজ করত না। তিনি আসলে যা করতেন, যা বুঝতেন তা সবই তাঁর দ্রোহী চেতনা, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার মানস আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা থেকে করতেন। স্যারের এ অবস্থান ছাত্র হিসেবে আমাকে গর্বিত করত। প্রচণ্ড ভালো লাগা ছিল এজন্য যে, শেষ বিচারে মনে হয়, একাডেমিকভাবে আমি কোনো মাথা বর্গা দেওয়া শিক্ষকের পাল্লায় পড়িনি, যিনি আমার চিন্তা ও চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেন, বরং হিমেল স্যারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকায় আমার চর্চা আরও শাণিত হয়েছে।

 

ক্যাম্পাসে নিয়মিত না থাকলেও, কোন বিষয় নিয়ে শিক্ষকরা কী ভাবছেন, শিক্ষার্থীরা কী ভাবছে, শিক্ষকরা আন্দোলনে নামবেন কি না, এসব বিষয়ে আমার সবচেয়ে বেশি খোলামেলা আলাপ হতো স্যারেরই সঙ্গে। মাঝেমধ্যেই আমি খুব হার্ডলাইনের প্রশ্ন করতাম। ওই প্রশ্রয় আর অধিকার আমার ছিল। স্যার তখন স্বর নিচু করে তাঁর মত দিয়ে আমাকে কনভিন্স করতেন। শুধু কি তাই? এমন উদাহরণও দেওয়া যাবে, যেখানে স্যার আমার পক্ষে শিক্ষকদের মিটিংয়ে সওয়াল করছেন এবং সেটা করছেন খুব নৈতিকতার জায়গা থেকে, আমাকে খুব কাছ থেকে চেনার জায়গা থেকে।

 

হিমেল স্যার আমার ইমেজের জন্য কতটা সেইভ গার্ড হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন ফারহানা ম্যাম (অধ্যাপক ড. ফারহানা আখতার)৷ কোনো এক আন্দোলনের সময় একজন শিক্ষক আমার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষকদের বৈঠকে। সেটা যে কেউই করতে পারেন। আমি তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলাও করতে পারতাম, কেননা রাজনীতির মাঠে এসব অস্বাভাবিক কিছু তো না। কিন্তু, হিমেল স্যার ফ্লোর নিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা জয়দ্বীপকে কতটা চেনেন? জয়দ্বীপ আমার সরাসরি ছাত্র। ও কী করতে পারে, না পারে তা আমি আপনাদের অনেকের চেয়ে ভালো জানি। এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে এটা মাথায় রাখবেন যে, জয়দ্বীপের প্রতি আঙুল তাক করা মানে আমাকে, ও আমাদের অনেককেই প্রশ্নবিদ্ধ করা।’ স্যারের এ বক্তব্যকে সমর্থন করেছিলেন ফারহানা ম্যাম। পুরো ঘটনাটা তাঁর মুখেই শোনা।

 

হিমেল স্যার মানসিকভাবে ছাত্র ইউনিয়ন ঘরানার লোক ছিলেন। ছাত্র জীবনে ছিলেন ‘সংস্কৃতি সংসদে’র বড় একজন সংগঠক। আর সে সূত্রে প্রতিটি ছাত্র আন্দোলনের নিয়মিত মুখ ও সংগঠক। সে অর্থে তিনি আমার পক্ষে সওয়াল করতেই পারেন। কিন্তু, তিনি ঠিক ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ নিয়ে আমার পাশে দাঁড়াননি। সেটা দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র ইউনিয়ন ঘরানার আরও অনেক তুমুল ক্রিয়াশীল শিক্ষক ছিলেন। হিমেল স্যার দাঁড়িয়েছিলেন এ বোধ থেকে যে, খুব সচেতনভাবে একটা পক্ষের শিক্ষকরা তাঁর প্রত্যক্ষরূপে পরিচিত একজন ছাত্র, ঘটনাচক্রে যে আন্দোলনের অলিখিত মুখপাত্র হয়ে উঠেছে, তার ইমেজ ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছেন প্রশাসনিক কূটকৌশলে এবং তাদেরই ভাগবাটোয়ারার স্বার্থে।

 

অনেক বছর পরে, হিমেল স্যার আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে, ঠিক কাদের তিনি ‘কমরেড’ ভেবে ভুল করেছিলেন! আগেই বলেছি, আমার সঙ্গে তাঁর কড়া প্রশ্ন বিনিময়ের সম্পর্কও ছিল। রাখঢাক না রেখেই স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘সাম্প্রতিক ভিসিবিরোধী আন্দোলনে আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?’ স্যার স্বভাবসুলভ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আগের ভিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যখন আন্দোলন হয়েছিল, তখন যারা প্রাক্তন ভিসির পক্ষে দাঁড়িয়ে নোংরামি করেছে, দালালি করেছে, আজকে তারাই আবার বর্তমান ভিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে, এই দ্বিচারিতা যাদের, তাদের সঙ্গে আমি আন্দোলন করব না, এটা স্পষ্ট করে দিয়েছি আমাদের শিক্ষকদের ফোরামে।’ এমন দৃঢ়চেতা একজন শিক্ষক ছিলেন আমার, আমি তাঁকে নিয়ে গর্ব করি!

 

না, হিমেল স্যারের সঙ্গে আমার একাডেমিক জার্নি মাস্টার্স শেষেই সমাপ্ত হয়নি। এটা আরও বিস্তৃত হলো পিএইচডিতে গিয়ে। জাবিতে আমার নবযাত্রা হলো। সেবার, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপার ছিল সরাসরি পিএইচডিতে। আমরা বন্ধুরা সুযোগটা নিলাম। আমি আবারও বিনয় ঘোষ ও ড. হিমেল বরকতের সঙ্গে জুড়ে গেলাম৷ এবারের শিরোনাম ‘বিনয় ঘোষের বিচারে বাংলার উনিশ শতক ও সংবাদপত্র’। কিন্তু, যত উৎসাহ নিয়ে কাজটা শুরু করেছিলাম, দুই বছরের ব্যবধানে তা মিইয়ে এলো। দ্বিতীয় কোন পেশাদার কাজে জড়িত থাকলে গবেষণা করা সম্ভব নয় মেনে নিয়ে আমি বাইরের দেশে ফুল স্কলারশিপের সন্ধানে নামলাম।

 

ঘটনাচক্রে এর কিছুদিন পরেই ভারতের আইসিসিআর স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি হলো ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে। গবেষণা প্রস্তাব তৈরি থেকে শুরু করে রেফারেন্স লেটার জমা দেওয়া, সবকিছুর সিংহভাগই করলাম হিমেল স্যারের সার্বিক পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে। সেবার ভাইভা পর্যন্ত গেলাম বটে, কিন্তু স্কলারশিপটা পাওয়া হলো না। ফলত, আবারও জাবিতে মনোনিবেশ করলাম। কিন্তু, কোনভাবেই সেটা সম্ভব হয়ে উঠল না। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে আবারও আইসিসিআর, এবং এবার হয়ে গেল! যথারীতি হিমেল স্যার তুমুল উৎসাহে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গোছানোর ক্ষেত্রে আমাকে শক্তি জুগিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। এতো বড় পরিসরে ঘটনাটা বললাম এজন্য যে, হিমেল স্যার কোথায় অনন্য সেটা আমি খুব নিগূঢ়ভাবে বুঝতে পেরেছিলাম আমার বিদেশযাত্রার এ সময়টায়। একজন শিক্ষক, যার অধীনে একজন চলতি গবেষণা করছে, তাকে কী অবলীলায় তিনি পথ সুগম করে অন্যত্র যাওয়ার জন্য উদারহস্ত হয়েছেন, কোন অসূয়াবৃত্তিহীন, এ বিষয়টি আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বিরল না হলেও, বিস্ময়কর এবং বিস্ময়কর!

 

স্যারের কথা যখন মনে পড়বে, একটা জায়গার কথা আমার সব সময় মনে পড়বে। জায়গাটা জাহাঙ্গীরনগর নয়, নগর, তবে, শান্তিনগর। শান্তিনগর মোড়। ওখানেই হালিম, চা আর সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে আমরা অসংখ্য বিষয়ে আড্ডা দিয়েছি। যখন ঢাকায় ছিলাম তখনও, যে দু’বার দেশে এসেছি, সেসব বারও। দেশে এবার আমি তৃতীয় তথা একেবারেই চলে এসেছি গুজরাত থেকে। এবারও নিশ্চয়ই দেখা হতো। দেশে ফিরেও তো কত দীর্ঘ ফোনালাপ হয়েছে আমাদের একদিন, যে ফোনালাপ থেকে বঞ্চিত হয়েছি বিদেশে থাকতে, কেননা স্যার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে চাইতেন না। অনেক অনুনয়, আবদার করে অবশেষে তাঁকে পাওয়া গেছে।

 

দেশে ফিরে যেদিন প্রথম কথা হলো, সেই দীর্ঘ ফোনালাপে কতকত পরিকল্পনা না আমরা করলাম, তিনি যথারীতি কী করতে হবে বিষয়ক পথ বাতলে দিলেন। সে অনুযায়ীই আমি কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে চলছিলাম। সে আলাপেই স্যারকে বলছিলাম, আপনার তত্ত্বাবধানে অসমাপ্ত পিএইচডিটা শুরু করা যায় কি না? স্যার কিছুটা ধমকের স্বরেই বললেন, ‘এটা কি তোমার ক্যারিয়ারে কোন বাড়তি মাত্রা যোগ করবে? পোস্টডকের জন্য চেষ্টাটা বরং চালিয়ে যাও।’ এই আরেকটা ধাপ, যেখানে অধ্যাপক ড. হিমেল বরকতের রেফারেন্স লেটার ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আবেদন অপূর্ণ থাকত, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে৷ আজীবনের জন্য থাকবে!

 

মাঝে দু’ দিনের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম। ওই শান্তিনগর মোড় পার হয়েই একটা জায়গায় গিয়েছিলাম। স্যারের বাসাটার দিকেও তাকালাম। একবার মনে হলো, স্যারকে একটা কল দেই। পরক্ষণেই মনে হলো, এটুকু সময়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করে মন মিটবে না। স্যার দেখা করতে না পারলে তাঁরও অযথা একটা খচখচানি থাকবে। আমি তাই বিরত থাকলাম। এটা গত ৪ নভেম্বরের কথা। ২২ নভেম্বর তিনি নিরাকার হয়ে গেলেন! আহ, আফসোস!

 

১০

এই পুরো লেখাটা খুব নিরস নিরাসক্তভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। সম্ভবত, আমার জীবনে হিমেল স্যারের অবদানের সিকি ভাগও এখানে তুলে ধরতে পারলাম না৷ বরং, বহু বহু কথা অব্যক্ত থেকে গেলো। অব্যক্ত কথাও তো কখনও কখনও ভালোবাসার নির্যাস হয়। সেই নির্যাসটুকু একান্তই থাকুক গুরু ও শিষ্যের!

 

গুরু হিসেবে শুরুতেই দ্রোণাচার্যের কথা বলছিলাম। দ্রোণ শুধু তো শিক্ষাগুরু ছিলেন না, শিষ্যদের যুদ্ধ জয়ের কৌশলও তিনি নির্ধারণ করে দিতেন। হিমেল বরকত সেখানেই আমার জীবনে অনন্যসাধারণ। কী গবেষণা, কী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, কী ছাত্র আন্দোলনের ময়দান, কী ক্যারিয়ারের কৌশল নির্ধারণ — সবকিছুর যোগফলে তিনি ছিলেন আমার একমেবাদ্বিতীয়ম পরিপূর্ণ দ্রোণাচার্য।

 

সেদিন হিমেল স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক অনলাইন স্মরণসভার আয়োজন করেছিল ক্যাম্পাসের একটি গ্রুপ। সেখানে নিজের বক্তৃতার এক পর্যায়ে খোরশেদ স্যার বললেন, ‘জানি না সৌমিত জয়দ্বীপ কী করে মেনে নিচ্ছে, সৌমিত জয়দ্বীপ তো হিমেল বরকতের মানসপুত্র!” আমি কোনদিন এভাবে ভাবিনি। কিন্তু, আমারই একজন শিক্ষক এভাবে ভেবেছেন বলে, আমিও খুব গভীরে চলে গেলাম কথাটার। ভেবে দেখলাম, সত্যই জগতে এমনকিছু খুব নিভৃতে ঘটে গেছে হয়তো, আমি জানিই না!

 

আমি শুধু জানি, তিনি কতটা আমার! মৃত্যুতে যে প্রাণ চিরঘুমে গেল, তিনি আমার ততোধিক হয়ে রইলেন!

 

বিদায়, প্রাণের দ্রোণাচার্য!

বিদায়, আমার প্রাণাধিক মানসপিতা!

 

আগের লেখাইতি, হিমেল বরকত
পরের লেখাহিমেল! উষ্ণতায়-আর্দ্রতায়
সৌমিত জয়দ্বীপ 
লেখক ও গবেষক। বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকােত্তর। আইসিসিআর স্কলার হিসেবে ভারতের আহমেদাবাদের গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি, গবেষণার শিরোনাম— ‘ন্যাশনালিস্ট হেজিমনি ইন একাডেমিক কালচার অব প্রি-ইনডিপেন্ডেন্ট ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট : অ্যা স্ট্যাডি অন বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া এন্ড পাকিস্তান’। প্রকাশনা : বিনয় ঘোষের বয়ানে ‘বাংলার রেনেসাঁস’ (২০১৫) ও বিশ্ববিদ্যালয় (২০১১)। আন্তর্জাতিক পিয়ার রিভিউ জার্নালে গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশ ও কনফারেন্স-সেমিনারে গবেষেণাপত্র উপস্থাপনকারী একজন তরুণ গবেষক। এছাড়া, লেখক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখির মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিবিষ্ট।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here